বসন্তপবনে প্রেমছন্দ পর্ব-২০+২১+২২

0
10

#বসন্তপবনে_প্রেমছন্দ
#মুমুর্ষিরা_শাহরীন
২০.
সেদিন ছিলো শ্রাবণের শেষ দিন। সে বর্ষার মৌসুমে বৃষ্টিকে সাক্ষী রেখে ওদের প্রেমের ছন্দপতন ঘটেছিলো। সেই ছন্দপতন জিইয়ে রইলো বর্ষার অন্তিম ক্ষণ হতে বসন্তের পবন অবধি। অতঃপর আজকের এই চৈত্রের বর্ষণে নিভৃতে বসে টিকলি হিসেব কষতে শুরু করলো সেইদিনের। কী বললে বা কী না বললে আজ মনপবনের চৈত্রর ফুলগুলো দোল দিতো! প্রেম প্রেম গন্ধ লেপ্টে যেতো সারা শরতে…হেমন্তে…পৌষে…ফাগুনে!

ওরা পালিয়ে যাত্রা ধরলো কাজী অফিসের দিকে। বাস ধরেছিলো। মিনিট পনেরো পর জামিলুর রেজা ফোন দিয়ে হুহু করে কেঁদে উঠলেন। বুঝ হওয়ার পর বাবাকে কখনো কাঁদতে দেখেছে বলে টিকলির মনে পরে না। সে ছোট থেকে জেনে এসেছে, ‘বাবা’রা কাঁদে না। বাবা’রা প্রিয়জন’দের হাসায়। প্রিয়জনের ওই একটু হাসির বিনিময়ে, পরিশ্রমে রক্ত পানি করে।’

সে ছোট থেকে জেনে আসা তিতা সত্যর দেয়ালখানা যখন শব্দ তুলে কাচের টুকরোর ন্যায় ভেঙে গেলো টিকলির মন মস্তিষ্ক খানা অবাক তুলে ওর চোখেও পানি আনলো। টিকলি বরাবরই বাবা মায়ের লক্ষী, বাধ্য সন্তান। বাবা অন্তঃপ্রাণ। ভালোবাসার ঘোরে থাকা এই মেয়েটার মনে তখন ভয়। দুরুদুরু বুকে ভেবে চললো নানা অপ্রাসঙ্গিক চিন্তা। বাবা যদি হার্ট এটাক করে বসেন? চিন্তায় যদি প্রেসার বেড়ে যায়? খাওয়া দাওয়া বাদ দেয়? প্রেমিক অন্ধ প্রেমিকা থেকে তৎক্ষণাৎ হয়ে উঠলো বাবা অন্ধ মেয়ে। টিকলি সারাটা পথ চুপচাপ এলো। আধ ঘন্টা পর বাস থেকে নেমে দাঁড়িয়ে কাজী অফিসের দিকে রৌনা দিলো। বিয়ে হওয়ার কথা ছিলো টিকলি-আদরের আগে। কিন্তু হঠাৎ বাধ সাধলো টিকলি। সেই বাধ কিছুটা আচ করতে পেরেছিলো টায়রা। সে কোনোকালেই বাবা মার লক্ষী, বাধ্য সন্তানটি ছিলো না। তার চিন্তার ধরণ’টা অন্যরকম। সে ভাবলো, আগে নিজের মানুষ’টাকে পেয়ে নেই। বাবা-মা নিশ্চয়ই সন্তান ফেলে দিবেন না। কিন্তু আর্দ্রকে হারালে সারাজীবনের জন্য নিজের প্রাণের কাছে হেরে যাবে। মরে যাবে। নিশ্বাস ফেলবে কি করে তখন?

আর্দ্র-টায়রা, রাহুল-নিভার বিয়ে হয়ে যেতেই আদর যখন হাসিমুখে টিকলির হাত’টা ধরলো। টিকলি আদরের সব খুশি তুলোর ন্যায় হাওয়ায় উড়িয়ে দিয়ে বলে ফেললো,

‘আমি এখন বিয়ে করতে চাই না, ডাক্তার।’

আদর মিনিট পাঁচেক বুঝে উঠতে পারলো না টিকলির কথাটা। অবুঝ চোখে চেয়ে থেকে অপ্রাকৃত কণ্ঠে বলে উঠলো,

‘কি?’

টিকলি চোখ বন্ধ করে। মিনিট দুয়েক সময় নিয়ে নিজেকে ধাতস্থ করে বলে,

‘আদর, আমরা বাবা-মার পারমিশন নিয়ে বিয়েটা করি? একটু কষ্ট হবে ওদের মানাতে কিন্তু ওরা ঠিক বুঝবে।’

ওরা সবাই তখন বাইরে এসে দাঁড়িয়েছে আদর-টিকলিকে ঘিরে। আদর তখনো অবোধের ন্যায় প্রশ্ন করে,

‘মানে?’

টিকলি অসহায় দুর্বিষহ কণ্ঠে বলল, ‘আদর, বাবা কাঁদছে।’

সেই রাতে রৌপ্য রশ্মির ছটায় ছেয়ে গিয়েছিলো প্রকৃতি। ওরা জ্যোৎস্নায় ভিজেছিলো। আদর বরাবর শান্ত, ঠান্ডা মাথার ছেলে। ওদের সম্পর্কের সময়টায় টিকলিকে ধমক দেওয়া তো দূর উঁচু গলায় কথা অবধি কখনো বলেনি। কিন্তু বললো সেইদিন। সেই প্রথমবার। উদভ্রান্তের ন্যায় গলার রগ ছিড়ে ফেলার ন্যায় চেঁচিয়ে উঠলো,

‘আপনি শুধু আপনার বাবার কথা’টাই ভাবছেন। আপনি আমাকে নিয়ে একবারো ভাবছেন না।’

‘ভাবছি।’

‘না, ভাবছেন না। ভেবে থাকলে এই মূহুর্তে এসে আপনি এই কথাটা বলতে পারতেন না। আপনার বাবা যদি আপনার কষ্ট করে বুঝানো’টা ভালো মানুষের মতো বুঝেই নিতো তবে আপনাকে ঘরবন্দী করতো না। এই রাহুলের সাথে আপনাকে আজ বিয়ের আসরে বসতে হতো না। আমরা এভাবে নিজেদের প্রেস্টিজ মাটিতে মিশিয়ে তাদের সামনে দিয়ে পালিয়ে আসতাম না।’

টিকলি কথা বলতে চাইলো। আদর সামনে হাত দেখিয়ে থামিয়ে দিলো। বড় বড় শ্বাস ফেলে বলে গেলো,

‘সবকিছুর জন্য দায়ী ওই আপনার বাবা। আপনার বাবার বেশি বুঝার ফলে আজ আমাদের এই অবস্থা। আপনি ভুলে যাচ্ছেন আমার অবস্থান’টা ঠিক কোথায়। আমি নিজের সম্মান বিসর্জন দিয়েছি আপনার মুখ থেকে এসব কথা শোনার জন্য নয়।’

টিকলি অবিশ্বাসের ন্যায় তাকিয়ে বলল,

‘আমার বাবা দায়ী? শুধুমাত্র আমার বাবা দায়ী? আর আপনার বাবা কিচ্ছু করেনি? আপনার বাবা আমার বাবাকে সর্বপ্রথমে ফোন দিয়ে যা নয় তাই বলেছে।’

‘হ্যাঁ বলেছে। তাই বলে আমাকে বিয়ের পিড়িতে বসাতে পারেনি। আপনার বাবা সার্থপর। আপনার কথা ভাবেনি। আপনিও আপনার বাবার মতো সার্থপর বলেই আমার কথা ভাবছেন না। আপনার বাবা একজন কাওয়ার্ড। আপনিও কাওয়ার্ড। আপনার বাবার চোখের সামান্য পানি দেখে আপনি দুই সেকেন্ডে সিদ্ধান্ত বদলে ফেললেন। কই আপনার বাবা তো বদলায়নি। আপনার বাবা আপনার চোখের পানি দেখেও কোনো পরোয়া না করে আপনার অমতে বিয়ে ঠিক করেছে। আপনার বাবার জন্য আমি এই পর্যায়ে এসেছি। আমার বাবাকে আমি ঠিক মানিয়ে নিতাম যদি আপনার বাবা একটু কম্প্রোমাইজ করতো! সেই বাবার জন্য….

আদরের কথাটুকু শেষ হলো না মেয়েলী হাতের একটা শক্ত চর এসে লাগলো ওর গালে। উপস্থিত প্রত্যক্ষদর্শী সবার চোখ ছানাবড়া হয়ে গেলো। সবাই মুখে হাত দিয়ে দাঁড়ালো। সেই মূহুর্তে টায়রা সাহস পেলো না ওদের মাঝে ঢুকে টিকলিকে কিছু বলার। আদর অবাস্তব দৃষ্টিতে তাকালো। টিকলি চোখ ভর্তি ঝাপসা জল নিয়ে কাঁপতে কাঁপতে ধীর গলায় অপার্থিব স্বরে বলল,

‘আমি ভুল মানুষকে ভালোবেসেছি। যে মানুষ আমার বাবাকে সম্মান করতে জানে না সে আমাকে সম্মান কী করে করবে?’

আদর তখনো চেয়ে আছে অবর্ণনীয় চাহনিতে। যেন এ স্বপ্ন! অলৌকিক কোনো ঘটনা। মিথ্যে! কল্পকাহিনি! এ বাস্তব নয়! নয় সত্য!

টিকলির গাল বেয়ে পরে যায় মোটা জলরাশি। রক্তচক্ষু নিয়ে সে উঁচু আওয়াজে গলার স্বর ভেঙে বলে উঠে,

‘এসব আমার বাবার দোষ নয়। দোষ আমার। আমি বিয়ে করতে চাইনি তখন। আমি বিয়ে ভাঙার জন্য আপনাকে বলেছিলাম আমি প্রেগন্যান্ট। এই সবকিছুর জন্য আমি দায়ী। আমার বাবা আপনার সাথে আমার বিয়ে ঠিক করেছিলো। আমার বাবা, আপনার বাবার জন্যই আমরা একে অপরের সাথে পরিচিত হয়েছিলাম। আপনি… আপনি আমার বাবাকে অপমান করে এতোগুলা কথা কীভাবে বলতে পারলেন?’

টিকলির কণ্ঠ অস্বাভাবিক, পরাবাস্তব। সে এই আদরকে চিনতে পারে না। চিনতে পারে না আদরও। সাদা অংশ লাল হয়ে যাওয়া ঝাপসা, অচিন্তনীয় দৃষ্টিতে তাকিয়ে সে ভেবে যায়, এ তার চেনা টিকলি নয়। আদর উন্মাদের ন্যায় চুল খামচে ধরে, এদিক সেদিক তাকিয়ে নিজেকে ধাতস্থ করে, মুখ হাত দিয়ে হামলায়, ঘাম মুছে… এরপর বলে,

‘আমাদের বিয়েটা হবার নয় বলেই বোধহয় হয়নি, টিকলি। নয়তো এতো জটিল হতো না এই যাত্রাপথ।’

সেই ছিলো তাদের শেষ কথা। টিকলিকে পেছনে ফেলে… সম্পর্কের সুতো কেটে… শ্রাবণের বৃষ্টির সোঁদা গন্ধ পায়ে পিষে… আদর চলে এসেছিলো। কেবল ওই এক ভুল চর মনে পুষে রেখেছিলো…. আর সবকিছু সে ভুলে গিয়েছিলো।

টিকলি বারান্দার দরজায় হাটু মুড়ে বসে তাতে মাথা গুঁজলো। সেদিন যদি সে চর’টা না মারতো…সেদিন যদি সে আদরকে যেতে না দিতো… ঠান্ডা মাথায় বুঝাতো… বিয়েটা করে নিতো তবে জীবনের এই কাঠগড়ায় এসে তাদের দাঁড়াতে হতো না। বহুল পরিচিত হয়েও আজন্মের জন্য অপরিচিত হয়ে যেতে হতো না। সেই তো আদরের সাথেই বিয়ে ঠিক হলো। বাবা মেনে নিলো সব। টায়রা-আর্দ্রকেও মেনে নিলো। সব স্বাভাবিক হলো। মাঝখান থেকে আদর, টিকলি ছিটকে পরলো। সম্পর্কের গতি হারালো। জীবনের কয়েকটা মাস ক্ষয়প্রাপ্ত হলো। একটা দাগ মনের আনাচে-কানাচে লেগে গেলো!

টিকলি বড় করে শ্বাস ফেলে আর্দ্রকে ফোন দিলো। আর্দ্র ফোন ধরেই জিজ্ঞেস করলো,

‘কি সিদ্ধান্ত নিলে?’

টিকলি উত্তর দেয় না। ফোন কানে রেখে ঝিম মেরে বসে রয়। আর্দ্র নিরাশ গলায় শুধায়,

‘বিয়ে তবে করবেই না? ডিসিশন ফাইনাল?’

টিকলি দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে, ‘উনাকে বলবেন আমাকে ফোন দিতে। এখনি।’

চলবে❤️

#বসন্তপবনে_প্রেমছন্দ
#মুমুর্ষিরা_শাহরীন
২১.
আদর ফোন দিয়েছিলো গুণে গুণে ২৮ মিনিট পরে। টিকলি ফোন রিসিভ করতেই নিজের গম্ভীর কণ্ঠ ঠেলে শুধালো,

‘আর্দ্রকে দিয়ে ফোন দেওয়ানো কেনো?’

‘কারণ নাম্বার নেই।’

আদর থেমে থেমে প্রশ্ন’টা করলো, ‘নাম্বার নেই?’

টিকলি চোখ বন্ধ করে দম নিয়ে বলে, ‘না নেই। ডিলেট করে দিয়েছিলাম।’

আদরের চোয়াল শক্ত হলো। দৃঢ়তার ন্যায় অপেক্ষা করলো টিকলির পরবর্তী বাক্যালাপের জন্য।
টিকলি আদরের মাঝে কোনো ভাবান্তর খুৃঁজে পেলো না। তারমানে আদরের ইন্টারেস্ট নেই। বড় করে একটা শ্বাস ফুসফুসে টেনে নিয়ে ধীর স্বরে বলল,

‘কিছু কথা বলার ছিলো।’

‘কথা বলতেই নিশ্চয়ই মানুষ ফোন দেয়? ফোনে তো আর চেয়ে চেয়ে দেখা যায় না।’

টিকলি তর্কে গেলো না, ‘আপনি নাকি বিয়েতে হ্যাঁ বলেছেন?’

‘হ্যাঁ। এটা জিজ্ঞেস করতেই এতো ঘটা করে ফোন দিতে বলেছেন?’

টিকলি হাত মুষ্টিবদ্ধ করে নিজের রাগ দমালো। এতো শরীর জ্বালানো কথা! রুদ্ধশ্বাসে কণ্ঠে দৃঢ়তা এনে বলল,

‘আমার কিছু শর্ত আছে।’

‘এসব বিষয়ে আমার সাথে কথা বলে লাভ নেই। শর্ত টর্ত যাই থাকুক না কেনো যারা বিয়ে ঠিক করেছে তাদের সাথে কথা বলুন।’

টিকলি দাঁতে দাঁত চেপে বলে, ‘না, আপনার সাথেই কথা বলতে হবে। বিয়েটা আমি আপনাকে করছি।’

‘তাই? মাত্র জানলাম। জেনে খুশি হলাম। বলুন, কি আপনার শর্ত? আমার হাতে আর মাত্র আট মিনিট সময় আছে। এর মাঝে বলতে হবে।’

‘ঘড়ি ধরে বলতে পারবো না।’

‘আচ্ছা বলুন। আপনি আট মিনিটই টিকতে পারবেন না।’

টিকলি দু’চোখের মাঝে ভাঁজ ফেলে। আদরের এই ডোন্ট কেয়ার ভাব’টাই টিকলির কোনোকালে পছন্দ না। রাগ দেখাবে না, ঝগড়া করবে না, উচ্চস্বরে কথা বলবে না কিন্তু এমন ভাবে ইগনোর করবে… ডোন্ট কেয়ার একটা ভাব নিয়ে চলবে যে অপর পাশের মানুষের তৎক্ষণাৎ মরে যেতে ইচ্ছে করবে। টিকলি সেসব দিকে আর গেলো না। ঝাপসা অন্ধকারে বারান্দার দরজায় বসে ধ্বনিম্র কণ্ঠে নিজের সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিলো,

‘বিয়েটা সংক্ষিপ্ত ভাবে হবে। ঘরের মানুষগুলোকে নিয়েই শুধু।’

‘আমার এতো সময় নেই যে সাতদিন ভরে বিয়ের অনুষ্ঠান করবো। তবুও, শুধু ঘরের মানুষ থাকবে এই বিষয়ে আমি গ্যারান্টি দিতে পারছি না।’

‘আমাদের মধ্যে স্বামী-স্ত্রীর কোনো সম্পর্ক থাকবে না। বন্ধু-বান্ধব কেউ জানবে না।’

‘মেনে নিলাম।’ আদতে বুকে পাথর চাপা দিয়ে মেনে নিতে হলো।

‘লাস্ট বাট নট দ্যা লিস্ট আমি এই বাসাতেই থাকবো।’

এই কথাতে এসে আদর থমকালো। মিনিট খানেক নিরব থেকে তাও মেনে নিলো। অথচ ওরা কেউ কাউকে প্রশ্ন করলো না, তবে আমরা বিয়ে’টা কেনো করছি। কারণ’টা হয়তো তাদের জানা আছে। ওদের উত্তর হলো- করার জন্য করছে। কোনো এক মন্ত্রবলের অলৌকিক ইন্দ্রজালে ওরা কেবল নিজেদেরকে একে অন্যের সাথে বেঁধে রাখার জন্য বিয়েটা করবে।

চৈত্রের হাওয়ার সর্বনাশের ন্যায় ওরা একে অপরকে গ্রাস করে নিলো নির্বিঘ্নে, গোপনে। আবার কখনো সম্পর্কটা আগের মতো হবে কিনা জানে না! টিকলি সেই অপমান ভুলবে কিনা তাও জানে না। আদর টিকলির দেওয়া চর ভুলবে কিনা কে জানে! কিন্তু টিকলি শুধু এতোটুকু জানে যতক্ষণ পর্যন্ত আদর নিজের ব্যবহারের জন্য অনুতপ্ত না হবে ততক্ষণ অবধি টিকলি আগ বাড়াবে না। ওদের ভেতর বরফ ঠান্ডার ন্যায় একটা সম্পর্ক বিরাজ করবে। যা কখনো উষ্ণ হবে না।

_______________________

কথামতো ঠিক হলো বিয়েটা দ্রুত এবং খুব সংক্ষিপ্ত হবে। শুধু কাবিন হবে। তুলে নেওয়া হবে না। বিয়েটা দ্রুত বা সংক্ষিপ্ত হোক তাতে জামিলুর রেজার সমস্যা নেই। সে নিজেই বড় করে বিয়ের অনুষ্ঠান করতে চাইছিলো না। কারণ টিকলিদের বিয়ের আসর থেকে পালিয়ে যাওয়ার ঘটনা সবাই জানে। আত্মীয়-স্বজনরা এও জানে আদর টিকলি বিয়ে করেছে। সেই ভুল জামিলুর রেজা ভাঙায়নি। মেয়ের নামে কোনো অবাঞ্চিত গুজব রটে যাক আত্মীয় পাড়ায় তা তিনি চাননি। কিন্তু শুধু কাবিন হবে মেয়ে তুলে নেওয়া হবে না। এ আবার কেমন কথা? এই জায়গাটায় এসে তার মনঃপুত হলো না। অতঃপর মেয়েকে বললে মেয়ে জানালো এটা তার ইচ্ছে। জামিলুর রেজা জিজ্ঞেস করলেন,

‘কেনো?’

টিকলি উত্তর দিলো রয়েসয়ে, ‘বাবা আমার সামনে পরপর হাতে কিছু ইম্পোর্টেন্ড বড় বড় কাজ আছে। আমি ব্যস্ত থাকবো। খুব তাড়াহুড়ায় এসব হচ্ছে বলে প্রিপারেশন নিতে পারিনি। তাই আমি চাইনা এই মূহুর্তেই ওই বাড়ি যেতে। আমার নিজের একটা প্রস্তুতি আছে। এখন জায়গা চেঞ্জ করলে আমি কাজ থেকে ডাইভার্ট হয়ে যাবো।’

টিকলি উত্তর তৈরি করাই ছিলো। সে জানতো এই প্রশ্নটা আসবে। বাকিরা কেউ এই প্রশ্ন করবে না কিন্তু ওর বাবা করবে তা নিশ্চিত ছিলো। জামিলুর রেজাও খুবই ভালো মানুষ হয়ে গেছেন। মেয়ের উপরে তিনি কথা বললেন না বরং হাসতে হাসতে বললেন,

‘আচ্ছা, বেশ। তোর যেটা ভালো মনে হয় সেটাই কর। এখনি শশুড় বাড়ির এতো দায়িত্ব কাধে নেওয়ার দরকার নেই। ধীরে সুস্থে সময় নিয়ে শুরু কর। আর তাছাড়া জামাই আসা যাওয়া তো করবেই। এখনি তুলে নিলেই কি আর না নিলেই কি!’

টিকলি ছোট করে উত্তর দিলো, ‘হু। রাখি বাবা।’

‘না না রাখিস না আগেই।’

‘বলো বাবা।’

‘বেয়াই বলছিলেন তোর বিয়ের শাড়ি আর জামাইয়ের শেরওয়ানি যেনো তোরা গিয়ে কিনিস।’

‘কোনো প্রয়োজন নেই বাবা। কেউ তো আর দেখতে আসবে না। ঘরের কাপড় পরে বিয়ে করে নিলেই হবে।’

‘এ আবার কেমন কথা? ঘরের কাপড় পরে বিয়ে হবে মানে? তোদের মধ্যে কি ঝগড়া হয়েছে, মা?

জামিলুর রেজার সন্দেহে টিকলি দীর্ঘশ্বাস ফেলে উত্তর দেয়, ‘না বাবা। আমাদের কখনো ঝগড়া হয় না। কবে যেতে হবে বলো।’

‘আজ গেলে ভালো হতো।’

‘আজ আমার হাতে সময় নেই।’

‘জামাইও তাই বললো। তাহলে দুজনেই যেহেতু ব্যস্ত কাল যাস। আর শোন, বেয়াইন তোর গয়না কিনতে তোকে নিয়ে যেতে চাইছিলেন।’

‘গয়না টয়নার বিষয়ে আমি বুঝি না। সেটা তোমরাই দেখে শুনে কিনো। গয়না না কিনলেই বেশি ভালো। আমার গয়না-গাটি পছন্দ নয়।’

জামিলুর রেজা আর ঘাটালেন না। মেনে নিলেন তবে কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলে। বিয়ে নিয়ে যেনো বর-কনে কারোরই কোনো হেলদোল নেই। বিয়ের ডেট ফিক্সড হয়েছে এই শুক্রবার। আজ সোমবার। টিকলি ফোন রেখে বড় করে দম ফেললো। ওই মুহূর্তে নিরব ফোন দিলো। ফোন ধরতেই চিৎকার চেচাঁমেচি করে বলল,

‘আমাকে তোর বিয়েতে দাওয়াত দিলে কি আমি বেশি খেতাম?’

টিকলি যারপরনাই বিরক্ত হলো। একে নিশ্চয়ই টায়রা, নিভা বলেছে। অথচ টিকলি বারণ করেছিলো। টিকলি ভাবলেশহীন গলায় জবাব দেয়,

‘আমার বিয়েতে কোনো রান্নাই হবে না তুই খাবি কি আর?’

‘কেনো তোরা রোজা রাখবি?’

‘হ্যাঁ।’

‘আমিও রাখবো। তারপরেও আমি তোর কলিগ প্লাস বন্ধু তুই আমাকে একবার বলবি না? আমি তোকে কত পছন্দ করতাম রে, টিকলি। আমার হৃদয়খানা খান খান করে দিয়ে তুই ওই আদর খান’কে বিয়ে করছিস? বেচারা তোর জামাই আমাকে নিয়ে কত জেলাস ছিলো। তোর সাথে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলেই ভ্রু জোড়া কুচকে জহুরি নজরে তাকাতো। সব মজা শেষ করে দিলি রে।’

‘তোর লেইম জোক্সের মুডে নেই আমি।’

‘থাকবিই না তো। এতোদিন তোকে দেখেশুনে যত্ন করে রাখলাম ওই বাদর খানের জন্য আর সেই তোরা আমাকে বিয়েতে দাওয়াত দিলি না? তোরা দাওয়াত দেস নাই বলে কি আর আমি দাওয়াত পাইনি? কতজনের থেকে পেয়েছি জানিস? টায়রা, নিভা, আর্দ্র ভাইয়া…..’

নিরবের কথা শেষ হওয়ার আগেই টিকলি ভ্রু কুচকে প্রশ্ন করলো,

‘ওয়েট আ মিনিট! বাদর খান বললি কেনো?’

‘ও…মা! এখনি এতো দরদ?’

‘বিষয়টা দরদের নয়। কথা হলো উনাকে একমাত্র আমি ওই নামে ডাকি। তোরা ডাকবি কেনো?’

‘তাহলে কি ডাকবো? দুলাভাই?’

টিকলি কাধ ঝাঁকানোর ন্যায় উত্তর দেয়, ‘হ্যাঁ। তাই তো ডাকবি।’

‘ওকে দুলা….ভাই দুলাভাই। দুলাভাই….. দুলাভাই।’

নিরব হাতের তালি দিয়ে স্লোগান দেওয়ার মতো করে ডেকে গেলো বহুবার। কথাটা বলে টিকলি নিজেই লাল হলো লজ্জায়।

চলবে❤️

#বসন্তপবনে_প্রেমছন্দ
#মুমুর্ষিরা_শাহরীন
২২.
টিকলিকে নিতে আসার কোনো কথা ছিলো না আদরের। কথা ছিলো দুজন মিট করবে শপিংমলের সামনে। পরন্তু নিচে নেমে এসে দেখা গেলো আদর গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে ক্রস লেগে দাঁড়িয়ে আছে। টিকলি অবাক হয়ে আদরের দিকে এগিয়ে গেলো। তাকে প্রশ্নবোধক চোখে তাকিয়ে থাকতে দেখে আদর নির্বিকার ভঙ্গিতে বলল,

‘আপনি লেট করছিলেন তাই আসা। আমার হাতে সময় কম।’

টিকলি ভ্রু কুচকে হাতের সিলভার রঙের ঘড়িতে চোখ বুলালো। একদম লেট করেনি সে। আদরের দিকে আড়চোখে তাকিয়ে বলল,

‘আপনার হাতে তো কোনোদিন শুনলাম না সময় বেশি আছে।’

আদর গাড়ির ডোর খুলতে খুলতে জবাব দেয়, ‘ডাক্তারদের হাতে কখনো সময় বেশি থাকে না।’

‘ভাব নিবেন না তো!’

‘ভাব নিলে আবার আপনাকে নিতে আসতাম নাকি?’

‘মনে হয় আমি আপনার পায়ে পরেছি আমাকে নিতে আসার জন্য?’

‘সেটা আবার কখন বললাম?’ আদরের চোখ উল্টে জবাব।

‘তাহলে বলছেন’টা কি?’

‘আপনার সাথে আমার তর্ক করার কোনো মুড নেই।’

টিকলি অন্যদিকে ঘুরে বিরবির করে, ‘কোনোসময়ই থাকে না।’

আদর ক্লান্তস্বরে বলল, ‘আই এম টায়ার্ড।’

টিকলি আবারো আগের ন্যায় বিরবির করে, ‘সবসময়ই থাকেন।’

‘আমি শুনতে পাচ্ছি।’

‘সবসময়ই পান।’

বলেই টিকলি চোখ বড় বড় করে আদরের দিকে তাকালো। গাড়ি স্টার্ট দিতে দিতে আদর প্রশ্ন করলো,

‘খিদা পেয়েছে আপনার?’

টিকলি বুকে আড়াআড়ি ভাবে হাত রেখে সিটে হেলান দিয়ে মাথা ঘুরিয়ে আদরের দিকে তাকিয়ে জবাব দেয়,

‘না তো। কেনো?’

‘পেটে খিদা থাকলে মানুষ অযথা ক্যাটক্যাট করে।’

টিকলি ফুঁসে উঠে তাকালো। আদর একটা গা জ্বালানো হাসি দিলো। তাতে টিকলি রাগ আকাশ ছুলো। আদর বললো,

‘যাওয়ার পথে আপনাকে কোথাও খাওয়াই, নাকি?’

টিকলি নাক ফুলিয়ে আদরকে ডিঙিয়ে হাত বাড়িয়ে হর্ন বাজিয়ে বলল,

‘সোজা মার্কেটে যাবেন। আপনার সাথে বেশিক্ষণ থাকতেই চাই না আমি।’

‘আমিও চাই না।’

‘চাইতে বলেছে কে?’

‘কেউ বলেনি।’

‘আপনি একটা অসহ্য। তর্ক করবেন না বলেন অথচ মুখটা বন্ধও রাখেন না।’

‘মুখটা বন্ধ রাখলেও আপনার সমস্যা। বলবেন আপনাকে পাত্তা দিচ্ছি না। তাতেও আবার আপনার ইগো হার্ট হয়।’

টিকলি ঠোঁট কামড়ে এই বিরক্তিকর লোকটার দিকে কতক্ষণ চেয়ে রইলো ক্রোধ নিয়ে কপাল কু্ঁচকে। আদর কথা বাড়ালো না। শা করে গাড়ি টান দিয়ে সোজা এসে থামলো বসুন্ধরা সিটি কমপ্লেক্সে। সেখানে এসেও বাঁধলো আরেক বিপত্তি। টিকলি কোনো বেনারসি বা লেহেঙ্গা টেহেঙ্গা পরবে না। সে পড়তে চায় সিম্পল, আরামদায়ক শাড়ি। এতে আদর তাকে টেনে আরেক জায়গায় নিয়ে গিয়ে দেখালো ৫০০ টাকার ফুল তোলা সুতির শাড়ি। যেগুলো গ্রামে গঞ্জের বধূরা পরে অহরহ। টিকলি চোখ পাকিয়ে তাকিয়ে দাঁত খিচিয়ে উঠলো,

‘এই শাড়ি বিয়েতে পরবো? এরকম শাড়ি তো আমাদের হেল্পিং হ্যান্ড জান্নাতকেও কোনোদিন দেওয়া হয় নি।’

‘আপনি তো বললেন সিম্পল। এর থেকে সিম্পল হয় না। আপনাকে মানাবে। দেখুন।’

‘আমি শুনেছিলাম ডাক্তাররা কিপ্টা হয়। তাদের কোনো রুচিবোধ থাকে না। কিন্তু তারা যে একটা বেত্তমিজ হয় সেটা আজ জানলাম। আপনার সাথে কোনো শপিং টপিং করবো না আমি। ফালতু লোক। কিছু না পরেই বিয়ে করবো। চলুন।’

আদর টিকলির দিকে এক মিনিট চেয়ে থেকে নাক কুচকে বলে, ‘ছি ছি ছি….।’

আদরের মনোভাব ধরতে পেরে টিকলি অতিষ্ঠ চোখে তাকালো,

‘আরে ওটা কথার কথা। মানে নতুন কিছু না পরে.. মানে শাড়ি… ধ্যাত! ফরগেট ইট। চলুন, জামদানি কিনবো।’

‘কিছু নাকি কিনবেনই না!’

ওমনি টিকলি ধারালো চোখে চাইলো। আদর সাইড কেটে যেতে যেতে বলল, ‘তাড়াতাড়ি চলুন…।’

শাড়ি কিনতে গিয়ে আবার আরেক বিপত্তি। টিকলি গিয়ে ধরেছে মক পিংক কালার। আদর ধরেছে মেরুন কালার। টিকলি নাক কুচকে তাকায়,

‘এখন এতো ক্যাটক্যাটে রং কেউ পরে না। ওটা রাখুন এটা দেখুন।’

‘ওটা কোনো কালার হলো?’

‘আপনি কালারের চিনেন টা কি?’

‘এটা অনেক সুন্দর। একদম চোখে লাগছে। পড়লে বউ বউ লাগবে। ওটা পড়লে জীবনেও আপনাকে বউ বউ লাগবে?’

‘আমি ওটা নিবো না।’

‘আমি এটাই নিবো।’

‘না।’

‘হ্যাঁ। আমার বউ। আমি বিয়ে করবো। কি পরবে না পরবে সেটাও আমি ঠিক করবো।’

টিকলির ধৈর্য্যচ্যুতি ঘটলো, ‘ধুর! কিনবোই না।’

টিকলি চলে যেতে নিলেই আদর মাথা পেতে নিলো টিকলির আবদার, ‘ঠিকাছে।’

আদর সেলসম্যান কে বললো দুটোই প্যাক করে দিতে। টিকলি আর কোনো বাক্য ব্যয় করলো না। সে তো থিতু হয়ে গিয়েছিলো সেই জায়গাটায়, ‘আমার বউ’। শুনে গাল দুটো লাল হয়ে গিয়েছিলো। পাছে যদি আদর টের পেয়ে জিজ্ঞেস করে বসে, ‘আর ইউ ব্লাশিং?’ টিকলি এর পরিপেক্ষিতে উত্তর’টা দিতো কি তখন?

ওরা বের হয়ে গেলো আদরের শেরওয়ানি কিনতে। সেখানে গিয়ে ওরা মিনিট দশেক শুধু ঘুরলো। কারন আদরের কোনো অপিনিয়ন নেই। টিকলি লোক দেখানোর ভঙ্গিমায় উল্টেপাল্টে তবুও একটু জামাকাপড় দেখছে কিন্তু আদর এক জায়গায় স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। টিকলি দাঁতে দাঁত চেপে বললো,

‘কি ব্যাপার? শার্ট-প্যান্ট পরে বিয়ে করবেন?’

‘না। শেরওয়ানি পরবো।’

‘তবে দেখছেন না কেনো?’

‘আপনি দেখুন।’

‘আমি দেখবো মানে? আমার দেখাতেই হয়ে যাবে?’

‘হ্যাঁ।’

টিকলি ঠোঁট একপাশে চেপে সন্দেহান নজরে চেয়ে থাকলো। আদর বলল,

‘আমি দেখতে গেলে তো আবার ঝামেলা বাঁধবে। আমি ধরবো একটা আপনি ধরবেন আরেকটা। আমার হাতে এতো সময় নেই।’

এই সময় নেই সময় নেই শুনতে শুনতে টিকলির কান দুটো একদম ঝালাপালা হয়ে গেলো রেহ! সে আদরের দিকে মুখিয়ে বললো,

‘এই এই এই, আপনি কি সচিব? মন্ত্রী? প্রেসিডেন্ট? নাকি বিশ্ববিখ্যাত ডাক্তার? আপনার সময় পেতে কি ভিক্ষার থালা হাতে নিয়ে আপনার দোরগোড়ায় দাঁড়াতে হবে? আরেকবার যদি বলেছেন আপনার সময় নেই তবে….’

টিকলি দাঁত কিড়িমিড়ি করে মারকুটে ভঙ্গি করলো। আদর সেসবে বিশেষ পাত্তা না দিয়ে বলল,

‘তাড়াতাড়ি দেখুন। দেরি হয়ে যাচ্ছে।’

টিকলি চোখ পাকায়, ‘আবার?’

আদর হেসে ফেলে, ‘আচ্ছা দেখুন।’

আদরের জন্য টিকলি একটা ক্রিম কালারের শেরওয়ানি পছন্দ করলো। আদর তাই মেনে নিলো। আসার পথে একটা গোল্ডের দোকানে দাঁড়াতেই টিকলি প্রশ্ন করলো,

‘দাড়ালেন কেনো?’

‘দোকান দেখে মনে পরলো মা আপনাকে সাথে নিয়ে আংটি কিনতে বলেছে।’

‘আংটি ফাংটি কিনতে হবে না চলুন।’

‘যাবো কিন্তু কেনো কিনলাম না এই কৈফিয়ত আপনি দিবেন। ওকে? এবার চলুন।’

টিকলি থামলো। বড় করে শ্বাস নিয়ে বললো, ‘আচ্ছা কিনেই নিয়ে যাই।’

গোল্ডের শপে ঢুকে টিকলি আদরের পছন্দে আংটি কিনলো। ফিরে আসার সময় আদরের চোখ গেলো একটা টিকলিতে। থেমে দাঁড়াতেই বিরক্তি নিয়ে টিকলি বলে,

‘আবার কি?’

‘ওই টিকলি’টা সুন্দর না?’

টিকলি তাকিয়ে দেখলো। ভ্রু উঁচিয়ে শুধালো, ‘কেনো? আপনি কিনবেন?’

আদর কাধ ঝাকিয়ে বলে, ‘না। আমি কিনে কি করবো? আমি পরবো নাকি?’

‘গোল্ডের টিকলি কিনে এতোগুলো টাকা নষ্ট করার মানে হয় না।’

টিকলি চলে এলো। আদর আরেক নজর তাকিয়ে দেখে চলে গেলো পার্কিং লটে।

,
ড্রইংরুমে আর্দ্র বসে টিভি দেখছিলো উদাস মনে। গালে হাত ঠেকিয়ে। আদর এসে ওর সামনে সেন্টার টেবিলের উপর প্যাকেট গুলো রেখে বলল,

‘দেখ।’
‘মুড নেই।’
‘কেনো?’
‘আমার সাথে কথা বলো না তো, ভাইয়া। আমার মনে অনেক দুঃখ।’

আদর বসে আরেক সোফায়। ভ্রু কুচকে প্রশ্ন করে,

‘কেনো?’

আর্দ্র দুঃখে জর্জরিত হয়ে উত্তর দিলো,

‘এই যে একইসাথে বিয়ে করে রাহুলের বাচ্চা আগে হয়ে যাচ্ছে।’

আদরের চোখে মুখে বিতৃষ্ণা ফুটে উঠে,

‘তোর বাসর বাসর টেপরেকর্ডার অফ হয়ে এখন বাচ্চা বাচ্চা অন হয়েছে?’

আর্দ্র মনঃক্ষুণ্ন হলো ভাইয়ের কথায়। দুঃখের সাগরে ভাসতে ভাসতে করুণ চোখে ভাইয়ের দিকে তাকাতেই আদর দিলো রাম ধমক,

‘ভন্ডামি ছেড়ে উঠ। যা! তোর বাপ, মা আর বউকে ডেকে নিয়ে আয়।’

চলবে❤️