কলংকের বিয়ে পর্ব-০৫

0
1

#কলংকের_বিয়ে
#ইসরাত_জাহান_এশা
#পার্ট_০৫

১১
আনাম বিরক্তি নিয়ে নয়নার রুমে গিয়ে বলে বাবা কি বলেছে শুনতে পাওনি? এইটুকু বলে আনাম চলে আসে নিজের রুমে নয়না নিজের বালিশ নিয়ে রুমে গিয়ে দেখে আনাম পুরো বিছানায় হাত পা ছড়িয়ে শুয়ে আছে।
___আপনি যদি একাই বিছানা দখল করেন তাহলে আমি কোথায় শুবো?
___ফ্লোরে গিয়ে শুয়ে পরো।
___আপনি ফ্লোরে যান। আমি ফ্লোরে শুইতে পারব না।
___কানের কাছে হাঁসের মত প্যাকঁ প্যাকঁ করো না। যা বলছি তাই করো।
নয়না বলে আমার ব্যবস্থা আমাকেই করতে হবে বলেই বালিশটাকে আনামের মাথার সাইডে দিয়ে ধপাস করে শুয়ে পড়ে। আনাম দ্রুত উঠে বসে বলে এটা কি হলো?
____কি আবার নিজের জায়গা করে নিয়েছি। এই রুমের অর্ধেক ভাগিদার আমি। আর আমি আমার জায়গা আরেকজন কে দিয়ে নিজে কষ্ট করব এমন মেয়ে আমি না। ছোট বেলা থেকে আমার বাবা আমাকে বলেছেন তোর মা নেই অনেকেই চাইবে তোর জিনিস কেরে নিতে। তুই সব সময় নিজের অধিকার বুঝে নিবি নাহলে দুনিয়ায় টিকতে কষ্ট হয়ে যাবে৷ আর তখন থেকেই আমি আমার ভাগের একটা দানাও ছেড়ে দেই না৷ কাউকে দেওয়ার হলে আমি সেচ্ছায় দিব। কেউ কেরে নিবে আর আমি ইমোশনাল হয়ে দিয়ে দিব তেমন মেয়ে আমি না।
যান আরো সরে বসুন এইটুকও আমার জায়গা।

আনাম নয়নার দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলে এ মেয়েটা তো বারুদের আগায় চলে আমি তো কখনো বুঝিনি মেয়েটা এতো কথা বলতে পারে আর এতো চঞ্চল।
__কি হলো তাকিয়ে আছেন কেনো?
__তোমাকে আমি ভেদা বিড়াল ভাবতাম কিন্তু তুমিতো দেখছি পুরোটাই ঘসেটির কপি। কথার ধরন ও চেঞ্জ হয়ে গেছে। এতোদিনে আমি ধরতেই পারিনি।
___সবার সামনে গিয়ে কি নিজেকে পরিচয় করিয়ে দিতে হবে? যখন প্রয়োজন তখন তেমন থাকি।
___থাকো ভাই যেমনে মন চায় থাকো। কিন্তু আগেই একটা কথা বলি তোমার বোনের মত খেলা কইরো না আমাকে নিয়ে।

নয়না কোনো উত্তর করে না৷ নয়না চুপ করে আরেক দিকে মুখ করে শুয়ে পরে। আনামও নয়নার রেসপন্স না পেয়ে অন্য দিকে শুয়ে পরে।

রেহনা বেগম নাস্তা তৈরি করে নয়না কে কয়েকবার ডাক দিলে নয়না দ্রুত রান্না ঘরে যায়।
__আন্টি ডেকে ছিলেন?
__আন্টি কে? মা বলে ডাকবে।
__আচ্ছা মা।
রেহনা বেগম নয়নার হাত দুটো নিজের হাতে নিয়ে বলে শোনো মা তোমাকে আজ কিছু কথা বলি তুমি আমার কথা একটু রাখবে?
__এভাবে বলছেন কেনো? আপনারা আমার বিপদে আমাকে আশ্রয় দিয়েছেন আপনি আমার অসুস্থতায় আমার মায়ের মত আমাকে সেবা দিয়েছেন যত্ন করেছেন৷ আপনাকে পেয়ে একটু হলেও মায়ের মমতাকে অনুভব করতে পারি আন্টি ওহ সরি মা। আপনি আমাকে অনুরোধ নয় অর্ডার করবেন।
___আমার ছেলেটা বেশীই সরল হওয়ার জন্য সবার কাছে হাসির পাত্র হয়েছে। যে যেভাবে পেরেছে ওকে ঠকিয়েছে। খুব সখ করে আমি ছেলের বিয়ে দিয়েছিলাম কিন্তু জানতাম না সেখানেও আমার ছেলেটা ঠকে বসে আছে। ও কখনো জানাইনি হয়ত এই ঘটনা না ঘটলে ও মুখ খুলত না।
এই কয় মাসে তোমাকে আমি যা বুঝেছি তুমি আমার ছেলের জন্য একদম পারফেক্ট। তুমি পারবে আমার ছেলেটাকে আরো দশটা ছেলে যেমন হাসিখুশি চঞ্চলতার সাথে ঘুরে বেড়ায় সেইভাবে ফুটিয়ে তুলতে। তুমি ওরে একটু ভালোবাসো তাও আমি মরে গেলে জেনে যাব আমার ছেলের জন্য তুমি ছিলে।

নয়না মনে মনে বলে আজীবন দেখে আসছি শাশুড়ীরা ছেলের বউর থেকে ছেলেকে দূরে রাখতে চায়। আর আমার শাশুড়ী নিজেই আমাকে ছেলের প্রতি উস্কে দিচ্ছে। নাহ ব্যাপার টা সুন্দর!
___ আচ্ছা আম্মু আমি চেষ্টা করব।
___শোনো এখন থেকে তুমি আমার ছেলের খেয়াল রাখবে ওর কি পছন্দ না পছন্দ সব আমি বলে দিব সব তুমি করবে। আমাকে ডাকলে তুমি আমার আগে সেখানে যাবে ছায়ার মত ওর পাশে থাকবে।
__ঠিক আছে মা।
__যাও এই নাস্তা নিয়ে তুমি রুমে যাও। দু’জনে ভাগ করে খাও আর ওর অফিসে যাওয়ারও সময় হয়ে এসেছে।

নয়না লজ্জা মাখা মুখ নিয়ে নাস্তা সহ রুমে ঢুকে। আস্তে আস্তে আনামকে ডাকে এই উঠুন উঠুন।
আনাম ঘুম ঘুম চোখে বলে মা আরেকটু ঘুমাই রাতে ঐ মেয়েটার জন্য ঠিক মতো ঘুমাতে পারিনি।

নয়না রাগে কটমট করে চিৎকার দিয়ে বলে কি বললেন? আমি রাতে আপনাকে জ্বালিয়েছি?
আমি তো ঔষধ খেয়ে ঘুমিয়ে গেছি আপনি জানেন না আমি কত পাওয়ারি ঔষধ খাই। আমার ঔষধ গুলো খেলেই ঘুম চলে আসে।
আনাম লাফ দিয়ে বলে তুমি এখানে কেনো মা কোথায়? মায়ের কথা পরে হবে আগে বলেন আমি কিভাবে আপনাকে জ্বালিয়েছি?
___তোমার বয়স কত?
___উন্নিশ বছর।কেনো আপনি বয়স জিজ্ঞেস করছেন?
___ভাই ওটা উনিশ হবে নট উন্নিশ। আর শোনো তুমি ছোট মানুষ তোমাকে কি বুঝাব। একই বিছানায় এইভাবে ছেলে মেয়ে হটাৎ করেই ঘুম আসে না৷ এসব তুমি বুঝবে না।
___বুঝতেও চাই না৷ আমার বোনের সাথে যখন থাকতেন তখন খুব ঘুম এসেছিল?
___তোমার বোনের সাথে তো আর এক বিছানায় ছিলাম না৷ আমি নিচে বিছানা করে নিছি।
___ভালোই তো তাকে বিছানা ছেড়ে দিতে পারেন আমার বেলায় আপনি বিছানায় উঠে থাকেন।
___আমি এখন শক্ত হয়েছি কখনো নিজের অধিকার ছেড়ে দিব না। যা আমার তা আমার আর কোনো কম্প্রোমাইজ হবে না৷
__আপনার কম্প্রোমাইজের কাথায় আগুন নাস্তা খেয়ে অফিস যান৷ এতো কথা ভালো লাগছে না৷ আমার অনেক কাজ রয়েছে।
___কি এমন কাজ তোমার ? সারাদিন রুমে শুয়ে মোবাইল ঘাটো আর আজাইরা পোস্ট করো।
___স্বামীর মন জয় করার কাজ।
হটাৎ এমন একটা কথা বলাতে আনাম ভিষম খায়। নয়নাও জিভে কামড় দিয়ে বলে আল্লাহ! এটা কি বল্লাম লজ্জায় রুম থেকে চলে যায়।

আনাম নাস্তা খেতে খেতে মনে মনে ভাবে এখন কি করতে পারি? নতুন করে কি নয়নাকে নিয়ে জীবন শুরু করব? নাকি নয়নাও ধোকাঁ দিবে? আচ্ছা সূখ কি আমার জীবনে ধরা দিবে?
আনাম নিজের মাথায় নিজে বাড়ি দিয়ে বলে ধ্যাত কি সব ভাবছি আমাকে শক্ত হতে হবে ইমোশনাল হলেই কষ্ট।

আনাম রেডি হয়ে অফিস চলে যায়। নয়না গুগল ঘাটতে শুরু করে কিভাবে স্বামীর মন জয় করা যায়। সেই সব সার্চ করে করে মেইন মেইন পয়েন্ট গুলো নোট করছে।

১২
নাফিজ নিহান কে ফোন দিয়ে বলে তুমি রাহাত হও আর নিহান হও তুমি কথা দিয়েছ আমার বোনকে বিয়ে করবে এখন তো ইদ্দত পালন করা হয়ে গেছে। তুমি এখন ডেট ফিক্সড করো।

___বিয়ে তো করব কিন্তু নাফিজা আপনাকে কিছু বলেনি?
___কি বলবে?
__আমি নাফিজাকে বিয়ের কথা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছি আপনি জিজ্ঞেস করেন ওকে।
___ওকে কি বলেছ? সেই কথা আমাকেও বলো।
___ওর থেকে জেনে নিয়েন।
বলেই নিহান কল কেটে দেয়। নাফিজ নাফিজাকে গিয়ে জিজ্ঞেস করে নিহান তোকে বিয়ের কথা কি বলেছে?
নাফিজা কাঁদতে কাঁদতে বলে ভাইয়া অন্যের জন্য পুকুর খুরে আমি নদীতে পরে গেছি। ও বলেছে আমাকে বিয়ে করবে কিন্তু পাঁচ লাখ টাকা সাথে একটা রুম সাজাতে যত আসবাবপত্র লাগে সব দিতে হবে।

___কি বলিস এসব? তোকে যদি এত কিছু দেই তাহলে আমার কিছু থাকবে? আমি কি বিয়ে থা করব না? তোর ওরে বিয়ে করা লাগবে না আজকে থেকে ওর সাথে আর যোগাযোগ করবি না।
___যোগাযোগ না করে উপায় নেই ওর কাছে আমার ব্যক্তিগত ছবি আছে পাঁচ লাখ টাকা না দিলে সব ভাইরাল করে দিবে।
____কোন গর্তে যে পড়লাম ভাই। তুই এতো ভালো একটা সংসার বাদ দিয়ে এই ছেলের পাল্লায় কিভাবে পড়লি। আমিও বোকা হলাম তুইও বোকা হইলি। এখন এর একমাত্র সমাধান মা। মা ছাড়া এগুলোর কোনো সমাধান হবে না।

নাফিজ নাজিফা আয়েশা বেগমের পায়ে ধরে সব সত্যি কথা শিকার করে যে নয়না আর আনামের বিষয় ওরা ইচ্ছে করে করেছে প্লান করে করেছে। আয়েশা বেগম মেয়ের কথা শুনে ডায়রেক মাথায় হাত দিয়ে বলেন হায় আল্লাহ! এটা কি হলো? কি মেয়ে পেটে ধরেছি নিজের এতো সুন্দর সংসার তুই নিজেই খেয়ে ফেললি৷ পরের মেয়েকে কি বলব আমার নিজের মেয়েই নিজের হাতে সবটা নষ্ট করেছে। কিরে নাফিজ তুইও ওর সাথে ছিলি?

নাফিজ মাথা নিচু করে বলে মা তোমার মেয়ে অন্য একটা ছেলেকে ভালোবাসে তার কথা মত এসব করেছে বিয়ের ঐ বাড়িতে ও আনামকে আগেই সব বলে দূরে সরিয়ে দিয়েছে। এদিকে নিহানের সাথেও আমার ভালো সম্পর্ক হয় নয়নাকে সরানোর জন্য নিহান আমাকে ঐ দিনের প্লানের বুদ্ধি দেয়। একে একে নাফিজ আর নাফিজা আয়েশা বেগম কে সব কথা খুলে বলে।
আয়েশা বেগম পাথরের মূর্তির মত বসে আছেন৷ তোরা এটা কি করলি? এখন এতো টাকা কিভাবে যোগাড় করব?
নাফিজ বলে মা নয়নার মায়ের রেখে যাওয়া দশ লাখ টাকা ছিলো না আব্বার কাছে ঐটাই দিতে বলো আমাদের।
___তোর বাবা জীবনেও দিবে না।
__কেনো দিবে না? আসল ঘটনা তো আর আব্বা জানে না। আর নাফিজার যে ক্ষতি করেছে তাতে ও তো এই বাড়ীর কানা করিও পাবে না।
___তবুও এটা ওর মায়ের টাকা কখনো দিবে না।
___বলে দেখো তুমি। আব্বাকে চাপ দাও যেনো আব্বা নিজে থেকে দিতে বাধ্য হয়। ভুল তো মানুষেরই হয়। তুমি মা হয়ে যদি আমাদের পাশে না থাকো তাহলে কে আমাদের পাশে দাঁড়াবে মা?

সন্তানদের কথায় আয়েশা বেগম খুব ইমোশনাল হয়ে পড়েন। নিজেকে ঠিক করে রাজ্জাক ভূঁইয়ার কাছে গিয়ে বলেন তোমাকে কিছু কথা বলার ছিল।
___নাফিজার জন্য একটা সমন্ধ এসেছে ছেলেটা ইন্জিনিয়ার খুব ভালো পরিবার। নাফিজ নিজে গিয়ে সব খোজঁ খবর নিয়েছে।
___তা তো ভালোই নাফিজার পছন্দ হলে বিয়ে দিয়ে দাও৷ এবার আর আমি কোনো দায়িত্বে যাব না। ওর যা পছন্দ তাই করুক।
___কিন্তু ছেলের কিছু ডিমান্ড ছিল।
___কি ডিমান্ড?
__মেয়েটা তো ডিভোর্সী তাই পাঁচ লাখ টাকা নগদ আর ঘর সাজিয়ে দিতে হবে।
___তুমি কি মেয়েকে বিক্রি করতে চাচ্ছ?
___সেটা না ছেলেটা ভালো এমনিতেও তো জামাইকে দেওয়া লাগে।
__কিন্তু আমি এতো টাকা কোথায় পাবো?
__নয়নার আছে না দশ লাখ ওখান থেকে দিবে।
___সেটা আমার কাছে নেই। নয়নার আঠারো বছর হওয়ার পরেই আমি ঐ টাকা ওকে একাউন্ট করে ওর নামে করে দিয়েছি। ঐ টাকা এখন ওর কাছে।

আয়েশা বেগম মাথায় হাত দিয়ে বলে এটা তুমি কি করলা? আমার মেয়েটা সর্বশান্ত হয়ে থাকবে?
নাফিজাও কাঁদতে কাঁদতে রাজ্জাক ভূঁইয়ার কাছে গিয়ে বলে বাবা আমি কি জীবনে সূখ পাবো না? নিজের পছন্দের কোনো প্রধান্য পাবো না?

নাফিজও ভিতরে গিয়ে বলে আব্বা আপনি সব সময় নিজের ছোট মেয়েকে ভালোবেসেন সেই সাহসে আজকে আমাদের মান ইজ্জত সব শেষ আমার বোনটার জীবন শেষ হয়ে গেছে আমার বোনের জন্য কি আপনার কোনো মায়া নেই ও তো আপনার মেয়ে।
রাজ্জাক ভূঁইয়া বুঝতে পারেন আবারো দোষ দেওয়া হবে তাকে সবাই তার বিপক্ষে। রাজ্জাক ভূঁইয়া স্ত্রী সন্তানদের আস্বস্ত করে বলেন তোমরা যা ভালো বুঝ করো টাকা যা লাগে দেখা যাবে,,,,,,,,,,,,,,,

চলবে_______