#কলংকের_বিয়ে
#ইসরাত_জাহান_এশা
#শেষ_পার্ট১১
১৯,
সকল পর্দা ফাঁস হওয়ার পরে নিহানকে নিয়ে চলে যেতে শুরু করলে রাজ্জাক ভূঁইয়া বলেন স্যার আপনারা আরো একজন খুনের আশামীকে রেখে যাচ্ছেন এই মহিলা আমার প্রথম স্ত্রী কে খুন করেছে আপনারা এই মহিলাকেও নিয়ে যান।
আয়েশা বেগম আবারোও রাজ্জাক ভূঁইয়ার পায়ে পড়ে যায়। রাজ্জাক ভূঁইয়া বলে তুমি আমার থেকে দূরে থাকো৷ আমি তোমার মুখ আর দেখতে চাই না। আমি খুব দ্রুত তোমাকে ডিভোর্স দিব।
আয়েশা বেগম কাঁদতে কাঁদতে নাফিজের হাত ধরে বলে বাবা আমারে বাঁচা।
দয়া কর আমি তোর মা এই বয়সে জেলে যাবো তোর বাবারে একটু বুঝা।
___আমি নিজেই পাপে জর্জরিত জানিনা আজকে আমার ভুলের ক্ষমা পাবো কিনা। আর মা সত্যি তুমি মানুষ খুন করতে পারো আমি ভাবতেও পারিনি।
___এগুলো কাদের জন্য করেছি? তোদের ভবিষ্যতের জন্যেই তো?
রাজ্জাক ভূঁইয়া বলে তো কি পেলে তুমি? শান্তি পেয়েছো? আমি কি কখনো তোমাদের দু’জন কে আলাদা করে দেখেছি?
তুমি মতির নামে প্রায় আমার কাছে নালিশ করতে কিন্তু আমি জানতাম মতি এমন না।কিন্তু মতিকে কখনো তোমার নামে কিছু বলতে শুনিনি। আরো উল্টো আমি যদি তোমার বিষয় কিছু বলতাম ও বলত থাক ছোট মানুষ নতুন মা হয়েছে ওর যত্ন নেন। ও আমার বিয়ে করায় অনেক কষ্ট পেয়েছে তবুও বুকে পাথর রেখে ও সব সময় চেষ্টা করেছে সংসারে শান্তি বজায় রাখার। কি পেলে আমার মেয়েটাকে এতিম করে?
তোমার মেয়ে কি পেলো আমার মেয়ের এতো বড় ক্ষতি করে? সেই তো নিজেই নিজের ক্ষতি করে ফেলেছে।
শোনো তোমাদের মা মেয়ের কথা আমি মোটেও শুনতে চাই না। আমি চাই তুমি তোমার প্রাপ্য শাস্তি পাও। আর নাফিজাও শশুর বাড়িতে চলে যাবে যেহেতু বিয়ে হয়ে গেছে ও নিজের সংগ্রাম নিজেই করবে।
পুলিশ নিহান আর আয়েশা বেগম কে ধরে নিয়ে যায়। নাফিজা কাঁদতে কাঁদতে নয়নার কাছে গিয়ে বলে বোন দয়া করে আমাকে ক্ষমা করে একটা সূযোগ দে আমি নিজেকে ভালো মানুষ হিসাবে প্রমান করেই ছাড়ব।
___মাফ করবেন আমি কানে শুনিনি আপনি কি বলেছেন। আপনাদের মানুষের জীবন মৃত্যু খেলায় আমি বধির হয়ে যাওয়ার উপক্রম কানের মেশিন দিয়ে শুনতে হচ্ছে।
নিহানের বাড়ি থেকে আশা সকল আত্মীয় স্বজন নাফিজাকে নিয়ে যায় শুরু করে সাথে মিতালী ও নাফিজা মনে মনে বলে কোথায় যাচ্ছি আমি?
এখানে কি কোনো ভবিষ্যতে আছে? আবার সাথে সতীন নিহানের যে অপরাধ তাতে নিহান কখনোই আর স্বাভাবিক জীবনে ফিরবে না৷
নাফিজা আবারো দৌড়ে এসে আনামের পায়ে পরে যায়। আনাম সবার সামনে চিৎকার দিয়ে বলে
“দূরেহে দূরেহ বাপু এ কাজ ভুলেও করো না। আমার সামনেও তুমি পড়বে না। আমি তোমাকে অনেক আগেই ক্ষমা করে দিয়েছি তোমার কারনে আমি আমার মনের মত বউ পেয়েছি। কিন্তু মাফ চাই আমার সাথে কখনো কথা বলার চেষ্টা করবে না আবার কখন আমার বউ আমাকে ভুল বুঝে ফেলে। আমি আমার বউয়ের সাথে কোনো অশান্তি চাই না। যার ক্ষতি করেছ তার কাছে যাও।
নাফিজা আনামের কথা শুনে কাঁদতে কাঁদতে নয়নার পায়ের পরে যায়। বোন তোর পায়ে ধরি আমি অনেক ভুল করেছি শাস্তিও পেয়েছি দরকার হয় মায়ের মত আমাকেও জেলে পাঠা কিন্তু তাও এমনটা করিস না।আমি ঐ বাড়ি যাব না। প্লিজ বোন তোরা আমায় ক্ষমা করে দে। তুই ক্ষমা না করলে তোর পা আমি ছাড়ব না৷
রায়হান বলে প্লিজ এখন স্বাভাবিক পরিস্থিতি আসুক আমার খুদা লাগছে।
নয়না নাফিজাকে পায়ের থেকে উঠিয়ে বলে বাসায় যা।আর আমার রুমটা দেখলাম বেশ ময়লা হয়ে আছে এখানে খাওয়া ঝামেলা শেষ হতে হতে যেন রুম ঝকঝকে পাই।
___এই অবস্থায়?
___না পারলে শশুর বাড়িতে যাও রাস্তা খোলা।
___পারব।
রাজ্জাক ভূঁইয়া নাফিজকে বলে এদিকে এসো।নাফিজ মাথা নিচু করে রাজ্জাক ভূঁইয়ার দিকে তাকায়।
___তোমার হিসেব আমি পরে করব। এখন যেখান থেকে পারো ফুলের ব্যবস্থা করো। একটা রুম সুন্দর করে সাজাও। আজকে আমার ছোট মেয়ে আর মেয়ে জামাইকে আমি ঘরে তুলব।
নাফিজ মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানায়। এবং ওখান থেকে চলে যায়।
এদিকে রাজ্জাক ভূঁইয়া নয়নাকে ধরে বলে জীবনে মৃত্যুর আগে এমন দৃশ্য চোখে দেখব আমি কল্পনাও করতে পারিনি। তুই আমাকে মাফ করে দিস তোর মায়ের আমি খেয়াল রাখতে পারিনি। সন্তানের আশায় তোর দাদা দাদির চাপে পড়ে দ্বিতীয় বিয়ে করা আমার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল ছিল।আর সেই স্ত্রী সন্তানদের মানুষের জীবন, মৃত্যু, মান, সন্মান নিয়ে তামাশা করা তো দেখলাম ওরা আমাকে শেষ করে দিয়েছে দ্বিতীয় বিয়ে আমার জীবনের সকল সুখ কেরে নিয়েছে। রাজ্জাক ভূঁইয়া নয়নাকে ধরে কাঁদতে থাকে।
___বাবা আর কেঁদো না। অতীতের কথা যত তাড়াতাড়ি ভুলতে পারবে তত তাড়াতাড়ি নিজেকে স্বাভাবিক করতে পারবে। এটাও হয়ত আল্লাহর পক্ষ থেকে জীবনের একটা পরিক্ষা। যা হয় ভালোই হয়। এখন তো আস্তে আস্তে সব ঠিক হয়ে গেছে।
রায়হান সবাইকে নিয়ে খেতে বসে। নয়নার বাবা আনামকে বলে বাবা আমি ভুল বুঝে তোমাকে অনেক কথা বলেছি আমাকে মাফ করে দিও। তুমি যে আমার মেয়েটাকে ভালো রেখছো এর জন্য তোমার প্রতি কৃতজ্ঞ।
__না না বাবা এভাবে বলবেন না। সবাই পরিস্থিতির স্বীকার তবে আমি অনেক ভাগ্যবান আপনার মেয়ের মত মেয়ে পেয়েছি কত বড় এক্সিডেন্ট হয়েছিল আপনার মেয়ে রাত দিন এক করে আমার সেবা যত্ন করেছে। আপনার মেয়েই আমাকে যত্নে রেখেছে।
__সুখি হও তোমরা এই দোয়াই রাখি।
খাওয়া শেষে রাজ্জাক ভূঁইয়া ঘরে গিয়ে দেখেন নাফিজা নয়নার রুম পরিস্কার করছে আর কাঁদছে৷
___যা করেছো তাতে কাঁদার জন্য আরো সময় পড়ে আছে এতো তারাতারি চোখের পানি শুকাবে না। ভাবতেই অবাক লাগে তোমরা দুইভাই বোন আমার রক্তের কিছুই পেলে না।দুজনেই মায়ের মত হয়েছো।
যাই হোক শোনো যেহুতু বাসায় জোর করে থেকেই গেলে তাই রুম পরিস্কার হলে আত্মীয় স্বজন সাথে আমার ছোট মেয়ে জামাই সবাইকে আপ্যায়ন করবে।
___ আমি তো এগুলো কিছু জানি না।
___জেনে নাও মুরুব্বিদের থেকে। সংসারে যদি থাকতে চাও আজকেই দায়িত্ব নিয়ে বুঝাও যে তুমি ভালো হওয়ার চেষ্টা করছ। বড় বোনের দায়িত্ব নেওয়ার চেষ্টা করছ।
নাফিজা কিছুই বলে না শুধু কাঁদতে থাকে।
নাফিজও ফুল এনে বন্ধুবান্ধব নিয়ে বাসরঘর সাজাতে শুরু করে। নাফিজ মনে মনে বলে জীবনে অনেক খারাপ কাজ করে ফেলেছি যার জন্য জীবন এখানে দাড় করিয়েছে। এখন থেকে বাবার বাধ্যগত সন্তান হওয়ার চেষ্টা করব। জীবনে হিংসা বিদ্বেষ করে কখনোই কিছু পাওয়া যায় না৷আজ আমি নিজেকে দিয়ে স্বচক্ষে প্রমান পেলাম৷
রাজ্জাক ভূঁইয়া নয়নাকে পেয়ে যেনো আকাশের এক টুকরো চাঁদ হাতে পেয়েছেন উনি ওনার বয়সী লোকদের সাথে বসে আড্ডা দিচ্ছিলেন আর বলছিলেন অনেক দিন পর মনে হচ্ছে বুকের মধ্যে থাকা ভাড়ী বোঝা নেমে গেছে আজকে অতীত বর্তমান সব কিছু চোখের সামনে কোনো ধোঁয়াশা নেই। আমার বুকের মধ্যে কি এক প্রশান্তি কাউকে বলে বুঝানো যাবে না।
সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত আকাশে তারায় ভরপূর পূর্নিমার চাঁদ জ্বলজ্বল করছে। নয়না নিজের রুমে জানালা থেকে বাইরে দেখছে আর ভাবছে। জীবনটা বড় অদ্ভুত কতটা অসম্মানের সাথে এই বাড়ি থেকে বিদায় নিতে হয়েছিল ঠিক আবারো সন্মানের সাথে এই বাড়িতে ফিরেছি ঘুচে গেলো কলংক কিন্তু সেদিনের ঘটনা গুলো মনে থাকবে মৃত্যু পর্যন্ত। হয়ত কিছু মানুষের মুখোশ নতুন মানুষের পরিচিতি। ঘুরিয়ে ফিরিয়ে একজনের ভাগ্য থেকে আরেক জনের ভাগ্যে ঘুরে আশা। না হলে যে আমার বড় বোনের স্বামী হয়ে থাকার কথা ছিল সে কেনো আবার আমার স্বামী হতে যাবে।বুঝিনা জীবনটা এতো পেঁচানো কেনো? অন্যদের জীবন কত সহজ কত সুন্দর কিন্তু আমার জীবনের বাস্তবতা গুলো বড্ড কঠিন।
হলকা কাশি দিয়ে আনাম রুমে প্রবেশের জানান দেয়। নয়না একটু চমকে উঠে।
___কি মহারানী ভয় পেয়ে গেলেন মনে হচ্ছে? কিছু ভাবাচ্ছিলেন নাকি?
নয়নার হার্ট জোরে জোরে বিট করছে কেনো যেনো মুখ থেকে কথা বের হতে চাইছে না।আনাম বলে রুমটা অন্ধকার করে রাখছ কেনো? লাইট দাও বউটাকে একটু দেখি।
___সারাদিন দেখলেন তাতে হয়নি?
___সারাদিন সবার সামনে দেখা আর এখন একা রুমে তোমাকে নিয়ে দেখা অনেক তো পার্থক্য আছে।
নয়না লাইট জ্বালিয়ে দিলে আনাম নয়নাকে টেনে বিছানায় নিয়ে আসে।
___তুমি দেখতে খুব সুন্দর আমি এই রূপে তোমাকে কখনো দেখিনি। তুমি সব সময় আমার সামনে সেজেগুজে থাকবে৷ আমি তোমাকে খুব যত্নে রাখব তোমার যখন যা দরকার হবে আমাকে বলবে আমার সাধ্যমত তোমাকে এনে দিব। তুমি আমার পুতুল বউ।
__থাক হইছে আর পাম দিতে হবে না৷
___আমি তোমাকে পাম দেই?
এটা বলেই আনাম নয়নাকে জড়িয়ে ধরে নয়নার ঠোট দুটো নিজের আয়ত্বে নিয়ে যায়। হটাৎ করেই রুমের লাইট বন্ধ হয়ে যায়________
নাফিজা রাতে নিজের রুমে বসে চিৎকার দিয়ে কান্না করতে থাকে নাফিজ নাফিজার কান্না শুনে নাফিজার পাশে এসে বলে
___বোন কাঁদিস না।সবই আমাদের পাপের ফল। অন্যকে বিপদে ফেলতে গিয়ে আমারাই বিপদে পড়ে গেছি দেখ ঐদিন বিনা দোষে দু’জন মানুষকে আমরা কতটাই বিপদের মুখে ফেলে দিয়েছি।
নাফিজা নাফিজকে জড়িয়ে ধরে বলে ঠিক বলেছিস ভাই ঐদিন ওরাও না জানা দোষে দোষী হয়ে সবার সামনে অপমানিত হয়েছে৷ আজ বুঝতে পারছি জীবনে কত বড় ভুল আমি করেছি। আজ বুঝতে পারছি অপমান, অসম্মান মানুষকে কতটা যন্ত্রণা দেয়।
__আমি আরো একটা ভুল করেছি।তুই আমার সাথে একটু বাবার কাছে যাবি?
__কি ভুল?
__চল দেখতে পাবি।
নাফিজ আর নাফিজা রাজ্জাক ভূঁইয়ার কাছে যায়।
ওদের দেখে রাজ্জাক ভূঁইয়া বলে তোমরা এখানে কেনো?
নাফিজ দৌড়ে রাজ্জাক ভূঁইয়ার পায়ে পড়ে যায়। কাঁদতে কাঁদতে বলে বাবা আমাকে ক্ষমা করে দিয়েন আমি আপনাকে মিথ্যা বলেছি আমি চৌদ্দলাখ টাকার জমি বিক্রি করেছি। কালকেই ব্যাংকে গিয়ে আপনার একাউন্টে চার লাখ টাকা পাঠিয়ে দিব। আমি আমার ভুল বুঝতে পেরেছি অনেক বেয়াদবি করেছি আপনার সাথে। আপনি আমাদের দুই ভাইবোনকে ক্ষমা করে দিন। আপনি আমাদের পিতা আপনি যদি ক্ষমা না করেন তাহলে কার কাছে যাবো আমরা।
ছেলে মেয়ের কান্না দেখে রাজ্জাক ভূঁইয়ারও কষ্ট হয়। রাজ্জাক ভূঁইয়া বলেন ঠিক আছে তোমরা ভুল বুঝতে পেরে যদি নিজেকে সুধরে নাও তাতেই আমি খুশি।নয়নার মা নেই ও এতিম ওরে শত্র না ভেবে বোনের মত আপন করে নাও তোমারা সবাই মিলে মিশে থাকলেই বুঝবে আমি ক্ষমা করে দিয়েছি। আর আজকের ভুল যদি কখনো রিপিট হয় মনে রেখে আমি বেচেঁ না থাকলেও তোমাদের অবস্থা আরো করুন হবে।
___ইনশাআল্লাহ আমরা পারবো তোমার ভালো ছেলে মেয়ে হয়ে তোমাকে দেখাবো।
আনাম দুইদিন নয়নাদের বাড়িতে থেকে নয়নাকে ওর বাবার বাসায় রেখে রায়হান কে নিয়ে ঢাকায় চলে যায়।নয়নাও অনেকদিন পর নিজের বাড়িতে বাবার সাথে থাকে।
২০,
আনাম তিন মাস পরে জব ছেড়ে দিয়ে একবারে বাড়িতে চলে আসে। নয়নাকে ফোন দিয়ে বলে বিকালে তোমাকে নিতে আসব।
নয়না যাওয়ার কথা শুনে রাজ্জাক ভূঁইয়ার ঘরে যায়।
__বাবা তোমার সাথে আমার কিছু কথা ছিল।
___বল মা কি বলবি?
__আজকে বিকালে তোমার জামাই আমাকে নিতে আসবে।
___চলে যাবি তুই?
__আসবো তো মাঝে মাঝে মন খারাপ করো না।তোমার কাছে আমার একটা অনুরোধ আছে।
__ এভাবে বলিস না।তুই নির্ভয়ে বলে ফেল।
___বাবা তুমি সব ভুলে মা কে জেল থেকে নিয়ে আসো। ওনার শাস্তি না হয় আল্লাহর কাছে তোলা থাকুক।
__তুই এই কথা বলছিস?
___হ্যাঁ বাবা বলছি তোমার এখন বয়স হয়েছে তোমার দেখাশোনার লোক প্রয়োজন। তোমার এমন কিছু কাজ যা আমরা ছেলে মেয়েরা পারব না। তুমিও আমাদের বলতে পারবে না।তোমার স্ত্রীর প্রয়োজন। তুমি ডিভোর্সের চিন্তা বাদ দিয়ে আল্লাহর দিকে তাকিয়ে ওনাকে মাফ করে দাও। উনিও এখন বার্ধক্য বয়সে চলে গেছেন উনিও আর খারাপ কাজে জড়াবেন না। আমি চলে গেলে নাফিজ ভাইয়াকে নিয়ে ওনাকে ছাড়িয়ে এনো।
__আমার একা থাকতে সমস্যা নেই তবুও খুনির সাথে সম্ভব না৷
__প্লিজ বাবা অতীত ভুলে যাও নতুন করে আবার সবটা গুছিয়ে নেও মানুষ মাত্রই ভুল।
পাশ থেকে নাফিজা এসব কথা শুনে দৌড়ে এসে নয়নাকে জড়িয়ে ধরে বলে আমাকে ক্ষমা করিস তোকে বড়আম্মাকে নিয়ে অনেক বাজে কথা শুনিয়েছি। তুই আমার মাকে ক্ষমা করবি আবারো এই বাড়িতে আনার জন্য বাবাকে বলবি কখনো ভাবিনি।
__আপু আর কান্নাকাটি করিস না। আমাদের কালোছায়া কেটে গেছে নিজেরা এখন মিলেমিশে ভালো থাকব।
বিকালে আনাম এসে নয়নাকে নিয়ে যায় বাড়িতে। নয়না শশুর বাড়ি তে গেলে নয়নার শাশুড়ী সকল রিচুয়াল মনে নয়নাকে ঘরে তোলেন। রফিক তালুকদার নয়নার হাতে একটা খাম দেয়।
__এতে কি বাবা?
__তোমার থেকে নেওয়া পাঁচ লাখ টাকা। তুমি বিপদে আমার ছেলেকে রক্ষা কবচ হয়ে বাচিয়েছো।
__কিন্তু আপনি টাকা কোথায় পেলেন?
__ষোল লাখ টাকার জমি বিক্রি করেছি। পাঁচ লাখ তোমাকে দিলাম দশলাখ আনাম কে দিলাম ব্যবসার জন্য। দোয়া করি তোমরা সুখি হও।
__আমিও ব্যবসা করব।
__অস্থির হয়েও না আমি আগে শুরু করি যদি লাভবান হই তোমাকে পার্টনার হিসাবে নিবো। এখন সংসারের হাল ধরো অনেক তো ঘুরাফেরা হলো।
রেহানা বেগম বলেন ঠিক এখন সংসারের হাল ধরো আমি চাবি তোমাকে দিয়ে দিলাম। আর হ্যাঁ আগে বাসায় নতুন মেহমান আনো তারপর তোমরা দুই স্বামী স্ত্রী গোল্লায় চলে যাও আমাদের কোনো আপত্তি নেই। আমাদের এই বয়সে ভালো থাকার জন্য সাথী দরকার একজন।
নয়না লজ্জায় মাথা নিচু করে আছে। রেহনা বেগম বলেন রুমে গিয়ে রেস্ট করো অনেক দূর থেকে এসেছো।
নয়না রুমে গিয়ে ড্রেস চেঞ্জ করে ড্রেস গুলো ঘুছিয়ে রাখতে ছিলো আনাম পিছন থেকে নয়নাকে জড়িয়ে ধরে বলে চলো তাহলে কাজটা এখন থেকেই শুরু করে দেই।
___কি কাজ?
__ঐ যে বলল নতুন মেহমান সাথে ব্যবসা।দুইটাই সফলতা কাম্য।
__দিন দিন আপনি অনেক বাজে হয়ে যাচ্ছেন।
__তোমার কাছে এর থেকে আরো বাজে হতে চাই তাতে সমস্যা নেই।বলেই নয়নাকে নিজের বুকের সাথে জাপ্টে ধরে।
এক বছর পরে_____
আনাম নতুন একটা সুপার শপ দেয় আস্তে আস্তে নয়নাকে পার্টনার করে ব্যবসা অনেক বড় করতে থাকে। এদিকে মাস খানিক হয় আনাম নয়নার পুচকেঁও দুনিয়ায় চলে আসে যার নাম ছিলো কাশফিয়া আনাম আনিসা।
নাফিজা আবারো পড়ালেখার প্রতি মনযোগী হয়। নাফিজ নতুন একটা প্রাইভেট কোম্পানির জব খুঁজে সেখানে চলে যায়৷ আয়েশা বেগমও নিজের কাজের জন্য অনুতাপে সব সময় কাঁদতে থাকে। রাজ্জাক ভূঁইয়া প্রায় নয়নার বাচ্চা কে দেখতে যায়। সবাই নয়নার বাচ্চাকে জান প্রাণ দিয়ে ভালোবাসে।
(সমাপ্ত)