#কলংকের_বিয়ে
#ইসরাত_জাহান_এশা
#পার্ট_০৬
রাজ্জাক ভূঁইয়া বুঝতে পারেন আবারো দোষ দেওয়া হবে তাকে সবাই তার বিপক্ষে। রাজ্জাক ভূঁইয়া স্ত্রী সন্তানদের আস্বস্ত করে বলেন তোমরা যা ভালো বুঝ করো টাকা যা লাগে দেখা যাবে।
আয়েশা বেগম বলেন এতো বছর তোমার মেয়েটাকে রান্না বান্না যত্ন আত্মী করে রাখলাম কিন্তু তুমি একদম দশলাখ টাকা পুরোটাই নয়নাকে দিয়ে দিছো? আমাদের জানানোর প্রয়োজন মনে করোনি?
___এটা ওর মায়ের টাকা আমি কিভাবে সেটা খরচ করব? ওর মা কষ্ট পাবে। মতি আমাকে এটা আমানত দিয়ে গেছে তাই ওর টাকা ওকেই দিয়েছি।
___কিন্তু তাই বলে আমাকে একটাবার জানাবে না?
___এখানে জানা জানির কি আছে? এই টাকায় তোমার কোনো অধিকার নেই।
___না তা থাকবে কেনো আমাকে তো আনাই হইছে এই সংসারে খাটার জন্য।
নাফিজ কথার মাঝে বলে উঠে তাহলে আমাদের টাও আমাদের বুঝিই দিন। সব সময় ছোট মেয়ের দিক দেখলেই হবে?
___নাফিজ আমি এখনো জীবত আছি। আমি মারা গেলে এমনিই আমার সব আমার সন্তান রা পাবে।
___সন্তানরা মানে কি? সব আমি একা পাবো। আর এখন নাফিজা পাওনার চেয়ে বেশি নিয়ে যাচ্ছে । ওর বিয়ের খরচ করার পর যা থাকবে আপনার সব কিছু আমার।
___নয়নাও আমার মেয়ে সে যতই অন্যায় করুক তবুও তাকে আমি ঠকাতে পারব না। আমি মারা গেলে নয়নার অংশ নয়নাকে বুঝিয়ে দিবে।
___পারব না। নয়নাকে আপনি আগেই ত্যাগ করেছেন এখন আপনার সব আমার বেশি সমস্যা করলে আমি জোর করে সব লিখিয়ে নিবো।
আয়েশা বেগম ছেলেকে চর দিয়ে বলেন কি রে নাফিজ এতটা বরবর হয়ে গেছো আমি এতো খারাপ শিক্ষা দেইনি। তোর বাবা অসুস্থ বাবার সাথে মোটেও এমন করবি না। দূর হ এখান থেকে।
___কিন্তু মা!
__কোনো কিন্তু না এই মুহুর্তে ঘর থেকে বেরিয়ে যা।
রাজ্জাক ভূঁইয়া খুব আক্ষেপের সাথে বলেন শেষ বয়সে জীবনটা এতোটা তিক্ত আর কঠিন হবে কখনো ভাবিনি। ছোট মেয়েটা এমন করল, ছেলেটাও অ*সভ্য হয়েছে মৃত্যুর আগেই মরার দিন গুনছে। আয়েশা বেগম রাজ্জাক ভূঁইয়া কে সান্ত্বনা দিয়ে বলেন। এভাবে কেনো বলেন নাফিজ ছোট মানুষ উত্তেজনা বসত কিসে কি বলেছে তার ঠিক নেই ওর কথায় তুমি মনে নিও না। তোমারি তো ছেলে একটু মেজাজ বেশীই।
(রাজ্জাক ভূঁইয়া মনে মনে বলে সবাই ছোট খালি বড় ছিল আমার ছোট্ট মেয়েটা।ওর মা বেঁচে থাকলে হয়ত নিজের মেয়েকে আগলে রাখত পিতা হয়ে আমি কিছুই করতে পারলাম না)
__আমার মেজাজ থাকলেও বেয়াদব ছিলাম না। মা বাবা যেমন বলেছে তেমন করেছি। তাতে যদি ক্ষতিও হত তাহলেও তাদের সাথে উচ্চ বাচ্চ করিনি।
___আপনি তো বাবা সন্তানদের এতো দোষ ধরলে হয়। ছোট মানুষ ওদের কথা মনে নেন কেনো। একটা মাত্র ছেলে আমাদের এত দোষ ধইরেন না।
রাজ্জাক ভূঁইয়াকে সান্ত্বনা দিয়ে আয়েশা বেগম নাফিজের রুমে যায়। নাফিজকে গিয়ে বলে তোর কি আক্কেল জ্ঞান কোনো দিনও হবে না?তুই তোর বাবার সাথে এমন লাউডলি কথা কেনো বলছিস? তোর বাবা কষ্ট পাইছে পায়ে ধরে ক্ষমা চা গিয়ে। তোর বাবার রাগ সম্পর্কে জানস না। রাগ করলে তোকে কানা করি না দিয়ে এতিম খানায় দিবে। উনি বেয়াদবি বরবরতা এগুলো পছন্দ করে না।
একটা সময় এগুলো তোরই হবে। শুধু শুধু বাবার মনে কষ্ট দিয়ে ক্ষত তৈরি করিস না।
নাফিজ মায়ের কথা মত রাজ্জাক ভূঁইয়ার কাছে ক্ষমা চেয়ে আসে।
এদিকে নিহান ওর মা শায়লা বেগম কে নাফিজার কথা বললে শায়লা বেগম রাগান্বিত কন্ঠে বলেন
___ছি ছি শেষে এই রকম ডিভোর্সী মেয়েকে বউ করে আনব তাও আবার ভাইয়ের ছেলের বউ?
___মা এমন করো না অনেক কিছু পাবা। আর শোনো ঘরে বউ আনব না আনব পুতুল প্রতিশোধের খেলার পুতুল।
___তারপরও আমার একটা মাত্র ছেলের বউ হবে এই মেয়েকে আনলে সমাজ কি বলবে?
___সমাজ যে যা বলে বলুক এরেই আনব। দরকার হয় তোমার পছন্দ মত পরে আবার বিয়ে করিও।
শায়লা বেগম ছেলের সাথে না পেরে রাজি হয়ে যায়।
নিহান ওর মা বাবা কে নিয়ে নাফিজাদের বাড়িতে আসে নাফিজার বিয়ের দিন তারিখ দিতে। এদিকে গ্রামের লোক কানা ঘুষা শুরু করেছে ইদ্দত পালন শেষ হতে না হতেই পাত্র একদম রেডি। আগে থেকেই নাকি সম্পর্ক সব গুলোই এক রকম।
১৩.
নয়না আনামকে হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ করে কি করেন?
আনামের মোবাইলের স্ক্রিনে অচেনা নম্বর থেকে মেসেজ দেখে একটু বিব্রত হয়। আনাম মেসেজ ক্লিক করে দেখে নম্বর টি নয়নার হোয়াটসঅ্যাপ একাউন্টে নাম দেওয়া(নুসরাত নিশাত নয়না) আনাম মনে মনে বলে একটা মেয়ের কয়টা নাম লাগে? তিনটা নাম একলাই দখল করে আছে। আনাম ইনফো চেক দেয় সেখানে লেখা অ্যাটিটিউট গার্ল। আনাম বলে ওরে আমার অ্যাটিটিউট মাইয়া রে দেখি কত অ্যাটিটিউট আছে।
আনাম মেসেজের কোনো রিপ্লাই দেয় না। নয়না মোবাইলের দিকে তাকিয়ে আছে রিপ্লাইয়ের অপেক্ষায়। দশ মিনিট শেষ আনামের থেকে কোনো রিপ্লাই না পেয়ে আবারো মেসেজ দেয়”আপনি মেসেজ সিন করেও রিপ্লাই করেন না কেনো ইগো দেখান?”
আনাম আবারো মেসেজ সিন করে রেখে দেয়। নয়নার মাথা নষ্ট মানুষের এতো ইগো মেসেজ সিন করে রেখে দিলো? নয়না মন খারাপ করে বসে থাকে।
রেহানা বেগম নয়নার মন খারাপ দেখে বলে কি রে কিছু হয়েছে?
___নাহ কিছু হয়নি। কিছু মানুষের ইগো দেখলে শরীর জ্বলে যায়।
__কে ইগো দেখালো?
__কেউনা।
রেহনা বেগম মুচকি হাসি দিয়ে বলেন থাক যার ইগো সে দেখাইছে তুই খেতে আয়।
___না খাবো না। ভালো লাগছে না।
__আরে আয় মন খারাপ করিস না।মানুষের ইগো কে এতই দাম দিস তুই রাগ করে ভাত খাবি না?
___মোটেও না। আমি ভাত খেতে আসতেছি।
এদিকে আনাম বার বার নয়নার মেসেজ দুইটা দেখছে আর মনে মনে ভাবছে মানুষের মেসেজ দেখতেও এতো ভালো লাগে? কতবার দেখলাম মেসেজ মুখস্থ হয়ে গেছে তাও মন চায় বার বার দেখি৷ আচ্ছা রিপ্লাই না দেওয়ায় ও কি রাগ করেছে? নাকি আমার রিপ্লাই দেওয়া না দেওয়ায় ওর কিছু আসে যায় না? আরো কয়টা এসএমএস দিতে পারত না? আনামো না চাইতেও বার বার মোবাইলের স্ক্রিনে তাকায় আবার চেক করে দেখে লাইনে আছে কিনা।আনাম মনে মনে বলে আর একটা এসএমএস দিলে কি হয়।
নয়না বিকালে বেলকনিতে দাঁড়িয়ে দেখে নিচে ভেলপুরির দোকান বসেছে। নয়না রেহনা বেগম কে বলে মা নিচে দেখো ভেলপুরি বসেছে। তোমার ছেলেকে বল না আসার সময় যেন নিয়ে আসে।
___তুই বল।
___তোমার ছেলের কাছে আমার কোনো গুরুত্ব নেই। মেসেজ সিন করে রেখে দিছে আর দিব না এসএমএস।
__আচ্ছা পরিক্ষা করে দেখ তোর মেসেজ শুধু সিন করে রাখে নাকি গুরুত্ব দেয়।
___কিভাবে?
___মেসেজ দিয়ে বল ভেলপুড়ি নিয়ে আসতে। যদি আনে তাহলে বুঝবি তোর গুরুত্ব আছে আর নাহলে নাই।
__নয়না আনাম কে মেসেজ করে “আসার সময় নিচ থেকে ভেল পুড়ি নিয়ে আসবেন”
আনাম মেসেজের শব্দ পেয়ে সাথে স্ক্রিনের দিকে তাকায়। এবার স্ক্রিন থেকে মেসেজ পড়ে নেয় আর সিন করে না৷ এবং সাথে সাথে অফিস থেকে ছুটি নিয়ে বেরিয়ে যায়।
নয়না রেহনা বেগম কে বলেন এই দেখেন আপনার ছেলে মেসেজ ডেলিভারি হয়েছে তাও মেসেজ সিন করেনি৷ আমার গুরুত্বই নাই কোনো। আর বলবেন না আপনার ছেলের জন্য কিছু করতে মুখ কালো করে চলে যায় রুমে। আর মনে মনে আনামেকে গা*লাগা*লি দিচ্ছে। রেহেনা বেগমও এবার চিন্তায় পরে যায় ছেলেটা কি সত্যি সত্যি সন্ন্যাসী হবে? এমন করার দরকার কি যা হয়েছে সব ভুলে সংসার করবে তা না ভিতরে ভিতরে রাগ পুষে রেখেছে।
নিচ থেকে মাগরিবের নামাজ শেষ করে আনাম অনেক গুলো ভেলপুরি নিয়ে বাসায় আসে। রুমে ঠুকতেই দেখে নয়না মুখ কালো করে বসে আছে।
___কি অবস্থা মুখ কালো করে বসে আছো?
নয়না কোনো উত্তর দেয় না৷
___কি হলো কোনো উত্তর দিচ্ছ না যে? কানে কি মেশিন নেই?
___আমি না হয় কানা। কিন্তু যারা অন্ধ না হয়েও অন্ধের মত বিহেভ করে তাদের কি বলা যায়?
___আমি কি কানা বলেছি তোমাকে?
___কানা বলতে হয়না কথার ধরনেই বোঝা যায়। আর কানারাই কানে মেশিন দিয়ে চলে।
বলেই নয়না রুম থেকে বেরিয়ে যায়।
নয়না ডাইনিং রুমে যেতেই নয়নার চোখে ভেলপুরির প্যাকেট পড়ে। নয়না ভেলপুরি দেখে নাচতে নাচতে রেহনা বেগমের কাছে গিয়ে বলে দেখো মা আমার গুরুত্ব আছে।
___হ্যাঁ,যা পেট ভরে খা তোর জন্যই আনছে।
নয়না ডাইনিং রুমে গিয়ে ভেলপুরি বের করে মসলা মিক্স করে পরক্ষণেই চিন্তা করে নাহ–
এই ভেলপুরি আমি খাবো না৷ আমার মেসেজ সিন করেনি খাবো না আমি।
এদিকে আনাম নয়নার কান্ড দেখে হাসতে ছিলো। কিন্তু নয়না না খেয়ে উঠে আসতে দেখে আনাম সামনে গিয়ে বলে কি হলো নিয়ে আবার রাখলে কেনো?
___খাবো না মানুষের আনা খাবার।
___কেনো খাবারে কি বিষ আছে?
___মানুষের মনে বিষ। আর বিষে ভরা মানুষের আনা খাবার আমি খাই না৷
___না খেলে না খাও আমি এনেছি আমি খাবো।
নয়না মনে মনে বলে যতই খেতে ইচ্ছে করুক খাবো না। আমিও অ্যাটিটিউড গার্ল আমিও ইগোর কাছে হারব না। জিহবা কে কন্ট্রোল করতে হবে।
আনাম ভেলপুরি গুলো প্রস্তুত করে নয়নার ঘরে গিয়ে বলে খাবারের উপর রাগ দেখাতে নেই। খেয়ে নাও নাহলে তোমার নজরে আমাদের পেট খারাপ হবে।
___এগুলো এখানে আনছেন কেনো?
___তোমাকে দেখিয়ে দেখিয়ে খাবো।
নয়না রুম থেকে চলে যেতে নিলে আনাম বলে সরি মেসেজের উত্তর না দেওয়ার জন্য তোমার জন্যেই এনেছি খেয়ে নাও।
নয়না আর কোনো কথা না বলে ভেলপুরি খাওয়া শুরু করে।
(গাইচ ভেলপুরির গপ্প করতে গিয়ে আমারো জিভে পানি এসে গেছে আমি এখন কিতা করতাম)
আনাম নয়নার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। নয়না খায় আর বলতে থাকে জানেন কতদিন হয়েছে এই মজার খাবার গুলো খাই না৷ ভেবেছিলাম আর কখনো খেতেই পারব না৷ জিবনটা মনে হয় থেমে গেছে।
___পিছনের কথা বার বার টেনে এনো না। ভুলে যাওয়ার চেষ্টা করো। আমি অনেক ভেবেছি যা হয়েছে ভালোই হয়েছে।
___ভুলে গেলেই কি আর কান ফেরত পাবো। আমি তো কানা কানাই থেকে যাবো। আপনাকে সবাই বলবে আপনার বউ কানা।
__বলুক না মুখ ভেংগে দিবো। তোমাকে ভালো ট্রিটমেন্ট করাব বিদেশে নিয়ে ঠিক হয়ে যাবে।
___সেটা অনেক টাকার ব্যাপার।
___সে যাই হোক আমি আস্তে আস্তে ম্যানেজ করব।
___আর যদি না হয়?
___তাহলে এমনি থাকবে সমস্যা নেই।
___তা সমস্যা হবে কেনো কানা বউ থাকলে তো অনেক সুবিধা বউ রেখে রাতে মোবাইলে ফুসুরফাসুর করা যাবে।
___বাজে কথা বলো না৷
__বাজে কথা? আমি কি কিছু জানি না? ঐ দিন রাত একটার সময় রাতে কার সাথে ফিসফিস করে ডাইনিং বসে কথা বলেছেন?
__ওহহ ঐদিন তোমার সতীসাধ্বী পতিব্রতা বোন নাজিফা ফোন দিয়েছিল_____________________
চলবে__________