#টার্নিং_পয়েন্ট
#প্রথম_পর্ব
#মৌসুমী_হাজরা
আরও বেশ কয়েকবার ফোন করলো মনামী, কিন্তু ফোন রিসিভ করলো না মানব দা।
দাদার কথা গুলো এখনও বিশ্বাস করতে পারছে না মনামী।
তারমানে মানব দা ওকে এতদিন ধরে ঠ’কিয়েছে। দুদিন হলো একটু মনো’মালিন্য হয়েছিল মনামী আর মানবের। মানব ফোন না করায়, মনামী ভেবেছিল, সে নিজে থেকেই ফোন করে সব মিটমাট করে নেবে। কিন্তু বিকেলে দাদা এসে বললো, মানবের বিয়ের ঠিক হয়ে গেছে ওর পরিচিত এক মেয়ের সাথে, বলা ভালো ওর প্রেমিকার সাথে। দাদা, বৌদিকে বলছিল, মেয়েটির সাথে মানবের নাকি ৫ বছরের সম্পর্ক। তাহলে ৫ মাস ধরে মনামীর সাথে মানবের যে কানেকশন শুরু হয়ে ছিল সেটা কী? সেটা কী শুধু মানবের কাছে টাইম পাশ ছিল? কিন্তু মনামী তো মানবকে সত্যিই ভীষণ ভালোবেসেছিল।
…এই ভরসন্ধ্যাবেলা লাইট অফ করে শুয়ে আছিস কেন? মাথা ব্যথা নাকি?
…না, আমি ঠিক আছি। তুই যা এখান থেকে দাদা।
…কী হয়েছে আমাকে বল না মন, কেমন যেন লাগছে তোকে।
…বললাম তো কিছু হয় নি, তুই যা। পড়াশোনার একটু চাপ চলছে, তাই একটু ক্লান্ত। একটু বিশ্রাম নিলে আবার ঠিক হয়ে যাবো।
…আচ্ছা বেশ, তবে কিছু হলে আমাকে বলবি। কিচ্ছু লুকাবি না আমার থেকে। আমি তোর দাদা।
মনামী ঠোঁটের কোণায় চেষ্টা করে যতটা হাসি আনা যায় নিয়ে এলো। তবে দাদাকে কিছু বলা যাবে না। দাদার সাথে মানবের সম্পর্ক খা’রাপ হয়ে যাবে। তাছাড়া দাদা পুরোটা শুনলে মানব দাকেও ছাড়বে না। দাদা যে তাকে ভীষণ ভালোবাসে। যদি জানতে পারে, ওরই বন্ধু ওর বোনের অনুভূতি নিয়ে খেলা করেছে, তাহলে দাদা কখনো মানব দাকে ক্ষ’মা করবে না।
এইভাবে মনামী সব লুকিয়ে পার করলো ১ সপ্তাহ…
…শঙ্কর দা, একটু কথা ছিল আপনার সাথে।
…হ্যাঁ বলুন ম্যাডাম। ফাইলগুলো আমি সব রেডি করে দিয়েছি। আপনি দেখে, সই করে দেবেন।
…আচ্ছা বেশ। তবে আপনার সাথে একটা অন্য বিষয় নিয়ে কথা বলতে চাইছি।
…হ্যাঁ বলুন না ম্যাডাম।
…শুনলাম আপনার মেয়ে মনামী খুব ভালো রেজাল্ট করেছে। মেয়েটা বরাবরই খুব মেধাবী। ওর তো প্রথম থেকেই স্বপ্ন ছিল ও উকিল হবে। ও মন দিয়ে পড়াশোনা করুক। আমার শুভেচ্ছা জানাবেন ওকে।
…আচ্ছা ম্যাডাম, নিশ্চয় জানাবো।
…আর একটা কথা ছিল। ৫ বছর ধরে অনিমেষের বই খাতা সব আগলে রেখেছি। তবে কোনো দিন স্পর্শ করিনি। হয়তো সেই অধিকার আমার নেই। ছেলেটার তো আর পড়াশোনা হলো না। তাই ওর খাতা গুলো যদি মনামীকে দিই, আপনি কিছু মনে করবেন?
…না না এতে মনে করার কী আছে?
…আমি খাতাগুলো ছুঁয়ে দেখিনি ঠিকই, তবে আমি জানি, ওই খাতাগুলোতে কিছুই লেখা নেই, মনামীর কাজে লেগে যাবে। ছেলেটা তো একটা মেয়ের জন্য নিজের জীবন নষ্ট করে দিল।
…আচ্ছা ম্যাডাম, আপনি খাতাগুলো আমাকে দেবেন, আমি মনামীকে দেবো।
…আমি লাঞ্চ টাইমে বাড়ি যাবো, তখন খাতাগুলো নিয়ে আসবো।
এতদিন ধরে মনামী সব লুকিয়ে রেখে ভেতরে ভেতরে যেন ক্ষ’য়ে গেছে। আর কোনো পথ খোলা নেই তার কাছে। অ’পমান, আর অ’বহেলাতে তার মন ভে’ঙে চু’রমার হয়ে গেছে। বাবার পুরোনো কিছু ঘুমের ওষুধ লুকিয়ে সে নিজের কাছে রেখেছে। এখন তো মানব দা মনামীর ফোন নাম্বার, এমনকি সোশাল মিডিয়া থেকেও ব্লক করে রেখেছে। মনামী শুধু একবার দেখা করে জানতে চায়, কেন সে তার সাথে এমন করলো। ৫ বছর ধরে একটা সম্পর্কে থাকার পরেও, কেন সে মনামীর সাথে আবার সম্পর্কে জড়িয়েছিল? সবটুকুই তার কাছে খেলা ছিল?
বাবার গলার আওয়াজ পেয়েই চোখের জল মুছে ফেললো মনামী।
…এই দেখ মন, তোর জন্য কী এনেছি? তোর তো এবার ক্লাস শুরু হবে, কিছু নতুন খাতা আর কিছু পুরোনো খাতা তোর জন্য এনেছি।
…পুরোনো খাতা মানে?
…অনন্যা আন্টি দিয়েছে রে, উনি বললেন তোকে এই খাতা গুলো দিতে। অনিমেষের খাতা এইগুলো। ছেলেটা বোধহয় ব্যবহারও করে নি।
…আচ্ছা বাবা অনিমেষদা সু*ই*সা*ই*ড করলো কেন?
…সে অনেক ব্যাপার রে। পরে বলবো। আজ অনেক ক্লান্ত আমি।
…বাবা তোমার শরীর ভালো আছে তো?
…হ্যাঁ রে মা, আমি ভালো আছি। আমাকে যে ভালো থাকতে হবে। উকিলের বাবা হতে যাচ্ছি। আমাকে যে অনেক বাঁ’চতে হবে।
মনামী জড়িয়ে ধরলো তার বাবাকে। মেয়ের এমন আচরণ দেখে একটু অবাক হলেন শঙ্কর বাবু। তিনি মনামীকে ধরে বললেন, কিছু হয়েছে মা? মনামী ঘাড় নেড়ে জানান দিল কিছু হয়নি।
রাত্রি ১ টা,
ঘুমের ওষুধ গুলো হাতে নিয়ে বসে আছে মনামী নিজের রুমে। আজ থেকে ঠিক ৪ মাস আগে, মনামী যখন মানবের কাঁধে মাথা রেখে বলেছিল, মানব দা আমাদের সম্পর্কটা যদি দাদা মেনে না নেয়, তখন আমরা কী করবো?
মানব মনামীর মাথায় হাত বুলিয়ে বলেছিল, ঠিক মেনে নেবে, আমি ঠিক মানিয়ে নেবো।
মনামী মনে মনে ভাবছে, কি নিখুঁত ছিল সেই অভিনয়। আর সে বোকার মতো ভেবেছিল, মানব তাকে ভালোবাসে।
গত কয়েকদিন ধরে তার চোখে একটুও ঘুম নেই, মানব দা এখন কী করছে, নিশ্চিন্তে ঘুমোচ্ছে? নাকি প্রেয়সীর সাথে কথা বলছে?
এই ৫ মাসে একটুও মনামী বুঝতে পারেনি, মানবের জীবনে কেউ আগে থেকেই আছে বলে। রা গে হাতে রাখা ঘুমের ওষুধ গুলো খেতে যাবে, এমন সময় হঠাৎ জানালা দিয়ে দমকা বাতাস ঘরে এসে টেবিলে রাখা খাতার পাতা ওলট-পালট করে দিল। মনামী বির’ক্ত হয়ে ওষুধ গুলো নামিয়ে খাতা গুলো ঠিক করে রাখতে গিয়ে দেখলো, অনিমেষদার একটা খাতা খোলা অবস্থায়। ঠিক মাঝের পাতাতে, সেখানে লেখা আছে, এই লেখাগুলো তার জন্য, যার কাছে মনে হচ্ছে জীবনের সব রাস্তা বন্ধ, যে স্বপ্ন দেখা ছেড়ে দিয়েছে, অনেক রাত নির্ঘুম কা’টছে যার…
কেমন যেন একটা অনুভূতি হচ্ছে মনামীর। অনিমেষদার খাতায় এইসব কী লেখা? এ যেন মনামীকে নিয়ে লেখা হয়েছে। তার অবস্থা যে এখন এইরকমই। পরের পাতা উল্টানোর মতো সাহস পেল না। কেমন যেন একটা ভ য় ভ য় লাগছে তার। খাতা বন্ধ করে বিছানায় শুয়ে পড়লো মনামী।
সকালে অ’নিচ্ছা সত্ত্বেও মনামীকে বাজারে যেতে হলো ওর বাবার সাথে। আগে ছুটির দিনগুলোতে নিজেই বায়না করতো বাবার সাথে বাজার যাওয়ার। সকালের সতেজ হরেকরকম সবজি, ফল কিনতে বেশ ভালোই লাগতো তার। বাবার কাছেই শেখা, উপর থেকে সতেজ লাগলে সে জিনিস যে ভিতরেও ভালো হবে, তা কিন্তু নয়। মানুষও তো তাই। বাইরে থেকে চকচক করলেই কি সব সোনা হয়?
মন ভালো না থাকলে, রঙিন চারপাশও কেমন ফ্যাকাসে লাগে। বাজারের এত হট্টগোলও মনামীর কানে ঢুকছে না। সে যেন অন্য কোনো এক জগতে আছে এখন। দুনিয়ার এই রঙ্গ-তামাশা থেকে অনেক দূরে।
মনামীর বাবা শঙ্কর বাবু মনামীর কাঁধে হাত রাখতেই, মনামী চমকে উঠলো।
…কতবার ডাকলাম তোকে জানিস?
…আসলে বাবা, আমি শুনতে পাই নি।
…না না, আমার মনে হচ্ছে, তোর শরীরটা খারাপ। কেমন যেন লাগছে তোকে।
…আমি একদম ঠিক আছি। তুমি এত চি ন্তা করো না তো। চলো এবার অনেক বেলা হলো, মা এবার ব’কবে, রান্নার দেরি হলে, জানো তো?
…হ্যাঁ মা ঠিক বলেছিস, দাঁড়া একটু, আমি এক্ষুনি আসছি।
মনামী কিছু বলার আগেই বাজারের থলেটা মনামীকে ধরিয়ে শঙ্কর বাবু মিষ্টির দোকানে গেলেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই এসে বললেন,
…আহা! থলেটা খুব ভারী তাই না রে। দে এবার আমাকে থলেটা, তুই এই প্যাকেটটা নে।
…কী আছে বাবা এতে?
…তোর প্রিয়, ছানার পায়েস।
মনামী অবাক হয়ে বাবার দিকে তাকিয়ে ছিল, এই মানুষটা কত বোঝে তাকে। কিছুক্ষণের জন্য সব বি’ষাদ ভুলে একটা ভালোলাগার পরিবেশ তৈরি হয়েছিল। কিন্তু সেটা বেশিক্ষণ স্থায়ী হলো না। পেছন থেকে একটা পরিচিত কণ্ঠস্বর শুনতে পেল সে।
…কাকু, কেমন আছেন?
…আরে মানব যে, তুমিও বাজার করতে এসেছো? তা ভালো। তোমার বন্ধু তো আবার এই সব পারে না। তা কেমন আছো বলো?
…আমি ভালো আছি। শুনেছেন তো আমার বিয়ে।
…হ্যাঁ বাবা শুনেছি। খুব ভালো।
…আমি বাড়িতে যাবো। তবে এখন থেকেই বলে দিচ্ছি আপনাদের সবাইকে আসতে হবে কিন্তু।
…হ্যাঁ নিশ্চয় যাবো।
…আচ্ছা কাকু আসি তাহলে, একটু কাজ আছে।
মনামী অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকলো শুধু। একবারও মনামীর সাথে কথা বললো না মানব। তাকালো না অব্দি। একবারও জানতে চাইলো না, সে কেমন আছে। মানুষ এতটা বে’ইমান হয় কী করে? কোনোরকমে চোখের জলকে লুকিয়ে রেখে মনামী বাড়ি ফিরলো।
বাড়ির সকলেরই মনামীর আচরণ একটু অন্যরকম লাগলো। এত ছটফটে মেয়েটা হঠাৎ চুপচাপ হয়ে গেছে। প্লেট থেকে ওর দাদা মজা করে চিকেনের লেগপিসটা তুলে নিলেও, আজকাল আর ঝ’গড়া করে না মনামী।
দুপুরে পড়ার টেবিলে বসে জানালার দিকে তাকিয়ে আকাশ দেখছিল মনামী। শরতের আকাশটাও কেমন যেন বি’ষণ্ণ। হঠাৎ গতরাতের কথা মনে পড়তেই, টেবিলে রাখা খাতাগুলোর দিকে তাকালো। এত খাতার মধ্যে সেই খাতাটা খুঁজতে লাগলো। চোখে গেল খাতার কভারের দিকে, কি সুন্দর হাতের লেখা। খাতার প্রথমেই লেখা আছে, অনিমেষের দুনিয়ায় স্বাগতম….
আচ্ছা অনিমেষদার মৃ’ত্যুর পর কেউ এই খাতাগুলো হাত দেয়নি? এমনকি তার মা? কেউ কোনোদিন জানতে অব্দি চাইলো না, কেন ছেলেটা সব মায়া ত্যাগ করে চলে গেল?
যাইহোক, আজ মনামী সাহস করে পড়া শুরু করলো, খাতার সামনের দিকে কিছু লেখা নেই, মাঝখানে কয়েকটা লাইন লেখা ছিল, যেটা মনামী গতরাতেই পড়েছে। এবার ধীরে ধীরে পাতা ওল্টাতে লাগলো। পর পর সাতটি পাতা পুরো ফাঁকা। তারপরের পাতাতে চোখ আটকে গেল, সেখানে লেখা ছিল, যাক কেউ তো সময় দিল আমাকে। হ্যাঁ তোমাকেই বলছি। এই যে তুমি পড়ছো। তবে তুমি যখন পড়বে, তখন আমি অনেক দূরে। প্রথমেই ‘তুমি’ বললাম, আসলে আমি জানতাম, যে এই লেখাটা পড়বে, সে আমার মতোই দিশাহারা একজন মানুষ। নয়তো এই যান্ত্রিক দুনিয়ায়, কার এত সময় আছে বলো তো? তাহলে শুরু করা যাক আমার গল্প…
মনামী পড়তে পড়তে হারিয়ে গেল অনিমেষের দুনিয়ায়।
বছর দশেকের অনিমেষ তখন খুব কা’ন্নাকা’টি করছে, সে কিছুতেই হোস্টেলে ফিরবে না। ওখানকার নিয়মমাফিক জীবন তার ভালো লাগে না। সে যে অনেক কিছু করতে চায়। রং-তুলি দিয়ে চারপাশ রঙিন করে তুলতে চায়। রাতে ঠাম্মার কোলে মাথা রেখে গল্প শুনতে চায়। চিৎ’কার করে গলা ছেড়ে গান গাইতে চায়, খেলতে চায়, নতুন কিছু শিখতে চায়। শুধু ঘড়ির কাঁটা ধরে উঠতে বসতে চায় না। কিন্তু তার ইচ্ছের কাছে কিছুতেই মাথা নোয়াতে চান না, তার বাবা মা। দুজনেই নিজের জীবন নিয়ে ব্যস্ত। কাজের চা’পের মধ্যে ছেলেকে সময় দেওয়া হয়ে উঠছিল না। তাই অনিমেষের ঠাকুমার অ’নিচ্ছা সত্ত্বেও অনিমেষকে বাইরে পাঠানো হলো। এতে ছেলেও ভালো তৈরি হবে। নামীদামী স্কুলে এত টাকা নেয় কী জন্য? নিশ্চয় সেখানে পড়াশোনা করলে অনিমেষ ভবিষ্যতে অনেক কিছু করতে পারবে। মা-বাবার এমন ভাবনার কাছে একপ্রকার হে’রে গিয়েছিল অনিমেষ আর তার ঠাকুমা।
এইভাবেই দিন পেরোতে লাগলো। একটু একটু করে বড় হতে লাগলো। সব ইচ্ছা-ভালোলাগাকে মনের এক কোণে দাফন করে রেখেছিল অনিমেষ। মা-বাবার কথা মতো তার জীবন চলতে লাগলো। মা-বাবার ইচ্ছে ছিল সে কোনো বড় ইঞ্জিনিয়ার হবে, কিন্তু অনিমেষ আর তার ইচ্ছের সাথে অ’ন্যায় হতে দিল না, জো’র করে সে বাংলা নিয়ে কলেজে ভর্তি হলো। দ্ব’ন্ধ শুরু হলো সেখান থেকেই। মা-বাবার মতে অনিমেষ নাকি নিজের ভবিষ্যৎ নিজে ন ষ্ট করলো। কিন্তু সেই সব কথায় সে কান দিল না। জীবনটাকে নিজের মতো বেছে নিল। এইভাবে দিন কাটতে লাগলো। সে তার সব জমিয়ে রাখা ইচ্ছে গুলোকে কবিতার রূপ দিয়ে লিখে রাখলো নিজের ডায়েরিতে। এরই মাঝে তার জীবনে উঁকি দিল বসন্ত। ফাইনাল ইয়ারে পরিচয় হলো স্নেহার সাথে। একই কলেজে, অথচ এতদিন ধরে সে ভাবে পরিচয় ছিল না। ধীরে চিনতে চিনতে বন্ধুত্ব, তারপর কখন যে অনুভূতি দরজায় কড়া নাড়লো, কেউ জানে না। একটা খা’রাপ সময়ের পর যে এত ভালো কিছু অপেক্ষা করছিল, তা অনিমেষ জানতো না। ডায়েরির পাতা কবিতাতে ভরে যেতে লাগলো।
“আজ এইটুকুই”…
মনামীর মনে হলো, কেউ যেন জো’র করে তাকে জাগিয়ে দিল। এতক্ষণ অব্দি একটা ঘোরে ছিল সে। অনিমেষের জীবন-কাহিনীতে পুরোপুরি ঢুকে গিয়েছিল। ঘড়ির কাঁটাতে তখন সন্ধ্যে ৭ টা। দুপুর থেকে সে একনাগাড়ে একই জায়গায় বসে অনিমেষের লেখা পড়ছে। কি নিপুণ হাতে লেখা! কত ভেবে চিন্তা করে লিখেছে অনিমেষ দা। সে চেয়েছিল, যে এই লেখাটা পড়বে, সে সময় নিয়ে পড়ুক। তাই তো এতটা পড়ার পর লেখা – “আজ এইটুকুই”।
তবে তাই হোক, অনিমেষদার জীবন-কাহিনী অনিমেষদার কথা মতোই পড়বে। তাই মনামী, পরের পাতা আর পড়লো না সেদিন। রাতে খাওয়া-দাওয়ার পর, আজ অনেক দিন পর যেন ঘুম নেমে এলো মনামীর চোখে।
অনিমেষদার খাতাটা আবার খুললো, যতটা পড়া হয়েছে, তার নীচে মোনামী লিখে রাখলো, “তোমাকে পড়বো বলে, আ*ত্ম*হ*ত্যা*র তারিখ পিছিয়ে দিলাম অনিমেষ দা”…
চলবে।