অন্তঃপুর পর্ব-১৯

0
11

#অন্তঃপুর
বিনতে ফিরোজ
১৯.

পুরোটা রাত আফরিন ভেবেছে। ছোট্ট শিশু বিপদে পড়লে তাকে দেখে যেমন মায়া হয় রাফির জন্য ঠিক তেমন মায়াই অনুভব করেছে আফরিন। নাবিলার জন্য সাহায্য চাইতে যাওয়া রাফি যেমন বিনয়ী ছিল তার স্বামী হিসেবে রাফি তেমন বিনয়ী হবে না। গত চৌদ্দ ঘণ্টায় তার মাঝে বিনয়ের ব ও দেখেনি আফরিন। তাতে তার কষ্ট হচ্ছে বটে, তবে লোকটার জন্য। তার নিজের জন্য নয়। কি পরিমান আঘাত পেলে এমন শক্ত একটা মানুষ এভাবে ভয় পেতে পারে!
আফরিন বেশি ভাবাভাবিতে গেল না। অত ভেবে কাজ নেই। যা হচ্ছে হোক। সে স্রোতের সাথে ভেসে যাবে না, তাল মিলিয়ে যাবে।

ঘুম থেকে উঠে আফরিন রুমিলার ঘরেই বসে রইল। নামাজ শেষ করে দাদী শাশুড়িকে জিজ্ঞেস করল, “আমি কি বাইরে যাব?”
“বাইরে যেয়ে কি করবা?”
“জানি না। এভাবে ঘরে বসে থাকলে মানুষ কি বলবে?” বিব্রত মুখে বলল আফরিন।
“এমনিতেই মানুষ অনেক কিছু বলে ফেলছে। রাতে থাকছো দাদী শাশুড়ির সাথে এইটাই গল্প করার জন্য যথেষ্ট।”
আফরিনের মনটা একটু ভার হল। খেয়াল করে রুমিলা বললেন, “রান্নাবান্না করতে যেতে চাও? দরকার নাই। এই বাড়িতে কাজে লোকের অভাব নাই। কাজ চলবে। তোমার শাশুড়িই আজ কত বছর ধরে কাজকাম করে না। তুমি কালকে আসছ আর আজকে কি করবা? আত্মীয়দের নিয়ে চিন্তা নাই। ওরা আজকেই চলে যাবে।”

বৌভাতের আয়োজন হল খুব জাঁক জমকের সাথে। পরিচিত ব্যবসায়ী হওয়ায় মানুষজনও নেহাতই কম ছিল না। এই ঝামেলার মাঝে রাফিকে একবারের জন্যও দেখল না আফরিন। আফসানা, মোশাররফ, সাদমান এসে ঘুরে গেল। কয়েকজন আত্মীয়কেও দেখা গেল। সন্ধ্যার পরপর বাড়ি খালি হয়ে গেল। বিকেলের মাঝেই সবাই বিদায় নিয়েছে।
আফরিনের বাবা মায়ের মন ভার করার জন্য ঘটনা যেটা ঘটল রাফি শ্বশুরবাড়ি যেতে রাজি হল না। এটাও জানাল ফোনে। আফসানা শঙ্কিত হলেন। মেয়ে ভাল আছে তো?
আফরিন তাদের সব শঙ্কা হাওয়ায় উড়িয়ে দিয়ে বলল, “অল গুড মা!” পরক্ষনেই গলা নামাল। অভিযোগ দেয়ার ভঙ্গিতে বলল, “বড়লোকের সাথে বিয়ে দিয়েছ। এখন বোঝো মজা।”
আফসানা মেয়ের রাজকীয় রূপে অভিমান দেখে হেসে ফেললেন। পুত্রবধূকে সাজাতে এরা কার্পণ্য করেনি। তার মেয়েকে একদম রাজরানীর মতো লাগছে। বিড়বিড় করে তিন কুল পড়ে তিনি মেয়ের গায়ে ফু দিলেন। বললেন, “সকাল বিকাল তিন কুল পড়বা, আয়াতুল কুরসী পড়বা।”
আফরিন উত্তর দেয়ার আগে সাদমান বলল, “সম্পত্তির দুই ভাগ পাবে ছেলে, এক ভাগ মেয়ে। তোমার ফু দ্রুত তিন ভাগ করো।”
আফরিন হেসে ফেলল। এই মানুষগুলো তাকে ভুলে যাবে মনে করে কয়েকটা দিন কি ভয়েই না কাটালো!

তিতলি সোফায় হাত পা ছড়িয়ে শুয়ে আছে। আফরিনের মায়া লাগল। মেয়েটা অনেক কাজ করেছে।
“বেশি খারাপ লাগছে?”
“অনেক ভাবি অনেক! মন চাচ্ছে বরফ কুচি দিয়ে এক গ্লাস লেবুর শরবত খাই।” চোখ বন্ধ করেই বলল তিতলি। তার ঘাড় ফেঁটে যাচ্ছে ব্যথায়। কিন্তু শোয়ার সুযোগ নেই। সারাবাড়ি এলোমেলো হয়ে আছে।

বেশ কিছুক্ষণ পর আফরিন তিতলিকে ডাকল।
“এই তিতলি! ঘুমিয়ে পড়েছে?”
তিতলির চোখ লেগে এসেছিল। ডাক শুনে সে ধড়ফড় করে উঠল, “কি হয়েছে?”
“কিছু না। শরবত খাও।”
তিতলি দেখল আফরিনের হাতে কাঁচের গ্লাস। গ্লাসের গায়ে বিন্দু বিন্দু পানি জমে আছে। ঘোলাটে পানির উপরে বরফ কুচি ভাসছে।
তিতলি অবাক হয়ে বলল, “আপনি বানিয়ে আনলেন?”
“না। শরবত তো বানানোই ছিল। ঠান্ডা পানি আর বরফ মিশিয়ে আনলাম।”
তিতলি এক চুমুকে সবটা শেষ করল। উচ্ছ্বসিত কণ্ঠে বলল,
“এক্কেবারে চাঙ্গা হয়ে গেছি ভাবি। এবার সারা বাড়ি পরিষ্কার করতে পারব।”
মেয়েটা করলও তাই। আফরিন কিছু করতে চাইলেও দিল না। বলল, “আপনি নতুন মানুষ। সুন্দর করে সোফায় বসে থাকেন। কামকাজ আরেকদিন করবেন।”
অগত্যা আফরিনকে বসে থাকতে হল।
শাড়ি টারি খুলে সন্ধ্যায় সে একবারে গোসল করে নিয়েছে। সুতির এই থ্রি পিসটায় আরাম লাগছে। তিতলিকে ছুটতে দেখেই তার মনে হল শ্বশুরকে দেখলেও একবারে জন্যও শাশুড়ির সাথে আলাপ হয়নি। উনার নাকি জ্বর? ইশ! একবার দেখা করা উচিত ছিল। তাদের জন্য মনে তেমন শ্রদ্ধাবোধ কাজ না করলেও তো তারা আফরিনের শত্রু নয়। পরিবারের লোক। এবং সবচেয়ে বড় কথা তাদের না বুঝলে রাফিকে ঠিকমতো বুঝতে পারবে না আফরিন। তাই সে তিতলিকে ধরল, “চলো একবার উপরে যাই।”
“ভাই তো বাইরে গেছে।” তিতলি বোকার মতো করে বলল।
“ভাইয়ের মায়ের কাছে। একবারও তো দেখা হয়নি।”
“ওহ! যাবেন? চলেন যাই।” হাতের কাজ শেষ করে আফরিনকে নিয়ে গেল তিতলি। আফরিনের একটু ভয় ভয় লাগল। শাশুড়ি কেমন হবে এটা নিয়ে তার মনে এক ধরনের চাপা ভয় আছে। ঝগড়ার যে বিবরণ শুনেছে তাতে দুজনকে নিয়েই ভয় পাচ্ছে আফরিন। যদিও শ্বশুরকে দুনিয়ার সবকিছু থেকে উদাসীন মনে হয়েছে।

পুরো ঘরে এক ধরনের গুমোট ভাব। দরজা জানালা বন্ধ বলেই মনে হয় এমন লাগছে। বিছানার সাথে একেবারে লেগে গেছে আসিফার শরীর। আফরিন তিতলিকে ফিসফিস করে বলল, “উনি সারাদিন ঘরেই ছিলেন?”
“হুঁ।” তিতলিও ফিসফিস করে উত্তর দিল। তারপর আসিফার সামনে যেয়ে আস্তে করে ডাক দিল, “খালাম্মা? খালাম্মা?”
আসিফা ধীরে চোখ খুললেন। শরীরটা দুর্বল লাগছে বলে শুয়ে থাকা। নয়তো ঘুম তার আসছে না। সারাদিন কি একটা মানুষ ঘুমাতে পারে?
“ভাবি আপনারা সাথে দেখা করতে আসছে।”
“কে?” দুর্বল কণ্ঠে বললেন আসিফা।
“ভাবি। রাফি ভাইয়ের বউ।” মুহূর্তেই আসিফার চোখে চাঞ্চল্য দেখা গেল। তিনি তৎক্ষণাৎ উঠে বসার চেষ্টা করলেও পারলেন না।
“আপনাকে উঠতে হবে না মা।” আফরিন এগিয়ে এল। মেয়েটার সহজ কণ্ঠের মা ডাকে নির্ভার বোধ করলেন আসিফা। তার নিজের তিনটা সন্তান থাকতেও তিনি এই ডাকটা খুব অল্পই শুনতে পান। এটা যে নিজের কাজের ফল সেটাও বুঝতে পারেন তিনি।
“আজকে সারাদিন একদম উঠতে পারিনি। তাই অনুষ্ঠানেও যেতে পারিনি।” কৈফিয়ত দেয়ার ভঙ্গিতে বললেন আসিফা।
“না না সমস্যা নেই। আমারই উচিত ছিল আপনার সাথে দেখা করা।” অনুশোচনার সুরে বলল আফরিন। আসিফার ভাল লাগল। মেয়েটা যদি আসলেই এমন হয় তাহলে তার ছেলে হারাবার শঙ্কাটা থাকবে না। সাথে সাথেই একটা ধাক্কা খেলেন আসিফা। ছেলে তো তিনি বহু আগেই হারিয়েছেন।
“বাইরে থেকে কি মশা আসে? জানালা দিয়ে?” আফরিন বন্ধ জানালার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল।
তিতলি চটপট করে বলল, “আমাদের এইদিকে একটুও মশা নাই ভাবি। চারদিকে ফকফকা। বাগানে যেয়ে দেইখেন ওখানেও কোনো ময়লা নাই। সব পরিষ্কার। মশা আসবে কীভাবে?”
“জানালা বন্ধ যে তাই শুনলাম। আপনার সমস্যা হয় মা?”
“জানালা যে কে বন্ধ করেছে তাই তো জানি না।” উদাস কণ্ঠে বললেন আসিফা।
“তাহলে খুলে দিই।” বলে নিজেই জানালা খুলে দিল আফরিন। বারান্দার দরজাটা খুলে দিতেই এক ফালি ঠান্ডা বাতাস ঘরে ঢুকল। দূরে কোথাও বৃষ্টি হচ্ছে বোধহয়।
তারপর আরো আধা ঘন্টা শাশুড়ির কাছে বসে রইল আফরিন। কিন্তু কেউ কিছু বলল না। তিতলি চলে যাওয়ায় ঘরটা নিস্তব্ধ হয়ে পড়েছিল। আসিফাকে তাতে অভ্যস্ত বলেই মনে হল। আফরিন বিদায় নিল। তার অস্বস্তি লাগছিল। আসিফা এক মনে তাকে দেখছিলেন। তার চোখ আফরিনের চেহারায় থাকলেও তিনি যে বহু দূরে কোথাও হারিয়ে গেছেন এটা বুঝতে আফরিনের কষ্ট হল না।

সারাদিন ভারী খাবার খেয়ে আফরিনের বিরক্ত লাগছিল। একটু আলু ভাজি আর ডাল দিয়ে খেতে ইচ্ছে করছিল। কিন্তু এই বাড়ির নিয়ম কানুন আলাদা। চারদিকে কাজের লোকে সয়লাব। কর্ত্রীর কর্তৃত্ব না থাকায় সব এলোমেলো হয়ে আছে। সে নিজেও খুব সংসারী ধরনের মেয়ে না। তাই ভয় পাচ্ছিল এসব সামাল দেবে কীভাবে। সাহারা হিসেবে ধরা দিল তিতলি। মেয়েটা এই বাড়ির সবাইকে মন থেকে ভালবাসে।
“তিতলি আলু ভাজি দিয়ে ভাত খেতে ইচ্ছে করছে যে।”
“এক্ষুনি বানায় দিচ্ছি।” তিতলি ছুটে যাচ্ছিল। আফরিন তাকে আটকাল।
“আমি বানাব। আমাকে সব দেখিয়ে দাও।”
তিতলি কিছুক্ষণ থেমে থাকল। যাওয়ার আগে গলা নামিয়ে বলল, “ভাবি খালাম্মা এসবের খোঁজ খবর তো রাখে না। দুনিয়ার কাজের লোক রেখে দিছে। সবার মাসের বাজার এই বাড়ির রান্নাঘর থেকে হয়। আমি ছোট মানুষ তাই নিষেধ করলেও কেউ শোনে না।”
আফরিন হাসল, “এখন থেকে আর এমন হবে না ইনশাআল্লাহ্। চলো।”

মিহাদ ড্রয়িং রুমে বসে কিউব নিয়ে খেলছিল। আফরিনকে দেখে আড়চোখে একবার তাকাল। আবার খেলায় মনোযোগ দিল। আফরিন খেয়াল করল মিহাদের তাকানো। কিন্তু কীভাবে ছেলেটার সাথে ভাব করা যায় বুঝল না।

আফরিনকে রান্না ঘরে দেখে ছুটা বুয়ারা একটু হকচকিয়ে গেছে। এত বড় বাড়ির বউ রান্না ঘরে আসবে না এতে তাদের দৃঢ় বিশ্বাস ছিল। সেই আশায় এক বালতি পানি ঢেলে আফরিন ভাত বসাল। আলু কুচি করার সময় তিতলির মনে হল বুয়াদের পরের মাসের বাজারের পরিকল্পনা কুচি কুচি করছে আফরিন। তার ভারী আনন্দ হল। কতদিন লুটেপুটে খাবে বাছাধনেরা!

“নাবিলা আপু কি রাতে ভাত খায়?”
“না রুটি খায়। কিন্তু কতদিন ধরে তো আপা রাতে কিছুই খায় না। সকালেও খায় না। দুপুরে নাহলে বিকালে একবার খায়। সেই সেদিনের পর থেকে।” তিতলির কণ্ঠে বিষন্নতা ঝরে পড়ল।
“দাদীমা কি খায়?”
“একটা রুটি। দাদীর তো ডায়বেটিস।”
“আর তোমার খালাম্মা?”
“ঠিক নাই। কোনোদিন ভাত কোনোদিন রুটি। আর আপনার শ্বশুর ফেব্রুয়ারি মাসের ত্রিশ তারিখ বাড়িতে খান।” মুখ বাঁকিয়ে বলল তিতলি।
আফরিন হেসে ফেলল, “তুমি তো সুন্দর করে কথা বলো।”
“মজা লাগে না এসব ভাবি! এই বাড়ি দেখলে মানুষ বলে আহ কোনকিছুর অভাব নাই, কতো জানি সুখ এখানে। কিন্তু আপনিই দেখবেন এখানে কি আছে।”
“তোমার ভাই কি খায় তিতলি?”
“ভাইয়ের কোনো কথাবার্তা নাই। যা দিবেন তাই খাবে।”
“আচ্ছা পাঁচটা রুটি বানানোর মতো আটা নাও।”
আলু ভাজি নামিয়ে ডাল বসালো আফরিন। মিহাদ রান্নাঘরের দরজায় অনেকক্ষণ ধরে ঘুরঘুর করছে। আফরিন এগিয়ে যেয়ে বলল, “মিহাদ ভাই কি খাবেন?”
মিহাদ একবার তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নিল। কিউব মেলাতে মেলাতে বলল, “একটা পরোটা। গোল একটা পরোটা।”
“আর?”
“আর কিছু না।”
“শুধু পরোটা?”
মিহাদ কিছুক্ষণ ভাবল, “ডিম আছে?”
আফরিনের ভাল লাগল। কথাবার্তা শুনে তো শান্ত বাচ্চার মতো লাগছে। সবাই ছেলেটাকে ভয় পায় কেন?
“তিতলি ডিম আছে?”
“আছে।”
“তাহলে একটা ডিম পোচ।”
“আচ্ছা।”
মিহাদ চলে যাওয়ার জন্য ঘুরল। আবার পেছন ঘুরে আফরিনের দিকে তাকিয়ে বলল, “তোমার নাম কি?”
“আফরিন।” ছেলেটার সাথে কথা বলতে আফরিনের ভাল লাগছিল।
“আমার নাম জানো?”
“মিহাদ।”
“কীভাবে জানো?”
“ম্যাজিক!” আফরিন রহস্য করে বলল।
মিহাদ দুবার পলক ফেলল।
“তুমি কি এখন থেকে এখানেই থাকবে?”
“যদি থাকি?”
মিহাদ বিষয়টা কীভাবে নিল আফরিন বুঝল না। ওর চোখের ভাষাটা আফরিন ধরতে পারছে না।
“তোমাকে কি বলে ডাকব?”
“তোমার যা ইচ্ছা।”
“ভাবি বলবেন ভাই ভাবি।” তিতলি ছুটে এসে বলল।
“ভাবি কি?” মিহাদ শুনল।
“ভাইয়ের বউ। উনি হলেন রাফি ভাইয়ের বউ।”
“বউ?” মিহাদকে বিভ্রান্ত দেখাল।
“আপনি ভাবি বলবেন বুঝছেন?”
মিহাদ মাথা দোলাল। কিউব নিয়ে চলে গেল।
“ছেলেটা তো শান্তশিষ্ট আছে।”
“শান্তশিষ্ট? রাগলে যে কি করে দেখেননি তো!”

দাদীমা আর শাশুড়ির জন্য খাবার পাঠিয়ে দিয়ে আফরিন মিহাদকে খেতে দিল। ছেলেটা ঠিকভাবে খেতে পারছিল না। চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ফেলছিল। তাই দেখে আফরিন মিহাদের প্লেট নিয়ে নিল। নিজেরটা সহ তিনটা প্লেট তিতলির হাতে ট্রে তে তুলে দিয়ে সে মিহাদের হাত ধরল।
“আমার সাথে আসো।” মিহাদ বাধ্য ছেলের মতো উঠল। তিতলি ভাবল নতুন মানুষ দেখে হয়তো মিহাদ কিছু বলছে না।
নাবিলার ঘরের সামনে যেয়ে থামল আফরিন। নক করার কিছুক্ষণ পর নাবিলার গলা ভেসে এল।
“খোলা।”
আফরিন আলো জ্বালিয়ে দেখল নাবিলা বিছানায় হেলান দিয়ে বসে আছে।
আফরিন হাসি মুখে সালাম দিল, “আসসালামু আলাইকুম।”
নিজের ঘরে হঠাৎ এত মানুষ দেখে নাবিলা হকচকিয়ে গেল। তিতলি ট্রে হাতে দাঁড়িয়ে আছে। আফরিন মিহাদের হাত ধরে দাঁড়িয়ে আছে। চট করেই আফরিনকে চিনে ফেলল নাবিলা। তাতে অস্বস্তিটা বাড়ল বৈ কি।
“ওয়া আলাইকুমুস সালাম।” নাবিলা উঠে দাঁড়াল।
“আমার সাথে তো একবারও দেখা করলেন না আপু।” মেকি অভিমানের স্বরে বলল আফরিন।
নাবিলা বিব্রত ভঙ্গিতে বলল, “আসলে বাইরে তেমন বের হই না তো..”
নাবিলার পরণের জামা কুচকে আছে। চুলগুলো কতদিন চিরুনির ছোঁয়া পায়নি কে জানে। আফরিনের মায়া লাগল। এদের ভাই বোনের এক জনের অবস্থাও স্বাভাবিক না।
“আপনার সাথে একটু গল্প করতে এলাম।”
“বসুন বসুন।”
আফরিন মেঝেতে বসে পড়ল। তিতলি প্লেটগুলো সামনে রাখল।
আফরিন বলল, “আমি আপনার ছোট হব আপু। উনিশে এসএসসি দিয়েছি। আপনি?”
“ষোলো।” নাবিলা বুঝতে পারছিল না সে কি করবে।
পরোটা ছিঁড়ে ডিম দিয়ে মিহাদের সামনে ধরতেই সে হা করল। আফরিন বলল, “আপনার সাথে খাব বলে চলে এসেছি আপু। রাগ করেছেন?”
আফরিনকে দেখে নাবিলার মনে হল যেন কত বছর ধরে এই বাড়িতে সংসার করছে! মন্ত্রমুগ্ধের মতো মেঝেতে বসে পড়ল সে।
“ভাবি আমার খাবারও নিয়ে আসি?”
আফরিনের নিজের উপর রাগ হল। তিতলির কথা ভুলে গেল কীভাবে সে?
“যাও যাও!”
নাবিলা চুপচাপ খেতে থাকল। মাঝে মাঝে চোখ তুলে নিজের ছোট ভাইয়ের দিকে তাকাল। এভাবে শেষ কবে খাইয়ে দিয়েছিল মিহাদকে? লজ্জা লাগল নাবিলার। সে আর মিহাদের দিকে তাকাতে পারল না।

খাওয়া দাওয়া শেষে দরজার সোজা সোফায় বসে রইল আফরিন। যার সূত্র ধরে সবার সাথে এই সম্পর্ক তারই কোন খবর নেই। আফরিন ঘড়ির দিকে তাকাল। দশটা বেজে গেছে। এই লোক আসবে কখন?

~চলমান~