রোদ পোহাবার ছুতোয় পর্ব-২২

0
6

গল্প #রোদ_পোহাবার_ছুতোয়
#পর্বঃ২২
#নাজমুন_নাহার

এক সপ্তাহ পর।
ধুলোমাটির চরাচরের একরোখাভাব কাটাতে প্রকৃতিতে পুরোপুরি হানা দেয় বর্ষা। এখন চলছে আষাঢ়ের মাঝামাঝি সময়। তুমুল আষাঢ়সংগীতে উল্লাস নিয়ে নেচে উঠেছে প্রকৃতি। বৃক্ষের শুঁকনো সন্তান ঝরে প্রাণ ফিরে গজায় নতুন সতেজ, সবুজ পাতা। ভাষা ফিরে পায় গাছ, মাটি, আর কবিদের কাব্যজগৎ। ব্যাঙ, কেঁচো জাতীয় উভয়চর প্রাণীরা প্রাণখুলে নেয় শ্বাস। মুক্ত হয়ে কাঁদে আকাশ। প্রকৃতিকে প্রাণ ফিরিয়ে দেওয়ার কামনা নিয়েই যেনো আগমন ঘটে শত মনের আকাঙ্ক্ষিত সে-ই বর্ষার।

বহুদিন পর কুমিল্লায় নিজের জন্মস্থানে যাওয়ার একটা ছুতো পেলো জয়নাল সিকদার। তার বাপ-দাদার আসল পৈতৃক স্থান। যেখানে শৈশব কেটেছে প্রায় অর্ধেকটা সময়। মা-বাবার কবরটাও সেখানেই। যেখানের মাটিতে, আকাশে আছে মা মা গন্ধ। ব্যস্ততা, আর সাংসারিক কোলাহলের কারণেই জয়নাল সিকদারের বাড়িতে যাওয়া হয়নি শেষ কয়েকবছর ধরে। মনটা যাওয়ার জন্য উথাল-পাতাল করলেও সময়-সুযোগ মেলাতে পারছিলেন না তিনি। কিন্তু এবার আর কোনো তালবানা করলেন না ভাতিজীর বিয়ের দাওয়াত পেয়ে। চাচাতো ভাইয়ের একমাত্র মেয়ের বিয়ে৷ দুই বোন, আর মিরার শশুরবাড়ির লোকজনসহ সপরিবারকে দাওয়াত করেছে এরশাদ সিকদার। নিজে এসে সকলের বাড়িতে বিয়েতে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করে গিয়েছেন। ভাইয়ের অনুরোধ ছাড়াও মনের খায়েশটাও ছিল জয়নাল সিকদারের খুব৷ তা-ই আর না করলেন না তিনি। ভাইয়ের সম্মতি পেয়ে দুই বোনও যাওয়ার জন্য উত্তেজিত হয়ে পড়ল। বাচ্চাদেরকে নিয়ে বহুদিন পর নিজ বাড়িতে পা মারানোর সুযোগটা কেউ-ই খোয়াতে চায়নি। তিনদিনের এই গ্রাম্যভ্রমণে জন্য তা-ই সকলেই উৎসাহ নিয়ে ব্যাগপত্র গুছিয়ে ফেললো।

আকাশ থেকে মেঘ সরে গিয়েছিল অল্প কিছুক্ষণের জন্য। ঘন্টা দুয়েক পাড় না হতেই গগন কাঁপিয়ে মেঘ করছে আবার। ব্যস্ত ভঙ্গিতে একে একে সবগুলো লাগেজ গাড়ির ডিকিতে তুললেন জয়নাল সিকদার। গুরুম গুরুম শব্দ হচ্ছে কিছুক্ষণ পরপর। বৃষ্টিটা ক্ষণিকের জন্য কমেও শেষ রক্ষা হলো না। আবার বাড়ছে। মেজাজ এমনিতেই সারাক্ষণ চটানো থাকে তার। তারউপর ঘরের মেয়েসমাজ করছে আরও দেরি। কোথাও বেড়াতে যাওয়ার আগে এদের নিয়ে পড়তে হয় আরেক বিপাকে। জয়নাল সিকদার সকাল থেকেই তাড়া দিচ্ছেন স্ত্রী, মেয়েকে। এদিকে গ্রাম থেকে চাচাতো ভাই-বোনেরা একের পর এক ফোন করেই যাচ্ছে। কাকভেজা হয়ে তিনি গেইটের বাইরে থেকেই হাঁক ছাড়লেন স্ত্রী আর মেয়েকে। বাবা-র কর্কশ ডাকে নিরা তাৎক্ষণিক দৌড়ে এলো ছুটে। অত্যাধিক রেগে আছেন তিনি। বাবা-র পাশ কাটিয়ে ভয়ে ভয়ে কোনোরকমে তাড়াতাড়ি গাড়িতে চড়ে বসলো নিরা। জয়নাল সিকদার মেয়েকে সরাসরি ধমকাননা কখনোই। তবে তার নিরব গম্ভীর ভাবটাই সবসময় ভীত করে নিরাকে। সে ভদ্র মেয়ের মতো গুটিশুটি হয়ে বসল। ফোনের ক্যামেরা অন করে চুলটা ঠিক আছে কি-না দেখে নিলো। সিটে হেলান দিয়ে কানে হেডফোন লাগাতে লাগাতে মা’কে শুধায়, “মিরাপু আর দুলাভাই কখন আসবে, আম্মু?”

“রাতুলের কী এক কাজ পড়েছে বললো। সন্ধা হবে ওদের রওনা হতে হতে।”

বেশ কিছুক্ষণ চুপ থেকে আড়ালে মা’কে চুপিসারে পর্যবেক্ষণ করে মা’র ভাবমূর্তি বোঝার চেষ্টা করলো নিরা। আপন ভঙ্গিতে জানালার বাইরে চেয়ে থাকার ভান ধরে ভাবলেশহীনভাবে শুধালো, “আম্মু,আর কেউ যাবে না আজকে?”

“কাদের কথা বলছিস?”

“ফুপ্পিরা।”

“তোর খাদিজা ফুপ্পি তো যাবে না আজকে। খাদিজা আপার শরীরটা ভালো না। জ্বর হয়েছে শুনলাম। অহনা, নেহাল আর নিলয় যাচ্ছে। দুলাভাই আর আপা আগামীকাল যাবে সম্ভবত।”

নিরার মুখটা ফেঁকাসে হয়ে আসে৷ গম্ভীর স্বরে শুধায়, “শুধু নিলয় ভাইয়ারাই যাবে? আর কেউ যাবে না?”

আমিনা কিছুক্ষণ অগ্নিচোখে চেয়ে থেকে অকস্মাৎ ধমকে উঠলেন মেয়েকে। “নিলয় ভাই কী রে? এখনও ভাই ভাই করিস কোন সুখে? আজ বাদে কাল ওদের বাড়িতে বউ হয়ে যাবি, বিয়ের পরও ভাই ভাই করলে মানুষ কী বলবে, উজবুক? উনি বলে সম্মোধন করবি।”

নিরা আড়ালে চোখ ঘুরিয়ে শ্বাস ফেলল। পরিচয় মিস থেকে ইতোমধ্যেই মিসেস হয়ে গেলো, আর এই ভোলাভালা মা এখনও পড়ে আছে তার নিলয় নিয়ে। হায় আল্লাহ! এরা যেদিন আসলেই সত্যিটা জানবে, কী যে করবে কে জানে। তারউপর নিলয় ভাই নিজেই এসবের নাটের গুরু বুঝতে পারলে তো হিন্দি সিরিয়ালের ক্লাইমেক্স খুলে যাবে। নিরা খানিক উদ্বিগ্ন হলো সেসব ভেবে। পরক্ষণেই ঠোঁট টিপে হাসল। মাথা দু’দিকে দোলায় বাধ্য মেয়ের মতো। জানালার কাচ ডিঙিয়ে বাইরে তাকিয়ে আবারও হাসল তৃপ্তি নিয়ে। ফোন বের করে ম্যাসেজ পাঠালো কাউকে একটা।

“ঘুম ভাঙলো স্যারের?”

তাৎক্ষণিক ফিরতি জবাব এলো।

“ম্যাডাম জীবনে থাকতে স্যার আবার বেলা করে ঘুমাবে কী করে? এতো সুখের সুযোগ আছে নাকি স্যারের? ম্যাডাম যে আমার ডেঞ্জারাস শাসক।”

হাসল নিরা। তবে ইচ্ছে করেই দিলো এংগ্রি রিয়েক্ট।

“শাসক আমি?”

“হু। বাট নো অভিযোগ, নো স্যাডনেস। শাসক আমার নিজের পছন্দের,বহু আদরের। স্বেচ্ছায় জীবনের টেনে এনেছি তাকে। করুক না-হয় একটু শাসন। এটার জন্যই তো তাকে নির্বাচন করা।”

ঠোঁটে স্মিত হাসির রেখা ফুটে উঠলো নিরার।

“আমরা মাত্রই রওনা হলাম। কখন আসছো তোমরা?”

নাবিল প্রতুত্তর না করে পাল্টা প্রশ্ন করে, “আজই যাচ্ছিস তোরা?”

“আজই যাচ্ছি মানে! তোমরা কবে যাবে?”

“মা জননী তো আগামীকাল যাওয়ার কথা বললো।একটা কাজ পড়ে গেলো আজকে। আব্বুর এক বন্ধুর সাথে দেখা করতে হচ্ছে।”

মুহুর্তেই মনটা চুপসে যায় নিরার৷ নাবিল আহ্লাদী শব্দ জুরে আবার লিখে, “তুই থেকে যা না! আমাদের সাথে যাস। আমাকে ছাড়া যাচ্ছিস বিষয়টা আমার জন্য চিন্তার। অপরিচিত কত লোক থাকবে সেখানে। তোর দিকে কেউ কুনজর দিবে, ব্যাপারটা হজম হচ্ছে না। থেকে যা বউ। কাল স্বামী আর শাশুড়ির সঙ্গে যাবি।”

না চাইতেও অনেকখানি ভালোলাগায় মনটা দুলে উঠলো দোলনা হয়ে। মিষ্টি করে হাসল মেয়েটা। মনটা কেমন প্রজাপতির মতো লাফাচ্ছে। নাবিলের বলার ধরন শুনে আজই প্রথম নিজেকে সত্যিকার অর্থে বিবাহিতা রমণী মনে হচ্ছে। অজানা নারীসুলভ শিহরণে গা শীতল হয়ে উঠলো। চোখ বুজে শ্বাস ফেলল পরম ভালোলাগা নিয়ে।

আমিনা মেয়েকে মিটিমিটি মুচকি হাসতে দেখে সন্দিহান চোখে চাইলেন। চোখ ছোট ছোট করে গোয়েন্দাদের মতো শুধালেন, “পাগলের মতো অকারণে হাসছিস কেন? কে ম্যাসেজ পাঠাচ্ছে? দেখি? ফোন দে।”

নিরা তাৎক্ষণিক ফোন সরিয়ে স্ক্রিন বন্ধ করে ফেলল। শুষ্ক ঢোক গিলে ভীত চোখে চাইলো মায়ের পানে। আমতাআমতা করে বললো, “ইমু ম্যাসেজ করছিল, আম্মু। ও নাকি ছাঁদে বৃষ্টিতে ভিজতে গিয়ে আজকে পা পিছলে পড়ে গিয়েছে। এতো বড় দামরা মেয়ে কি-না পা পিছলে পড়ে যায়, ব্যাপারটা হাস্যকর না? এর জন্যই হাসছিলাম।”

আমিনা কিছুক্ষণ তীক্ষ্ণ চোখে মেয়েকে পরখ করলেন। নিরার ভোলাভালা ভাবভঙ্গি দেখে বোধহয় বিশ্বাসও করলেন মেয়ের কথা। নিরা হাফ ছেড়ে বাঁচার মতো শ্বাস ছাড়ল। পরক্ষণেই ভাবনায় পড়ল। এই ঘটনা ঢাকতে না জানি আর কতো মিথ্যার আশ্রয় নিতে হয়, কে জানে। কবে আসবে নিলয় ভাইয়ের প্ল্যান করা সে-ই কাঙ্ক্ষিত মুহূর্ত? কবে মিলবে মুক্তি। নিরা কবে স্বাধীনভাবে নিজের পরিচয়টুকু জনসম্মুখে আনতে পারবে? কবে তার পরিচয়ই হবে তার আসল গর্ব!

—-

বাড়িময় লাল-নীল ঝারবাতির আলোয় ঝলঝল করছে। বড়রা আপাততঃ কাজের গোছগাছে ব্যস্ত। কারোরই চোখে ঘুম নেই। বাড়ির ভাই-বোন সমাজ সব আড্ডা জমিয়েছে প্যান্ডেলের নিচে। জীবনশৈশবের খোশগল্প চলছে সেখানে৷ নিরাও ছিল এতোক্ষণ এদের সাথেই। বেশ কিছুক্ষণ পর ফিরে আসে ঘরে। মনটা কারো শূন্যতায় খা খা করছে। ভালে লাগছে না একটুও। জীবনের রন্ধ্রে রন্ধ্রে এতোটাই মিশে গেছে লোকটা,যে তার অনুপস্থিতি কিছু মুহূর্তের জন্যও মেনে নেওয়াটা দুরূহ। ভীষণ শূন্য লাগে।

আগামীকাল গায়ে হলুদের পর্ব। তাই আজ বাড়িতে মেহমানদের আনাগোনা কিছুটা কম। এরশাদ সিকদার কেবলই নিজের কাছের লোকদেরই আজকে আসতে বলেছেন। নিরা আপাতত মানহার রুমে বসে রইলো। মানহা নিরার আরেক চাচার মেয়ে। সিকদারমহলটা আকারে বিশাল। ঘরের সংখ্যাও অনেক। সম্ভবত যৌথপরিবার এদের। তা-ই আণ্ডাবাচ্চাদের সংখ্যাও অনেক। নিরারা এসেছে বলে তিন, চারটা ঘর খালি করে দেওয়া হয়েছে ওদের জন্য। তাই থাকার ব্যাপারটা নিয়ে হাহুতাশ করতে হলো না। আরামসেই সকলের রাত চলে যাবে চার ঘরে।

নিরা বসেছিল জানালার ধারে। গান শুনছিল সে। ফোন বেজে উঠলো তখনই। ইমু ফোন করেছে। রিসিভ করতেই মেয়েটার কাতরভরা কন্ঠ ভেসে এলো। সুরে কৃত্রিম হাহাকার। যদিও ওর কথা বলার ধরন সবসময়ই এমন থাকে, তবে আজকের ঘটনা বোধহয় ভিন্ন। ইমু রীতিমতো মরাকান্না জুরে দেওয়ার স্বরে কথা বলছে আজ।

“দোস্ত রেএএএএএ! নিরুউউউউউ! আমার হয়ে মসজিদে একটা মিলাদ পড়াইস, বন্ধু। আজকে আরেকটু হলে এমারজেন্সি ফ্লাইটে করে দুনিয়া ছাড়তে হইতো। যা বাঁচা বাঁচলাম রে, মামা। আল্লাহর নামে চার রাকাত নফল নামাজ পড়ছি সাথে সাথেই।”

আশ্চর্য কথা! এই ভেলকির নামে মসজিদে মিলাদ পড়ানোর মতো এমন কী ঘটলো! নিরা উদ্বিগ্ন হয়ে শুধায়, “কী হয়েছে তোর? হাহুতাশ করছিস কেন এভাবে?”

ইমুর অবস্থা আহারে বইন, ইশরে বইন ধরনের। সে এলাকার ভাবী সমাজের মতো পেঁনপেঁনিয়ে বলল,

“আর বলিস না দুঃখের কথা। দুপুরে ছোটভাই বিচ্ছুটার আবদার রাখতে গিয়ে ছাঁদে গিয়েছিলাম বৃষ্টিতে ভেজার জন্য। আম্মু বার-বার মানা করেছে যেতে। তা-ও গেলাম। ক’দিন ধরে বৃষ্টির পানি জমে জমে ছাঁদ যে পিচ্ছিল হয়েছিল সে খেয়াল ছিল না৷ ওইযে আমার জবা গাছটা আছে না? ওই জায়গাটার নিচে ধপাস করে যা আছাড়টা খেলাম রে ভাই৷ মানুষ না হয়ে যদি বোম হতাম, ঠিকি ধরাস ধরাস করে ফেটে যেতাম এতোক্ষণে। জন্মের শিক্ষা হয়েছে ভাই। কোমড়টা শেষ দোস্ত। আমার বয়স বোধহয় কুড়িতেই আশি ছাড়াল রে। এই জীবনে আর বিয়াশাদী হবে বলে মনে হয় না। হাসপাতাল থেকে ফিরেই খুড়িয়ে খুড়িয়ে হাঁটছি। তুই ভাবতে পারছিস আমার অবস্থাটা? লাইক আ লাঠিতে ভর করে হাঁটা টাইপ অল্ড লেডি।”

নিরা হাসি পেলো খুব। পরক্ষণেই চিন্তায় পড়ে গেলো। থম মেরে বসে রইলো কিছুক্ষণ। কী জবাব দিবে, ভেবে পেলো না। দিনদুনিয়ার কাকতালীতার একটা লিমিট থাকা দরকার। অলৌকিক ঘটনা জীবনে অনেক শুনেছে, তবে এসব কী? সামান্য মিথ্যা বলার বদৌলতে ইমুটার লাইফ জমের দুয়ারে যেতে যেতে রক্ষা হলো? এমন ঘটনা তো বিরল। মনে মনে নিজের উপর মহা বিরক্ত হলো সে। ছিহ ছিহ ছিহ! একটা মিথ্যা বলার জন্য বেচারীটা আজ লাইফ খুয়াতে নিচ্ছিল। নিজেকে খুব শাঁসালো নিরা। কেন যে শুধু শুধু সকালে ইমুটাকে নিয়ে এতবড় ডাহা মিথ্যা কথাটা বলতে গেলো। আহারে! আল্লাহ বোধহয় এই মিথ্যা কথারই কর্মফল দেখালেন ওকে দিয়ে। বেচারী ইমুটিমু!

“কিরে? তব্দা খেয়ে গেলি কেন?”

নিরার ধ্যান ছুটলো ওর ডাকে। হতাশ শ্বাস ফেলে বলল, “সিরিয়াস কেইস নাকি? এক্সরে করিয়েছিস?”

“নারে বাবু, প্যানিক খাইস না। সামান্য ব্যথা পেয়েছি। মেডিসিন দিয়েছে। সেড়ে যাবে এক সপ্তাহর মধ্যে। তুই বল, ভার্সিটিতে আসছিস না কেন?”

নিরা বেশ কিছুক্ষণ চুপ থেকে হুট করেই বলে,

“বিয়ে করে ফেলেছি।”

ইমু অবাক হলো না। হু হা করে হেসে উঠলো। যেনো বিরাট কৌতুক শুনলো সে। গা-ছাড়া ভাব নিয়ে বলল, “নাইস জোকস, বেইবি। আরেকটা বল।”

“বিশ্বাস হচ্ছে না? এক সপ্তাহ হয় করেছি।”

ইমু এবারও হাসল গগন কাঁপিয়ে।

“বলেছি নাকি বিশ্বাস হচ্ছে না? এইযে হাসছি, হু হা হা। আই এম হ্যাপি ফর ইউ ডার্লিং। স্বামী, সন্তান নিয়ে দীর্ঘজীবী হ।”

নিরা বিছানায় উপুড় হয়ে শুতে শুতে বিদ্রুপ করে বলে, “যেদিন সত্যি সত্যি স্বামী,সন্তান নিয়ে হাজির হবো, সেদিন যেনো টাস্কি না খাস৷ তখন যেনো আবার আবেগে চোখ না ভিজে। বান্ধবী তুই বেঈমান, যেনো না বলিস।”

“সে তো একদিন না একদিন করবিই।”

নিরা ধমকে উঠলো, “ইমুর বাচ্চা! আই এম সিরিয়াস। আমার সত্যি বিয়ে হয়েছে ভাই। পালিয়ে করেছি। তোকে না বলতে পেরে পেট কিলবিল করছিল। এখন মনে হচ্ছে তোর মতো আহাম্মককে বলেও ভুল হয়েছে।”

“কীভাবে বিশ্বাস করবো? আদতেও বিশ্বাসযোগ্য? তুই? নিরা দ্য ইনট্রোভার্ট রমণী পালিয়ে বিয়ে করে ফেলেছে? এই দিনও দেখতে হবে আমাকে। হিটলার কবর থেকে উঠে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু করেছে শুনলে বিশ্বাস করতাম, পৃথিবীটা তিনকোণা শুনলেও বিশ্বাস করা যেতো, বাট তুই পালিয়ে বিয়ে করেছিস? হা হা হা, হাসালি বন্ধু।”

“প্রমাণ চাই? ওয়েইট।”

“এআই এডিট করা ছবি পাঠাসনা যেনো।”

নিরা তাৎক্ষণিক ফোন কেটে ওকে একটা ছবি পাঠায়। সিন করে বিদ্যুৎ গতিতে ফোন করলো ইমু।

“হুয়াট দ্য বিস্ময়কর ব্যাপার!! হাউ ইজ দ্যট পসিবল? আমি কি বেঁচে আছি? নিরা, দোস্ত আমাকে বোধহয় জ্বিনে ধরেছে। দুইটা থাপ্পড় মার। সেন্স হারাইছে সম্ভবত। আমি মাত্রই ছবিতে তোকে আর নাবিল ভাইকে কাজী অফিসে দেখলাম। আমার ফোনটা নির্ঘাত নেশা করছে ভাই। ওকে লেবুর পিনিক দেওয়া দরকার।”

নিরা হাসল উচ্চস্বরে। ইমুর বিস্ময়ভাব কাটছে না কিছুতেই৷

“ক্যামনেএএএএএএএএএ! নাবিল ভাইকে তুই ক্যামনে পটালি!!! লাখো রমণীর ক্রাশকে তুই এমনে ক্যামনে কেড়ে নিলি। হায় হায় হায়! তোর নিষ্ঠুরতা দেখে আসমান কাঁপে, জমিন কাঁপে, জীবন-যৌবন আন্ধার হইয়া আসতেসে ভাই। তোর দিলের মধ্যে কি আল্লায় মায়া-দয়া বলতে কিছু দেয়নাই রে? এসব রীতিমতো জুলুম, অবিচার।”

নিরা ঝাঁঝিয়ে ওঠলো।

“এই মীরজাফর, এই, তুই আমার ফ্রেন্ড হয়ে এত নাবিল ভাইপ্রীতি কোথায় রাখিস রে হারামি? সামনে পেলে কানের নিচে ঠাটিয়ে লাগাতাম দুটো। তোদের উজবুককে আমি পটাতে যাবো? আমি? তোর মনে হয় আমি পটিয়েছি?”

ইমু বোধহয় এবার সত্যি সত্যিই বিশ্বাস করলো।

“মাথা ঠান্ডা কর বাল৷ তুই রীতিমতো আমাকে হাই বোল্টেজের শক খাইয়েছিস রে মা। ক্লিয়ারলি বল৷ কাহিনী কী?”

“এখন বিয়ে বাড়িতে আছি। কুমিল্লায়। আব্বুর চাচাতো ভাইয়ের মেয়ের বিয়ে। দাওয়াতের পর্ব শেষ করে ঢাকায় ফিরলে বাসায় আসিস, বলবো সব।”

“কবে আসছিস?”

“দু’দিন পর।”

ইমু প্রবল উত্তেজনায় ফেটে পড়ার ন্যায় বললো, “তাড়াতাড়ি আয় তাড়াতাড়ি আয়। উত্তেজনায় পেট ফেটে যাচ্ছে আমার।”

সিম থেকে ফোন করছে কেউ। নিরা নাম্বার না দেখেই বললো, “ইমু, রাখছি হে? কেউ ফোন করছে সিমে।”

নিরা সিমের ফোনটা রিসিভ করতেই অপর পাশের শান্ত পুরুষালী স্বরটি খুব নরম সুরে ডেকে উঠে, “বউ, কই তুই?”

এহেম প্রশ্নে নিরা অবাক হয় কিছুটা।

“কোথায় থাকার কথা আমার?”

“আমার মনে।”

কপাল চাপড়ায় নিরা। হতাশ শ্বাস ফেলল একটা।

“বাইরে আয়৷ ঘরে একা বসে থাকতে হবে না। তোর প্রটেক্টর এসে গেছে। বের হ।”

নিরা চোখ বড় বড় করে ফোনে চোখ বুলিয়ে সময়টা দেখে নিলো। রাত প্রায় বারোটা বাজতে চললো। তাৎক্ষণিক ঘরের জানালা খুলে দিয়ে উঁকিঝুঁকি মারলো বাড়ির উঠুনে। উঠোনের মাঝামাঝিতে প্যান্ডেল করা হয়েছে। সেখানে সব ভাই-বোনেরা বসে আছে। আড্ডা দিচ্ছে, হাসাহাসি করছে। নাবিল একটু দূরত্বে দাঁড়িয়েই ফোন করেছে ওকে। নিরা তাকাতেই নাবিল ওকে চোখ টিপলো আড়ালে। ছায়াময় হেসে ইশারা করলো নিচে নামতে।

“তুমি? এতো রাতে?”

“বউকে ছাড়া মন টিকছিল না।”

নিরা চরম বিরক্তবোধ করলো।

“এমন একটা ভাব করছো যেনো বহু বছর হয়ে গেলো বিয়ের। আর বিয়ের পর কতো থেকেছি তোমার সাথে। এত রাত করে কেন এসেছো?”

“শোন, বি মাই বাধ্য বউ। মুখে মুখে তর্ক করবি না একদম৷ সাথে থাকলেও তুই আমার বউ, না থাকলেও আমারই। দুঃখ মনে করিয়ে বুক পুড়াবিনা। বিয়ে যেহেতু করে ফেলেছি, পালাবি আর কোথায়? আসতে তো হবে সে-ই আমার কাছেই। তখন কাছে কেন শুধু? শরীরের সাথে শরীর মিশবে, ঠোঁটের সাথে ঠোঁট। আঠার মতো সারাদিন লেগে থাকবো তোর সাথে। ছাড়বোই না একদম। মাথায় নয়তো কোলে নিয়ে বসে থাকবো৷ এসেই দেখ।”

“ছিহ ছিহ ছিহ! বেহেলাজ লোক! তুমি খুব খারাপ, নাবিল ভাই। এমন অসৎ, কুৎসিত ভাবনা মাথায় খেলে কীভাবে? অসভ্য লোকের অসভ্য ইমাজিনেশন।”

নাবিল ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলল,”সময় নষ্ট করছিস তুই। নিচে আয়। একটা জিনিস দেখাবো।”

“পারবো না৷ এতোগুলো মানুষের সামনে তোমার সাথে আলাদা করে আলাপ করতে পারবো না। ব্যাপারটা দৃষ্টিকটু দেখায়।”

“তোর আহাম্মকের দলের দৃষ্টিকটুর খেতা শেলাই করি আমি৷ আসবি তুই? নাকি আমাকেই আসতে হবে? দেখে মনে হচ্ছে ফাঁকা ঘরেই আছিস। আমি আসলে কিন্তু এক ফোঁটাও সুযোগ নষ্ট করবো না। বৈধতার ষোলআনা উশুল করে তবেই ছাড়ব, বুঝে নিস।”

নিরা ছলছল চোখে চায়। এই পাগলের প্রলাপ বকা লোককে এবার কীভাবে থামাবে? বললেই কি মানবে এই লোক? বলেছে মানে, ঠিকি চলে আসবে।

নিরা কাঁদো কাঁদো কন্ঠে বলে, “ভাল্লাগেনা! আসছি।”

ফোনের ফ্লাশলাইটের আলো জ্বালিয়ে বাড়ির পেছনের পুকুরঘাটের দিকে ছুটলো নিরা। আশপাশটা ঝোপঝাড়ে ঘন হয়ে আছে। চোখ বুলায় ডানে-বামে। কোথাও নেই লোকটা। ঘুটঘুটে অন্ধকার চারিদিকে। কয়েকটা বেঙ আর ঝিঁঝি পোকা ছাড়া তেমন কারো উপস্থিতি টের পাওয়া যাচ্ছে না। তবে জায়গাটা শুনশান। একটু ভূতুড়েও। ভয় হচ্ছে এবার নিরার৷ চোখ-মুখ খিঁচে আয়াতুল কুরসি জপলো মনে মনে। ফিরে যাওয়ার উদ্দেশ্যে ঘাড় কাত করতে যাবে ঠিক তখনই কারো উষ্ণ নিঃশ্বাস নিরার ঘাড় শীতল করে তুললো। নাক টেনে সে আবার নিরার শরীরের সবটুকু মেয়েলী সুভাস শুষে নিলো। নিরার চোখ বুজে আসে। শিহরণ জাগে সারা দেহে। তপ্ত শ্বাসের মালিক এবার ঘাড় ছেড়ে কোমড় পেচিয়ে ধরলো৷ আবেদনময় কন্ঠে আওড়াল, “ভয় কেটেছে এবার?”

নিরা এক ঝটকায় ওকে নিজের কাছ থেকে ছাড়িয়ে নিলো। শুষ্ক ঢোক গিলে আশপাশটা পরখ করলো। ফোন উল্টে ধরাতে ফোনের চোখ ঝাঁঝানো আলো পড়ল নিজের মুখেই। ভয়ে ভয়ে জিভ দিয়ে ঠোঁট ভেজাচ্ছে ক্ষণে ক্ষণে নিরা। নাবিলের দৃষ্টি নেশাতুর। নিরা ভীত পায়ে পেছাতে পেছাতে বলে, “খুব খারাপ হচ্ছে কিন্তু, নাবিল ভাই। আমি ফুপ্পিকে বলে দিবো সব।”

নাবিল নিঃশব্দে হাসল ঠোঁট কামড়ে। ওর পায়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ায় নিজের পা।

“শুধু ফুপ্পি? ফুপ্পির ভাইকেও বল। আমি চাই তুই গলা ফাটিয়ে পুরো বিশ্বকে জানা। আকাশ-বাতাস, ছায়াপথের সকলের জানার অধিকার আছে। বিশ্বের টপ নিউজ হওয়া চাই। বড় বড় টিভি চ্যানেলের হেডলাইন হওয়া চাই কিছুটা এমন, ” রাতের অন্ধকারে বউকে একা পেয়ে ঝোপঝাড়ে নিয়ে এ কী করলো নাবিল!” নাবিল কী করবে? কী করা উচিৎ বউকে একা পেয়ে? বল?”

নিরা এক পা এক পা করে পেছাতে পেছাতে কখন যে ঘাটের সিঁড়ি পর্যন্ত এসে পড়ল, খেয়াল করলো না মেয়েটা। আকস্মিক পা পিছলে পড়ে যেতে নিতেই নাবিল কোমড় পেঁচিয়ে ধরলো তাৎক্ষণিক ওকে। চোখ-মুখ খিঁচে রেখেছে নিরা৷ মুখে জপছে এলোমেলো দোয়া-দরুদ। শরীর কাঁপছে ভয়ে। ঝুলন্ত ব্রিজের হাতটা তখনও ওকে আগলে রেখেছে পরম যত্নে। নিরা পিটপিট করে চোখ মেলে চায়। চোখের সম্মুখে আবিষ্কার করে একজোড়া মাদকীয় চোখ আর লালসামাখানো ঠোঁট। নাবিলের মুখটা একেবারেই নিরার মুখের সম্মুখে। বিমোহিত হেসে আকস্মিক এমন অবস্থাতেই বুকে জড়িয়ে ধরলো ছেলেটা। ঘটনায় আকস্মিকতায় নিরা বিস্ময়ে হতভাগ। চোখ কোটর থেকে বেড়িয়ে আসার জোগাড়। কপাল ঘেমে যাচ্ছে আতঙ্কে।

“নাবিল ভাই, প্লিজ ছাড়ো! কেউ এসে পড়লে কেলেঙ্কারি হয়ে যাবে।”

নাবিল নেশাতুর ঠোঁটে আওড়ায়, “কেউ আসবেনা এদিকে।”

লোকটা কেমন উন্মাদের মতো শ্বাস ফেলছে ঘাড়ে মুখ ডুবিয়ে। আবেদনময় কন্ঠে প্রাণের দাবী মেটানোর অভিলাষে আবদার করছে, “একটা চুমু খাবো শুধু।প্লিজ! না করিস না।”

নিরা তাৎক্ষণিক দুই হাত দিয়ে ওকে ছাড়ানোর জন্য বহু ধস্তাধস্তি করলো। ফায়দা হলো না বিশেষ। লোকটা শিকলের মতো পেঁচিয়ে রেখেছে শক্ত করে ওকে। নিরা ঠোঁট উল্টে গোঙ্গালো, “আম্মুউউউউউ! বাঁচাও!”

নাবিল বিরক্তিতে চ সূচক শব্দ করলো মুখে। আলতো করে কামড় বসালো গালে। রাগী রাগী মুখ করে বললো,

“জোরাজোরি করতে চাচ্ছি না। নিজ মুখে সম্মতি দে। বল, হ্যা।”

নিরা তাৎক্ষণিক তোতাপাখির মতো মাথা নাড়িয়ে বলে, “না।”

“হ্যা বলো পাখি। স্বামীর আদেশ শিরোধার্য। অভিশাপ দিলে জ্বলেপুড়ে মরবি। প্রশ্রয় দাও এখন আমাকে। ইউ শুড।”

নিরা মাথা নাড়ায় ভয়ে ভয়ে।”উহু।”

“আমি নিজ থেকে আদায় করার যুদ্ধে নামলে কিন্তু শুধু চুমু না, আরও কঠিন কিছু হবে। মুখের শ্বাসটুকুও আমার দখলে থাকবে।”

“আয়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়া!”

নাবিল ঠোঁটে আঙুল রাখে ওর। মুচকি হেসে বলে, ” চুপ। শান্তি চাই? যেতে চাস?”

নিরা মাথা উপরনিচ করে বোবার মতো।

“তাহলে বিরক্ত করবি না। আমার কাজ শেষ হলে লক্ষী ছেলের মতো নিজেই ছেড়ে দিবো। নাউ ক্লোজ ইউর আইস। ডু দ্যট।”

কিছুক্ষণ পিটপিট চোখে চেয়ে থেকে বাধ্য হয়েই চোখ বন্ধ করলো নিরা। ঠোঁট উল্টে থাকার দরুণ ওকে দেখাচ্ছে ময়নাপাখির মতো আদুরে। মেয়েটার ভেতরে লোকলজ্জার আকাশ সমান ভয়। নাবিল হাসল মৃদু। নিজের মনের দাবী মেটানোর কামনায় ধূসর ঠোঁট দ্বারা পরম আদরে ছুঁয়ে দিলো নিরার লাজুক ওষ্ঠদ্বয়। পাতলা,মসৃণ ঠোঁটজোড়া পুরুষালি ঠোঁটের ছোঁয়া টের পায় ভীষণ নিখুঁতভাবে। ওরা সহসাই কেঁপে উঠে ভূমিকম্পের ন্যায়। নিরার শ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম। নাবিল সেসবে দুআনার মায়া দেখায় না। এই শব্দটাই যেনো মুছে দিলো নিজের অবিধান থেকে। বেশ কিছুক্ষণ পর যখন পুরোপুরি ঠোঁটেরা সন্ধিতে মত্ত হয় অপর পক্ষের ঠোঁটেদের সঙ্গে, ওরা আপন হয় একে-অপরের? নিরা সে-ই মুহুর্তে উপলব্ধি করে, সে নিজের চৈতন্যে নেই। ভীষণ অস্থির হচ্ছে মন-প্রাণ। অনুভূতিটা একটু কেমন কেমন যেনো। খুব লাজুক, আবার মিষ্টি। জীবনের প্রথম ঠোঁটের আলিঙ্গন তার। অপর মানুষটাও আবার তারই জীবনের অবিচ্ছেদ্য একটা অংশ। মাত্র কিছুদিন আগে পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া স্বামী। এই প্রথম লোকটার এহেম নৈকট্য পেয়ে নিরার নারীসুলভ মন অচিরেই গলে যায় মোমের মতো। দেহ দাবী করে আরও প্রশ্রয়ের। মন পায় না তৃপ্তি। মস্তিষ্ক হয় এলোমেলো আর সর্বাঙ্গ হয় অস্থির। বেশ অনেকটা সময় পর নিজের মনের সবটুকু কামনা মিটিয়েই নাবিল ছাড়ল ওকে। নিরা তাৎক্ষণিক ওর বুকে মুখ লুকায় পরম লজ্জায়। নাবিল হাসে মিটিমিটি। হাত রাখে মাথায় আরও কাছে এসে কানের সম্মুখে মুখ নামিয়ে বলে, “ভালোবাসার প্রথম পরশ ছিল এটা। আমার আদরের অর্ধাঙ্গিনী, আমার প্রাণ, তোমার নিশ্বাস সারাজীবন এভাবেই আঁটকে থাকবে আমার উন্মাদ ঠোঁটে। তুমি আদরে ভস্ম হয়ে প্রতিবার এভাবেই নিজেকে গুটাবে নাবিলের উথালপাতাল বক্ষপিঞ্জরে। তোমার লাল নাকের ডগা আমার বেহেলাজ কর্মকাণ্ডে হবে আরও রক্তিম। আমি তবুও ভদ্র হবো না। হবো আরও উন্মাদ, আরও অস্থির। তোমার রাঙা মুখ আমায় আরও নেশা দেবে, ব্যাপারটা চমৎকার না?”

নিরা অস্থির চিত্তে শ্বাস ফেলতে ফেলতে ওর বুকে এলোপাতাড়ি কিল-ঘুষি মারতে মারতে নিজের অস্বস্তিভাব লুকালো। শার্টের বুক খামচে ধরে শেষ নিঃশ্বাসটুকু ওর বুকে ফেলে তাকায় লোকটার পলকহীন চাহুনির পানে। চোখ বুজে আবারও লজ্জা লুকায় নিজের। নাবিল হাসলে নিরা অকস্মাৎ ওকে ধাক্কা মেরে এক দৌড়ে ছুটলো বাড়ির দিকে। নাবিল মাথা চুল্কাতে চুল্কাতে ওর যাওয়ার পানে চায়। প্রেয়সীর নুপুরের ঝমঝম শব্দ কানে বাজছে তার। হাসে সে-ও বিমোহিত। তৃপ্তির শ্বাস ফেলে চোখ বুজে বিরবির করে, “ইশশশ! লাজুকলতা আমার!”

চলবে।