বাতাসে প্রেমের ঘ্রাণ পর্ব-০১

0
1

#বাতাসে_প্রেমের_ঘ্রাণ
#পর্ব_১
#লেখনিতে_ছনিয়া_তাবাচ্ছুমবাতাসে_প্রেমের_ঘ্রাণ
#পর্ব_১
#লেখনিতে_ছনিয়া_তাবাচ্ছুম

আমার যখন আট বছর বয়স তখন আমার মা পরকীয়ায় আসক্ত হয়ে এক ছেলে কে বিয়ে করেন। তখন একটি বারের জন্যও আমার কথা ভাবেনি আর না ভেবেছে আমার বাবা’র কথা। আমার বাবা একজন প্রবাসী। দীর্ঘ অনেক গুলো বছর ধরে আমার বাবা প্রবাসে আছেন। প্রবাসে যাওয়ার পর থেকে আমি আর মা নানুদের বাড়িতেই থাকি। আমার মা কে দাদি খুব একটা পছন্দ করতেন না। আমার বাবা মাথার ঘাম পা’য়ে ফেলে টাকা উপার্জন করে সেই টাকা দেশে পাঠায় আমাদের জন্য। আমি তখন ক্লাস থ্রি তে পড়ি। আমার মা আমাকে নানুর কাছে ফেলে পালিয়ে যায়। আমি তখন বুঝতাম না। ছোটো বাচ্চা নানু যা বোঝাতো আমি তাই বুঝতাম। নানুর কাছে যখন শুনতাম নানু আমার মা কোথায়? মা কে তো আজ দুদিন দেখছি না? তখন নানু আমাকে বলতো তোর মা বেড়াতে গেছে বু। দুদিন পর চলে আসবে। আসবে আসবে করে তিনদিন কেটে যায় তবুও মা আসে না। আমি যখন বাবা কে বলতে চাইতাম তখনই নানু আমার থেকে ফোন নিয়ে নিতো। আমার আর বাবা কে বলা হতো না। আমি খুব কাঁদতাম, কাদতে কাঁদতে চোখ মুখ ফুলিয়ে ফেলি, স্কুলে পর্যন্ত যেতাম না। আমার নানা ভাই নানুর ভয়ে কিছু বলতে পারতো না। সেদিন দুপুরে আমি যখন গোসল করার জন্য নানুদের বাড়ির পাশে পুকুরে গেলাম তখন একজন আমাকে বলছে, কিরে সারাহ তোর মা তো তোকে রেখে ভেগে গেছে। আর ফিরে আসবে না। অন্য পোলার লগে এহন সুখে সংসার করছে। আমি তখন গোসল করা বাদ দিয়ে কাঁদতে কাঁদতে দৌড়ে বাড়ি চলে আসি। এসে নানু কে বলি, নানু ওরা কি কইতেছে আমার মা নাকি কার লগে ভেগে গেছে? নানু এইডা কি সত্যি কইতাছে উনি? ও নানু বলো না?

নানু তখন নিশ্চুপ কিছু বলছে না। আমি কাঁদতে কাঁদতে উঠানে বসে পরি। তারপর আমি সেখান থেকে উঠে নানুর রুমে চলে যায় আর ইমুতে আব্বুর কাছে ফোন দিই। রিং হওয়ার পরপরই আব্বু ফোন রিসিভ করে। আমি কাঁদতে কাঁদতে বলি,

“- বাবা আম্মু আমাকে ফেলে চলে গেছে। আমার আম্মু আর আসবে না। আম্মু আমাদেরকে ভালোবাসে না আব্বু।

আমার কথায় আব্বু হতবাক হয়ে যায়। আমি কেন এসব বলছি। বাবা তখন বলে, সারাহ মা তুই কাঁদছিস কেন? কি হয়েছে আমাকে খুলে বল মা? তোর আম্মু কোথায় আর আম্মুর নামে এসব কথা বলছিস কেন? এভাবে কইতে নেই মা। আমি তখন বলি, বাবা আম্মু নাকি কার লগে চলে গেছে আমাগোর কাছে আর আইব না।

আব্বুর সাথে কথা বলতে দেখে নানু ছুটে আসে কিন্তু ততক্ষণে আর কিছু করতে পারে না। আমি সব বলে দিছি আব্বু কে। আমি ফোনের স্কিনে তাকিয়ে দেখি বাবা’র চোখে পানি। তারপর বাবা ফোন কেটে দেয়।

বাবা’র সাথে আজ দুদিন কথা হয় না। নানু ফোন ধরতে দেয় না। আমার খাওয়া দাওয়া বন্ধ হয়ে যায়। নানু মাঝে মধ্যে জোর করে খাইয়ে দিতো কিন্তু আমার খেতে মন চাইতো না। ঠিক তার দুদিন পর। আমি নানুদের বারান্দায় বসে আছি। চোখে পানি পেটে খিদে। তবুও খেতে ইচ্ছে করছে না। আমার মতো বাচ্চার কাছে যদি বাবা মা কেউ না থাকে তাহলে তার কি অবস্থা হতে পারে বলুন? আমি ছোটো তবুও অনেক কিছুই বুঝতে পারি। কে খারাপ বলছে আর ভালো বলছে। কে কোন চোখে দেখছে। আমি ভাবুক দৃষ্টিতে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছি। তখনই বাড়ির মধ্যে একজন লোক ঢুকে পরে হাক দিয়ে বলে,

“- সারাহ কোথায় তুই? বেড়িয়ে আয় মা? আমি বুঝতে পারি কথাটা আমার বাবা বলছে কিন্তু বাবা এখানে কি ভাবে আসবে? বাবা তো বিদেশে। আমার ভাবনার মাঝেই বাবা আবার ডাক দেয়, সারাহ মা আমি চলে এসেছি তোকে নিয়ে যাব মা। এখানে তোকে থাকতে হবে না। আমি বারান্দা থেকে দৌড়ে বেড়িয়ে এসে বাবাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে উঠি। বাবা আমাকে কোলে তুলে নেয়। চোখের পানি মুছিয়ে বলে, আর কাঁদে না মা। আমি চলে এসেছি তো। আমি কাঁদছি আবার বাবার কথায় শান্তি পাই।

ততক্ষণে নানা ভাই নানু আশেপাশের অনেকেই আসে। আব্বু আমাকে কোলে নিয়েই নানা ভাইয়ের সামনে গিয়ে বলে, আমার কিসের কমতি ছিল আব্বা যার জন্য আপনার মেয়ে আমাকে ছেড়ে অন্য কে বেছে নিলো। আমি তো তাকে কোনো তার অভাব রাখিনি। যখন যা চেয়েছে তাই দিয়েছি। তবুও সে আমার থাকল না। নিশ্চয় আমার থেকে ভালো কাউকে জুটিয়ে নিয়েছে। দোয়া করি সে ভালো থাকুক। তবে সে চাইলেও ভালো থাকতে পারবে না। কারণ কি জানেন? এর জন্য বাবা আমার দিকে আঙুল দিয়ে বলে, এই মাছুম বাচ্চার জন্য ও ভালো থাকবে না। ওর চোখের এক ফোটা পানি ওকে কুঁড়ে কুড়ে খাবে। ক্ষনিকের সুখের জন্য ও আমাদের ভালোবাসা ভুলে গেছে। একদিন এর মাশুল ওকে দিতেই হবে। আমি ক্ষমা করে দিয়েছি কিন্তু আমার রব কি তাকে ক্ষমা করবে? জানি না আমি। আপনাদের সাথে আজকে সব সম্পর্ক শেষ করলাম। আমাদের আর কখনো দেখা না হোক ভালো থাকবেন আর হ্যাঁ এই বাচ্চাটার জন্য দোয়া করবেন ও যেন ওর মা’য়ের মতো না হয়।

সেদিন আমি বাবার সাথে চলে আসি। আর কোনো দিন আমি ওই মানুষ গুলো কে দেখতে চাইনি। মা কে খুব ভালোবাসতাম কিন্তু সেদিনের পর থেকে মা কে শুধু ঘৃণা করি। খুব ঘৃণা করি।

আব্বু আমাকে বাসায় নিয়ে চলে আসে। আমার দাদি দাদা আমাকে দেখে বলে, ওকে কেন নিয়ে এসেছিস বাপ। আজ ওর মা’র জন্য তোর এই অবস্থা। আব্বু তখন দাদিকে ধমকে বলে, মা আজ যা বলছো বলছো দ্বিতীয় বার যেন আর না শুনি। ও আমার মেয়ে আজ থেকে আমার কাছেই থাকে বুঝছো? দাদি আর একটা কথাও বলে না। এরপর থেকে আমি বাবার কাছেই থাকতে শুরু করি। শুরু হয় আমার নতুন জীবন। যেখানে আমার আপন বলতে বাবা ছাড়া কেউ নেই।

ধীরে ধীরে আমি বড়ো হতে থাকি। কিন্তু মানুষের কটু কথা বাদ যায় না। প্রতিনিয়ত মানুষ যা ইচ্ছা তাই বলে। আমি কিছু না বলে বাড়ি ফিরতাম কিই বা বলব। স্কুলের সবাই যখন তাদের মা কে নিয়ে যেতো তখন আমি আমার বাবা কে নিয়ে যেতাম। বাবা ছাড়া যে আমার কেউ নেই। বাবাই আমার সব।

দেখতে দেখতে অনেক গুলো বছর চলে যায়। আব্বু আর আমি খুব ভালো আছি। আব্বু আর প্রবাসে যান নি। আমাকে নিয়েই সুখে আছেন।আমার দাদা দাদি ফুপি সবাই আমাকে খুব ভালোবাসে। দাদি প্রথম প্রথম খারাপ ব্যবহার করলেও আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যান। আমার দেখাশোনা তিনিই করেন।

আমি যখন ক্লাস সেভেনে পড়ি। একদিন স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পথে কয়েকজন মহিলা মিলে আমাকে অনেক বাজে বাজে কথা শোনায়। আমার মা কে নিয়ে খারাপ কথা বলে। আমি তখন যথেষ্ট বুঝি আমিও তাদেরকে কথা শুনিয়ে দেই। যে নেই তাকে নিয়ে কেন তারা আমাকে কথা শুনাবে। আমার তো কোনো দোষ নেই৷ আমার সাথে তখন আমার দুই জন বন্ধু ছিল তারা জানত না কিছু। মহিলা দের বাজে কথা শুনে আমার সাথে কথা বলা বন্ধ করে দেয়। আমি দিশেহারা হয়ে পরি। সেদিন বাসায় ফিরে বাবা কে জড়িয়ে ধরে খুব কেঁদেছিলাম। বাবাও আমাকে ধরে কেঁদেছিল। তারপর কয়েকদিন আমি স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দেই। ভেবেছিলাম আমার বন্ধুগুলো হয়তো আমার খোঁজ নিবে কিন্তু তারা কেউ একটি বারের জন্য আমার খবর নেয় নি৷

এরপর আমার কষ্ট দেখে বাবা কঠিন সিদ্ধান্ত নেয়। যার ফলে সবকিছু বদলে যায়। আমার জীবন হয়ে ওঠে অন্য রকম।

চলবে