#অন্তঃপুর
বিনতে ফিরোজ
২৯.
আফরিন একটা নতুন কিউব কিনে এনেছে। কিউবের রং একদম কেকের উপরের ক্রিমের মতো। দেখলেই কোমল মনে হয়। হাতে নিতে ইচ্ছে করে। কিউব পাগল মিহাদের জন্য বস্তুটা আরো বেশি আকর্ষণীয়।
কিন্তু আফরিন ওকে জিনিসটা দিচ্ছে না। সামনে এনে রেখে দিয়েছে কিন্তু নিতে গেলেই ছো মেরে সরিয়ে নিচ্ছে। আফরিনের দিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করল মিহাদ। স্পষ্ট কোনো বাক্য না। আফরিন অধীর আগ্রহে তাকিয়ে ছিল। তাকে বকুক তাও পুরো একটা বাক্য বলুক। তাকে হতাশ করে মিহাদ মিরর কিউব নিয়ে নাড়াচাড়া শুরু করল।
গত কিছুদিন ধরেই চেষ্টা করছে আফরিন। মিহাদকে পুরোপুরি একটা বাক্য বলানোর জন্য। কাজটা সহজ নয় সে জানত। তবে এত কঠিন এটাও আন্দাজ করতে পারেনি।
“এই কিউবের নাম কী বলো তো?”
মিহাদ একবার তাকালো বটে কিন্তু কিছু বলল না।
“একটু আগেই না বললাম? উইন্ড মিল কাটার কিউব। এত বড় নাম বলতে হবে না। বল কাটার কিউব। বলো।”
মিহাদ বিড়বিড় করে কী যেন বলল। আফরিন বলল, “নাম বলতে না পারলে কিউব দেব না। এই যে নিয়ে চলে গেলাম।”
ভার্সিটির ব্যাগের ভেতরে কিউব ঢুকিয়ে রাখল আফরিন। মিহাদ ঘুম থেকে উঠে দাদীমার কাছে যেয়ে বসে থাকে। খেলে নিজের মতোই কিন্তু সকালের শুরুটা তার দাদীমার ঘর থেকে হওয়া চাই।
এই সুযোগে একটু চেষ্টা করছিল আফরিন। কাজ না হওয়ায় বেশ হতাশ হল সে। টানা এক সপ্তাহের চেষ্টাতেও মিহাদের মুখ দিয়ে একটা স্পষ্ট, পুরো বাক্য বের হয়নি। হতাশ হওয়ার মতোই বিষয়। মিহাদের দিকে একবার তাকিয়ে আফরিন বের হয়ে গেল। তার বিকেলের সময়টা মিহাদের জন্য বরাদ্দ করা।
তবে আজ বিকেলে আর উৎসাহ পেল না সে। মিহাদের ঘরে এলো ঠিকই কিন্তু চুপচাপ বসে রইল। ছেলেটার নিষ্পাপ মুখশ্রীর দিকে তাকিয়েই থাকতে ইচ্ছে করে। সমস্যা কেবল একটাই। ঐ মুখটার দিকে তাকালেই চিন্তারা লাগামহীন ঘোড়ার মতো ছুটতে শুরু করে। তাদের আফরিন থামাতে পারে না।
মিহাদ কিউব নিয়ে নাড়াচাড়া করলেও বেশ কিছুক্ষণ যাবৎ আফরিনকে দেখছে। চুপচাপ চেয়ারে হেলান দিয়ে জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে। কচ্ছপ পায়ে আগেই এর কাছে গেল সে। আফরিন বুঝতে পারল না। মিরর কিউবটা মেলাতে মেলাতেই নিম্ন স্বরে বলল, “কাটার কিউব।”
লাফ দিয়ে উঠে বসল আফরিন। মিহাদ তার পায়ের কাছে বসে আছে। চট করে ওর পাশে মেঝেতে বসে পড়ল সে। অবাক কণ্ঠে বলল, “কী বললে?”
“কাটার কিউব।”
আফরিন চকচকে চেহারা নিয়ে তাকাল। তার ঠোঁট প্রসারিত হয়েছে অজান্তেই। মিহাদ তখনও মাথা নিচু করে আছে।
“কই?” মিহাদ জিজ্ঞেস করল।
আফরিন এক প্রকার দৌঁড়ে কিউবটা নিয়ে এল। দেখিয়ে বলল, “এটা কি বলো।”
“কাটার কিউব।”
“আবার বলো।”
মিহাদ এক পলক আফরিনের দিকে তাকিয়ে ছো মেরে নিয়ে নিল। আফরিন হাসল। হাসতে হাসতেই তার চোখ ভরে এল।
মিহাদের চুল এলোমেলো করে দিয়ে বলল, “ভাইয়ের মতো ফাজিল হয়েছিস? নিজের ইচ্ছে মতো সব হবে না?”
মিহাদ একটু পিছিয়ে বসল। মাথায় হাত দেয়া তার একদমই পছন্দ না।
_______________
মাহমুদের একটা ফোন কল আসিফা রিসিভ করেছিলেন। তার পর থেকেই তার অস্থিরতা শুরু হয়েছে। ভয় হচ্ছে। লোকটা হড়বড় করে কথা বলতে শুরু করেছিল।
“আপনের ট্যাকা পয়সা থাকতে পারে। তাই বইলা কি আমাদের মানুষ মনে করেন না? এক মাস ধইরা ঘুরাইতেছেন। ট্যাকা এখন কই গেল? খালি মুখ দিয়া লম্বা লম্বা বুলি ছুড়তে পারেন। ভালয় ভালয় কইলাম ট্যাকাডি দিয়া দ্যান। নাইলে দল লইয়া আপনের বাইত যামু। পোলার প্যাটে ছুরি ধইরা হইলেও টাকা আনুম। শালা ফুটানি করে আমগো লগে।”
বিশ্রী ধরনের গালি দিতে দিতে ফোন কেটে দিল লোকটা। আসিফা কিছুই বলতে পারলেন না। মাহমুদ কাদের সাথে মিশছে? সব বন্ধুদের না হলেও বেশিরভাগকেই চেনেন তিনি। এই ভাষায় কথা বলার মতো বন্ধু মাহমুদের নেই। তাছাড়া কথা তো না পুরোটাই ছিল হুমকি। কাদের থেকে টাকা নিয়েছে মাহমুদ?
ঘরে ফিরতেই বিচলিত ভঙ্গিতে স্বামীকে ধরেন আসিফা।
“এই তুমি কি করে বেড়াচ্ছ সত্যি করে বল।”
“ঘরে ঢুকতে না ঢুকতেই তোমার শুরু হয়ে গেছে। এজন্যই বাড়িতে থাকতে ইচ্ছা করে না। অসহ্য!” চোখ মুখ কুচকে বিরক্ত ভঙ্গিতে বললেন মাহমুদ।
বলার ধরনে আর ভাষায় আসিফার মেজাজ খারাপ হয়ে গেল। কণ্ঠের উদ্বেগ মুহূর্তেই ক্ষোভে পরিণত হল।
“অসহ্য কাকে বলো? কি করে বেড়াচ্ছ আমি জানি না ভেবেছ? মানুষ তোমাকে ফোন দিয়ে টাকা চায় কেন? মাহমুদ! একবার যেই ভুল করেছ সেসব দ্বিতীয়বার করার কথা ভুলেও চিন্তা করো না। ছেলের সামনে মুখ দেখাবে কীভাবে তুমি?”
মাহমুদ হন্তদন্ত ভঙ্গিতে ফোন খুঁজলেন।
“আমার ফোন কই?”
“আছে। আমার কথার জবাব দাও।”
“আগে ফোন দাও।”
“আমি একটা প্রশ্ন করেছি।”
“ধুর ছাই! সবসময় ঘ্যানঘ্যান করো কেন? আর আমার কল রিসিভ করেছ কোন সাহসে তুমি?”
“তোমার স্ত্রী আমি। কল রিসিভ করার অধিকার তো আছে। নাকি এটুকুও নেই?”
“কীসের স্ত্রী? স্ত্রী হওয়ার কোন দায়িত্বটা পালন করো তুমি? অধিকার খাটানোর বেলায় হাজির হয়েছে!”
“মুখ সামলে কথা বলো মাহমুদ। তুমি নিজে স্বামী হিসেবে কী করেছ? কিচ্ছু করেছ?”
এভাবেই কথার মোড় ঘুরে গেল। ঘুরেফিরে সেই এক স্টেশনে এসে ঝগড়ার ট্রেন থামল। অসময়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে গেলেন মাহমুদ। আসিফার মনে হলো তার বুকে ব্যাথা করছে। মাহমুদ কী করছে তিনি জানেন। এই কথা রাফির কানে গেলে তিনি কীভাবে ছেলেকে মুখ দেখাবেন? ছিঃ!
_______________
নাবিলা দাদীমার কাছে এসে মহা উৎসাহে গল্প জুড়েছে। বহুদিন পর নাতনীর এমন প্রাণোচ্ছল রূপ দেখে রুমিলার বুকটা শীতল হয়েছে। মিহাদ ঘরের এক কোণে খেলছে। নাবিলা পুরোনো সেই চিরাচরিত ভঙ্গিতে গল্প করছে। কেবল রাফি গাধাটার মাথায় বুদ্ধি হলেই তার সংসার পরিপূর্ণ হয়ে যায়।
নাবিলা বলে চলেছে, “জানোনা দাদীমা! একেকটা ছেলেমেয়ে যে কী ট্যালেন্টেড! একটা কথা দুবার বলতে হয় না। সব ঝটপট শিখে ফেলে। ওদের স্কুলে ভর্তি করে দিলে একেকটা ম্যাগনেট হয়ে বের হত।”
“তুই করিস না কেন?”
“কী? স্কুলে ভর্তি করব? পাগল নাকি! ওরা মহা পড়া চোর। ভাবির কথাতেই ভর্তি হয় নি আর আমি কোন জায়গার কে।”
“নাত বউয়ের কথা খুব মানে না?”
“মানবে না কেন বল? যে ওদের ওভাবে পড়াশোনা করিয়েছে। একদম বড় বোনের মতো করে আদর যত্ন করেছে। তার কথা তো মানতেই হবে। একেবারে রত্ন খুঁজে এনেছ দাদীমা!”
রুমিলা খুশি হলেন। শান্তির নিশ্বাস ফেলে বললেন, “চুল তো বাতাসে পাকে নাই। মানুষ তো একটু আধটু চিনি।”
“তাই? আচ্ছা বলো তো আমি কেমন মানুষ?”
“তুই দুনিয়ার কুইড়া মানুষ। বাড়ির একটা কাজ করিস?”
মুখ ভোতা করে নাবিলা বলল, “কালকে থেকেই করব যাও।”
“আজকে থেকেই করবি। এই কালকে কালকে করেই তোর ভাই বুড়া হয়ে যাক। ওর আর সংসার করা লাগবে না, ছেলে মেয়ের মুখও দেখা লাগবে না।”
নাবিলা কপালে ভাঁজ দেখা গেল।
“কেন?”
“কেন মানে? বউ থাকে এশিয়া আর সে থাকে আমেরিকা তাইলে বাচ্চা কি আফ্রিকা থেকে আসবে?” রাগে গজগজ করতে করতে বললেন রুমিলা।
নাবিলা গম্ভীর কন্ঠে বলল, “ভাইয়া ভাবি এখনও আলাদা থাকে?”
“তোমার আদরের ভাইই একা একা থাকতে চায়। বউ ঘরে তোলে নাই। সে যাবে কেন?”
“তুমি একটু দিয়ে আসতে পারো না দাদীমা? এমন করো কেন?”
“একদম ভাইয়ের হয়ে কথা বলবি না। বাপ যেমন গাধা ছেলে হইছে তার যোগ্য উত্তরসূরী। বউয়ের কদর করতে জানে না।”
নাবিলা দাদীর পাশ ঘেষে বসল, “স্বামী স্ত্রীর মিল করায় দিলে আল্লাহ খুশি হয়। অনেক সওয়াব পাবা।”
“তা তুই দে না ক্যা?”
“আমি ছোট মানুষ। বড় ভাইয়ের এসব ঝামেলায় যাইতে পারি?”
“ঝামেলা সব আমার মাথার উপরে দে। আছি না এক বুড়ি?”
নাবিলা ঝাপটে ধরল দাদীকে, “তোমার কি বড় দাদী ডাক শুনতে ইচ্ছা করে না দাদীমা?” আহ্লাদী গলায় বলল নাবিলা। রুমিলা বিরক্ত হলেও কিছু বললেন না। মনে মনে কী ভাবলেন বোঝা গেল না।
ইদানিং রাফি অফিস থেকে এশার আগে আগেই চলে আসে। মাঝে মাঝে বিকেলেও ফেরে। রুমের বাইরে বসে আফরিন আর মিহাদের কথাবার্তা শোনে। কথা মূলত আফরিনই বলে। মিহাদ মাঝে মাঝে হু হা করে।
তার ভাইয়ের জন্য আফরিন চাকরি ছেড়েছে তিতলির কাছে এটা শোনার পর থেকেই অপরাধবোধ তাকে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে। মনে হচ্ছে আফরিনের সামনে যেয়ে সরাসরি তার কাছে ক্ষমা চায়। যেই মেয়ে তার পুরো পরিবারের জন্য নিজেকে উজাড় করে দিচ্ছে সেই মেয়েকে প্রাপ্য সম্মান না দেয়া গুরুতর অপরাধ। সেই অপরাধের শাস্তি রাফি প্রতিনিয়ত পাচ্ছে। নিজের কাছ থেকেই। গ্লানি এক সেকেন্ডের জন্যও তার পিছু ছাড়ছে না।
এদিক ওদিক ঘুরতে ঘুরতেই দাদীর ঘরে ঢুকল রাফি। সবাই মিলে কি সুন্দর আড্ডা দিচ্ছে! আফরিন কিছু একটা নিয়ে হাসছিল। তাকে দেখেই হাসিটা গায়েব হয়ে গেল। রাফির মনটা ঝুপ করে খারাপ হয়ে গেল। তাকে দেখে কি হাসাও নিষেধ?
“ঐ যে! চলে আসছে।” রুমিলা বিরক্ত ভঙ্গিতে বিড়বিড় করলেন। ভাইয়ের মুখভঙ্গি দেখে নাবিলা বেশ মজা পেল।
“ভাইয়া দেখ মিহাদ একটা নতুন কথা শিখেছে। এই মিহাদ! বল দেখি এই কিউবটার নাম কী?”
মিহাদ মাথা নিচু করেই বলল, “উইন্ড মিল কাটার কিউব।”
পরম বিস্ময়ে তাকাল আফরিন। সে তো মুখে ফেনা তুলেও পুরোটা বলাতে পারে নি।
রাফির যে কি খুশি লাগল! ভাইয়ের পাশে বসে জিজ্ঞেস করল, “কে দিয়েছে?”
“রিনি।”
“এই ভাবি! রিনি ডাক ও শিখল কোথায়?” নাবিলা জিজ্ঞেস করল।
“সাদের সাথে একদিন কথা বলছিলাম ভিডিও কলে। তখন ও পাশে ছিল।”
“ঐ বাড়িতে সবাই তোমাকে এই নামে ডাকে?”
“হ্যাঁ।”
“নামটা কিন্তু সুন্দর। রিনি। আমরাও তোমার কাছে ঋণী।” নাবিলা হাসল।
আফরিন পাল্টা হেসে বলল, “ঋণী আর কি? কিছুই তো করতে পারলাম না তোমাদের জন্য।” দীর্ঘশ্বাস ঝরে পড়ল আফরিনের কণ্ঠ থেকে। রুমিলা আগুন চোখে নাতির দিকে তাকালেন। রাফি দ্রুত চোখে সরিয়ে নিল। ইদানিং দাদীমার দিকে তাকালেই মনে হয় চোখ দিয়ে ভস্ম করে দেবে।
আধা ঘন্টা বসে থেকেও আফরিনের সাথে কথা বলার কোনও উসিলা খুঁজে পেল না রাফি। দাঁড়িয়ে পকেটে হাত দিয়ে গম্ভীর কন্ঠে বলল, “আমার নীল ফাইলটা কোথায় রেখেছেন? টেবিলে খুঁজে পেলাম না।” অথচ রাফি কেবল নিজেই জানে তার বুকটা কেমন ধড়ফড় করছে। নীল ফাইল তো তার কোনোদিনই ছিল না।
আফরিন মনোযোগী হয়ে তাকাল।
“কাগজ পত্র তো টেবিল থেকে সরাই না।”
“খুঁজে পাইনি। একটু খুঁজে দিয়ে যান। দরকারি জিনিসপত্র না পেলে ঝামেলা।” কণ্ঠের মেকি বিরক্তি দেখে নিজেই অবাক হল রাফি। বাহ রে রাফি বাহ!
আফরিন রাফির পিছু পিছু গেল। ঘরে যেয়ে পুরো টেবিল তন্ন তন্ন করে খুঁজে নীলের কোনো বংশ পেল না। টানা এক ঘন্টা তল্লাশির পর সন্দেহী কণ্ঠে একটা ফাইল হাতে নিয়ে বলল, “বাই এনি চান্স আপনি কি এটাকে নীল বলছেন?”
রাফি বুঝতে পারছিল না বিষয়টা সামাল দেবে কীভাবে। নীল কোনো ফাইল তো তার ইহজন্মে ছিল না। মিথ্যে বলতে হবে এবার?
সেই ক্ষণে আফরিন তাকে উদ্ধার করল। ওর হাতের ফাইলের দিকে তাকিয়ে রাফি বলল, “পেয়ে গেছেন?”
আফরিন হতাশ কণ্ঠে বলল, “এটা সবুজ। গ্রিন। কোন এ্যাঙ্গেল দিয়ে এটাকে নীল বলে মানুষ? চশমা কই আপনার?”
“আমি তো চশমা পরি না।”
“বড়লোক মানুষ চশমা পরে না? কেমন বড়লোক হলেন তাহলে!”
“বড়লোক হলেই চশমা পরতে হবে এটা কোন জায়গার থিওরি? অদ্ভুত!”
“আমার বানানো থিওরি।” আফরিন বের হয়ে গেল। রাফি সবুজ ফাইলটা ছুঁড়ে ফেলল। সামনে থাকতে কে বলেছে ওকে?
বের হয়েই থমকে দাঁড়াল আফরিন। দাদীমা সামনে দাঁড়িয়ে আছে।
“আপনি এখানে দাদীমা? কিছু লাগবে?”
“হুঁ।” গম্ভীর ভঙ্গিতে বললেন রুমিলা। “গাধাটা কোথায়?”
“জি?” আফরিন থতমত খেয়ে গেল। গাধা কে?
“এই রাফি! রাফি!”
রাফি বেরিয়ে এল। রুমিলাকে দেখে অবাক হলো।
“তুমি এখানে উঠে এসেছ কেন?” অবাক কন্ঠেই বল রাফি।
রুমিলা চোখ পাকিয়ে বললেন, “কেন আসা নিষেধ?”
“তাই বলছি না। উপরে উঠে আসতে কষ্ট হল না? আমাকে ডাকলেই তো হত।”
“কিছুই হইত না। হইলে এতদিনেই হইত।”
গম্ভীর ভঙ্গিতে আফরিনকে ডাকলেন রুমিলা, “নাত বউ এদিকে আসো।”
আফরিন এগিয়ে এলো। এই প্রথম দাদীমাকে তার ভয় ভয় লাগছে।
রাফির বাম হাত রুমিলা আফরিনের ডান হাতে দিয়ে বললেন, “গাধাটাকে পিটিয়ে ঘোড়া বানিয়ে ফেলো তো। পারবা না?”
আফরিন স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। রাফির মনে হলো মাটি দুভাগ হোক সে ওখানে লুকিয়ে পড়ুক। পরক্ষনেই মত পাল্টাল সে। এখন ভুল করেও লুকানো যাবে না। মাহেন্দ্রক্ষণ এসেছে বহু প্রতীক্ষার পর।
তাদের ওভাবে রেখেই রুমিলা আস্তে ধীরে নেমে গেলেন। রাফি গলা খাঁকারি দিল। আফরিন তাকালে বিব্রত ভঙ্গিতে হাসল। নিজে নিজেই বিড়বিড় করল, “আশ্চর্য! এত গরম লাগছে কেন?”
আফরিন কাঠ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। রাফি নিচু কণ্ঠে বলল, “চলো রিনি।”
আগুন চোখে তাকাল আফরিন। কি ঢং! এক ধাক্কায় তুমি! আবার রিনি! চলো রিনি! মচৎকার!
রাফির মনে হলো সে ভস্ম হয়ে যাচ্ছে। রুমিলা সফলভাবে দায়িত্ব হাত বদল করে দিয়ে গেছে। এখন তার ভবিষ্যতের কি হবে? ঝলসানো চিকেন ফ্রাইয়ের মতো রাফি ফ্রাই? হায় হায়!
রুমিলা নিচে যেয়ে এক পলক উপরে তাকালেন। দুটোকে পাশাপশি কি সুন্দর লাগছে। তিতলি কোত্থেকে উড়ে এসে বলল, “কাঁদছেন কেন দাদীমা? বলেন মা শা আল্লাহ! বারাকাল্লাহ!”
রুমিলা চোখে জল, ঠোঁটে হাসি নিয়ে বিড়বিড় করলেন। দোতলার রেলিংয়ের সাথে দাঁড়িয়ে থাকা জোড়া শালিকের দিকে তাকিয়ে তিতলির এত আনন্দ হলো!
~চলমান~