#অন্তঃপুর
বিনতে ফিরোজ
১.
আকাশে গুচ্ছ গুচ্ছ মেঘ জমেছে। নীলাকাশ ক্রমেই কালো মেঘের দাপটে রং হারাচ্ছে। মাথার উপরে যতদূর আকাশ দেখা যাচ্ছে সবটাই কালো। যেকোনো সময় ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি নামবে। আফরিন অনুভব করলো এক্ষুনি বের না হলে আরো ঘন্টাখানেক এখানে আটকা পড়ে থাকতে হবে। ততক্ষণে পাঁচটার ঘণ্টা হাঁটতে হাঁটতে সন্ধ্যার আকাশ ডেকে আনবে। বাড়ি পৌঁছুতে আরো আধ ঘন্টা যদি লাগে তবে মাগরিবের আযান দিয়ে দেবে। আযানের পর বাড়ি ফিরলে আফসানা রাগ করেন। প্রকাশ যদিও করেন না তবু আফরিন বুঝতে পারে। আফসানা মুখে কটা কথাই বা বলেন? কিন্তু আফরিনের বিশ্বাস সে তার মা-কে সম্পূর্নরূপে চেনে।
সেই নীরব রাগের কারণ হতে চায় না বলেই আফরিন কোনো রকমে ঘর তালা দিয়ে বের হলো। বাকিরা আশপাশে নেই। কোথায় গেলো আফরিন বুঝতে পারছে না। এরা সেকেন্ডের মাথায় অদৃশ্য হয়ে যেতে পারে।
চালার বাইরে এক পা রাখতেই আকাশ ভেঙে বৃষ্টি শুরু হলো। বড় বড় ফোঁটার বৃষ্টিতে ক্রমশই চারধার সাদা হয়ে যেতে শুরু করল। কানে ঝমঝম শব্দ ছাড়া আর কিছু ঢুকছে না। তারই মাঝে কয়েকটা কিন্নর কণ্ঠের চিৎকার বৃষ্টির ঝমঝমানি ভেদ করে বাতাসে বয়ে গেলো। আফরিন দেখলো বারো জনের দলটা বৃষ্টির মাঝে হুল্লোড় করছে। একবার ডাকতে চাইলো হুল ফোঁটানো বৃষ্টির ভাব দেখে। পরক্ষণেই মত পাল্টালো। তার শরীরের মতো ওদের শরীর নয়। ওরা একটুতেই ভেঙে গুড়িয়ে যায় না। কাঁচকে ময়লা ভেবে লাথি দিয়ে সরিয়ে রাস্তায় চলা অভিজ্ঞতা তাদের আছে। এজন্যই বোধহয় তাদের জীবন পথের পুরোটা জুড়েই কাঁচের টুকরো ছড়ানো।
পায়ের দু ফিতার স্যান্ডেল জোড়া খুলে তার উপরে বসে পড়ল আফরিন। হাঁটু জড়িয়ে ধরে সেখানে থুতনি রেখে সামনে তাকিয়ে রইলো। পায়ে ঠান্ডা লাগছে। বৃষ্টির ছিটেফোঁটা মাটি একদম তৃপ্তির সাথে শুষে নিচ্ছে। যেন কতকালের তৃষ্ণার্ত।
আজ বৈশাখের বার তারিখ। গতকালই তার জীবনের তেইশ তম বৈশাখ দুয়ারে কড়া নেড়েছে। আফরিনের কাছে এসব খুব একটা বিশেষ না। মানুষ বলে তারা শৈশবে ফিরে যেতে চায়। পেতে চায় সেই ভাবনা চিন্তাহীন সুখী জীবনের ছোঁয়া। আরেকবার। অথচ মানুষ কোনোকালেই জানে না ঠিক কোন সময় সে সুখী। ফেলে আসা সময়টায় ফিরে যাওয়া যায় না বলেই ওটাকে মানুষ সুখী ভাবে। নদীর এপার কহে ছাড়িয়া নিশ্বাস ও পাড়েতে সর্বসুখ আমার বিশ্বাস। কারণ তার কখনোই ও পাড়ে যাওয়া হয় না।
তবে আফরিন কখনোই দশ বছর আগের বাল্যকালে ফিরে যেতে চায় না। মুখোমুখি হতে চায় না এক ঝাঁক অচেনা অথচ তীক্ষ্ম প্রশ্নের। যেগুলো সরাসরি বুকে এসে আঘাত করে। এফোঁড় ওফোঁড় করে দিয়ে যায় হৃদপিন্ড। উত্তর কুড়ির এই বয়সেই বরং সে ভালো আছে। নদীর মতো শান্ত, স্থির হয়েছে তার মন, মস্তিষ্ক। হুল ফোটানো সেই প্রশ্নরাও আর ব্যাথা দেয় না। কারণ তারা উত্তর পেয়ে পালিয়েছে আরও আগেই।
“অ্যাই আফরিন!”
একটা ধমক ভেসে এলো বৃষ্টির শব্দের জাল ছিন্ন করে। সংবিৎ ফিরে পেয়ে আফরিন প্রথমেই দেখলো তার হাতে বৃষ্টির ছাট। মুখ ভিজে গেছে অথচ সে খেয়াল করেনি।
ছপ ছপ করে কেউ পানির ভেতর দিয়ে হেঁটে এলো। সামনের এক টুকরো মাঠে ইতোমধ্যেই পানি জমে ছোটখাট একটা পুকুর হয়ে গেছে।
“তোর ফোন কোথায়?”
দূরত্ব কমে যাওয়ায় আফরিন কণ্ঠের গাম্ভীর্যটুকু ধরতে পারল। ব্যাগ হাতড়ে ফোন বের করতেই দেখা গেলো সেখানে তেরোটা কল মিস হয়ে আছে। আফরিন বিব্রত ভঙ্গিতে মুখ ওঠালো। সাদমান কঠিন চোখে তাকিয়ে আছে।
“ফোন মানুষ চালায় কীসের জন্য?”
আফরিন উঠলো। চেষ্টা করলো উল্টো একটু ভাব নেয়ার।
“কি হয়েছে?”
তবে তার চেষ্টা ধোপে টিকলো না। সাদমান খ্যাক করে ধমক দিলো, “কি হয়েছে মানে! ঐদিকে আব্বু মিনি স্ট্রোক করে ফেললো তার ঊনপঞ্চাশ কেজি মেয়ের চিন্তায়! বাতাসে নাকি উড়ে যাবে! বানের জলে ভেসে যাবে!” তীর্যক কণ্ঠে বলল সাদমান।
আফরিন বিরক্ত হলো, “ওজন নিয়ে টিটকারী করবি না।”
“উল্টা ধমক দিচ্ছিস কাকে? আমি না আসলে কার সাথে ফেরার কথা চিন্তা করছিলি?”
আফরিন কিছু বলল না। মাঠের দিকে উঁকিঝুঁকি দিয়ে দেখলো একজনও নেই। বৃষ্টিও কমে এসেছে।
সাদমান প্যান্টের নিচের অংশ খানিকটা ভাঁজ করে নিলো। ছাতা পাশে রেখে শার্ট থেকে পানি ঝেড়ে বলল, “চল।”
আফরিন কথা বাড়ালো না। সে মাঠে নামার আগে সাদমান বলল, “ছাতাটা নে।”
আফরিনকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে সে ঝপ করে পানিতে নেমে পড়ল। আশপাশ থেকে গোটা কয়েক ইট এনে আফরিনের সামনে ফেলে দিলো। এক পা এক পা দূরত্বে। ততক্ষণে সে পুরোপুরি ভিজে গেছে। আফরিন শান্ত চোখে একবার সাদমানকে দেখলো। প্রথম ইটে পা রেখেই হ্যাঁচকা টানে সাদমানকে ছাতার ভেতরে নিয়ে এলো। বিড়বিড় করে বলল, “মনে হচ্ছে দুই দিনের না দুই বছরের বড়!” সাদমান শুনেও কিছু বলল না।
মেইন রাস্তায় এসে যখন তারা বাড়িতে যাওয়ার জন্য অটো ঠিক করছে তখন একটু দুর থেকেই কয়েকটা কণ্ঠের সম্মিলিত আওয়াজ পাওয়া গেলো, “আপা! আপা!”
আফরিন ঘুরে তাকালো। তার অতি পরিচিত কিছু মুখ। কাছে আসতেই সে বলল, “না বলে কোথায় চলে গিয়েছিলেন আপনারা!”
সকলেই ভিজে চুপচুপে হয়ে আছে। মেয়ে তিনজন ছোট। তাদের নিয়ে শঙ্কায় ছিল আফরিন। ছয় সাত বছরের মেয়েগুলো এই বৃষ্টিতে জ্বর বাঁধাবে নিশ্চিত ছিল। অথচ সবগুলোর মুখে খেলা করছে বর্ষায় ভিজে সতেজ হওয়া চকচকে হাসি।
“চুপ করে আছেন কেন সবাই?” কেউ উত্তর না দেয়ায় আফরিনের কপালে ভাঁজ পড়ল। তাকে অবাক করে দিয়ে সবাই পিঠের পেছন থেকে লুকানো হাত বের করলো। চোখের সামনে ধরা দিলো সদ্য ফোঁটা কদম।
“আপা আপনার জন্য।” সবার বড় ছেলেটা এগিয়ে এলো। এর নাম সাঈদ। আগে ছিল শিরু। অদ্ভুত ঐ নাম পাল্টে এটা আফরিন রেখেছে।
“নেন আপা।” দলের সবচেয়ে ছোট মেয়েটা, নুরিও এগিয়ে এলো। আফরিন লক্ষ্য করলো তার চোখের শুষ্ক বৈশাখে এই কেবল বৃষ্টি নামছে।
সাদমান হাসলো। কিছু বলল না। এই লোভেই তো আফরিন এসব করে বেড়ায়।
。。。。。。。。。。。
দুটিতে যখন বাড়ি ফিরল তখন চারপাশে ঠান্ডা বাতাস বইছে। বৃষ্টির সূক্ষ্ম বিন্দু নিয়ে ভিজিয়ে দিয়ে যাচ্ছে বাতাবরণ। সাদমানের শরীরের বাম পাশ পুরোই ভিজে গেছে। আফরিন টেনে টুনেও ওকে ছাতার নিচে আনতে পারেনি। ফলাফল হিসেবে সে শুষ্ক শরীর নিয়ে বাড়ি ফিরতে পেরেছে।
আফসানা ছেলেকে ঘুরে ঘুরে দেখলেন। মেয়ের দিকে তাকিয়ে কঠিন কণ্ঠে বললেন, “সময় জ্ঞান দুজনেরই লোপ পেয়েছে!”
সাদমান, আফরিন দুজনেই কাঠ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। এখন একটা টু শব্দ করলেও আফসানা রাগে ফেটে পড়বেন। বকা ঝকার সময় একটা শব্দও তিনি শুনতে পারেন না। তা যতই সত্য আর ন্যায় হোক না কেন। কেউ কিছু না বললে তিনি একাই চলে যাবেন। তারপর দেখা যাবে ঘুমানোর আগে দুজনের ঘরে যেয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে আসেন। তাতে আফরিনের মনে বাষ্প হয়ে জমা অভিমানটুকু নিমিষেই অস্তিত্বহীন হয়ে যায়। সাদমানের খবর সে বলতে পারবে না। ছেলেটা দশটা কথায় একটা উত্তর দেয়। শুধু রাগের সময় মুখের তালা ভাঙে। একদম আফসানার মতো। রাগ, ভালোবাসা সবটাই তাদের নীরবে চলে।
আফসানা চলে গেলে মোশাররফ হোসেন এলেন পা টিপে টিপে। আশপাশে স্ত্রীকে না দেখে ফিসফিস করে বললেন, “শ্বাস নে তোরা। শ্বাস নে!”
আফরিন বাবাকে দেখে খুশি হয়ে গেলো। ঝটপট ব্যাগ থেকে কদম ভরতি পলিথিনটা বের করে বলল, “বাবা দেখো!”
সাদমান ঘরে চলে গেলো। গায়ে পানি শুকিয়ে ঠান্ডা লাগছে। রাতে নিশ্চিত জ্বর আসবে।
মোশাররফ সাহেব চোখ ছোট করে মাথা নিচু করলেন। আফসোস করে বললেন, “দেখতে পাচ্ছি না। দাঁড়া চশমাটা নিয়ে আসি।”
আফরিনের ঝলমলে মনটা খারাপ হয়ে গেলো এক নিমিষেই। ঠিক দুম করে আসা কাল বৈশাখীর মতো। সে সবসময় বড় হতে চেয়েছে। যত বড় হলে কেউ তাকে দুটো কথা শোনানোর আগে একবার ভাবে ততটা বড় সে হয়েছে। মানুষজন এখন তাকে এড়িয়ে চলে। কথা শোনার ঝক্কি নেই। কিন্তু তার ইচ্ছে পূরণ হয়নি। সে তো শুধু নিজেই বড় হতে চেয়েছিল। চায়নি বাবার চোখের পাওয়ার কমে যাক। মায়ের বাতের ব্যাথা বাড়ুক। ঘন কালো চুলে উঁকি দিক কিছু রূপালী রঙের চুল। বাড়ির সামনের বটগাছের ঝুরি নেমেছে। শাখা প্রশাখা ছড়িয়ে জানান দিচ্ছে সে যৌবন ছেড়ে এসেছে। মোশাররফ হোসেন চশমা চোখে দিয়ে হাসিমুখে ডাইনিংয়ে ঢুকলে আফরিনের বুক ভারী হয়ে আসে। এই ভার কমানোর কোনো উপায় তার জানা নেই।
“দেখি দেখি!” সাগ্রহে পলিথিন হাতে নিলেন মোশাররফ সাহেব। “কে দিয়েছে? বাচ্চারা?”
“হ্যাঁ।” অপলক বাবার মুখের দিকে তাকিয়ে বলল আফরিন। টানটান কপালে বয়সের হাতুড়ি পড়েছে। গলার চামড়া কিছুটা ঝুলে গেছে। চোখ ঘুরিয়ে বাবার চোখে দৃষ্টি আটকে ফেললো আফরিন। ঢোক গিলে দলা পাকানো অবাধ্য কান্নাটাকে ঠেলে বুকে পাঠিয়ে দিলো।
“তোর তো অনেক ফ্যান ফলোয়ার হয়েছে মা। আমি লাইক দিলাম।” আফরিনের মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন মোশাররফ। আফরিন হেসে ফেললো। এই ফেসবুকের ভূত যে বাবার মাথা থেকে কবে নামবে!
____________________
রাফি ভাত খাচ্ছে। বলা ভালো গিলছে। সকালে সে সাধারণত খায় না। আজকে তিতলির অনুরোধে বসতে হয়েছে। সে নাকি নতুন রেসিপি বানিয়েছে। সেটা যে কি নাম বলতে পারলো না মেয়েটা। এক চামচ মুখে নিয়ে কোনরকম গিলে রাফি বলল, “তিতলি হাফ প্লেট ভাত দে। নাহলে আবার গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা হবে।”
তিতলি অতো শত বোঝেনি। দৌড়ে ভাত আনতে গেছে। সে যেতেই ছুটে যেয়ে বেসিনে কুলি করেছে রাফি। কেমন বিদঘুটে একটা স্বাদ। বাচ্চা মেয়ে শখ করে রান্না করেছে বলে মেয়েটার মন ভাঙতে চায়নি রাফি। ও নিশ্চয়ই খাবে। তখনই বুঝতে পারবে।
ধোঁয়া ওঠা গরম ভাতের সাথে আলু ভর্তা। বহুদিন পর রাফির লোভ হচ্ছিল। এক গাল মুখে দিতেই উপর থেকে ভেসে এলো নারী কণ্ঠের চিৎকার। তারপরই পুরুষ কণ্ঠের। চোয়াল শক্ত করল রাফি। খুব কষ্ট দু গাল গিলে প্লেট ঠেলে সরিয়ে দিলো। তিতলি মিনমিন করে বলল, “খাবার নষ্ট করা ঠিক না বড় ভাই।”
রাফি শান্ত দৃষ্টিতে তিতলির পনের বছর বয়সী মুখটার দিকে তাকালো, “আর মানুষের মন? সেটা নষ্ট করা ঠিক?”
তিতলির মনটা ঝুপ করে খারাপ হয়ে গেলো। প্রায় দুই মাস পর আজ রাফি সকালে খেতে বসেছিল। খালু খালাম্মার জন্য খেতে পারলো না। ঝগড়া করার আর সময় পেলো না দুজন! আর পাঁচটা মিনিট পরেই শুরু করতি বাপু!
হাত ধুয়ে নিচ তলার কোনার রুমে গেলো রাফি। কেমন একটা গুমোট ভাব এপাশের পুরো বায়ুমণ্ডলে। রুমিলা বেগম সারাদিন কীভাবে এই ঘুপচিতে একা থাকেন রাফি ভেবে পায় না। এজন্যই বোধহয় তার মেজাজ দিনদিন খিটখিটে হয়ে যাচ্ছে। শরীরে রোগ আরো শক্তভাবে বাসা বাঁধছে।
“আসবো?” দরজায় নক করলো রাফি।
“আসবি কেন? তোদের বাড়ি তোদের ঘর। আমি হইলাম সবার পর।” ফ্যাসফ্যাসে গলায় উত্তর ভেসে এলো। রাফি নিশ্বাস ছেড়ে ভেতরে ঢুকলো। সাদা রঙের একটা চাদর গায়ে বসে আছেন রুমিলা। রাফি পায়ের কাছে বসে বলল, “কেমন আছো দাদীমা?”
“এই যে দেখো কেমন আছি। তিন বেলা তোমার বাপ ভাত দেয়। যদি বলি ভালো নাই তাহলে আমারে বলবে অকৃতজ্ঞ। ভালোই আছে।”
রাফি চোখ বন্ধ করলো। রুমিলা স্বভাব জন্ম থেকেই এমন দেখে আসছে সে। একটা সোজা কথার উত্তর কখনও সোজাভাবে দেয় না। তবু এই ক্ষণে এসে এসব বিরক্ত লাগলো রাফির। মাথার উপরে তখনও চিৎকার চেঁচামেচি চলছে।
রুমিলা ছাদের দিকে তাকিয়ে বিতৃষ্ণা ভরে বললেন, “শুরু হয়ে গেছে?”
রাফি কিছু বলল না।
রুমিলা নিজেই বললেন, “তোর বোন হইছে ছন্নছাড়া। ভাই বাড়ি ছাড়া। আর তুই বাড়ি থেকেও নাই। দেখলে বুকের ভিতরে জ্বলে।” রুমিলার কন্ঠস্বর ভিজে গেলো। রাফি অন্যদিকে মুখ ঘোরালো। এসব শুনতে তার কখনোই ভালো লাগে না।
“একটা বিয়ে কর দাদা।”
তাচ্ছিল্যের হাসি খেলে গেলো রাফির ঠোঁটে, “এতকিছুর পরেও? অসম্ভব!”
“এমনই থাকবি আজীবন?”
রাফি উঠে দাঁড়ালো। নেভি ব্লু রঙের কোর্ট ঝেড়ে বলল, “অশান্তির ঘরের থেকে ঘর না থাকাই ভালো দাদীমা। আমি আবার রাফি, নাবিলা, মিহাদের জন্ম দিতে চাই না। সাবধানে থেকো দাদীমা। তিতলিকে ছাড়া বের হয়ো না। আমি আসছি।”
গটগট করে চলে গেলো রাফি। রুমিলা তাকিয়ে রইলেন ছাদের দিকে। তার মাথার উপরেই ছেলে আর ছেলের বউ ঝগড়া করছে। প্রতিনিয়তই চলছে। এসব দেখে ছেলেমেয়েরা বন্ধনছাড়া হয়ে গেছে। সম্পর্কের শাসন ভাঙতেই মেয়েটা বেপরোয়া হয়ে গেলো। মিহাদ তো জন্ম থেকেই…দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন রুমিলা। রাফি যদি ব্যবসার হাল না ধরত কবেই তাদের পথে বসতে হতো। কি হলো এই সংসারটার? কেন এই দুরাবস্থা? কবেই বা সুস্থ সুন্দর একটা জীবন পাবে এই “হাসি কুঞ্জের” মানুষ? রুমিলার বৃদ্ধ চেহারায় হাসি ফুটে ওঠে। বাড়ির নাম ”হাসি কুঞ্জ” অথচ বিষাদে ভরপুর এর প্রত্যেকটা ইট।
চলবে?