গল্প #রোদ_পোহাবার_ছুতোয়
#পর্বঃ৮
#নাজমুন_নাহার
ইদানীং জয়নাল সিকদারের মন-মেজাজ বোঝার উপায় থাকে না। স্বভাবসুলভ সারাক্ষণই তিনি গুরুগম্ভীর এবং কঠিন ধাঁচের মানুষ। গত তিনদিন ধরে ছোট মেয়েটার খোঁজ জানলেও একটিবারের জন্য জিজ্ঞেস করেননি মেয়ের কথা। কিংবা এতোটুকু রাগও ঝারলেন না কারো উপর। প্রসঙ্গই তোলেননি ওকে নিয়ে। আমিনা বেগম স্বামীর এই নিরবতাটুকুকেই ভয় পায়। রেগেমেগে কিছু বলে দিলে অন্তত বোঝার ফুরসত থাকতো ভেতরে কী চলে। মিরার সঙ্গে আজ দু’দিন ধরে আমিনা বেগমের কথা হয়। মেয়েটা ভালো আছে। শশুর বাড়ির লোক নাকি সাদরেই গ্রহণ করেছে ওদের। অর্থই যে সুখ বয়ে আনতে সক্ষম না সেটা তিনিও বোঝেন। প্রকৃত প্রাপ্তি একটা যোগ্য মানুষে। রাতুলের পরিবার মিরার বাবার সঙ্গে কথা বলে বিষয়টা পারিবারিকভাবে মিটমাট করতে চায়। ছেলেটা ভালো, ফ্যামিলিটাও ভালো৷ উচ্চশিক্ষিত ছেলে। হোক না পারিবারিক সূত্রে কৃষিখামারির কাজ। তাতে কী? তার মেয়েটা তো ভালো আছে।
আমিনা বেগম গতকাল থেকেই এই বিষয় নিয়ে স্বামীর সঙ্গে একটা মিঠা আলাপ সারতে চাচ্ছেন। কোনোভাবো যদি লোকটার পাহাড়সম রাগ সমতলে নামানো যায়। স্বামীর চেয়ারের পাশে দাঁড়িয়ে চোরাচোখে পর্যবেক্ষণ করছেন তখন থেকে।
জয়নাল সিকদার নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে নাশতা সারছিলেন স্ত্রীর ভাবভঙ্গি খেয়াল করে খাওয়া অবস্থাতেই শুধালেন,
“কিছু বলবে?”
ধ্যানমগ্নতা কাটলো আমিনার। তবে লোকটার ভারী স্বরে ভয়ে শরীর শিথিল হয়ে এলো। চরম দিধাদন্দের বেগ পুহিয়ে শেষমেশ মিনমিনে কন্ঠে মুখটা খুললেন তিনি।
“একটা আবদার রাখবেন আমার?”
“যদি তোমার মেয়েদের প্রসঙ্গ ব্যতিত অন্য প্রসঙ্গের আবদার হয়, নিশ্চয়ই রাখবো। কোনো আবদার ফেলেছি আজ অব্ধি তোমার? নিঃসঙ্কোচে বলো।”
বেশ ঠান্ডা গলায় কথাগুলো বললেন জয়নাল। স্বামীর শীতল হুশিয়ারীতে চুপসে গেলেন আমিনা। স্ত্রীকে চুপ থাকতে দেখে জয়নালও আর কথা বাড়ালেন না। যা বোঝার বুঝে ফেললেন। স্বামীর নিরবতা তার চিন্তা শতগুণ বাড়িয়ে দিচ্ছে। মেয়েগুলোর জন্য পরান পুড়ছে তার।
—
এলার্ম লাগিয়েও ঘুম থেকে উঠতে দেড়ি হয়ে গেলো নাবিলের। জ্বর একটুআধটু আছে। তবে সেসব আপাতত তোয়াক্কা করলে চলবে না৷ তাড়া আছে। নিলয় বেইবিটাকে রিসিভ করতে হবে এয়ারর্পোট থেকে আজ।
শোয়া থেকে এক লাফে উঠে কোনোরকমে ফ্রেশ হয়ে একটা কালো শার্ট গায়ে জড়ালো নাবিল। টেবিলে এসে তাড়া দিলো নাশতার জন্য।
“বড়মা, বাদ দাও। লেট হলে ব্যস্ত হতে হবে না। আমি বাইরে থেকে খেয়ে নিবো। সময় নেই।”
শাহিনা তোড়জলদি পায়ে ডিম ভেজে এনে রাখলেন টেবিলে।
“শেষ। এতো তাড়া দিচ্ছিস কেন? কোথাও যাচ্ছিস নাকি?”
নাবিল তীর্যক চেয়ে গর্বিত স্বরে বলে,
“ডোনাল ট্রাম্পের সঙ্গে জরুরী বৈঠক আছে।”
“আর মানুষ পেলি না?”
অবাক দৃষ্টিতে চায় নাবিল। যেনো বড়মা খুব গুরুতর অন্যায় কথা বলে ফেলেছে।
“এমনভাবে কেন বলছো? তুমি জানো, বিশ্ব কুনামিতে তার কতো অবদান? মানুষে মানুষে উগ্রতা, দেশে দেশে যুদ্ধ লাগানো, ধর্মে ধর্মে বিবাদ সৃষ্টি করতে কতো পটু সে জানো? এমন একজন মহামানবকে কিনা তোমরা যাচ্ছেতাভাবে ইগনোর করো? নট ফেয়ার।”
বর্ষা মাত্রই কোচিংয়ের জন্য বের হবে৷ রেডি হয়ে ডাইনিংয়ে বসতে বসতে ওর কথার প্রতুত্তরে বলে,
“ফেয়ার-আনফেয়ারের হিসেব তো ভালোই জানেন, নাবিল ভাই। তা এইযে, আপনি বছরে দু-একবার নিজের বাড়িতে পা মারান, রক্তের মানুষদের সাথে দেখাসাক্ষাৎ নেই, কন্টাক্ট নেই, এসব কী আনফেয়ার না?”
নাবিল খেতে খেতে বলে,
“তুমি আবার কোথা থেকে উদয় হলে? টেকনাফের কথা টেনে তেঁতুলিয়া নিয়ে যাওয়ার স্বভাব তো ভালোই আছে। টানাটানি বাদ দিয়ে পেটপুরে খাও। খেয়েদেয়ে বড় হও। আমি বাড়িতে বছরে আসি আর দশকে আসি, বাড়ি আমার, আমারই থাকবে। আর তুমি আপাতত আমার বাড়ির টেম্পেরার ভাড়াটিয়া। বিয়ে করে স্বামীর বাড়ি গেলেই এহসান মঞ্জিল তোমাকে টাটা বায় বায় করবে।”
বর্ষা বড়মার দিকে দুঃখী দুঃখী মুখ করে চায়। ঠোঁট উল্টে বলে,
“দেখলে বড়মা? তোমাদের গুনধর ছেলের কথা শুনলে? আমি নাকি এহসান মঞ্জিলের ভাড়াটিয়া। আমি তার বাড়িতে ভাড়া থাকি। এতো বড় অপমান! উনাকে কিচ্ছু বলবে না তোমরা?”
নাবিল ঠোঁট টিপে হাসে। শাহিনা বেগম তীক্ষ্ণ চোখে একপলক বর্ষাকে দেখে নিয়ে মুচকি হেসে বলে,
“ভাড়াটিয়ারাও চাইলে মালকিন হতে পারে, শুধু মালিকের মন রাখতে জানতে হয়।”
নাবিল কথার মারপ্যাচ বুঝে না। আপন ভঙ্গিতে খাচ্ছে। সেভাবেই জবাব দেয়,
“হ্যা হ্যা বড়মা,কানা-বয়রা-সুগারডেডি কিছু একটা ধরে বিদায় করো ওকে। আমার বাড়িতে টইটই করে আর কতো ঘুরবে। এসব ভালো দেখায় না।”
বর্ষা টলমল চোখে চায় শাহিনার পানে। চোখে চোখে কতো নালিশ করেন। শাহিনা বেগমও চোখের ইশারায় আস্বস্ত করে ওকে। ছেলে-মেয়ে দু’টোর বাচ্চামো দেখে হেসে ফেলেন তিনি।
ঘরে ফিরে একটা শার্টও আয়রন করা না পেয়ে বিরক্ত হলো নাবিল। বহু ডাকাডাকির পর নিরার দেখা পাওয়া যায়। সকল সমস্যার ইন্সটয়ান্ট সমাধান কেবল সে-ই। চোখ রাঙ্গিয়ে, রীতিমতো বিরক্তি নিয়ে আসে মেয়েটা।
“আমি বাসায় এতো কাজ জীবনেও করি নাই,নাবিল ভাই। তুমি আমাকে সবসময় কাজের বুয়ার মতো ট্রিট করো। তোমাদের বাড়িতে গেলেও আমাকে এভাবে খাটাও, আবার আমাদের বাসায় এলেও একই অবস্থা। ভাল্লাগে না আর!”
নাবিলের সেদিকে ভ্রুক্ষেপ নেই। থাকলেও ইচ্ছে করে পাত্তা দিলো না। আপন ভঙ্গিতে ডিভানে শুয়ে গেমস খেলছে। নিরা সেদিকে চেয়ে ফুঁসে উঠে। আয়রন করা শেষ হলে শার্টটা নাবিলের মুখে ছুঁড়ে দাঁতে দাঁত পিষে বলে,
“বিয়ে কেন করছো না তুমি? আমরা বিরক্ত তোমার উপর। ফুপ্পিকে আর আমাকে রেহাই দাও একটু। জন্ম থেকে খুব জ্বালাচ্ছ।”
নাবিল চুপচাপ শার্টটা গায়ে জড়িয়ে বুকের বোতাম লাগাতে লাগাতে ঠোঁটে কেমন একটা মাদকীয় হাসির রেখা টেনে ক্ষীণ স্বরে বলে,
“এইটুকুতে ক্লান্ত হলে কী করে চলবে? সইবি কীভাবে বাকিটা পথ? আমি তো যেনো তেনো মানুষ না। কাউকে জ্বালাব বলে সিদ্ধান্ত নিলে পার্মানেন্টলি জ্বালাই। জ্বলে জ্বলে আঙ্গার হয়ে যাওয়ার মতো জ্বালানো যাকে বলে। কতো কতো বিকল্প পদ্ধতিতে জ্বালাতে জানি, সেসব তো আদোও দেখা হয়নি তোর।”
নিরা আয়রনটা আলমারীতে রাখতে রাখতে দায়সারাভাবে বলে,
“কে সইবে আজীবন তোমার জ্বালাতন? বিয়ে করে বিদায় হতে পারলেই লাইফ সেট।”
নাবিল আয়নার সম্মুখে দাঁড়িয়ে চুলে ব্যাকব্রাশ করতে করতে পেছনে থাকা রাগান্বিত মুখটায় চেয়ে কিসের একটা আনন্দ নিয়ে হাসে।
“হ্যা সেটাই তো। কোনোরকমে বিয়ে করে ঘরে আনতে পারলেই লাইফ সেট। কাজের বুয়ার সঙ্গে সম্পর্কের একটা প্রমোশন হবে, হওয়াও দরকার। এতো বছরের এক্সপেরিয়েন্স আমাকে সেবার করার তার, একটা ইনাম তো সে এমনিতেই পায়। ঠিক বলেছি কি-না, মিস মর্জিনা?”
নিরা হতাশ শ্বাস ফেলে। লোকটা কখনও শুধরাবে না। মুখে যা আসে তাই মন্ত্রমুগ্ধের মতো জপতে থাকে। সে পাশে থাকা ওয়াটার বোতলটা হাতে নিয়ে বোতলে থাকা অবশিষ্ট পানিটুকু অগত্যাই ফিক করে ছুঁড়ে মারলো নাবিলের গায়ে। বেচারার সদ্য আয়রন করা শার্টটা ভিজে একাকার, সাথে জেল করা চুলগুলোও এলোমেলো হলো। হুট করেই হলো। সাবধানতার ফুরসতটুকু পেলো না। আকস্মিক আক্রমণ। হতবিহ্বল হয়ে একবার নিজের দিকে চেয়ে রাগি রাগি দৃষ্টিজোড়া সামনে থাকা মেয়েটার দিকে নিক্ষেপ করার আগেই নিরা এক দৌড়ে সিঁড়ি ডিঙ্গিয়ে নিচ তলায় ছুট লাগায়। নাবিল গাল ফুলিয়ে শ্বাস ফেলে এক হাত কোমড়ে ভর করে দাঁড়ায়। বেশ কিছুক্ষণ দরজার দিকে শান্ত দৃষ্টিতে চেয়ে থেকে আকস্মিক মোহগ্রস্তের মতো কী সব বিরবির করতে করতে মাথা চুল্কাতে চুল্কাতে হেসে ফেললো। স্মিত হাসি৷ কারণটা জানলো কেবল ঘরের চার দেয়াল, আর দেয়ালঘড়ির পেছনে চুপটি করে বসে থাকা দুষ্টু টিকটিকিটা। যে নাবিলের পুরুষালী ঠোঁটের হাসির রেখা দেখতেই টিকটিক করে ওর মনের ভায়োলেন্ট বাজার খবর শুনিয়ে গেলো। মনে করিয়ে গেলো,সেদিনের খড়খড়ে রোদে নাবিলের এক চন্দ্রমল্লিকার প্রেমে পড়ার গল্প! কেলেন্ডারের পাতায় বাংলার বৈশাখ, আর নাবিলের কাছে তা ছিল প্রেমের বসন্ত!
—-
মিরা সদ্য গোসল সেরে বেড়িয়েছে বাথরুম থেকে। পরনে রাতুলের কিনে আনা গতকালকের খয়েরী রঙের সাদামাটা একটা থ্রি-পিস। দেখতে খুব সস্তা ধরণের।বোধহয় পাঁচশোর বেশি হবে না। এই সামান্য উপহারেই মেয়েটা চাঁদ পাওয়ার মতো খুশি হয়েছিল। রাতুল বেশ লজ্জিত মুখে ড্রেসের ব্যাগটা দিলেও মিরা স্বামীর দেওয়া ঠুনলো উপহার গ্রহণ করে মহা আনন্দের সাথে। তার স্বামীর গায়ে গতরে খেটেখুটে ইনকামের টাকায় কেনা প্রথম জামা! এই উপহার যে মিরার কাছে কতো দামী তা কি করে বোঝাবে রাতুলকে? পৃথিবীর সবটুকু সুখ তার পায়ের তলায় সপে দিলেও এই আনন্দের সমতূল্য হবে না কোনোটাই।
শহরের আধুনিকতার মধ্যে আজন্ম বেড়ে উঠা মেয়েটা এই ছোট্ট গ্রামে নিজেকে কতো সহজেই না মানিয়ে নিয়েছে। রাতুলের অসুস্থ বাবা-র সেবা, সরল মায়ের সাথে বন্ধুত্ব, ছোট্ট বোনটাকে স্নেহ, সবকিছুই অবাক হয়ে দেখে রাতুল। কোনোপ্রকার জড়তা ছাড়াই মেয়েটা এই ছোট্ট সংসারটাকে গুছিয়ে নিয়েছে, আপন করে নিয়েছে। রাতুল প্রথমে এ-ই বিষয় নিয়ে উদ্বিগ্ন থাকতো। মিরা মানিয়ে নিতে পারবে তো তার অভাব-অনটনের সংসারে? রাতুলের নিজের দারিদ্র্যতার প্রতি যতনা আফসোস, তার চেয়ে বেশি মিরার জন্য কিছু না করতে পারার। যদি-ও এ বছর মাস্টার্সটা শেষ করে একটা উচ্চপদস্থ চাকুরীর সন্ধান মিলবে, তবুও নতুন বিয়ে করা বউয়ের কতো শখ- আহ্লাদইতো থাকে। সেসব পূরণ করতে না পেরে রাতুল ভীষণ ব্যথিত। মিরা ওসব বুঝে। রাতুলকে সে বার বার বোঝায় তার ওতো বেশি চাহিদা নেই। ভালোবাসার মানুষটার সঙ্গে বাকি জীবনটা কাটাতে পারবে এমন সৌভাগ্যই-বা ক’জনের হয়? মেয়েটা ওর জন্য কতো কিছুই না সহ্য করবে। রাতুল অবাক হয়ে দেখে মিরাকে, আল্লাহ বোধহয় তার আজন্মের অসুখের ইস্তাফা টানতে এই অমায়িক রমণীকে জীবনে পাঠিয়েছেন। মিরার স্নিগ্ধ মুখশ্রীতে তাকালেই পৃথিবীর তামান অভাব ভুলে থাকা যায়। রাতুল সত্যি নিজেকে একজন ভাগ্যবান স্বামী মনে করে। কামনা করে,তার স্বর্গীয় সুখে যেনো কখনও ভাঁটা না পড়ে।
মিরা দেয়ালে টাঙানো ছোট্ট আয়নাতে চুল মুছতে মুছতে পেছন ফিরে চাইলো। আয়না দিয়ে রাতুলের পলকহীন চেয়ে থাকা দেখলো। স্বামীকে ওমন ধ্যানমগ্ন হয়ে বসে থাকতে দেখে কিছুটা উদ্বিগ্ন হয়। কাছে গিয়ে কপালে হাত রেখে রাশভারী কন্ঠে শুধায়,
“কী ব্যাপার? কী হয়েছে তোমার? শরীর খারাপ?”
রাতুল হেসে ওর কপালে রাখা হাতটা বুকে জড়িয়ে পরিশ্রান্ত কন্ঠে বলে,
“হুম, খুব খারাপ লাগছে৷ এখানটায় বড্ড জ্বালা। এইযে তুমি ছুঁয়ে দিলে? মনে হচ্ছে, জ্বালাটা আরও প্রগাঢ় হলো।”
মিরা আঁতকে উঠে,
“সে কী কথা! বুকে জ্বালা মানে? বুক জ্বলছে? গ্যাস্ট্রিকের টেবলেট খেয়ে নিতে একটা। দেখি, সরো তো।”
রাতুল চোখ বন্ধ করে লম্বা শ্বাস টানে। মেয়েটা বড্ড অবুঝ!
“চুপটি করে একটু দাঁড়াও, মিরা। আমি একটু শান্ত হই।মন-শরীর দু’টোই অশান্ত লাগছে। সবসময় তোমার বোকামি। কিচ্ছু বোঝো না যেনো। এই জ্বালার উৎপত্তিস্থল সম্পর্কে অবগত হলে এতোক্ষণে চুমোয় চুমোয় আমার গাল ভিজিয়ে দিতে। কিন্তু তুমি তো বোকা বউ, বুকের দহন নেভাতে কি লাগে জানো না?”
মিরা স্বামীর কথার ইঙ্গিত বুঝতে পেরে লজ্জায় মিয়িয়ে যায়। আমতাআমতা করে বলে, “আমি রান্নাঘরে যা-ই। মা’কে সাহায্য করি।”
রাতুল হেঁচকা টানে ওকে নিজের কোলে বসিয়ে বাহুবন্ধনে আবদ্ধ করে নেয়। খোঁচা খোঁচা দাঁড়িভর্তি গালের সাথে মিরার মসৃণ গাল ঘেঁষে বলে,
“মুখ থেকে হাত সরান আমার লজ্জাবতী লতা। টমেটোর মতো লাল হয়ে গিয়েছে গাল দু’টো। এমনভাবে ব্লাশ করছো মনে হচ্ছে আজই বিয়ে হলো, আর রাতে হবে,….
মিরা মুখে হাত রাখে।
“চুপ, একদম চুপ। যা তা বেফাঁস কথা বলেই যাচ্ছো। এতো বেশরম কবে থেকে হলে? আগে তো দেখলেই আসমান থেকে নেমে আসা ফেরেশতা মনে হতো। ডেটে গিয়েও কখনও হাতে হাত ছোঁয়াওনি। আর এখন কিনা,…
রাতুল ঠোঁট টিপে হাসে।
“তোমার জানায় ভুল আছে৷ আমি আজন্মই বেশরম। তবে সেটা সঞ্চয় করেছি বৈধতার অপেক্ষায়। আগে ছিলাম তোমার বেকার প্রেমিক। এখনও বেকার, তবে এখন আমরা পুরোপুরি বৈধ৷ সৃষ্টিকর্তাকে সাক্ষী রেখে তিন কবুল করা বউ তুমি আমার। আমার বৈধ নারী। যাকে ছুঁতে কোনো জড়তা পোহাতে হয় না। ভালোবাসতে অনুমতি লাগে না। যে একান্তই আমার নারী। মিসেস রাতুল তালুকদার।”
মিরা গর্বের সুখে চোখ বুঁজে নেয়। চোখ ভিজে এলো মিরার। রাতুল ওর কাঁধে থুতনি ঠেকায়। যেনো মনের সবটুকু গ্লানি এই এক আলিঙ্গনে চিরতরে মুছে দেওয়া সম্ভব। মেয়েটার ভেজা চুল আর শরীরের তীব্র নারীসুলভ ঘ্রান শীতল করে ওর ক্লান্ত প্রাণ!
সারাদিন টিউশনি করে মাত্রই বাসায় ফিরলো রাতুল। মিরা ভাবলো গরমে হয়তো খারাপ লাগছে শরীর। প্রসঙ্গ পাল্টাতে বলে,
“এক গ্লাস সরবত করে দেবো?”
রাতুল বিরক্ত হয়। কৃত্রিম ধমকের ভঙ্গিতে বলে,
“তোমায় বলেছি সরবত করতে? এতো অস্থির হচ্ছো কেন? শান্ত হয়ে বসে থাকো।”
মিরা স্বামীর ছেলেমানুষী পাগলামি দেখে কপাল চাপরায়। রাতুল ওর ঘাড়ে চুমু এঁকে বিষন্ন কন্ঠে বলে,
“আমি তোমার জন্য কিছুই করতে পারছি না, মিরা। এখানে তোমার সবকিছুতেই সমস্যা হচ্ছে আমি জানি। এমন সাদামাটা সংসার দেখে তুমি অভ্যস্থ নও। বিশ্বাস করো, এই অভাব, দারিদ্র্যতা আর বেশিদিন নেই। আমার চাকরিটা হয়ে গেলেই আমরা শহরে উঠবো। আমাদের সব হবে। তোমার শখ-আহ্লাদগুলো যত্ন করে আলমারিতে তুলে রাখো ততদিন পর্যন্ত, লক্ষীটি। তোমার স্বামী দরিদ্র হলেও তার আত্না বিশাল। তোমাকে রাণীর মতো করে রাখার আমারও যে খুব শখ।”
মিরা ঝারি দিয়ে ওকে নিজের কাছ থেকে ছাড়িয়ে নিলো । মুখটা গম্ভীর করে কিছুক্ষণ আগের গুছিয়ে রাখা জামা-কাপড়গুলো শেল্ফ থেকে বের করে এলোমেলো করে দিলো। কাঁদছে সে। রাতুল বুঝলো না হুট করেই এমন করার কারণ। নিঃশব্দে মিরার পাশে বসে।
“জান,কোনো ভুল হয়েছে আমার?”
মিরা প্রতুত্তর না করে ওকে পাশ কাটিয়ে যেতে নিতেই রাতুল হাত দিয়ে হেঁচকা টান মেরে ওকে খাটে বসায়। মিরা অনেকক্ষণ ধস্তাধস্তি করলো নিজেকে ছাড়ানোর। পুরুষালী শক্তির কাছে বরাবরের মতোই হার মানলো ওর ছোট্ট নারীদেহ।
“ছাড়! ছোঁবে না আমায়৷ তুমি খুব খারাপ। আমি কি তোমাকে কখনোও বলেছি আমার বিলাসবহুল সংসার লাগবে? উমুকের উমুক আছে আমারও লাগবে, বলেছি তোমাকে? কতোবার বারণ করেছি এসব বলবে না আমায়। তুমি আমায় নিয়ে এভাবে অনুশোচনা করো জানলে আমার কতো খারাপ লাগে বুঝো? ছাড়ো তো।”
রাতুল ওর গালে পরপর পাঁচটা চুমু খেয়ে পরম আবেশে শক্ত করে জাপ্টে ধরলো।
“তোমার রাগটাকে আমি খুব ভয় পাই সোনা। আমার কারণে তুমি কষ্ট পাবে ভাবলে বুক পুড়ে যায়। এইযে দেখো,কানে ধরলাম। আর বলবো না,প্রমিস প্রমিস প্রমিস। এবার খেতে দাও লক্ষীটি। খিদে পেয়েছে খুব৷ কী রেঁধেছ?”
মিরা মুখে আঁধার নামিয়ে চায়। মানুষটার ক্লান্ত মুখটার দিকে চাইলে ইচ্ছে হয় পৃথিবীর সবচেয়ে বিলাসবহুল খাবারটা তার সামনে এনে দিতে। সবটুকু সুখ তার পদধূলিতে রেখে দিতে ইচ্ছে হয়। সে এসবই প্রাপ্য!
” ঘরে বাজার নেই। আলুর ভর্তা, করলা ভাজি, আর ডাল করেছি।”
মিরার চুপসে যাওয়া মুখের দিকে চেয়ে রাতুলের বুক ভার হয়।
“তোমার পছন্দ হয়নি খাবার? হোটেল থেকে আনাবো?”
মিরা বুকে কিল বসিয়ে প্রকট রাগ দেখায়,
“বলেছি একবারও আমার খাবার পছন্দ হয়নি? তুমি ক্লান্ত হয়ে এসে এসব দিয়ে খেতে পারবে কি-না সেটা ভেবে মন খারাপ হচ্ছে।”
রাতুল হো হা করে হাসলো। যেনো বিরাট কৌতুক করেছে বোকা বউটা তার। খাবারের মেন্যুর কথা শুনে এমন ভঙ্গিতে ঠোঁটে হাসির রেখা ফোটালো যেনো পৃথিবীতে আলুর ভর্তা, করলা ভাজি, কিংবা ডালের চেয়ে সুস্বাদু খাবার অন্যটি হয় না।
“উফফ! তাহলে তো আজকের মধ্যাহ্নভোজটা বেশ জমবে। বিবিজানের হাতের আলুর ভর্তা মানে অমৃত। পাঁচ তারকার চিকেনও ফেইল। বসে আছো কেন মাই পার্সোনাল শেইফ? যা আছে নিয়ে আসো তাড়াতাড়ি। খিদেতে পেটে ইদুর দৌড়াচ্ছে।”
“আমি কিন্তু রাঁধতে জানিনা। যদি খারাপ হয়?”
রাতুলের কন্ঠে গর্ব।
“হলে হবে৷ আমার বউ খারাপ রাঁধলেও সবাইকে আনন্দ নিয়ে তা-ই খেতে হবে।”
বেশ তৃপ্তি করে হাত চেটেপুটে খেলো রাতুল। মিরা পাশে বসে ওর খাওয়া দেখলো। কী অসাধারণ একটা মানুষকে বিয়ে করেছে মিরা! কতো অল্পতে সন্তুষ্ট সে। বিশেষ চাহিদা বলতে, একটু ভালোবাসা। তার স্বামীটা বর্তমান সময়কার বেপরোয়া স্বামীদের মতো না৷ নেশা-পানিতে তার আগ্রহ নেই। না আছে অবৈধ পথে উপার্জন করে হুট করেই বড় হয়ে যাওয়ার লালসা। গায়েগতরে খেটে খাওয়া খাঁটি মানুষ সে। শরীরে পুরুষালী ঘাম মিশিয়ে বাড়ি ফেরা শক্তিশালি লোক । যে জানে নিজের শখ-শৌখিনতা উৎসর্গ করে পরিবারের জন্য ঢাল হয়ে দাঁড়াতে। বাবা-মায়ের আদর্শ ছেলে, ছোট্ট বোনের অনুপ্রেরণা, আর প্রেয়সী স্ত্রী’র একমাত্র গর্ব! ক্লান্ত, পরিশ্রান্ত দেহ নিয়ে মিরার বুকে মাথা ঢলে অঘোরে ঘুমায় যে। সে এয়ার কন্ডিশনের অফিসে দিন কাটায় না। না মাসে একটা দিন খায় পাঁচ তারকার রেস্টুরেন্টে। রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে, হেঁটে কিংবা লোকাল বাসে ঘুরে ঘুরে টিউশনি করানো নিরলস এক সংগ্রামী মহাপুরুষ সে। যে নিজের চেতনায় স্বাধীন এবং নির্ভীক। মিরার রাতুল! সহজভাবে সুখী হয়ে যাওয়া সরল মানুষ। মিরার ঘোরলাগানো ধূসর চোখের শ্যামপুরুষ! যার সকল তেষ্টা ঘুচোয় মিরার নরম ছোঁয়ায়! মিরার উষ্ণ যত্নে! মিরা-রাতুলের বাবুইপাখির আরামের সংসারে!
সেদিন বাসায় নাবিলের সঙ্গে ওর বিয়ের সিদ্ধান্তের খবর শুনে ফুঁপিয়ে কেঁদেছিল মিরা। প্রেমিক থাকার সত্বেও নাকি আপন ফুপাতো ভাইকে বিয়ে করতে হবে। নাবিল তখনও এই প্রসঙ্গে কিছুই জানতো না৷ মিরা একবার ভাবলো নাবিলের সঙ্গে এই বিষয়ে কথা বলবে। দু’দিন পর বাবা যখন বোন আর বোনজামাইকে বিয়ের প্রস্তাবটা দিয়ে সবকিছু সুনিশ্চিত করে ফেলে, সেদিনই মিরার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে। রাতুলকে তখনও কিচ্ছুটি জানায়নি মেয়েটা। সেদিন রাতেই আবার কাঙ্ক্ষিত ফোনটা বাজলো মিরার ফোনে। ঘটনার প্রধান চরিত্র যে।
“তোর বাড়িতে যে একখানা আউলাঝাউলা জটলা পাকানো হচ্ছে, এই ব্যাপারে জানিস কিছু?”
“জানি।” মিরার সহজ স্বীকারোক্তি
“জানিস তো জ্বিনে ধরা রোগীর মতো দাঁত কেলিয়ে বসে আছিস কেন? আমায় আগে বললি না?”
“কী হতো বললে?”
নাবিল গলার স্বর নরম করার চেষ্টা করে।
“মিরা শোন, তোকে আমি শুধুই বোনের নজরে দেখে এসেছি। বউ ভাবা রিতীমত আমার জন্য ইম্পসিবল। আই এম নট রেডি ফর মেরিজ, এন্ড আই কান্ট এক্সেপ্ট দ্যট অলসো। আর তুই, আগেই জানতিস তো একটু প্রতিবাদও কেন করলি না?”
মিরা বিরক্ত হয়। “তোর ইচ্ছে হয় তুই কর।”
“আমি করবো মানে? তুই কী বিয়েতে রাজি?”
“পাগল নাকি? রাজি হতে যাবো কেন?”
“রাজি না তো গর্তে লুকাই আছোস কেন, বাল। বাইর হ, বিয়া ভাঙ। আমি মাল খাইনাই যে তোর বাপ চাইলো আর তোকে আমি গলায় ঝুলিয়ে নাচতে নাচতে বাড়ি ফিরবো। তুই বউ হিসেবে পার্ফেক্ট। বাট মিরা, তোকে কখনোই বউ বউ নজরে দেখিনাই। পারবোও না। ব্যাপারটা আমার জন্য আগুনে ঝাপ দেওয়ার মতো। বোন আমার, যেমনে পারিস আটকা। শালার প্রেমিক-টেমিক কিছু নাই তোর? একটাকে ধরে ভেগে উদ্ধার কর।”
“আছে প্রেমিক।”
“ক্লাসমেট?”
“নাহ, সিনিয়র। মাস্টার্স ফাইনাল ইয়ারে।”
“তো বসে আছিস কোন সুখে? বিয়ের জন্য তো ছেলে ঠিকি আছে।”
“বাবা ওকে মেনে নিবে না।”
“তুই জানিয়েছিস?”
“উহু।”
“আমি হেল্প করবো? আই মিন আম্মুকে দিয়ে জানিয়ে?”
“লাভ নেই। রাতুল বেকার। মানে শুধু টিউশনি করিয়ে সংসার চলে। তাছাড়া ওদের আর্থিক অবস্থাও ওতো উন্নত না। কিছুতেই মানবে না।”
“কোনো বাপই মেয়েকে প্রেমিকের সঙ্গে বিয়ে দেওয়ার অনুমতিপত্র চেলচেলায়ে দিয়ে দেয় না। আদায় করে নিতে হয়। তুই ভং ধর একটু৷ না খাইয়া চিত শুয়ে থাক। তোর বাপ ভাববে মেয়েকে বোধহয় আজরাইল ধরেছে। দেখবি ভয় পাবে, মেয়ে জমের দুয়ারে যাওয়ার আগে কাজী ডেকে আনবে। বিনা পরিশ্রমে সফলতা।
“এতো সহজ না৷ বাবাকে চিনিস না তোরা?”
নাবিল ধমকে উঠে, ” শোন বাল, তোদের রঙ্গ করার হইলে সার্কাসে কর। আমি বিয়েসাদী করতে পারবো না,ব্যাস। আরেহ, আমার কি বয়স হইসে বিয়ের? আই এম স্টিল মাম্মাস লিটল বয়। এখনও নাক টিপলে লাচ্ছি বাইর হয়। কেমনে তোর বাপ আমারে নিজের মেয়ের ইয়ের নজরে দেখলো? তওবা তওবা তওবা!”
মিরা একটা ভারী শ্বাস ফেলে হুট করেই কেঁদে দিলো। নাবিল অবাক হয়।
“তোর আবার হলো কী?”
“আমি রাতুলকে ছাড়া কাউকে বিয়ে করতে পারবো না,নাবিল৷ আমি ওর সাথে প্রতারণা করতে পারবো না কিছুতেই। ছেলেটা পাগলের মতো ভালোবাসে আমায়। তুই কিছু একটা কর ভাই৷ প্লিজ কিছু কর।”
সেদিন রাতেই বুদ্ধি করে ওরা বিষয়টা নিলয়কে জানায়। সবটা শুনে নিলয় বেশ দ্বিধাদ্বন্দে পড়ে গিয়েছিল। মিরার অবস্থাও শোচনীয়। মেয়েটা মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছে। উপায়ন্তর না পেয়ে নাবিলকে বলেছিল,
“তুই ওকে বাড়ি থেকে পালাতে হেল্প করবি। ওর গায়ে একটা আচরও যেনো না লাগে খেয়াল রাখবি। দাঁড়িয়ে থেকে ওদের বিয়ের সাক্ষীও তুই-ই হবি৷ বাকিটা আমি দেশে ফিরে দেখছি।”
বড় ভাইয়ের পরামর্শেই মিরা এতো বড় সিদ্ধান্ত নেওয়ার সাহসটুকু করতে পেরেছে। নিলয় ভাইয়ের কাছে চির কৃতজ্ঞ মিরা। কোনোভাবে বাবা-র মন গলাতে পারলে বাড়ি ফিরে নিলয় ভাইয়ের ঋন শোধ করার ব্যবস্থাও করবে সে।
সেসব ভেবে ঠোঁটের কোনে হাসির রেখা ফুটে উঠে মিরার।
বিয়ের এক মাস আগের ঘটনা। ভার্সিটি থেকে ফিরে মিরা নিরার ঘরে যায়। ভার্সিটিতে একটা প্রোগ্রাম ছিল। সেখানে কী কী হলো সেসব নিরাকে বলার উত্তেজনা নিয়েই নিরাকে খোঁজ করা। ঘরে নিরা ছিল না, কোচিংয়ের জন্য বাইরে ছিল। কৌতুহলবসত নিরার পড়ার টেবিলে চোখ আটকায় মিরার। নিরার ব্যক্তিগত ডায়েরি, যেটা সে কখনোই মিরাকে স্পর্শ করতে দেয়নি। যতবার এটা চেয়েছে, গুপ্তধনের মতো চোখের আড়াল করে রেখেছে মেয়েটা। যেনো এটা ডায়েরি না, নিরার প্রাণভোমরা। মিরার মাথায় দুষ্টু বুদ্ধি চাপলো। কারো ব্যক্তিগত জিনিসে না বলে ধরা ঠিক হবে না ভেবেও মনকে মানাতে পারলো না। ঘাঁটানোর সুযোগ হাতছাড়া করল না। বেশ কয়েকটা চিঠি পায় ডায়েরিতে। যেসব চিঠি যে প্রাপক পর্যন্ত আজ অব্দি পৌঁছায়নি তাও বুঝল। চিঠিগুলোর সূত্র ধরেই ছোট বোনের কিশোরী বয়সের প্রথম ভালো লাগার মানুষটা সম্পর্কে জেনেছিল মিরা৷ বিশ্বাস করতে বেগ পোহাতে হয়েছিল যদিও। কেননা নিরার হাবভাব দেখে কখনোই সেসব বোঝায় উপায় ছিল না। এসব প্রেম প্রেম হাওয়া লাগা টাইপ রঙঢঙ নিরার মধ্যে কখনোই দেখা যায়নি। ভেবেছিল আর ক’টা দিন গেলে নিজে থেকেই জানতে চাইবে এই বিষয়ে৷ কিন্তু তার আগেই মিরার জীবনে ঘটে যায় নতুন ঘটনা। তবে আজ, এই মুহূর্তে এসে মিরার কাছে বিষয়গুলো কিছুটা হলেও স্পষ্ট। ভালোবাসা একপাক্ষিক এতো জোরালো হয় না। নিলয় ভাইয়ের পক্ষ থেকেও বোধহয় কিছুটা সারা ছিল। তাইতো এতো বছর পরে তাড়া দিয়ে নিলয় ভাইয়ের দেশে ফেরার সিদ্ধান্ত। মিরা চায় না তার ছোট্ট বোনটাও তারই মতো করে কষ্ট পাক৷ বাবা-র বিরোধিতা করে সবাইকে কষ্ট দেক। সব ঠিকঠাক হলে মিরা নিজে বাবা-র সাথে এই বিষয় নিয়ে কথা বলবে। খাদিজা ফুপ্পিকে নিয়ে যতদূর জানে, ফুপ্পি আগে থেকেই নিরাকে স্নেহের নজরে দেখে। বলা যায়, পুরো পরিবারের চোখের মনি তার ছোট্ট বোন নিরা। ওকে ছেলের বউ করতে খাদিজা ফুপ্পির আপত্তি থাকার কথা না৷
কিন্তু মিরা একটা বিষয় নিয়ে বেশ চিন্তিত। অবাক করা ব্যাপার। সেদিন নাবিল ওকে বিয়ে করতে অস্বীকৃতি জানালেও নিরার বেলায় কেন ব্যাপারটা বিয়ের দিন পর্যন্ত গড়াতে দিলো? দিলোই যখন তাহলে দু’জন পালালো কেন? মা’য়ের সঙ্গে কথা বলে যতটুকু মিরা জানলো, নাবিল নিরার সঙ্গের বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে নাকচ করেনি৷ যদিও মুখে সরাসরি হ্যা বলেনি, তবে প্রতিবাদও তো করলো না। যেমনটা মিরার বেলায় করেছে। বিয়ের দিন ওর হাবভাবও না-কি অনুকূলেই ছিল। বিরাট রহস্যময় লাগছে ব্যাপারটা।
চলবে।