এমনই এক দিনে পর্ব-০৮

0
2

“এমনই এক দিনে” (পর্ব-৮)
ইনশিয়াহ্ ইসলাম।

১৫.
শর্বরীর মনটা আজ খুব ভালো। এই মুহূর্তে ওঁর হাতে গত মাসের বেতনটা রয়েছে। কাজে ঢোকার দুই মাস পরেই ওঁর কাজ দেখে কোম্পানি খুশি হয়ে এরপর থেকে পাঁচ হাজার টাকা বাড়িয়ে দেয়। শর্বরী দিনের পর দিন ভীষণ পরিশ্রম করেছে। কোনো ভাবেই কাউকে ছাড় দেয়নি ওঁর কাজ নিয়ে প্রশ্ন তোলার জন্য। এখন পর্যন্ত কর্মক্ষেত্রে সবার সাথেই একটা সুসম্পর্ক বজায় রাখতে পেরেছে। এছাড়া বেশ কয়েকমাস এখানে চাকরি করার পর এখন এখানকার মায়ায় পড়ে গেছে। ভেবেছিল নীরদের সবটা টাকা শোধ করার পর আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যাবে। কাজকর্ম সব ছেড়ে দেবে। কিন্তু আজকে সেই দিনে এসে আর ওই ইচ্ছেটা কাজ করছে না। চাকরি করে, স্বাবলম্বী হতে পেরে ওঁ বুঝতে পেরেছে যে একটা মানুষের নিজের পায়ে দাঁড়ানো কতটা দরকার। একসময় টিউশন করেছে শখের বশে। তবে এই চাকরিটা করেছে প্রয়োজনে। তাই তখন অত ভালো করে না বুঝলেও এখন ঠিকই বুঝতে পেরেছে। প্রয়োজনের সময় কাজে আসা এই চাকরিটা এভাবে পায়ে ঠেলে চলে যাওয়া উচিত হবে না। বরং এখান থেকেই নতুন করে শুরু করবে আবার। এবার ওঁ নিজের জন্য, নিজের আপনজনের জন্য উপার্জন করবে। ওঁর আফসোস হয়, প্রথম বেতনটা পরিবারের সাথে ভাগ করে নিতে পারেনি। এমনকি এখন পর্যন্ত তো কিছুই করতে পারেনি তাদের জন্য। একটা চাকরি করছে অথচ সেটাও লুকিয়ে গেছে। শুধু রিমা আর অনু ছাড়া কেউই এই চাকরির ব্যাপারে কিছু জানে না। আগে ওঁ চারটা থেকে ছয়টা পর্যন্ত দুটো টিউশন করাতো। সেগুলো বাদ দিয়ে এখন তিনটা থেকে সাতটা পর্যন্ত চাকরি করছে। বাকিরা শুধু এটাই জানে যে নতুন করে আরেকটা টিউশন করাচ্ছে। বাবা একদিন খুব চেঁচামেচি করেছিলেন কেন অযথা এসব করছে, শরীর খারাপ করবে। দরকার নেই। শর্বরী শোনেনি, আসলে তখন করারও তো কিছু ছিল না। তবে আজ ফিরে গিয়ে সবাইকে চাকরির কথা জানাবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তার আগে এই টাকাটা পৌঁছে দিতে হবে জায়গা মতো।

তখন রাত দেড়টা। নীরদ গাড়ি থামাল অ্যাপার্টমেন্ট কমপ্লেক্সের মূল ফটকে। গেটের দুপাশে বিশাল দেয়াল, উপরে কাঁটাতার। নিরপত্তারক্ষী আবুল বাশার এসে লোহার গেট খুলে দিল তার চোখেমুখে ঘুমজড়ানো ক্লান্তি‌। এই একটা মানুষের জন্যই প্রতি রাতে তার ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে। কেননা এত রাত করে বাকিরা খুব কমই আসা যাওয়া করে।

গাড়ি ঢুকে গেল কমপ্লেক্সের ভেতর। চারপাশ নিঃস্তব্ধ, কেবল লাইটপোস্টের আলোয় বিল্ডিংগুলোর ছায়া পড়ে আছে ফাঁকা পথজুড়ে। বারো তলা করে ছয়টা টাওয়ার দাঁড়িয়ে আছে সারিবদ্ধভাবে নীরদেরটা টাওয়ার-৪।

টাওয়ারের নিচে এসে গাড়ি থামাতেই এগিয়ে এল আরেকজন। চেনা মুখ, তাদের টাওয়ারের দারোয়ান রফিক মোল্লা। তার একহাতে ধরা ডায়েরির চেয়ে সামান্য ছোট আকৃতির একটি বাক্স। যার উপর গুটি গুটি অক্ষরে নীরদের নাম লেখা। সেই হাতের লেখাটা নীরদের অপরিচিত নয়। রফিক মোল্লা কিছুটা হেসে নীরদের দিকে বাক্সটা এগিয়ে দিল। নীরদ কিছুক্ষণ ওটার দিকে তাকিয়ে থেকে এরপর হাতে নিল। স্ব অস্তিত্বে অনড় জেদি মেয়েটার উপর তার রা’গ হয়। কি শুরু করেছে মেয়েটা! সেদিনের পর থেকে হাসপাতালে টাকা না পাঠালেও কীভাবে যেন এখানকার ঠিকানা জোগাড় করে এখানেই টাকা গুলো দিয়ে যাচ্ছে। নীরদ ও এখন আর তেমন কোনো প্রতিক্রিয়া দেখায় না। প্রতি মাসেই এমন একটা বাক্স আসে ও সেটা নিয়ে রেখে দেয় কাবার্ডে।

লিফটে চেপে সপ্তম তলায় উঠল নীরদ। দরজার সামনে এসে কোড টাইপ করতেই ‘বিপ’ শব্দে খুলে গেল ডিজিটাল লক। ঘরের ভেতরে অন্ধকার, কেবল বারান্দা থেকে আসা শহরের আলোয় আবছা দেখা যাচ্ছে ঘরের আসবাবপত্র গুলো।

বাক্সটা টেবিলের উপর রেখে সে চেয়ার টেনে বসল। টাকা না ধরলেও প্রতিবারই সে বাক্সটা খোলে। ওই যে! একটা চিরকুটের আশায়। আর প্রতিবারই হতাশ হয়। এবারো খুলতে খুলতে ভাবল যে কিছু নেই। তবে খোলার পর দেখা মিলল বহুল প্রতীক্ষিত সেই চিরকুটের। তার চোখে অন্যরকম এক দ্যুতি ছড়িয়ে পড়ল সাথে সাথেই। দ্রুত হাতে নিয়ে দেখল তাতে লেখা,

“আপনার ‘নট টু মাচ’ টাকাটা শোধ করতে আমার ‘টু মাচ’ সময় লেগে গেছে। এর জন্য আমি আন্তরিক ভাবে দুঃখিত। তবে স্বস্তি এতটুকুই, আজকের পর থেকে আমার আর আপনার মধ্যে আর কোনো দেনা পাওনার সম্পর্ক থাকছে না। আর খুশি এ নিয়েই, ভবিষ্যতে আপনাকে আর দেখা তো দূরের কথা, আপনাকে মনে করার ঝামেলা টুকুও আর পোহাতে হবে না।”

ঠিক যতটা না প্রফুল্ল মনে সে চিরকুট টা পড়তে নিয়েছিল পড়া শেষ হতেই সেই স্থানে তার চেয়েও বেশি ক্রোধ নেমে আসে। চিরকুট’টা শক্ত করে মুঠোয় চেপে ধরে। এ মুহূর্তে শর্বরীকে সামনে পেলে হয়তো ওঁকে জা’নেই মে”রে দিতো। ওঁ কী ভেবেছে? নীরদ ওঁকে দেখার জন্য তরপাচ্ছে? হুহ! কখনোই না, নীরদ কখনোই কারোর আশা করেনা। মেয়েটা যদি এমনটা ভেবেও থাকে তবে সে নিশ্চিত একটা ভুল, ভ্রান্ত ধারণায় বাস করছে।

১৬.
শর্বরীরা সবাই এসেছে ওঁর ফুফুর বাড়িতে। আজ ওঁর ফুফাতো ভাই তাসরিফের ছেলের জন্মদিন। বেশ কিছুদিন আগেই ফুফু দাওয়াত দিয়ে রেখেছেন। শর্বরী যাবে না বলায় বাকিরাও যেতে চাইছিল না। তবে সকাল থেকে ফুফুর কলে অতিষ্ঠ হয়ে আর টিকতে পারল না। দুপুর হতে না হতেই তৈরি হয়ে চলে এলো। শুধু ওঁরা চারজন আর মাজেদের মা এসেছে। বড়রা সবাই বিকালে আসবে। ফুফুর অতিরিক্ত চেঁচামেচিতেই ওদের আগে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। নয়তো এক সাথে আসা হতো। মাজেদের মা এসেছে থেকে মুখ লুকিয়ে রাখছিল। ফুফুর সামনে পড়লেই কাজ করতে বলবে এই ভেবে। তবে রামিশা চৌধুরী তাকে দেখেও কথা বললেন না। এখনও রেগে আছেন তা স্পষ্ট। মাজেদের মা সেটা নিয়ে ভাবলেন না। ফুফুর কাজ থেকে মুক্তি মিলেছে এই ভেবেই তিনি দুই গ্লাস শরবত খেয়ে নিলেন।

বিকেলের দিকে দেখা গেল সব অতিথি আসতে লাগল। ফুফুদের বাড়ির গার্ডেনে বিশাল আয়োজন করা হয়েছে। ওখানেই খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। শর্বরী, অনু আর রিমা খোকনকে মাজেদের মায়ের কাছে দিয়ে চারিদিকে হেঁটে হেঁটে দেখছিল। সাদা আর নীলের মধ্যে সুন্দর করে সবটা সাজানো। বেশ টাকা খরচ করা হয়েছে যে তা এক ঝলক দেখলেই বোঝা যায়।

একটু পরেই শর্বরীর বাবা মা, চাচা চাচী সবাই চলে এলেন। মায়েদের আড্ডায় মশগুল থাকতে দেখে ওঁরাও সেদিকে গেল। ফুফুকে দেখা গেল সবার মাঝখানে বসে কথা বলছেন। বাকিরা সব শুনছেন। শর্বরী এগিয়ে যেতেই ফুফু বললেন,

“এই তোর পায়েল কই?”

শর্বরী আৎকে উঠল সঙ্গে সঙ্গেই। এতদিন যেটার ভয়ে ছিল সেটাই হলো। ফুফুর হঠাৎ পায়েল নিয়ে পড়ার কি দরকার ছিল? এখন ওঁ মিথ্যা বলবে কী করে? মিথ্যা কথা ওঁ বলতে পারেনা। যদি চেষ্টা করেও তখন আবার সেই কথা সুন্দর গোছানো হয় না, তাই ধরা পড়ে যায়।

“বাড়িতে ফুফু।”

“বাড়িতে কেন? ওঁরা দুজন পরেছে কি সুন্দর লাগছে। তুই কেন পরিস নি?”

শর্বরীর মা হঠাৎ কী মনে করে বলল,
“তোর পায়েলটা অরিনদের গ্রামে যেতে যে নিলি এরপর থেকে তো আর দেখিনি মনে হয়।”

“এরপর আর পরা হয়নি। তাই দেখো নি।”

ফুফু চেঁচিয়ে উঠলেন, “কোথাও হারিয়ে ফেলেছিস না কি! তোর চোখমুখ দেখে তো আমার স’ন্দে’হ হচ্ছে।”

“না না। বাড়িতেই আছে। বাড়ি গিয়ে দেখাবো।”

শর্বরী ঘামছে, এখানে এখন আর থাকা ঠিক হবে না। আর একটু চাপ পড়লেই হয়তো পেট থেকে সত্যি কথা বেরিয়ে আসবে। ও বাথরুমে যাওয়ার নাম করে সেখান থেকে সরে এলো।

দোতলায় যেতেই ওঁর দেখা হলো তাসরিফের বউ মোহনার সাথে। ওঁকে দেখে হেসে এগিয়ে এলো। বলল,
“কোথায় ছিলে?”

“নিচে গিয়েছিলাম।”

“তোমাদের জন্য পুডিং নিয়ে সেই কখন রুমে রেখে এসেছি। কাউকে খুঁজে পাচ্ছিলাম না। সবাই নিচে?”

“হ্যাঁ, সবাই নিচে। আচ্ছা আমি ডেকে আনছি।”

“তার প্রয়োজন নেই। আমি নিচে যাচ্ছি ওদের পাঠিয়ে দেব। তুমি যাও ঘরে গিয়ে বসো। খুব ঘেমে গেছ। আজকে এত গরম পড়বে ভাবতে পারিনি। গত দু’দিন ও কি সুন্দর আবহাওয়া গেল।”

শর্বরী রুমে যাওয়ার সময় লিভিং রুম থেকে অনেক গুলো গলার আওয়াজ পেয়ে দাঁড়িয়ে পড়ল। কৌতুহলী দৃষ্টিতে তাকাতেই দেখল তাসরিফ সেখানে। কথা বার্তা শুনে বুঝতে পারল এরা তাসরিফের বন্ধু। চলে আসবে তখনই একজনের উপর ওঁর চোখ পড়ে। নীল শার্ট পরা মানুষটাকে পেছন থেকে দেখতে কেমন চেনা চেনা মনে হতে লাগল। কিন্তু পরক্ষণেই মনকে বোঝালো যাকে ভাবছে এটা কখনোই সে হতে পারে না। আজকাল লোকটাকে নিয়ে বেশিই ভাবছে তাই এখন যাকেই দেখছে তাকেই সে মনে হচ্ছে। ও বিড়বিড় করতে করতে রুমে চলে এলো।

সন্ধ্যায় কেক কাটার সময় সবাই নিচে গার্ডেনে উপস্থিত হয়। শর্বরী জামা বদলে আসে। অনু আর রিমা একদম সামনে দাঁড়িয়ে ছিল। ওঁর অত সামনে যেতে ইচ্ছে করছিল না। তাই পেছনেই একটা টেবিলে গিয়ে চেয়ার টেনে বসল। কেক কাটা হলে সবার সাথে সাথে সেও হাত তালি দিতে লাগল। এরপর আশপাশে চোখ বুলাতেই হঠাৎ দমবন্ধ হয়ে আসে। মাত্রই নীরদকে দেখেছে ওঁ। হ্যালুসিনেশন বলে মনে হচ্ছে না। আড়চোখে আবার তাকালো। না, ওটা আসলেই নীরদ। ওঁর থেকে দশ হাত দূরত্বেই বুকে হাত ভাঁজ করে নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে আছে। পরনে সেই নীল শার্ট। আর চোখেমুখে একরকম কঠোর নীরবতা। শর্বরী খেয়াল করল ওঁর আবার ভয় লাগছে। হাত-পা ঠান্ডা হয়ে আসছে, যেন র’ক্ত চলাচলই থেমে যাচ্ছে একটু একটু করে। নীরদকে দেখলেই এমন হয়, কেন হয়, সে নিজেও জানে না। এই লোকটার সামনে দাঁড়ালেই কোথা থেকে একটা অদৃশ্য শক্তি এসে ওঁর শ্বা’স’রো’ধ করে রাখে। কী এমন আছে নীরদে, যে এতটা ভয় পায় ওঁ? নীরদের উপস্থিতি কাউকে ভয় পাইয়ে দেওয়ার মতো নয় অবশ্যই। চেহারায় রয়েছে আশ্চর্য রকমের শান্ত সৌম্যতা, যা সবসময় ঠান্ডা জলের মতো স্থির থাকে। বলিষ্ঠ গড়ন লম্বা, চওড়া, পেশীবহুল শরীর। তবুও তার মধ্যে কোনো হিং”স্রতা নেই। বরং আচরণে এক ধরনের পরিমিত রাশভারি ভাব, যা কারো সম্মান এবং মুগ্ধতা দু’টোই আদায় করে নিতে বাধ্য। অথচ, ঠিক এই মানুষটার সামনে এলেই শর্বরীর ভেতর কোথা থেকে যেন এক চাপা ভয় জেগে ওঠে। অকারণ, তবে অগ্রাহ্য করারও নয়। আর নীরদের চোখ! তার চোখদুটো অসাধারণভাবে আকর্ষণীয় অথচ সেই চোখেই শর্বরীর ভয় সবচেয়ে বেশি। বাজপাখির মতো তীক্ষ্ণ, স্থির, তীব্র সেই চাহনি শর্বরীর দিকে পড়লেই ও যেন নিঃশ্বাস নিতে ভুলে যায়। ওঁর মনে হয় শি’কারি, ঠান্ডা তীব্র ওই দৃষ্টিটা নিখুঁত নি’শা’নায় ছো’ড়া কোনো অস্ত্র, যা তাকে ভে’দ করে প্রবেশ করে একেবারে গভীরে।

শর্বরী বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়, নীরদ ওঁকে দেখার আগেই এখান থেকে কেটে পড়তে হবে। কিন্তু বিধিবাম, ওঁর কপালে বোধহয় এটাই ছিল। নীরদ ওঁর দিকে ফিরে তাকালো। আর তাকেও দেখা গেল চমকে উঠতে। শর্বরীর সেখানেই প্রাণ গেল গেল অবস্থা হয়ে যায়। ওঁ পা ফেলতে পারল না পর্যন্ত। এই মানুষটার থেকে ও কেন দূরে যেতে পারছেনা? কেন?

নীরদ এগিয়ে আসছে ধীর গতিতে। এই সময়ে শর্বরী চাইলেই পালিয়ে যেতে পারতো। তবে পারেনি, যতক্ষণে ওঁর হুশ ফিরে নীরদ ততক্ষণে ওঁর মুখোমুখি এসে দাঁড়ায়। শর্বরী তখনই প্রথম নীরদের ঠোঁটের কোণে হাসি দেখে। ওঁর মনে হলো কোথাও ভীষণ বড় ভুল হয়ে গেছে। এই হাসি কোথাও যেন ওঁকে ঘা’য়েল করে ফেলেছে।

“কোয়াইট ডিসআপইন্টেড, রাইট?”

শর্বরী সাথে সাথেই কিছু বলল না। লোকটা মনে হচ্ছে ওঁর কাঁ’টা ঘা’য়ে নুনের ছিটা দিতে এসেছে। অসভ্য লোক! ইতর লোক!

“আপনি মনে হয় খুব খুশি হয়েছেন?”

“অখুশি হইনি তা বলতে পারি।”

“আপনি একদম আমার সামনে আসবেন না।”

নীরদ শীতল দৃষ্টিতে শর্বরীর দিকে তাকালো। মেয়েটার সমস্যা ঠিক কোথায়? তার জানতে ইচ্ছে করে ঠিক কী কারণে বারবার নীরদকে এভাবে বলছে। সেদিন চিরকুট পড়ে তার প্রচণ্ড রা”গ হয়‌। ইচ্ছে করে শর্বরীকে বড় ধরনের কোনো শা’স্তি দিতে। তারপরও আজ শর্বরীকে দেখে এক মুহূর্তের জন্য সেসব ভুলে যায়। অথচ মেয়েটা আবারো এভাবে কথা বলছে। সে শর্বরীর আরেকটু কাছে এগিয়ে গেল, বলল,

“আমি সামনে এলে তোমার ঠিক কী সমস্যা হয়?”

“আপনাকে আমার ভালো লাগে না।”

“ভালো না লাগার কারণ?”

শর্বরীর বুক ধড়ফড় করছে। নীরদের দিকে তাকাতে পারছে না। তাছাড়া কীভাবেই বা বলবে যে ওঁ নিজেও জানে না আসল কারণটা কী। নীরদ রে’গে গেছে ওঁ তা আঁচ করতে পেরেছে। কিছু বলতে নিবে ঠিক তখনই লোডশেডিং হলো। সবকিছু অন্ধকারে ডুবে গেল। চারিদিকে হৈচৈ পড়ে গেল। শর্বরী আরো আ’ত’ঙ্কিত হয়ে পড়ল। হঠাৎই অনুভব করল ওঁর ডান হাতটা ধরেছে কেউ একজন। তাকে চিনতে অসুবিধা হলো না। খুব অল্প সময়েই এরপর যা হওয়ার হয়ে গেল। আলো ফিরে এলো, শর্বরী দেখল নীরদ নেই। হাতের দিকে তাকিয়ে দেখল সেই পায়েলটা, যেটা একটু আগে খুব যত্নের সাথে ওঁর হাতে দিয়ে গেছে নীরদ। একটু পরেই খেয়াল করল, ওঁর চোখ দুটো ভিজে আসছে। এই অল্প সময়ের মধ্যেই অজানা, অচেনা এক অনুভূতি জড়িয়ে পড়েছে ওঁ। যা থেকে খুব সহজে ছাড়া পাবে না।
__________________________________

শর্বরীর মাকে রামিশা চৌধুরী ডেকে নিয়ে এলেন এক পাশে। দূরে বন্ধুদের সাথে দাঁড়িয়ে থাকা নীরদকে দেখিয়ে বললেন,

“শর্বরীর মা, ওই যে দেখছ ছেলেটাকে? লম্বা সুন্দর করে! ওটার কথাই বলছিলাম। খুব ভালো ছেলে, ডাক্তার‌। আমাদের শর্বরীর জন্য আমার ওঁকে পছন্দ হয়েছে। রাজি থাকলে বলো কথা আগাই।”

“আমি কি বলব আপা! ওঁর বাবা কী বলেন সেটা দেখতে হবে।”

“সাবেরের কথা রাখো। আমার পছন্দ হয়েছে এটাই বড় কথা। আমি এ ছেলের সাথেই আমাদের মেয়ের বিয়ে দেব। তাসরিফের বন্ধুদের মধ্যে এমনকি তাসরিফের চেয়েও ভালো, ভদ্র, মার্জিত স্বভাবের এই ছেলে। আমি গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি এর থেকে বেটার আর পাবা না।”

#চলবে।