#মায়াবতী
#পর্ব_৪
#SF_Tabassum
রাহার ব্যাপারটা শুধু মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। ও আমাকে এতবড় একটা ধোকা কি করে দিলো। আমার প্রচন্ড রাগ হচ্ছে। তখন ছবিগুলো দেখে এতটা রাগ লাগেনি যতটা এখন লাগছে। রাতে খাওয়াও হয়নি। মাকে একটা অজুহাত দেখিয়ে দিয়েছি। আমি রাহার আইডিতে গেলাম দেখলাম আমাকে আগেই ব্লক করে দিয়েছে। এরপর ফেইক আইডি থেকে ঢুকলাম। যা দেখলাম তাতে আমার চোখ ছানাবড়া দিয়ে গেলো। প্রোফাইলে ওর আর ওর বরের ছবি। ক্যাপশনে দেয়া ‘অবশেষে সব মান অভিমান ভেঙে সে আমার হলো।’
আমি সাতপাঁচ না ভেবে রাহার বান্ধবীকে নক করলাম। দেখি সাথে সাথে রিপ্লাই আসলো। ও আমাকে রাহার ব্যাপারে সবকিছু বলে দিলো। আসলে রাহার এক ছেলের সাথে সাত বছরের দীর্ঘ একটা সম্পর্ক ছিলো। কোন একটা কারণে ওদের ব্রেকআপ হয়ে যায়। এরপরই আমাদের পরিচয় হয়। ছেলেটা এতদিন দেশের বাহিরে ছিলো। কিছুদিন আগে দেশে ফিরেই ওদের বাসায় বিয়ের প্রস্তাব দেয়। রাহা সেই ছেলেটাকে আজও ভালবাসে তাই রাজি হয়ে যায়।
সবকিছু শুনে আমি স্তব্ধ হয়ে গিয়েছি। ও কিভাবে পারলো আমার সাথে এমনটা করতে? ওর এরকম একটা সম্পর্ক ছিলো আমাকে যদি একবার বলতো আমি নিজে ওদের মিলিয়ে দিতাম। এখন আমার কাছে সবকিছু পরিষ্কার লাগছে। আমি যখনই রাহার সাথে একটু রোমান্টিক মুড নিয়ে কথা বলতাম তখনই ও অন্যমনস্ক হয়ে যেত আর সেখান থেকে রাগ করে চলে যেতো। তখন ভাবতাম হয়তো লজ্জা পাচ্ছে। এখন বুঝতে পারছি ওর এমন আচরণের কারণ।
রাহার কথা ভাবছিলাম এমন সময় স্নিগ্ধার কল আসলো। প্রতিদিন রাহার নাম্বার থেকে কল আসলে ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠতো কিন্তু আজ রাগ লাগছে। প্রথমে রিসিভ করলাম না। কিছুক্ষণ পর আবার কল দিলো। রিসিভ করতেই সালাম দিলো। আমি সালামের জবাব দিয়ে বললাম,
‘হ্যাঁ, বলো।’
‘কেমন আছেন?’
‘জ্বী ভালো।’
‘কিছু কি হয়েছে?’
‘আমার আবার কি হবে?’
‘রেগে আছেন কেন তাহলে?’
‘কে বললো আপনাকে আমি রেগে আছি? আর রেগে থাকলেই বা আপনার কি! আপনি যান না গিয়ে রিকশাতে ঘুরুন।’
অনেকটা রাগ নিয়ে বললাম কথাগুলো। কিন্তু ও আমার কথা শুনেই উচ্চস্বরে হাসতে লাগলো।
‘আজব, আমি কি হাসির কিছু বলেছি!’
‘ওহ মাই গড! আপনি….
হাসির জন্য কথা বলতে পারছে না। এবার আমার প্রচন্ড রাগ হচ্ছে।
‘বাই দ্যা ওয়ে, আপনি কি জেলাস?’
‘আমি কেন জেলাস হবো?’
‘হুমমমম! তা ঠিক আপনি কেনই বা জেলাস হবেন! তবে….
‘তবে কি?’
‘আরে বুদ্ধু ওটা আমার মামাতো ভাই ছিলো। ওর সামনে এইসএসসি পরিক্ষা এর জন্য একটু নার্ভাস ছিলো। তাই রিল্যাক্স করাতে ওর সাথে কিছুক্ষণ আড্ডা দিলাম।’
এবার আমার কপাল থেকে ভাজ সরলো। সাথে লজ্জাও পেলাম। আর আমি কি না কি ভাবছিলাম। এরপর কিছুক্ষণ কথা বলে রেখে দিলাম।
আশ্চর্য! আমার এখন আর কোন রাগ লাগছে না। কিছুক্ষণ আগেও আমি রাহার উপরে অনেক রেগে ছিলাম। এরপর নিজেকে নিজে প্রশ্ন করলাম। আসলেই কি আমি রাহার উপরে রেগে ছিলাম? আমার রাগ কার উপরে ছিলো? রাহা নাকি স্নিগ্ধা? রাহার ঘনিষ্ঠ কত ছেলে বন্ধু ছিলো। তাদের সাথে এদিক ওদিক যেতো। কই আমার তো কখনো এমন খারাপ লাগেনি। কিন্তু আজ স্নিগ্ধার পাশে কোন ছেলেকে দেখে এতটা খারাপ কেন লাগছে।
সৌন্দর্য এবং আধুনিকতার শুধু মোহে পড়া যায়। আসলে আমরা জীবন সঙ্গী হিসেবে এমন কাউকে চাই যার প্রতি মোহ নয় ভালবাসা কাজ করে। যার সাথে কথা বললে মানসিক শান্তি পাওয়া যায়। যাকে নির্দ্বিধায় সবকিছু বলা যায়। চোখ বন্ধ করেও যাকে গভীরভাবে অনুভব করা যায়। তবে কি আমি স্নিগ্ধাকে ভালবেসে ফেললাম?
আমার মন এবং মস্তিষ্কের সাথে যুদ্ধ চলছে। মস্তিষ্ক বলছে স্নিগ্ধা শুধুই আমার বন্ধু আর মন বলছে ও আমার বন্ধুর চেয়েও অনেক বেশি কিছু।
এভাবে কয়েকদিন কেটে গেলো। ধিরে ধিরে আমি উপলব্ধি করলাম রাহার উপরে যা ছিলো তা শুধুই আমার মোহ ভালবাসা নয়। কিন্তু সত্যিকারের ভালো আমি স্নিগ্ধাকেই বেসেছি। রাহার উপর যত ক্ষোভ ছিলো নিমিষেই তা দূর হয়ে গেলো। ও ওর সত্যিকারের ভালবাসার মানুষের কাছে গিয়েছে। মন থেকে চাই সারাজীবন সুখে থাকুক। তবে একটু খারাপও লাগছে। ও আমাকে একবার জানাতে পারতো সবকিছু। যাই হোক এখন রাহার চিন্তা মাথা থেকে পুরোপুরি বেড় করে দিলাম। এরপর স্নিগ্ধার নাম্বার ব্লক করে দিলাম। মনে মনে একটু হাসলাম। এরপর স্নিগ্ধার নাম্বার ব্লক করে দিলাম। মনে মনে একটু হাসলাম।
.
আজকে ছুটির দিন। বিকেলে মা ঘুমাচ্ছে আমি চুপি চুপি রান্নাঘরে গেলাম। মায়ের জন্য চা আর স্ন্যাকস তৈরি করলাম। অনেক দিন পর আজ মায়ের জন্য নিজ হাতে কিছু বানালাম। কলেজ লাইফে প্রায়ই আমি বিকেলের নাস্তা তৈরি করতাম। এখন তো সময়ই পাই না। আমি মায়ের রুমের টেবিলের উপর ট্রে তে করে সব নিয়ে রাখলাম। শব্দ পেয়ে মা উঠে গেলো। হাত ধরে নিজের পাশে বসিয়ে কপালে চুমু এঁকে দিলো। অনেক দিন পর আজ মায়ের সাথে মন খুলে গল্প করলাম।
।
আজ ছুটির দিন কিন্তু স্নিগ্ধা সারাদিন অনেক ব্যাস্ত ছিলো। সারা সপ্তাহের জমানো কাজ ছুটির দিনেই করতে হয়। এছাড়াও আজকে একটু বাড়তি কাজ ছিলো।
রাত প্রায় ১২ টা বাজে। স্নিগ্ধা ফোন হাতে নিতেই অবাক হয়ে গেলো। এত রাত হলো অথচ এখন পর্যন্ত মিসবাহর একটা কলও আসলো না। সাথে কিছুটা চিন্তাও হলো। তাড়াতাড়ি মিসবাহর নাম্বারে ডায়েল করলো কিন্তু বার বার ব্যস্ত বলছে। হোয়াটসঅ্যাপে ঢুকতেই দেখতে পেলো ব্লক করে রেখেছে। স্নিগ্ধা একটু নয় বেশ খানিকটা অবাক হলো। হঠাৎ ব্লক করার কারণ ভেবে পাচ্ছে না ও।
.
দুই দিন পর।
স্নিগ্ধা এই দু’দিনে অনেকবার মিসবাহর নাম্বারে ডায়েল করেছে কিন্তু প্রতিবারই নিরাশ হয়েছে। রাতে মুনতাহা আসলো ওর ঘরে। কিছুক্ষণ আদর করলো মেয়েকে। এরপর জানালো আগামীকাল স্নিগ্ধাকে দেখতে আসবে। যদি পছন্দ হয় তাহলে কালই বিয়ে হবে। এতে স্নিগ্ধার কোন আপত্তি আছে কিনা জিজ্ঞেস করে। ও মাথা নাড়িয়ে না বুঝায়। মুনতাহা লম্বা শ্বাস নিলো। এটারই অপেক্ষায় ছিলো।
মুনতাহা যেতেই স্নিগ্ধা দরজা আটকে কান্না শুরু করলো। স্নিগ্ধা মনে মনে মিসবাহকে ভালবাসতে শুরু করেছিলো। ভেবেছিলো মিসবাহও হয়তো ওকে ভালবাসে কিন্তু না ও ভুল ছিলো।
.
পরদিন যথারীতি পাত্রপক্ষ স্নিগ্ধাকে দেখতে আসে। পাত্রের ওকে এতই পছন্দ হয় যে সেদিনই বিয়ে করে সাথে নিয়ে যায়। কবুল বলার সময় স্নিগ্ধার অনেক কষ্ট হচ্ছিলো। মনে হচ্ছিলো বুকের ভিতর কেউ পাথর চাপা দিয়ে রেখেছে। বহু কষ্টে তিনবার কবুল বলে। সাথে সাথে সবাই জোরে আলহামদুলিল্লাহ বললো।
যাওয়ার সময় মাকে জড়িয়ে ধরে অনেক কান্না করে স্নিগ্ধা। মুনতাহা খুব কষ্টে নিজেকে সামলে মেয়েকে বিদায় দেন।
এদিকে মিসবাহ রান্নাঘরে কফি বানাতে ব্যস্ত আর ওদিকে স্নিগ্ধা বাসর ঘরে ওর স্বামীর জন্য অপেক্ষা করছে….
চলবে…??