#জোৎস্না_রাতে_তুমি_আর_আমি — [১১]
লেখনীতে;- #রুদ্রিকা_বেদী
[কপি করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ❌]
টানা তেরো ঘন্টা জার্নি করে কক্সবাজার হেসে পৌঁছেছে ওরা। রাস্তায় মাঝে দুই বার থেমে ছিল। কক্সবাজার সৈকতের একদম কাছেই পাঁচ তলার একটি বিলাসবহুল রিসোর্ট বুক করা হয়েছে সবার জন্য। বাস একদম রিসোর্টের সামনেই দাঁড়িয়েছে।
এতো লম্বা জার্নি করতে যেয়ে দ্যূতি কখন আরুশের কাঁধে মাথা দিয়ে ঘুমিয়ে পরেছে জানে না। বাস থামতেই সবাই ব্যস্ত হয়ে নামতে শুরু করল। বাসের মধ্যে চাপা গুঞ্জন শুরুও হলো। সেই শব্দ দ্যূতি তাড়াহুড়ো করে সোজা হয়ে বসল। দ্যূতিকে উঠতে দেখে আরুশ ওর দিকে মুচকি হেসে তাকালো। দ্যূতি মহা বড়ো ভুল করে ফেলেছে এমন মুখ করে জানালার দিকে তাকালো। ঘুমের রেশ তখনও কাটেনি দ্যূতির। বাস থেমে থাকতে দেখে দ্যূতি ঘুম জড়ানো কন্ঠে আরুশকে জিজ্ঞেস করল,
“ গাড়ি দাঁড়িয়ে গিয়েছে কেন? আর এরা কোথায় যাচ্ছে? ”
আরুশ দ্যূতির প্রশ্ন শুনে, হালকা মুখ বাড়িয়ে দিয়ে গলা একদম খাদে নামিয়ে উত্তর দিলো,
“ কারণ আমরা চলে এসেছি! ”
দ্যূতির যেন কথাটা বিশ্বাস হলো না এমন মুখ করে আরুশে দিকে ঘুরে তাকাতেই থমকে গেলো। আরুশ ওর একদম কাছে। দুজনের চোখের দৃষ্টি অবিচল। আরুশের চোখের পানে তাকাতেই দ্যূতির পুনোরায় সকালের সেই অনুভূতিটা হলো। আরুশের চোখে একটা দুষ্টুমি খেলা করছে। দ্যূতি গলা শুকিয়ে আসলো। গলা খাঁকারি দিয়ে উঠে বলল,
“ তাহলে আমরা বসে আছি কেন? সবাই দেখছি নেমে গিয়েছে! উঠুন! ”
বলে দ্যূতি উঠে দাঁড়ালো। দ্যূতি আরুশের দিকে তাকাচ্ছে না। ওই চাহনি দ্যূতির সহ্য হচ্ছে না। কেন ওমন অস্বস্তি খেলা করছে ওর মাঝে? আরুশও এবার উঠে দাঁড়ালো। পিছনে হালকা সরে দ্যূতিকে বের হওয়ার জায়গা করে দিলো। দ্যূতি ঝটপট বেরিয়ে আসলো। তারপর আগে পিছে না তাকিয়ে সোজা বাস থেকে থেমে গেলো। আরুশও নামল।
আজ আর সৈকতে যাওয়া হবে না। অবশ্য ওরা যেখানে দাঁড়িয়ে আছে সেখান থেকেও সমুদ্রে বয়ে আসা ঢেউয়ের শব্দ এবং দৃশ্য দুটোই সুন্দর করে দেখা যাচ্ছে কিন্তু ক্লান্তির জন্য কেউই দৃশ্য উপভোগ করার মুডে নেয়।
সবাই দলবদ্ধ ভাবে রিসোর্টে ঢুকল। রিসেপশনে যেয়ে সবাই সবার রুমের চাবি নিয়ে নিলো। দ্যূতি আর মিলি তিনতলার ৩০২ রুমে থাকবে এবং আরুশ আর শিহাব থাকবে ৩০১ রুমে। এই কথা যখন দ্যূতি জানতে পারল তখন অনেক লেট হয়ে গিয়েছে। সবাই সবার মতো রুমে চলে গিয়েছে। রুম পাল্টানোর কোনো অপশন নেই। চারজনে একসঙ্গেই লিফ্টে উঠলো। মিলি ক্লান্তির চক্করে দ্যূতির কাঁধে মাথা রেখে চোখ বন্ধ রাখল। ওকে দেখে শিহাব চিন্তিত স্বরে বলে উঠলো,
“ খারাপ লাগছে তোমার? ”
শিহাবের কথা শুনে দ্যূতি আর আরুশ ওর দিকে সন্নিহিত চোখে তাকালো। মিলি সঙ্গে সঙ্গে মাথা তুলে দাঁড়ালো। শিহাবের কথায় মিলি যে খুব অপ্রস্তুত পরিবেশে পরে গিয়েছে সেটা ওর চেহারা দেখেই বোঝা যাচ্ছিল। আরুশের শিহাবের দিকে আর দ্যূতি মিলির দিকে ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালো। দু’জনেই সেই দৃষ্টি উপেক্ষা করে চুপ করে দাঁড়িয়ে রইল। ততক্ষণে লিফ্টও তিন তলায় এসে খুলে গিয়েছে। চার জনই একে একে বাইরে এসে দাঁড়ালো।
“ কিছু লাগলে বলো! পাশেই আছি! ”
শিহাব মিলির পাশে দাঁড়িয়ে ফিস ফিস করে বলল। মিলিও মাথা নাড়িয়ে শিহাবকে নিজের থেকে সরিয়ে দিলো। এইসব কিছুই দ্যূতি আর আরুশের চোখ এড়িয়ে গেলো না। দুজনই ওই দৃশ্য থেকে মিট মিট করে হাসলো।
.
“ কি হচ্ছিল বাইরে ওই সব? ”
রুমে ঢুকে টেবিলের উপর নিজের ওয়াচ খুলে রাখতে রাখতে জিজ্ঞেস করল শিহাবকে। হঠাৎ এমন প্রশ্ন শুনে শিহাব একটু হকচকিয়ে গেল। আমতা আমতা করে জিজ্ঞেস করল,
“ কিসের কথা বলছেন? ”
“ বেশি অবুঝ হওয়ার চেষ্টা করিস না! ”
আরুশ শিহাবের কাঁধে হাত রেখে বলল। শিহাব লজ্জায়,ভয়ে ঢোক গিলল।
“ প্রেম করিস এতে আবার লুকোনোর কি আছে শুনি?! ” আরুশ আবার জিজ্ঞেস করল
শিহাব এবার এদিক ওদিক করে গলার স্বর একদম খাদে নামিয়ে বলল,
“ আসলে মিলি কাউকে বলতে বারণ করেছিল! ও বলে মানুষ আমাদের রিলেশনের কথা জানতে পারলে, রিলেশন ভেঙ্গে যাবে! ”
আরুশ ভ্রু কুঁচকে তাকালো শিহাবের দিকে। শিহাব চোখ নামিয়ে নিলো। আরুশ পুনরায় শিহাবের কাঁধে হাত রেখে বলল,
“ আই থিংক, ও ঠিক বলেছে! মানুষ যত কম জানবে, ততই বেশি ঝামেলার থেকে দূরে থাকবি…! ”
বলে আরুশ ল্যাগেজের কাছে চলে গেলো। শিহাব কিছুক্ষণ আরুশের পানে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। মনে মনে ভাবল,
“ এ আমি কোন আরুশ চৌধুরীকে দেখছি? এ আদৌ আরুশ চৌধুরী তো? নাকি তার জায়গায় কোনো জ্বীন চলে এসেছে আমার সাথে? খোদা তুমি বাঁচাও! ”
.
দ্যূতি সবে মাত্র ফ্রেশ হয়ে বেরোল। মিলি খাটের উপর হাত পা ছড়িয়ে শুইয়ে পরেছে। দ্যূতি সেই দিকে তাকিয়ে স্লান হাসল। দ্যূতি নিজের ব্যাগের কাছে যেয়ে ফোন বের করল। পিউ কে জানাতে হবে। পিউ বার বার করে বলে দিয়েছে,
“ ওখানে যেয়ে মনে করে ফোন করবি! যতই রাত হোক না কেন! ”
দ্যূতি ফোন হাতে একবার মিলির দিকে তাকালো। এখানে দাঁড়িয়ে কথা বলা যাবে না! মিলির ঘুম ভেঙ্গে যেতে পারে। এই ভেবে দ্যূতি ব্যালকনিতে চলে আসল। ব্যালকনিতে আসতেই বুক ভরে নিঃশ্বাস নিলো। জোয়ারের শব্দ এখানে আসছে। শীতল মৃদু হাওয়া বয়ে যাচ্ছে। দ্যূতি রেলিংয়ের উপর হাত রেখে চোখ বন্ধ করে নিলো।
“ খুব সুন্দর লাগছে! ”
গভীর পুরুষালি কন্ঠ কানে আসতেই দ্যূতি চোখ খুলে তাকালো। ওদের পাশের ব্যালকনিতে এসে দাঁড়িয়েছে আরুশ। আরুশের কথায় দ্যূতি চোখ ছোট ছোট করে বলল,
“ এক্সকিউজ মি? ওয়াট ডু ইউ মিন? ”
“ উল্টা পাল্টা কিছু ভেবো না! আমি পরিবেশের কথা বলছিলাম! ”
“ ও! ”
দ্যূতি যেন হালকা নিরাশ হয়েছে এমন মুখ করে সামনে তাকালো। আরুশ তাই দেখে মুচকি হাসল।
“ তুমি কি অন্য কিছু ভেবেছিলে? ”
আরুশ হাস্কি টোনে জিজ্ঞেস করল। ঠোঁটে তখনো দুষ্টুমির হাসি লেগে রয়েছে। দ্যূতি একটু অপ্রস্তুত হয়ে আরুশের দিকে তাকিয়ে বলল,
“ আমি আবার কি ভাববো? আমি তো এমনিই জিজ্ঞেস করেছিলাম! ”
“ তোমার মধ্যের সেই তেজ কেন খুঁজে পাচ্ছি না বলো তো? ”
আরুশ রেলিংয়ের একদম কাছে এসে দাঁড়ালো। দ্যূতি অবাক দৃষ্টিতে তাকালো। জিজ্ঞাসু দৃষ্টি করে বলল,
“ এমন মনে হওয়ার কারণ কি? ”
“ না! মানে তুমি তো আমার সাথে এতোটা ভদ্র ভাবে কথা বলো না তাই! ”
দ্যূতির চোখ কপালে উঠল। কিছুক্ষণ চুপ থেকে ভাবলো। মনে মনে বিড়বিড় করে বলল,
“ সত্যি তো! আজকে এই ছাগলটার প্রতি আমার কোনো বিরক্তি কাজ করছে না! কিন্তু কেন? লোকটার সাথে কথাও বলতে ইচ্ছে করছে! কি হচ্ছে আমার সাথে? ”
“ এই যে কোথায় হারিয়ে গিলে? ”
দ্যূতিকে আনমনা হয়ে থাকতে দেখে আরুশ জিজ্ঞেস করল। আরুশের ডাকে দ্যূতি বাস্তবে ফিরল। আরুশের দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,
“ আমি জানি না! আপনার প্রতি আমার বিরক্তি কাজ করছে না, অন্য এক অনুভূতি কাজ করছে কিন্তু সে অনুভূতিকে কি বলে আমি জানি না……! ”
অবুঝ বাচ্চাদের মতো নিষ্পাপ কন্ঠে কথা গুলো বলল। আরুশ দ্যূতির কথা শুনে রহস্য ময় হাসল। দ্যূতি আরুশের চোখের পানে তাকিয়ে ঘোরের মধ্যে চলে যেতে শুরু করল। দুজনের মাঝে হতো দু’হাতের মতো ব্যবধান কিন্তু মনের ব্যবধান একদম কম, একদম স্বল্প, । দু’জনের জন্য সময় ওখানে দাঁড়িয়ে গেলো। দ্যূতি নিষ্পাপ মন যেন আরুশের ওই গাঢ় চাহনিতে হারিয়ে যেতে শুরু করেছে…..
“ আপনি অনেক সুন্দর! ”
দ্যূতি নেশা লাগানো গলায় বলল। ও যেন নিজের মধ্যে নেই।
“ তুমি ঠিক আছো তো? ”
আরুশ মুচকি হেসে জিজ্ঞেস করল। দ্যূতি মাথা নাড়িয়ে ওই ধরনের গলায় বলল,
“ জানি না কি হচ্ছে? এই সবই আমার জন্য নতুন! কিন্তু আমার ভালো লাগছে এই অনুভূতিটা…. মন চাচ্ছে এই অনুভূতিটা সারাজীবন থাকুক! ”
“ থাকবে! ”
চলবে……
#জোৎস্না_রাতে_তুমি_আর_আমি — [১২]
লেখনীতে;- #রুদ্রিকা_বেদী
[ কপি করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ❌]
রাতে কখন ঘুমিয়ে পরেছে খেয়াল নেই দ্যূতির। আরুশের সাথে কথা বলে কখন যে ঘুমিয়েছেন কিছুই মনে পরছে না। দ্যূতির ঘুম ভেঙ্গেছে মিলির ডাকে। দ্যূতি ঘুমের থেকে উঠে গেলেও অনেকক্ষণ বিছানায় চোখ বন্ধ করে শুইয়ে রইল। ভীষণ ক্লান্তি কাজ করছে এখনো,কাল রাতে কিছু না খেয়েই ঘুমিয়ে পরা হয়েছে বলে হয়তো এমনটা হচ্ছে…..
দ্যূতি ফ্রেশ হয়ে খাটের উপর এসে বসল। ঘড়িতে তখন সাড়ে আটটা। সবাই রেডি হচ্ছে, নিচে ব্রেকফাস্টের জন্য যেতে হবে। দ্যূতি অন্য মনষ্ক হয়ে গত রাতের কথা ভাবছে। ভীষণ অস্থির হয়ে ছুটছে তার মন। আরুশের কথা মনে পরছে। কেন হচ্ছে তার সাথে এমন? দ্যূতি একপ্রকার বিরক্ত হয়ে উঠে দাঁড়ালো। শুরু করল ঘর জুড়ে পায়চারি। ঘরের মধ্যে দম বন্ধ হয়ে আসছে… মন চাচ্ছে ছুটে বেরিয়ে যেতে। আরুশকে দেখার তৃষ্ণা বাড়ছে!
“ কি হচ্ছে আমার সাথে এগুলো?… কেন মিস্টার চৌধুরীর কথা আমার এতো মনে পরছে? কেন আমার চোখ তাকে একবার দেখতে চাচ্ছে? আমি কি পাগল হয়ে গেলাম নাকি? ”
দ্যূতি কথাগুলো বলতে বলতে নিজেদের মাথার চুল দু হাত দিয়ে আঁকড়ে ধরল। মুখ ফুলিয়ে ঘরের আয়নায় কাছে যেয়ে দাঁড়ালো।
“ দ্যূতি ভুলেও ভাবিস না, তুই মিস্টার চৌধুরীর প্রেমে পরেছিস! যদি ভেবেও থাকিস তাহলে মনে রাখিস, মিস্টার চৌধুরীর মতো ওমন একজন মানুষ আর যাই হোক তোকে পছন্দ করবে না, তাই নিজের অনুভূতিগুলো নিজের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখ! ”
“ কি বিড়বিড় করছিস? ”
দ্যূতি সঙ্গে সঙ্গে চুপ হয়ে গেল। মিলি ওয়াশ রুম থেকে বেরিয়ে দ্যূতিকে নিজের সাথে বিড়বিড় করতে দেখে ফেলেছে। দ্যূতি চোখ কুঁচকে বন্ধ করে নিলো। মিলি ধীর পায়ে দ্যূতির কাছে এসে দ্যূতির কাঁধে হাত রেখে আবার জিজ্ঞেস করল,
“ কি হলো বল? ”
দ্যূতি আস্তে করে মিলির দিকে ফিরে হাসি হাসি মুখ নিয়ে বলল,
“ কই? কিছু নাতো! আমি নিজেকে দেখছিলাম! ”
“ ওহ্! কিন্তু আমার মনে হলো তুই কিছু বলছিলিস! ”
“ তোমার কান বেজেছে! আমি শুধু নিজেকে দেখছিলাম! যাইহোক তুমি তাড়াতাড়ি রেডি হও! আমার অনেক খিদে পেয়েছে, নিচে যেতে হবে! ”
দ্যূতি প্রসঙ্গ পাল্টিয়ে মিলিকে তাড়া লাগিয়ে বলল। মিলি তাড়াতাড়ি করে মাথা নাড়িয়ে আয়নার সামনে দাঁড়ালো। দ্যূতি ওখান থেকে সরে লম্বা করে শ্বাস ছাড়লো,,,,
.
আরুশ সকাল সকাল উঠে কফির মগ হাতে ব্যালকনিতে এসেছে। শুভ্র সকাল। আকাশের সাদা তুলোর মত মেঘ যেন পৃথিবীতে নেমে এসেছে। আর সমুদ্রের দৃশ্য তো চোখ কাড়ার মতো,,,,,
আরুশ কফিতে চুমুক দিয়ে পাশের দ্যূতিদের ব্যালকনির দিকে তাকালো। তাকাতেই তার গতরাতের ঘটনা গুলো মনে পরে গেল। সে মুচকি হেসে বলল,
“ সো মিস্ দ্যূতি, মিসেস আরুশ চৌধুরী হওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়ে যাও! ”
.
সবাই রিসোর্টের সাথে লাগোয়া রেস্টুরেন্টে এসেছে। এখানেই তাদের তিন বেলার খাবার দেওয়া হবে। দ্যূতি মিলির সঙ্গে এক কোণে দাঁড়িয়ে আছে স্থির হয়ে কিন্তু তার চোখ কোনো ভাবে স্থির নেয়। আশেপাশে চোখ বুলিয়ে কাকে যেন খুঁজছে?
আরুশ আর শিহাব সবে মাত্র রেস্টুরেন্টে ঢুকেছে। রেস্তোরাঁর মুখ দিয়ে আরুশকে প্রবেশ করতে দেখেই দ্যূতির হৃৎপিণ্ড যেন আবারও লাফালাফি শুরু করে দিলো। দ্যূতি চোখ সরাতে চেয়েও পারল না। আরুশ আর শিহাবকে ভিতরে আসতে দেখেই সবাই প্রায় চুপ হয়ে গেলো।
আরুশ একবার দ্যূতির দিকে তাকালো। দ্যূতি সেটা দেখতেই চোখ বড়ো বড়ো করে অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে নিলো। ঢোক গিলে জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিলো। শিহাব আরুশের দিকে তাকিয়ে গলা একদম খাদে নামিয়ে বলল,
“ স্যার ওখানে আমার জনও আছে আর আপনার জনও আছে,”
আরুশ শিহাবের কথা শুনে দ্যূতিদের দিকে তাকালো। দ্যূতি আর মিলি দুজনই সামনের কোণার টেবিলে মুখোমুখি হয়ে বসছে। আরুশ আবারও শিহাবের দিকে তাকিয়ে বলল,
“ তো? ”
শিহাব ঠোঁট কামড়ে মেকি স্বরে বলল,
“ তো স্যার,ওই টেবিলে বসলেই তো হয়! ”
আরুশ শিহাবের কথা শুনে কিছুক্ষণ চুপ থেকে মুচকি হেসে বলল,
“ মাঝে মাঝে তোর মাথা থেকেও বুদ্ধি বেরোয় তাহলে! ”
শিহাব বুঝতে পারল না আরুশ ওর প্রশংসা করছে নাকী অন্য কিছু করছে। শিহাব স্লান হেসে আরুশের পিছন ধরল।
আরুশকে নিজের টেবিলের দিকে আসতে দেখে দ্যূতি চোখ কুঁচকে বন্ধ করে নিলো। মিলি সেই দিকে তাকিয়ে বলল,
“ কি হয়েছে তোর? ”
দ্যূতি জবাব দিলো না। হাতের ইশারায় দেখিয়ে দিলো আরুশের দিকে। মিলি সেই দিকে তাকাতে, একগাল হাসি ফুটে উঠল। আরুশ আর শিহাব টেবিলের কাছে আসতেই মিলি উঠে দাঁড়ালো উৎফুল্ল স্বরে বলল,
“ গুড মর্নিং স্যার! ”
তার পর শিহাবের দিকে তাকিয়ে মুখ টিপে হাসল মিলি। আরুশ দ্যূতির দিকে তাকিয়েই উত্তর দিলো,
“ গুড মর্নিং মিলি! ”
দ্যূতি আস্তে আস্তে চোখ খুলে আড়চোখে আরুশের দিকে তাকালো।
আরুশ আর শিহাব দুজনই বসল ওই টেবিলে কিন্তু বিপরীতে। আরুশ বসেছে মিলির পাশে শিহাব বসেছে দ্যূতির পাশে। দ্যূতি আরুশকে মিলির পাশে বসতে দেখে মনে মনে বিড়বিড় করে বলল,
“ মিলি আপুর পাশে কেন বসতে হচ্ছে আপনার? অসভ্য লোক! ”
শিহাব বেচারা মন মরা হয়ে আরুশের দিকে একবার তাকাচ্ছে এবং একবার মিলির দিকে তাকাচ্ছে। মিলির এই সব কোনো দিকেই নজর নেয়। খাবারের জন্য অপেক্ষা করতে করতে সামনে গলা উঁচু করে উঁকি মারছে,
“ আচ্ছা,আজকের ব্রেকফাস্টে কি কি আছে? ”
শিহাব দাঁত কেলিয়ে উত্তর দেয়,
“ তুমি কি খাবে? সেটাই আনতে বলবো! ”
শিহাবের কথা শুনে মিলি বিষম খেয়ে উঠলো। দ্যূতি আর আরুশের দিকে তাকিয়ে শিহাবের দিকে চোখ পাকিয়ে তাকালো। আরুশ মুচকি হেসে, গম্ভীর কন্ঠে বলল,
“ ওই মিস্টার, অর্ডার অলরেডি করা হয়ে গিয়েছে! তাই যা আসবে তাই খেতে হবে! ”
.
সকালের নাস্তা পেট ভরে করে সবাই রেস্তোরাঁ থেকে বেরিয়ে আসলো। এখন পালা সমুদ্রের কাছে যাওয়া। সবার মাঝে বেশ উত্তেজনা কাজ করছে, শুধু মাত্র দ্যূতিই কেমন চুপ হয়ে রয়েছে। সমুদ্র দেখার কোনো ইচ্ছাই নেয় তার মাঝে। সে লুকিয়ে লুকিয়ে আরুশকে দেখার চেষ্টা করছে। মন ভরছেই না। একদিনের মধ্যে মানুষ এতো গভীর ভাবে কারোর প্রেমে পরতেই পারে? এই পরিবর্তন যে দ্যূতির নিজেরই সহ্য হচ্ছে না…
সবাই মতো ঘুরছে। মিলিও শিহাবের সাথে ছবি তুলতে চলে গিয়েছে। দ্যূতি এই দিকে একা একা হাঁটতে হাঁটতে সমুদ্রের এক কাছে যেয়ে দাঁড়ালো। স্নিগ্ধ শোভন সকাল। এখনো সূর্যের তেজ তেমন বেড়ে উঠতে পারেনি। দ্যূতি চোখ বন্ধ করে মুখ আকাশের পানে চাইল। হঠাৎ পাশ থেকে কারো গম্ভীর কন্ঠ স্বর কানে ভেসে আসলো,
“ সূর্যের আলো থেকে তোমার আলো আমাকে বেশি আকর্ষণ করে! ”
দ্যূতি আস্তে করে চোখ খুলে পাশে তাকালো। আরুশ বুকের কাছে হাত ভাঁজ করে একদম পাশেই দাঁড়িয়ে আছে। আরুশের কথার মর্ম দ্যূতি বুঝতে পেরেও পারল না। সমুদ্রের ঢেউগুলো দু’জনের পা ভিজিয়ে দিচ্ছে। সেই দিকে তাকিয়ে বাচ্চা স্বরে বলল,
“ আপনার কথার অর্থ আমি বুঝতে পারছি না মিস্টার চৌধুরী! ”
“ বুঝতে পারছ না,না কি বুঝতে চাচ্ছো না? কোনটা? ”
দ্যূতি মুখ টিপে হাসতে হাসতে বলল,
“ সত্যি বুঝতে পারছি না, আপনি প্লীজ আমার জন্য অর্থ করে বুঝিয়ে দেবেন? ”
দ্যূতির কথা শুনে আরুশের মুখে হাসি ফুটে উঠল। দ্যূতির দিকে একদম ঘুরে দাঁড়ালো। দ্যূতিও আরুশের দিকে মুখ করে দাঁড়াল। আরুশ দ্যূতির দিকে হালকা ঝুঁকে আসলো।
“ এখন আমি যদি বোঝায় তাহলে তুমি কিন্তু আর পালাতে পারবে না…..”
দ্যূতি বাঁকা হেসে বলল,
“ পালাতে চাচ্ছে কে? ”
চলবে…………