#ঔজ্জ্বল্যের_আলোক_প্রহর
#পর্বঃ২৩
#লিখাঃতাসফিয়া_তাসনিম
জ্যোতি ফ্যাকাসে মুখে তাকিয়ে আছে সামনে অনতিদূরে পাথরের মূর্তির অনুরূপ প্রাণহীন সত্ত্বার ন্যায় মেঝেতে বসে থাকা মেয়েটার দিকে। কেউ যেন খুব নির্মমভাবে শুষে নিয়েছে মেয়েটির ভিতরের সঞ্জীবনী শক্তি। জ্যোতির ভয় হলো এমন নিথর নিষ্প্রাণ চাহুনি দেখে।
জ্যোতিও মেঝেতে বসে আছে। কোলে জান্নাতের বছর খানেকের মেয়েটা। আফরা কোলে থাকতে চাইছে না দেখে জ্যোতি আলতো করে মেঝেতে ছেড়ে দিলে সে ভীষণ উচ্ছ্বসিত হয়ে হামাগুড়ি দিয়ে মায়ের কাছে যায়। কোমল তুলতুলে হাত দিয়ে মাকে ধাক্কাতে থাকে তৎক্ষনাৎ। জ্যোতি ব্যথাতুর দৃষ্টিতে দেখলো বাচ্চাটির মায়ের কোলে উঠার নিষ্ফল আবেদন। মেয়ের স্পর্শেও জান্নাতের কোনো হেলদোল নেই। সে যেন পৃথিবীতেই নেই। যেন তার আত্মা অন্যত্র গিয়েছে তার দেহকে এমন অবহেলায় ফেলে রেখে।
জ্যোতি আফরাকে সরিয়ে দেয় জান্নাতের থেকে। আফরা কতক সময় নাছোড়বান্দার মতো লেগে থেকেও যখন কোনো ফল পেলো না তখন নিজেই অন্যত্র হামাগুড়ি দিয়ে গিয়ে আনমনে খেলনা দিয়ে খেলতে লাগলো।
জ্যোতি নরম কন্ঠে ডাকে,
“জান্নাত।”
কোনো প্রতিক্রিয়াই নেই! আবার ডাকে, এবার একটু জোরে,
“জান্নাত!”
জান্নাতের রক্তশূণ্য মুখায়বের পাথরের মতো চোখে এবার কিঞ্চিৎ প্রাণের স্পন্দন হয় যেন, অক্ষি পল্লবে কিঞ্চিৎ কাঁপন ধরে। তারপর ঘাড় ঘুরিয়ে বান্ধবীর দিকে তাকায় পাথুরে দৃষ্টিতে, যেই দৃষ্টিতে নেই কোনো আবেদন, স্বাভাবিক চপলতা।
“ও বলতো আমার চোখে ও বিশ্ব দেখতে পায়, ওর পুরো জগৎ দেখতে পায় এই চোখজোড়ায়। এই চোখে নাকি অশ্রু মানায় না। অথচ দেখ, আমার জীবনে সবথেকে বড় আঘাতটাই ও করলো। তারপরও আমার এই চোখে অশ্রু না এসে পারে কীভাবে?”
জ্যোতির গায়ে কাঁটা দিলো। কথাগুলো কেমন অদ্ভুতুরে শোনালো তার নিকট।
জান্নাত আবার বোবামূর্তি ধারণ করে।
আরো সময় বয়ে চলে। তারপর জান্নাতই মুখ খুলে,
“ছবি কি তোর কাছে এই একটাই আছে?”
জ্যোতি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ফোন হাতে নেয়। গ্যালারি ঘেটে এনগেজমেন্টের ফোল্ডারটা বের করে ফোনটা আস্তে করে জান্নাতের সামনে মেঝেতে রাখে। জান্নাত একঝলক চোখ বুলায়। তারপর হাত বাড়িয়ে তুলে নেয় সেটা। জ্যোতি লক্ষ্য করে মেয়েটার হাতের অস্বাভাবিক কম্পন। কিন্তু কিছুই করার নেই। আজ হোক বা কাল, এটা তো সামনে আসারই ছিলো। তাও শুকরিয়া, অরোরার বিয়ের আগেই বিষয়টা অন্তত কারো সামনে এসেছে।
জান্নাতের রুগ্ন আঙুল স্লাইড করে যায় একের পর এক ছবি। কত শত অ্যাঙ্গেলে, কত শত পোজে, কত কত আবেদনে তোলা প্রতিটা ছবি! পরস্পরের হাত ধরে, আংটি পরানো অবস্থায়, লাজুক হাসিতে……. জান্নাতের ভিতরের নারীসত্ত্বা আর বাঁধ মানতে পারলো না নিজের মানুষটার অন্য নারীর প্রতি আবেদন দেখে।
বাঁধ ভাঙা ঢেউয়ের মতো ভেঙে পড়লো বুকফাটা কান্নায়। জ্যোতি হাঁটুতে ভর দিয়ে দ্রুত এগিয়ে যায় তার দিকে। বাহুবন্ধনী দিয়ে উষ্ণ আলিঙ্গন করে বান্ধবীকে। সান্ত্বনা দেওয়া ছাড়া কিই-বা করার আছে তার?
অনেকক্ষণ পর জান্নাত স্থির হয়।
জ্যোতি ছেড়ে তার পাশে বসে। জান্নাতের মুখ দেখে তাকে অপ্রকৃতস্থের মতো লাগছে।
কতক্ষণ স্থবিরের মতো থেকে হঠাৎ বলে উঠে,
“আমার এখন কী হবে রে জ্যোতি!”
জ্যোতি নির্বাক হয়ে থাকে।
“আমার নিজের বলতে এই একটা মানুষই ছিলো। পরিবার পরিজন সব ছেড়েছি ওর খাতিরে। আমার বুঝি এই প্রতিদান প্রাপ্য? এই একটুখানি অহংকার-ই তো আমার নিজের বলতে ছিলো, আমার একটা নিজের মানুষ আছে! ওটাও এখন আমার হাতছাড়া হলো!”
জ্যোতি চুপ করে থাকে।
জান্নাত অপ্রকৃতস্থের মতো বলে যায়,
“আমার অভিশাপ লেগেছে, বুঝলি? আসার আগে আব্বু আম্মু বলেছিলো আমি সুখী হতে পারবো না। তাদের হায় লাগবে আমার। দেখ, সত্যি সত্যি লেগেছে!”
জ্যোতি দ্রুত বলে,
“হুশশশ। এগুলো বলে না। বাবা মার মুখের কথা আর মনের কথা এক হয় না। তুই তাদের মনে আঘাত দিয়ে ফেলেছিলি। তাই আক্ষেপে মনের কষ্টে ওসব বলেছে। সত্যি সত্যি বলেনি।”
জান্নাত হঠাৎ তড়িঘড়ি করে গাল মুছে সরাসরি জ্যোতির দিকে তাকিয়ে বললো,
“এই জ্যোতি, শোন না। তুই-তুই বিয়েটা ভেঙে দে। তোর ননদের সাথে হতে দিস না বিয়েটা। ওর শ্বশুর বাড়িতে জানিয়ে দে ছেলেটার একটা বউ, একটা বাচ্চা আছে!”
জ্যোতি করুণ চোখে মেয়েটার নিষ্ফল আহাজারি দেখতে থাকে।
“আচ্ছা, আমি নাহয় বললাম। তারা বিশ্বাস করলো কি করলো না সেই হিসেব নাহয় বাদই দিলাম। কিন্তু তুই বল, তুই এসব জানার পরেও এই প্রতারকের সাথে সংসার করে যাবি?”
জান্নাত রোবটের মতো বলে,
“হয়তো ওর ফ্যামিলি প্রেসার দিচ্ছিলো। তাই বাধ্য হয়ে করছে বিয়েটা।”
কথাটা তার নিজের কানেই বেখাপ্পা ঠেকলো তার। এর থেকে ফাঁকা বুলি আর হয় নাকি?
জ্যোতি দুঃখে হেসে ফেললো মেয়েটার নিজেকে বোকা বানানোর প্রয়াস দেখে।
“তাই, না? যে ফ্যামেলি ও ছেড়েই এলো, সেই ফ্যামেলি ওকে প্রেসারাইজড করলো আর ওও সুবোধ বালকের মতো মেনে নিলো? তাও ভীষণ আনন্দের সাথে এনগেজমেন্ট করলো? আচ্ছা। তাহলে তোর সেই ভরমটুকুও আমি এখন ভাঙছি। ওদের দেড় বছরের মতো জানাশোনা আছে, সম্পর্ক প্রায় এক বছরের! তাহলে সেই হিসেবে তখন যেন তুই কত মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলি?”
জান্নাত স্তব্ধ হয়ে যায়। তার বিশ্বাসের আয়নাগুলো একে একে ভেঙে গুড়িয়ে পড়ছে, নিজে চুরমার হচ্ছে সাথে তাকেও ক্ষতবিক্ষত করছে। এতো বড় ধোঁকা?
“জান্নাত? তারপরও থাকবি?”
জান্নাত শূন্য দৃষ্টিতে তাকালো জ্যোতির দিকে। তারপর ফিসফিসে স্বরে বললো,
“আমার আর কোনো অপশন নেই জ্যোতি!”
জ্যোতি দীর্ঘশ্বাস গোপন করে বললো,
“অপশন ছিলো, কিন্তু তুই নিজে সেসব ছেড়ে এসেছিস। মেয়েদের পায়ের তলা শক্ত থাকতে হয়, পরিবারকে রাখতে হয় খুঁটি হিসেবে। নয়তো কপালে দুর্ভোগ ছাড়া কিছুই থাকে না। আমার গল্পটাও তোকে একদিন শোনাবো। যাকগে, তোর কাটা ঘাঁয়ে নুনের ছিটা আর না দিই। তোর জীবন, সিদ্ধান্ত তোর। তবে একটা কথা বলি, চিটিং ইজন’ট অ্যা মিসটেইক, ইট’স অ্যা চয়েস। যে একবার প্রতারণা করতে পেরেছে সে পরবর্তীতেও করবে না তার কোনো নিশ্চয়তা নেই।
….যাইহোক, আমি বিয়েটা ভাঙতে চাচ্ছি, তারজন্য আমার তোর হেল্প লাগবে।”
জান্নাত চুপ করে থাকে।
জ্যোতি আবার বলে,
“তুই রবিনের সাথে এই বিষয়ে টু শব্দ করবি না। তাহলে ও সতর্ক হয়ে যাবে, বুঝলি?”
জান্নাত শূন্য দৃষ্টিতে তাকায় বান্ধবীর দিকে।
“একবার ওর নাম্বারে একটা আননোন নাম্বার থেকে কল আসে, একটা মেয়ে রবিন নামের কাউকে খুঁজছিলো। আমি ধরেছিলাম। বলেছি এই নামের কেউ নেই। মেয়েটা বললো নাম্বার এটাই। পরে ভেবেছি ক্রস কানেকশন হয়েছে।”
“নামটাও তোকে ভুল বলেছে শালা!”
“কীভাবে? বিয়ের রেজিষ্ট্রেশন করার সময় ওর আইডি কার্ডে আমাকে যে নাম বলেছে সেটাই ছিলো। সম্ভবত এটা ডাক নাম, আমার থেকে লুকিয়েছে।”
“তোর কাছে কাবিননামা, আদার্স ডকুমেন্টস আছে না?”
জান্নাত মাথা নাড়ে।
“এগুলো ওর কাছেই থাকে। আমিও মাথা ঘামাইনি কোনোদিন, প্রয়োজনই পড়েনি।”
জ্যোতি তাজ্জব হয়ে বলে,
“তুই পাগল? এত বোকা কেউ হয়? কোথায় রেখেছে জানিস?”
“না?”
“ফটোকপি, ছবি কিছুই নেই তোর কাছে?”
জান্নাত না-সূচক মাথা নাড়ে। জ্যোতি ভিতরে রাগ অনুভব করলো। একটা মেয়ে এতো গর্দভ হয় কী করে?
“শুন, আমি কালকে আবার আসবো সময় করে। তুই আজকে একটু খুঁজে দেখ কিছু পাস কিনা। আর তোদের একসাথে ছবি আছে না?”
জান্নাত অনিশ্চিত ভাবে বলে,
“আমার ফোনে নেই, ফোন চুরি হয়েছে আমার আগেরটা৷ ওর ফোনে আছে সম্ভবত।”
“আল্লাহ ধৈর্য দেও।”
জ্যোতি নিজেকে শান্ত করতে মনে মনে বলে।
“আচ্ছা তুই খুঁজে দেখ, ছবির প্রয়োজন আছে। তোর সাথে দেখা করতে আসলে আফরা সহ ক্লোজ ছবি তুলিস। লাগবে এগুলো।”
জান্নাতের মুখে এবার তাচ্ছিল্যের হাসি ফুটে ওঠে।
“গত সপ্তাহেও আসেনি। বলেছে কাজের অনেক চাপ। অনেক ব্যস্ত। আমিও বিশ্বাস করেছি। অথচ তার ব্যস্তটা তো ছিলো অন্য কিছুই নিয়ে!”
____________________°_________________
জ্যোতি বাসায় ফিরে এসে দেখে শাহরিয়ার ড্রয়িং রুমে বসে আছে, কোলে জুবায়ের। জ্যোতি শাহরিয়ারকে দেখে একটু অপ্রস্তুত হয়ে যায়। শাহরিয়ার সেটা লক্ষ্য করে। সে বসা থেকে উঠে গম্ভীর মুখে একটু অদ্ভুত স্বরে বলে,
“কোথায় গিয়েছিলে তুমি?”
“এই তো,, বান্ধবীর বাসায় গিয়েছিলাম একটু।”
শাহরিয়ার শীতল কণ্ঠে বললো,
“এতক্ষণ? জুবায়েরকে রেখে? আমিই তো এসেছি প্রায় দুই ঘন্টার মতো হয়ে গেছে। তুমি তো আমার আসার আরও আগে গিয়েছো।”
জ্যোতি চুপ করে থাকে।
শাহরিয়ার বেশ শক্ত কন্ঠে কিছুটা উঁচু গলায় বললো,
“জুবায়ের দুধের শিশু জ্যোতি! এতোক্ষণ ওকে ছাড়া বাইরে থাকা তোমার ঠিক হয়নি!”
শাহরিয়ারের কন্ঠের কাঠিন্য বেশ টের পায় জ্যোতি, ভিতরে কিছুটা কেঁপে ওঠে।
“আমি ভাবিনি এতো দেরি হয়ে যাবে। স্যরি।”
শাহরিয়ার আর কিছু বলে না। কিন্তু চেহারায় কাঠিন্য ঠিকই বহাল থাকে। স্ত্রীর এমন লা-পরোয়া আচরণে বেশ বিরক্ত হয়েছে সে।
____________________°_________________
জ্যোতি হতাশ হয়ে বসে থাকে। জান্নাতও মুখ নিচু করে থাকে ব্যর্থতায়।
“সত্যি পাসনি কিছু?”
জান্নাত মাথা নাড়ে না জানায়।
“কিন্তু এগুলো ছাড়া কীভাবে প্রমাণ করবো সব?”
“আজকে ও আসবে রাতে।”
জ্যোতির মুখ উজ্জ্বল হয়।
“আজকে রাতে যেভাবেই হোক তোদের তিনজনের একসাথে ছবি তুলবি। যত ক্লোজ হবে তত ভালো। প্রয়োজন ফোন লুকিয়ে রেখে কিছু ভিডিও রাখবি, যেমন বাবুর সাথে খেলা, তোর সাথে কথা বলা। সজাগ অবস্থায় না পারলে ঘুমন্ত অবস্থায় তুলবি। মোট কথা যা পারবি তা করবি, মাথায় থাকবে? এটাই লাস্ট সুযোগ। আর আজকে কৌশলে জিজ্ঞেস করবি বিয়ের কাবিননামা, অন্যান্য ডকুমেন্টস কোথায় রেখেছে।”
“হু!”
“কিন্তু কোনো ডকুমেন্টসই নেই তোর কাছে? কিছু তো থাকবে, তাই না?”
জান্নাত কী যেন ভাবে, তারপর বলে,
“আফরার বার্থ সাটিফিকেট, জন্ম নিবন্ধন এগুলো আমার কাছে আছে। ওগুলোতে বাবা মায়ের জায়গায় আমাদের নাম আছে। হবে ওগুলোতে?”
জ্যোতির মুখ উজ্জ্বল হয় তাৎক্ষণিক ভাবে।
“হবে হবে, একশোবার হবে! তুই শুধু এবার ছবি ভিডিওর ব্যবস্থা কর।”
রবিনের পুরো নাম জেনে নিয়েছে জ্যোতি গতকাল মাহিরার থেকে। আসিফ চৌধুরী, ডাক নাম রবিন। তাই নামে সমস্যা হবে না।
এখন শুধু সবার সামনে সবটা আনার অপেক্ষা! আজকেই জ্যোতি ফিরে যাবে শাহবাজ ম্যানশনে। শাহরিয়ারকে আজই সব জানাবে সে! এরপর যা হয় দেখা যাবে!
#চলবে….
#ঔজ্জ্বল্যের_আলোক_প্রহর
#পর্বঃ২৪
#লিখাঃতাসফিয়া_তাসনিম
জ্যোতি আসার পর থেকে লক্ষ্য করছে শাহরিয়ারের আচরণে কিছুটা অদ্ভুত ভাব বিরাজ করছে। কেমন যেন গা ছাড়া একটা ভাব দেখাচ্ছে সে জ্যোতির সাথে। আসার পর থেকে জ্যোতি সুযোগ খুঁজছে শাহরিয়ারের সাথে কথা বলার। কিন্তু পাচ্ছেই না। হয় সে রুমেই থাকে না, নয়তো যতক্ষণ থাকছে ফোনে কথা বলছে। এখনও সোফায় বসে তাই করছে।
জ্যোতির হাসফাস লাগছে ভীষণ। কখন থেকে কথা বলতে চাইছে সে।
জ্যোতি বিছানা থেকে নেমে পায়ে পায়ে সামনে এসে দাঁড়ায় তার। তাকে এভাবে সম্মুখে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে শাহরিয়ার কথা থামিয়ে তাকায় তার দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে।
সে তবুও দাঁড়িয়ে থাকে চোয়াল শক্ত করে। এবার শাহরিয়ার ফোন মিউট করে জিজ্ঞেস করে,
“কী হয়েছে?”
“আমার গুরুত্বপূর্ণ কথা আছে আপনার সাথে। আপনার ফোনালাপ কখন শেষ হবে?”
শাহরিয়ার স্থিরভাবে কতক্ষণ চেয়ে থাকে তার দিকে। তারপর ফোন কানে ঠেকিয়ে এক্সকিউজ করে কল কেটে দেয়।
“হুম বলো, শুনছি।”
জ্যোতি একটা দম নেয়। তারপর কোনোরকম ভণিতা না করে সোজাসাপ্টা বলে,
“অরোরার বিয়ে ক্যান্সেল করে দেন। এই ছেলে ভালো না।”
শাহরিয়ার কিছুসময় অপলক চোখে জ্যোতির মুখে তাকিয়ে থাকে। অতঃপর পুরো চেহারায় আস্তে আস্তে কাঠিন্য ভর করে। বসা থেকে দাঁড়িয়ে গিয়ে বলে,
“আচ্ছা তোমার সমস্যাটা ঠিক কোথায় বলো তো? বিয়েটা আমার বোনের হচ্ছে, কারো কোনো সমস্যা নেই অথচ সেই শুরু থেকে তুমি অবজেকশন জানিয়ে যাচ্ছো। সমস্যা ঠিক কোথায় সেটা জিজ্ঞেস করলেও বলতে পারছো না। এই বিয়ে ক্যান্সেল করার জন্য এভাবে আদাজল খেয়ে কেনো নেমেছো? কী সমস্যা তোমার?”
জ্যোতি মুখ হা হয়ে গেলো। অবিশ্বাসের দৃষ্টিতে সামনের মানুষটার রাগত চোখের দিকে তাকিয়ে রইলো।
“আজকেও তুমি জুবায়েরকে রেখে কোথাও একটা গিয়েছো। পরপর দুইদিন তুমি বান্ধবীর বাসায় যাবার কথা বলে ওকে একা ফেলে কোথায় গিয়েছো? এভাবে হা করে দেখছো কী? এন্সার মি, ড্যাম ইট!”
জ্যোতি যেন ধাক্কা খেলো জোরেশোরে। ভাষা হারিয়ে চেয়ে রইলো শাহরিয়ারের দিকে।
সম্বিত ফিরে পেতেই চোখ টলমল করে উঠলো তার। সে আর যাই হোক এমন প্রতিক্রিয়া আশা করেনি। তবুও নিজেকে সামলে দাঁতে দাঁত চেপে চাপা কন্ঠে বললো,
“ওই ছেলে ম্যারিড, এক বাচ্চার বাপ! আপনার বোনকে সেফ করার জন্যই আমি বারবার অবজেকশন জানাচ্ছি!”
আকস্মিক এই কথাটা সাথে সাথে শাহরিয়ারের বোধগম্য হলো না। বোধে আসতেই স্তব্ধ হয়ে গেলো যেন সে। তার মুখের অভিব্যক্তি বদলে গেলো তাৎক্ষণিকভাবে। ক্ষিপ্র গতিতে জ্যোতির কাছে এসে উত্তপ্ত কন্ঠে হিসহিসিয়ে উঠলো,
“কী বলছো এসব? মাথা ঠিক আছে তোমার?”
জ্যোতিও ঝটকা মেরে দূরে সরে গেলো। অভিব্যক্তিতে তাচ্ছিল্য এনে তীব্র স্বরে বললো,
“মাথা আমার জায়গা মতোই আছে। যা বলছি আমি ভেবেই বলছি!”
“তোমার কথা আমি কীভাবে বিশ্বাস করবো? প্রমাণ আছে তোমার কাছে?”
এবার জ্যোতি কিছুটা চেঁচিয়ে উঠলো, ক্ষিপ্ত হয়ে বললো,
“আমি যা বলছি সব শিওর হয়েই বলছি! রবিন ম্যারিড, ওর এক বছরের একটা মেয়েও আছে! প্রমাণ চাই আপনার তাই না? আলবাত আছে আমার কাছে প্রমাণ! জলজ্যান্ত প্রমাণ চোখের সামনে হাজির করবো আমি! আমি দুইদিন কোথায় ছিলাম জানতে চাইছেন না—-”
জ্যোতি কথা শেষও করতে পারলো না। ঠিক সেই সময় অপ্রত্যাশিত ঘটনাটা ঘটলো। সশব্দে ভেজানো দরজাটা কেউ ধাক্কা দিয়ে খুললো। ফারিয়া রুমে ঢুকলেন ক্ষিপ্র গতিতে। চেহারা তার রাগে টকটকে হয়ে আছে। কঠিন স্বরে বললেন,
“তোমার কাছে প্রমাণ আছে তাই না? তবে প্রমাণ সামনে এনেই তবে এমন অভিযোগ করো, এর আগে নয়! আর যদি প্রমাণ করতে না পারো তাহলে পরবর্তীতে কী হবে সেটা ভেবে নিও!”
দুজনেই চমকে গেলো৷ ফারিয়া এখানে কী করছেন!
ফারিয়া সেই চিন্তার অবসান ঘটিয়ে হাতের আঙুল শক্ত হয়ে চেপে বসা মেরুন রঙের কার্ডটা দেখিয়ে নিজেই ছেলেকে বললেন,
“বিয়ের কার্ড! কিছুক্ষণ আগেই হাতে পেয়েছি। তোমাকে দেখাতে এসেছিলাম। কিন্তু এখানে তো অন্য ঘটনাই ঘটছে! কান পেতে কিছু শোনার অভ্যাস আমার নেই, কিন্তু যেই হারে চেঁচামেচি হচ্ছে না চাইতেও…….”
তারপর পুত্রবধূর দিকে তীব্র দৃষ্টি হেনে দাঁতে দাঁত পিষে বললেন,
“যদি প্রমাণ করতে না পারো তাহলে স্বীকার করবে তুমি অপবাদ দিয়েছো! নিজের ভুল স্বীকার করবে মাথা হেট করে!”
তারপর কার্ডটা মেঝেতে ছুড়ে ফেলে ঘুরলেন ফিরে যাওয়ার উদ্দেশ্যে। দরজা পর্যন্ত যেতেই জ্যোতির ভীষণ শীতল কণ্ঠ কন্ঠ শুনে থেমে গেলো তার পা।
“আর যদি প্রমাণ করতে পারি ? তখন কী হবে আন্টি? তখন কে ভুল স্বীকার করবে?”
ফারিয়া শিউরে উঠলেন। গায়ের লোম খাঁড়া হয়ে গেলো তার মূহুর্তেই। মনের ভিতর অনুভব করলেন আতংক!
এমনটা না হোক!
আর দাঁড়ানোর সাহস হলো না তার। কোনো প্রতিত্তোর না করে দ্রুত সেখান থেকে একপ্রকার পালিয়ে বাঁচলেন!
শাহরিয়ার কপাল চেপে ধপাস করে বিছানায় বসে পড়লো। মাথা কাজ করছে না তার!
__________________°__________________
রেস্টুরেন্টে গোল টেবিলটায় বসে আছে তিনজন মানব অবয়ব। প্রত্যেকের মুখের অভিব্যক্তি ভিন্ন। কারো হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে, মনে অপরিসীম যন্ত্রণা নিয়ে নিজের সম্পর্কের বৈধতার প্রমাণ দিচ্ছে, কারো চেহারায় ব্যথাতুর দৃষ্টি, আর কারো চেহারায় অস্বাভাবিক কাঠিন্য! ভিতরে ক্রোধ টগবগ করে ফুটছে!
জ্যোতির কোলে আফরা। জুবায়েরকে মিতুর কাছে রেখে এসেছে বাসায়।
জান্নাত কাঁপা কাঁপা হাতে এক গ্লাস পানি খেয়ে রুদ্ধ কন্ঠে বলতে থাকলো,
“দুই বছর আমাদের বৈবাহিক জীবনের। অথচ দুদিন আগেই আমি জানতে পারলাম তার এফেয়ারের বয়স এক বছরেরও বেশি!”
শাহরিয়ার সামনে থাকা প্রিন্ট করা ছবিগুলোর দিকে শীতল চোখে নজর বুলালো। চোখের দৃষ্টি গিয়ে থামলো বার্থ সাটিফিকেট আর জন্ম নিবন্ধনের কাগজদুটোর দিকে। তারপর তাকালো স্ত্রীর কোলে থাকা বাচ্চাটার দিকে।
“আপনার কাছে ম্যারেজ সার্টিফিকেট নেই? কাবিননামা কোথায়?”
জান্নাত মাথা নিচু করে রইলো, তারপর ক্ষীণ এবং কম্পমান কন্ঠে বললো,
“আমাকে যে এতোদিন যাবত অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে তা তো আমি দুদিন আগেই জানতে পেরেছি! সাবধানে রাখার নাম করে বিয়ের ডকুমেন্টস নিজে লুকিয়েছে, আমার সাথে কারো যোগাযোগ রাখতে দেয়নি ভালোবাসার কথা বলে, কাউকে জানাতে দেয়নি আমার ঠিকানা! কড়া নিষেধাজ্ঞা ছিলো কাউকে ছবি আদানপ্রদানের ক্ষেত্রে। আমিও বোকা! ভেবে নিয়েছিলাম মানুষটা আমার জন্য অনেক প্রটেক্টিভ, তাই বুঝি এতো সতর্কতা! অথচ…….”
থেমে যায় সে। দাঁত দিয়ে ঠোঁট আঁকড়ে ধরে নিজের বাধভাঙ্গা কান্না আটকানোর আপ্রাণ চেষ্টা করতে থাকে।
জান্নাত লম্বা করে দম নিয়ে ফের বললো,
“কাবিননামা আমার কাছে রাখতে দেয়নি সে। তবে বাচ্চার সাথে তার কাটানো মূহুর্তের ভিডিও আছে। সেগুলো দেখাতে পারি।”
শাহরিয়ার স্থির হয়ে বসে থাকে সিনা টান করে।
জান্নাত ফোন বের করে। গ্যালারি ওপেন করে ফোন টেবিলে রাখে। গতরাতে আড়াল থেকে করা বেশ কয়েকটা ভিডিও আছে তাতে। শাহরিয়ার সেগুলো দেখে একঝলক। তারপর কিছুক্ষণ বিরাজ করে শ্বাসরুদ্ধকর নিরবতা। হঠাৎ শাহরিয়ার উঠে দাঁড়ায় টেবিল ছেড়ে।
চোয়াল শক্ত করে অদ্ভুত কন্ঠে বলে,
“আপনাকে আমি কী বলে ধন্যবাদ দিবো বুঝতে পারছি না। কত বড় দুর্ঘটনা ঘটতে যাচ্ছিলো আমাদের অজান্তেই….। যাইহোক, আপনার প্রতি কৃতজ্ঞ আমি। আমার স্ত্রীর প্রতিও আমি কৃতজ্ঞ। আপনাকে, আপনার সন্তানকে প্রয়োজন হবে সম্ভবত সামনে, তখন আমাদেরকে সাহায্য করার অনুরোধ রইলো।”
জান্নাত মাথা নেড়ে সায় জানায়। জ্যোতি এক দৃষ্টিতে চেয়ে থাকে স্বামীর শক্ত মুখায়বে। এমন কাঠিন্য এর আগে খেলা করতে দেখেনি সে শাহরিয়ারের চেহারায়। জ্যোতির গা ছমছম করে উঠলো অজানা আশংকায়!
___________________°________________
ফারিয়া স্তব্ধ হয়ে বসে আছেন। উনি যেন নিজের মধ্যেই নেই। সোহাইল সাহেবের মুখ দেখে তার ভিতরের অবস্থা বুঝা যাচ্ছে। অদ্ভুত থমথমে গাম্ভীর্য ভর করে আছে তার আভিজাত্যপূর্ণ মুখাবয়বে। আর শাহরিয়ার? তার হাত বারবার মুষ্টিবদ্ধ হচ্ছে, প্রতারকটাকে সামনে পেলে কী করে বসে বলা যায় না।
তাদের থেকে কিছুটা দূরে জ্যোতি বসার ঘরের এককোনায় দাঁড়িয়ে আছে। তার শরীর ভীষণ দুর্বল লাগছে আসন্ন ঝড়ের কথা চিন্তা করে। তাই ভয়ার্ত ভাবে সকলের মুখে চোখ বুলাচ্ছে থেকে থেকে।
অরোরা এখনও কিছুই জানে না। নিজের রুমে আছে সে।
রবিন এবং তার পরিবারকে ডাকা হয়েছে বিয়ের কিছু ব্যাপারের অজুহাতে। তারাও বুঝতে পারছে না তাদের জন্য কী পরিমাণ জিল্লতি অপেক্ষা করছে। তাই একবারের আমন্ত্রণেই আসতে রাজি হয়ে গিয়েছে।
আরও আধাঘন্টা পরে তাদের আবির্ভাব ঘটলো শাহবাজ ম্যানশনে। এসেই দরাজ গলায় অভিবাদন জানালেন তারা প্রত্যেকে। বিনিময়ে মিললো শীতল অভ্যর্থনা। প্রত্যেকের মুখের কাঠিন্য দেখে তাদের মনে কিছুটা খটকা লাগলো। এই সময় অরোরাও এসে যোগ দিলো পরিবারের সাথে। সে যথাযথ আন্তরিক ভাবে হবু শ্বশুরবাড়ির লোকদের উষ্ণ অভ্যর্থনা জানালো। সে এখনো জানেই না সামনে কী হতে যাচ্ছে।
ততক্ষণে হাউসমেইড টি-টেবিলে নাস্তা সাজিয়ে দিয়েছে। এ যেন কুরবানির আগে বকরিকে শেষ খাতিরযত্ন করা!
রবিনের বাবা আমিন চৌধুরী জিজ্ঞেস করলেন,
“ভাই সাহেব কী সমস্যার কারণে যেন ডেকেছিলেন?”
সোহাইল সাহেব চোখের পাওয়ারি চশমা খুলে গলা খাঁকারি দিলেন। ফারিয়ার চেহারায় ভর করলো ক্রোধ, তার মুখ অন্য দিকে ফেরানো। রবিনের ফ্যামেলি অনুভব করতে পারছে কিছু একটা পূর্বের মতোন নেই।
শাহরিয়ার চেহারায় কৃত্রিম হাসি টেনে সামনে এগিয়ে গেলো, কিছুটা আবেগপ্রবণ গলায় বললো,
“রবিন, তোমার হাতে আমরা আমাদের ঘরের রত্ন তুলে দিতে যাচ্ছি। আমাদের ঘরের জামাতা হতে যাচ্ছো তুমি। আসো তোমার সাথে একটু কোলাকুলি করি।”
রবিন আনন্দিত হলো। সহাস্যে এগিয়ে এলো কোলাকুলির জন্য। শাহরিয়ারের একেবারে নিকটে এসে সবে থেমেছে কি থামেনি, তখন কোথা থেকে ঠিক কী হলো তার বোধগম্য হলো না। হঠাৎ আবিষ্কার করলো এক তীব্র ব্যথার ঝলকানি পুরো মুখ জুড়ে। টাল সামলাতে না পেরে কিছুটা পিছিয়ে গেলো সে। স্নায়ুবিক টানে বিদ্যুৎ গতিতে হাত ছোঁয়ালো নাকের কাছটায়। হাত চোখের সামনে মেলে ধরতেই দেখে পুরো হাত লালে লাল! গলগল করে রক্ত পড়ছে সেখান থেকে। নাকটা ভেঙেই গেছে!
বিস্ফোরিত চোখে সে তাকালো সামনে রুদ্রমূর্তি ধারণ করা দীর্ঘদেহী পুরুষটির দিকে। আশেপাশের প্রত্যেকের অভিব্যক্তিও কমবেশি তাই। মস্তিষ্কে এখনো তাদের সঠিক সংকেত পৌঁছায়নি, এই বিলম্বের কারণে ঘটনা তাদের পুরোপুরি বোধগম্য এখনো হয়নি।
শাহরিয়ারের হাত তখনও মুষ্টিবদ্ধই রয়েছে, তাতে লেগে আছে রক্ত, একটু আগের ঘুষির প্রমাণস্বরূপ।
এমন সময় অরোরা বিভ্রান্তের মতো ছুটে আসে ভাইয়ের কাছে,
“ভাইয়া! কী! করছো কী তুমি!”
শাহরিয়ার ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয় তাকে। দাঁত কিড়মিড় করে অতর্কিতে কয়েকটা গালি ছুড়ে মারে রবিনের উদ্দেশ্যে,
“শালা জোচ্চর! আমাদের সাথে জোচ্চুরি করিস? তোর জোচ্চুরি বার করে দিবো ******! লুচ্চা, লাফাঙ্গা কোথাকার! কার সাথে লাগতে এসেছিস হাড়ে হাড়ে টের পাবি! এক্কেবারে টুকরা টুকরা করে সাগরে ফেলে দিবো ****!”
বলেই আরো একটা ঘুষি মেরে বসে। রবিনের দেহ টাল সামলাতে না পেরে হুড়মুড় করে চিৎ হয়ে পড়ে যায় টি টেবিলের উপর।
অরোরা সাথে সাথে চিৎকার করে উঠে। কান্না করতে করতে বললো,
“ভাইয়া তুমি কী করছো এসব! তোমার বোনের হবু স্বামী সে!”
রবিনের বড় ভাই-ই প্রথমে যেন সম্বিত ফিরে পেলো, ভাইকে মারার রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে এগিয়ে গেলো শাহরিয়ারের দিকে।
“আপনার সাহস কী করে হয় ওর গায়ে— আৎ!”
কথা শেষ করার আগে আরো একটা ঘুষি আছড়ে পরে তার মুখে। রবিনের মা সাথে সাথে চিৎকার করে উঠেন।
আমিন চৌধুরী ফুঁসতে ফুঁসতে সোহাইল শাহবাজের দিকে তাকিয়ে বললো,
“শাহবাজ সাহেব! ডেকে এনে এগুলো কোন ধরনের অপমান! আত্মীয়তা না করতে চাইলে সরাসরি বলতে পারতেন! এভাবে বাড়ি বয়ে অপমান করার কী মানে? আপনাদের নামে মানহানীর মামলা করবো আমি!”
সোহাইল সাহেব বসা থেকে ধীরেসুস্থে উঠে দাঁড়ালেন। তারপর চোয়াল শক্ত করে কৌতুকের স্বরে বললেন,
“মানহানির মামলা নাহয় পরেই করেন, আগে নিজেদের উপর করা প্রতারণার মামলা ছুটাতে পারবেন কিনা সেটার ব্যবস্থা করেন!”
“কী বলছেন এসব!”
সোহাইল সাহেব পাশে রাখা কাগজের খামটা থেকে কিছু কাগজ বের করে সোজা ছুঁড়ে মারলেন আমিন চৌধুরীর মুখে।
সোহাইল সাহেবের চেহারায় এই প্রথম ক্রোধ ফুটে উঠলো, ক্রুদ্ধ কন্ঠে বললেন,
“আপনার ছেলে আগে থেকে বিবাহিত! এক বছরের একটা মেয়ে সন্তানও আছে! অথচ আপনারা এসেছেন আমার মেয়ের হাত চাইতে! আপনারা কি মশকরা করলেন আমাদের সাথে? নাকি ভেবেছেন কখনো আমাদের সামনে আসবেই না এসব? আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আমার পুত্রবধূর উছিলায় এই জঘন্য বিষয় আমাদের সামনে আগেই এসে গেছে!”
আমিন চৌধুরী হতবাক হয়ে গেলেন কথাগুলো শুনে। নিজের দিকে ছুঁড়ে মারা কাগজগুলো ততক্ষণে মেঝেতে গড়াগড়ি খাচ্ছে। সেদিকে চোখ বুলিয়ে হতবাক হয়ে গেলেন। দ্রুত ঝুঁকে কাগজগুলো সামনে যতগুলো পেলেন তুলে নিলেন। একটা মেয়ের সাথে তার ছোট ছেলের বেশ কিছু প্রিন্ট আউট করা ছবি, সাথে একটা বাচ্চাও আছে। জন্ম নিবন্ধনের ফটোকপি, আরো বেশ কিছু কাগজপত্র।
আমিন সাহেব থরথর করে কাঁপতে কাঁপতে তাকালেন মেঝেতে পড়ে থাকা নিজের ছিলেন দিকে, যাকে ততক্ষণে তার স্ত্রী নিজের কাছে আগলে নিয়ে কাঁদছে!
সবাই নিজেদের আক্রোশে এতোটাই বিভোর ছিলো যে খেয়ালই করলো না একটা মেয়ের হৃদয় চুরমার হওয়ার ঘটনা। অকস্মাৎ এক তীক্ষ্ণ চিৎকারে সবার যেন হুশ হলো।
অরোরার চিৎকারে সবাই সেদিকে ঘুরতেই দেখলো ততক্ষণে অরোরা জ্ঞান হারিয়ে মেঝেতে লুটিয়ে পড়েছে……….
#চলবে……