গল্প: লাস্ট হোপ
পর্ব :১
কলমে_সুমনা (edited)
শীতের সকালের কুয়াশা যেন এক অদৃশ্য পর্দা টেনে রেখেছে গোটা শহরের উপর। বাতাসে হিমের কামড়, গাছপালার পাতায় জমে থাকা শিশিরবিন্দু কাঁপছে হালকা বাতাসে। দূরের কোন পাখির অস্পষ্ট ডাক ভেসে আসছে, যেন কুয়াশার ভেতর দিয়েও গলা ফাটিয়ে জানান দিচ্ছে তার অস্তিত্ব। রাস্তার ধারে স্ট্রিটল্যাম্পগুলো এখনো নিভেনি—হলুদ আলোয় কুয়াশার ধোঁয়াটে সাদা পর্দা কেমন একটা ছায়া-ছায়া বিভ্রম তৈরি করেছে। পথঘাট নিঃসঙ্গ, কিছু মানুষের ছায়া হেঁটে চলেছে গা ঘেঁষে, যেন এই শহর কোনো ঘুমন্ত অভিশাপের নিচে আছে… এক ভয়ানক কিছু ঘটে যাবার আগ মুহূর্তের নিস্তব্ধতা। বাস থেকেই বাইরের সৌন্দর্য দেখছিল ইরাদ। বাস জাহাঙ্গীরনগরের সামনে থামতেই একপ্রকার দৌড়ে ধাক্কা ধাক্কি করে নেমে গেল ইরাদ। বাস থেকে নামা আর তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ করা তার কাছে সমান। ফারিয়াকে দেখেই যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো ইরাদ। ফারিয়া কপাল কুঁচকে গাল ফুলিয়ে বলল,
“তোর পাঁচ মিনিট একঘন্টা পরে শেষ হলো?”
একগাল হেসে ইরাদ বলে উঠল,
“সরি, তুই বললি বলে আজ আসলাম নাহলে এই শীতে কে আসতো বল তো।”
“হুম তোর মতো অলস যে কখনো আসতো না সেটা আমি জানি।”
“আর কত রাগ করবি? এবার চল।” বলেই ফারিয়ার হাত ধরে টেনে ভার্সিটির ভেতরে নিয়ে গেল ইরাদ।
——————
নেমপ্লেটে জ্বলজ্বল করছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। মেইন গেট দিয়ে ভেতরে ঢুকেই বাম দিকে ক্যাফেটেরিয়ার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে ইরাদ আর ফারিয়া। কিছু পাতাবাহার গাছ, প্রতীকী সবুজ রঙের জাবির বাস। হাঁটতে হাঁটতে দুজনে পৌঁছাল টিএসসির সামনে। ভেতরে ১০৯ নম্বর রুমে গেল ইরাদ আর ফারিয়া। ইরাদ একটু বিরক্ত হয়ে বলল,
“কিরে সারাদিন যে এত কণা আপা, কণা আপা করিস কোথায় তোদের আপা?”
“আরে চল না..গেলেই দেখবি।”
“এখন যদি তোর আপা না আসে তখন?”
ফারিয়া একটু হেসে বলল,
“এখন আমার আপা বলছিস ঠিকই কিন্তু একবার কণা আপার সাথে পরিচিত হয়ে গেলে তুই আর আপার পেছনই ছাড়বি না।”
ইরাদ একটু বিরক্ত হয়ে বলল,
“এই তোর এক সমস্যা। একটুতেই মানুষের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়ে থাকিস। সারাক্ষণ তার নাম জপতে জপতে মুখের ফেনা তুলে ফেলিস।”
একটু পড়েই আর্বিভাব ঘটল বাংলা বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্রী ফাবিহা তাসনিম কনার। সহাস্যে জিজ্ঞেস করল,
“আমায় নিয়ে কি আলোচনা করা হচ্ছে শুনি?”
ফারিয়া মুচকি হেসে বলল,
“আপা তোমাকে বলেছিলাম না,এইযে..ও ইরাদ।”
কণা ইরাদের দিকে এক পলক তাকাতেই ইরাদ সালাম দিল। ফারিয়া আবার বলতে শুরু করল,
“আপা,ও নাচ, আবৃত্তি দুটোই ভালো করে।”
আরো দুজন মানুষের কন্ঠ কানে আসতেই পেছনে তাকায় ইরাদ। দুটো মেয়ে তাদের দিকেই এগিয়ে আসছে। এক প্রকার তর্ক বিতর্ক হচ্ছে তাদের মধ্যে। কণা তাদের দেখেই চেঁচিয়ে উঠলো,
“কি হয়েছে তোদের?”
দুটো মেয়ের মধ্যে তুলনামূলক ফর্সা মেয়েটা বললো,
“এবারেও যদি আগের মতো হয় তাহলে আমি আর নাট্যচক্রের সাথে থাকব না।”
কণা একটু উত্তেজিত হয়ে বলল,
“তটিনী তুই সবসময় বেশি ভাবিস কেন?”
তটিনী বিরক্ত হয়ে বলল,
“তুমি জানো না ওই রিদওয়ানের বাচ্চার জন্যই গতবার আমাদের পারফর্মেন্সটা হয় নাই।”
এবার তটিনীর পাশ থেকে আভা বলে উঠল,
“না জেনে একটা কথা বলে ফেলা একদমই উচিত না।”
তটিনী এবার চিৎকার করে বললো,
“তটিনী কখনো ফাঁকা বুলি আওড়ায় না। আর আমি কেনো উত্তেজিত হচ্ছি সেইটা যারা নাট্যচক্রের সাথে শুরু থেকে আছে তারাই জানে। এমনি এমনি তো আমি কো-অর্ডিনেটর আর কণা আপু সভাপতি হয়ে যাই নি।”
তটিনীর চিৎকারে এবার যেন মুহূর্তে শীতল বাতাস বয়ে গেল সকলে এক মুহূর্তের জন্য স্তব্ধ—চোখে মুখে বিস্ময়ের ছাপ, যেন মৃত মানুষকে চোখের সামনে উঠে দাঁড়াতে দেখছে।
চলবে…