#কলংকের_বিয়ে
#ইসরাত_জাহান_এশা
#পার্ট_০৯
১৬,
নিহান মনে মনে বলে ওর কাছে দশলাখ টাকা কিভাবে? বিষয়টা তো আমার খতিয়ে দেখতে হচ্ছে।
নয়না চিৎকার করে সবাইকে ওখান থেকে বের করে দেয়। রফিক তালুকদার বলে তুমি এতোদিন তো এই টাকার কথা আমাদের জানাওনি?
___আসলে বাবা এই টাকা আমার মায়ের। সেটা বাবা আমার নামে করে দিয়েছিলো। আমার কাছে টাকা ছিল কিন্তু আমি টাকা গুলোর কথা ভাবিনি আর গুরুত্ব ছিলনা জীবনে মা নাই এতবড় একটা অঘটন ঘটেছে টাকাটা মনে হয়ে ছিল মূল্যহীন৷ কিন্তু আজ মনে হচ্ছে টাকাটা আমার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
___আমার নিজের কাছে খারাপ লাগছে তোমার থেকে টাকা নিতে তবে যাই খরচ হোক জমি বিক্রি করে আমি তোমার সব টাকা পরিশোধ করে দিব। তোমার টাকা তোমারই থাকবে। আল্লাহ যা করেন ভালোর জন্যেই করেন।
নয়না বলে চলুন বাবা আমরা টাকা তুলে আনি। কথা বলে সয়ম নষ্ট হবে। নয়না রফিক তালুকদারকে নিয়ে ব্যাংকে চলে যায়।
এদিকে আনামারে ফুফুরা খুব অপমানিত হয়ে ফিরে আসে। মনে মনে নয়নাকে অনেক গালা,গালি করতে থাকে। নিহান ভাবে আনামের যে অবস্থা তাতে ও মারা যাবে আর যদি বেঁচেও থাকে তাহলে ও কোমায় যাবে। এখন চিন্তা করার মত কিছু নেই তবে নয়না এতো টাকা কোথায় পেলো?
নিহান নাফিজাকে ফোন দিয়ে বলে নয়নাকে না বাড়ি থেকে এক কাপড়ে বের করে দিয়েছ? তাহলে ওহ দশ লাখ টাকা কোথায় পেলো?
___ওর টাকার কথা তুমি কিভাবে জানলে?
নিহান নাফিজাকে ঘটে যাওয়া সব ঘটনা বলে। নাফিজা শুনে বলে তুমি কি আনাম কে মারা চেষ্টা করেছো?
___এতো কথা তো তোর জানার দরকার নেই তোকে যা জিজ্ঞেস করছি ঐটা বল।
__তুই তুকারি করছ কেনো?বলছি তো এটা ওর মায়ের টাকা ওর মা মামা বাড়ির থেকে পেয়েছে সেটা বাবার কাছে ছিল ওর আঠারো বছর হওয়ার পর বাবা আমাদের না জানিয়ে ওকে দিয়ে দিছে।
___তাহলে তোকে বিয়ে করে আমার লাভটা কি হলো। শিট! আমার চালটা ভুল হয়ে গেলো। এতো কিছু না করে যদি নয়নাকে প্লান করে বিয়ে করতাম তাহলে এই দশলাখ টাকা আমার হতো। আর ঐ আনাম এবারো জিতে গেলো না চাইতেই টাকা পয়সা সব পেলো।
___কি বলছ এসব?
___ঠিকই বলছি। আমি তো ভেবেছিলাম মেয়েটার মা নেই ওর থেকে কিছু পাবো না। আর মেয়েটা আমাকে একদিন অপমান করেছিল তার প্রতিশোধ নিতেই আমি আনামের সাথে ওর ঝামেলা তৈরি করেছি। এখন দিন শেষে আনামই তো লাভবান হলো।
___তোমাকে ও কেনো অপমান করেছিল?
__এতো জানার দরকার নেই ভাবতে দে আমাকে। এখন মনে হচ্ছে এতকিছুর পর আমিই ঠকে যাচ্ছি। আর যাই হোক টাকাটা তো ম্যানেজ হয়েছে?
___হ্যাঁ অনেক কষ্টে মা,,,
___আমার বিকাশে পাঠা তোদের কষ্টের কথা আমাকে শুনানো লাগবে না। রাখি।
নাফিজা শুধু ভাবে কি থেকে কি হলো কি থেকে কি হলো এমনটা কেনো হলো? আমার জীবনটা আমি এইভাবে শেষ করে দিয়েছি জেনেশুনে এক খুনির সাথে বিয়ে হতে যাচ্ছে৷ ও চাইলে তো আমাকেও খুন করতে পারবে।
নয়নারা ব্যাংক থেকে টাকা তুলে আনে। এদিকে রায়হান বাসা থেকে খাবার তৈরি করে নিয়ে আসে। সাথে আনামের অপারেশনের কাগজপত্র সব কিছু ঠিক করছে।
নয়না রায়হান কে দেখে সব ঘটনা খুলে বলে। রায়হান বলে এতো সহজে নিহান আনাম কে ধরে ফেলল এবং মার্ডারের মত একটা পদক্ষেপে চলে গেছে ও তো সব করতে পারবে।
রায়হান বলে ভাবি আমার যতটা মনে হয় ও শেয়ারইট দিয়ে ডকুমেন্টস গুলো আনছে যার কারনে ঐখানে আনামের নাম পেয়েছে আর সিওর হয়ে নিহানি আনামকে মারতে চেয়েছে।
___হতে পারে। আমাদের এখানে এখন সব সময় সতর্ক থাকতে হবে। হয়ত নিহান এখানে লোক রেখে গেছে আনামের মৃত্যুর খবর শোনার জন্য।
ডাক্তার এসে জানায় আনামের সাথে যদি কেউ দেখা করতে চায় তাহলে দুজন দুজন করে দ্রুত যেন সবাই দেখা করে আসে আধাঘন্টার মধ্যে আমরা অপারেশন শুরু করব।
প্রথমে রফিক তালুকদার আর রেহানা বেগম ভিতরে যায়। রেহানা বেগম আনামের এই অবস্থা দেখে কান্না শুরু করে রফিক তালুকদার কোনো মতে রেহানা বেগমকে বাইরে নিয়ে আসেন।
রফিক তালুকদার বাইরে আসলেই নয়না রায়হানকে নিয়ে ভিতরে যায়।
নয়না আনামের দিকে তাকিয়ে আছে গাল বেয়ে পানি পড়ছে। নয়না নিজেকে সামলে নিয়ে বলে জানেন জন্মের পর আমার মা মারা গেছে,আমি কখনো মাকে দেখিনি। আমার বাবা আমাকে মানুষ করেছেন সেই বাবাও আমার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। আপনাদের পরিবারে এসে নতুন করে বাবা মা পেয়েছি। আর আপনার প্রতি যখন থেকে মায়া জন্মেছে তখন থেকে আপনাকে কিছুক্ষন না দেখলেই আমার কষ্ট হতো। এই যে আপনার এক্সিডেন্টের পর থেকে আমি ভালোবাসা কি? মায়া কি? সব বুঝতে পেরেছি। আপনি আবার সুস্থ হয়ে আমার কাছে ফিরে আসুন। আমাকে একা ফেলে কোথাও যাবেন না৷ আপনাকে নিয়ে আমি দুনিয়া দেখতে চাই৷ খুব ভালোবাসি আপনাকে প্লিজ আপনি সুস্থ হয়ে আমার কাছে আসুন আমি আপনাকে আগলে রাখব। আমি ভালোবাসি আপনাকে অনেক ভালোবাসি৷
রায়হান দেখতে পায় আনাম ডান হাত উঠানোর চেষ্টা করছে। রায়হান নয়নাকে বলে ভাবী আনাম মনে হয় আপনার কথা শুনছে ওর হাতের দিকে তাকান। নয়না দেখে আনাম হাতটা তোলার জন্য চেষ্টা করছে। নয়না আনামের হাত আলতো করে গালের সাথে লাগিয়ে বলে অপেক্ষায় থাকব প্রানপ্রিয় স্বামী।
রায়হান নয়নার কান্না দেখে মনে মনে বলে এই ভালোবাসা দীর্ঘ হোক। আল্লাহ আমার বন্ধুকে সুস্থ করে সত্যিকারের ভালোবাসার কাছে ফিরিয়ে দিও।
নয়না লক্ষ করে আনামের চোখ দিয়েও পানি পড়ছে।
___কাঁদছেন কেনো? কিছু হবে না আপনার। আমি আছি না আপনার সেবা যত্ন করে সুস্থ করে তুলব। আপনার অপারেশন হয়ে গেলেই আপনি আস্তে আস্তে সুস্থ হয়ে যাবেন।
আনাম অনেক চেষ্টা করে নয়নার হাতটা শক্ত করে ধরতে কিন্তু পারে না।
কিছুক্ষন পর ডাক্তার এসে নয়না আর রায়হান কে বের করে দেওয়া হয়। আনামকে রেডি করে ওটিতে নিয়ে যায়।
বাইরে বসে নয়না রায়হানকে বলছে ভাইয়া এখন উনি যদি সুস্থ হয় আমাদের এটা লুকোতে হবে৷ নাহলে ওনার জীবন রিক্সে থাকবে।
___হুমম আমিও সেটা ভাবছি। কিন্তু কি করব?
____শুনেন আমরা সবাইকে জানাব উনি কোমায় চলে গেছেন। তাহলে আর রিক্স থাকবে না৷
___ ঠিক বলেছেন ভাবী।
রায়হান আর নয়নার প্লান অনুযায়ী অপারেশন সাকসেসফুল হলে ওরা আত্মীয় স্বজনের কাছে আনাম কোমায় চলে গেছে এটা ছরিয়ে দেয়। নিহান এটা শুনে আয়নার কাছে গিয়ে পিশাচের মত হাসতে থাকে আর বলতে থাকে। আনাম ছোট বেলা থেকে তোর জন্য পদে পদে আমি অপমানিত হয়েছি আমার থেকে সব কিছুতে তোর গুরুত্ব থাকত বেশি। এখন তোর গুরুত্ব নাই অচল প্রডাক্ট হয়ে গেছিস। তোর বউ নয়না আমাকে অপমান করার ফল পেয়েছে প্যারালাইজড স্বামীর সেবা করতে করতে জীবন শেষ।
অপারেশনের পাঁচদিন পর আনামেকে বাসায় নেওয়া হয়।আনাম এখন একটু একটু কথা বলতে পারে। সন্ধ্যায় নয়না আনামের জন্য স্যুপ নিয়ে আশে।
___তুমি আমার জন্য খুব কষ্ট করছ। এ কয়দিনে তোমার চেহারা কেমন হয়েছে।
___কিসের কষ্ট? আপনি যে আবারো আমার কাছে ফিরে এসেছেন এটাই তো অনেক।
___তুমি আমাকে ভালোবাসো?
___হুমম খুব ভালোবাসি। আপনার জন্য আমার এতো কষ্ট হয় যা কখনো কারো জন্য হয়নি।
___যে অবস্থা হয়েছিল হয়ত তোমার ভালোবাসা আমাকে বাঁচিয়েছে।হয়ত আল্লাহ সত্যি আমাকে ভালোবাসার সুখ দিবেন।
__হয়েছে অনেক কথা বলেছেন এখন চুপ করেন। আপনার মুখে ক্ষত ব্যাথা লাগবে।
___তোমার সাথে কথা বলার জন্য এইটুকু ব্যাথা সহ্য করে নিতে আমার কোনো আপত্তি নেই। তোমাকে একটা কথা বলব?
__বলেন।
___আমি তো অসুস্থ এখন আর মাঝে কোলবালিশ দিও না। আমার বা হাতে ব্যাথা নেই তুমি বা সাইডে আমার বুকের পাশে শুয়ে থাকবে৷ আমি অনেক শান্তি অনুভব করব এতে তারাতাড়ি সুস্থ হয়ে যাব।
___না না আপনার শরীরে জায়গায় জায়গায় ক্ষত তারপর বেঘোরে কোথায় না কোথায় ব্যাথা দিয়ে ফেলব।
___কিছু হবে না। আর যদি ব্যাথা পাই তাহলে পাইলাম কিন্তু তাও তুমি আমি যা বলছি তাই শুনবে প্লিজ।
___ঠিক আছে। তাও যদি ব্যাথা পান আমি একটু সাইড হয়ে শুই আমারো তো নড়াচড়া করতে হবে।
___আচ্ছা ঠিক আছে তোমার সুবিধা মত থাকো কিন্তু আমার পাশে থাকবে।
দেখতে দেখতে আরো দশদিন চলে যায় আনাম মোটামুটি সুস্থ কিন্তু এখনো স্বাভাবিক না মোটামুটি নড়াচড়া করে ওয়াসরুম যেতে পারে। নিহানের বিয়ের বাকি তিন চারদিন। রায়হান আনামকে ফোন দিয়ে বলে দোস্ত তোকে যারা মেরে ফেলতে চেয়েছিলো তাদের আজ পুলিশ ধরেছে আর আমাদের সন্দেহ ঠিক নিহান করিয়েছে।
___ওর এতোটা অধপতন হয়েছে মানুষ মারাও এখন ডালভাত।
___এখানেই শেষ না ও অনেক বড় ক্রিমিনাল ওদের ব্যবসার পিছনে মাদক ব্যবসা চলে।
___ও তাহলে এই জন্যেই রাতারাতি ওদের টাকা পয়সা হয়েছে।
নাহলে ওরা যা করে তাতে এতো তো হতে পারেনা।
ভিডিও ফুটেজ গুলো সব রেডি করেছিস?
__হ্যাঁ করেছি। কিন্তু তোর যা অবস্থা তাতে তুই যেতে পারবি?
___কষ্ট হলেও যাব নিজেদের সন্মান ফিরিয়ে আনার এটাই সুযোগ।
___ঠিক আছে৷ রেস্টকর তুই।
নিহানের বিয়ের দিন চলে আসে_________________
চলবে______