#ঔজ্জ্বল্যের_আলোক_প্রহর
#পর্বঃ২২
#লিখাঃতাসফিয়া_তাসনিম
ছোট ছিমছাম দুই বেড রুমের একটা এপার্টমেন্ট। বেশ পরিপাটি করে গুছিয়ে রাখা। জ্যোতি ঘাড় ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে সবটায় চোখ বুলিয়ে দেখতে থাকে। বান্ধবীদের মধ্যে গোছানো স্বভাবের বলে জান্নাতের খ্যাতি ছিলো।
ডাইনিং রুম এবং ড্রয়িং রুম উভয়ই একই সাথে সেট করা। জান্নাত জ্যোতিকে সোফায় বসতে বলে নিজে একটু দূরত্ব রেখে পাশে বসলো।
“আমার ঠিকানা পেলি কোথায়? হুট করে এভাবে আবির্ভাব হলি যে?”
জ্যোতি ফিকে একটা হাসি দেয়। তাকায় মলিন দৃষ্টিতে বান্ধবীর দিকে। সেই দৃষ্টিতে কত অব্যক্ত কথা! জান্নাত থমকে যায় ওই দৃষ্টির বানে।
“আমি আসাতে তুই একদমই খুশি হোসনি, তাই না?”
জ্যোতির সরাসরি প্রশ্নবানে হকচকিয়ে যায় জান্নাত। সে খুশি-অখুশি উভয় অনুভূতির মধ্যে দোদুল্যমান। এ কথা কীভাবে বুঝাবে বান্ধবীকে?
জ্যোতি কথা ঘুরিয়ে প্রশ্ন করে,
“বেবি আছে নাকি তোর শুনলাম? একটু নিয়ে আসবি? দেখি ওকে।”
জান্নাত হাঁপ ছেড়ে বাচলো প্রসঙ্গ পরিবর্তনে।
“ঘুমাচ্ছে, এজন্যই তো ঘর এতো ঠান্ডা।”
জ্যোতি হেসে ফেলে সামান্য। পরক্ষণেই সাবধানে প্রশ্ন করে,
“ঘরে আর কেউ নেই?”
“না।”
তারপর উভয়ই চুপ করে থাকে। জান্নাত কিছুক্ষণ উসখুস করে বলেই ফেলে,
“শুনেছি বিয়ে করেছিস?”
জ্যোতি হালকা হেসে বললো,
“হুম, বাচ্চার মা-ও হয়ে গেছি!”
জান্নাতের চোখ কপালে উঠে গেলো বিস্ময়ে।
“আল্লাহ! কী বলিস! নিয়ে আসলি না কেনো? বয়স কত? মেয়ে?”
“না, ছেলে। বয়স… এইতো, সাড়ে চারমাস। আমারটাকেও ঘুমে রেখে এসেছি। এতদূর একা একা কীভাবে নিয়ে আসতাম?”
“আসছিস যখন ভাইয়াকে সাথে নিয়েই আসতি?”
জ্যোতি একবার ঠোঁট চেপে হেসে বললো,
“প্রথমে তো ঢুকতেই দিচ্ছিলি না। তোর ভাইয়াকে নিয়ে আসলে এই সীন দেখলে উনি বেহুশ হয়ে যেতেন!”
বলেই শব্দ করে হেসে ফেললো সে। জান্নাত বেশ লজ্জা পেলো। আসলেই বেশ তড়িৎ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে সে। এতোটা রূঢ় আচরণ করা ঠিক হয়নি।
“বাবু কি একটু আগেই ঘুমিয়েছে? নাম কী রাখছিস ওর?”
“আফরা রেখেছি নাম। না, একটু আগে ঘুমায়নি। আসলে সারাদিনই ঘুমায়, আর রাতে বাড়ি পাহারা দেয়!”
“আমারটাও!”
বলেই দুই বান্ধবী একযোগে হেসে ফেললো। এটা হয়তো সব মায়েরদেরই অভিযোগ!
জান্নাত জ্যোতিকে বসিয়ে রেখে চট করে ভিতরে চলে গেলো। কিছুক্ষণ বাদে কিছু হালকা পাতলা নাশতা নিয়ে এসে হাজির হলো সে।
জ্যোতি এতে বিরোধিতা করলেও জান্নাত পরোয়াই করলো না বিরোধের। বললো,
“আমার বাসায় এসেছিস, এভাবে খালি মুখে তো যেতে দিবো না। ওর আব্বু থাকলে নিচে থেকে আরও অনেক কিছু নিয়ে আসতো।”
জ্যোতি এবার কিছুটা সাবধান হয়ে গেলো। অতি সাবধানী হয়ে কৌশলে জিজ্ঞেস করলো,
“ভাইয়া থাকে না তোদের সাথে?”
“না, কাজের জন্য অন্য জায়গায় থাকে ও। সাপ্তাহে দুই দিন থাকে আমার সাথে এখানে। কী আর বলবো, অনেক পরিশ্রম করে বেচারা!”
জ্যোতির গলা দিয়ে খাবার আর নামলো না। জান্নাতের দুর্ভাগ্যের কথা কল্পনা করেই তার কলিজা মোচড় দিয়ে উঠলো। সে কোন মুখে ওই কথাটা পাড়বে? জান্নাতের মতো স্বামী ভক্ত নারী এই তিক্ত সত্যের সম্মুখীন হয়ে কেমন প্রতিক্রিয়া দেখাবে? সহ্য করতে পারবে তো এই ধাক্কা?
তবে তারও আগে তার পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়া প্রয়োজন।
“প্রেগ্ন্যাসির পুরোটা সময় একা ছিলি?”
“হুম, তখন অবশ্য ও প্রায় প্রায়ই আসতো। তাছাড়া পাশের ফ্লাটের ভাবীও অনেক হেল্প করেছিলো সেই সময়।”
“আঙ্কেল আন্টির সাথে তোর কন্টাক্ট নেই একদমই?”
জান্নাত এবার গম্ভীর হয়ে গেলো। ভরাট কন্ঠে ছোট করে উত্তর দিলো,
“না।”
“তুই যোগাযোগ করার চেষ্টা করিস নি আর?”
জান্নাত ভীষণ অভিমানী স্বরে জবাব দিলো,
“উনারাই বলেছিলো যোগাযোগ রাখতে না। তাহলে আমি কোন মুখে যোগাযোগ করবো? তাছাড়া আসিফের পছন্দ না আমি আমার আগের জীবনের কারো সাথে যোগাযোগ রাখি।”
জ্যোতি ভিতরে ভিতরে ভীষণ চমকালো। আসিফ? ওর হাসবেন্ডের আসিফ? বিষয়টা তো বেশ ঝামেলার হলো!
নিজের ভাবনা নিজের মধ্যেই আটকে রেখে জ্যোতি হতাশ হয়ে বললো,
“তুই শুধু শুধু উনাদেরকে ভুল বুঝলি। উনারা তোর বাবা মা। তুই উনাদের মেয়ে। উনারা নিশ্চয়ই সজ্ঞানে তোর খারাপ চাইবে না?”
জান্নাত গম্ভীর হয়ে বললো,
“এখন কি তুই উনাদের হয়ে আমার কাছে ওকালতি করবি? এসব কথা না তুললে হয় না? তখনের প্রতিটা মূহুর্ত আমার চোখে আজও ভাসে। কিছুই ভুলিনি আমি।”
জ্যোতি এই প্রসঙ্গে কথা বলাটা সমীচীন মনে করলো না আর। এমনিতেই সামনে আরও কঠিন সিচুয়েশন আসতে পারে। প্রসঙ্গ পাল্টে প্রশ্ন করলো,
“তোর শ্বশুর শ্বাশুড়ি নেই? থাকে না তোদের সাথে?”
এইবারের জান্নাতের সুন্দর মুখটায় বিষাদের ছায়া পড়লো। মলিন হাসি হেসে বললো,
“আসলে আমাদের বিয়ে তারা মেনে নেয়নি!”
জ্যোতি রাগ নিয়ন্ত্রণ করে বললো,
“মানে? এই দুইবছরে আর একবারও তোরা যাসনি উনাদের মানাতে?”
“কীভাবে যাবো? আসিফই তো সব ছেড়ে ছুঁড়ে চলে এসেছে আমার কাছে একসাথে সংসার করবে বলে। আসিফ বলেছিলো তার পরিবার তাকে ত্যাজ্য করেছে। তার পরিবার নিয়ে যেন আর কখনো প্রশ্ন না তুলি। আমিও আর কিছু জিজ্ঞেস করিনি। কারণ দিনশেষে আমার মানুষটা তো আমারই আছে তাই না? অন্য মানুষ না থাকলেও চলবে।”
জ্যোতি মনে মনে তাচ্ছিল্যের হাসি হাসলো শেষ কথাটা শুনে। সত্যিই মেয়েটার মানুষটা মেয়েটারই আছে? ভাগ হয়ে যায়নি?
“বিয়ে করার পর তোকে নিয়ে তোর শ্বশুর বাড়িতে একবারও গিয়েছিলো তোর হাসবেন্ড? বউ নিয়ে গেলে তো মানার কথা।”
“না, আমাকে নিয়ে যায়নি। প্রথমে ফোনে নাকি জানিয়েছিলো, রাজি হয়নি দেখে নিজেও নাকি গিয়েছে মানাতে। কিন্তু উল্টো মার খেয়ে ফিরে এসেছে বেচারা। এরপর আমরা তাদের সকলকে ভুলে দুই টোনাটুনিতে ছোট্ট একটা সংসার পেতেছি। তারপর এইতো, ভালো আছি দুজনে!”
জ্যোতি তাজ্জব হয়ে চেয়ে রইলো সামনের বোকা মেয়েটির দিকে। মেয়েটি কল্পনাও করতে পারবে না তার প্রতারক স্বামী কী নিপুণ ভাবে তার চারপাশে কত শত মিথ্যা আর ছলনার দর্পণের দেয়াল তৈরি করে রেখেছে!
“যাইহোক, আমি সুখে আছি ওর সাথে। এর থেকে বেশি কিছু আমি চাই-ও না।”
“এতো বিশ্বাস করিস?”
“যেখানে আমার নিজের বাবা মা আমাকে ত্যাগ করেছে সেখানে ও আমার হাত শক্ত করে ধরেছে। ওকে বিশ্বাস করবো না তো কাকে করবো?”
জ্যোতি আাস্তে করে একটা দীর্ঘ নিশ্বাস ফেললো। এই মেয়েকে বুঝাতে, তার চোখের পর্দা সরাতে তাকে যে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হবে এটা বেশ বুঝতে পারছে সে।
জ্যোতি পার্স থেকে নিজের ফোন বের করে। গ্যালারি ঘেটে একটা ছবি বের করে কিছুক্ষণ নিচের ঠোঁট দাঁত দিয়ে আঁকড়ে ধরে কিছু ভাবে। তারপর ফোনটা জান্নাতের সামনে ধরে ছবিটি দেখিয়ে বলে,
“এটা ভাইয়া না?”
জান্নাতের ভ্রু জোড়া কুঁচকে যায় ছবিটি দেখে। হালকা মিন্ট কালারের পাঞ্জাবির উপর অফ হোয়াইট কালারের কটি পড়ে সোফায় বসে থাকা লোকটা তো তার আসিফই!
কিঞ্চিৎ বিস্মিত হয়ে বললো,
“হ্যাঁ, কিন্তু কোথায় পেয়েছিস এই ছবি?”
জ্যোতি সন্তপর্ণে জান্নাতের চেহারার অভিব্যক্তিগুলোর পরিবর্তন পর্যবেক্ষণ করছিলো। এই পরিবর্তনগুলোর উপর লক্ষ্য করেই সে চিন্তা করবে বাকি ছবিগুলো এখনই দেখানো ঠিক হবে কিনা।
বান্ধবীর প্রশ্নের উত্তরে সে এবার নিশ্চিত হয় পরিচয় নিয়ে। কিঞ্চিৎ চিবিয়ে চিবিয়ে বললো,
“একটা ফাংশনের ছবি এটা, এনগেজমেন্টের ফাংশন।”
শেষ কথাটায় জ্যোতি অপ্রত্যাশিত জোর দিলো৷
জান্নাত কিঞ্চিৎ অবাক স্বরে বললো,
“কোনো কলিগের এনগেজমেন্ট হবে হয়তো। কই, আমাকে তো একটু বললো না! তুইও গিয়েছিলি?”
জ্যোতি এই প্রশ্নে কী প্রতিক্রিয়া দিবে বুঝতে না পেরে হেসে ফেললো অসহায়ত্বে। মাথা নেড়ে সায় দিয়ে বললো,
“হ্যাঁ, আমার রিলেটিভের এনগেজমেন্ট ছিলো।”
“ওহ।”
জ্যোতি সোফায় হেলান দিলো। কিছুটা সহানুভূতির দৃষ্টিতে বান্ধবীকে দেখে বললো,
“জান্নাত, তুই আসলে ভীষণ বোকা। তোকে ঘোল খাওয়ানো খুবই সোজা, বুঝলি? এজন্যই এতকাল চোখে পর্দা দিয়ে রাখা গিয়েছে।”
জান্নাত বান্ধবীর এমন তীর্যক ব্যাঙ্গ ভরা কথাগুলোর মর্ম উদ্ধার করতে ব্যর্থ হলো। কিন্তু নারী মন তো। ঠিক মনে কোথাও একটা কু ডেকে উঠলো। কিছু একটা ঠিক নেই কোথাও একটা!
“কী বলতে চাচ্ছিস? সরাসরি বল।”
জ্যোতি এবার শেষ দাবার চাল চাললো। সোফা ছেড়ে উঠে বললো,
“তোকে বলে লাভ নেই। তারচে না বলাই ভালো। যাকগে, উঠি তাহলে। আসিস আমাদের বাসায়।”
বলেই জ্যোতি যাওয়ার প্রস্তুতি নিলো।
জান্নাত একমনে ঠোঁট চেপে ধরে কিছু একটা ভাবছে স্থবিরের মতো বসে থেকে।
তার একমন বলছে,
“শুনতে চাস না জান্নাত, শুনতে চাস না! তুই তো সুখে আছিস। শোনা কোনো কথায় কান দিতে যাস না!”
অপর মন বলছে,
“জান্নাত, ভুল করিস না। ওকে চেপে ধর, কী বলতে চায় শুন। তোর জীবনে ভুলের পরিধি অনেক বড়, আর বাড়াসনা।”
জ্যোতি দরজা পর্যন্ত চলে গেলো। তার ভিতরটা অনিশ্চয়তায় কাঁপছে ভীষণভাবে। তার চাল কাজে দিবে তো? জান্নাতের মনে সন্দেহের উদ্রেক হবে তো? কিন্তু যদি না হয়? যদি জান্নাত তাকে না আটকায়? না জোরাজোরি করে সব বলার জন্য? তখন? তখন আর কী? ছ্যাঁচড়া হতে হবে তাকে। এতটুকু ছ্যাঁচড়া যখন হতে পেরেছে তখন বাকিটুকু ছ্যাঁচড়ামিও করতে পারবে!
জ্যোতি দরজা খোলার জন্য হাত বাড়ায় কম্পিত হাতে, হাতলে মোচড় দিয়ে দরজা খুলতেই যাবে এমন সময় জান্নাত হঠাৎ করে ছুটে আসে তার কাছে । দরজা থেকে টেনে তাকে কিছুটা দূরে সরিয়ে এনে শক্ত করে নিজের দুইহাত দিয়ে জ্যোতির একটা হাত চেপে ধরলো। কম্পিত কণ্ঠে বললো,
“না না, তুই বল, আমি শুনতে চাচ্ছি। প্লিজ বল!”
জ্যোতি মনে মনে হাঁপ ছাড়ে। জান্নাতের শুষ্ক মুখে এক ঝলক তাকিয়ে শুকনো একটা ঢোক গিলে। কন্ঠ তালু তার শুকিয়ে কাঠ হয়ে গিয়েছে।
কিছু একটা বলার জন্য মুখ খুলে আবার বন্ধ করে ফেললো সে। ওদিকে জান্নাত তার ডাগর ডাগর চোখজোড়া মেলে আশংকা নিয়ে তাকিয়ে আছে তার দিকে।
“কী বলতে চাচ্ছিস? প্লিজ বল না, কী বলতে গিয়েও বলতে পারছিস না তুই? আল্লাহর দোহাই সব খুলে বল আমাকে!”
জ্যোতি স্থবিরের মতো দাঁড়িয়ে থাকে। সে কোন মুখে সামনের মেয়েটিকে বলবে তার সর্বনাশের কথা? কীভাবে বলবে, ‘শুনো মেয়ে, তোমার সর্বনাশ হয়ে গিয়েছে!’?
জ্যোতি নিজের ভেতরের অনুভূতির উথাল-পাথাল নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করলো। বড় করে কয়েকবার দম নিয়ে বললো,
“তুই বোস একজায়গায়। আমি বলবো তবে এক শর্তে। শর্তে রাজি থাকলে শুন না থাকলে আমাকে আজকে বিদায় দে।”
জান্নাত কাঁপতে কাঁপতে সোফায় বসে। কম্পিত কণ্ঠে বলে,
“কী শর্ত?”
জ্যোতি বান্ধবীর পাশে বসে টি টেবিলের উপর রাখা জগ থেকে এক গ্লাস পানি ঢেলে বান্ধবীর দিকে বাড়িয়ে দেয়,
“খা, পানি খা আগে৷ রিল্যাক্স হো।”
জান্নাত এক ঢোকে সবটুকু পানি নিঃশেষ করে গ্লাসটা সশব্দে টেবিলে রাখে। জ্যোতি কিঞ্চিৎ কেঁপে ওঠে এতে।
নিজেকে শান্ত করার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে জান্নাত এবার শীতল কণ্ঠে প্রশ্ন করলো,
“কী শর্ত, শুনি?”
জ্যোতি বড় দম নিয়ে বললো,
“প্রতিজ্ঞা কর আমার কথা মন দিয়ে শান্ত হয়ে শুনবি? কোনো বাজে রিয়েক্ট করবি না? সব শুনার পর আমার সাজেশনগুলো শুনবি?”
জান্নাত এক দৃষ্টিতে চেয়ে থাকে বান্ধবীর দিকে। তারপর চোয়াল শক্ত করে বলে,
“হ্যাঁ, করলাম প্রতিজ্ঞা!”
জ্যোতি দীর্ঘশ্বাস ফেলে সশব্দে। কিছুক্ষণ চুপ করে থাকে, সম্ভবত কোথা থেকে শুরু করবে তার কূল খুঁজছে। জান্নাতের কাছে অসহ্য ঠেকছে এই নীরবতা। স্নায়ুতে প্রচন্ড বাজে ভাবে চাপ ফেলছে। অবশেষে জ্যোতি বলে,
“তোর হাসবেন্ড বিয়ে করছে আবার!”
জান্নাত ছিটকে উঠে দূরে সরে গেলো, যেন বিস্ফোরণ হয়েছে জায়গাটায়।
তীব্র দৃষ্টিতে বান্ধবীর দিকে চেয়ে রইলো মেয়েটা। চোখে কি অবিশ্বাস? কার প্রতি? স্বামীর প্রতি? না, এটা তো বান্ধবীর প্রতি! চোখের দৃষ্টি দিয়েই জান্নাত যেন ভস্ম করে দিবে জ্যোতিকে। জ্যোতি হতাশা গোপন করলো নিজের মধ্যে। আসল সত্য জানার পর মেয়েটার সুন্দর দুই চোখের সেই তীব্র দৃষ্টি একই থাকবে তো?
“মজা করছিস আমার সাথে তাই না? তোরা প্ল্যান করেছিস এনগেজমেন্টের ফাংশনে আমাকে যাচাই করে দেখার জন্য তাই না? প্র্যাংক করছিস আমার সাথে? যদি এটা প্র্যাংক জাতীয় কিছু হয় তাহলে জ্যোতি এর পরিণাম ভালো হবে না কিন্তু! আমি এমন মজা বরদাস্ত করবো না! ”
জ্যোতি শুষ্ক হাসি ফুটিয়ে বললো,
“এটা প্র্যাংক হলে আমার থেকে খুশি কেউ হতো না জান্নাত!”
জান্নাত তড়িৎ গতিতে জ্যোতির কাছে আসে, হিসহিসিয়ে বলে,
“কী প্রমাণ আছে তোর কাছে? এত বড় অভিযোগ যখন করছিস তখন হাতে প্রমাণও নিশ্চয়ই আছে?”
জ্যোতি বান্ধবীর প্রতিক্রিয়া দেখে তাচ্ছিল্যের হাসি হাসলো,
“ঠিক বলেছিস। আমি জানতাম এমন কিছুই হবে। তাই প্রমাণও সাথেই নিয়ে এসেছি।”
জ্যোতি ফোনের গ্যালারি থেকে আরও একটা ছবি বের করে আস্তে করে টি টেবিলের উপর রাখে।
জান্নাত ছবিটায় এক ঝলক চোখ বুলিয়েই তীব্র ভাবে ঝটকা খেলো যেন। তৎক্ষনাৎ ছো মেরে ফোনটা নিজের চোখের সামনে ধরলো। বার কয়েক চোখ পিটপিট করতে থাকলো, যেন সে চোখে ভুল দেখছে। কিন্তু এতে কী সত্য বদলায়? সত্য তো ঠিকই আগের জায়গাতেই রয়েছে ফণা তুলে তাকে দংশন করার জন্য!
ছবিতে আসিফের সাথে আরেকটা মেয়ে পাশাপাশি বসে আছে বড় সোফায়। দুজনকে কী হাসিখুশি দেখাচ্ছে! যেন এই মূহুর্তে পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষ শুধু তারা দুজন! জান্নাতের দম আটকে আসতে লাগলো।
“মেয়েটা আমার ননদ! তিনদিন আগেই তাদের এনগেজমেন্ট হয়েছে! নেক্সট ফ্রাইডে তাদের বিয়ে!”
জ্যোতি করুণ চোখে জান্নাতের দিকে চেয়ে বললো।
এবার জান্নাতের শ্বাসকষ্ট বাড়তে লাগলো। মূহুর্তেই প্যানিক এট্যাক শুরু হয়ে গেলো তার। এত ছটফট করতে থাকলো বাইনমাছের মতো যে জ্যোতি ভয় পেয়ে গেলো!
“জান্নাত! জান্নাত! কী হয়েছে তোর! এরকম করছিস কেনো? সব ঠিক হয়ে যাবে, প্লিজ তুই শান্ত হো!”
জ্যোতি বান্ধবীকে ধরে কেঁদে ফেলে শব্দ করে। জান্নাতের অবস্থা দেখে তার ভয় হচ্ছে ভীষণ! ভীষণ ভয়!
জান্নাত অতিকষ্টে উচ্চারণ করলো,
“ইনহেলার…. আমার….রুমের… ড্রয়ারে…”
জ্যোতি বান্ধবীকে ছেড়ে এক ছুটে জান্নাতের শোবার ঘরে যায়। কিন্তু মরার উপর খাঁড়া ঘা হয়ে আফরাও ঠিক সেই সময় জেগে ওঠে কাঁদতে আরম্ভ করলো। জ্যোতি যেন অথৈ সমুদ্রে ছলাৎ করে পড়লো। কী করবে সে এখন? একদিকে বান্ধবীর অবস্থা আশংকাজনক, অন্যদিকে বাচ্চাটা তারস্বরে কাঁদছে! জ্যোতির মাথা যেন কয়েক মূহুর্তের জন্য কাজ করা বন্ধ করে দিলো!
#চলবে…..
#ঔজ্জ্বল্যের_আলোক_প্রহর
#পর্বঃ২৩
#লিখাঃতাসফিয়া_তাসনিম
জ্যোতি ফ্যাকাসে মুখে তাকিয়ে আছে সামনে অনতিদূরে পাথরের মূর্তির অনুরূপ প্রাণহীন সত্ত্বার ন্যায় মেঝেতে বসে থাকা মেয়েটার দিকে। কেউ যেন খুব নির্মমভাবে শুষে নিয়েছে মেয়েটির ভিতরের সঞ্জীবনী শক্তি। জ্যোতির ভয় হলো এমন নিথর নিষ্প্রাণ চাহুনি দেখে।
জ্যোতিও মেঝেতে বসে আছে। কোলে জান্নাতের বছর খানেকের মেয়েটা। আফরা কোলে থাকতে চাইছে না দেখে জ্যোতি আলতো করে মেঝেতে ছেড়ে দিলে সে ভীষণ উচ্ছ্বসিত হয়ে হামাগুড়ি দিয়ে মায়ের কাছে যায়। কোমল তুলতুলে হাত দিয়ে মাকে ধাক্কাতে থাকে তৎক্ষনাৎ। জ্যোতি ব্যথাতুর দৃষ্টিতে দেখলো বাচ্চাটির মায়ের কোলে উঠার নিষ্ফল আবেদন। মেয়ের স্পর্শেও জান্নাতের কোনো হেলদোল নেই। সে যেন পৃথিবীতেই নেই। যেন তার আত্মা অন্যত্র গিয়েছে তার দেহকে এমন অবহেলায় ফেলে রেখে।
জ্যোতি আফরাকে সরিয়ে দেয় জান্নাতের থেকে। আফরা কতক সময় নাছোড়বান্দার মতো লেগে থেকেও যখন কোনো ফল পেলো না তখন নিজেই অন্যত্র হামাগুড়ি দিয়ে গিয়ে আনমনে খেলনা দিয়ে খেলতে লাগলো।
জ্যোতি নরম কন্ঠে ডাকে,
“জান্নাত।”
কোনো প্রতিক্রিয়াই নেই! আবার ডাকে, এবার একটু জোরে,
“জান্নাত!”
জান্নাতের রক্তশূণ্য মুখায়বের পাথরের মতো চোখে এবার কিঞ্চিৎ প্রাণের স্পন্দন হয় যেন, অক্ষি পল্লবে কিঞ্চিৎ কাঁপন ধরে। তারপর ঘাড় ঘুরিয়ে বান্ধবীর দিকে তাকায় পাথুরে দৃষ্টিতে, যেই দৃষ্টিতে নেই কোনো আবেদন, স্বাভাবিক চপলতা।
“ও বলতো আমার চোখে ও বিশ্ব দেখতে পায়, ওর পুরো জগৎ দেখতে পায় এই চোখজোড়ায়। এই চোখে নাকি অশ্রু মানায় না। অথচ দেখ, আমার জীবনে সবথেকে বড় আঘাতটাই ও করলো। তারপরও আমার এই চোখে অশ্রু না এসে পারে কীভাবে?”
জ্যোতির গায়ে কাঁটা দিলো। কথাগুলো কেমন অদ্ভুতুরে শোনালো তার নিকট।
জান্নাত আবার বোবামূর্তি ধারণ করে।
আরো সময় বয়ে চলে। তারপর জান্নাতই মুখ খুলে,
“ছবি কি তোর কাছে এই একটাই আছে?”
জ্যোতি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ফোন হাতে নেয়। গ্যালারি ঘেটে এনগেজমেন্টের ফোল্ডারটা বের করে ফোনটা আস্তে করে জান্নাতের সামনে মেঝেতে রাখে। জান্নাত একঝলক চোখ বুলায়। তারপর হাত বাড়িয়ে তুলে নেয় সেটা। জ্যোতি লক্ষ্য করে মেয়েটার হাতের অস্বাভাবিক কম্পন। কিন্তু কিছুই করার নেই। আজ হোক বা কাল, এটা তো সামনে আসারই ছিলো। তাও শুকরিয়া, অরোরার বিয়ের আগেই বিষয়টা অন্তত কারো সামনে এসেছে।
জান্নাতের রুগ্ন আঙুল স্লাইড করে যায় একের পর এক ছবি। কত শত অ্যাঙ্গেলে, কত শত পোজে, কত কত আবেদনে তোলা প্রতিটা ছবি! পরস্পরের হাত ধরে, আংটি পরানো অবস্থায়, লাজুক হাসিতে……. জান্নাতের ভিতরের নারীসত্ত্বা আর বাঁধ মানতে পারলো না নিজের মানুষটার অন্য নারীর প্রতি আবেদন দেখে।
বাঁধ ভাঙা ঢেউয়ের মতো ভেঙে পড়লো বুকফাটা কান্নায়। জ্যোতি হাঁটুতে ভর দিয়ে দ্রুত এগিয়ে যায় তার দিকে। বাহুবন্ধনী দিয়ে উষ্ণ আলিঙ্গন করে বান্ধবীকে। সান্ত্বনা দেওয়া ছাড়া কিই-বা করার আছে তার?
অনেকক্ষণ পর জান্নাত স্থির হয়।
জ্যোতি ছেড়ে তার পাশে বসে। জান্নাতের মুখ দেখে তাকে অপ্রকৃতস্থের মতো লাগছে।
কতক্ষণ স্থবিরের মতো থেকে হঠাৎ বলে উঠে,
“আমার এখন কী হবে রে জ্যোতি!”
জ্যোতি নির্বাক হয়ে থাকে।
“আমার নিজের বলতে এই একটা মানুষই ছিলো। পরিবার পরিজন সব ছেড়েছি ওর খাতিরে। আমার বুঝি এই প্রতিদান প্রাপ্য? এই একটুখানি অহংকার-ই তো আমার নিজের বলতে ছিলো, আমার একটা নিজের মানুষ আছে! ওটাও এখন আমার হাতছাড়া হলো!”
জ্যোতি চুপ করে থাকে।
জান্নাত অপ্রকৃতস্থের মতো বলে যায়,
“আমার অভিশাপ লেগেছে, বুঝলি? আসার আগে আব্বু আম্মু বলেছিলো আমি সুখী হতে পারবো না। তাদের হায় লাগবে আমার। দেখ, সত্যি সত্যি লেগেছে!”
জ্যোতি দ্রুত বলে,
“হুশশশ। এগুলো বলে না। বাবা মার মুখের কথা আর মনের কথা এক হয় না। তুই তাদের মনে আঘাত দিয়ে ফেলেছিলি। তাই আক্ষেপে মনের কষ্টে ওসব বলেছে। সত্যি সত্যি বলেনি।”
জান্নাত হঠাৎ তড়িঘড়ি করে গাল মুছে সরাসরি জ্যোতির দিকে তাকিয়ে বললো,
“এই জ্যোতি, শোন না। তুই-তুই বিয়েটা ভেঙে দে। তোর ননদের সাথে হতে দিস না বিয়েটা। ওর শ্বশুর বাড়িতে জানিয়ে দে ছেলেটার একটা বউ, একটা বাচ্চা আছে!”
জ্যোতি করুণ চোখে মেয়েটার নিষ্ফল আহাজারি দেখতে থাকে।
“আচ্ছা, আমি নাহয় বললাম। তারা বিশ্বাস করলো কি করলো না সেই হিসেব নাহয় বাদই দিলাম। কিন্তু তুই বল, তুই এসব জানার পরেও এই প্রতারকের সাথে সংসার করে যাবি?”
জান্নাত রোবটের মতো বলে,
“হয়তো ওর ফ্যামিলি প্রেসার দিচ্ছিলো। তাই বাধ্য হয়ে করছে বিয়েটা।”
কথাটা তার নিজের কানেই বেখাপ্পা ঠেকলো তার। এর থেকে ফাঁকা বুলি আর হয় নাকি?
জ্যোতি দুঃখে হেসে ফেললো মেয়েটার নিজেকে বোকা বানানোর প্রয়াস দেখে।
“তাই, না? যে ফ্যামেলি ও ছেড়েই এলো, সেই ফ্যামেলি ওকে প্রেসারাইজড করলো আর ওও সুবোধ বালকের মতো মেনে নিলো? তাও ভীষণ আনন্দের সাথে এনগেজমেন্ট করলো? আচ্ছা। তাহলে তোর সেই ভরমটুকুও আমি এখন ভাঙছি। ওদের দেড় বছরের মতো জানাশোনা আছে, সম্পর্ক প্রায় এক বছরের! তাহলে সেই হিসেবে তখন যেন তুই কত মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলি?”
জান্নাত স্তব্ধ হয়ে যায়। তার বিশ্বাসের আয়নাগুলো একে একে ভেঙে গুড়িয়ে পড়ছে, নিজে চুরমার হচ্ছে সাথে তাকেও ক্ষতবিক্ষত করছে। এতো বড় ধোঁকা?
“জান্নাত? তারপরও থাকবি?”
জান্নাত শূন্য দৃষ্টিতে তাকালো জ্যোতির দিকে। তারপর ফিসফিসে স্বরে বললো,
“আমার আর কোনো অপশন নেই জ্যোতি!”
জ্যোতি দীর্ঘশ্বাস গোপন করে বললো,
“অপশন ছিলো, কিন্তু তুই নিজে সেসব ছেড়ে এসেছিস। মেয়েদের পায়ের তলা শক্ত থাকতে হয়, পরিবারকে রাখতে হয় খুঁটি হিসেবে। নয়তো কপালে দুর্ভোগ ছাড়া কিছুই থাকে না। আমার গল্পটাও তোকে একদিন শোনাবো। যাকগে, তোর কাটা ঘাঁয়ে নুনের ছিটা আর না দিই। তোর জীবন, সিদ্ধান্ত তোর। তবে একটা কথা বলি, চিটিং ইজন’ট অ্যা মিসটেইক, ইট’স অ্যা চয়েস। যে একবার প্রতারণা করতে পেরেছে সে পরবর্তীতেও করবে না তার কোনো নিশ্চয়তা নেই।
….যাইহোক, আমি বিয়েটা ভাঙতে চাচ্ছি, তারজন্য আমার তোর হেল্প লাগবে।”
জান্নাত চুপ করে থাকে।
জ্যোতি আবার বলে,
“তুই রবিনের সাথে এই বিষয়ে টু শব্দ করবি না। তাহলে ও সতর্ক হয়ে যাবে, বুঝলি?”
জান্নাত শূন্য দৃষ্টিতে তাকায় বান্ধবীর দিকে।
“একবার ওর নাম্বারে একটা আননোন নাম্বার থেকে কল আসে, একটা মেয়ে রবিন নামের কাউকে খুঁজছিলো। আমি ধরেছিলাম। বলেছি এই নামের কেউ নেই। মেয়েটা বললো নাম্বার এটাই। পরে ভেবেছি ক্রস কানেকশন হয়েছে।”
“নামটাও তোকে ভুল বলেছে শালা!”
“কীভাবে? বিয়ের রেজিষ্ট্রেশন করার সময় ওর আইডি কার্ডে আমাকে যে নাম বলেছে সেটাই ছিলো। সম্ভবত এটা ডাক নাম, আমার থেকে লুকিয়েছে।”
“তোর কাছে কাবিননামা, আদার্স ডকুমেন্টস আছে না?”
জান্নাত মাথা নাড়ে।
“এগুলো ওর কাছেই থাকে। আমিও মাথা ঘামাইনি কোনোদিন, প্রয়োজনই পড়েনি।”
জ্যোতি তাজ্জব হয়ে বলে,
“তুই পাগল? এত বোকা কেউ হয়? কোথায় রেখেছে জানিস?”
“না?”
“ফটোকপি, ছবি কিছুই নেই তোর কাছে?”
জান্নাত না-সূচক মাথা নাড়ে। জ্যোতি ভিতরে রাগ অনুভব করলো। একটা মেয়ে এতো গর্দভ হয় কী করে?
“শুন, আমি কালকে আবার আসবো সময় করে। তুই আজকে একটু খুঁজে দেখ কিছু পাস কিনা। আর তোদের একসাথে ছবি আছে না?”
জান্নাত অনিশ্চিত ভাবে বলে,
“আমার ফোনে নেই, ফোন চুরি হয়েছে আমার আগেরটা৷ ওর ফোনে আছে সম্ভবত।”
“আল্লাহ ধৈর্য দেও।”
জ্যোতি নিজেকে শান্ত করতে মনে মনে বলে।
“আচ্ছা তুই খুঁজে দেখ, ছবির প্রয়োজন আছে। তোর সাথে দেখা করতে আসলে আফরা সহ ক্লোজ ছবি তুলিস। লাগবে এগুলো।”
জান্নাতের মুখে এবার তাচ্ছিল্যের হাসি ফুটে ওঠে।
“গত সপ্তাহেও আসেনি। বলেছে কাজের অনেক চাপ। অনেক ব্যস্ত। আমিও বিশ্বাস করেছি। অথচ তার ব্যস্তটা তো ছিলো অন্য কিছুই নিয়ে!”
____________________°_________________
জ্যোতি বাসায় ফিরে এসে দেখে শাহরিয়ার ড্রয়িং রুমে বসে আছে, কোলে জুবায়ের। জ্যোতি শাহরিয়ারকে দেখে একটু অপ্রস্তুত হয়ে যায়। শাহরিয়ার সেটা লক্ষ্য করে। সে বসা থেকে উঠে গম্ভীর মুখে একটু অদ্ভুত স্বরে বলে,
“কোথায় গিয়েছিলে তুমি?”
“এই তো,, বান্ধবীর বাসায় গিয়েছিলাম একটু।”
শাহরিয়ার শীতল কণ্ঠে বললো,
“এতক্ষণ? জুবায়েরকে রেখে? আমিই তো এসেছি প্রায় দুই ঘন্টার মতো হয়ে গেছে। তুমি তো আমার আসার আরও আগে গিয়েছো।”
জ্যোতি চুপ করে থাকে।
শাহরিয়ার বেশ শক্ত কন্ঠে কিছুটা উঁচু গলায় বললো,
“জুবায়ের দুধের শিশু জ্যোতি! এতোক্ষণ ওকে ছাড়া বাইরে থাকা তোমার ঠিক হয়নি!”
শাহরিয়ারের কন্ঠের কাঠিন্য বেশ টের পায় জ্যোতি, ভিতরে কিছুটা কেঁপে ওঠে।
“আমি ভাবিনি এতো দেরি হয়ে যাবে। স্যরি।”
শাহরিয়ার আর কিছু বলে না। কিন্তু চেহারায় কাঠিন্য ঠিকই বহাল থাকে। স্ত্রীর এমন লা-পরোয়া আচরণে বেশ বিরক্ত হয়েছে সে।
____________________°_________________
জ্যোতি হতাশ হয়ে বসে থাকে। জান্নাতও মুখ নিচু করে থাকে ব্যর্থতায়।
“সত্যি পাসনি কিছু?”
জান্নাত মাথা নাড়ে না জানায়।
“কিন্তু এগুলো ছাড়া কীভাবে প্রমাণ করবো সব?”
“আজকে ও আসবে রাতে।”
জ্যোতির মুখ উজ্জ্বল হয়।
“আজকে রাতে যেভাবেই হোক তোদের তিনজনের একসাথে ছবি তুলবি। যত ক্লোজ হবে তত ভালো। প্রয়োজন ফোন লুকিয়ে রেখে কিছু ভিডিও রাখবি, যেমন বাবুর সাথে খেলা, তোর সাথে কথা বলা। সজাগ অবস্থায় না পারলে ঘুমন্ত অবস্থায় তুলবি। মোট কথা যা পারবি তা করবি, মাথায় থাকবে? এটাই লাস্ট সুযোগ। আর আজকে কৌশলে জিজ্ঞেস করবি বিয়ের কাবিননামা, অন্যান্য ডকুমেন্টস কোথায় রেখেছে।”
“হু!”
“কিন্তু কোনো ডকুমেন্টসই নেই তোর কাছে? কিছু তো থাকবে, তাই না?”
জান্নাত কী যেন ভাবে, তারপর বলে,
“আফরার বার্থ সাটিফিকেট, জন্ম নিবন্ধন এগুলো আমার কাছে আছে। ওগুলোতে বাবা মায়ের জায়গায় আমাদের নাম আছে। হবে ওগুলোতে?”
জ্যোতির মুখ উজ্জ্বল হয় তাৎক্ষণিক ভাবে।
“হবে হবে, একশোবার হবে! তুই শুধু এবার ছবি ভিডিওর ব্যবস্থা কর।”
রবিনের পুরো নাম জেনে নিয়েছে জ্যোতি গতকাল মাহিরার থেকে। আসিফ চৌধুরী, ডাক নাম রবিন। তাই নামে সমস্যা হবে না।
এখন শুধু সবার সামনে সবটা আনার অপেক্ষা! আজকেই জ্যোতি ফিরে যাবে শাহবাজ ম্যানশনে। শাহরিয়ারকে আজই সব জানাবে সে! এরপর যা হয় দেখা যাবে!
#চলবে….