#প্রাণনাশিনী
#পর্ব_১৩
#সুহাসিনি_মিমি
সন্ধ্যা বেলা নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে নিজ বাড়ির সদর গেইট পেরিয়ে সবেই হলরুমে প্রবেশ করল নাওফিক। গম্ভীর মুখে সোফায় বসে থাকা বাবাকে দেখে স্তম্ভিত হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো কীয়ৎক্ষণ। বাবার পাশেই চুপচাপ বসে আছেন জর্ণা বেগম। মায়ের চোখে স্পষ্ট হতাশা চক্ষু এড়ালো না এই যুবকের। অমনিই কপালে দুটো সরু ভাজ পড়ল ওর। বলল,
–“মুখদুটো এমনে বাংলার পাঁচের মতো ঝুলায়া রাখছেন ক্যান আব্বা?চুরি করতে গিয়া ধরা পরসেন নাকি?”
তোফাজ্জল সাহেব চোখ তুলে তাকালেন ছেলের দিকে। ঠাণ্ডা গলায় বললেন,
–“আমার কথা শুনলে তোমার মুখ বাংলার পাঁচ না, সরাসরি সাত আট দশ হয়ে হয়ে যাবে।”
–“বলেন তো ঠিক কিতা হইছে? আগে বলেন, আমার বিয়ের কি খবর? ঠিক করসেন তো? ডেট দিসেন কবে? আমার কিন্তু এই সপ্তাহের মধ্যেই বউ চাই!”
তোফাজ্জল সাহেব এবার গলায় বিরক্তির ছোঁয়া এনে স্পষ্ট করে বললেন,
–“হান্নান তার মেয়েকে তোমার হাতে তুলে দিবে না। আমাদের না করে দিয়েছে!”
শুনেই যেন আকাশ ভেঙে পড়ল মাথায়। নাওফিক গর্জে উঠল তৎক্ষণাৎ,
–“কি বললেন! গ্রামের চেয়ারম্যান হয়ে একটা বিয়ে ঠিক করে আনতে পারলেন না? ডিরেক্ট রিজেক্ট হইয়া আইলেন?ছিহ! ছিহ! মুরাদ মিয়া আপনার পোলায় আপনার মান সম্মান সব খুয়ালো। আপনি তো ঐ দুনিয়ায় গিয়ে সাইরা গেসেন। রেখে গেসেন একটা অকর্মা ছেলে!”
–“নালায়েক! খুব সামলে কথা বলো! তোমার জন্য ছোট হয়েও নিজ থেকে সম্মন্ধ নিয়ে গেসি। আমি চেয়ারম্যান। ঘটক না।”
— “আপনে চেয়ারম্যান, কিন্তু নিজের ছেলের মন রক্ষা করতে পারলেন না? সামান্য একটা মেয়ের বাপকে কনভিন্স করতে পারলেন না? গ্রামের মানুষের দুঃখ কীভাবে দূর করবেন বলেন দেখি? না আব্বা, আপনের সময় শেষ। আমি ভাবছি সামনে ইলেকশনে আপনার প্রতিদ্বন্দ্বী হই কি বলেন? এরপর দেখবেন গ্রাম কেমনে চালাই। আপনার ভাত শেষ আব্বা। আপনি শেষ!”
–“নাওফিক! এসব কী বলিস তুই? বাবা হয় তোর।”
— “যা বলছি, একদম ঠিক বলছি মা। আব্বা নিজে যা পারেন না সেটার জন্য তো আমাকেই নামতে হবে। ওনাকে দিয়ে গ্রামের উন্নয়ন সম্ভব নাহ। গতকাল রাইতেও আশুর মায়ের খোয়ার থেকে ৩ টা মুরগি চুরি হইসে। হেই বিচার আমার কাসে আইসে। এখন বুঝেন গ্রামে ওনার মতো চেয়ারম্যান থাকতে মানুষের বাড়ির মুরগি চুরি হয় কিভাবে?”
–“নালায়েক! এখন কি আমি মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে মুরগি পাহাড়া দিবো?”
–“দরকার পড়লে দিবেন। গ্রামের মানুষের ভোটেই তো চেয়ারম্যান হইসেন। দরকার পড়লে দিবেন নাহ। আমি হলে তো…
–“আর ওই মুরগি গুলো যে তোমার দলের ছেলেরাই রাতে চুরি করে নিয়ে গিয়ে বার্বি কিউ পার্টি দিসো সেই খবর কি আমি জানিনা ভাবসো?”
–“আহ আব্বা এতো সত্যি কথা বলতে হয়না!”
–“তোমরা বাপ্ ছেলে কি শুরু করেছো এসব?থামো তোহ! তেজ এদিকে আয় বাবা শুন। ”
মায়ের কথায় পকেটে হাত গুঁজে এগিয়ে যায় নাওফিক। ঝর্ণা বেগম ছেলেকে পাশে বসালেন ডেকে। অতঃপর বললেন,
–“শুন! আমরা গিয়েছিলাম হান্নান ভাইয়ের কাছে সম্মন্ধ নিয়ে। ওনারা সুবহা কে তোর সঙ্গে বিয়ে দিবেন নাহ। আর এও শুনলাম সুবহার নাকি অন্যত্র বিয়ে ঠিক করেছে। ওইযে ওর ফুপাতো ভাই আছেনা ওই ছেলের সঙ্গে।”
–“আহা ঝর্ণা তোমাকে আগ বাড়িয়ে এতো কথা কে বলতে বলেছে? একটু চুপ থাকতে পারো নাহ? ”
নাওফিক এর মুখ এর আদল পাল্টে গেলো মায়ের মুখ থেকে সবকথা শুনা মাত্রই। চোখ তুলে তাকালো বাবার দিকে। চোয়াল শক্ত করে গিয়ে পুনরায় দাঁড়ালো তোফাজ্জল সাহেব এর সুম্মুখে। বলল চিবিয়ে চিবিয়ে,
–“আপনি কি বাপ্! ভাবসিলেন চেপে গেলেই আমি খবর পাবো নাহ? অর্ধেক খবর শুনিয়ে বাকি গুলো চেপে যেতে চাইছিলেন?এতোই সহজ। আমি যেহেতু একবার বলেছি আমি বিয়ে করবো মানে করবোই। আর সেটা এই সপ্তাহ নয় বরং আজকে রাতের মধ্যেই।”
বলেই হন হন করে সেখান থেকে বেরিয়ে গেলো নাওফিক।
–“বাবা শুন! কোথায় যাচ্ছিস?”
–“কোথায় যাচ্ছিস! আরো বলো বেশি করে? তোমার মুখে কি কোনো কথা আটকায় নাহ? সব গলগল করে বলে দিতে হবে? যত্তসব!”
**
ওদিকে সুবহার বাড়িতে আয়োজনের তদারকি করছেন ওর ফুপি আর বিলকিস বেগম। মাটির সোঁদা গন্ধ আর নারকেল-দুধের পায়েসের মিষ্টি ঘ্রাণ জানান দিচ্ছে আজ কোনো বিশেষ দিনের।
সুবহা কিছুই জানে না এখন পর্যন্ত। আংটি বদলের কথা থাকলেও আজ একবারে পুরো কাবিন করিয়ে ফেলবেন বিলকিস বেগম মেয়ের। এই সিদ্ধান্ত বিলকিস বেগম নিয়েছে। জেসমিন বেগম বরং খুশিই হয়েছেন এমন সিদ্ধান্তে। আপত্তি করেননি কেউ।
সুবহার পরনে ওর মায়ের একটি লাল জমকালো জামদানি শাড়ি। একটু আগেই ওকে শাড়ি পরিয়ে দিয়েছে বিলকিস বেগম। চুলে গুঁজে দিয়েছে একফোঁটা গাজরা। কানে ঝুলিয়ে দিয়েছে বিলকিস বেগমের মেয়ের বিয়ের জন্য তুলে রাখা সোনার একজোড়া দুল।
ঠিক এমন সময় হঠাৎ করেই শ্রেয়ান এসে হাজির হলো ঘরে। মুখের আদল গম্ভীর। বোধহয় কিছু নিয়ে চিন্তিত বেশ। বলল,
–“মিশমি শুন!”
–“হ্যা শ্রেয়ান ভাই বলো? ”
–“শুন এদিকে আয়। দেখ আজ তোর একমাত্র ভাইয়ের বিয়ে। আর আমার একমাত্র ছোট বোনেও বিয়ে। যদিও বিয়েটা পারবারিক ভাবেই হচ্ছে তারপরও তুই কি চাস না এটা একটু স্মৃতি হিসাবে রাখতে? শহরে যখন তোর ফ্রেন্ডরা তোর একমাত্র ভাইয়ের বউকে দেখতে চাইবে তখন তুই ফোনে নিশ্চই সুবহার ছবি দেখাবি। তাই বলছিলাম কি যদি ওকে পার্লার থেকে সুন্দর করে সাজিয়ে আনতি তাহলে ভালো হতোনা? তোর মতো এতো স্টাইলিশ একটা মেয়ের ভাইয়ের বউ এমন সিম্পল সাজে বিয়ে বিষয় টা কেমন দেখায় নাহ? যায় তোর সঙ্গে বল? ”
মিশমি কিছুক্ষন ঠোঁট কামড়িয়ে ভাবলো। ঠিকই তো। সেতো ভেবে দেখেনি। শ্রেয়ান ভাই ঠিকই তো বলছে। সুবহা কে যেহেতু এখন তারা সঙ্গে করে নিয়ে যাবে না। ঢাকায় ফিরার পর তার ভাইয়ের বিয়ের কথা জানাজানি হলে ওর কাজিন রাতো দেখতে চাইবে সুবহা কে। এখন তার ভাইয়ের মতো এমন হ্যান্ডসাম ছেলের সঙ্গে সুবহা কে যদি একটু না সাজায় তাহলে কেমন বেমানান দেখায় নাহ। যদিও সুবহা এমনিতে যথেষ্ট সুন্দরী একটা মেয়ে। তারপরও বিয়ে বলে কথা।
–“কিরে কি ভাবছিস? ”
–“নাহ শ্রেয়ান ভাই। তুমি খারাপ বলোনি। আমি এখুনি মামনি কে জানাচ্ছি। তবে আমি তো পার্লার চিনিনা এখানে।
–“আরেহ আমি আছিনা। তুই শুধু মায়ের কাছ থেকে পারমিশন নে। আমি তোদের নিয়ে যাবো। ”
–“আচ্ছা। তুমি দাড়াও আমি এখুনি মামনি কে জানিয়ে আসছি।”
–“যলদি যা বোন!”
মিশমির আবদারে বিলকিস বেগম প্রথমে একটু কুণ্ঠিত হলেও পরোক্ষনে মেনে নিলেন সহজেই। বাড়ির বাইরে বেরিয়ে থেমে দাঁড়ালো শ্রেয়ান। মিশমির উদ্দেশ্য বলল,
–“তুই একটু এখানে দাড়া। আমি আগে ওকে নামিয়ে দিয়ে আবার তোকে নিয়ে যাবো। পার্লার বেশি দূরে না ৫ মিনিট লাগবে। যাবো আর আসবো। ”
**
বাড়ির পেছনদিকটা বরাবরই একটু নির্জন চুপচাপ, গাছগাছালিতে ঘেরা। পিছনের পথ ধরে বোনকে নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে শ্রেয়ান। সুবহা একটু অবাক হয়ে বলল,
–“ভাইয়া, পার্লার তো বাজারের দিকে। এদিক দিয়ে কই যাও?”
সুবহার গলায় উদ্বেগ। ভ্রু কুঁচকে তাকায় ওর বড় ভাই শ্রেয়ানের দিকে। শ্রেয়ান ধীর স্পষ্ট কণ্ঠে জবাব দিলো,
–“চুপচাপ বসে থাক। তোকে নিয়ে আমার মাথার উপর দিয়ে ঝড় যাচ্ছে। আর বুঁকের ভিতর সুনামি।”
এর মধ্যই গাড়ি আচানক ব্রেক কোষে থামালো শ্রেয়ান একটি মোটরবাইকের সামনে। সুবহা বিস্মিত চোখে তাকালো সামনে দাঁড়িয়ে থাকা লোকটার দিকে। অমনিই ভয়ে আঁতকে উঠল মেয়েটি। সামনে দাঁড়িয়ে নাওফিক। চোখে আগুন। মুখে অস্থিরতা। বুকের ভিতর অদ্ভুত এক কাঁপুনি উঠল সুবহার।
শ্রেয়ান গাড়ি থেকে নেমে এগিয়ে গেল নাওফিকের দিকে।
–“নে ভাই। নিজের প্রাণ বাজি রেখে তোর প্রাণ নিয়ে এসেছি।”
সুবহার মুখ শুকিয়ে এসেছে। কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না ও। নাওফিকের চোখে ইতোমধ্যে পড়ে গেছে সুবহার লাল জামদানি শাড়ি পরা শরীর আর মুখভর্তি মিশ্রিত আতঙ্কে। চোখের এক ধরনের ক্ষিপ্রতা নিয়ে নিয়ে নিজেকে সংযত করল ও। নিচু গলায় আওড়ালো,
–” বাইকে উঠ।”
সুবহা নড়লো না। বরং নিঃশব্দে শ্রেয়ানের পেছনে গিয়ে লুকালো। বলল ভয়ার্ত কণ্ঠে,
–“ভাইয়া আমায় নিয়ে চল। আমি এই লোকটার সঙ্গে যাবো না।”
শ্রেয়ান দীর্ঘশ্বাস ফেলল। কণ্ঠে মৃদু অনুরোধ নিয়ে বলল ও,
–“বোন, ভয় পাস না। বিশ্বাস রাখ ভাইয়ের উপর। নাওফিক খারাপ ছেলে না। তুই ভাইয়ের কথা শুন। আজ নাহোক একদিন বুঝবি ভাই তোর কতটা ভালো চেয়েছে।”
তবুও সুবহা মাথা নাড়ায় না। পা মাটিতে গেড়ে দাঁড়িয়ে থাকে ওখানেই। তখনই হঠাৎ বিস্ফোরণ ঘটে নাওফিকের। বলে অধৈর্য হয়ে,
–“বাল, এইসব বাদ দে! আমার চোখের সামনে দাঁড়িয়ে অন্য জনের লগে বিয়ে করবি? সাহস কত বড় হয়েছে তোর? উঠবি নাকি কানের পিছে দুইটা বসাবো?”
–“আহা ভাই! মাথা ঠান্ডা কর।”
নাওফিক গর্জে উঠে শ্রেয়ান এর কথায়,
–“রাখ তোর মাথা ঠান্ডা! মন চাইতাছে তোদের দুই ভাইবোনকেই এই ঘাটে চুবায়া রাখি। পাঁচটা বছর!পাঁচটা বছর ধইরা আমিই পুরছি বিরহে আর তুই আমার খবর না নিয়ে অন্য জনের লগে সংসার করবি? সংসার করাচ্ছি তোর জন্মের মতো।”
বলেই ঝট করে সুবহার হাত ধরে টেনে নিয়ে আসে বাইকের কাছে। একরকম জোর করেই বাইকে তুলে বসায় ওকে । সুবহা কেঁপে কেঁপে উঠে বসে। চোখ দুটো ছলছল করে উঠে ওর। তাকায় ভাইয়ের দিকে। হয়তো ভাবে তার ভাই বাধা দিবে ওকে। আটকাবে। যেতে দিবেনা।
নাওফিক বাইক স্টার্ট করতে যাবে তখন শ্রেয়ান গলা চেপে বলল,
–“ভাই, আমার কলিজার টুকরাটা তোর হাতে তুলে দিলাম। কোনোদিন কষ্ট দিস না ওকে।”
নাওফিক ফিরে তাকাল না। শুধু বলল,
–“আগে তোর বোনের বিচার করবো। আমি থাকতে ও আরেকজন রে নিয়ে ভাবার সাহস পায় কেমনে?”
এরপর বাইক স্টার্ট করে যেতে যেতে পিছন না ঘুরেই বলল,
–“দুইদিন বাড়িতে যাইস না। ক্লাবের ঘর খালি আছে। ওখানে চইলা যা। পরিস্থিতি ঠান্ডা হইলে আসিস।”
শ্রেয়ান দাঁড়িয়ে থাকল। নাওফিকের বাইক দূরে মিলিয়ে গেলে চোখের পলকেই। সুবহা ভাইয়ের পিছনে তাকিয়ে আছে এখনো। যতটুকু দেখা যায়। শ্রেয়ান এর চোখ গড়িয়ে পড়ে দু’ফোঁটা জল। পুরুষেরা সহজে কাঁদে না। কিন্তু এই অশ্রু কষ্টের নয়। ভেতরের তৃপ্তির, নিশ্চিত এক বিশ্বাসের। নিজের প্রাণের চেয়েও প্রিয় বোনটিকে এমন একজনের হাতে তুলে দিতে পেরে সত্যিই আজ সে গর্ব করছে। তার বন্ধু যতই মুখে বলুক না কেন। ও জানে এই পৃথিবীতে নাওফিকের চেয়ে ভালো ওর বোনকে আর কেউ বাসতে পারবে না।
শ্রেয়ানের চোখে ভেসে ওঠে পাঁচ বছর আগের সেই দৃশ্যে। সুবহা তখন ক্লাস ফাইভে পড়ে বোধহয়। নেভি ব্লু ফ্রক, হাতে ডেইরি মিল্ক, দুপাশে দুটো ঝুটি করে একদিন স্কুল থেকে বাজারের পথ ধরে বাড়ি ফিরছিলো সুবহা। বাজারের ক্লাব ঘরের সামনে কেরাম খেলছিলো নাওফিক আর শ্রেয়ান। হঠাৎ এক পাগলা কুকুর পেছনে পড়ে সুবহার। ভয়ে চকোলেট ফেলে দৌড় দেয় সুবহা। নাওফিক তখন বাজারেই ছিল। পিছন ফিরে তাকানোর আগেই এক কাঁপা হাত জড়িয়ে ধরে ওকে। সুবহা কুকুর থেকে ছাড়া পাওয়ার জন্যই নাওফিক কে শ্রেয়ান ভেবে জড়িয়ে ধরে। ভুলে জড়িয়ে ধরা সেই স্পর্শ, সেই চোখ, সেই ভয়ের মুহূর্তে প্রথমবার নাওফিক দেখেছিল সুবহার সেই নিস্পাপ মুখখানা। সেদিন থেকেই শুরু হয় নাওফিকের পাগলামি তার বোনকে ঘিরে। যেটা সময়ের সাথে সাথে বাড়তেই থাকে। শ্রেয়ান প্রথমে বুঝতে না পারলেও একটা সময় বন্ধুর হাবভাব আঁকার ইঙ্গিতে বুঝে যায় তার বন্ধুর তার ছোট বোনের উপর নজর রাখার বিষয়টি।আস্তে আস্তে দিন গড়াতে লাগলো। সুবহাও বড় হতে লাগলো। সেই সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকলো নাওফিকের শুভকে ঘিরে যতসব উদ্ভট কান্ড। মেয়েটাকে সব সময় চোখে চোখে রাখা। কোথায় যায় না যায় খেয়াল রাখা। একদিন সুবহা পরা না পাড়ায় স্কুলের এক টিচার হাতে মেরেছিলো সুবহা কে। সেই খবর কানে যায় নাওফিকের। সেই টিচার এর সেকি অবস্থা করে ছেড়েছিলো তার এই পাগলাটে বন্ধু। সেদিন বুঝেছিলো শ্রেয়ান নাওফিক যে তার বোনকে ঠিক কতটা ভালোবাসে। এরপর হঠাৎ করেই বিদেশ পাঠিয়ে দেয়া হয় নাওফিক কে। যেতে না চাইলেও বাধ্য হয়েই যেতে হয় ওকে। তবে সেখানে গিয়েও কি তাকে শান্তি দিয়েছিলো তার বন্ধু?
উহুম! বরং ওর জীবনটা তেজপাতা বানিয়েছে ছেড়েছিলো এই তেজওয়ান চৌধুরী নাওফিক। উঠতে বসতে খেতে শুতে সবসময় তাকে বলেছে ওর বোন কি করে কোথায় যায়। কি খেয়েছে। আরো কত কি। হঠাৎ হঠাৎ বায়না ধরে বসতো একটা ভিডিও কল দে দেখবো ওকে। দেখা যেত তখন বাংলাদেশ সময় রাত দুটো কি তিনটা। শ্রেয়ান তার সাধের ঘুম নষ্ট করে উঠে গিয়ে দেখাতো তার ঘুমন্ত বোনকে।
এইতো আজ সন্ধ্যায়। দুপুরে খেয়ে দেয়ে ঘুম দিয়েছিলো একটা শ্রেয়ান। অমনিই ওর সাধের ঘুমের বারোটা বাজিয়ে বেজে উঠে বালিশের নিচে থাকা ফোনটা। ফোন কানে তুলতেই গর্জে উঠে নাওফিক। নাওফিকের কাছেই শুনতে পায় সুবহার শুভ্রর সঙ্গে বিয়ে ঠিক করার বিষয়টা। তাছাড়া তো কিছুই জানতো না ও। এরপর সিউর হওয়ার জন্য নিচে যেতেই পুরো বিষয়টা জানতে পারে শ্রেয়ান। আংটি পড়ানো নয় বরং সোজা কাবিন করেই রাখবে তার মা। যা শুনে রীতিমতো হকচকায় শ্রেয়ান। তার ওই পাগল বন্ধু যদি একবার জানতে পারে যে তার বাবা মা ডিরেক্ট কাবিন করার আয়োজন শুরু করে দিয়েছে তখন না জানি কি করে। এমনিতেই ওকে ওয়ার্ন করেছে বাড়িতে আসছে ওর বোনকে তুলে নিতে। শ্রেয়ান তড়িঘড়ি করে উপরে গিয়ে ফোন ব্যাক করে। বুঝায় ওর বন্ধুকে। কথা বলার এক পর্যায়ে মুখ ফস্কে বলে দেয় কাবিন হওয়ার বিষয়টা। আহ! ভাগ্যক্রমে বুদ্ধি খাটিয়ে কোনো রকম রাজি করাতে পেরেছিলো নাওফিক কে। সে নিজে নিয়ে আসবে যেন কোনো সিন্ ক্রেইট না করে। নাহলে বড় এক কাহিনী ঘটে যাবে। এর থেকে ভালো বোনকে ঠান্ডা মাথায় এসে তুলে দিয়ে গেছে। ভেবেই তপ্ত শ্বাস ছাড়ে শ্রেয়ান।
চলবে….