গল্প #রোদ_পোহাবার_ছুতোয়
#পর্বঃ২৯
#নাজমুন_নাহার
নাবিলের ঘরের বিল্ট-ইন ফিচার খাটের এককোণে বসে চিন্তিত ভঙ্গিতে নোখ খুঁটছে শাওন। নাবিল নিজেও পুরো ঘরময় ঘুরে ঘুরে পায়চারি করছে শেষ আধাঘন্টা ধরে। দু’জনের চোখে-মুখে রহস্য উদঘাটনের ছটা। শেষ তিরিশ মিনিট ধরে কী সব কুটনৈতিক বুদ্ধি এরা করছে, কে জানে।
নাবিলের হলুদ পরানো শেষ সে-ই সন্ধায়। নয়টার পরেই শুরু হবে নিরার হলুদ পরানো। এই মুহূর্তে পুরো বাড়ি ফাঁকা। শাওন আর নাবিল ছাড়া ওদের বাড়ির সকল আত্মীয়স্বজনই মাত্র নিরাকে হলুদ পরানোর উদ্দেশ্যে রওনা হলো। এক এক অঞ্চলের বিয়ের এক এক উদ্ভট নিয়ম। এই যেমন নাবিলদের বংশগত নিয়ম, বিয়ের আগের রাতে বর-কনের দেখাসাক্ষাৎ হওয়া কড়া নিষেধ। সেদিন পুরো জাতি কনেকে দেখার অধিকার পাবে, পাবে না শুধু বেচারা বর। বরকে রেখে চৌদ্দ গোষ্ঠী বউকে হলুদ পরাবে এটা কেমন আশ্চর্যজনক কথা? এমন একটা শুভ দিনে বউকে সে সামনাসামনি দেখতে পারবে না? নিরুকে কেমন লাগছে সামনে থেকে দেখতে হবে না? এমন বৈষম্যের নিয়ম কারা বানালো? বাঙালির কি খেয়েদেয়ে কাজকাম নেই? বসে বসে নিয়ম লিখবে আজাইরা। তা বানাক যে কেউ। নাবিল সে-ই নিয়মকে বুড়ু আঙুল দেখিয়ে দিবে। এসব ছাতারমাথার নিয়ম নাবিল মানলে তো! কিন্তু কীভাবে কী?তার এই মা জননী তো একটা মহা আতঙ্ক। মহিলা ঠিকি ছেলের শয়তানি ধরে বসে আছে। যাওয়ার আগে কড়া গলায় শাসিয়ে বলে গিয়েছে, “নিরাদের বাসার আশেপাশে যদি ঘেঁষেছিস আজ, তোর বিয়ে করার স্বাদ মিটাবো, বাদর ছেলে।”
বিয়ে করার স্বাদ তো এ জন্মেও মিটবে না, আম্মাজান। এই ভয়ংকর রমণীকে আপনার ছেলে প্রতি বছর-বছরই বিয়ে করতে চায়। বিয়ে করা বউকে নিয়ে সামাজিক আনুষ্ঠানিকতা ওরফে সার্কাস আজ আর মানা হচ্ছে না। বউকে না দেখলে আজ আর প্রাণে বাঁচবো না। স্যরি, সুইট লেডি। ইতিহাস রটাতে হলে নাবিলদের অতো ভয় পেলে চলে না। আই হ্যাভ টু টেইক দ্যিস রিস্ক। যেখানে ঝুঁকি নেই, সেখানে কিছুই নেই।
—–
বর্ষা এই প্রথম এলো নিরাদের বাসায়। তবে প্রথম যে এসেছে সেটা একদমই মনে হচ্ছে না। শেষ দু’দিন ধরে নাবিলদের বাসায় কোনো সঙ্গ না পেয়ে একেবারে একঘেয়ে লেগেছে। ছোট কাকার বাসায় বেশিরভাগই ছিল নাবিলের বন্ধুসমাজ। তবে এখানে এসে ভালো লাগছে। নিরার অনেক বন্ধুদের সাথে ওরও বন্ধুত্ব হয়ে গিয়েছে ইতোমধ্যেই। মীরা আপু যথেষ্ট আন্তরিক। বিশেষ করে ‘ইমু’। আসার পর থেকে বর্ষা ইমুর সাথে থাকছে বেশিরভাগ সময়। মেয়েটা মজার। খুব মজা করে কথা বলে। ওর আশেপাশে থাকলে এমনিতেই মন ভালো হয়ে যায়। তবে এই মুহূর্তে আপাতত ইমুকে ছাড়াই বসে রইলো ড্রইংরুমে, সাথে নিলয়। নিলয়ের সাথে সরাসরি এখনও কথা হয়নি ওর৷ তবে দু’জন দু’জনকে আড়ালে আড়ালে দেখছে ক্ষানিক পর পর। ইনট্রোভার্ট হওয়ার দরুণ একই রুমে বসে থেকেও ম্যাসেজ করে কথা বলতে হচ্ছে বেচারাদের। ওদের সম্পর্কটা এখন আর আগের মতো নড়বড়ে নয়। ওরা কী চায়, সেই সম্পর্কে দু’জনেই পরিস্কার এই ক’দিনে।
নিলয়ের ম্যাসেজের মাঝে এক অন্য প্রসঙ্গ টেনে বসলো বর্ষা। আরক্ত হেসে লিখলো,
“বড় মা’কে আমি আপনার কথা জানিয়েছি,নিলয়।”
নিলয় অবাক হয়ে একপলক চাইলো ওর কাঁপা কাঁপা লজ্জায় লাল হয়ে যাওয়া মুখের পানে৷ সঙ্গে সঙ্গে চোখ নামিয়ে ফেললো বর্ষা।
“কী বলেছো বড় মা’কে?”
“বলেছি আমি একজনকে বিয়ে করতে চাই।”
“মিথ্যে কেন বললে?”
বর্ষা অবাক হয়। “মিথ্যে!”
“বিয়েটা তো আমি তোমাকে করতে চাই, তুমি করতে চাও বলে সব ক্রেডিট নিজের দিকে নিয়ে গেলে কেন?”
বর্ষা হাসল মৃদু। সেই হালকা হাসিটুকু পিয়ানোর সুরের মতো বিধলো নিলয়ের প্রসস্থ বুকে। বর্ষা লিখলো,
“বড়মা আপনার সঙ্গে দেখা করতে চায়। ওরা এখনই আমাকে বিয়ে দিতে চায় না। তবে হয়তো পারিবারিকভাবে এটার ভবিষ্যৎ ভেবে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।”
“মানে! বিয়ে দিতে চায় না? কেন? আমার মধ্যে কোনো কমতি আছে, বর্ষা?”
“ধুর! তা কখন বললাম। আপনার কোনো কমতি নেই।বরং আপনাকে লাইফটাইমের জন্য পাওয়া যে-কোনো মেয়ের জন্য ভাগ্যের ব্যাপার। মানে এই ধরুন বাকদত্তা হয়ে থাকতে হবে একটা বছর। বাবা-মা দেশে আসবে একবছর পর। আপনিও এই একটা বছর নিজেকে আরও তৈরি আসুন কানাডায়।”
সঙ্গে সঙ্গে নিলয়ের শ্যামলা মুখটায় আঁধার নেমে আসে। বর্ষা খেয়াল করে তা। অনেকটা সময় ধরে নিলয়ের শ্যাম অভিমানী মুখটায় দেখে ভীষণ টান টের পায় মেয়েটা। অসম্ভব মায়া লাগলো লোজটার জন্য। ঘর থেকে ইফরান চলে যেতেই বর্ষা সাহস করে নিলয়ের কাছাকাছি অথচ একটু দূরত্ব মিটিয়ে বসে। স্বর নিচু করে বলে, ”
“নিলয়, আমাদের সম্পর্কটার নাম এই মুহূর্তে বন্ধুত্ব ছাড়া আর কী দেওয়া যেতে পারে আমার জানা নেই। আপনাকে আমার প্রেমিক ভাবতে মোটেও ভালো লাগছে না। আপনি আজীবন আমার সঙ্গে থাকলেও এই বন্ধুত্বের নামটাই আমি বহন করতে চাই। পৃথিবীতে সব সম্পর্কের নাম যে ‘প্রেম’ হতে হবে, এমন কোনো কথা নেই। আপনার সাথে কথা বলে, সময় কাটিয়ে যে নিরাপত্তাটা আমি পাই, সেটা আমি অন্য কোথাও পাইনি। আপনি বেস্ট ফ্রেন্ডের মতো কম্ফোর্টেবল। এইযে ইদানীং আমি সেধে সেধে আপনার সাথে এতো কথা বলি, ফোনে খিলখিলিয়ে হাসি, এই ব্যাপারগুলো আমার মধ্যে আগে ছিল না, বিশ্বাস করুন। সবকিছুই আপনার সঙ্গের জাদুবল। এমন একটা মানুষকে বিনা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে পেয়েও হারানোর মতো বোকামিটা আমি কিছুতেই করতে চাই না। আপনি মন খারাপ করবেন না, নিলয়। আমি আছি। কোথাও যাচ্ছি না। এই একটা বছর আমরা আগের চেয়ে বেশি রাতভর কথা বলবো, সময়ে-অসময়ের বিরক্ত করবো, অকারণে আপনার বিচ্ছিরি রসিকতা শুনে হেসে ফেলবো। এগুলো করতে করতেই সময় স্রোতের মতো কেটে যাবে দেখবেন। কাউকে ভালোবাসলেই যে সঙ্গে সঙ্গে বিয়ে করে ফেললেই সব মিটমাট হয়ে যায়, ব্যাপারটা কিন্তু এমন না। আমাদের পূর্ণতাটার নাম হোক ‘অপেক্ষা’।
নিলয় একটা ভারী শ্বাস ফেলে বর্ষার ফর্সা হাতের পানে চাইলো। কমলা-লালের সংমিশ্রণে কাঁচের চুরি পরেছে মেয়েটা। সেভাবেই চেয়ে রইলো নিঃশব্দে অনেকক্ষণ। হাত থেকে চোখ ফিরিয়ে চাইলো ওর শান্ত নদীর মতো মুখটায়। লাল পাড়ের কমলা রঙের একটা শাড়ী পরেছে সে। ধবধবে ফর্সা শরীরে এই রঙটা দেবীর মতে ঠেকছে। নিলয় অভিমান করে সেভাবেই কিছুক্ষণ চেয়ে থেকে উঠে দাঁড়ালো। যাওয়ার আগে কী ভেবে আবারও ঘাড় বাঁকিয়ে চাইলো। ঘোরলাগানো দৃষ্টি ছুঁড়ে বললো, “শুনো, তোমাকে আজ অসম্ভব বিচ্ছিরি লাগছে। অসম্ভব মানে অসম্ভব। এই বিচ্ছিরি মেয়েটা নিজেকে একটু আড়াল করে রাখুক। বুকে ব্যথা হচ্ছে আমার।”
বেশ কিছুক্ষণ ওর গম্ভীর অভিমানী মুখে চেয়ে থেকে অকস্মাৎ শব্দ করে হেসে ফেললো বর্ষা। সাথে উপলব্ধি করলো, নিলয়ের প্রবল কঠোর ব্যক্তিত্বের আড়ালে লুকিয়ে আছে অসাধারণ একটা ছেলেমানুষ ধরনের ব্যক্তিত্ব। একটা অবুঝ মন, একটা চমৎকার মানুষ।
—-
আলমারি থেকে দু’টো নতুন শার্ট বের করে একটা নিজে পরলো আরেকটা শাওনকে পরতে দিলো নাবিল। মাথায় ক্যাপ লাগিয়ে বিনাবাক্যে নেমে পড়ল মিশন ‘বউ দেখা লাগবে’ যুদ্ধে। হয় মরবে, নয় বউ দেখবে। কিন্তু আজ এর একটা রফাদফা হওয়াই চাই।
গুলবাগের গলিতে ঢুকেই মাথার ক্যাপ নিচু করে ফেললো নাবিলরা। মালিবাগের বেশিরভাগ এলাকাতেই ওদের পরিচিতি শীর্ষে। পাড়ার চায়ের দোকানদার থেকে শুরু করে গন্যমান্য সকলের কাছেই ওদের মুখ পরিচিত। সবচেয়ে বড় কথা, গুলিবাগে এই মুহূর্তে কারো দৃষ্টিতে পড়ে যাওয়াটা আতঙ্কের। সময়টা বিপদজনক।
গেইটের সামনে দিয়ে বেশ কিছুক্ষণ ঘুরঘুর করলো। এতো এতো আলোর মধ্য দিয়ে সামনের দিক দিয়ে ঢুকাটা ঠিক হবে না। পেছনের দিকের দেয়াল টপকানোটাও একটু কঠিন। মামুটা দেয়ালের উপরে যেই পরিমাণ কাচ দিয়েছে, একটা শরীরের চিপাচাপায় ঢুকতে পারলেই হলো। গতি না পেয়ে আবার ফিরলো সামনের দিকে। শাওন আড়মোড়া ভেঙে হাই তুলতে তুলতে পেছনে ঘুরে তাকাতেই মাথায় বজ্রপাত হলো। তাৎক্ষণিক নাবিলের হাত টেনে সরে দাঁড়ালো নিরাপদ দূরত্বে। নাবিল শুধাতেই শাওন চোখের ইশারায় কনফেকশনারিতে ইঙ্গিত করে বলে, “বন্ধু, ওইযে তোমার শশুর ডেডি। ধরা পড়লে নতুন জামাই, তোমার খবর আছে আজকে।”
জয়নাল সিকদার কিছু একটা কিনে বিল মিটাচ্ছেন দোকানের। নাবিল সেদিকে চেয়ে সতর্ক স্বরে বললো, “মামু বাড়িতে নেই, এই চান্সে ঢুকে যাই আয়।”
সিকদার বাড়ির চোকাঠ পেরোতেই কাঁচা হলুদ আর বাহারি রকমারি রান্নাবান্নার দারুণ সুভাস ভেসে আসছে। চারিদিক ম-ম করছে মন মাতানো রজনীগন্ধা, গাদা আর গোলাপের সুরভীত ঘ্রাণে। ফুলে ফুলে সেজেছে অল্প বয়সী তরুণীরা। ঘরময় দৌড়াদৌড়ি করছে ছোট্ট ছোট্ট শিশুরা। নাবিলরা ভীর ডিঙিয়ে প্রথমে নিরার ঘরে উঁকি মারলো। কেউ নেই বুঝতেই ঘরে ঢুকলো। ভেতরে ঢুকেও কাউকে দেখতে পেলো না। শাওন ফ্যান ছেড়ে ক্লান্ত ভঙ্গিতে খাটের উপর বসতে বসতে বলল,
“একটু রেস্ট নেই তোর মামাতো বউয়ের ঘরে, দোস্ত৷ যা গরম পড়সে। নিরার রুমটা ঠান্ডা আছে ভালো। ন্যাচারাল এসি।”
বলেই খাটের উপর ক্লান্ত ভঙ্গিতে গা এলিয়ে দিলো শাওন। নাবিল সজোরে কোমরে লাত্থি মেরে বলল, “উঠ, শালা। এই ঘরে রেস্ট নেওয়ার অধিকার শুধু আমার। শালারভাই খাট থেকে নাম। আমার নরম বউয়ের খাটে তোর হাড্ডির মতো শরীর লাগলে ঠোসা পড়বে আমার। উঠ।”
শাওন কোমরে হাত ডলতে ডলতে মুখ ভেঙিয়ে রসিয়ে রসিয়ে বললো, “কী আমার নরম দেহের বেডা তুমি। তুই নিজেই তো একটা গন্ডার। ভন্ড কোথাকার। এমনিতেই আত্মা কাঁপা-কাঁপি অবস্থা ভয়ে, তার উপর এই পাঠার যত অত্যাচার। বন্ধু বলেই পারো। বউ হলে অন্যভাবে সাইজ করে দিতো। ঠাডা পড়বে তোর উপ্রে,হারামি। এতবড় রিস্ক নিয়ে সঙ্গ দিলাম, মীরজাফর হালা তুই মায়া কইরা একটা রেডবুলও খাওয়াইলি না।”
“পেছনে থার্টি ফাইভ ডিগ্রি এঙ্গেলে রেডবুলের ক্যান সিল মেরে দিবো তোমায়। রেডবুল তোমার শশুর রেডি করে রাখসে এখানে?”
“তোর শশুরের তো রাখা উচিত ছিল।”
বলে নিজেই হাসতে হাসতে ঘাড় ঘুরালো। দরজার পানে চোখ যেতেই বিস্ময়ে চোখ আকাশে শাওনের। নাবিল তখনও মনোযোগের সহিত চোখ বুলাচ্ছে প্রেয়সীর যত্নে গোছানো ঘরটায়। ভাবতেই কেমন ভালো লাগছে, কাল থেকে মেয়েটা টুকুরটুকুর করে ওর ঘরও গোছাবে। নিরুটা সংসার করবে, বাচ্চা সামলাবে, ওকে সামলাবে। আহা! কী চমৎকার ব্যাপার! শখের রমণী শখের সংসার গোছাবে। এই দিনগুলোর আশাতেই তো পৃথিবীর সকল অবিবাহিত পুরুষদের টিকে থাকা। এসবের জন্যই তো নাবিলদের বেঁচে থাকা।
শাওনটা কোমরে গুঁতাগুঁতি শুরু করছে কখন থেকে। শাওনের খোঁচাখুঁচিতে শেষমেশ বিরক্ত হয়েই ফিরে তাকায় নাবিল। শাওনের পিঠে একটা কিল বসানোর বদলে দরজার পানে ইমুকে কোমরে হাত দিয়ে দারগা ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে মুহুর্তেই মাথায় বজ্রপাত হলো নাবিলের। ইমুর হেলদোল নেই। মনে মনে হেসে ফেটে পড়লেও মুখে গুরুতর অপরাধী ধরার ভঙ্গিতেই চেয়ে রইলো। ওদের অবস্থা বুঝে ভীষণ মজা পাচ্ছে মেয়েটা। গম্ভীর মুখে ঘরে ঢুকে বেনি করে রাখা চুল ঘুরাতে ঘুরাতে চাইলো ব্যাঙ্গ করে। হাই তুলতে তুলতে শাওনের উদ্দেশ্য বলল, “কী সিনিয়র? চোর চোর ভাব নিয়ে কোথা থেকে টপকালেন অসময়ে? তাও সোজা আমার বান্ধবীর ঘরে? যখন টপকালেন, তখন শব্দদূষণ হয়েছে নিশ্চয়ই? কোমর ভেঙেছে, শাওন ভাই?”
শাওন বেচারা ভড়কায় কিছুটা। আমতাআমতা করে বলে, “আমি কিন্তু বয়সে তোমার থেকে অনেক বড়ো, ইমুসোনা। গুনে গুনে চার বছরের সিনিয়র। সিনিয়র হলেও আমরা কিন্তু পড়াশোনা করছি একই বিশ্ববিদ্যালয়ে। থাকিও একই এলাকায়। আবার তোমার নানার খালাতো ভাইয়ের ছেলে আমাদের দুঃসম্পর্কের আত্নীয় হয়। আবার নিরা-নাবিলের বিয়ের দিক দিয়ে আমরা নব নব বেয়াই-বেয়ান হলাম। মানেটা বুঝতে পারছো? সবদিক দিয়েই আমাদের খুব কানেকশন। সোল টু সোল রিশতা।”
ইমু ভ্রু জরায় লোকটার গাঁজাখুরি যুক্তি শুনে।”তো?”
“আমরা কিন্তু চাইলে আলোচনার মাধ্যমে ব্যাপারটা মিটমাট করে নিতে পারি। বায় দ্য ওয়ে, শুনলাম এসাইনমেন্ট নিয়ে সাজান স্যার ঝামেলা করছে? নেক্সটে ক্যাম্পাসে গিয়ে আমাকে একটা কল করো। স্যারের সাথে আমার ভাব আছে।”
“সাজান স্যারের সাথে আপনার কীসের ভাব, শাওন ভাই? উনার সাথে তো স্বাভাবিক ছেলেরা এ জন্মেও মিশে না। এই লোকের চরিত্রে সলিড ঝামেলা। তার মেয়ে ভালো লাগে না, আপনাদের মতো কচি কচি পোলা স্যারের প্রিয়। আপনারও কি উনার মতো কেইস? নয়তো এতো ভাব থাকবে কেন?”
শাওন চোখ বড় বড় করে বলল, “আস্তাগফিরুল্লাহ! তুমি তো হেব্বি ফাজিল। বন্ধু, তোর বিয়েতে আইসা চরম অপমানিত হইতেসি। আর মানা যায় না।”
ইমু মুখে হাত দিয়ে ঠোঁট টিপে হাসল আরেক দিকে চেয়ে। নাবিল আত্নবিশ্লেষনের ভঙ্গিতে কিছু বলতে যাবে তার আগেই ইমু হাত দিয়ে থামিয়ে বলল, “ডোন্ট ওয়ারি, আপনার ব্যাপারটা আমি লেনদেন করে চুকিয়ে নেবো ভাইয়া। সম্পর্কটা শালী-দুলাভাইয়ের। সিক্রেট থাকবে। কিন্তু উনার সঙ্গে আমার বহু পুরোনো ব্যক্তিগত বোঝাপড়া আছে। স্যরি ব্রাদার, উনাকে ছাড়ছি না। অসম্ভব।”
শাওন নাবিলের পানে চেয়ে শুষ্ক ঢোক গিললো একটা। নাবিল দৃষ্টি দিয়ে কিছু একটা বুঝিয়ে অতি সম্মতির স্বরে বলল, “ঠিক আছে বোনু, লেনদেনের বিষয়টা ভাইয়া মাথায় রাখলাম। সেটা কড়ায়গণ্ডায় উশুল করার সুযোগ তোমার আছে। তোমরা নিজেদের মধ্যে বোঝাপড়া সেরে নাও, আমি তাহলে আমার উদ্দেশ্য সফল করে আসি। বেস্ট অফ লাক, বন্ধু।”
শাওনের কাঁধে হাত রেখে ঠোঁট টিপে হেসে প্রস্থান নিলো নাবিল। নাবিল চলে যেতেই ইমু ঠোঁট বাঁকিয়ে তাচ্ছিল্য ভঙ্গিতে হাসল। দুই হাত বুকে ভাজ করে শাওনের চারিদিকে ঘুরে ঘুরে ভাব নিয়ে বলল, “সো মিস্টার শব্দদূষণ প্রতিকারক, দ্য নয়েজ পলিউশন স্পেশালিষ্ট, আজকে তবে উচ্চশব্দ প্রতিকার করতে এসেছেন? লেটস ট্রাই ওয়ান। একটা খেলা খেলি চলুন। আপনার দক্ষতার পরিক্ষা হওয়া দরকার। আমি একটা চিৎকার করি? সেই চিৎকারের বিপরীতে পুরো বাড়িতে যে হৈহৈ ব্যাপারটা হবে, সেটার নয়েজ কমাতে পারেন কি-না দেখুন। ক্যাম্পাসে ইমুকে একা পেয়ে হয়রানি করা? রেগ দেওয়া? লোক জড়ো করে আজ এমন কেলানি খাওয়াবো না, জন্মের মতো ইমুকে নিজের গুরু মানবেন।”
ওর হুশিয়ারির বিপরীতে হেলদোল দেখা গেলো না শাওনের মধ্যে। নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে মন্ত্রমুগ্ধের মতো চেয়ে ইমুর সামনের চুলগুলো কানের পেছনে গুঁজে দিতে দিতে বলল, “করো জড়ো। তোমার গলার স্বর এমনিতেও ফাটা বাঁশ। এক ডাকেই পুরো ঢাকা শহরে ভীর জমে যাবে। আর তারপর…….
ইমুর উদ্বিগ্ন মুখে চেয়ে একটু থেমে হু হা করে পৈশাচিক হাসি হাসল শাওন। বেচারী ভ্রু বাঁকিয়ে চেয়ে আছে তখনও। শাওন একটু এগিয়ে কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলল, “তারপর আমাকে আর তোমাকে একই রুমে,পাশাপাশি, কাছাকাছি, ক্লোজ টু ক্লোজ আবিষ্কার করবে। মানুষ তো বোকা না,ম্যাডাম। বুঝবে এত বড় দামড়া মেয়েকে জোর করে এখানে আনা সম্ভব না, সে নিজেই, নিজ গরজে হেঁটে হেঁটে এসেছে। সিনিয়রকে দেখার জন্য মনটা ছটফট করছিলো কি-না! এটাও বুঝবে, তুমিই ফোন করে আমাকে আসতে বলেছো। প্রাপ্ত বয়ষ্ক যুবক-যুবতীদের একই ঘরে, একসাথে দেখলে দুষ্টু বাঙালী আবার বাড়াবাড়ি ধরনের গল্প বানিয়ে ফেলে। বাঙালী জাতটাই এমন নটি। মানে হিসেবটা বুঝতে পারছো,ইমুপাখি? কেলানি খাওয়াতে গিয়ে বদনাম রটারটির মতো ঘটনা ঘটে যাবে। পৃথিবীতে সবকিছুই খুব সহজে পেতে নেই। ডাকো। আমরা না-হয় একটু বদনামী হয়েই এক হলাম। সিনিয়রের জন্য লাগলো না-হয় একটু কলঙ্কের ছোঁয়া ইমুর পবিত্র চরিত্রে। খুব একটা সমস্যা বোধহয় হবে না। চলো খেলি তোমার খেলাটা।”
ইমু আসন্ন বিপদ বুঝে আতঙ্কে এক পা এক পা পেছাতে পেছাতে আকস্মিক ওকে ধাক্কা মেরে বললো, “সরে দাঁড়ান। দেখুন, ভালো হচ্ছে না কিন্তু। আমার মামা আর্মিতে আছে। আমার বড় চাচ্চু পুলিশ। ছোটবেলা থেকে আমার ইচ্ছে, আমি একজনকে মা*র্ডার করবো। সেই একজনটা কিন্তু আপনিও হয়ে যেতে পারেন।”
“তোমার কোনো মামাই আর্মিতে নেই, না আছে তোমার চাচা পুলিশে। তোমার গোষ্ঠীর চৌদ্দ পুরুষ প্রবাসী। সব খোঁজ নেওয়া শেষ,বেইবি। আর তুমি, মাই সুইট লেডি, তুমি তো সামান্য মুরগী কাঁটার দৃশ্য দেখলেই এক সপ্তাহ ট্রমায় থাকো। হলে ছিলে না এক মাস? সব খবর এসেছে আমার কানে। তাছাড়া সুন্দরী রমণীদের হাতে মরতে পারাটা গুড লাকের ব্যাপার। সবাই এই সুযোগ পায় না। তুমি মারতে চাইলে, আই ডোন্ট মাইন্ড। আর কিছু বলবে?”
“আমি….আমি…. যেতে দিন।”
শাওন পৈশাচিক হেসে বলল,” আমি ডেকে এনেছি? যেতে হলে যাও। বেঁধে রাখিনি তো।”
বেকায়দায় ফেলে বলছে বেঁধে রাখিনি। বেটা ছোটলোক।
ধাক্কার বিপরীতে শাওনকে অনড় পকেটে হাত ঢুকিয়ে মিটিমিটি হাসতে দেখে আবারও ভীত হয় মেয়েটা। পুরো বাড়ি ফাঁকা। সবাই ছাঁদে। লোকটা এই সুযোগে চাইলে যা-তা করতে পারবে। কেউ বাঁচানোর নেই। ইমু আর ঝুঁকি না বাড়াতে হাতের কাছে থাকা ফুলদানিটা ফেলে দিলো। ওটার ঝনঝনে শব্দে শাওনের মনোযোগ এদিকসেদিক হতেই ইমু অকস্মাৎ ‘বাঁচাও’ বলে চিৎকার করে দিলো এক ভোঁ দৌড়। শাওন কিছু না বুঝে ভ্রু বাকিয়ে প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। পরক্ষণেই হেসে ফেলল। মেয়েটার যাওয়ার পানে চেয়ে মাথা চুল্কে গুনগুন করে গাইলো, “হাম তুম এক কামরে মে বানদ্ হো, অর চাবি খো যায়ে।”
—-
এতো চড়াই-উতরাই পাড় করেও শেষ রক্ষা হলো না নাবিলের। ধূর্ত মা জননীর কাছেই শেষমেশ ধরা পড়তে হলো।
সিঁড়িতে পা রাখতেই তার মহীয়সী মা’র সামনে পড়েছিল নাবিল। মা’কে দেখামাত্রই হেড-ক্যাপ নামিয়ে না দেখার ভান করে চলে যেতে নিতেই রাহেলা গোয়েন্দার মতো যত্রতত্র লম্বা পা ফেলে ছেলের সামনে পথ আঁটকে দাঁড়ালেন। হতাশ শ্বাস ফেলে কান টেনে ধরলেন বেয়াড়া ছেলের। চোখ রাঙিয়ে শুধালেন “এসব কী?”
ব্যাস! তারপর যা ঘটার তা-ই ঘটলো। এরই মধ্যে আমিনা, মিরাসহ আরও অনেকে এসে হাজির। হৈরৈ করতে করতে পুরো বাড়ি রটে গিয়েছে এই বিরল ঘটনা। লজ্জায় নিরার রাগ তড়তড় করে বাড়ছে। কিন্তু এই ছেলের চোখে বিন্দুমাত্র লাজের ছটা নেই। অসভ্যের মতো এমন বিব্রতকর, অস্বস্তিকর ঘটনার পরেও কেমন নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে নিরার দিকে চেয়ে আছে। নিরার বুঝতে বাকি নেই, আস্ত এক নির্লজ্জ, ধৃষ্ট ছেলেকে বিয়ে করতে যাচ্ছে মেয়েটা। মানসম্মান রাখবে না এই ছেলে।
নিরার হলুদ ছোঁয়ানোর পর্ব কেবলই শুরু হচ্ছিলো। নিরার বাবা-মা’র পর এখন মিরার হলুদ ছোঁয়ানোর পালা। এরই মধ্যে স্টেজে হাজির নাবিল। সে ওদের সেই সাজানো-গোছানো নিয়ম অক্ষত রাখলে তো? বউয়ের প্রায়োরিটি লিস্টে বাবা-মা’র পরে থাকবে স্বামীর নম্বর। সেখানে বোন আবার কী জিনিস? তাছাড়া এই মীরা কটকটির সঙ্গে এমনিতেও তার ব্যক্তিগত বিরোধ আছে। এটাকে একটু না জ্বালাতে পারলে শান্তি লাগছে না।
নাবিল চুলে ব্যাকব্রাশ করতে করতে মাছি তাড়ানোর মতো হাত নাড়িয়ে স্টেজে উঠলো। এক হেঁচকা টানে মিরাকে স্টেজ থেকে নামিয়ে হলুদিয়া বধুর পাশে বসতে বসতে হাঁক ছাড়ল, “ফুট ফুট। তুই পরে হলুদ পরাবি, মিরাক্কেল। সকল যুক্তি বিচার বিশ্লেষণ করলে এখন আমারই সিরিয়াল হওয়ার কথা। গনতান্ত্রিক দেশে আমাকে ঠকায়ে দূর্নীতি করিস না। জামাইর সাথে বসিস পরে। আমরা কাপল ছবি তুলবো। যা ভাগ।”
নিরা অগ্নিচোখে চাইলো একপলক। মীরা মুখটা কাঁদো কাঁদো করে বোনের পানে চেয়ে প্রায় নালিশ করার ভঙ্গিতে বলল,
“দেখেছিস নিরা? কত বড় অভদ্র, বেয়াড়া,বেয়াদবের ঘরের বউ হচ্ছিস, দেখেছিস? বউয়ের বড় বোনকে তুই-তুকারি করছে। ব্যাটা, জলজ্যান্ত একটা বোন দিয়ে দিচ্ছি এই খাতিরে হলেও তো আপু ডাকতে পারিস।”
” তুই যেনো কত বছরের বড় আমার থেকে? অনলি ছয় মাস। অথচ তোর ব্রেইনের বয়স মাত্র ছয়দিন। আমার ব্রেইনের বয়স কত জানিস? টুয়েন্টি ফাইভ ইয়ার্স। সেই হিসেবে বড় কে হলো? আমি। একোর্ডিং টু দ্যিস লজিক, আমি তোর দুলাভাই। শুরু কর। ডাক দুলাভাই।”
মিরা ফোঁস ফোঁস করতে করতে বললো, “আর বিয়েটা আমার বোনের। আমার বোন৷ তোর এখানে কী কাজ?”
“এইযে বলে ফেললি না একটা মগজলেস কথা? পৃথিবীতে মোস্ট লং লাস্টিং অধিকারমূলক রিলেশনের নাম হচ্ছে ‘স্বামী-স্ত্রী’। এর চেয়ে খাঁটি সম্পর্ক আর একটা পাবি? তুই তোর ঘরের লোককে আজীবন নিজের বলে দাবী করতে পারবি না, কিন্তু তোর স্বামীকে ঠিকি পারছিস। আপন সে-ই হয়, যে আজীবন সাথে থাকে, কাছে থাকে। রাতুল ভাই ছাড়া এমনিতেও তোর মতো হাঁদারামের সাথে কেউ থাকবে না। তাই আমার বোন দাবী না করে আমার স্বামী দাবী কর গিয়ে, যা। তোর বোন এখন আমার বউ।”
ভাই-বোনের খুনসুটির বিপরীত রাতুল কেবল হাসল। এখানে তার কী-ই বা বলার আছে? নিরার চোখে তখনও তপ্ত আগুন। চলছে গোপন যুদ্ধ। সে-ই যুদ্ধ ভেদ করে চোখ ঝাঁঝানো আলোয় ওদের দেখতে লাগছে রং-তুলির কোনো ছবির মতো। একটা পেবল মুখের প্রতিমা কনে, আর সফেদ পাঞ্জাবীতে ইর্ষনীয় হাসির সুদর্শন বর। রাহেলা বেগম মুগ্ধ হয়ে চেয়ে রইলেন ওদের পানে। ছেলে-মেয়ে দু’টোকে জোড়া পুতুল সংসারের দম্পতি লাগছে। চোখ দু’টো আপনাআপনিই ভিজে এলো আবেগে। তিনি মুহুর্তটাকে ক্যামেরাবন্দী করতে ক্যামেরাম্যানকে ডেকে বললেন, “ছবি তুলো ওদের। এই নাবিল, তাকা এদিকে।”
মা’র কথায় ধ্যান নেই ছেলেটার। তার সকল মনোযোগ পাশে বসা প্রতিমারুপী মেয়েটার পানে। সেভাবে চেয়েই খপ করে নিরার হাতটা ধরে ফেলল সে। বিস্ময়ে নিরার চোখ চড়কগাছ। নাবিল ওর বিস্মিত দৃষ্টি অগ্রাহ্য করে মুখের সে-ই নির্লজ্জ হাসি বজায় রেখে নাবিল আপামোট জনতার উদ্দেশ্যে বলে উঠলো, “মামুর বাড়ি এবং আমার বাড়ির সকল আত্নীয়গন, আপনারা কিছুক্ষণের জন্য অন্যদিকে মনোযোগ ফেরান। আমার বউ লজ্জায় মরে যাচ্ছে। এভাবে চললে আজ আর আমাদের ক্যান্ডিড ছবি তোলা হবে না।”
নিরা অবিশ্বাস্য দৃষ্টিতে চেয়ে রইলো পাশে বসা অতি বেহায়া, বেপরোয়া, ধৃষ্ট, অভদ্র লোকটার পানে। একটা মানুষ এতোটা বেফাঁস আর ঠোঁটকাঁটা কী করে হতে পারে একে না দেখলে বোঝার উপায় নেই। মনে যা আসবে স্থান, কাল না দেখে ফট করে তা-ই বলে বসবে। এতোটুকুও আড়ষ্টতা নেই চোখে-মুখে। ওর আগুন দৃষ্টি খেয়াল করে ভেতরের তপ্ততা বুঝে ঠোঁট কামড়ে হাসল নাবিল। পরক্ষণেই ওদের পানে চেয়ে মিটিমিটি হাসতে থাকা অল্পবয়সী ছেলেটার উদ্দেশ্যে হাঁক ছাড়ল, “ক্যামেরা ধরো ,সোহেল। ভালো করে তুলবে। এযাবতকালে তোমার তোলা শ্রেষ্ঠ ক্লিক হওয়া চাই এটা। আজকেরটা ভালো হলে ছেলে-মেয়েদের বিয়েতেও তোমাকেই বুক করা হবে।”
সত্যি সত্যিই এক ক্লিকেই চমৎকার একটা ছবি উঠলো। ছবিতে নাবিল অতি উৎসাহিত হয়ে প্রেয়সীর হাত ধরে চেয়ে আছে ক্যামেরায়, আর নিরা কঠিন দৃষ্টিতে চেয়ে রইলো সেই উৎসাহিত মুখের মালিকের পানে। সোহেল ক্যামেরা সামনে এনে ছবিটা ওদের দেখালো। অদ্ভুত এক জাদুবলে পাশে বসা এই অভদ্র ছেলেটার ছবিমুখে চেয়ে আপনাআপনি মনটা নরম হয়ে এলো নিরার। ভুলে গেলো কিছুক্ষণ আগের রাগ, বিরক্তিভাব। নিরা নিজ থেকেই আরেকটু ঘেঁষে বসলো এবার। কী আশ্চর্য হাসি লোকটার। এবার নিজেই ধরলো নাবিলের প্রসস্থ হাতটা। নরম স্বরে সোহেলকে বললো, “আরেকটা তুলুন। ওই ছবিতে আমার হাসিটা মিসিং।”
নাবিল অবাক দৃষ্টিতে চেয়ে রইলো নিরার পানে। এবারও উঠলো না দু’জনের হাসিহাসি মুখের ছবি। একজন হেসে ক্যামেরায় চেয়ে থাকলেও অপরজনের চোখে কেবলই বিস্ময়। সে-ই বিস্মিতভাব টিকে রইলো বহুক্ষণ। পৃথিবীর সবচেয়ে নির্লজ্জ ছেলেটাও আজ বোধহয় নিজেকে মোড়ালো খানিকটা লাজুকতায়। প্রেয়সীর প্রশ্রয় টের পেয়ে মোমের মতো গলে গেলো দুষ্টু নাবিল। এই লজ্জা স্বর্গীয় সুখের, বিমোহিত আনন্দের।
চলবে।