মায়াবতী পর্ব-০৩

0
9

#মায়াবতী
#পর্ব_৩
#SF_Tabassum

-চলো আমরা বিয়ে করে ফেলি?

-কিহহহ! বিয়ে??

-এত অবাক হওয়ার কি আছে রাহা? বিয়ে তো করতেই হবে।

-আমি এই মুহুর্তে তোমাকে বিয়ে করতে পারবো না।

-মানে কি বলছো তুমি এসব? বিয়েতে সমস্যা কি?

-আছে অনেক সমস্যা তুমি বুঝবে না।

-আমি সেটাই জিজ্ঞেস করছি, কি সমস্যা? আমি স্টাবলিশড, তোমার পড়াশোনা শেষ। তাহলে সমস্যা কোথায় প্লিজ বলবে!

-দেখো মিসবাহ.. মাত্র ছয় মাসের সম্পর্কে আমি কাউকে কিভাবে বিয়ে করি বলো? আমার এখনও অনেক কিছু ভেবে দেখার আছে।

-ওয়েট…. কি বললে তুমি? তোমার ভাবতে হবে? তুমি এখনো বলছো যে তোমার ভাবতে হবে। আমরা দুজন দুজনকে ভালবাসি। এখানে ভাবাভাবির কি আছে আমি তো এটাই বুঝি না। নাকি তুমি আমাকে ভালোই বাসোনি?
শেষের কথাটা একটু উচ্চস্বরেই বললাম।

-দেখো আমি কোন সিনক্রিয়েট চাই না। তোমার যা ইচ্ছা ভাবতে পারো।

এই বলে রাহা উঠে যেতে নিলো। আমি পেছন থেকে ওর হাত টেনে ধরলাম।

-তাহলে তুমিও শুনে রাখো। যার আমাকে বিয়ে করতে হলে ভাবতে হবে, তার সাথে আমি আর কোন সম্পর্ক রাখতে চাই না।

রাহা কিছু না বলে আমার হাত ঝারি মেরে চলে গেলো। আমি দুই হাত মুষ্টিবদ্ধ করে নিজের রাগ কন্ট্রোল করার চেষ্টা করছি।

.

রাতে ঘর জুরে পায়চারী করছি আর রাহার কথা ভাবছি। ও কিভাবে আমার সাথে এমনটা করলো। তবে কি আমি শুধুই ওর টাইম পাস ছিলাম? নাহ আমি আর কিছু ভাবতে পারছি না।

আজকে স্নিগ্ধাকেও কল দিলাম না। আমার কিছুই ভালো লাগছে না। কেমন একটা দ্বিধার জালে আটকে আছি। দুই হাত দিয়ে মাথার চুল চেপে ধরে আছি।

আপাতত মাথা থেকে সব চিন্তা বাদ দিয়ে অফিসের কিছু কাজ ছিলো তাই করতে বসলাম। প্রায় একটা অবধি কাজ করলাম। এরপর ল্যাপটপ রেখে ঘুমাতে গেলাম।

অন্যসময় যখন আমাদের কোন কিছু নিয়ে ঝগড়া হয় তখন রাহা ফোন করে আমাকে পাগল করে ফেলে। আজকে একটা মেসেজ অবধি দেয়নি। বুঝতে পারলাম হয়তো ওর কাছে আমার প্রয়োজন ফুরিয়ে গিয়েছে। কথাটা ভেবেই কেন জানি খুব হাসি পেলো।

আজ শুক্রবার। মুনতাহা সকাল সকাল উঠে রান্না শুরু করে দিয়েছে। আজ সারাদিন সে এটা ওটা বানাতেই থাকবে। প্রতি শুক্রবারই তিনি স্নিগ্ধার পছন্দের সব খাবার রান্না করেন। কারণ সপ্তাহে এই একটা দিনই আছে যেদিন তিনি মেয়েকে সময় দিতে পারেন।

স্নিগ্ধা পেছন থেকে এসে মাকে জড়িয়ে ধরলো। ঘুম ঘুম কণ্ঠে বলে, আই লাভ ইউ মা। মুনতাহা মুচকি হাসি দিয়ে বাম হাত ঘুরিয়ে স্নিগ্ধার গালে হাত বুলিয়ে জবাব দেয়, আই লাভ ইউ টু সোনা।

এরপর মা মেয়ে মিলে সকালের নাস্তা করে নেয়। বিকেলের দিকে স্নিগ্ধা ওর মাকে নিয়ে পার্কে হাটতে বেড় হয়। প্রতি সাপ্তাহিক ছুটির দিনেই এমন করে। মা মেয়ে মিলে অনেক গল্প করে। দুজনে একসাথে বাদাম, আইসক্রিম, হাওয়াই মিঠায় আরও অনেক কিছু খায়। তখন এই দুজনকে দেখে মনে হবে এদের চাইতে সুখি মনে হয় এই পৃথিবীতে আর কেউ নেই।

আমার কাঠগোলাপ গাছে আজ ফুল ফুটেছে। আমার ফুল গাছের প্রতি তেমন কোন আকর্ষণ নেই। কিন্তু সেদিন রাস্তার ধারে ফুটন্ত কাঠগোলাপ গাছ দেখে হঠাৎ করেই খুব ভালো লেগেছিলো। কোন কিছু না ভেবেই একটা ছোট্ট গাছ কিনে ফেলি। তবে অবাক করার বিষয় হলো রাহার কাঠগোলাপ পছন্দ ছিলো না। শুনেছি মেয়েদের নাকি কাঠগোলাপ অনেক পছন্দের। কিন্তু ও কেন জানি একদমই অপছন্দ করতো। যাই হোক আজকে ফুল ফুটতে দেখে অনেক ভালো লাগছে। সেই সাথে মন খারাপটাও হঠাৎই গায়েব হয়ে গেলো।

আমি কাঠগোলাপের একটা ছবি তুলে স্নিগ্ধাকে পাঠালাম। কেন এমনটা করলাম নিজেও জানি না। একটু পরেই রিপ্লাই আসলো।

‘ওয়াও! এটা আপনার গাছ। মাশা-আল্লাহ মাশা-আল্লাহ কি সুন্দর!’

স্নিগ্ধার মেসেজ পড়ে আমি মুচকি হাসলাম। জানতে পারলাম ওর কাঠগোলাপ খুব পছন্দের। অনেক চেষ্টা করেছে কিন্তু কিছুতেই ওর এই গাছ থাকে না। হয়তো শুকিয়ে যায় নয়তো ফুল ফোটে না। পরে রাগ করে হাল ছেড়ে দিয়েছে।

.

অনেকগুলো দিন পার হয়ে গিয়েছে। রাহার সাথে আর কথা হয়নি আমার। কিন্তু এর মাঝে স্নিগ্ধার সাথে আমার খুব ভালো বন্ধুত্ব হয়ে গিয়েছে। রোজই কথা হয় আমাদের। স্নিগ্ধা ওর মনের প্রায় সব কথাই আমাকে বলে। মাঝে মাঝে বাবার প্রতি অভিমান হলে কান্নাও করে। বাবাকে নিয়ে অনেক অভিযোগ অভিমান জমে আছে ওর মনে। আমি নিশ্চুপ শ্রোতার ন্যায় শুনে যাই শুধু।

ফেইসবুক স্ক্রল করছি হঠাৎ একটা ছবি দেখে চমকে গেলাম। রাহার বান্ধবী আমার ফ্রেন্ড লিস্টে ছিলো। ওর আইডি থেকে রাহার বিয়ের বেশ কিছু ছবি আপলোড করেছে। সবগুলো ছবিতেই রাহাকে বেশ হাসিখুশি দেখাচ্ছে। গায়ে বেশ দামি জুয়েলারি। হাতে একটা দামি ডায়মন্ড এর রিং। ওকে দেখে খুব খুশিই মনে হচ্ছে। আমি ফেইসবুক থেকে বেড় হয়ে ফোনটা পকেটে রাখলাম।

আজ অফিসে তেমন একটা কাজ নেই তাই তাড়াতাড়ি বেড় হয়ে আসলাম। টং দোকানে বসে চা খাচ্ছিলাম। এমন সময় দেখলাম স্নিগ্ধা রিকশা করে যাচ্ছে। সাথে একটা ছেলেও আছে। ছেলেটার সাথে বেশ হেসে হেসেই কথা বলছে। আবার গাল টেনে দিচ্ছে মাঝে মাঝে।

চলবে??