#বাতাসে_প্রেমের_ঘ্রাণ
#পর্ব_২
#লেখনিতে_ছনিয়া_তাবাচ্ছুম
সারাহ’র বাবা গ্রাম ছেড়ে অনেক দুরে কোথাও চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। এমন একটা জায়গায় যাবে যেখানে সারাহ কে কেউ বাজে কথা বলতে পারবে না। সারাহ কে কোনো প্রকার হেনস্তা হতে হবে না। গ্রামের সব মায়া ত্যাগ করে, বাবা মা ভাই বোন কে ছেড়ে সারাহ কে নিয়ে শহরের উদ্দেশ্য বেড়িয়ে পরে। নিজের প্রিয় গ্রাম ছেড়ে যেতে খুব কষ্ট হয় তার। কিন্তু কিছু করার নেই। সারাহ’র বাবা রাশেদ সাহেব মেয়েকে সুখে রাখার জন্য গ্রাম ছেড়ে শহরে আসেন।
ঢাকা শহরে তাদের কোনো আত্মীয় স্বজন নেই। এমনকি পরিচিত কেউ নেই। রাশেদ বিদেশে থাকায় তেমন ভোগান্তি পোহাতে হয় না। কোথায় কখন কিভাবে চলতে হয় থাকতে হয় সবটা বোঝেন। তিনি যখন ইয়াং ছিলেন তখন একবার বন্ধু দের সাথে ঢাকায় ঘুরতে আসছিলেন। তখন কম বেশি অনেক কিছুই চেনেন। তিনি এখানে এসে একটা ঘর ভাড়া নেন। একটা রুমে সারাহ থাকে আরেকটা রুমে রাশেদ সাহেব থাকেন। এখানে আসার পাঁচ দিন পর তিনি একটা ছোটো খাটো রেস্টুরেন্ট ভাড়া নেন। রাশেদ সাহেবের কাছে নগদে পাঁচ লক্ষ টাকা ছিল। তাই দিয়ে তিনি ব্যবসা শুরু করেন।
সারাহ কে এখানের ভালো একটা স্কুলে ভর্তি করেন। সারাহ মন দিয়ে লেখাপড়া করে। দেখতে দেখতে বেশ কয়েকটা বছর চলে যায়। মাঝে মাঝে গ্রাম থেকে সারাহ ‘র দাদা দাদি ফুপি বেড়াতে আসে।
রাশেদ সাহেবের সেই ছোট্ট বিজনেস টা একদিন খুব বড়ো হয়। নিজের জমানো টাকা আর বিজনেস থেকে যে টাকা জমিয়েছে তাই দিয়ে বেশ অনেকটা জায়গা কিনে নেয়। সেখানে আবার তিনতলা বিল্ডিং উঠায়। খুব বড়ো একটা রেস্টুরেন্ট তৈরি করেন। রেস্টুরেন্টের নাম দেন সারাহ রেস্টুরেন্ট এন্ড ফুড কর্ণার। এভাবেই দিন যায়, মাস যায়,বছর যায়। মাঝে মাঝে গভীর রাতে বাবা কাদতো খুব কাদতো। আমি বুঝতে পারতাম বাবা মা কে মনে করে কাদতো কিন্তু যে মানুষ টা আমাদের কথা না ভেবে এমন জগন্য কাজ করছে তার কথা মনে করে চোখের পানি ফেলা নেহাত বোকামি ছাড়া কিছু নয়।তবুও আমি কাদতে মানা করতাম না কারণ বাবা’র বুকের মধ্যে যে কষ্ট টা আছে সেটা কেঁদে হালকা করায় শ্রেয়।
আমি এসএসসি শেষ করে এইচএসসি শেষ করলাম। এখন ভার্সিটিতে পড়ি। বাবা’র কাছে সেই ছোট্ট সারাহ হয়েই রইলাম কিন্তু আর সবার কাছে নাকি খুব বড়ো হয়ে গেছি। তাই তো আমাকে বিয়ে দেওয়ার জন্য উঠে পরে লাগছে সবাই। সেজন্য শহর থেকে আজ গ্রামের উদ্দেশ্য বেড়িয়েছি। আমার বিয়ে করার ইচ্ছা নেই কিন্তু বাবা বা ফুপি কেউ ই আমার কথা মানতে নারাজ। ফুপির একটাই কথা বিয়ে আমাকে করতেই হবে। তিনি নাকি পাত্র দেখে রাখছেন। পাত্র খুব ভালো চাকরি করে। গ্রামে তার নানু বাড়ি। তারা নাকি আমাদের মতো ঢাকা তেই থাকে। সারাহ রাশেদ সাহেবের সাথে গ্রামে এসে পৌছায় বিকালে। পাত্র পক্ষ কালকে আসবে। সারাহ দাদা দাদি কে দেখে খুশিতে জড়িয়ে ধরে। কতগুলো দিন ভালোবাসার মানুষ গুলো কে দেখে আবেগ উৎফুল্ল হয়ে যায়। সারাহ ‘র দাদা দাদি সারাহ কে পেয়েও অনেক বেশি খুশি। তাদের ছেলের বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন সারাহ। সারাহ’র কিছু হয়ে গেলে তিনি বাঁচবেন না। গ্রামের পরিবেশ খুব ভালো লাগে সারাহ’র কাছে। গ্রামে আসলে আর শহরে যেতে মন চাই না। এখন আর আগের মতো কেউ সারাহ কে খুচা মেরে কথা বলে না। সারাহ কে দেখলে সবাই হাসি মুখে ভালো মন্দ জিজ্ঞেস করে। গ্রামে আসলে গ্রামের প্রতিটা অলিতে-গলিতে টইটই করে বেড়ায় সারাহ। সারাহ’র সাথে যোগ দেয় আরো কিছু মেয়ে। তাদের মধ্যে সারাহ’র কিছু কাজিন আছে। সারাহ সবার সাথে কথা বলে নিজের রুমে চলে যায় বিশ্রাম নিতে। অনেকটা পথ জার্নি করায় খুব টায়ার্ড সে। তাই তো খাওয়া দাওয়া না করেই সে ঘুমিয়ে গেছে। সারাহ কে কেউ আর ডাকে নি। ঘুমাতে না পারলে আবার মাথা ব্যথায় ছটফট করবেনে।
____________
সন্ধ্যা সাতটা। মাত্র ঘুম থেকে উঠল সারাহ। ফ্রেশ হয়ে বারান্দায় দাদির কাছে বসে। দাদা শুয়ে আছে। দাদার শরীর টা বেশি ভালো না। সারাহ দাদার সাথে অনেক্ষণ ধরে গল্প করে। খিদেই পেট চো চো করছে তাঁর। দাদি কে বলে,
“-দাদি খুদা লাগছে ঝটপট খেতে দাও। পেটের নাড়িভুড়ি গুলো খিদের মইরা যাচ্ছে দাদি। বলছে সারাহ আমাকে খেতে দে।
সারা’র কথায় হেঁসে ওঠে তার দাদি। তারপর সারাহ জন্য প্লেটে করে ভাত নিয়ে আসেন। সারাহ তৃপ্তি সহকারে খাবার খায়।
রাশেদ সাহেব পাড়ার দোকানে গেছেন। সেখানে সবার সাথে দেখা হয়। ভালো মন্দ কথা বলে। দোকান থেকে একজন বয়স্ক লোক বলেন,
“- রাশেদ ম্যাইয়ার বয়স হইতাছে মাইয়াডারে পরের ঘরে দিয়া দাও। এহন দিন সময় ভালা না। কহান কি হইয়া যায় তার কাইগা ভালা তুই মাইয়া রে বিয়ে দিয়ে দে। তাহলে তুই নিশ্চিতে থাকবার পারবি।
রাশেদ চুপচাপ শুনে বলে,
“- চাচা ভালো সম্মন্ধ পাইলে দেখবো। আমার মেয়েটার যদি পছন্দ হয় তাহলে হবে নইলে না। মেয়ের বিরুদ্ধে গিয়ে আমি কোনো সিদ্ধান্ত নেব না চাচা।
লোকটা মুখ বাকিয়ে বলে,
“- ভালা কথা কইলাম এহন দেহো তোমার যেইডা ভালা মনে হয় সেইডা কইরো। লোকটা দোকান থেকে চলে যায়। রাশেদ আর দেড়ি করে না বাড়ি চলে আসে। তিনি অবশ্য আরো কিছুক্ষণ থাকলে থাকতে পারতো কিন্তু থাকলে অনেকে অনেক কথা বলতো।
রাতে খাওয়া দাওয়া শেষ করে সবাই ঘুমিয়ে পড়ে। কিন্তু ঘুম নেই একজনের চোখে। সে হলো সারাহ। সন্ধ্যার পর ঘুম থেকে উঠায় এখব আর ঘুম আসছে না তার। এতে অবশ্য সারা’র কোনো প্রবলেম হয় না। রাত জাগার অভ্যাস সারা’র আছে। সারাহ অবশ্য খুব একটা রাত জাগে না। কোনো আর্জেন্ট ছাড়া।
সারা ফোন হাতে নিয়ে দেখে খুব একটা নেট পাচ্ছে না। খুব স্লো। গ্রামের মানুষ গুলো খুবই স্মার্ট হয়ে গেছে। এখন সবার ঘরে ঘরে ওয়াইফাই। সারা’র চাচাদের ওয়াইফাই আছে কিন্তু পাসওয়ার্ড নেই। এখন বাজে সাড়ে দশটা। সারাহ কোনো উপায় না পেয়ে তার চাচাতো ভাই সজিব কে কল করে। সজিব ঘুমে কাত হয়ে আছে। প্রথম বার রিসিভ না করলেও দ্বিতীয় বার রিসিভ করে ঘুমের ঘোরে বলে,
“- তুই ফোন দিছোস ক্যান। এহন অনেক রাত হইছে ঘুমা শা*লা।
ছোটো ভাইয়ের কথা শুনে কান থেকে ফোন নামিয়ে বলে, কি যাতা বলছে এ। মাথা ঠিক আছে তো। সারাহ আবার ফোন কানে নিয়ে বলে,
“- এক থাপ্পড় দিয়ে তোর সব গুলো দাঁত আমি ফেলে দেব শয়তান। বড়ো বোন কে শালা বলছিস।
সজিব চোখ ডলে ফোনের স্কিনে তাকিয়ে দেখে বড় আপাই দিয়ে সেভ করা। সজিব জিভে কামড় খেয়ে বলে,
“- সরি আপাই।ভুল হয়ে গেছে। তুই এত রাতে কল দিছোস ক্যান। কিছু কি হইছে।
“- ভাই নেট চলছে না তোগো ওয়াইফাই পাসওয়ার্ড ডা দে।
সজিব পাসওয়ার্ড দিয়ে আবারো ঘুমিয়ে পড়ে। আর সারাহ অনেক রাত অব্দি জেগে থাকে। তারপর ফোন দেখতে দেখতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়ে টের পায় না।
—-***—-
সকাল সকাল ফুপির বাসায় আসতে হয় সারাহ কে। তাদের গ্রামের পাশের গ্রামেই তার ফুপি বাড়ি। এখানে আসার পর তার ফুপি তাকে সুন্দর করে একটা শাড়ি পড়িয়ে দেয়। হালকা সাজগোছ করিয়ে নিয়ে যায় পাত্র পক্ষের সামনে। সারাহ মাথায় ঘোমটা দিয়ে বসে। যখন তাকে তাকাতে বলা হয় তখন মাথা উঁচু করে সামনে তাকাতেই অস্ফুট স্বরে বলে ওঠে,
“- আপনিিিি?
চলবে