#কলংকের_বিয়ে
#ইসরাত_জাহান_এশা
#পার্ট_০৩
০৭
ওদিকে আনামের বাড়িতে প্রচুর সোরগোল শুরু হয়। আনামের ফুফুরা সবাই আনামের বাড়িতে আসে। আনামের দুই ফুফু ঘরে এসে সেই রকম চিল্লাচিল্লি শুরু করে। আনামের বড় ফুফু রেহনা বেগম কে বলেন হায়রে ভাবি এই ছেলে নিয়ে তোমার এতো গর্ব? মানুষের কাছে ছেলেকে নিয়ে কত নামই না কিনছ। সারাজীবন মানুষ আমারে নিয়ে আমার ছেলেরে নিয়ে কত কথা শুনাইছে আমি নাকি আমার ছেলেকে মানুষ করতে পারি নাই। আমার বাপের বাড়ির সবাই তোমার ছেলেরে দেখাই দেখাই কত প্রশংসা করছে সব সময় আমার ছেলের সাথে কম্পেয়ার করছে। তা এই তোমার ছেলেকে দেওয়া তোমার শিক্ষা?
বোনের কথা শুনে গম্ভীর কন্ঠে রফিক তালুকদার বলেন তোরা সুযোগ পেয়ে এখন আমাদের দূর্বলতায় আঘাত করতে আসছো? তোর ভাবি কি তোর সন্তানদের কখনো খারাপ বুঝেছে? যে ভালো তাকে ভালো বলেছে। তুই আজ যেই ছেলের গুনগান করতে আমার বাড়িতে এসেছিস সেই ছেলের জন্য বছর পাচেঁক আগে জেলে পর্যন্ত যাইতেছিলি। আমি না থাকলে এখনো তোর ছেলে জেলে পচেঁ মরত।
আনামের বড় ফুফু বলেন শোনেনর ভাইসাব আপনাকে সব সময় আমরা সন্মান দিয়ে চলেছি। আমার ছেলে একটু দুষ্টমী করত এরকম কিশোর বয়সে ছেলেরা একটু আধটু করে। তার জন্য আমার ছেলেকে কুকুরের মত পিটাইছেন। এখন দেখেন নিজের ছেলের কি হাল,শুনেছি ঐ বাড়ি থেকে পিটিয়ে আধমরা করে দিয়েছে।
___হায়রে বোন! এই বোনের জন্য আমি এতোকিছু করেছি? তোর গায়ে তোর ছেলে হাত তুলেছিল দেখেই তো আমি পিটাই ছিলাম ছেলে আর ছেলের বাপের অত্যাচারে যখন আমার বাড়িতে পরে ছিলি ছেলে কে স্বামীর কাছে দিয়ে ডিভোর্স পর্যন্ত নিতে চাইছিস আমি তোর ঘর বর ঠিক করে দিছি আজ তোর এই এতো সুখ টাকা পয়সা কই থেকে আসছে? নিজের ভাগের জায়গা বিক্রি করে তোর সুখের জন্য তোর স্বামীকে ব্যবসা করতে দিয়েছি আর তুই শেষে আমাকেই অভিযুক্তের কাঠগড়ায় দাঁড়া করাইলি?
___শোনেন ভাইসাব পুরানো কথা বলে লাভ কি? বর্তমান তো আপনিও আমার থেকে বেশি করুন অবস্থায় আছেন।
___করুন অবস্থায় থাকলেও তখন বোনদের বিপদে আমি ছিলাম। কিন্তু আমার বিপদে বোনেরা নিজেদের মুখোশ উন্মোচন করে দেখিয়ে দিল আমার বিপদে কেউ পাশে নেই। কিরে ছোট তুই ও কি কিছু বলবি আমাদের?
___আমি আর কি বলব আমার কপাল ভালো আমার মেয়েকে আপনি রিজেক্ট করেছিলেন নাহলে এই চরিত্রহীন ছেলে যদি আমার জামাই হত তাহলে কিসে যে কি হত।
এসব কথা শুনে আনাম আর রুমে থাকতে পারে না৷ আনাম প্রচন্ড রাগি চেহারা নিয়ে এসে বলে তা ফুফুরা আপনারা কি এসেছেন আমার বাবা মা মাকে অপমান করতে? আমি সেই ছেলে যে কিনা সহজে কোনো মেয়ের সাথে কথা বলি না। মেয়েদের সাথে মিশি না৷ কলেজ ভার্সিটির লাইফে কোনো মেয়ের সাথে মিশিনি। আপনারা কিভাবে ভাবলেন আমি এমন একটা জঘন্যতম কাজ করতে পারি?
শোনেন আমি যড়যন্ত্রের শিকার হয়েছি। আমার সরলতা আর ভালো মানুষির সুযোগ আমার স্ত্রী কাজে লাগিয়েছে৷ আমাদের মধ্যে আরো দশটা স্বামী স্ত্রী মত সম্পর্ক ছিল না। আমি এতোদিন বাবা মা কষ্ট পাবে দেখে কিছু বলিনি ভেবেছিলাম সব ঠিক হয়ে যাবে।
আনামের মা বিষ্ময়ের চোখে জিজ্ঞেস করে কি বলছিস এসব?
___হ্যাঁ মা, আমি তো মেয়ে দেখতে যায়নি বাবাই সব করেছো আর মেয়েও আমাকে দেখেনি। ওর বাবা নাকি ওকে জোরপূর্বক বিয়ে দিয়েছে। এর কারনে ও আমাকে বিয়ে করেছে। ও নাকি অন্য একটি ছেলেকে ভালোবাসে এবং তার সাথে শারীরিক সম্পর্ক পর্যন্ত হয়েছে। এটা জানার পর আমি ভিতরে অনেক ভেংগে পরি আর ও চায়নি আমার সাথে সংসার করতে। আর আমারো ইচ্ছে ছিল না সংসার করার৷ পরে আমি ওকে সহজ ভাবে বলেছি আমি যত দ্রুত সম্ভব ডিভোর্স ফাইল করব, কিন্তু ও আমাকে বলে আপনার এটা নিয়ে ভাবতে হবে না।আমাকে কিছুদিন সময় দিন আমার বাবা এইরকম কিছু শুনলে আমাকে মেরে ফেলবে। আমি খুব দ্রুতই ডিভোর্স নিব তবে পরিস্থিতি টা স্বাভাবিক হোক। কিন্তু ওরা যে বিনা দোষে আমাকে ফাঁসিয়ে দিবে আমি বুঝতে পারিনি। নিজেকে এখন কাপুরষ মনে হচ্ছে। অতিরিক্ত সরলতা আর অতিরিক্ত ভালো মানুষি দেখানোটাই আমার জীবনে কাল হয়ে নেমেছে। এই যে নয়না মেয়েটা সম্পর্কে আমার শালী হয় কিন্তু কখনো মেয়েটার সাথে আমার ঠিক মত দশ মিনিটও কথা হয়নি। মেয়েটা নিজেই কখনো আমার সামনে পরেনি।যেখানে ওর সাথে আমার কখনো কথা হয়নি দেখা হয়নি সেখানে এমন একটি সম্পর্ক করা কোনো ভাবে কি পসিবল?
ওদের বাড়িতে ছোট খাটো অনুষ্ঠান হবে। না যেতে চাইলেও ওর মায়ের অনুরোধে আমি যাই। ও বলেছে দুইদিন থাকবে বাধ্য হয়ে আমাকেও দুই দিন থাকতে হয়েছে সকালে নাস্তা শেষে বাড়িতে আসার কথা ছিল কিন্তু ঐ দিন রাতে নাফিজা আমার জন্য প্যাকেটে করে বিরয়ানী নিয়ে আসে বলে নাফিজ সবার জন্য স্পেশাল বিরয়ানী এনেছে। বিরয়ানী খাওয়ার কিছুক্ষন পর কি হয়েছে না হয়েছে আমার কিছুই মনে নেই। নয়নার চিৎকারে আমার ঘুম ভাংগে এক প্রকার ঘুম থেকে লাফ দিয়ে উঠে দেখি নয়না ফ্লোরে পরে আছে।
___থাক শাক দিয়ে আর মাছ ঢাকতে হবে না।যা বুঝার আমরা বুঝেছি।
___সত্যি এটাই এখন বিশ্বাস করার না করা আপনাদের ব্যাপার।
যাইহোক আনামের বড় ফুফু বলেন তো তোদের নতুন বউ কই দেখি?
আনামের মা বলেন বউ একটু অসুস্থ।
___কি হয়েছে পেটে টেট ও বাঁধাই ফেলছে নাকি?
আনাম বলে উঠে ফুফু আপনারা দয়া করে চুপ করুন আপনাদের সাথে বেয়াদবি করতে চাই না।
ছোট ফুফু বলে উঠে তো কি বেয়াদবি করবি? সত্যি বললে মানুষ এমনি জ্বলে উঠে। আমার মেয়েকে তুই তো বলেছিলি আমার মেয়ের চরিত্র ভালো না। আমার মেয়ে খারাপ এখন তোর অবস্থা দেখ।
___আমি সহজে কাউকে কিছু বলি না। আপনার মেয়েকে সব সময় বোনের মত দেখেছি বড় ভাইয়ের মত শাসন ভালোবাসা দিছি। ও যা করেছে সেটা কি মিথ্যা ছিলো? ও ওর কলেজের বন্ধুর সাথে গিয়ে দুইদিন কক্সবাজার থাকেনি? সেই তো আমাকেই খুঁজে আনতে হয়েছিল। আরো ছেলেদের সাথে অঘাধ মেলামেশা ছিল। জেনেশুনে এমন মেয়েকে কেউ বিয়ে করবে না৷
ছোট ফুফু বলে উঠে নিজের নাই চরিত্র আসছে অন্যের চরিত্র জাস্টিফাই করতে।
রফিক তালুকদার বলেন। তোরা বোন হিসেবে অনেক অকৃতজ্ঞ তোদের সুখের জন্য কি করি নাই আমি। তোরা সব ভুলে গেলি আমার বিপদের দিনে সবাই মুখ ফিরিয়ে নিলি তো নিলি তার সাথে প্রতিবেশীদের মত যন্ত্রনাদায়ক কথা সহ অপমান করে গেলি। যাইহোক দোষ সবই আমার মাফ করে দিস। কখনো মনে করিস না তোদের একটা ভাই আছে। আজকে থেকে বুঝবি তোর ভাই মারা গেছে। এখন আমার বাড়ি থেকে চলে যা।
আনামের ফুফুরা মুখ ভ্যাংচি কেটে চলে গেলে আনাম মা কে জরিয়ে ধরে কান্না শুরু করে।
___মা কি থেকে কি হয়ে গেলো? আমাদের সাথে এমনটা কেনো হয়। ওমা আমি তো পারতে বলে কারো ক্ষতি করিনি। ছোট বেলা থেকে যে যেখান থেকে পারে কথা শুনায়।ওমা, মেধাবী স্টুডেন্ট হয়েও ব্যাকব্যাঞ্চারের বুলিং এর শিকার হয়েছি। উপকার করতে গিয়েও শেষে আমি বিপদে পড়ি। আবার নিজের চরিত্র হেফাজত করেও আজকে এতো বড় একটা কলংকের বোঝা মাথায় নিতে হয়েছে। ও মা সব কিছু আমার সাথে কেনো হয়।
রফিক তালুকদার ছেলেকে ধমক দিয়ে বলেন মানুষ তোমাকে ঠকায় কারন এই যে তুমি পুরুষ মানুষ হয়ে কাঁদছ তাই। পুরুষ মানুষ হবে স্ট্রং এন্ড স্ট্রিট। এসব কান্না কাটি বন্ধ করে নিজেকে স্বাভাবিক করো। যতটা বুঝতে পেরেছি এইখানে আর থাকা হবে না। তুমি ঢাকায় চলে যাও। নতুন একটি ফ্যামেলি বাসা দেখো। নয়নার চিকিৎসা করাতে হবে। আর মানুষের মন্দ কথা তিক্ত কথার হাত থেকে বাঁচতে হলে স্থান ত্যাগ করতে হবে। তবে আমি আবার আমার এলাকাতে ফিরব সব কিছুর প্রমান করে মাথা উচুঁ করে রফিক তালুকদার আর আনাম তালুকদার ফিরবে।এর আগে আমার শান্তি হবে না।
আনাম বলে আচ্ছা ঠিক আছে। আমি নিজেকে সামলে নিবো। আর আজকেই সন্ধ্যার পরে ঢাকায় চলে যাব।
আনাম চলে যাওয়ার পর রেহানা বেগম রফিক তালুকদার কে বলেন তোমার আবারকি হলো এইতো ছেলেকে শক্ত হতে বললে।
___কিছু হয়নি ভিতরে কষ্ট হচ্ছে। এই যে কয়টা দিন এতো অসম্মান অপমানিত হয়েছি এতোটা কষ্ট আর খারাপ কখনো লাগেনি কিন্তু আজ বোন দুইটার ব্যবহার দেখে বিশ্বাস হচ্ছে না এরা আমার বোন এরাও আমার সাথে এমন ব্যবহার করতে পারে। বাবা-মা মারা যাওয়ার পর বোন দুইটাকে সব সময় আগলে রেখেছি বিয়ে দিয়েছি ওদের সন্তানদের লেখাপড়া করিয়েছি। এটা ভেবে বেশি খারাপ লাগছে আমার ছেলের আপন বলতে কেউ রইল না। ওর এমনিতেও চাচা নাই ফুফুরাও নিজেদের গুটিয়ে নিয়েছে আমরা মারা গেলে ও একদম একা হয়ে যাবে।
___চিন্তা করো না আল্লাহ উত্তম পরিকল্পনাকারী। সব ঠিক হয়ে যাবে।
কিছুক্ষন পর রেহনা বেগম নয়নার রুমে গিয়ে দেখে নয়না ডান কাত হয়ে বাম কানে হাত দিয়ে কান্না করছে। রেহানা বেগম জিজ্ঞেস করে কি হয়েছে তোমার? কিন্তু নয়না কোনো উত্তর করে না। কয়েকবার জিজ্ঞেস করার পরে রেহানা বেগম একটু বিরক্ত নিয়ে হাতের ইশারায় জিজ্ঞেস করেন কি হয়েছে?
নয়না কাঁদতে কাঁদতে বলে আন্টি আমার কানের ভিতরে প্রচুর ব্যাথা করছে কিছু শুনতে পাচ্ছি না।
___তো তুমি আমাকে ডাকবে না?
___আপনাদের অনেক ঝামেলায় ফেলিছি। আমার জন্য আপনাদের কষ্ট হোক আমি এটা চাই না। বলেই নয়না অঝরে কাঁদতে থাকে।
০৮
নাফিজা রাহাতের সাথে দেখা করতে আসে। এবং এই কয়দিনের সকল কথা শুনে রাহাত বলে উঠে সবে তো প্রতিশোধ নেওয়া শুরু সামনে আরো বাকি আছে,
___কিসের প্রতিশোধ?
___বলব আস্তে আস্তে তবে তোমাকে একটি সত্যি কথা বলি।
___কি কথা?
___আমার নাম রাহাত না।
নাফিজা অবাক হয়ে বলে কি বলছ তোমার নাম রাহাত না তাহলে তোমার নাম কি?
___আমার নাম নিহান জমাদ্দার আমি আনামের ফুফাতো ভাই। আর তুমি হলে আমার প্রতিশোধ নেওয়ার গুটি মাত্র।
নাফিজা এসব কথা শুনে যেনো কিছুই বিশ্বাস করতে পারছে না। নাফিজা বলে তুমি আমাকে গুটি বানালে কিভাবে যা হয়েছে এসব প্লান তো আমি তোমার সাথে করিনি।
___এতো অস্থির হচ্ছ কেনো বেবী অপেক্ষা করো আস্তে আস্তে সব জানতে পারবে।
নাফিজা যেনো রাহাতের কথা শুনে একদম চুপ হয়ে আছে নিজেই বুঝতে পারছে না কি করতে চেয়ে কিসের মধ্যে ঢুকে গেছে।
আর হ্যা এসব নিয়ে বেশি মাথা ঘামিও না সবটা কিন্তু ভাইরাল হয়ে যাবে গুড বায় দেখা হবে।
নাফিজা ভিতুর মত নিহানের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে______________<_____
চলবে______