#প্রেমনেশা
নন্দিনী নীলা
২৫.
সবার মাঝে আচমকাই ধ্রুব এগিয়ে এসে আমার কাঁধ জড়িয়ে দাঁড়াল। সবার মতোই আমার চোখজোড়া বিষ্ময় এ বড়ো বড়ো হয়ে গেল। চারু বিস্মিত নয়নে তাকাল আছে ধ্রুবর দিকে। ধ্রুব শক্ত করেই ধরে আছে। চারু মুচড়ামুচড়ি করে নিজেকে ছাড়িয়ে নিতে ছটফটানি শুরু করে দিয়েছে। ধ্রুব ছাড়ার বদলে ওকে ছটফট করতে দেখে কঠিন সুরে ধমক দিয়ে উঠল,’ এতো নড়াচড়া করছো কেন? শান্ত হয়ে থাকতে পারো না?’
চারু ঢোক গিলে শান্ত হয়ে গেল। চারু ভয়ার্ত দৃষ্টিতে পরিবারের প্রত্যেকটা সদস্যদের দিকে তাকাচ্ছে। সবাই রাগী চোখে ওদের দিকে তাকিয়ে আছে। সবার মাঝে সবচেয়ে বেশি ক্ষেপে উঠেছেন পিনাক মেয়েটা। সৌভাগ্য কর্মে সবাই বাসায় থাকলেও ধ্রুবর বাবা বাসায় নেই। তিনি ভোরেই হসপিটালে চলে গেছে।
ধ্রুব সবার দিকে তাকিয়ে বলল,’ পিনাক এখানে কি হচ্ছিল? তুই চারুর উপর চিৎকার চেঁচামেচি করছিলি কেন?’
চারু পিনাকের দিকে তাকিয়ে আছে। পিনাক কথা বলছে না রাগে ফুঁসছে শুধু। চারু কে এভাবে ধ্রুবর সাথে দেখে ওর মাথা গরম হয়ে গেছে। ওর রাগী চোখে তাকিয়ে আছে ধ্রুবর হাতের দিকে যে হাত দিয়ে চারুর কাঁধ জড়িয়ে রেখেছে।
পিনাকের মা এগিয়ে এসে বললেন,’ এই ফকিন্নীর বাচ্ছার সাহস হলো কি করে আমার মেয়েকে অপমান করার? দুই পয়সার চাকরানির এতো স্পর্ধা আমার মেয়ের সাথে গলা উঁচু করে কথা বলে।’ রাগে ফেটে পড়লেন তিনি।
চারু বিস্মিত চোখে চেয়ে আছে মায়ের যদি এমন ব্যবহার হয় তার মেয়ে আর কত ভালো ব্যবহার শিখবে?
ধ্রুব রাগে লাল হয়ে বলল,’ চাচি মুখ সামলে কথা বলো।’
পিনাকের মা চিৎকার করে উঠলেন,’ তোর বোনকে অপমান করেছে তার হয়ে তুই ওকালতি করছিস? ওর জন্য তুই আমার উপর চিৎকার করছিস? এই ফকিন্নীর বাচ্ছার জন্য তোর এতো দরদ কিসের?’
ধ্রুব চেঁচিয়ে বলল,’ চারু চাকরানি না।’
ওর চিৎকার এ চারু নিজেই কেঁপে উঠল। ঢোক গিলে তাকাল সবার দিকে ধ্রুব কে এভাবে চেঁচিয়ে উঠতে দেখে সবাই স্তব্ধ। সবাই ধ্রুব কে উত্তেজিত হতে দেখে এটা বুঝে গেছে চারু কে কিছু বললে ধ্রুব সেটা মেনে নিচ্ছে না। এই জিনিসটা চারু সহ সবাইকে অবাক করে দিল। একটা চাকরানির জন্য ধ্রুবর মনে এতো কিসের দরদ। চারু আবার মুচড়ামুচড়ি করে বলল,’ ছাড়ুন আমায়।’
ধ্রুব বলল,’ দেখো আমি এতো ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে কথা বলতে পারব না। চারু কে আমি ভালোবাসি। যাকে আমি হৃদয়ে জায়গা দিয়েছি তাকে আমার পরিবারের লোক চাকরানি, ফকিন্নী বলে অপমান করবে এটা আমি ধ্রুব সহ্য করতে পারব না। আমার যতটুকু সম্মান এই বাসায় চারুর ও ততটাই থাকবে। তোমরা চারু সাথে আর এভাবে আচরণ করবে না। ও আমার কি হয়তো আন্দাজ করতে পারছো আর চাচী পিনাক কে সামলাও ও যেন চারুর পিছনে না লাগে।’
চারু এতোটাই শক খেয়েছে যে ধ্রুবর উপর নিজের ভাড় ছেড়ে দিল। বিস্ময়ে ও নিজের শরীর ভাড় সামলে রাখতে পারছে না ধ্রুব ওকে দুহাতে ধরে সবার উদ্দেশ্যে বলল,’ নেক্সট টাইম কেউ চারুর পিছু লাগবে না মাইন্ড ইট।’
আঙুল তুলে সবাইকে শাসিয়ে দিল ধ্রুব। চারুকে ধরে ধ্রুব উপরে নিয়ে গেল।
ওরা চলে যেতেই পিনাক চিৎকার করে উঠল,’ দেখেছো আম্মু আব্বু ধ্রুব একটা বাইরের মেয়ের জন্য আমার সাথে কেমন আচরণ করলো? আমাদের থেকে এখন ওই বাইরের মেয়েটা ওর কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। সামান্য একটা মেড কে ধ্রুব ভালোবাসে?’
বলতে বলতে মেয়েটার কন্ঠ বিস্মিত হয়ে উঠল। পিনাট বলল,’ এই মেয়েটা তো দাদীর ওখানে ছিল। ধ্রুব একে এতো কীভাবে চিনল?’
পিনাক দৌড়ে রুমে চলে গেল এই খবরটা তো একজন কে জানাতেই হবে। সে আর কেউ না পিনাকের বড়ো বোন যে ধ্রুব কে ভালোবাসে। পারিবারিক ভাবে তার সাথেই তো ধ্রুব বিয়ে ঠিক হয়ে আছে। আজকে ধ্রুব কি বলল এই মেয়েকে ও ভালোবাসে? তাহলে যুথি আপুর কী হবে? তার কথা কি ভুলে গেল?
পিনাক হোস্টেলে থাকা যুথি কে কল করল। যুথি কল রিসিভ করছে না। পিনাক টেক্সট করে রাখল,’ আপু তাড়াতাড়ি বাসায় আসো তোমার ধ্রুব কে অন্যকেউ নেওয়ার জন্য চলে এসেছে।’
যুথি এই মেসেজ দেখার পর কি অপেক্ষা করছে কে জানে। বাসায় আসলে কোন ঝড় উঠবে কে জানে। পিনাক যুথি কে টেক্সট করে শয়তানি হাসি দিতে লাগল। ওই চারু কে তো আমার যুথি আপু এসেই যা করার করবে।
পিনাক হাসছে ওই মেয়ের কি অবস্থা হবে সেই সব নিয়ে।
পিনাকের মা নিজের স্বামীর দিকে তাকিয়ে বললেন,’ দেখেছো ধ্রুব কি বলল? ও কি যুথির কথা ভুলে গেল? আমার মেয়ের সাথে বিয়ে ঠিক থাকা অবস্থায় ও আরেক মেয়েকে বাসায় এনে তুলেছে। কেমন ভাইস্তা তোমার এজন্য তখন আমি রাজী হতে চায়নি কিন্তু তোমাদের জন্য আমাকে রাজি হতে হয়েছে। এখন কি হলো?’
পিনাকের বাবা রাগী গলায় বললেন,’ ভাইজান বাসায় আসুক। দেখতেছি আমি তুমি চুপ থাকো এখন। এমনিতে মাথা আমার গরম হয়ে আছে আর গরম করিও না।’
স্ত্রীর সাথে চুটপাট করে তিনি চলে গেলেন।
যুথি ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে দেখে ওর ফোনের সামনে দাঁড়িয়ে আছে ওর বান্ধবী। যুথি কপাল কুঁচকে বলল,’ কী হয়েছে ওভাবে দাড়িয়ে আছিস কেন?’
মেয়েটা বলল,’ দোস্ত ফোনটা দুই মিনিটের জন্য দে একটু কল দেব।’
যুথি ছো মেরে ফোনটা কেড়ে নিয়ে বলল,’ নো।’
‘আমাকে ও আবার ব্লক করেছে একটু দে। আমাদের বিয়েতে তোকে আমি এক পিস রোস্ট বেশি খাওয়াবো প্রমিজ।’
যুথি বিদ্রুপ করে বলল,’ তোদের আর বিয়ে হবে না আমার ও রোস্ট খাওয়া হবে না। তোদের যেভাবে ব্রেকআপ হয় কবে জানি সিরিয়াস হয়ে যাবে থাক আমি আর আশায় থাকতে পারছি না।’
‘ দে না তুই ও তো ধ্রুব ভাইয়াকে কতো ভালোবাসিস একটু আমার মনটা বুঝ প্লিজ ।’
‘ ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল ছাড়া আর কিছু কি তুই শিখছিস?’
বলেই ফোন অপেন করতেই মেসেজ টুন বেজে উঠল মেসেজ অপেন করতেই যুথির কপাল কুঁচকে এলো ও পিনাক কে কল দিল।
পিনাক যেন ওর কলের অপেক্ষায় ছিল।
‘ কী হয়েছে কি সব টেক্সট করেছিস?’ রেগে বলল যুথি।
‘ আপু তুমি বাসায় আসো তাড়াতাড়ি সর্বনাশ হয়ে গেছে।’
‘ কি আর সর্বনাশ হয়েছে দাদীর মৃত্যুর খবর আমি পেয়েছি পিনাক এক কথা বলে বারবার কল করে আমায় ডিস্টার্ব করবি না। আমি তোকে বলেছি না আমার এক্সাম চলছে। দাদীর মৃত্যুতে আমি অনেক কষ্ট পেয়েছি কিন্তু এই মুহুর্তে বাসায় আসা সম্ভব না। একটু পর আমার এক্সাম এখন আর নো ডিস্টার্ব।’
বলেই যুথি কল কেটে দিল।
পিনাক হতবুদ্ধি হয়ে ফোনের দিকে তাকিয়ে আছে। আপুকে তো কিছুই বলা হলো না। সে উল্টো আমায় ভুল বুঝে কল কেটে দিল। ধুর।
পিনাক রেগে বলল,’ শুধু শুধু ধমক খেলাম। ‘
চারু বিস্মিত মুখে ধ্রুবর রুমে দাড়িয়ে আছে। ধ্রুব চারুর সামনে দাঁড়িয়ে আছে। ধ্রুব একটু পর পর চারুর দিকে তাকাচ্ছে। চারু এক দৃষ্টিতে
তাকিয়ে আছে ধ্রুবর দিকে। পলকহীন চোখে তাকিয়ে আছে। ধ্রুব থতমত খেয়ে যাচ্ছে এমন করে তাকানোর কারণ বুঝতে চাইছে। ধ্রুব নিজের দাঁড়ি চুলকে নিচ্ছে একটু পর পর একবার নিচের দিকে তাকাচ্ছে তো একবার চারুর চোখের দিকে তাকাচ্ছে।
চারুর চোখ মুখ আস্তে আস্তে শক্ত হয়ে উঠল। ধ্রুব বলল,’ কি হলো পাথর হয়ে গেলে নাকি? কিছু বলো।’
চারু তবুও কথা বলছে না চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে। ধ্রুব কি বলবে ভাবছে? চারু কে এমন শান্ত অবস্থায় দেখে কি বলবে কথা গলায় আটকে গেছে। চারু ধ্রুব কে আচমকাই ঠাস করে থাপ্পর দিয়ে উঠল। চারু থাপ্পর দিয়েই চিৎকার করে উঠল,’ আপনার লজ্জা করল না ওসব বলতে?’
চারুর কন্ঠ কাঁপছে রাগে। রাগে নাক লাল করে প্রশ্ন ছুড়ে মারল ধ্রুব কে। ধ্রুব থাপ্পর খাওয়া গালে হাত বুলিয়ে বলল,’ এখানে লজ্জার কী আছে বলোতো? আমি ধ্রুব একটা মেয়ের প্রেমে পড়ে গেলাম তার হাতের থাপ্পর খেয়ে। ঘটনা টা অবশ্য আজিব। কিন্তু এটাই তো ঘটল।’
চারু রাগে গজগজ করছে। আর ধ্রুব ওর দিকে তাকিয়ে হাসছে। ওর হাসি দেখে চারুর গা পিত্তি জ্বলে উঠছে। চারু বলল,’ আপনার মতো নির্লজ্জ আমি দুটো দেখিনাই। আমি এই মুহুর্তে এই বাসা ছেড়ে চলে যাব আপনি একদম আমার পিছনে আসার চেষ্টা করবেন না।’
আঙুল তুলে শাসিয়ে বলল চারু।
ধ্রুব বলল,’ দেখো তুমি তোমার দিক থেকে যা বলার করার করো আমিও আমার মন মর্জি যা বলে করব তুমি বললেই আমি কেন শুনব বলোতো? আমি বললেই কি এখন তুমি আমার কথা শুনবে? শুনবে না তো আমিও তোমার কথা কেন শুনতে যাব?’
চারু হাত জোড় করে বলল,’ যা খুশি করেন শুধু আমার পিছু নেওয়া বাদ দিন।’
ধ্রুব বলল,’ আমি তোমার পিছু নেওয়া ছাড়া আপাতত কিছুই করার পাচ্ছি না গো।’
রাগে কটমট করতে লাগল চারু।
#চলবে…..
#প্রেমনেশা
নন্দিনী নীলা
২৬.
মা আর সিঁথি এই বাসা অব্দি এসে উঠবে কখনোই কল্পনা করতে পারেনি চারু। হতবুদ্ধি হয়ে ও দাঁড়িয়ে আছে। এদিকে সিঁথি এতো দিন পর ধ্রুব কে পেয়ে তো সেই খুশি। সিঁথি হা করে ধ্রুবর দিকে তাকিয়ে আছে।
মায়ের ধাক্কা খেয়ে সিঁথি বিরক্তিকর কন্ঠে বলে উঠল,’ কি হয়েছে ধাক্কা দিচ্ছো কেন?’
ময়না বেগম রেগে দাঁতে দাঁত চেপে বললেন,’ এই পোলার বাসায় চারু কি করছে?’
এতোক্ষণে সিঁথির টনক নড়ল। ও দৌড়ে গেল চারুর কাছে তারপর ওর হাত খামচে ধরলো ভয়ংকর রাগে। তারপর রেগে গিয়ে বলল,’ তুই এখানে কি করছিস? ধ্রুবর বাসায় কি করছিস? পালিয়ে তুই এখানে এসে উঠেছিস কেন?’
রাগে কাঁপতে লাগল সিঁথি। দাঁতে দাঁত চেপে হিসহিসিয়ে বলছে সিঁথি। ধ্রুব যাতে ওর কথাবার্তা না শুনতে পারে সেজন্য বলছে এভাবে।
চারু বলল,’ কি হয়েছে? হাত ছাড় আমার..!’
‘ তোর জন্য আমাদের কত অপমান সহ্য করতে হয়েছে জানিস? শুধুমাত্র তোর জন্য আমরা ঘর ছাড়া হয়েছি।’
বলতে বলতে সিঁথি কান্না করে দিল। তারপর ময়না বেগমের দিকে তাকিয়ে বলল,’ কি হলো আম্মু চুপ করে আছো কেন? বলো সব।’
ময়না বেগম মেয়ের কথার টোন বুঝতে পেরে বললেন,’ তুই পালিয়ে আসায় আমাদের উপর চড়াও হয়ে আমাদের বাসা থেকে বের করে ছেড়েছে। অনেক হাতে পায়ে ধরে সামাল দিয়েছি। নিজের পেটের মেয়ে হলে কী তুই এইসব করতে পারতি আমার সাথে? কীভাবে আমাদের ওই অবস্থায় ফেলে আসতে পারলি তুই হ্যাঁ?’
দুই মা মেয়ে ন্যাকা কান্না জুড়ে দিল। চারু দুজনকে এভাবে চোখের জল নাকের জল এক করে কাঁদতে দেখে ইমোশনাল হয়ে উঠল। চারু মায়ের হাত ধরে বলল,’ আমাকে ক্ষমা করে দাও মা। আমি ওই লোকটাকে বিয়ে করতে পারব না। তুমি আমার কোন কথাই শুনতে রাজি হচ্ছিলে না তাই একপ্রকার জোর করেই আমাকে বাসা থেকে বেরিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। তোমাকে আমি নিজের আপন মা ভেবেছি সবসময়। আমার পালিয়ে আসায় তোমাদের এতো কষ্ট সহ্য করতেই হবে বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে জানলে আমি এই সিদ্ধান্ত নিতাম না। আমাকে ক্ষমা করে দাও মা।’
ময়না বেগম চোখের পানি মুছে বললেন,’ তা তুই এই বাড়িতে কি করছিস? ধ্রুবর বাসায় আসলি কীভাবে?’
চারুর গলা শুকিয়ে এলো। কি বলবে ভাবছে তখনি ধ্রুব বলে উঠল এগিয়ে এসে,’ আরে আন্টি সিঁথি তোমরা আমার বাসার ঠিকানাটা কোথায় পেলে বলোতো?’
ময়না বেগম হালকা হাসি মুখে এনে বললেন,’ আসলে বাবা একজন বলল চারু এই গলিতে দেখেছে সেই ভাবেই ওকে খুঁজতে এসেছি। এই বাসাটা যে তোমার জানলে আরেকটু পরিপাটি হয়ে আসতাম।’
বলেই তিনি শাড়ির আঁচল ঠিক করতে লাগলেন। এদিকে সিঁথি ও নিজের চুল ঠিক করছে। চোখ বড়ো বড়ো করে এদিকে ওদিকে তাকাচ্ছে আল্লাহ কতো বড়ো বাড়ি আমি এতো বড়ো বাড়ির বউ হবো খুশিতে তো ওর নাচতে ইচ্ছে করতে হাত পা তুলে।
চারু দেখল পিনাক আর পিনাকের মা কপাল কুঁচকে তাকিয়ে আছে। চোখে মুখে বিরক্তের ছাপ।
চারু দেখল সিঁথি লাজুক মুখ এদিকে ওদিকে তাকাচ্ছে। গলায় ঝুলিয়ে রাখা ওরনা দিয়ে মাথায় ঘোমটা টেনে ঘুরছে। সিঁথির হাবভাব দেখে মুখটা গম্ভীর করে ফেলল চারু এই শয়তান টার মাঝে সিঁথি কি এমন পেয়েছে যে তাকে দেখে ক্ষনে ক্ষনে লজ্জায় লাল নীল হচ্ছে অসহ্য।
ময়না বেগম আমতা আমতা করে জিজ্ঞেস করলেন,’ তা বাবা তুমি চারু মা কে কোথায় পেলে? যেদিন ও পালিয়ে গেল তুমি তো দেখেছো কি অবস্থা হয়েছিল আমার। কেমন মাঝরাতে একা একটা মহিলা আমি পাগলের মতো ওকে খুঁজেছি। সেই মেয়েটা তোমার বাড়ি আছে আর তুমি আমায় কিছুই জানালে না?’
ধ্রুব বলল,’ হঠাৎ করেই দাদীর মৃত্যুতে আমি সব কিছুই ভুলেই গিয়েছিলাম আন্টি। আপনি হয়তো জানেন না চারু আমার দাদী মিসেস রাশেদা বেগমের দেখাশোনার কাজ করতো। আমি অনেকদিন ধরেই ওকে চিনতাম। দাদীমা মারা যাওয়ার দিন ওকে আমি পেয়েছি আর ওকে দাদীমার কাছেই রেখে গিয়েছিলাম। ওকে আমি কেন রেখেছিলাম নিজের কাছে জানেন? শুধুমাত্র আপনার কাছে ফিরিয়ে দেবার জন্য কিন্তু সেদিন দাদীমা মারা যায় এদিকে আমার আম্মু অসুস্থ সব মিলিয়ে আমি বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছিলাম আপনার কাছে ওকে পৌঁছে দেওয়ার সুযোগ পায়নি আর ওকে আমি একাও ছাড়তে পারিনি কারণ ও আবার যদি পালিয়ে যায় সেই ভয়ে আমি ওকে নিজের কাছে বন্দি করে রেখেছিলাম।’
সব শুনে ময়না বেগম সন্তুষ্ট হলো। তিনি ধ্রুবর দিকে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বললেন,’ খুব ভালো করেছো বাবা। তোমায় জন্য আমার কতো কষ্ট দূর হলো তুমি ওকে না ধরলে আমি তো ওর মতো শেয়ানা মেয়েকে
পেতাম ই না। কতো হয়রানি করল ও আমায়।’
‘ আপনি চিন্তা করবেন না আন্টি আমি আছি তো। আপনার সব রকম টেনশন দূর করার জন্য। আপনি চারু কে বাসায় নিয়ে যান নিশ্চিন্তে। এবার একটু চোখে চোখে রাখবেন একবার পালিয়েছে আবার পালাবে না সেই নিশ্চয়তা তো নেই।’
চারু রাগে কটমট করছে দাঁড়িয়ে। চারুর দিকে মাথা উঁচু করে এক পলক তাকাতেই ধ্রুব থতমত খেয়ে গেল। কারণ চারু অগ্নি দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে আছে।
ধ্রুব বলল,’ আচ্ছা আপনার মেয়েকে তাহলে নিয়ে যান। দেখুন কিভাবে তাকিয়ে আছে। ওকে আপনার হাতে তুলে দিয়েছি তো তাই খুব রেগে আছে আমার উপর। না জানি কি করে বসে ওকে তাড়াতাড়ি নিয়ে চলে যান।’
ময়না বেগম বললেন,’ তুমি একদম ভয় পেয়ো না বাবা ও তোমার কিছুই করতে পারবে না। আমি ওকে পালানোর শখ মেটাবো বাসায় গিয়ে।’
ধ্রুব উত্তেজিত হয়ে বলল,’ একদম না আন্টি বকাঝকা মারামারি এসব কিন্তু একদমই করবেন না। বিষ খেয়ে মরে গেলে কি হবে? রাগ কিন্তু অনেক খারাপ। ও নিজের কোন ক্ষতি করলে কিন্তু আপনি দায়ী হবেন। তাই কিছুই বলার দরকার নেই ওকে শুধু চোখে চোখে রাখবেন যেন আর পালাতে না পারে। এবার পালালে কিন্তু আমিও খুঁজে পাব না।’
‘ কেন তুমিও পাবে না?’ অবাক কন্ঠে বললেন ময়না
বেগম।
ধ্রুব বলল,’ আমি কীভাবে পাব বলেন আন্টি? ওতো সচেতন হয়ে গেছে নেক্সট টাইম আমার থেকেও লুকিয়ে থাকবে।’
‘ হ্যাঁ একদম ঠিক কথা বলেছো। আচ্ছা বাবা আমি আসি। তুমি কিন্তু ঘনঘন বাসায় যাতায়াত করবে।’
‘ সেটা আপনার বলতে হবে না। আমার যাওয়ার জিনিস আপনাকে দিয়ে দিলাম তার জন্য তো আমাকে যেতেই হবে।’
ধ্রুব চারুর চোখের দিকে চেয়ে কথাটা বলল। চারু রাগে গজগজ করছে। মন চাচ্ছে ওকে ঘুসি মেরে ওর নাক লাল করে দিতে। ময়না বেগম ভাবলেন সিঁথির জন্য কথাটা বলেছে। সিঁথি তো একটু কথাটা শুনে দৌড়ে এসে দাঁড়িয়ে বলল,’ ধ্রুব তুমি আমায় মিস করেছো?’
ধ্রুব বিনা বাক্যে বলল,’ অবশ্যই।’
সিঁথি কে আর পায় কে। ও তো খুশিতে বাকবাকুম।
চারু রাগী চোখে তাকিয়ে ছিল ধ্রুবর দিকে। এতো শয়তান লোকটা কীভাবে মাকে বানিয়ে বানিয়ে মিথ্যা কথা বলতেছে। চারু কে নিয়ে সিঁথি আর ময়না বেগম বাসা থেকে বেরিয়ে যেতেই পিনাকের মা ধ্রুব সামনে এসে দাঁড়াল কপাল কুঁচকে।
‘ এসব কি সার্কাস চলছে?’
ধ্রুব বলল,’ তুমি বুঝবে না চাচী।’
‘ তুমি যুথি কে ভালোবাসো না? ওকে বিয়ে করবে না?’
‘ চাচী তুমি কি মেয়েকে সতীনের ঘর করাতে পাঠাবে?’
‘ মানে?’ রেগে উঠলেন তিনি।
‘ আমি তো চারুকে ভালোবাসি। বিয়ে ও করব। এখন তুমি যদি যুথির সাথে বিয়েটা করতে বলো আমি তোমার মন রক্ষায় করতেই পারি কিন্তু চারু কে ছাড়তে পারব না।’
রাগে চিৎকার করে উঠলেন পিনাকের মা।
‘ কি বলছো! ভেবে বলছো তো?’
ধ্রুব হেঁসে উঠল। চাচীর কাঁধ ধরে বলল,’ উফফ চাচী এতো টেনশন করছো কেন যুথি দেখতে শুনতে ভালই। ওকে তুমি ভালো জায়গায় বিয়ে দিতে পারবে। আমাকে নিয়ে অযথা টেনশন করো না। পারলে একটু দোয়া করো যাতে চারু কে আমি খুব শ্রীঘ্রই এই বাসায় পার্মানেন্ট ভাবে নিয়ে আসতে পারি।’
বলেই ধ্রুব চলে গেল ওর যাওয়ার দিকে রাগী চোখে চেয়ে রইল পিনাকের মা। কত বড়ো ফাজিল আমার কাছে ওই ফকিন্নীর বাচ্ছাকে বিয়ে করার আশীর্বাদ আশা করে।
পিনাকের মা দাঁড়িয়ে রাগে ফুসফুস করছে।
#চলবে……
#প্রেমনেশা
নন্দিনী নীলা
২৭.
চারু কে নিয়ে বাসায় আসতেই ওর সামনে দাঁড়িয়ে যায় চোখমুখ শক্ত করে সিঁথি এবং বলে উঠে,
‘ তুই যে বাসায় কাজ করতি ওই বাসাটা ধ্রুবর আগে বলিস নাই কেন?’
চারু কপাল কুঁচকে বলল,’ তোরা কি আমার কাছে কখনো জানতে চাইছিস?’
‘ ন্যাকা সাজবি না। ধ্রুবর প্রতি আমি দূর্বল তুই কি বুঝিস নাই? ইচ্ছে করে লুকিয়ে গেছিস আমি জানি।’ রেগে বলল সিঁথি।
থেমে আবার বলল,’ তুই কোন সাহসে বাড়ি থেকে পালিয়েছিস? কি ভেবেছিলি আমরা তোকে খোঁজে পাব না?’ রাগে গজগজ করে বলল সিঁথি।
চারু চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে। সিঁথি মায়ের দিকে ফিরে বলল,’ চারু কে তুমি সাবধান করে দাও আম্মু ওর হাবভাব আমার কিন্তু ভালো লাগছে না। ও নিশ্চয়ই আমার ধ্রুবর উপর নজর দিয়েছে।’
বলতে বলতে চারুর দিকে চেয়ে বলল,’ ধ্রুব নিশ্চয়ই তোকে বাড়িতে নেওয়ায় তুই ভেবেছিলি ওতোকে পছন্দ করে তাই না?’
চারু কপট রাগী স্বরে বলল,’ আমি কিন্তু তোর বড়ো বোন তাই কথাবার্তা বুঝেশুনে বল।’
ময়না বেগম সিঁথি কে রুমে পাঠিয়ে দিয়ে বললেন,’চারু যা করছিস একদম ঠিক করিস নি। আমি তোকে নিজের মেয়ের মতোই ভালোবাসি তাই সব ভুলে তোকে বাড়ি নিয়ে এসেছি। আর এমন কাজ করিস না।’
চারু বিস্মিত নয়নে তাকাল আছে ময়না বেগমের দিকে। কারণ তার এতো মিষ্টি কথা চারুর বোধগম্য হচ্ছে না।
চারু কপাল কুঁচকে বিস্মিত কন্ঠে বলল,’ তুমি আমাকে নিজের মেয়ের মতো দেখো?’
চারুর কথায় ময়না বেগম থতমত খেয়ে বললেন,’ কি বলতে চাস তুই আমি তোকে ভালোবাসি না?’
চারুর মুখ দিয়ে তাচ্ছিল্য হাঁসি বেরিয়ে এলো। ময়না বেগম তার উপর কেমন অত্যাচার নির্যাতন করেছেন সবসময় সে আজ হঠাৎ এমন ভালোবাসার কথা বলায় চারুর মুখে হাসি ছাড়া আর কিছুই এলো না।
‘ তুমি কি ভেবে এসব বলছো আমি জানি না মা। কিন্তু তুমি আমায় মেয়ে না ভাবলেও আমি তোমায় সবসময় মায়ের মতোই ভালোবেসেছি, সম্মান করেছি।’
ময়না বেগমের দিকে চেয়ে চারু বলল,’ তোমার মনে কী চলছে আমি বুঝতে পারছি না কিন্তু তুমি আমাকে মতলব ছাড়া বাড়ি আনো নি আমি জানি।’
ময়না বেগম ঘামতে লাগলেন চারুর কথায়।
‘ কি বলতে চাস তুই?’
‘ আমাকে জোর করে বিয়ে দেওয়ার চিন্তাভাবনা বন্ধ করো এবার। আমি চুপ করে তোমার সব কথা মাথা নিচু করে শুনি বলে যা খুশি তাই করবে আমি কিছুই বলব না ভেবো না।’
ময়না বেগম রেগে কঠিন কিছু কথা বলতে চেয়েও থেমে গেল।
চারু একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে নিজের রুমে চলে গেলো। মায়ের মধ্যে কোন ঘাপলা আছে চারু নিশ্চিত হয়ে গেছে কিন্তু সেটা ধরতে পারছে না। কি ছক কষছে আবার মনে মনে আল্লাহ পাক জানেন। বিয়ের ভূত মাথা থেকে গেলেই হলো। চারু দুরুদুরু বুকে রুমে এসে বসলো। ধ্রুব এভাবে ওকে আবার ময়না বেগমের হাতে তুলে দিতে ওর পিছু নিয়েছিল বিশ্বাস করতে পারছে না। রাগে কাঁপতে লাগল চারু। লোকটা বারবার ওর বিশ্বাস নড়বড়ে করে দিচ্ছে।
চারু দুচোখের পাতা এক করতে পারছে না ভয়ে ওর হাত-পা কাঁপছে। সকাল হতেই ওর জন্য কী অপেক্ষা করছে সেই ভয়েই ওর হৃদপিন্ড লাফাচ্ছে। চারু ঘুমের মধ্যে ও উঠে বসে আছে কি করবে সেই চিন্তায় অস্থির হয়ে উঠছে।
দুশ্চিন্তা করতে করতে চারু ঘুমিয়ে পড়ল। সকালে দরজার খটখটে শব্দে লাফিয়ে উঠল চারু। মাথা সোজা করতে গিয়ে খেয়াল করল ও মাথা সোজা করতে পারছে না। কাঁধে ব্যথা জমে আছে। কাঁধ ধরে চারু মালিশ করতে লাগল। দুশ্চিন্তায় চারু ঠিক ভাবে বিছানায় না শুয়েই ঘুমিয়ে পড়েছিল। শোয়া গন্ডগোল হয়ে কাঁধে চাপ ধরে ব্যথা হয়ে আছে।
ব্যথায় চোখমুখ নীল হয়ে উঠল চারুর। দরজা খোলার বদলে নিজের কাঁধে অনবরত মালিশ করতে লাগল। ঘাড় সোজা করতেই পারছে না কোনভাবেই। চোখের কোনে পানি জমে উঠল। চারু দেখল দরজার বাইরে থেকে ময়না বেগম হুংকার দিয়ে উঠছেন। বাইরের চিৎকার চেঁচামেচিতে চারু উঠে দাঁড়াল ঘাড় বাঁকা করেই। তারপর দরজার ছিটকিনি খুলে দিতেই দেখতে পেল ময়না বেগমের সাথে ধ্রুব ও দাঁড়িয়ে আছে।
ধ্রুবর চোখে মুখে চিন্তার আভাস ফুটে উঠেছে। ওকে দরজা খুলতে দেখেই স্বস্তি পেল যেন। চারু কপাল কুঁচকে দুজনের দিকে তাকিয়ে বলল,’ কী হয়েছে?’
ময়না বেগম রেগে বললেন,’ বেলা বারোটা বেজে গেল নবাবজাদীর এখনো ঘুম হলো না। কখন থিকা দরজা ধাক্কাধাক্কি করছি দরজা খুলছিস না কেন?’
রেগে চিৎকার করে উঠলেন তিনি।
চারুর মাঝে চিৎকার শুনে ও হেলেদুল নেই ও দরজা খুলে আবার রুমের ভেতরে চলে গেল। কাঁধ ব্যথায় ও দাঁড়িয়ে থাকতে পারছে না।
ময়না বেগম চারুর নিস্তব্ধতা দেখে বললেন,’ কেমন ঘাড়ত্যাড়ামি করে চলে গেল।’
ধ্রুব ময়না বেগমের দিকে রাগী দৃষ্টি নিক্ষেপ করল। ধ্রুবর রাগ দেখে ময়না বেগম কপাল কুঁচকে নিল। ধ্রুব রুমে প্রবেশ করে বলল,’ তোমার কাঁধে কী হয়েছে কাঁধ বাঁকা করে রেখেছো কেন?’
চিন্তিত মুখে প্রশ্ন করল ধ্রুব। ধ্রুবর কথায় বিরক্তিকর চোখে তাকাল চারু তারপর বলল,’ শখ করে বাঁকা করে রেখেছি।’
ধ্রুব কপাল কুঁচকে বিস্মিত কন্ঠে বলল,’ শখ করে?’
চারু বলল,’ হ্যাঁ।’
ধ্রুব বলল,’ মিথ্যা কথা বলবে না। সত্যি কথা বলো তোমার মুখ দেখেই বুঝা যাচ্ছে তুমি ব্যথায় কঁকিয়ে যাচ্ছ। কি হয়েছে কাঁধে?’
‘ আপনাকে বলতে চাই না। আমার সামনে থেকে যান।’ রাগী গলায় বলল চারু।
ধ্রুব বলল,’ চারু অযথা জেদ করো না। বলো আমায়। আমি তোমায় হেল্প করতে পারব।’
‘ আপনার হেল্প আমার লাগবে না। আপনি আমার সামনে থেকে যান আপনার মুখ আমার দেখতে ইচ্ছে করছে না বাইরে যান। এই বাসার অনেকেই আপনাকে দেখার জন্য নাচতেছে। আমি বললেই তো আর এই বাসায় আসা আপনার বন্ধ করতে পারব না। কারণ এই অধিকার আমার নিজের নেই। কিন্তু এই রুমটা আমার তাই এই রুম থেকে বিদায় হোন।’
হাত জোর করে বলল চারু। ধ্রুব বাইরে চলে গেল বাইরে এসে দাড়াতেই সিঁথি আর ময়না বেগমের কথা শুনতে পেল।
সিঁথি বলছে,’ মা তাড়াতাড়ি রাফসান ভাইকে আসতে বলো। পারলে আজকেই বিয়েটা দিয়ে দাও
চারু কে কিন্তু বিশ্বাস নাই। ও আবার পালাতে পারে। একবার পালানোর সাহস করেছে ওর এখন পাখা গজিয়েছে ও আবার পালাবে। বেশি দেরি করা যাবে না।’
ময়না বেগম চিবিয়ে চিবিয়ে বললেন,’ আমি তো জানি ও পালাবে কিন্তু এইবার সেই সুযোগ ও পাবে না। আমি রাফসান কে কল করে দিয়েছে আজকে বিকেলেই বিয়ে। ও কীভাবে পালায় আমিও দেখব।’
রাগে হাত মুষ্টিবদ্ধ হয়ে গেল ধ্রুবর। ধ্রুব রাগে লাল হয়ে উঠল মা মেয়ের পরিকল্পনা শুনে। এতো কিছু ঘটার পর ধ্রুব ভেবেছিল এরা বিয়ের ভূত মাথা থেকে নামিয়ে ফেলেছে। ধ্রুব ভেবেছিল চারু একবার ওর ভালোবাসা এক্সেপ্ট করে নিলে ও সবাইকে জানাবে কিন্তু এই মহিলা তো ওকে কোন সুযোগ ই দিচ্ছে না বারবার ওর কাজে ব্যাঘাত দিচ্ছে।
ময়না বেগম ও সিঁথি হঠাৎ ধ্রুবকে নিজেদের আলাপ এ উপস্থিত হতে দেখে ভরকে গেল। সিঁথি কথা ঘুরিয়ে বলল,’ তুমি এখানে কি করছো?’
ধ্রুব বলল,’ এখানে কিসের আলাপ হচ্ছে?’
ময়না বেগম বললেন,’ তুমি তো আমাদের আপন মানুষই। তোমার কাছে আমি কিছুই লুকাবো না। চারুর যেখানে বিয়ে ঠিক করেছিলাম তারা আজকে আসবে। বিকেলে তারপর বিয়েটা হয়ত আজকেই হয়ে যাবে তুমি তো ঘরের মানুষ ই হাতে হাতে একটু কাজ করে দিও বাবা। ঘরে একটা পুরুষ মানুষ নাই তুমি আমাদের সাথে থাকলে খুব ভালো লাগবে।’
ময়না বেগম কথা শেষ করতেই ধ্রুব বলল,’ আপনি এখনো বিয়েটা ভেঙ্গে দেন নাই।’
ময়না বেগম বললেন,’ কী যে কও না। বিয়ে ভাঙবো কেন? কত বড়োলোক জানো বিয়েটা ঠিক হতেই আমাকে দুই লাখ টাকা দিয়েছে শেষ হলে বলেছে ১০ লাখ দিবে। এই বিয়েতো ভাঙা অসম্ভব যেভাবেই হোক বিয়েটা হতেই হবে। নয়তো যে দুই লাখ অগ্রিম দিয়েছে তাও ফেরত দেওয়া লাগবে সেগুলো আমি কীভাবে দেব সব তো ভেঙে ফেলেছি সিঁথির জন্য কানের দুল ও চেইন কিনে। মেয়েটাকে বাকি টাকা দিয়ে বিয়ে দিতে হবে আমি একলা মানুষ কীভাবে মেয়েকে বিয়ে দেব সিঁথির বাপ তো মরে গেছে সব ঝামেলা আমার কাঁধে ফেলে। বড়ো ঝামেলা ওই চারু কে ফেলে। ওকে বিয়ে দিয়ে যদি কিছু টাকা পাই আমরা তো সুখি থাকব।’
ধ্রুব চেয়াল শক্ত হয়ে গেল। রাগে ক্ষোভে মন চাচ্ছে ময়না বেগম কে কড়া কয়টা কথা শুনাতে। কিন্তু নিজের রাগকে অনেক কষ্ট এদম করে বলল,’ আপনি টাকার জন্য বিয়েটা দিচ্ছেন?’
ময়না বেগম বললেন,’ কী যে বলো না টাকার বিনিময়ে দেব কেন? আমি তো চারুর ভালোর জন্য বিয়েটা দিচ্ছি কত ধনী বাড়ির বউ হবে খালি সুখ আর সুখ।’
‘ তাই নাকি শুনেছিলাম লোকটার আগেও দুইটা বউ আছে। বয়স ও নাকি অনেক এমন বাড়ির বউ হলে সুখ পাবে কোথায়?’ দাঁতে দাঁত চেপে বলল ধ্রুব।
ময়না বেগম বললেন,’ ধনী মানুষের দুই তিনটা বউ থাকেই এটা কোন সমস্যা না। তার কী বউ খাওয়ানোর পয়সার অভাব ওর মতো মেয়ে বিয়ে করবে পছন্দ করছে এইতো বেশি। এতো ফুটানি না করে বিয়ে করলে এতো ঝামেলা হয় না।’
ধ্রুব বলল,’ ঠিকি বলেছেন ধনী লোকের একটুআধটু খুঁত কিছুই না। বিয়েটা আসলেই হওয়া উচিত আমি আপনার সাথে আছি আন্টি।’
ধ্রুবর কথায় তো ময়না বেগমের বুকের উপর থেকে পাথর নেমে গেল। ও সিঁথির দিকে তাকিয়ে বললেন,’ দেখিস কত বুদ্ধিমান ছেলে।’
সিঁথি নিজেও খুশি ও আরো ভয়ে ছিল তার কূটনৈতিক কাজে আবার ধ্রুব রাগ না করে বসে।
কিন্তু ধ্রুব এতো সহজে মেনে নিবে কল্পনা ও করিনি।
#চলবে……