#অন্তঃপুর
বিনতে ফিরোজ
৫.
আফরিন অস্থির বোধ করছিল। কিছু একটা করা দরকার। তার গাট ফিলিংস বলছে কিছু একটা ঠিক নেই। কি করবে সে? একটা সিএনজি নিয়ে ওদের পিছু যাবে? সেটা নিজের পায়ে নিজে কুড়াল মারা হবে। ছেলেটা নিশ্চয়ই আটঘাট বেঁধেই নেমেছে। আফরিন চোখ বন্ধ করলো। সে কি চলে যাবে? কোনভাবে যদি আজ নাবিলার কিছু হয় আর সে পরবর্তীতে জানতে পারে তবে সারাজীবন এই অপরাধবোধ নিয়ে বাঁচতে পারবে না। এক অনিশ্চিত পরিস্থিতিতে সামনে দাঁড়িয়ে অসহায় বোধ করলো আফরিন। মনে হলো সে এমন নদীর কিনারে দাঁড়িয়ে আছে যার পাড়ে হিংস্র জন্তু আর নদীর মাঝে বিষাক্ত সাপ।
“রিনি!”
পরিচিত কণ্ঠের পরিচিত ডাকে ঝট করে চোখ খুললো আফরিন। সাদমান এগিয়ে এসে মাথায় টোকা দিলো। অন্যসময় হলে ঝাঁঝিয়ে উঠতো সে। সাদমানের শক্ত হাতের একেকটা টোকায় মাথা ব্যাথা শুরু হয়ে যায়। অথচ সেই টোকাটাই আজকে ডুবন্ত নাবিকের শেষ খড়কুটো মনে হলো।
“দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ঘুমাচ্ছিস কেন?”
আফরিন খপ করে সাদমানের হাত ধরলো। সাদমান ভুরু কুচকে বলল, “কি হয়েছে?” আশপাশে তাকালো একবার। কোনকিছুই বেখাপ্পা বলে মনে হলো না।
“সাদ তোর গাড়িটা কোথায়?” সাদমানের পেছনে উকি দিল আফরিন।
“কেন?”
“লাগবে।”
“তুই উঠবি!” বিস্মিত কণ্ঠে বলল সাদমান। আফরিন ওর মোটরসাইকেল দুচোখে দেখতে পারে না। উঠলেই নাকি পড়ে যাবে।
“হ্যাঁ।” মাথা ঝাঁকালো আফরিন।
“কি হয়েছে বল তো? বাবাকে দেখলাম একগাদা কল দিয়েছে। ধরতে পারিনি।”
“ওষুধ কেনার জন্য। কিনেছি।” হাতের ব্যাগ দেখলো আফরিন।
“তাহলে কি হয়েছে?”
আফরিন ঢোক গিলে পুরো ঘটনা বলল। সাদমান আফরিনের হাত শক্ত করে ধরে বলল, “এক্ষুণি বাসায় যাবি! এসব ঝামেলায় জড়ানোর কোনো মানেই হয় না।”
“এভাবে বলিস না। মেয়েটা যদি বিপদে পড়ে?”
“যদি আছে। নাও পড়তে পারে। যা কিছু একটা অ্যাসাম্প করা বন্ধ কর। বাসায় চল রিনি। এসব ঝামেলা কই থেকে খুঁজে খুঁজে আনিস!” বিরক্ত ভঙ্গিতে বলল সাদমান। আফরিনের হাত আরো শক্ত করে ধরলো।
আফরিনের ভয় কমলো না। জিভে ঠোঁট ভিজিয়ে বলল, “ভাব সাদ আজকে নাবিলার জায়গায় আমি থাকতে পারতাম।”
সাদমান শক্ত কণ্ঠে বলল, “তোর কোন ছেলে বন্ধু আছে?”
“উফ! কথা অন্যদিকে নিয়ে যাচ্ছিস কেন? বিপদে পড়তে হলে আজকাল আর ছেলে বন্ধু থাকতে হয় না। ওটা থাকলে কেবল বিপদের রাস্তা সহজ হয়। তুই কি আমার সাথে যাবি নাকি আমি একাই যাবো?”
সাদমান ঠোঁট গোল করে নিশ্বাস ছাড়লো। এক পলক আফরিনের মুখের দিকে তাকিয়ে ফোন বের করলো। আফরিন তীক্ষ্ণ চোখে দেখলো সাদমানের কাজ।
“হ্যালো বাবা? রিনি আমার সাথে আছে। আমরা একজনের সাথে দেখা করতে যাচ্ছি। হ্যাঁ দ্রুতই চলে আসবো ইনশাআল্লাহ্।”
“চল।” আফরিন খুশি হলো। বাইকে ওঠার আগে সাদমান বলল, “নিজে বিপদে না পড়ে যতটা করা যায় ততটাই করবো। এর বেশি কিছু না।”
আফরিন কণ্ঠে শ্লেষ নিয়ে বলল, “তুই এমন কেন? একটা মানুষকে চোখের সামনে বিপদে পড়তে দেখলে এগিয়ে যাবি না?”
“না।” শক্ত কণ্ঠে বলে উঠে বসলো সাদমান। আফরিন উশখুশ করলো। কোনোদিনই তো বাইকে বসেনি। সাদমান নেমে বলল, “ওঠ।”
সাদমানের ঘাড়ে হাত রেখে উঠে বসলো আফরিন। দু পা জড়সড় করে বলল, “এই জায়গাটা এতো উঁচু কেন? আর হেলমেট নেই?”
“এটার স্টাইলই এমন। হেলমেট একটাই। তুই কিনে দিস আরেকটা। সেটা তোকে পরতে দেবো।” হেলমেট বেঁধে উঠে বসলো সাদমান।
আফরিন বিড়বিড় করে বলল, “আর কোনোদিন এটায় উঠলে তো!”
কি মনে করে ফার্মেসি থেকে দুটো সার্জিক্যাল মাস্ক কিন নিয়ে এলো সাদমান। নিজে একটা পরে আফরিনের দিকে এগিয়ে দিলো। আফরিন মাস্ক পরে বলল, “তোর বুদ্ধি খুলেছে।”
“কোনদিকে গেছে?”
“এই স্কুলের পাশ দিয়ে সোজা চল। একগাদা কথা বলে সময় নষ্ট করেছিস। দ্রুত চালাবি।”
“ভালো করে ধরে বস নাহলে একটু পরে দেখবো উড়ে যেয়ে লাইটপোস্টের তারে ঝুলছিস।” আফরিন সাদমানের পিঠে ধাক্কা দিলো। এগিয়ে গিয়ে দুহাতে শক্ত করে ধরলো সাদমানের পিঠ।
“বসেছিস?”
“হুঁ।”
স্টার্ট দিয়েই শো করে টান দিলো সাদমান। তার পিঠের সাথে আরো সেটে গেলো আফরিন। চোখ ছোট করে সামনের দিকে দেখার চেষ্টা করল।
পাঁচ মিনিটের মাথায় লোকালয় ছেড়ে বেরিয়ে গেলো ওরা। দোকান পাট আগেই কমেছে। বাড়িঘরগুলো কমতে কমতে নেই হয়ে গেলো। সাদমান বলল, “সামনে কিছুই নেই। চল চলে যাই।”
বাতাসের জন্য তার কথা স্পষ্ট না শুনলেও আফরিন বুঝলো সাদমান চলে যাওয়ার কথা বলছে। মাস্ক সরিয়ে সাদমানের কানের কাছে মুখ নিয়ে বলল, “একদম না! এদিকে আর কোনো বাইপাস রাস্তা নেই। তারমানে এই রোডেই সামনে গেছে। চল সাদ! এই বন জঙ্গলে ওকে কোথায় নিয়ে গেছে কে জানে।”
সাদমান কিছু বলল না। বাইকের গতি বাড়ালো। আফরিনের চোখ বন্ধ হয়ে এলো। এতো বাতাসে চোখ খোলা রাখা যায়! অথচ সামনের আয়নায় দেখা যাচ্ছে সাদমান ডাগর ডাগর চোখে তাকিয়ে আছে।
আরও এক কিলো পেরিয়ে গেলেও কারো দেখা মিলল না। দুপাশেই ঘন জঙ্গল। রোড লাইটের আলোয় একপাশে দেখা যাচ্ছে পরিত্যক্ত আনসার ক্যাম্প। সাদমান এবার প্রকৃতই ধৈর্য হারালো।
“রিনি দেখ কেউ নেই। আমি গাড়ি ঘোরালাম।”
বলার সাথে সাথে সাদমান নিজেই চুপ করে গেল। বাইক থামিয়ে দাঁড়ালো। আফরিন নিশ্বাসটাও মেপে নিচ্ছে।
গাড়ির ইঞ্জিনের আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে খুব কাছ থেকেই। আফরিন আশপাশে তাকালো। সাদমান ফিসফিস করে বলল, “নাম।”
আফরিন নামলো। এতক্ষণ বুকে সাহস জমা রাখলেও সেটা এই ক্ষণে কর্পূরের মতো উবে গেলো। চারপাশের জমাট অন্ধকার, জনমানবশূন্য রাস্তা উপরি পাওনা হিসেবে রাস্তার ধারের ঝাঁকড়া মাথার গাছ। সব মিলেমিশে ভৌতিক একটা পরিবেশ তৈরি করেছে। তার বুক ধুকপুক করতে শুরু করলো। নাবিলা ঠিক আছে তো?
সাদমান নেমেই আফরিনের হাত ধরলো। আফরিনের মনে হলো তার হাতের রক্ত চলাচলই বোধহয় থেমে যাবে।
“শোন খুব সাবধানে যেতে হবে। ওরা কতজন আছে জানিনা। কোনরকম সংঘাতে যাওয়া যাবে না। মেয়েটাকে কোনো মতে নিয়ে আসতে হবে।”
“আচ্ছা।”
“আমার হাত ছাড়বি না। মরে গেলেও না!” সাদমানের কন্ঠ কাতর শোনালো। আফরিন ঢোক গিলে বলল, “আচ্ছা।”
সাদমান নিশ্বাস বন্ধ করে আওয়াজের উৎস চেনার চেষ্টা করলো। আফরিন ঘাড়ে ঝোলানো ব্যাগ থেকে মুখ লাগানো একটা ছুরি বের করে সাদমানের দিকে এগিয়ে দিলো। সাদমানের চোখে জিজ্ঞাসা তৈরি হলেও মুখে কোনো প্রশ্ন এলো না।
দুজনেই বুঝতে পারছিল শব্দটা আনসার ক্যাম্পের ওদিক থেকেই আসছে। আফরিনের হাত শক্ত করে ধরে এগিয়ে গেলো সাদমান। পা ফেললো খুব সাবধানে। শুকনো পাতার মর্মর ধ্বনিও এখন শত্রু।
তারা যখন ক্যাম্পের সামনে তখন গাড়ির আওয়াজ বন্ধ হয়ে গেলো। তীক্ষ্ম কণ্ঠের একটা চিৎকার উঁচু হতে যেয়েও বন্ধ হয়ে গেলো। আফরিন বুঝতে পারছিল তার শরীর ঠান্ডা হয়ে আসছে। তবে সাদমানের হাতের চাপে বাম হাত ঠান্ডা হওয়ার সুযোগ পাচ্ছে না।
ক্যাম্পকে বামে রেখে সাদমান ডান দিকে এগিয়ে গেল। ভেঙে পড়া দেয়ালের সাথে ক্যাম্পের শ্যাওলা জমা দেয়াল প্রায় মিশে গেছে। এক হাতের চিকন একটা গলি তৈরি হয়ে গেছে এখানে। অন্ধকারে গলিটাকে পুরোনো রাজপ্রাসাদের লুকোনো রাস্তা বলে মনে হচ্ছে। সাদমান আনমনেও হাতের বাঁধন ঢিল করল না। মুখ বাড়ালো ক্যাম্পের ওপাশে।
গাড়ির ভেতরে আলো জ্বলছে। সাদাটে ধরনের আলোটা উইন্ডো গ্লাস ভেদ করে পুরোটা বাইরে আসতে পারছে না। তবে ভেতরের চিত্র সবটাই পরিষ্কারভাবে তুলে ধরছে।
____________________
শেষ মুহূর্তে এসে সবটা বানচাল হয়ে গেলো। মিটিং রুমে একদম একা বসে আছে রাফি। এই মুহূর্তে ক্লায়েন্টদের সাথে বসে ডিল ফাইনাল করার কথা ছিল। এই ডিলের উপরে নির্ভর করছিল ব্যবসার নিকট ভবিষ্যত। ঠিক এই মূহুর্ত থেকেই কোম্পানি খুব কঠিন একটা অবস্থানে পড়ে গেছে। রাফি চোখ বন্ধ করে হিসেব করলো। সেল যেভাবে কমছে তাতে আগামী মাসে বেনিফিট অর্ধেকে নেমে আসবে।
সমস্ত রাগটা যেয়ে পড়ল সাইয়েদ মাহমুদের উপর। তার রেকর্ড মোটেও ভালো না। নিজের যৌবনে যতোটা উপার্জন করেছেন তার চেয়ে বেশি নষ্ট করেছেন। শেষমেষ এসে পার্টনার হয়েছেন ফ্রড একটা কোম্পানির সাথে। ব্যবসার মোড়কে জুয়ার কারবার চালাতো তারা। মাহমুদ নিজে তো ডুবেছেনই ব্যবসাটাকেও বাদ দেননি। প্রায় দেউলিয়া অবস্থা থেকে রাফি এর হাল ধরেছে। দাদার হাতের ব্যবসা তখন শূণ্য ছেড়ে মাইনাসে চলে গেছিল। আজীবন স্বপ্নে দেখা ইঞ্জিনিয়ারিং হাতছানি দিয়ে ডাকলেও সাড়া দিতে পারেনি। বাড়ি নিলামে উঠে যাচ্ছিল, ব্যাংকে লাখ লাখ টাকা ঋণ ছিল। সব মিলে মিশে রাফি যখন নিরুপায় হয়ে ব্যবসামুখো হলো তখন সেটায় দশ নম্বর বিপদ সংকেত বহাল তবিয়তে ঝুলছে। সেই অবস্থা থেকে আবার উঠে দাঁড়াতে পাঁচ বছর লেগে গেছে।
আজ আবার বাবা মায়ের উপরের সুপ্ত রাগটা মাথাচাড়া দিয়ে উঠলো। মাহমুদের রেকর্ড শুনেই এই ক্লায়েন্ট পিছিয়ে গেছে। ফোনে সেটাই বলেছে। মাহমুদের কাজের চিহ্ন তো কোম্পানিও বহন করে চলেছে। জুয়ার তকমাটা আজও গা থেকে ঝেড়ে ফেলতে পারেনি রাফি। মাহমুদ সবসময়ই বেপরোয়া আচরণ করে এসেছেন। আসিফা কখনোই তাকে বোঝানোর ন্যূনতম চেষ্টা করেননি। এভাবেই সবটা চলেছে। চলছে। রাফি উঠে দাঁড়ালো। এই সবকিছু ছেড়েছুঁড়ে দূরে কোথাও চলে যেতে ইচ্ছে হয়। পারে না ভাই বোন দুটোর কথা মনে হলে। দাদী মানুষটাও একা। রাফির দম বন্ধ লাগে। কতগুলো দিন শুধু নিজেকে নিয়ে ভাবা হয়নি!
কল এসেছে। রাফি চোখ বন্ধ করেই কানে ফোন ধরলো, “হ্যালো।” তার কণ্ঠের ভাঙন স্পষ্ট বোঝা গেলো।
“রাফি আমার কিছু টাকা লাগবে। কার্ডের টাকা শেষ হয়ে গেছে।”
“কেন?” শীতল কণ্ঠে বলল রাফি।
“কী আশ্চর্য! নিজের বাবার কাছে কৈফিয়ত চাইছো কোন মুখে? আমি টাকা চেয়েছি তুমি দিতে বাধ্য।”
“না।” রাফির কণ্ঠের দৃঢ়তায় মাহমুদের বিরক্তি রাগে রূপ নিলো। তার মনে হলো রাফি তাকে অপমান করছে।
“বিজনেস করছ বলে কি নিজের পরিচয় ভুলে গেছো? বাবাকে আর বাবা মনে হয় না? আমার এক্ষুনি টাকা লাগবে!”
“কারণ বলতে হবে।”
“গেট টুগেদার আছে।”
“সরি টু সে। অপ্রয়োজনীয় কাজে নষ্ট করার মতো টাকা আমার নেই। তোমার বাঁধাই করা রেকর্ডে কোম্পানিকে যথেষ্ট ঝামেলায় পড়তে হচ্ছে। কাজেই এটা তোমার জরিমানা ভাবতে পারো।”
মাহমুদের মুখ লাল হয়ে এলো। খুব কষ্টে মুখ সামাল দিলেন তিনি। চিবিয়ে চিবিয়ে বললেন, “আমার ব্যাবসার টাকা তোমার কাছে ভিক্ষা করতে হবে এখন?”
“তোমার ব্যাবসার!” তাচ্ছিল্য করে বলল রাফি।
“রাফি! ভদ্র ভাষায় কথা বলো।”
“আমাকে ফোনই দিও না তোমরা।” খট করে ফোন কেটে দিলো রাফি। জরুরী ভিত্তিতে অফিসে মিটিং করতে হবে। সামনের দিনগুলো কঠিন।
____________________
গাছগাছালির দলেরা জায়গাটাকে আগলে রেখেছে। আশপাশের শব্দ যেমন আসে না তেমনই এদিককার শব্দও দূরে যেতে পারে না। গাড়ির আওয়াজটাও খুব কাছে না এসে পাওয়া যায়নি। দরজা জানালা আটকে রাখার কারণে গাড়ির ভেতরের আওয়াজও পাওয়া যাচ্ছে না। তবে দৃশ্য চোখের সামনে স্পষ্ট।
সাদমান দেখলো একটা মেয়েকে দুপাশ থেকে দুজন ছেলে মিলে পিষ্ট করার চেষ্টা চালাচ্ছে। তাকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে আফরিন এগিয়ে এলো। গাড়ির জানালায় চোখ যেতেই অস্ফুট কন্ঠে বলল, “নাবিলা!”
~চলমান~
এয়ারপোর্ট পর্যন্ত গেলো নিজাম এবং জুঁই। হুমায়রা ইচ্ছে করেই আসেননি। বাড়িতেই তার বেহাল দশা হয়েছিল। এখানে এসে সহ্য করতে পারতেন না। কিছুক্ষণের মাঝে নাফিসের দুই চাচা, চাচাতো ভাইয়ের এলো। তাদের সাথে কথা বলতে বলতে এগিয়ে গেল নাফিস। একবারও পেছন ফিরে জুঁইয়ের দিকে না তাকিয়ে যখন দৃষ্টিসীমার আড়ালে চলে গেলো ঠিক তখনই জুঁই বুঝতে পারল সইটা সে কাগজে করেনি, মনে করেছে। নয়তো এই দম বন্ধ করা কষ্টটা কেন হবে?
সাই করে বিমানটা উড়ে গেলে তারা বাড়িতে ফিরে এলো। ফাঁকা ঘরে কেমন যে লাগলো জুঁইয়ের! নিজে নিজেই ছটফট করতে থাকল মেয়েটা। নিশাচর পাখির করুন সুরের ডাকে দম বন্ধ করা অনুভূতি খানিকটা বাড়ল বরং। কি মনে করে বালিশের নিচ থেকে নাফিসের ছোট্ট ডায়েরিটা বের করলো জুঁই। বিছানার পাশের ছোট্ট রিডিং লাইট জ্বেলে ডায়েরি খুললো। চোখের পাতায় ধরা দিল গুটি গুটি হাতের লেখা। প্রথম পাতাতেই আটকে গেলো জুঁই। তার মনে হলো মানুষটা যেন তাকে দেখে দেখেই লিখে গেছে,
“তোমাকে যখন দেখি,
তার চেয়ে বেশি দেখি
যখন দেখি না।”
—সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
~~~~~~~~~~
চলবে।