ম্যাই ক্যামেলিয়া পর্ব-০১

0
2

#ম্যাই_ক্যামেলিয়া
লেখনীতে:#ইশা_আহমেদ
#সূচনা_পর্ব

“কালো রঙ নাকি তার ভীষণ পছন্দের, তবে আমি কেনো তার পছন্দের তালিকা থেকে বাদ পরলাম?”

কম্পিত কন্ঠে নিজের প্রিয় বান্ধবীকে উদ্দেশ্য করে কথাটি বললো রাপিশা মেয়েটা। হুট করেই সে চাপা স্বরে কেঁদে উঠলো। পাশে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে বসে আছে তার প্রিয় বান্ধবী আত্বিয়া। কিছুটা দূরেই দাঁড়িয়ে প্রেমালাপ চালিয়ে যাচ্ছে রাপিশার প্রাক্তন। নিজেকে স্বাভাবিক করে উঠে দাঁড়ালো আত্বিয়া। রাগে তার চোখ মুখের অবস্থা বেহাল। ঘামার্ত মুখখানা রাগে লাল বর্ণ ধারণ করেছে। রাপিশার এমন অবস্থা সে কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না! রুষ্টতা তাকে ভয়ংকর ভাবে ঘিরে ধরেছে। নিয়ন্ত্রণ করা বড্ড দুষ্কর। আত্বিয়া আশেপাশের কিছু ভাবলো না ঝড়ের গতিতে সোজা ধৃষ্ট পুরুষটির সম্মুখে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাপ্পড় মেরে বসলো। ছেলেটা সহ আশেপাশে থাকা মানুষগুলো স্তব্ধ হয়ে গেলো। সাথে রাপিশা ও হতবিহ্বল। ততক্ষণে তার কান্না থেমে গিয়েছে।
অপর পাশের ছেলেটারর হুঁশ ফিরতেই রাগে তার শরীর কাঁপতে থাকলো। রক্ত চক্ষু নিয়ে আত্বিয়ার দিকে তাকিয়ে দাঁত কিড়িমিড়ি করে বলল,,,
“কে আপনি! সাহস কত বড় আপনার, আমার গায়ে হাত কেনো তুললেন আপনি?”

আত্বিয়ার রাগ এবার আকাশ ছুঁয়ে গেলো। সম্মুখে দাঁড়িয়ে থাকা পুরুষটির কলার চেপে ধরে বলল,,“শা*লা প্রেম করলি তুই আমার বান্ধবীর সাথে বিয়ে করবি অন্য মাইয়ারে। আর আমি তা মেনে নেবো হ্যাঁ! মেয়েদের কি পাইছিস কি তুই”

পুরুষটি এক ঝটকায় নিজের কলার ছাড়িয়ে নিলো। এরপর আঁখিজোড়া ঘুরিয়ে পশ্চাতে দাঁড়িয়ে থাকা রাপিশাকে দেখে নিলো। রাপিশাকে দেখা মাত্রই পুরুষটির ঠোঁটের কোণে হাসির দেখা মিললো। রাপিশা এগিয়ে এসে আত্বিয়াকে উদ্দেশ্য করে বলল,,
“আত্বিয়া তুই কেনো এই বেশরম, অসভ্য পুরুষের গায়ে হাত দিয়ে নিজের হাত টাকে নোংরা করলি। এসব আবর্জনার গায়ে হাত দেওয়া মোটেও ঠিক হয়নি তোর”

আত্বিয়া বিষ্মিত দৃষ্টিতে রাপিশাকে দেখছে। মেয়েটি একটু আগেও সম্মুখে দাঁড়িয়ে থাকা পুরুষটির জন্য কাঁদছিলো। আর এখন! আত্বিয়ার বিষ্ময় কাটে পুরুষটির কথায়।

“ওহ তাহলে তুমি নিজের বান্ধবীকে নিয়ে এসেছো আমায় অপমান করতে। বাহ! বেশ ভালো বুদ্ধি তবে কি জানো তো রাপিশা তোমার আর এই তোমার বান্ধবীর কথায় এই ইরাজের কোনো কিছু যায় আসে না!”

আত্বিয়া এবার বড্ড বেশি রেগে গেলো। কতটা বেহায়া নির্লজ্জ হলে এরূপ কথা বলতে পারে কেউ। রাগে তার শরীর জ্বলছে। মন চাইছে এই মুহুর্তে পুরুষটির মাথা ফাটিয়ে দিতে। আত্বিয়া আশেপাশে তাকালো। কাঙ্ক্ষিত জিনিসটা পেতেই সেদিকে এগিয়ে গেলো সে। ইটের টুকরোটা উঠিয়ে নিয়ে ইরাজের দিকে এগিয়ে আসলো। বেচারা ইরাজ আত্বিয়ার এমন রণমুর্তি রূপ দেখে ছোটাছুটি শুরু করলো। আত্বিয়াও ইট নিয়ে ছুটছে ইরাজের পেছন পেছন। রাপিশা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছে। কি করবে সে বুঝে উঠতে পারলো না! হঠাৎ ই আত্বিয়া নিজের হাতে টান অনুভব করলো। দাঁড়িয়ে পরলো। ততক্ষণে ইরাজ পালিয়েছে তার নতুন গার্লফ্রেন্ডকে নিয়ে। আত্বিয়া রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে পিছু ফিরে তাকালো।

“আত্বিয়া রেগে আছিস কেনো এতো? কি হয়েছে তোর? আর ইট নিয়েই বা ঘুরছিস কেনো?”

আত্বিয়া ইটের টুকরোটা দূরে ছুঁড়ে মারলো। তার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ছেলেটার চুলগুলো জোড়ে টেনে ধরলো। ছেলেটা দ্রুত আত্বিয়ার হাত থেকে নিজের চুলগুলো ছাড়িয়ে নিলো। আত্বিয়াকে এক হাতে জড়িয়ে শান্ত করার চেষ্টা করলো। আত্বিয়া হাত পা ছোড়াছুড়ি করছে। ছেলেটা আত্বিয়াকে নিয়ে পার্কের কোণার দিকের ছাউনিতে যেতে যেতে রাপিশাকে উদ্দেশ্য করে বলে,,,

“রাপিশা দ্রুত আয়। এই পাগলকে সামলাতে আমি একা পারবো না”

রাপিশাও ঘাসের উপর থেকে দু’জনের ব্যাগ নিয়ে সেদিকে এগোলো। ছেলেটা আত্বিয়াকে বেঞ্চে বসিয়ে গালে হাত দিয়ে জিজ্ঞেস করলো,,,

“আত্বিয়া শান্ত হ। কি হয়েছে বল আমায়। এতো ক্ষেপেছিস কেনো আজ। ভার্সিটি থেকে আমাকে ফেলেই চলে এসেছিস দু’জন একা একা। হয়েছে কি তাই বল”

“শাহারিয়ারের বাচ্চা তুই আমায় আটকালি কেনো। আজ আমি ওই মাতাল পাগলের মাথা ফাটিয়েই দিতাম। সয়তান শালা আমার বান্ধবীকে কালা বলে অপমান করে। শালা নিজে কি কাঞ্চন দ্যা চিকনি চ্যামেলি সে আবার কালা ধলা কয়। আর তোর এই গাধা বেস্টফ্রেন্ড রে বোঝা। ওই চিকনি চ্যামিলির জন্য কান্না করতে মানা কর”

শাহারিয়ার রাপিশার দিকে তাকালো। শাহারিয়ারকে তাকাতে দেখে রাপিশা মাথা নিচু করে ফেললো। শাহারিয়ার কাহিনী বুঝলো কি হয়েছে। বোনকে দু হাতে আগলে নিয়ে আগে শান্ত করার চেষ্টা করলো। আত্বিয়া ভাইয়ের বুকে মাথা রেখে বসে রইলো। দমকা হাওয়া বইছে। কিছুক্ষণ আগেও কড়া রোদ্দুর ছিলো। এখন আকাশে কালো মেঘের আনাগোনা। আষাঢ় মাসে হুটহাট এমন হয়। আত্বিয়া শান্ত হলো অবশেষে। শাহারিয়ারের কাছ থেকে সরে আসলো আত্বিয়া। শাহারিয়ার ঘেমে একাকার হয়ে গিয়েছে। তার এই পাগল বোনকে সামলাতে তার যে কতটা হিমশিম খেতে হয়।

“অ্যাই্ রাপিশা এই খানে আয়”

রাপিশা আত্বিয়ার ধমকে লাফিয়ে উঠলো। সে এতো সময় পাশে দাঁড়িয়ে নিজ ভাবনায় বিভোর ছিলো। সে দ্রুত সামনের বেঞ্চে গিয়ে বসলো। আত্বিয়া চোখ ছোট ছোট করে বলল,,,

“এই পোলারে কবে ধরছোস তুই? আর তুই কালা কইলো কেডা তোরে? ওই বেডা কইলো তুই বিশ্বাস কইরে নিলি।”

রাপিশা অপরাধী ন্যায় মাথা নিচু করে মৃদু কন্ঠে বলল,,“ওই বেডাই তো কইলো কালা। আর দেখ আমার গায়ের রঙ তো তোর মতো ওতো উজ্জ্বল না।”

শাহারিয়ার বেশ বিরক্ত হলো। এই মেয়ে গায়ের রঙ নিয়ে শুধু সেন্টি খায়। একশো বার বলছে তারা যে সে কালো না শ্যামলা তবে না তার হবে তাতে। শাহারিয়ার হাই তুলতে তুলতে বলল,,,
“তা রাপিশা তুই কি এই চিকনি চ্যামেলিরে সত্যি ভালোবাসতি?নাকি বাকি গুলার মতো এইটাও”

রাপিশা ভ্যা ভ্যা করে কাঁদতে কাঁদতে বলে,,
“এই পোলারে আমার সেই ভাল্লাগছিলো। এইটারে মনে হয় আমি একটু একটু ভালোবাসতাম। আর এই বেডা আমারে ছ্যাকা দিলো। এই রাপিশাকে ছ্যাকা দিলো”

আত্বিয়ার মাথায় হাত। সে তো ভুলেই গিয়েছিলো রাপিশার স্বভাব। আজ এমন ভাবে কাঁদছিলো তার তো রাগই উঠে গিয়েছিলো। সে আসলে এই ছেলের ব্যাপারে জানতো না। আরও যেভাবে বললো গায়ের বিবর্ণ রঙ নিয়ে। সে তো আরেকটু হলে পুরুষটির মাথাই ফাটিয়ে দিচ্ছিলো। আত্বিয়া মৃদু চিৎকার করে বলে উঠলো,,
“চুপ কর। কাঁদবি না মোটেও ফ্যাঁচ ফ্যাঁচ করে। তোর জন্য তো আমি এখনই জেলে যেতাম মানুষ মেরে। সয়তান মেয়ে দূর হ চোখের সামনে থেকে।

রাপিশা মুখে হাত দিয়ে কান্না থামালো। তবে আঁখি জোড়া হতে এখনো অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে। শাহারিয়ার বুঝে উঠতে পারলো না এই মেয়ের চোখে এতো পানি কোথা থেকে আসে। দেখা যাবে এই মেয়ে কেঁদে কেঁদে সাগর বানিয়ে ফেলবে। তারপর সে আর আত্বিয়া ভেসে যাবে। দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলল। আত্বিয়া গম্ভীর কন্ঠে বলল,,

“বাড়ি যাবো শাহারিয়ার নিয়ে চল”

“আচ্ছা উঠ তাহলে। আমি তো বাইক নিয়ে এসেছি। এক কাজ করি রাপিশাকে এখান থেকে একটা রিকশায় উঠিয়ে দেই। তারপর আমরা বাড়ির দিকে যাই”

রাপিশা আর আত্বিয়া দু’জনেই মাথা নাড়ালো। শাহারিয়ার রিকশা খুঁজতে চলে গেলো। আত্বিয়া নিশ্চুপ। রাপিশা কিছু বলতে চাইলো বোধ হয়। তবে বলে উঠতে পারলো না। বলার ভাষা রাখেনি সে। আর এই মুহুর্তে কিছু বলা মানেই নিজের বিপদ ডেকে আনা। আত্বিয়া যে ভীষণ রেগে আছে তা তার লালবর্ণ আখিঁ জোড়া দেখেই বোঝা যাচ্ছে। কিছুক্ষণ বাদেই শাহারিয়ার চলে আসলো। রাপিশাকে নিয়ে চলে গেলো। রাপিশা বার কয়েক পিছু ফিরে তাকিয়ে দেখছিলো আত্বিয়াকে। আজ একটু বেশিই করে ফেলেছে সে। তবে তার তো একটু কষ্ট হচ্ছিল, তাই তো কাঁদছিলো।

শাহারিয়ার এসে আত্বিয়ার হাত ধরে টেনে দাঁড় করালো। এক প্রকার ঠেলে ঠুলে বাইকের কাছে আনলো আত্বিয়াকে। আত্বিয়া বাইকে না উঠে বলল,,
“কোক খাবো নিয়ে আয়”

শাহারিয়ার বিরক্ত চোখে কিছুক্ষণ তাকিয়ে কোক কিনে নিয়ে আসে। এরপর দু’জন রওনা হয় নিজেদের গন্তব্যে। কিছুদূর যেতেই জ্যামে পরলো দু’জন। বিরক্তিতে চোখ মুখ কুঁচকে বসে আছে আত্বিয়া। কিছুক্ষণ বাদেই জ্যাম ছুটলো। আত্বিয়া রাস্তাতেই হাতে থাকা কোকের বোতল ছুঁড়ে মারলো। পেছন থেকে পুরুষালী ঝাঁঝালো কন্ঠ কানে আসলেও শাহারিয়ার বা আত্বিয়া তাকালো না। কিছুক্ষণ বাদেই একটা গাড়ি এসে পথ আটকালো তাদের। দুজনেই চমকালো। গাড়ি থেকে নেমে এলো একজন ভদ্রলোক। ভদ্রলোক গম্ভীর মুখে এগিয়ে আসলেন।

আত্বিয়া রেগে তেতে উঠে বললো,“কি সমস্যা ভাই? মাঝ রাস্তায় গাড়ি দাঁড় করিয়েছেন কেনো?”

ভদ্রলোক বললেন,
“রাস্তায় ডাস্টবিন কেনো দেওয়া থাকে?”
আত্বিয়ার রাগ বাড়লো বললো,“আপনি জানেন না? অশিক্ষিত?”
শাহরিয়ার ধমক দিয়ে আত্বিয়াকে চুপ করালো। ভদ্রলোকের দিকে তাকিয়ে নম্র কন্ঠে শুধাল,
-“ভাইয়া আপনি বলুন কি সমস্যা”

-“প্রথমত আপনার গার্লফ্রেন্ড একজন চরম লেভেলের বেয়াদব তাকে অপরিচিত মানুষের সাথে কীভাবে কথা বলতে হয় সেটা শেখাবেন আর দ্বিতীয়ত শেখাবেন, না দেখে কেথাও কিছু ফেলতে বা মারতে।”
শাহরিয়ার কিছু বলতে যাবে তার আগেই আত্বিয়া তেড়ে গেলো ভদ্রলোকের দিকে। বলল,
-“এই খচ্চর না জেনে উল্টাপাল্টা কথা বলিস ক্যান? ওই আমার আপন ভাই লাগে, মায়ের পেটের ভাই।”

ভদ্রলোকের বিরক্তি ভাবটা কাটলো। মুখ গম্ভীর হলো। তিনি শাহরিয়ারকে উদ্দেশ্য করে বলল,
-“আপনার বোনকে লাগাম টানতে বলুন। সে একজন চরম লেভেলের বেয়াদব। কথার ঠিক নেই।”

-“দুঃখিত ভাইয়া। আসলে ও একটু রেগে আছে এ জন্য উল্টো পাল্টা বলছে।”

-“আপনার বোন কোকের ক্যান মেরেছে আমার গাড়িতে এরপর আমার সাথে কন্টিনিউয়াসলি বাজে ব্যবহার করছে। এর ফল কি হতে পারে জানেন?”

শাহরিয়ার ঢোক গিললো। তার মানে তখন এই ভদ্রলোকই চেঁচিয়ে ছিলো। শাহরিয়ার ভাবলো ক্ষমা চাইবে তার আগেই আত্বিয়া লোকটার বুকে ধাক্কা মেরে বলল,
-“কে তুই? কি হবে এর ফল শুনি?”

-“আমি পুলিশ, এসপি উদয় ফাইয়াজ খান”

আত্বিয়ার রাগ উধাও হলো। ভয়ে মুখটা চুপসে গিয়েছে। শেষে কি না রাপিশার রাগ অন্য জনের উপর ঝাড়তে গিয়ে পুলিশের কাছে কেস খেলো। তুতলিয়ে বলল,
-“আপনি…..পু..লিশ?”

#চলবে

[ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন, ধন্যবাদ]