অন্তঃপুর পর্ব-১৪

0
11

#অন্তঃপুর
বিনতে ফিরোজ
১৪.

সাদমান যতটুকু পেরেছে খোঁজ নিয়েছে। ব্যবসায়ী মহলে রাফি বেশ পরিচিত। মোটামুটি ধরনের সেলিব্রেটি বললেও ভুল হয় না। ডুবন্ত ব্যাবসা উঠিয়েই নিজের এই ছবি তৈরি করেছে সে। তাতে লাভের লাভ কি হয়েছে সাদমান জানে না তবে তার ভোগান্তি বেড়েছে বৈ কমেনি।
এসব সুপরিচিত মানুষদের সম্পর্কে গল্পের চেয়ে গুজব বেশি ছড়িয়ে থাকে। ঘটনার চেয়ে রটনা হয় বেশি। ফলে মানুষটার আসল রূপ সম্পর্কে এক্কেবারে ক্রিস্টাল ধারণা পাওয়া অসম্ভবই বটে।
নাবিলার ঘটনায় লোকটার সাথে কয়েকবার সামনাসামনি সাক্ষাৎ হলেও ওটুকুতে সাদমান খুব একটা ভরসা করতে পারে না। সে সময় তাদেরকে লোকটার দরকার ছিল। সাহায্যের জন্য মানুষ তো কত রূপ ধরে। হতে পারে মামলায় জেতার জন্য, নিজের বোনের অপরাধীকে শাস্তি দেয়ার জন্য তাদের সাথে ঐ বিনয়ী আচরণটুকু দেখিয়েছে। বাস্তবে সে হয়তো তেমন না। কে জানে?

সাদমানের এসব চিন্তা মোশাররফ হোসেন হাওয়ায় উড়িয়ে দিলেন।
“আরে ব্যাটা এত প্যাচাচ্ছিস কেন?”
“মানুষের মনে কত প্যাঁচ থাকে তুমি জানো? ফট করে একটা সিদ্ধান্ত নিলেই তো হলো না।”
“এজন্যই তো খোঁজ নিতে বলেছি।”
“এত বড়লোকদের অতো তলিয়ে খোঁজ নেয়া যায় নাকি?” অসন্তুষ্ট কণ্ঠে বলল সাদমান।
আফসানা বললেন, “তুই কি প্রস্তাবটা অপছন্দ করছিস?” ছেলের কুচকানো কপালের দিকে তাকিয়ে বললেন আফসানা।
সাদমান নিশ্বাস ছাড়ল, “এত বড়লোকের সাথে সম্পর্ক করার কী দরকার? আমাদের সাথে একদমই মেলে না।”
“এজন্যই তোর ভাল লাগছে না?” মোশাররফ জিজ্ঞেস করলেন।
“ভেবে দেখ ঐ বাড়ির সাথে যদি আত্মীয়তা হয় তাহলে ওরা যখন এখানে বেড়াতে আসবে তখন আমাদের সারাক্ষণ তটস্থ হয়ে থাকতে হবে। কোনটা যেন ওদের অপছন্দ হয়ে যায়। আবার রিনিকেও যে দু চার কথা শুনতে হবে না সেটার গ্যারান্টি কে দেবে?”
“যে কথা শোনাতে চায় সে কোনো খুঁত না পেলেও শোনাবে।” শান্ত কণ্ঠে বললেন আফসানা।
“কিন্তু এই টাকা পয়সায় এত আগ পিছ আমার ভাল লাগছে না।” সাদমান অবুঝের মতো করে বলল।
“সব কী আর মনের মতো হয় রে? তাছাড়া আমরা তো রিনিকেই এখনও বলিনি। ও পছন্দ না করলে তো আর কিছু বলারই থাকবে না।”
“ওকে ডেকে বলো।” আফসানা বললেন। মোশাররফ সায় জানিয়ে আফরিনকে ডাকলেন। সাদমান মুখ গোজ করে বসে রইল।
কী মনে করে মোশাররফ হোসেন স্ত্রীকে বললেন, “তুমিই বলো। আমি বাইরে থেকে একটু ঘুরে আসি।”
লোকটার এড়িয়ে যাওয়াটুকু স্পষ্ট বুঝতে পারলেন আফসানা। কারণটাও বুঝতে কষ্ট হলো না।
সাদমান নিজেও উঠে গেল। আফরিন দেখল সবাই ঘর ছেড়ে বেরিয়ে যাচ্ছে। পিঠ ছড়ানো চুল খোপা করে বলল, “ডাকছিলে?”
“হ্যাঁ বসো।”
আফরিন বসল। আফসানা পাশে আফরিনের দিকে না তাকিয়ে সোজা তাকিয়ে রইলেন। কাঠের আলমারির বিশাল আয়নায় স্পষ্ট আফরিনের মুখ দেখা যাচ্ছে। কীভাবে এই মেয়েটা এত বড় হয়ে গেল! আফরিনকে যখন তিনি প্রথম কোলে নিয়েছিলেন তখন তার বয়স ছিল পাঁচ ঘণ্টার কিছু বেশি। বাচ্চাটা না খেতে পেয়ে কাঁদতে কাঁদতে চোখমুখ লাল করে ফেলেছিল। নিশ্বাসের গতি কমে এসেছিল। পেট পিঠের সাথে লেগে বুকের ছোট্ট খাঁচাটা দৃশ্যমান হয়ে উঠেছিল। চোখ বন্ধ করলেন আফসানা। মহিলার দুর্বল মুখটা এখনও চোখে ভাসে। স্পষ্ট তার কন্ঠস্বর, “আমার মেয়েটাকে একটু আপনার কাছে রাখবেন আপা?”

“মা?”
আফসানা পলক ঝাপটালেন। আফরিন তাকে ডাকছে। খুব ধীর কণ্ঠে। তাকে কিছুটা ভয় পায় আফরিন। শুধু আফরিন না সাদমানও ভয় পায়। তিনি কী একটু বেশি গম্ভীর?
“কেমন আছো?” বলেই আফরিনকে জড়িয়ে ধরলেন আফসানা। বুকটা খুলে এই মেয়েটাকে দেখাতে ইচ্ছে করছে। বলতে ইচ্ছে করছে “তুমি কাদের নিয়ে এত হিসেব নিকেশ কর? তোমার জন্য আমার বুকের সব ভালবাসা মিথ্যে? কার সাথে এত ফর্মালিটি করো তুমি!”
আফরিন থতমত খেয়ে গেল। মোশাররফ টুকটাক জড়িয়ে ধরলেও আফসানার সাথে তার কীসের যেন একটা দূরত্ব। সে মায়ের পিঠে হাত রাখল। নরম কণ্ঠে বলল, “কিছু হয়েছে?”
“নাহ।” আফসানা দ্রুতই নিজেকে সামলে নিলেন। সরে এলেন। আফরিন মায়ের চোখের দিকে তাকাল। সেখানে সে এক সাগর ভালোবাসা খুঁজে পায়। আজও ব্যতিক্রম হলো না।
“বললে না? কেমন আছো?”
“আলহামদুলিল্লাহ্ ভালো।” চোখে চোখ রেখে বলল আফরিন। আফসানার বুকটা আবার কামড়ে উঠল। এই মেয়েটাকে বিয়ে দিয়ে দিতে হবে? আজীবনের জন্য আরেক বাড়িতে পাঠিয়ে দিতে হবে? উঃ!
“পড়াশোনা কেমন চলছে?”
“ভাল।” আফরিন মাথা নাড়ল। মায়ের কোলে শুয়ে পড়ল।
“আর চাকরি?”
“ওটাও ভাল চলছে।” মিনমিন করে বলল আফরিন। জানে তার কাজ করাটা আফসানার খুব একটা পছন্দ না। ছেলেমেয়ের উপরে বাড়তি চাপ দিতে তিনি কখনোই পছন্দ করেন না।
“তোমার জন্য একটা প্রস্তাব এসেছে।” খুব স্বাভাবিক ভাবেই বললেন আফসানা। যেন এটা সাধারণ একটা ঘটনা। রোজ দু চারবার হয়। পুরোটা অবশ্য ভুল নয়। রোজ দু চারবার না হলেও দুই চারমাসে তো হয়ই। সবটা আফরিনের কানে আসে না। যেগুলো বাবা মায়ের ভাল লাগে সেগুলোই কেবল সে শুনতে পায়। তবে এ পর্যন্ত কোনো না কোনো বিষয়ে এসে এই কথা আটকে গেছে।
আফরিন একটু অবাকই হলো। শেষবার শুনেছিল ফুপুর প্রস্তাবটা। তবে অস্থির হলো না সে। আফসানা যেহেতু তার কাছে কথাটা বলেছেন তার মানে তাদের পছন্দ হয়েছে।
“ওহ।” ছোট করে উত্তর দিয়ে চোখ সরাল আফরিন। এবার সে তাকালো আলমারির আয়নায়। আফসানা মনোযোগ দিয়ে আফরিনের চুলে হাত বোলাচ্ছেন।
“সাদমান খোঁজ নিয়েছে। আমাদের খারাপ লাগেনি।”
“তার মানে ভাল লেগেছে।” মনে মনে আওড়ালো আফরিন।
“তুমি চিনবে।” এ বেলায় বিস্ময়টুকু লুকিয়ে রাখতে পারল না আফরিন। কপাল ভাঁজ করে তাকালো আফসানার দিকে।
মেয়ের কপালে হাত রেখে আফসানা বললেন, “নাবিলা? নাবিলার ভাই। রাফি।”
আফরিনের কপালে ভাঁজ সমান হয়ে এল। উঠে বসে সে প্রথম যে কথাটা বলল, “ওরা তো অনেক বড়লোক।”
আফসানা বিরক্ত হলেন। ভাই বোনের সব মনোযোগ এক জায়গাতেই।
“তো তোমার বাবার বাড়ির লোক কী কম বড়লোক? চাকরি বাকরি আছে, ইনকাম আছে। নিজেদের ঘরবাড়ি আছে। পৈতৃক সম্পত্তি আছে। দুটো মানুষের মতো মানুষ ছেলেমেয়ে আছে।” গম্ভীর কণ্ঠে বললেন আফসানা।
শেষ বাক্যটা শুনে আফরিন হেসে ফেলল, “তাই?”
“সন্দেহ আছে তোমার?”
“একদম না!” মায়ের এই গম্ভীরতাও খুব মিষ্টি লাগল আফরিনের কাছে। হঠাৎ তার কি হলো কে জানে। আবার আফসানার কোলে শুয়ে পড়ল। সিদ্ধান্ত নিলো বিয়ে নিয়ে বেশি চিন্তা ভাবনা করবে না। বাবা মা যদি তাকে এখানে বিয়ে দিতে চায় তাহলে এখানেই সে বিয়ে করবে। বিনা বাক্য ব্যয়ে। কোমল একটা ফুলের মতো করে তাকে মানুষ করেছে এই দুজন। তারা নিশ্চয়ই সেই ফুলকে নর্দমায় ছুড়ে ফেলবে না!
“শুয়ে পড়লে কেন?”
“বলো শুনছি।”
আফসানা বলতে শুরু করলেন। সাদমান যা যা বলে গেছে সব বললেন। তার হাত বোলানো কিন্তু থামল না। ফলে আগ্রহের সাথে জবাবের আশায় কখন মেয়ের মুখের দিকে তাকালেন তখন সে ঘুমে কাদা। আলতো ধাক্কা দিলেন আফসানা। আশ্চর্য! কেউ কি নিজের বিয়ের আলাপ শুনে ঘুমাতে পারে?
“উমমম!” আফরিন আরো ভালো করে মুখ গুজলো।
“কিছু বলো।”
“আমি রাজি।” ঘুম ঘুম গলায় বলল আফরিন।
“কী রাজি?”
“তোমরা যেখানে রাজি সেখানেই রাজি।” আফসানার সরিয়ে নেয়া হাতটা আবার নিজের মাথায় রেখে বলল আফরিন। আফসানার মুখে এক টুকরো হাসি খেলে গেল। মেয়েটার বিশ্বাস তবে তারা অর্জন করতে পেরেছেন। খুব ইচ্ছে হলো আফরিনের মা-কে জানায় তার মেয়েকে সে কাছে রেখেছে। বুকের খুব কাছে।
_______________

রাফির মেজাজ গত কয়েকদিন ধরেই বেশ চটে আছে। বাবা মায়ের ঘটনাটা সে ভুলতে পারেনি। বিবমিষা মাখানো স্মৃতিতে আরো একটা ছবি যুক্ত হয়েছে। সেই বিশ্রী অনুভূতি কাটার আগেই বিয়ের খবরে তার মেজাজটা শ্রীহীনতার শেষ পর্যায়ে পৌঁছে গেল। ফলে দাদীমার উপরে হওয়া রাগটা ঝাড়ল অফিস গেটের দারোয়ানের সাথে। বেচারার কোনো দোষই ছিল না। রাফি নিজেই বলেছিল তার জন্য বড় গেট খুলতে হবে না। সে পকেট গেট দিয়েই বেশ যাতায়াত করতে পারবে। গাড়ি ঢুকবে আরেক গেট দিয়ে। আর আজ সেই গেট না খোলার জন্যই লোকটাকে ধমকালো সে। তারপর থেকেই রাগটা নিজের উপরে এসে পড়েছে। টিকতে না পেরে সেই দারোয়ানকে ডাকিয়ে এনেছে।
মধ্যবয়সী দারোয়ান এমনিতেই ভয়ে ছিলেন। এই চাকরি হারালে কোথায় কোথায় কী করতে হবে সেটাও মনে মনে ভেবে ফেলেছিলেন তিনি। এরই মাঝে রাফির ডাকে তিনি মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে গেলেন তার চাকরি এবার নট হয়ে যাচ্ছে।

“বসুন চাচা।” নিজের বিপরীতের চেয়ারটা দেখিয়ে দিলো রাফি। সে বসে আছে অফিসের মধ্যিখানে। সবাই তাকে দেখতে পাচ্ছে।
লোকটা অবাক হলেন। এমনিতে রাফির ব্যবহার তার পছন্দ হলেও আজকের সকালের পর থেকে সেই পছন্দ বদলে গেছে।
“বসুন।” রাফি আবার বলল।
ভেতরে ভয় নিয়েই লোকটা বসল। অস্বস্তিবোধ করল। এই চেয়ার তো তার জন্য নয়।
“চা খাবেন নাকি কফি?”
লোকটা বেশ থতমত খেয়ে গেল রাফির শান্ত ভঙ্গিমার কথা শুনে। মনে হলো গরু কুরবানীর আগে তাকে খাইয়ে দাইয়ে মোটাতাজা করা হচ্ছে।
“কিছুই না।”
“একটা কিছু নিতেই হবে।” রাফির কন্ঠ দৃঢ়।
“এই গরমে একটু ঠান্ডা পানি হইলে ভাল হয়।”
রাফি পিয়নকে ডাক দিল। পিয়ন এলে বলল, “এক গ্লাস লেবুর শরবত করে দিতে পারেন?”
পিয়ন মাথা নেড়ে চলে যেতেই রাফি সামনে তাকাল। দ্বিধাহীন কণ্ঠে বলল, “আজকে সকালে বিনা কারণে আপনার সাথে খারাপ ব্যবহার করেছি চাচা। মাফ করে দিয়েন।”
লোকটা মনে হলো কানে খানিকটা কম শুনলেন তিনি। কিন্তু মিনিট গড়িয়ে গেলেও রাফি যখন তার দিকে অপরাধী দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল তখন তিনি মানতে বাধ্য হলেন ঘটনা সত্যি।
তোতলাতে তোতলাতে বললেন, “না না! কি বলেন কি বলেন!”
“আসলে চাচা এক জায়গার ঝামেলা আরেক জায়গায় প্রকাশ করে ফেলেছি। এক মাথায় নিয়েই ঘুরি তো!”
লোকটার খানিকটা মায়া হলো, “আল্লাহ আপনার সব ঝামেলা দুর কইরা দেক।”
রাফি সুন্দর করে হাসল।
“লেবুর শরবত খেতে যাবেন চাচা। নাহলে আমার মনে হবে আমাকে মাফ করেননি।”
দারোয়ান উঠে দাঁড়ালেন।
“অবশ্যই খেয়ে যাব।” দরজা ঠেলে বের হতে হতে আরেকবার দোয়া করলেন যেন এই চমৎকার ছেলেটার সব ঝামেলা দূর হয়ে যায়।

“রুমে নিয়ে গিয়ে বললেই তো পারতি। সবাই তাকিয়ে আছে।”
পরিচিত কণ্ঠ শুনে ঘুরল রাফি।
অনিককে দেখে বলল, “সবার সামনে বিশ্রী ব্যবহার করতে পারলে ক্ষমাও সবার সামনে চাওয়া উচিত।”
অনিক মাথা নাড়ল।
“তোর কাজ কাম নেই? সারাক্ষণ আমার পেছনে ঘুরিস কেন?”
“ঘোরার জন্য আমার বউ আছে। তোমার পেছনে ঘুরি শখ করে না।” দাঁতে দাঁত চেপে বলল অনিক।
“তো ঘুরিস না। নিজে শান্তিতে থাক, আমাকেও থাকতে দে।” রাফি নিজের কেবিনে চলে গেল।

অনিক নিশ্বাস ছাড়ল। রাফির পিছু যেতে যেতে বিড়বিড় করে বলল, “সমুদ্রে পেতেছি শয্যা, শিশিরে কী ভয়?”
“দাদীমার উপরে ক্ষেপে আছিস কেন?” রাফির মুখোমুখি বসল অনিক।
“দ্যাট রিমাইন্ডস মি! দাদীমাকে এই মহান কাজে নিশ্চয়ই তুই সাহায্য করছিস?”
অনিক আমতা আমতা করল, “দাদীমার নেটওয়ার্ক কি কম নাকি? আমাকে লাগে না।”
রাফি নিশ্বাস ছাড়ল, “আমার শান্তি তোরা দেখতে পারিস না?”
“সে জন্যই তো এত আয়োজন।”
“অনিক! আমি মেন্টালি সিক অবস্থায় আছি।”
“একদম বুঝতে পারছি। বিয়েই এর এক এবং একমাত্র ওষুধ। একটুও দেরি করা যাবে না।” মাথা নেড়ে বলল অনিক।
রাফি জানালার দিকে মুখ ঘোরাল। এই মুহূর্তে অনিককে বোঝানো আর একটা খাম্বাকে বোঝানো একই কথা।
“মেয়েটা কে শুনবি না? তোর বোনের ঘটনার হিরোইন। আফরিন।”
সাই করে মাথা ঘোরাল রাফি। চট করে মেয়েটার মুখ মনে পড়ে গেল।
রাফিকে এমন অবাক হতে দেখে বিজয়ী ভঙ্গিতে হাসল অনিক। একদম পারফেক্ট মেয়ে বাছাই হয়েছে না? শুনেই রাফি শিহরিত!
অথচ ঘটনা ঘটলো তার উল্টোটা। আফরিনের যেই চোখ দুটোর দিকে তাকিয়ে রাফি কৃতজ্ঞ বোধ করেছিল সেই চোখ দুটোর কথা মনে পড়তেই এবার মনটা বিষিয়ে গেল।
“আমি ভেবেছিলাম মেয়েটা আত্মমর্যাদাবোধ সম্পন্ন।” রাফি বলল।
“তো আত্মমর্যাদাবোধ সম্পন্ন মেয়েরা বিয়ে করে না? এটা কোন গ্রহের লজিক ভাই!” অনিক বিরক্ত হয়ে বলল।
“আমাকে বিয়ে করতে চায় কেন সে?”
“আরে শালা চায় না! প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে কেবল। দোয়া কর যেন চায়। তাহলে তোর কপাল খুলবে। নাহলে বয়স বাড়তে বাড়তে রসকষহীন আমসত্ত্ব হয়ে পৃথিবীর আবর্জনা বাড়াবি।”
“এতই যখন মেয়েটাকে পছন্দ হয়েছে তাহলে নিজে বিয়ে করে কপাল খুলিস না কেন!” তেড়ে এসে বলল রাফি।
অনিক দুই কানে হাত দিয়ে বলল, “আমি ভাই দয়ালু মানুষ। ফকির মিসকিনদের দিতে ভালবাসি। সেজন্যই তোর বিয়েতে সাহায্য করছি। তাছাড়া আমার কপাল অলরেডি খুলে আছে। দেখছিস না কপালের গেটে দুটো মেয়ে ঝোলাঝুলি করছে!”
রাফি দাঁতে দাঁত চেপে অনিকের দিকে তাকাল। দাদীমা তাকে বিয়ে দিয়েই ছাড়বে? সে বিয়ে করবেই না! দেখা যাক কে জেতে।

~চলমান~