#বকুলের_বাস্তবতা
#পর্বঃ২
#লেখিকাঃদিশা_মনি
বকুল ভয়ে ভয়ে আনহার পেছন পেছন যেতে লাগল৷ এদিকে আনহা সোজা উপস্থিত হলো ডাইনিং টেবিলে। যেখানে আশরাফ পরম আয়েসে সবেমাত্র চিকেন লেগপিচে কামড় দিতে নেবে এমন সময় আনহা এসে লেগপিচটা আশরাফের হাত থেকে কেড়ে নিয়ে ঠাস করে থাপ্পড় বসিয়ে দিলো আশরাফের গালে। আশরাফ একদম কিয়ংকর্তব্যবিমূঢ হয়ে তাকিয়ে রইলো আনহার দিকে। সে বুঝে উঠতে পারছিল না এসবের মানে কি তাই অবাক চোখে বকুলের দিকে তাকায়। বকুল গর্জে উঠে বলে,
“লজ্জা করে না আপনার? দুশ্চরিত্র লোক কোথাকার! একটা মেয়েকে এত বাজে ভাবে অপমান করে আবার এখানে গাণ্ডেপিণ্ডে গিলতে বসে পড়েছেন! নির্লজ্জ ছোটলোক।”
আতিকা বেগম পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলেন। তিনি রেগে গিয়ে নিজের মেয়েকে বললেন,
“এসবের মানে কি আনহা? তোর সাহস কি করে হলো আশরাফের গায়ে হাত তোলার? এক্ষুনি ক্ষমা চা ওর কাছে।”
“ক্ষমা আমি না তোমার প্রিয় ভাইপো চাবে বকুল আপুর কাছে।”
আশরাফ উঠে দাঁড়িয়ে প্রবল ক্রোধ নিয়ে আতিকা বেগমকে বলল,
“ফুফু তোমার মেয়েকে সামলাও। আমি শুধু তোমার মুখের দিকে তাকিয়ে এখনো চুপ আছি। নাহলে আমার গায়ে হাত তোলার ফল কি হতে পারে তা এতক্ষণে বুঝিয়ে দিতাম যদি আনহা তোমার মেয়ে না হতো।”
আনহা আশরাফের শার্টের কলার চেপে ধরে বলে,
“তুই আমার কি করবি? আমি তোর মুখ মেরে ফাটিয়ে দেব। তোর মতো ছেলেদের জন্য রাস্তায় মেয়েরা নিরাপদে চলতে পারে না। কি ভেবেছিস তুই? তোর সুনাম সম্পর্কে আমি জানি না? তোদের এলাকায় গেলেই তো তোর সুনামে থাকা যায় না।”
“কলার ছাড় আনহা।”
“ছাড়বো না কি করবি। আগে তুই বকুল আপুর কাছে ক্ষমা চাইবি তারপর।”
আতিকা বেগম আর কিছু বলতে যাবেন তখন আনহা বলে ওঠে,
“আম্মু ওখানেই থেমে যাও। তুমি যদি আর একটা কথা বলো তাহলে কিন্তু আমার থেকে খারাপ আর কেউ হবে না। আব্বুকে আমি সব টা জানিয়ে দেব।”
আতিকা বেগম দমে যান। ততক্ষণে বকুলও সেখানে চলে আসে। বকুলকে দেখেই আনহা বলে,
“আপু! তুমি এসো তো এখানে। ভয় পেও না আমি আছি তোমার পাশে। এই শয়তানটাকে তোমার কাছে আজ ক্ষমা চাইতেই হবে।”
“থাক না, আনহা। শুধু শুধু এত ঝামেলার কি আছে,,,”
“না, থাকবে না। তুমি এসো তো।”
অগত্যা বকুল সামনে আসে। আনহা তেজি গলায় বলে,
“নে,জলদি করে ক্ষমা চা আমার আপুর কাছে।”
আশরাফ আনহাকে ধাক্কা দিয়ে দূরে সরিয়ে বলে,
“এই মেয়ের কাছে ক্ষমা চাওয়ার থেকে তো আমার মরে যাওয়াও ভালো।”
বলেই সে বকুলের দিকে অগ্নিদৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,
“আজ তোর জন্য আমাকে যত অপমানিত হতে হলো তা আমি ভুলব না। তোদের দুই জনকেই এর জন্য উচিৎ শাস্তি পেতে হবে। তোদের জীবন যদি আমি নরক বানাতে না পারি তাহলে আমার নামও আশরাফ খান না।”
বলেই আশরাফ বেরিয়ে যায়। আশরাফ যেতেই আতিকা বেগম আনহার উদ্দ্যেশ্যে বলে,
“শুধু শুধু তুই ঐ বকুলের জন্য এত ঝুঁকি নিলি। এখন যদি আশরাফ রাগের মাথায় কিছু করে ফেলে তখন কি হবে? আর এই মুখপুড়ি, তুই বেঁচে আছিস কেন? মরতে পারিস না? তুই মরলেই তো আমাদের ঘাড় থেকে আপন বিদায় হয়।”
বকুল আতিকা বেগম এর মুখে এমন কথা শুনে কান্নাই করে দেয়। ছুটতে ছুটতে নিজের রুমের দিকে যায়। আতিকা বেগম মুখ বাকিয়ে বলেন,
“নাটক যত্তসব! এত নাটক দেখার টাইম নেই। আনহা, তুই চল আমার সাথে আশরাফের কাছে ক্ষমা চাইবি।”
“যখন আমি কোন অন্যায় করি নি, তখন ক্ষমাও আমি চাইবো না।”
★★
বকুল নিজের ঘরে চুপ করে বসে আছে। আনহা এসে তার পাশে বসে বললো,
“আপু তুমি কি ভাবছ?”
“তেমন কিছু না,,আচ্ছা ঐ আশরাফ খান যে হুমকি দিয়ে গেল উনি যদি সত্যি..”
“ওকে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। কিছু হলে আমি সামলে নেব।”
“নিজেকে নিয়ে আমার কোন ভয় নেই আনহা। আমার ভয় তো তোমাকে নিয়ে। আমার কারণে যদি তুমি কোন বিপদে পড়ো তাহলে যে আমি নিজেকে কখনো ক্ষমা করবো না।”
“কিচ্ছু হবে না আপু। তুমি এত ভয় পেও না। কাল তো আবার সকাল সকাল স্কুলে যেতে হবে। তুমিও তো কলেজ যাবে তাই না? এখন তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়ো কাল আমরা দুই জন একসাথে যাব।”
বকুল মাথা নাড়ায়।
তবে দুশ্চিন্তা তার মন থেকে চিরতরে দূর হয় না৷ বরঞ্চ তার কোথাও না কোথাও গিয়ে মনে হয় হয়তো খুব খারাপ কিছু হতে চলেছে। কেননা, আশরাফ যেমন ছেলে ও এত সহজে সব কিছু মেনে নিবে না।
★★
পরদিন আনহা ও বকুল একসাথেই স্কুল এবং কলেজে যায়। বকুলের কলেজে আজ একটা প্রোগ্রাম ছিল তাই বেশ জলদিই আজ ছুটি হয়ে যায়।
বকুলের এসব প্রোগ্রাম টোগ্রাম ভালো লাগে না। তার অন্যান্য সহপাঠীরা প্রোগ্রাম দেখছিল আর বকুল একা একাই সেখান থেকে কেটে পড়ে। ফিরে আসার সময় মাঝরাস্তায় হঠাৎ একটা মোটর সাইকেল এসে তার সামনে দাঁড়ায়। বকুলের ভয়ে গলা শুকিয়ে যায়। চোখ তুলে তাকাতেই সে হেলমেট পড়া আশরাফকে দেখতে পায়। আশরাফ গম্ভীর স্বরে বলে,
“উঠে বস।”
বকুল কি করবে বুঝতে পারে না। আশেপাশে কোন জনমানবের চিহ্নও নেই। আশরাফ আরেকবার চেচিয়ে বলে,
“কি বললাম শুনতে পাস নি? উঠে বস।”
বকুল ভয়ে ভয়ে উঠে বসে। আশরাফ সরাসরি বাইক চালিয়ে যেতে থাকে। বকুল ভয়ে কাপতে থাকে। না জানি এই আশরাফ তাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে। একটু পরই বকুল খেয়াল করে আশরাফ একটু দূরে এসে গাড়ি থামালো। এই স্থানটাও বেশ ফাকাই বলা যায়। ভয়ে বকুলের গলা আরো বেশি শুকিয়ে গেল। বকুল দ্রুত গাড়ি থেকে নেমে পালাতে শুরু করলো এবং আশরাফ তার পেছনে ছুটল। কিছু দূর যাওয়ার পর হঠাৎ করেই বকুল হোচট খেয়ে পড়ে গেল। তার সমস্ত আশা যেন নিভে এলো। এখনই হয়তো তাকে তার জীবনে আরেক অন্ধকার অধ্যায়ের সাক্ষী হতে হবে যা তার জীবনে আরো বেশি অন্ধকারের দিকে ঠেলে দেবে।
★★
আনহা চিন্তা করছিল যে বকুল এখনো কলেজ থেকে ফিরল না কেন। সে বকুলের কিছু সহপাঠীর কাছে শুনেছে যে বকুল আজ অনেক আগেই বেরিয়েছে। আনহাকে এত চিন্তায় দেখে আতিকা বেগম বলল,
“এত চিন্তা করার কি আছে? দেখ কোন নাগরের সাথে ভেগেছে।”
“তুমি চুপ করো আম্মু। আমি আমার বকুল আপুকে চিনি। সে এমন কিছু করতেই পারে না। নিশ্চয়ই কোন বিপদে পড়েছে তাই এমন হচ্ছে। আমি গিয়ে দেখে আসি বকুল আপু কোথায়।”
বলেই আনহা বাড়ি থেকে বের হতে নেবে এমন সময় বকুল বাড়িতে ফিরে আসে। তাকে দেখে ভীষণ বিধ্বস্ত লাগছে। আনহা বকুলকে দেখেই তাকে জড়িয়ে ধরে বলে,
“আপু তুমি ঠিক আছ তো?”
বকুল কাপা কাপা স্বরে বলে,
“হ্যাঁ, ঠিক আছি।”
” কিন্তু তুমি কোথায় গেছিলে? তোমার এক ফ্রেন্ড বলল তুমি নাকি আগেই বেরিয়েছ।”
“হ্যাঁ, ঐ একটা কাজে পাশের গ্রামে গিয়েছিলাম।”
” ওহ আচ্ছা। কিন্তু তোমায় এমন লাগছে কেন?”
“এই রোদে অনেক হাঁটতে হয়েছে তো তাই আরকি…তুমি বেশি চিন্তা করো না। বেশি কিছু হয় নি।”
বলেই বকুল নিজের রুমে যায়। রুমে প্রবেশ করেই দরজা বন্ধ করে হাহাকার করে কাঁদতে কাঁদতে কিছুক্ষণ আগে ঘটে যাওয়া ঘটনা মনে করে বলে,
“কেন? কেন আমার সাথে এমন হলো? এর থেকে তো আমার মরে যাওয়াও ভালো ছিল।”
চলবে ইনশাআল্লাহ ✨