প্রেমনেশা পর্ব-৪৬+৪৭+৪৮

0
1

#প্রেমনেশা
#নন্দিনী_নীলা
৪৬.

চারুর সামনে এসে বসল ধ্রুব। চারু আড়চোখে এক পলক চেয়ে তারপর উঠে বসল। স্যালাইন খুলে দিয়ে গেছে নার্স। চারু উঠে বসতেই ফট করে ধ্রুব চারুর হাত আঁকড়ে ধরল। চারু রাগী চোখে তাকাল ধ্রুবর দিকে। ধ্রুব চারুর চোখে চোখ রেখে বলল,’ চারু এসব কীভাবে হয়ে গেল?’
চারু হাত ছাড়িয়ে নিতে শুরু করবে প্রস্তুতি নিচ্ছিল তখনই ধ্রুবর কথায় কপাল কুঁচকে বলে,’ কী হয়েছে?’
ধ্রুব বলল,’ চারু তুমি প্রেগন্যান্ট।’
চারু অবিশ্বাস্য চোখে ধ্রুবর দিকে তাকিয়ে আছে। ঢোক গিলে জড়ানো গলায় বলল,’ কি‌ বলছেন?’
‘ ঠিকি বলছি চারু। আমি একদম এসব এক্সপেক্ট করিনি।’
চারুর সমস্ত রাগ চোখের জলে রুপান্তরিত হলো। ধ্রুব বুঝতে পারছে না এটা কি আনন্দের অশ্রু নাকি অন্য কিছু। ধ্রুব ভ্রু কুঁচকে চেয়ে আছে চারুর ভাবগতি বুঝার চেষ্টা করছে। চারু আচমকাই ধ্রুবর বুকে ঝাঁপিয়ে পড়ল। তারপর ফুপাতে লাগল। ধ্রুবর বুক কাঁপছে।
ধ্রুব চারুর মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,’ চারু কান্না থামাও প্লিজ। আমি ও তোমার মতোই শক হয়েছি। আমরা দু’জন তো এখনি বেবির জন্য প্রস্তুত ছিলাম না তাই না। এজন্য আমি ডক্টরের সাথে এবোরেশনের কথা‌ বলেই এসেছি। এখন তোমার কান্না দেখে আমি নিশ্চিত তুমি ও এখনি বেবি চাও না। আমি নিজেও চাই না তাই এভাবে কান্না করো না আমি তোমার পাশে আছি।’
চারুর কান্না চট করেই থেমে গেল ধ্রুব চারু কে কান্না বন্ধ করতে দেখে স্বস্তি নিল। চারু ঝড়ের বেগে ধ্রুবর বুকে থেকে উঠে পড়ল। ধ্রুব খেয়াল করল চারুর চোখে মুখে ফের রাগ ফুটে উঠেছে।
ধ্রুব অবুঝ কন্ঠে বলল,’ চারু আমিও তো তোমার পক্ষেই আছি আবার রেগে যাচ্ছ কেন?’
চারু সজোরে থাপ্পর মেরে দিল ধ্রুবর গালে। ধ্রুব থাপ্পর খেয়ে কিংকিতৃব্যবিমূঢ় হয়ে গেল। চারু রেগে বলল,’ আপনি আমার সামনে থেকে যান আমার আপনার মুখ দেখতে ইচ্ছে করছে না।’
ধ্রুব থাপ্পর খেয়ে কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলল। চারু পাথর হয়ে সেখানে বসে আছে। টপটপ করে ওর চোখের অশ্রু ঝরছে। ধ্রুব কি বলবে ভেবে পাচ্ছেনা চারু ওর গালে থাপ্পর দিয়ে ওকে হতভম্ব করে দিয়েছে।
রুমের বাইরে মায়ের আওয়াজ পেয়ে চকিতে তাকাল ধ্রুব। তারপর উঠে দাঁড়াল ধ্রুব কে উঠে দাঁড়াতে দেখে বিস্মিত চোখে তাকিয়ে র‌ইল চারু‌। সত্যি সত্যি ধ্রুব রুম থেকে বেরিয়ে গেল। চারু এটা দেখে ফুঁপিয়ে উঠল। এমন একটা আনন্দ এর খবর অথচ ধ্রুব খুশি না। সে কীভাবে এসব ভাবলো প্রথম এ ওকে এখন ওদের অনাগত সন্তান কেও চাচ্ছে না।
ওকেও স্বীকৃতি দেয়নি এখন সন্তান কেও দিতে চাচ্ছে না। চারু মুখ হাঁটুতে গুঁজে ফুঁপিয়ে কাঁদছে। এখন ও কোথায় যাবে কি করবে? এতো অসহায় লাগছে নিজের কাছে নিজেকে। চারু ধ্রুবর কথা খুব আঘাত পেয়েছে ও কোনভাবেই নিজেকে সামাল নিতে পারছে না। ওর বুকের ভেতরটা জ্বলেপুড়ে যাচ্ছে। ধ্রুব ওকে আর একটা কথাও বলল না ওকে মানানোর জন্য চেষ্টা ও করল না। তারমানে ওর গুরুত্ব নেই আর ধ্রুবর কাছে।

চারু কাঁদতে কাঁদতেই ঘুমিয়ে পড়ল যখন চারুর ঘুম ভাঙল চারু নিজেকে ধ্রুবর রুমের বিছানায় শোয়া অবস্থায় পেল। রাত তখন কয়টা চারু জানেনা।
চারু চোখ কচলে উঠে বসল রুমে ড্রিম লাইটের আলো‌ জ্বলছে। চারু তাতেই বুঝতে পারল এটা ধ্রুবর রুম ও এখানে কি করছে? চারু রুমে তন্নতন্ন করে খুঁজেও ধ্রুব কে পেল না। বাইরে চিৎকার চেঁচামেচির‌ আওয়াজ আসছে। চারু রুমে থেকে বের হতেও পারছে না। কিন্তু না বেরিয়ে ও থাকতে পারছে না। চারু নিচে নেমে দেখল ধ্রুবর বাবা, চাচা এবং বাসায় সবাই উপস্থিত সেখানে থেকে আত্মীয় স্বজন নাই তারা হয়ত ঘুমে এক কোনে বসে কাঁদছে যুথি যার গায়ে এখনও সেই হলুদের গর্জিয়াস লুক। চারু কপাল কুঁচকে এদিকে ওদিকে তাকিয়ে আছে। যুথির পাশে বসে আছে যুথির মা। চারু কে দেখেই তিনি চিৎকার করে উঠলেন,’ ওই যে আসছে কাল নাগিনী আমার মেয়ের সুখ কেড়ে নিতে।’
যুথি ছলছল চোখে তাকাল চারুর দিকে। চারু মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। ধ্রুব ও চুপ করেই বসে আছে। ওর বাবা আর চাচা কথা বলছে। ধ্রুবর মা রেগে বসে আছে। চারু ভেবেছিল ধ্রুবর বাবা খুব রাগ‌ করবেন কিন্তু তার থেকে ধ্রুব মা বেশি রাগারাগী করছে।‌ ধ্রুবর বাবা কোনভাবে এসব সামাল দিতে চাইছে। চারু চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে আর ধ্রুবর বাবা চাচা মিলে আগামীকাল ধ্রুব আর যুথির জায়গায় ধ্রুব আর চারুর বিয়ের কথা বলছেন। চারু বিস্মিত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এদিকে ধ্রুব সোফায় বসে আছে আয়েশ করে। বাবা চাচার সিদ্ধান্ত শুনে তাকাল চারুর দিকে। চারুর দিকে তাকিয়ে ভ্রু নাচিয়ে জিজ্ঞেস করে কেমন দিলাম। তার চোখে মুখে খুশির আভাস ফুটে উঠছে।

যুথির মা তখন চিৎকার করে উঠল,’ দেখলে তো আপা আগে বলেছিলাম আমি এই মেয়ে কে বাসা থেকে তাড়িয়ে দাও। এই মেয়ের থাকলে একটা না একটা অঘটন ঘটিয়ে ছাড়বে শুনো নাই আমার কথা দেখো এখন এই মেয়ে এই বাড়ির বউ হয়ে গেল।’
চারু যুথির মায়ের কথা হজম করছে যুথি উঠে দাঁড়িয়ে বলল,’ সবাই ওদের দেখছেন ওদের জন্য সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন আমি কি বানের জলে ভেসে এসেছি আমার কথা কেউ ভাবছেন না। আমার কি হবে? সবাই জানে আগামীকাল আমার বিয়ে এখন এসে যদি দেখে ব‌উ আমি না অন্য একজন তখন কি হবে? সবাইকে আমি ফেস করব কীভাবে?’
যুথি থামতেই ধ্রুবর মা বলে উঠলেন,’ আত্মীয় স্বজন দের সামনে আমরা কীভাবে মুখ দেখাব? বাড়ির কাজের মেয়ের সাথেই নিজের ছেলের বিয়ে দিচ্ছি? সবাই তো ছি ছি করবে! আমি এসব মানতে পারছি না।’
ধ্রুব উঠে দাঁড়াল,’ আম্মু আমি চারু কে ভালোবাসি। ভালোবেসেই এই বিয়ে আমি করেছি। তাই কে কি ভাবলো তা না ভেবে আমার কথা ভাবো।’
বলেই ধ্রুব চারু হাত ধরল এগিয়ে এসে। চারু আলগাছে হাত ছাড়িয়ে নিল। ধ্রুব অসহায় মুখে তাকাল চারুর দিকে। চারু কে জোর করেই ধ্রুব রুমে নিয়ে এলো।
চারু রেগে বলল,’ আমাকে এখানে নিয়ে এলেন কেন?’
‘ সবাই সব জেনে গেছে এখন আর লুকোচুরি করব কেন?’
চারু বলল,’ আমি আপনার সাথে থাকতে চাই না‌।’
ধ্রুব বিস্মিত চোখে চেয়ে বলল,’ কি বলছো তুমি?’
‘ ঠিক বলছি আপনি বেবি চান না তাই না লাগবে না আপনাকে আমি এখনি বাসা থেকে চলে যাব। অনেক আপনার ইশারায় নেচেছি আর না।’
ধ্রুব বিরক্তিকর কন্ঠে বলল,’ ঊফ চারু আমার কথা বুঝার চেষ্টা করো। আমার কথা শোনো।’
‘ আমি আপনার কোন কথাই শুনতে ও বুঝতে চাই না। আপনার মতো একজন কে ভালোবাসি ভাবতেই আমার লজ্জা লাগছে কীভাবে আপনি বললেন আপনি এখন বাচ্চা চান না। ডক্টরের‌ সাথে আবার কথাও বলে ফেলেছেন আপনি এবোরেশন করতে চান। আপনি আমার ভাবনার থেকেও নিকৃষ্টতার পরিচয় দিলেন। হ্যাঁ এটা ঠিক আমরা প্রস্তুত ছিলাম না। তাই বলে আপনি তাকে প্রকাশ পাওয়ার পর ই মেরে ফেলতে চাইবেন? আপনার এসব ভাবতে একটুও বুক কেঁপে উঠেনি?’
বলেই চারু ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগল। ধ্রুব ওকে টেনে বিছানায় বসিয়ে ওকে জোর করেই জড়িয়ে ধরে বলল,’ তুমি ইমোশনাল হয়ে ভাবছো তাই বুঝতে পারছ না। ঠান্ডা মাথায় ভাবতে বসলে তুমি ও আমার সিদ্ধান্ত এ খুশিই হবে এসব আমি নিজের জন্য বলিনি আমি তোমার কথা ভেবেই বলেছি। তবুও তুমি কষ্ট পেয়ে থাকলে আই এ্যাম সরি। দেখো আব্বু রাজি হয়ে গেছে আর কালকে আমাদের দ্বিতীয় বার বিয়ে তাই তোমার উচিত নয় এসব ভেবে সময়টা নষ্ট করে দেওয়া।’
চারু ছটপট করছে ছাড়া পেতে ধ্রুব শক্ত হাতে ধরে রাখে বুকের মাঝে চারু কে।

সকালে চারু গেস্ট রুম থেকে বের হতেই ওর সামনে এসে দাঁড়ায় সিঁথি। সাতসকালে সিঁথি এখানে কি করছে চমকে উঠে চারু।
চোখ বড়ো‌ বড়ো করে সিঁথির দিকে তাকিয়ে আছে চারু সিঁথি চারু কে জড়িয়ে ধরে বলে,’ আপা কেমন আছো?’
সিঁথির কথা শুনে চারু আরো আশ্চর্য হয়। ও কি স্বপ্ন দেখছে নাকি সিঁথি ওকে আপা বলছে? হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে আছে চারু সিঁথি ওকে ছেড়ে ওর রুমে ঢুকে বিছানায় পা ঝুলিয়ে বসে পড়ে।
রাতে ধ্রুবর মা চারু কে গেস্ট রুমে ঘুমাতে বলেছে। তাই ধ্রুব চারু কে ছেড়েছিল। কিন্তু সকালে উঠে চারুর সামনে এভাবে সিঁথি এসে দাঁড়াবে স্বপ্নেও ভাবেনি চারু।
চারু থমকানো কন্ঠে জিজ্ঞেস করে,’ তুই এখানে কি করছিস?’
সিঁথি দাঁত কেলিয়ে বলল,’ আমার একমাত্র বড়ো‌ বোনের‌ বিয়ে আর আমি আসব না? মা ও তো এসেছে নিচে তোমার শাশুড়ির সাথে কথা গল্প করছে।’
‘ তোদের এই খবর দিয়েছে কে?’
‘ কে আবার দিবে তোমার বর দিয়েছে। তাইতো সকাল সকাল আমি আর মা উঠেই চলে এসেছি।’
চারু সিঁথি কে নিজের রুমে রেখেই ধ্রুব কে খুঁজতে গেল। মা আর সিঁথি কে কেন ডাকা হয়েছে এর কৈফিয়ত তো ধ্রুব কে দিতেই হবে।
চারু ধ্রুবর রুমে এসে দেখল ধ্রুব তখনো মরার মতো ঘুমাচ্ছে। চারুর রাগ উঠে গেল চারু ওয়াশরুম থেকে মগে করে পানি এনে ধ্রুবর মুখে পানি ঠেলে দিল। ধ্রুব ঘুমের মধ্যে পানির ঝাপটা পেয়ে চিৎকার করে উঠল,’ ছাদ ভেঙে কি আমার মুখে পানি পরতে লাগল?’
চারু কর্কশ কন্ঠে বলল,’ উঠুন।’
ধ্রুব ধরফরিয়ে উঠে বসল চারুর আওয়াজ পেয়ে।
উঠেই বলল,’ হোয়াট দ্যা…’
চারু কিছু বলতে যাবে ধ্রুব লাফ দিয়ে বিছানা থেকে উঠে দাঁড়াল। তারপর বিরক্তিকর কন্ঠে বলল,’ এসব কি বাচ্চামো চারু? তুমি আমায় ভিজিয়ে দিলে কেন?’
‘ আপনি মা আর সিঁথিকে ডেকে এনেছেন কি কারণে?’ রাগী কন্ঠে বলল চারু।
ধ্রুব চারুর ওড়না টেনে মুখ মুছতে চাইলে চারু ওড়না টেনে নিল। ধ্রুব জোর করেই চারুর ওড়নার কোনা টেনে মুখ মুছে বলল,’ আব্বু জোর করছিল তোমার পরিবার কে আনতে এজন্য বাধ্য হয়েই তাদের খবর দিয়ে আনতে হয়েছে। আচ্ছা শালিকা আর শাশুড়ি কি চলে এসেছে?’
চারু দাঁত কিড়মিড় করছে দাঁড়িয়ে ধ্রুব মুখ মুছে ওভাবেই নিজের শাশুড়ি আর শালিকার সাথে দেখা করতে বেরিয়ে গেল। ধ্রুবর কান্ডকারখানায় চারু অতিষ্ঠ হয়ে ওর পিছু নিল। এমন ভাব করছে যেন শাশুড়ি বলতে অজ্ঞান জামাই সে। ধ্রুব আলগা আদ্যিখেতায় গা জ্বলে উঠল চারুর। চারু মুখটা গম্ভীর করে ধ্রুব আর ময়না বেগম এর আহ্লাদ দেখছে। চারু চোখ কটমট করে দুজনের দিকে তাকিয়ে আছে। ধ্রুবর চাচি এসে ফোড়ন কাটলেন,’ মেয়ের থেকে মেয়ের জামাইয়ের সাথে বেশি দরদ ভালোবাসা দেখা যাচ্ছে। তা বেয়াইন আপনার মেয়ের সাথেও একটু কথা বলুন।’
ময়না বেগম তার কথায় এগিয়ে এসে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে চারু কে বললেন,’ চারু আমার সোনা মা কেমন আছিস। কতদিন তোকে দেখি না সেই যে জামাই বাবাজির সাথে এলি আর এই মাকে দেখতে গেলি না।’
চারু ময়না বেগমের বাহুবন্ধনে থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে শক্ত গলায় বলল,’ ভালোই আছি তোমাদের থেকে দূরে এসে।’
ময়না বেগম থতমত খেয়ে মুখে মেকি হাসি এনে বললেন,’ আহারে মেয়েটা আমার রাগ করেছে।’ বলেই চারুর গাল টেনে দিলেন।
চারু দাঁতে দাঁত চেপে আলগা মহব্বত দেখছে।
#চলবে….

#প্রেমনেশা
নন্দিনী নীলা
৪৭.

যুথির জায়গায় চারু কে ব‌উ বেশে স্টেজে ধ্রুবর পাশে বসে থাকতে দেখে অধিকাংশ অতিথি অবাক। কি হচ্ছে তারা কিছুই বুঝতে পারছে না। একদল অবাক হচ্ছে একদল ব‌উ কে সেভাবে জানে না এজন্য তারা স্টেজে গিয়ে চারু কে অভিনন্দন জানাচ্ছে সাথে সেলফি নিচ্ছে। ধ্রুব একবার ও স্টেজে চারু কে ফেলে উঠে নিচে আসেনি এজন্য ওর বন্ধুরা ওকে টিজ করছে। এদিকে যুথির ফ্রেন্ড রা এসে এই অবস্থা দেখে যুথি কে খুঁজতে লেগে পড়ল। ওরা বান্ধবীর বিয়ে খেতে এসে অপরিচিত ব‌উ দেখে চোখ কপালে তুলে ফেলেছে। যুথি কে কল করে বাসার ভেতরে যুথির রুমে এসে দেখে যুথি কাঁদতে কাঁদতে চোখ মুখ লাল করে বিছানায় এলোমেলো হয়ে শুয়ে আছে।
ওরা আসতেই যুথি ফুঁপিয়ে উঠল। যুথিকে জড়িয়ে ধরে একজন বান্ধবী জিজ্ঞেস করল,’ এসব কি তামাশা হচ্ছে যুথি? আজ তো তোর আর ধ্রুব ভাইয়ার বিয়ে হ‌ওয়ার কথা ছিল। তাহলে ওই মেয়েটা ওখানে স্টেজে বসে আছে কেন?’
যুথি বলল,’ আমার সব শেষ হয়ে গেল। ওই রাক্ষুসী আমার সব কেড়ে নিল। ধ্রুব কে আমি সেই ছোটো বেলা থেকে ভালোবাসি। আমি কতটা চাই ধ্রুব কে তোরা তো কাছ থেকে দেখেছিস। হঠাৎ ওই মেয়েটা এসে সব তছনছ করে দিল। আজকে ধ্রুবর পাশে লাল লেহেঙ্গা করে আমার বসে থাকার কথা ছিল আমাদের কাপল পিক তোলার কথা ছিল। কিন্তু সব গন্ডগোল হয়ে গেছে ওই মেয়েটা ঝড় হয়ে এসেছে আমার জীবনে আমার সুখ আমার আনন্দ সব এক নিমিষেই দমকা হাওয়ায় ভাসিয়ে দিয়েছে। আমি এখন কি নিয়ে বাঁচব?’
কি বলে যুথি কে স্বান্তনা দিবে ওরা কেউই বুঝতে পারছে না। এক বান্ধবী ফট করেই বলে উঠল,’ কিন্তু যাই বলিস দুজন কে কিন্তু দারুণ মানিয়েছে।’
কথাটা যুথির কানে যেতেই যুথি আগুন দৃষ্টি নিক্ষেপ করল তার দিকে। ঢোক গিলে মেয়েটা বলল,’ না মানে তোকেই বেশি মানাতো।’
যুথি নিজের বান্ধবীদের সাথে শোক পালন করছে। হঠাৎ যুথি কাঁদতে কাঁদতেই উঠে দাঁড়াল,’ না আমি এতো সহজে হেরে যেতে পারিনা। ওরা আনন্দে বিয়ে করবে আর আমি এখানে রুমে বসে কেঁদে অস্থির হবো এটা তো হবে না।’
‘ কি করবি তুই?’
যুথি নিজের বিয়ের ড্রেস বের করে সুন্দর করে সাজতে বসে গেল।

এদিকে চারুর হাত চেপে ধরল শক্ত করে ধ্রুব। চারু রাগী চোখে তাকাল ধ্রুবর দিকে। ধ্রুব চোখ টিপ দিল চারু তাকাতেই চারু মুখটা হা করে ফেলল।
‘ নিজেকে সামলে রাখুন সবাই আমাদের দিকেই তাকিয়ে আছে।’ রাগী কন্ঠ চারুর।
ধ্রুব আরো সাহস দেখিয়ে দিল চট করেই চারুর হাত টেনে হাতের উল্টো পিঠ চুমু খেয়ে বসল।
চারু আঁতকে উঠে ঢোক গিলল। হাত মুচড়ামুচড়ি করে হাত টেনে কড়া চোখে তাকাল ধ্রুবর দিকে,’ আপনার কি মাথা খারাপ হয়ে গেছে? এসব কি পাগলামি করছেন?’
ধ্রুব চারুর দিকে মুখ নিচু করে ফিসফিস করে বলল,’ এসব পাগলামি না জান। এসব হচ্ছে ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ।’
চারু কটমট করেই তাকিয়ে র‌ইল। ধ্রুব মুগ্ধ চোখে চেয়ে আছে।
সিঁথি আর ময়না বেগম এককোণে দাঁড়িয়ে আছে। চারুর এতো সুখ তাদের আর সহ্য হচ্ছে না। সিঁথি ঠোঁট উল্টে বলল,’ মা আমার আর সহ্য হচ্ছে না চারুর সুখ। আজ যদি ধ্রুবর সাথে আমার বিয়ে হতো তাহলে এই সব কিছু আমার হতো। এতো বড়ো বাড়ির ব‌উ হতাম আমি। কত গহনা পরেছে মা সব আমার হতো।’
ময়না বেগম যে জ্বলেপুড়ে ছারখার হচ্ছে না তা নয়। তিনি ও রাগে দাঁতে দাঁত চেপেই রেখেছেন। সতীনের মেয়েকে জীবন এ এক গয়না দেয়নি ওর মায়ের যা গয়না ছিল সব কেড়ে নিয়েছিল আজ তার কপালে কত স্বর্ন, হীরার অলংকার মিলল। এসব কোথায় তার সিঁথির কপালে থাকবে তা না এই অপয়ার ভাগ্যে জুটল।
ময়না বেগম সিঁথির হাত চেপে ধরে বললেন,’ শোন চারু আর আগের সেই অবলা নেই এখন এই বাড়ির ব‌উ। এখন ওর সাথে আর দ্বন্দ্ব করে লাভ নেই এবার আমরা দুজনেই ওর সাথে ভালো আচরণ করব। ওকে বুঝাতে হবে আমার আগের করা কাজের জন্য অনুতপ্ত ক্ষমা চেয়ে আমাদের এই বাড়িতেই থাকতে হবে। এই রাজপ্রাসাদ ছেড়ে আমি তো আর যাব না রে সিঁথি।’
ময়না বেগম মেয়েকে এটা ওটা বুঝাইতেছে। আর সিঁথি মুখ কালো করে হাঁটছে হঠাৎ একটা সুদর্শন ছেলের সাথে সজোরে ধাক্কা খেল। সিঁথি তাকাতেই খুব সুন্দর একটা ছেলেকে দেখতে পেল তার ড্রেস‌আপ দেখে সিঁথির চোখ কপালে। এই ছেলে নিশ্চিত খুব বড়ো লোক এটিডিউট তো সেটাই বলছে। ছেলেটা হাঁটতে হাঁটতে স্টেজে গিয়ে ধ্রুব কে জড়িয়ে ধরল। সিঁথি নিজের দৃষ্টি ধ্রুবর থেকে সরিয়ে নিবদ্ধ করল অপরিচিত ছেলেটার উপর। এই ছেলেকে যেভাবেই হোক পটাতেই হবে যদি নিজের এই সাদাসিধে জীবন পাল্টাপাল্টি করতে চায়। সিঁথি খুব ভাব নিয়ে তাড়াতাড়ি আড়ালে গিয়ে পার্স থেকে আয়না বের করে নিজেকে দেখতে লাগল সব ঠিকঠাক আছে নাকি। তারপর নিজের চুল লিপস্টিক ভালো করে ঠিক করে স্টাইল করে হাঁটতে লাগল। যেভাবেই হোক ছেলেটার নজর কাড়তে হবে।

চারু আর ধ্রুব দাঁড়িয়ে পিক নিচ্ছিল হঠাৎ সেখানে এন্টি করে যুথি। ওকে দেখে তো সবাই চোখ কপালে তুলে তাকিয়ে আছে। যে সাজ দিয়ে এসেছে যুথি কেই মনে হচ্ছে নতুন ব‌উ। যুথি কে দেখে অতিথিরা সবাই হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছে। যারা ঘনিষ্ঠ আত্মীয় তারা এমন সাজ দেখে এগিয়ে এসে যুথি কে অভিনন্দন দিচ্ছে তারা ভাবছে এদের ই বিয়ে। চারু আর ধ্রুব কপাল কুঁচকে যুথির দিকে তাকিয়ে আছে। যুথির মতিগতি ভালো ঠেকছে না। যুথি হাসতে হাসতে স্টেজে এসে চারু আর ধ্রুবর মাঝখানে এসে দাঁড়াল। তারপর ধ্রুবর বাহু শক্ত করে চেপে ধরে ক্যামেরা ম্যানকে বলল,’ কি হলো তাড়াতাড়ি ফটো ক্লিক করুন।’
ধ্রুব আশ্চর্য কন্ঠে বলল,’ এসব কি করছিস যুথি। দেখ এখানে কোন সিনক্রিয়েট করবি না।’
যুথি দাঁত কেলিয়ে তাকাল ধ্রুবর দিকে তারপর বলল,’ আমি আবার কি করলাম?’
ধ্রুব কঠিন গলায় বলল,’ এমন করে সেজে এসেছিস কেন? মনে হচ্ছে তোর‌ই বিয়ে।’
ধ্রুবর কথায় যুথি খিলখিলিয়ে হেসে বলল,,’ এতো অবাক হচ্ছো কেন? বিয়ে তো আমার ই ছিল তোমাদের জন্যেই তো হলো না।’
ধ্রুব ঝামটা দিয়ে হাত ছাড়িয়ে বলল,’ কাহিনী না করে সরে যা এখানে থেকে। আমার মেজাজ খারাপ করিস না।’
যুথি হেসে ফের হাত ধরার জন্য এগিয়ে বলল,’ এমন করছো কেন? বিয়ে করছো বলে কি এখন আমি একটু হাত ও ধরতে পারব না?’
সবার সামনে তামাশা হবে বলে ধ্রুব চুপচাপ যুথির বাড়াবাড়ি সহ্য করল। যুথি ওভাবেই ঘুরতে লাগল।
কাজী আসতেই বিয়ে পড়ানোর অনুষ্ঠান শুরু হলো। বিয়ে পড়ানোর সময় ও চারু আর ধ্রুবর মাঝখানে এসে বসল যুথি। ধ্রুব রাগে চিৎকার করে উঠল। ধ্রুবর বাবা যুথির মাকে বললেন যুথিকে এখানে থেকে নিয়ে যেতে যুথি সবার সামনে জেদ ধরে বসে র‌ইল বিয়ের কবুল না বলে ও কোথাও যাবে না। সব আত্মীয় স্বজন রা বিয়ের বদলে সার্কাস দেখায় ব্যস্ত হলো।
চারু চুপ করে মাথা নিচু করে বসে আছে। ময়না বেগম আর সিঁথি চোখ বড়ো বড়ো করে তাকিয়ে আছে।
‘এখানে কাহিনি করার মানুষের অভাব নাই দেখা যাচ্ছে মা।’
ময়না বেগম কিছু বলতে এগিয়ে যাবে তখনি সিঁথি ওকে টেনে ধরল কেবল এক ছেলেকে ধরেছে তার সামনে মায়ের জন্য লজ্জায় পরতে চায়না। এই ধ্রুবর পেছনে মেয়ের অভাব নেই এর পেছনে থেকে লাভ নেই।
যুথি কে টেনে হিচড়ে ওর মা নিয়ে গেল সেখানে থেকে কারণ ধ্রুবর বাবা আদেশ করেছে এখানে ঝামেলা করতে চায় না।

যুথি বাসায় এসে চিৎকার করে উঠল,’ কেন তুমি আমায় নিয়ে এলে?’
‘ ওখানে এসব করে কিছুই হতো না।’
‘ আমি সবার সামনে অপমানিত হয়েছি আম্মু। ওরা সবাই আমাকে ঠকিয়েছে? আমি ওদের এতো সহজেই এক হতে দেব না। আমাকে যেতে দাও।’
‘ ওখানেই বা কি করবে বিয়ে তো আগেই হয়েছে।’
যুথি মায়ের কথায় থামছে না ও যাবেই ওখানে যুথির বাবা এসে যুথির গালে থাপ্পর দিয়ে বলল,’ আর একটা বেয়াদবি করলে আমার চেয়ে খারাপ কেউ হবে না।’
‘ তোমার মেয়েকে ওরা নিজের ইচ্ছায় নাচালো আর তুমি কিছুই করছো না। সবাই জানতো আজ আমার বিয়ে কিন্তু এসব কি হচ্ছে আমার নাকের ডগা দিয়ে ওই বাইরের মেয়েটা এসে আমার জায়গা দখল করে বসেছে।’
‘ চুপ করো অনেক কথা বলছো তুমি।’
‘ আব্বু তুমি এভাবে কথা বলছো কেন আমার সাথে? আমি তোমার নিজের মেয়েতো তুমি এমন ভাবে কথা বলছো যেন কিছুই হয়নি।’
‘ তেমন কিছুই হয়নি তুমি যতটা জটিল করে দেখছো। ধ্রুব তোমার চাচাতো ভাই ও একজন কে ভালোবাসে। বিয়ে করেছে সেখানে জোর করে জেদ করে তুমি কি হাসিল করতে চাইছ?’
‘ আব্বু আমি ধ্রুব কে ভালোবাসি। আমি ধ্রুব কে চাই। তুমি বড়ো চাচা কে বলো না এই সব বন্ধ করতে।’
‘ কি পাগলামি শুরু করেছো যাও ঘরে যাও তোমার মায়ের সাথে আর সিনক্রিয়েট করো না।’

চারু আর ধ্রুবর বিয়ে পড়ানো একটু আগেই শেষ হয়েছে। ধ্রুবর বন্ধুরা এসে ধ্রুব কে এসে বলছে,’ এক ব‌উ কে আর কতবার বিয়ে করবি রে ধ্রুব?’
ধ্রুব বলেছে,’ দেখি কতবার করা যায়? একেকটার ফিলিংস একেকরকম। তাই কয়েকবার করাটা মন্দ নয়।’
চারু মুখ গম্ভীর করেই রেখেছে। ওর মুখ দেখে বলল,’ কি হয়েছে ভাবি? আপনি মুখটা এমন গম্ভীর করে রেখেছেন কেন? মনে হচ্ছে বিয়েতে আপনি খুব‌ই অসুখী!’
ধ্রুব চারুর হাত ধরে বলল,’ তোদের ভাবি একটু অসুস্থ তাই মুখটা এমন দেখা যাচ্ছে।’
‘ ভাবির কি হয়েছে?’
চারু কটমট চোখে তাকাল ধ্রুবর দিকে ধ্রুব বলল,’ ক্লান্ত ভারী ড্রেস পরে অনেক সময় ধরে বসে আছে তো এজন্য।’
‘ভাবি আপনি খেয়েছেন?’
চারু বলল,’ জি খেয়েছি আপনারা খেয়েছেন?’
‘ হ্যাঁ খাইলাম আপনারা দ্বিতীয় বার বিয়ের সিদ্ধান্ত নিয়ে একদম ঠিক কাজ করেছেন। প্রথম বিয়ের রোস্ট তো খেতে পারি নাই তাই এবার একসাথে দুইটা খেয়েছি। ধ্রুব দোস্ত তুই কয়দিন পর পর বিয়ের আয়োজন করিস আমরা তাইলে অনেকবার দাওয়াত খেতে পারব কব্জি ডুবিয়ে।’
ধ্রুব বলল,’ নো প্রবলেম তুই গিফট রেডি রাখিস তোর জন্য প্রতিদিন দাওয়াত।’
ধ্রুব কথায় সবাই হেঁসে উঠলো।

ফুলে ফুলে সাজিয়ে তুলেছে ধ্রুব নিজের রুমটা। রুমে ঢুকে দরজা আটকে বিছানার কাছে গিয়ে বসে। মনে হচ্ছে আজকেই প্রথম চারুর কাছে যাচ্ছে এমন লজ্জা লাগছে। ধ্রুব বিছানায় বসে চারুর ঘোমটা দেওয়া মুখের দিকে তাকিয়ে বলল,’ চারু আমার এতো লজ্জা লাগছে। তুমি তো এমন ভাবে বসে আছো মনে হচ্ছে তোমার রাগ পরে গেছে।’
ধ্রুব খুশি হলো দারুণ চারু হয়ত নিজের রাগ কমিয়ে নিয়েছে। ধ্রুব চারুর ঘোমটা তুলতেই লাফ দিয়ে বসা থেকে ছিটকে উঠল।
মৃদু চিৎকার করে উঠল,’ তুইই এখানে কি করছিস?’
তখনি বাইরে থেকে দরজা ধাক্কার শব্দ হলো বাইরে থেকে চারুর ডাক ভেসে আসছে। ধ্রুব দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসছে যুথি। ধ্রুব হতবিহ্বল চোখে একবার দরজার দিকে তাকাচ্ছে তো একবার বিছানায় বসা যুথির দিকে তাকাচ্ছে।
#চলবে…?

#প্রেমনেশা
নন্দিনী নীলা
৪৮.

ধ্রুব দরজা খুলে দিতেই চারু রাগী গলায় বলে উঠল,’ আপনি আমাকে রুমে আসতে দিতে চাচ্ছেন না তাই না? আমি মনে হয় আপনার রুমে থাকার জন্য মরে যাচ্ছি। আমার সব জিনিসপত্র নিজের রুমে নিয়ে দরজা বন্ধ করে রেখেছেন কেন? সরুন সামনে থেকে।’
ধ্রুব দরজা ছেড়ে দাড়াতেই চারু রুমে প্রবেশ করে। এই অপমানের পর ও তো এক সেকেন্ড ও এই রুমে থাকবে না। ও এখনি নিজের পোশাক নিয়ে গেস্ট রুমে চলে যাবে। চারু রুমের লাইট অন করতেই ওর চোখ গিয়ে পরে বিছানায় লাল ওড়না দিয়ে ঘোমটা দিয়ে বসে আছে যুথি। যুথি কে দেখতেই চারুর চোখ কপালে উঠে যায়‌‌। বন্ধ দরজার আড়ালে যুথির সাথে ধ্রুব কি করছিল? চারু নিজের ড্রেস নেওয়ার কথা ভুলে ধ্রুবর দিকে তাকাল বিস্মিত চোখে।
ধ্রুব নিজেও পাথর হয়েই দাঁড়িয়ে আছে। যুথির সাহস দেখে চারু আরো বেশি অবাক হচ্ছে ওকে দেখেও যুথি বিছানা থেকে নামছে না। আরো ভালো করে বসে আছে‌‌। চারু রাগী চোখে ধ্রুবর দিকে তাকিয়ে আছে।

এক ঘন্টা পরের কথা,
চারু কোনভাবেই ধ্রুবর রুমে থাকবে না। ধ্রুব চারু কে আটকানোর জন্য প্রথমে নিজের রুম লক করল এরপর ওর পায়ের কাছে বসে আছে।
‘ প্লিজ জান রাজি হয়ে যাও না। আজকে আমাদের প্রথম রাত যেখানে আমাদের পাশে এখন সবাই আছে। সবাইকে সাক্ষী করে আমাদের দ্বিতীয় বার বিয়ে হয়েছে সসম্মানে আমি তোমায় আমার রুমে পেয়েছি। কত আনন্দের একটা দিন।’
চারুর হাত ধ্রুব নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে চুমু খেতে চাইলো। চারু ঝামটা দিয়ে হাত ছাড়িয়ে বলল,’ ছাড়ুন আমাকে। যদি আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে আমাকে এই রুমে রাখার জন্য চেষ্টা করেন। আমি চিৎকার চেঁচামেচি করে সিনক্রিয়েট করব।’
ধ্রুব অসহায় মুখে তাকিয়ে আছে চারুর দিকে। একটু আগেই যুথির মা এসে যুথিকে নিয়ে গেছে। চারু বিছানা থেকে উঠে দাঁড়াল তারপর নিজের জামাকাপড় দেখল আলমারিতে তুলে রাখা।
চারু কর্কশ কন্ঠে বলল,’ আমার জামাকাপড় এখানে কে আনল?’
‘ কে আনবে আমি এনেছি। আমার মতো গোছানো হাজবেন্ড পেয়েছে কত সৌভাগ্যবতী তুমি ভাবো। এখন থেকে এই রুমে সব কিছুই আমার মতোই তোমার নিজের।’
চারু আলমারি থেকে নিজের ড্রেস নিয়ে রুম থেকে বের হতে দরজার লক খোলার জন্য শক্তি প্রয়োগ করতে লাগল।
ধ্রুব বিছানায় পা তুলে বসে গালে হাত দিয়ে চারুর দিকে তাকিয়ে আছে। চারু রেগে বলল,’ দরজা খুলে দিন।’
ধ্রুব বলল,’ সরি জান সম্ভব না।’
‘ আপনি কিন্তু বাড়াবাড়ি করছেন! আমি জীবনেও ওই বিছানায় ঘুমাবো না যেখানে আরেক মেয়ে নিয়ে বসে থাকেন। আমি সেই বিছানায় বসতেও চাই না।’
ধ্রুব লাফ দিয়ে বিছানা উঠে এলো তারপর বলল,’ চারু সিরিয়াসলি তুমি যুথি কে নিয়ে আমায় সন্দেহ করছো?’
‘ এখানে সন্দেহ করার কি আছে? যা ঘটেছে আমি তার পুনরাবৃত্তি করলাম।’
ধ্রুব জোর করেই চারুর হাত থেকে ড্রেস নিয়ে বলল,’ ড্রেস চেঞ্জ করবে ভালো কথা কিন্তু এতো তাড়া কিসের তোমাকে তো এখনও ভালো করে দেখতেই পারলাম না। আগে একটু মন ভরে দেখি তারপর নাহয় চেঞ্জ করে নিও কেমন? যুথির জন্য তুমি বিছানায় বসতে ও চাইছো না এর সলিউশন আছে আমার কাছে।’
ধ্রুব ওয়ারড্রপ থেকে নতুন চাদর বের করে চারুর হাতে দিয়ে বলল,’ নাও।’
‘ এটা দিয়ে আমি কি করব?’ কপাল কুঁচকে বলল চারু।
ধ্রুব বলল,’ এটা নিয়ে চাদর পাল্টে ফেলো তাহলে তো আর তোমার‌ কোন প্রবলেম থাকবে না।’
চারু আশ্চর্য গলায় বলল,’ কেন থাকবে না?’
ধ্রুব ভ্রু জোড়া কুঁচকে বলল,’ তোমার সমস্যার সমাধান তো করে দিলাম। আর কি?’
‘ প্রবলেম শুধু যুথি আপু না আপনি নিজেও।’
‘ হোয়াট আমি তোমার প্রবলেম? আমি তোমার হাজব্যান্ড চারু। দুইবার বিয়ে করে ফেললাম আমরা আর তুমি এখন আমার প্রবলেম বলছো?’ কাঁদো কাঁদো কন্ঠে বলল ধ্রুব। চারু চাদর ধ্রুব দিকে ছুড়ে মেরে বলল,’ আমি কি আপনার রুমের চাকরানি?’
ধ্রুব বলল,’ কি বলছো জান। তুমি তো আমার মনের আর ঘরে রাজরাণী।’
‘ তাহলে চাদর পাল্টে দেওয়ার কথা আমাকে কেন বলছেন? আপনি করুন। আমি কোন কাজ করতে পারব না।’
চারু ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে মাথার দুপাট্টা খুলতে শুরু করল। চারু কানের দুল গলার নেকলেস, চুরি খুলে টিকলি খুলতে পারছে না। চারু আয়নার ভেতর দিয়েই দেখল ধ্রুব অনেক চেষ্টা করছে সুন্দর করে চাদর বিছিয়ে দিতে কিন্তু সেটা হচ্ছে না একপাশ থেকে টান দিলে আরেকপাশে চলে যাচ্ছে।‌ চারু ঠোঁট কামড়ে হাসি আটকে গম্ভীর গলায় ধ্রুব কে ডাকল,’ একটা সামান্য চাদর পাল্টে দিতে যদি এতো সময় লাগে তাহলে আর কাজ কখন‌ করবেন?’
ধ্রুব অবাক কন্ঠে বলল,’ আর কি করব?’
‘ এদিকে আসুন‌ আমার চুল খুলতে হেল্প করুন।’
ধ্রুব লাফ দিয়ে খাটে আরেকপাশে থেকে চারুর সামনে এসে দাঁড়াল।
‘ আমি তো তোমার কাজ করতেই চাই জান।’
চারু ধ্রুবর দিকে পিঠ করে আয়নায় দিকে মুখ করে দাঁড়াল। ধ্রুব ওর ঠিক পেছনে দাঁড়িয়ে আছে। ধ্রুব চট করেই চারুর কোমর জড়িয়ে ধরল দুহাতে তারপর মুখ নিয়ে ঠেকালো ঘাড়ে। ঘাড়ে মুখ নিয়ে ধ্রুব চটপট কয়েকটা চুমু খেয়ে নিল। চারু কনুই দিয়ে ধ্রুবর পেটে আঘাত করতেই ধ্রুব আহ করে ছেড়ে দিল।
‘ খবরদার আমার কাছে আসার চেষ্টা যদি করেছেন তো। চুপচাপ চুলের ক্লিপ খুলে দিন।’ ধ্রুব পেটে হাত চেপে বলল,’ তোমার শরীরে এতো শক্তি কোথায় থেকে এলো?’
‘ আত্মরক্ষার শক্তি আমার আছে। নিজেকে সংযত রাখুন।’
‘ চারু আমি তোমার হাজব্যান্ড!’ মুখ কালো করে বলল ধ্রুব।
‘ তো?’
‘ আমার কাছে তোমার আত্মরক্ষার কি প্রয়োজন আমিই তো তোমার নিরাপদ স্থান।’
‘ ফিল্মি ডায়লগ ছেড়ে কাজ করুন।’ তাড়া দিয়ে বলল চারু।
ধ্রুব মুখটা আঁধার করে ক্লিপ খুলে দিল টিকলি খুলে দিলো। তারপর চারু ওয়াশরুমে থেকে ড্রেস চেঞ্জ করে এলো। ধ্রুব চাদর পাল্টে বসে আছে বিছানায় মুখ কালো করে। তার‌ হাতে ফোন চারুকে বের হতে দেখে ধ্রুব ফোন অফ করে দিল। চারু বিছানার সামনে এসে বলল,’ সরুন ঘুমাবো।’
ধ্রুব চারুর হাত ধরে টেনে নিজের পাশে বসিয়ে বলল,’ কি হয়েছে বলোতো তুমি এখনো সন্দেহ করছো আমাকে ওই যুথি কে নিয়ে?’
‘ নাহ।’
‘ তাহলে এখনি ঘুম কেন? এখনো তো প্রেম ভালোবাসা কিছু হলো না।’
চারু আস্তে করে ধ্রুব হাত থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলল,’ উঠুন।
‘ কেন?’
‘ আমি ঘুমাবো বললাম তো।’
‘ তো ঘুমাও আমি উঠব কেন আমিও তো ঘুমাব।’
‘ আপনি বিছানায় ঘুমাতে পারবেন না।’
‘ মানে আমি তাহলে কোথায় ঘুমাবো?’ আকাশ থেকে পরে বলল ধ্রুব।
চারু বিছানা থেকে একটা বালিশ ধ্রুবর হাতে নিয়ে বলল,’ জীবনে সিরিজ দেখেন নাই? বিছানায় জায়গা না হলে সোফা নয়ত ফ্লোর বেছে নিতে হয়।’
ধ্রুব হতবিহ্বল হয়ে বলল,’ আমি ফ্লোরে ঘুমাব আর ইউ ম্যাড চারু? আর আমি কেনোই বা বিছানা রেখে ফ্লোরে বা সোফায় যাব?’
চারু বিছানায় শুয়ে বলল,’ কারণ আমি আপনাকে বিছানায় শোয়ার পারমিশন দিচ্ছি না।’
ধ্রুব বলল,’ তোমার পারমিশনের প্রয়োজন কী? আমার বিছানায় আমি ঘুমাব এখানে তুমি না করবে কেন?’
চারু শোয়া থেকে উঠে বসল,’ তার মানে আপনি বলতে চাইছেন এই রুমের সব জিনিস আপনার?’
ধ্রুব নির্দ্বিধায় উত্তর দিল,’ ইয়েস।’
‘ ওকে আপনার রুম। আপনার জিনিস। আপনার বিছানায় আমি কেন থাকব? লক খুলুন আমি এখনি এই রুম থেকে চলে যাব।’
চারু বিছানা থেকে নেমে চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়াল। ধ্রুব কপাল চাপড়ে বলল,’ আই এ্যাম সরি। আমি ভুল বলেছি এই সব তোমার ম্যাডাম তুমি বিছানায় যাও। অনুগ্রহ করে তোমার রুমে এক কোনে পরে থাকার অনুমতি দাও।’
হাত জোর করে বলল ধ্রুব। চারু ঠোঁট কামড়ে ধরে ধ্রুবর দিকে তাকিয়ে আছে। ধ্রুব সোফায় বসে রাগে ফুঁসছে। চারু লাইট অফ করে বিছানায় শুয়ে পড়ল। ধ্রুব সোফায় ওভাবেই বসে আছে একবার বলে উঠল,’ কপাল! সবাইকে মানিয়ে ব‌উ নিয়ে ঘরে এসে এখন আমি বিছানা ছাড়া।’
#চলবে…..