ঔজ্জ্বল্যের আলোক প্রহর পর্ব-০২

0
1

#ঔজ্জ্বল্যের_আলোক_প্রহর
#পর্বঃ২
#লিখাঃতাসফিয়া_তাসনিম

“জ্যোতি আসবে না বলেছে!”

ফারিয়া রাগত কন্ঠে কথাটা বলে তাকালেন মেয়েদের দিকে। তার দুই কন্যা মাহিরা এবং অরোরা পাশে বসেই কথা শুনছিলো।

অরোরা চোখ কপালে তুলে বললো,

“দেখেছো মা, কী রকম মাথায় উঠেছে?”

“তা তো দেখছিই!”

এই পর্যায়ে মাহিরা বাঁধা দেয়,

“আচ্ছা তোমরা কী শুরু করেছো বলো তো? এই অবস্থায় মায়ের কাছে থাকে না মেয়েরা? আমি থাকিনি?”

“আপু তুমি একটু চুপই থাকো। সবসময় এমন ভাবে ওর পক্ষ টানো যেন জ্যোতির উপর আমরা টর্চার করছি। আম্মুকে তো জালিম শাশুড়ী মনে করো। অথচ ওর কোনো ভুলই চোখে পড়ে না তোমার। ও আপন বেশি তোমার কাছে আমাদের থেকে?”

মাহিরা রেগে গেলো,

“কথা ভেবেচিন্তে বলিস অরু। তিলকে তাল বানানোর বদঅভ্যেস আর গেলো না তোর। সম্পর্কে তোর বড় হয়, ভাবী শব্দটা আসে না মুখ দিয়ে? আর কী সাফাই গাইলাম ওর? ওর পক্ষে একটা শব্দ উচ্চারণ করলেও তো দেখছি তোদের গায়ে তেলের ছিটা পড়ে, বুঝলাম না আমি কাহিনি!”

“আপু-”

“কী হয়েছে? এতো রাগারাগি কীসের?”

সামনের টি টেবিলে রাখা ফলের ঝুড়ি থেকে একটা আপেল নিয়ে তাতে কামড় বসতে বসতে বললো শাহরিয়ার। মাত্রই বাহির থেকে এসেছে।

“এসেছিস তাহলে! তোর বউয়ের কীর্তি দেখবো অথচ রাগবো না তা কী করে হয়?”

ফারিয়া ফোড়ন কেটে বললেন। সোফায় বসতে বসতে শাহরিয়ার চোখ সরু করে বললো,

“আবার কী হয়েছে?”

“কী হবে ভাইয়া? আম্মু গাড়ি পাঠিয়েছিলো, তোমার বউ আসবে না বলে দিয়েছে।”

শাহরিয়ার এক দৃষ্টিতে চেয়ে রইলো ছোট বোনের দিকে। ভিতরে রাগ একটু একটু করে উৎপন্ন হচ্ছে।

মাহিরা দ্রুত সামাল দিতে বললো,

“আরে ভাইয়া অরুর কথা পাত্তা দিও না তো। ভাবীর শরীরের কন্ডিশন তো জানোই। এজন্য এই সময়টা আন্টি নিজের কাছেই রাখতে চাইছে।”

“কী হয়েছে ওর শরীরের?”

মাহিরা হকচকিয়ে গেলো। ভাইয়ের প্রতি হুট করে মেজাজ চড়ে গেলো।

“কী হয়েছে মানে? ভাবী প্রেগন্যান্ট জানো না তুমি?”

“তো এখানে থাকতে কী সমস্যা?”

“আশ্চর্য ভাইয়া! এই সময়টায় ফ্যামিলির কেয়ার প্রয়োজন হয়, তাই মেয়েরা বাবার বাড়িতেই থাকে। আমিও তো থেকেছি! অরোরার সময় অরোরাও থাকবে।”

“তো এখানে ওর কেয়ার নেওয়া হবে না নাকি? আজব তো!”

মাহিরা বিরক্তিতে চ্চ’ করে উঠলো।

ফারিয়া বিরক্ত হয়ে বললো,

“ওকে তো বিশ্বাস নেই! বাচ্চা রাখতে চাইছে না ও। তাহলে কীসের ভরসায় ওকে রাখবো ওখানে শুনি?”

শাহরিয়ার চোয়াল শক্ত করে বললো,

“ওকে খুনই করে ফেলবো। চিনে না আমাকে। ঠিক আছে, ওখানে থাকতে চাইছে থাকুক। আমিও লোক রেখে দিবো আশেপাশে। কোথায় যায় না যায় সব নজরে রাখবো।”

অরোরা এবং ফারিয়া এই সিদ্ধান্তে খুব একটা সন্তুষ্ট না হলেও মাহিরা কিছুটা স্বস্তি বোধ করলো। জ্যোতি ভাবীর জন্য তার দুঃখ লাগে। এতো মিষ্টি একটা মেয়ে, অথচ তার সাথে তার পরিবারের ব্যবহারটা কী পাষবিক!

হঠাৎ গত রাতের কথা মনে হতেই ফারিয়া বলে উঠেন,

“শাহরিয়ার, তোর বউয়ের মতো বেয়াদব আমি দুটো দেখিনি!”

শাহরিয়ার নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে বললো,

“এ আর নতুন কী? গত পাঁচ মাস ধরেই তো শুনছি!”

“ও আমাকে গতরাতে খাটাশ মহিলা বলেছে!”

শাহরিয়ার খাওয়া থামিয়ে মায়ের দিকে অবাক হয়ে তাকালো। পরক্ষণেই হেসে ফেললো। মাহিরাও মুখ অন্য দিকে ঘুরিয়ে হাসি চেপে রাখলো। অরোরা হতচকিত হয়ে তাকালো মায়ের দিকে।

শাহরিয়ার হাসি থামিয়ে বললো,

“কী যে বলো মা! ও এটা বলবে আমায় বিশ্বাস করতে বলো?”

ফারিয়া রেগে বললেন,

“তোর মনে হচ্ছে আমি মিথ্যে বলছি?”

“সেটা কখন বললাম? হয়তো তুমি শুনতে ভুল করেছো। এতো সাহস আছে ওর?”

ফারিয়া সন্তুষ্ট হতে পারলেন না। যদিও খটকা লাগছে, তবুও মনে হচ্ছে এটাই বলেছিলো মেয়েটা। কিন্তু কথা বাড়ালেন না আর। কোথাকার কোন পুঁচকে মেয়ে তাকে এই কথা বলেছে এটা মুখে বলাও তো লজ্জার!

____________°___________

বেডে আধশোয়া হয়ে ফোনে স্ক্রোল করছিলো শাহরিয়ার। হুট করেই তার তেষ্টা পেলো। ফোনের স্ক্রিন থেকে চোখ না সরিয়েই অভ্যাসমতো ডাক দিলো,

“জ্যোতি, পানি দেও তো এক গ্লাস!”

কোনো সাড়া না পেয়ে মুখ তুলে তাকালো। পরক্ষণেই মনে পড়লো জ্যোতির অনুপস্থিতির কথা।
ধুর! অভ্যাস হয়ে গেছে মেয়েটা। কিছুক্ষণ বিরক্ত হয়ে ফোনে মনোযোগ দিতে চাইলো, পারলো না। কনট্যাক্ট লিস্টে জ্যোতির নাম্বারটা খুঁজে ডায়াল করলো। ওপাশে রিং হয়েই যাচ্ছে হয়েই যাচ্ছে, তোলার নাম গন্ধ নেই কারোর। তিন চারবার ডায়ালের পর ওপাশ থেকে ফোন রিসিভ হলো।

“কল সাথে সাথে এটেন্ড করো না কেনো? এতোবার দেওয়া লাগে কেনো, হ্যাঁ?”

“কী বলতে কল দিয়েছেন দ্রুত বলুন।”

শাহরিয়ার চোখ বন্ধ করে মাথা ঠান্ডা করার চেষ্টা করলো। তারপর বললো,

“বাবার বাসায় থাকতে চাইছো থাকো। কিন্তু মনের ভুলেও যদি কোনো উলটাপাল্টা কিছু করার কথা ভেবেছো তো আমার কথাও মনে রেখো। তোমার প্রতি আমার নজর থাকবে ভুলে যেও না। এমনি এমনি ছাড়ছি না তোমাকে!”

“আর কিছু?”

শাহরিয়ার চুপ হয়ে গেলো। মেয়েটা তার সাথে কথা বলতে ইচ্ছুক না এটা সে বেশ বুঝতে পারছে। বিষয়টা তার মেল ইগোতে হার্ট করছে বাজেভাবে। তাই তপ্ত কন্ঠে বললো,

“তুমি মা’কে খাটাশ বলেছিলে?”

জ্যোতির হাসি পেলো। এ কথাও জানিয়ে দিয়েছে!

“বলেছি, তো? কী করবেন?”

“জ্যোতি! আমার ধৈর্যের পরীক্ষা নিও না! তোমার ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ সহ্য করছি মানে এই নয় তোমাকে শায়েস্তা করার ক্ষমতা আমার নেই। নেহাৎ আমার—”

“নেহাৎ আপনার বাচ্চা আমার গর্ভে, তাই আপনি আমাকে সহ্য করছেন, নয়তো কবেই তালাক দিয়ে দিতেন- এটাই তো? আমি কানে শুনতে পাই। এক কথা বারবার বলার প্রয়োজন নেই। শাহবাজ সাহে–ব, আপনি আমার উপর অনে—-ক এহসান করছেন বাচ্চাটার জন্য, আপনার প্রতি আমি অনে—ক কৃতজ্ঞ। এই কৃতজ্ঞতা থেকে আমিই আপনার থেকে তালাক নিবো, আপনার কষ্ট করার দরকার নেই!”

শাহরিয়ারের মুখের কথা টেনে নিয়ে টিটকারি করে বললো জ্যোতি।

“তোমাকে– তোমাকে আমি দেখে নিবো!”

শাহরিয়ার রেগে কল কেটে দিলো। ফোনটা ছুঁড়ে মারলো পাশে। মেয়েটা কি তাকে ছ্যাঁচড়া ভাবছে!

জ্যোতি স্বস্তির নিশ্বাস ছাড়লো। ভালো লাগছিলো না এই লোকের কন্ঠ তার। পরক্ষণেই বিষাদ ভর করলো জ্যোতির সমগ্র মুখ জুড়ে। একটা সংসারই তো চেয়েছিলো সে! এমন কেনো হতে হলো তার সাথে?

উদরে হাত রাখলো জ্যোতি, ভিতরের নাজুক অস্তিত্বটাকে অনুভব করতে চাইলো একটু। মায়ের কথা সর্বক্ষণ তার মস্তিষ্কে ঘুরপাক খাচ্ছে।

কতজন চেয়েও পায় না, আর সে না চাইতেই পেয়েছে!

ঠিকই তো! মাতৃত্ব কি চাট্টিখানি কথা? সে কেমন করে ভাবছে বাচ্চাটা না রাখার কথা? অথচ তার অমরার সাথে সন্ধিক্ষণে আটকা সেই ছোট্ট অস্তিত্বটা তো কত ভরসা করে আছে তার উপর, মা তাকে আঁচ অবধি আসতে দিবে না এই ভরসায়। বাচ্চাটা কি জানে সে তাকে না রাখার চিন্তা করেছে? জানলে নিশ্চয়ই তাকে ঘৃণা করবে? ছোট্ট এ জীবনে আর কতজনের ঘৃণা সহ্য করবে ও? জ্যোতি অস্থির হয়ে উঠলো ভাবতে ভাবতে। সে আর সবার ঘৃণা বরদাস্ত করতে পারলেও তার ভিতরের অস্তিত্বের ঘৃণা সইতে পারবে না, সম্ভব না। জ্যোতি রাখবে বাচ্চাটা, অবশ্যই রাখবে। যা হওয়ার হোক, দেখা যাবে!

______________°___________

“আম্মু, আব্বু খেতে আসছে না কেন?”

রত্না চুপ করে জ্যোতির প্লেটে রাতের খাবার বাড়তে লাগলেন।

“আম্মু?”

“তোর বাবা রুমে খাবেন বলেছে। সেখানেই খাবার দিয়ে এসেছি।”

জ্যোতি এক দৃষ্টিতে মায়ের দিকে চেয়ে রইলো। চোখে চিকচিক করছে বিষাদ।

হুট করেই চেয়ার ছেড়ে উঠে পড়লো। সোজা এগিয়ে গেলো বাবার কামরার দিকে। রত্না ভয় পেয়ে নিজেও পিছন পিছন এলেন।

জ্যোতি নক না করেই দরজা ঢেলে ভিতরে প্রবেশ করলো।

“তোমার চোখে আমার অবস্থান এখন এতটাই নেমে গিয়েছে যে এখন আমার সাথে খাবারটা খাওয়ার অব্দি রুচি নেই তোমার, আব্বু?”

রকিং চেয়ারে চোখ বন্ধ করে বসে ছিলেন হামজা সাহেব। অকস্মাৎ মেয়ের এমন কঠিন কন্ঠে হকচকিয়ে চোখ মেলে সোজা হয়ে বসলেন।
জ্যোতি বিদ্যুৎ গতিতে এগিয়ে এলো বাবার কাছে, হামজা সাহেবের পায়ে কাছে হাঁটু গেঁড়ে বসে বললো,

“আমাকে এভাবে এড়িয়ে চলছো কেনো আব্বু? কথা বলছো না ঠিকমতো। আমি জানি আমি তোমাদের সকল আশায় গুঁড়ো বালি ঢেলে দিয়েছি। কিন্তু কী করবো আমি বলো? আমিও তো একটা মানুষ দিনশেষে, তাই না? আমার কী অনুভূতি নেই? একটু স্বস্তি চাওয়ার অধিকার নেই? যা শাস্তি দেওয়ার দেও, কিন্তু এভাবে কথা না বলে থেকো না প্লিজ! আমার দম বন্ধ লাগে! যে বাবার চোখে আজীবন স্নেহ, ভালোবাসা দেখে বড় হয়েছি সেই বাবার চোখে ঘৃণা দেখার মতো সাহস আমার নেই! এতটুকু ছাড় অন্তত আমাকে দেও তোমরা! দয়া করো আমার উপর!”

বলতে বলতে জ্যোতি কেঁদে ফেলে বাবার হাঁটুতে মাথা রেখে।

হামজা সাহেবও নিজেকে আর ধরে রাখতে পারলেন না। ঝরঝর করে কেঁদে ফেললেন৷ জ্যোতির মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললেন,

“তোর উপর আমার কোনো রাগ নেই মা। আমি তোর সাথে নজর মিলাতে পারি না। নিজের প্রতি লজ্জা হয়, লজ্জায় মরে যেতে ইচ্ছে করে। আমার নিজের করা ভুলে তোর জীবনটা তছনছ হয়ে গেলো! নিজেকে ভীষণ অপরাধী মনে হয়। এজন্য তোর সামনে দাঁড়ানোর সাহসটাও হয়ে ওঠে না। তোর আসল অপরাধী তো আমি-ই!”

“না আব্বু, না! ভুল মোটেও তোমার নয়! অন্য কারো কর্মকাণ্ডের দায়ভার তুমি কেনো নিবে? তোমার প্রতি আমার কোনো অভিযোগ নেই! আমার আসামি তুমি নও আব্বু! যারা আমার আসামি আমি তাদের বিচার দিয়ে রেখেছি উপরের আদালতে! তুমি নিজেকে আর ছোট করো না আব্বু!”

বাবা-মেয়ে মিলে কাঁদছে। এদের দেখে রত্নাও কাঁদছেন। কাঁদতে কাঁদতে জ্যোতিকে টেনে তুললেন। স্বামীর দিকে তাকিয়ে কান্না বিজারিত কন্ঠে একপ্রকার চিৎকার করে বললেন,

“আপনি আসলে কী, বলেন তো? মেয়েটার শরীরের খবর আপনার জানা নেই? এমনিতেই কী কম কষ্টে আছে আমার মেয়েটা? কেনো এসব বলে মেয়েটাকে আরও কষ্ট দিচ্ছেন? বাপ তো আপনি, নাকি?”

হামজা সাহেবের মাথা নিচু হয়ে গেলো। মাথা নিচু করেই কাঁদতে লাগলেন।

জ্যোতিই সর্বপ্রথম নিজেকে সামলে নিলো। দ্রুত চোখ মুছে বললো,

“আব্বু এসো, একসাথে খাবে, এসো। এটা কান্নাকাটির সময় না। আসো বলছি!”

একপ্রকার ঢেলে বাবা মাকে নিয়ে এলো খাবার ঘরে। নিজেকে ভীষণ অপরাধী মনে হচ্ছে তার। তার কারণেই আজ তার আব্বু আম্মুর এই বেহাল দশা, এটা মানতে পারছে না সে!

___________°___________

“কেমন আছো ভাবী?”

জ্যোতিকে উষ্ণ আলিঙ্গন করে প্রশ্ন করলো মাহিরা।

“এইতো যেমন দেখছো! মহসিনকে আনোনি?”

“না, জানোই তো কী দুরন্ত! এজন্য কোথাও নিতে ভয়ই লাগে।”

জ্যোতি দুঃখ নিয়ে বললো,

“আহহা, নিয়ে আসতে! অনেক দিন দেখিনা ওকে।”

মাহিরা উদাস হয়ে তাকিয়ে থাকে জ্যোতির দিকে। কী সাবলীলভাবে কথা বলছে! অথচ তার মনে যে ঘূর্ণিঝড় বইছে সেটা কে বুঝবে?

“আমি এসেছি তোমার সাথে কিছুক্ষণ সময় কাটাতে। এজন্যই আনার ঝামেলা করিনি। তুমি তো যাবে না।”

জ্যোতি বিষন্ন দৃষ্টিতে তাকালো মাহিরার দিকে।

“জানোই তো কেনো যাচ্ছি না।”

মাহিরা বেডে বসতে বসতে বললো,

“জানি ভাবী। এজন্যই তোমাকে যেতেও বলছি না৷ কী বলবো বলো? নিজের পরিবার নিয়ে আমি নিজেই লজ্জিত!”

“আহ-হা, তোমার লজ্জা পাওয়ার কিছু নেই মাহি। বরং ওই বাড়িতে তোমার সাথে কাটানো সময়গুলোই আমার কাছে স্বস্তির ছিলো।

দুজনেই চুপ হয়ে গেলো। কথা বলার অনেক আছে, কিন্তু মুখে আসছে না কারোরই।

কথা খুঁজে না পেয়ে মাহিরা বললো,

” ভাবী, ভাইয়া অনেক ফলফ্রুট পাঠিয়েছে তোমার জন্য।”

জ্যোতি হেসে ফেললো।

“আমার জন্য? নাকি আমার ভিতরের অস্তিত্বটার জন্য?”

মাহিরা চুপ হয়ে গেলো। কিছুক্ষণ পর বললো,

“শুনেছি তুমি বাচ্চাটা রাখতে চাইছো না?”

জ্যোতি মাহিরার দিকে জিজ্ঞাসু চোখে তাকিয়ে বললো,

“আমার চাওয়া কি অযৌক্তিক কিছু?”

মাহিরা কিছু বলতে পারে না। জ্যোতির সিচুয়েশনটা সে বুঝতে পারছে।

জ্যোতিই কিছুক্ষণ পর বলে,

“আমি হয়তো বাচ্চা রাখবো। কিন্তু তোমার ভাইয়ের কাছে ফিরবো না। বাচ্চাও দিবো না।”

মাহিরা এবার একটু উদ্ভ্রান্ত হয়ে বললো,

“দেখো ভাবী, আমি পড়েছি শাঁখের করাতে। এদিকে গেলেও কাটে, ওদিকে গেলেও কাটে। আমার দু’পক্ষই লাগবে। বাচ্চাও লাগবে, তোমাকেও লাগবে, পরিবারকেও লাগবে। আমি ডিভাইড হতে পারছি না!”

জ্যোতি চুপ হয়ে যায়। একটু পর বলে,

“কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক ভাবে তোমাকে ডিভাইড’ই হতে হবে। কারণ সিচুয়েশনটাই এমন। আর আমিও চাই না তোমার সাথে তোমার পরিবারের দূরত্ব তৈরি হোক। তোমার প্রতি আমার অভিযোগ নেই কোনো।”

মাহিরা জ্যোতির হাতদুটো নিজের হাতে মুষ্টিবদ্ধ করে বললো,

“ভাবী আমি অনেক করে চাই আল্লাহ ভাইয়াকে বুঝ দিক, ভাইয়া তোমার মর্ম বুঝুক। আমি স্বার্থপরের মতোই চাইছি তোমরা আলাদা না হও। তোমার মতো মেয়ে আমার ভাইয়া জীবনেও দ্বিতীয়টি পাবে না!”

“আমাদের জীবনে কিছু কিছু চাওয়া-ই থাকে যেগুলো এক্সিস্ট করে না। যে নিজে থেকে হিদায়েত চায় না আল্লাহ-ও তাকে হিদায়েত দেননা। তোমার ভাইয়ের ক্ষেত্রেও কথাটা প্রযোজ্য। আমি আর কয়েদ হতে চাচ্ছি না।”

মাহিরা টলটলে শীতল মুখটার দিকে চেয়ে থাকে বিষন্ন হয়ে।
তারপর গভীর কন্ঠে বলে,

“আল্লাহ তোমাকে তোমার ভাগের সকল সুখ দিক, ভাবী! সকল সুখ!”

#চলবে…….