অশ্রুবন্দি পর্ব-১৩

0
36

#অশ্রুবন্দি
#লেখনীতে -ইসরাত জাহান ফারিয়া
#পর্ব- ১৩

সৃজা তবুও কথা বলল না, আগ্রহও দেখাল না। মনোযোগ পুরোপুরি বইয়ে রেখে পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা উল্টিয়ে উপন্যাসের বই পড়ে গেল। ইহসান থমকিত, চমকিত মুখে আধখোলা শার্টে বসে রইল সেভাবেই। শরবত মুখে নিতে ভুলে গেল। বুকের ভেতর পীড়ন অনুভব হলো। রক্তাভ হয়ে গেল চোখজোড়া। আগুন উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ল সারা গায়ে। তীব্র রেগে আচমকা উঠে গিয়ে সৃজার হাত থেকে বইটা কেড়ে নিয়ে জানালা দিয়ে বাইরে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে ঘরে পরার ট্রাউজার, টি-শার্ট নিয়ে ফ্রেশ হতে চলে গেল।

.

অমাবস্যার রাত। আকাশে কোনো চাঁদ নেই, নেই শীতল বাতাস। চারপাশে শুধু ঝুম নিঃস্তব্ধতা বিরাজমান।
রাতজাগা কয়েকটা পাখি ডানা ঝাপটে পথ পাড়ি দিচ্ছে। পেছনের পুকুরঘাট থেকে মৃদু হাওয়ায় নারকেল পাতা দুলুনির শনশন শব্দ আসছে। ঘড়ির কাঁটা রাত সাড়ে দশটায়। ইহসান তোয়ালে দিয়ে ভেজা চুল মুছতে মুছতে ফ্রেশ হয়ে বেরুলো। মাথা মোছা শেষ হতেই বিছানার দিকে চোখ পড়ল তার। এরপরই কপাল কুঞ্চিত হলো,ভ্রু দুটো কুঁচকে এলো। বিস্মিত হলো প্রচণ্ড। কারণ তার ঘরের রাণী, মন জ্বালানোর রাণী টেবিলে তার জন্য রাতের খাবার সাজিয়ে নিজে খুব সুন্দর গুটিশুটি মেরে ঘুমিয়ে আছে। চেহারায় নেই ক্লান্তি, নেই চিন্তার ছাপ। ইহসানের বুক জ্বলুনি ভাবটা প্রকট হলো। চোখদুটো বুজে গাঢ় নিঃশ্বাস টানল।
সৃজা কীভাবে এমন কাজ করতে পারল? তার রাগ অগ্রাহ্য করতে পারল? একটু অপেক্ষা করল না? খাবারটা বেড়েছে ঠিকই, পাশে বসিয়ে একটু এগিয়ে দেবে না? দুটো ভালোমন্দ কথা জিজ্ঞেস করবে না? কীভাবে ওকে এভয়েড করে ঘুমিয়ে পড়তে পারল? ও না হয় একটু রাগই দেখিয়েছে, তারজন্য কাঁথা মুড়ি দিয়ে ঘুমিয়ে পড়বে?
এ কেমন আচরণ? সদ্য গোসল নিয়ে শীতল হয়ে আসা শরীরটা আচমকা তেলেবেগুনে জ্বলে উঠল৷ হাত থেকে তোয়ালে ছুঁড়ে ফেলল নিচে। সোফায় কিছু ভাঁজ করা শুকনো কাপড় রাখা ছিল, সেগুলোও ছুঁড়ে মারল মেঝেতে। শব্দ হলো না। শরবতের গ্লাসটা জানালা দিয়ে ফেলে ক্ষ্যাপাটে ভাবটা নিয়ে বসে রইল সোফাটায়।

.

সৃজার ঘুম ভাঙল স্বাভাবিক ভাবে, ভোর থেকে সকাল হওয়ার ঘ্রাণে। ঠিক সকাল সাতটায়। ভার হয়ে থাকা চোখদুটো থেকে ঘুমের রেশ কাটাতে উঠে বসল সে বিছানায়। এলোমেলো হয়ে পিঠের নিচে চাপা পড়ে থাকা চুলগুলো একত্রে করে হাতখোঁপা বাঁধতে গিয়ে সামনের সোফাটায় চোখ পড়তেই দেখল টকটকে লাল হয়ে থাকা চোখ নিয়ে ইহসান তাকিয়ে আছে তারই দিকে। কপাল ঢেকে আছে উষ্কখুষ্ক চুলে। মুখের ভঙ্গি কঠিন, চোয়াল শক্ত। সারারাত ঘুমায়নি লোকটা। এটা যে-কেউ বুঝতে পারবে। সৃজা হতবিহ্বল হলো। আপনাআপনি ঠোঁটদুটো ‘হা’ হয়ে গেল। খোঁপা বাঁধা হলো না, চুলগুলো ছড়িয়ে পড়ল পিঠে। ঘোর কাটতে বেশ অনেকক্ষণ লাগল তার। কিছুই বলল না ইহসানকে, না প্রশ্ন করল। ভেতরে ভেতরে বিস্ময়ে ফেটে পড়লেও নিজেকে স্বাভাবিক দেখানোর প্রচেষ্টা করে শরীরের ওড়না ঠিক করে বিছানা থেকে নেমে পড়ল। চুপচাপ চলে গেল হাতমুখ ধুতে। ভালোভাবে ফ্রেশ হয়ে ঘরে ফিরে টেবিল থেকে পানির গ্লাস নিতে গিয়ে দেখল রাতে বেড়ে রাখা খাবারটা ঠিক সেভাবেই প্লেটে পড়ে আছে। ভাত শুকিয়ে চাল হয়ে গেছে, তরকারি থেকে কটু গন্ধ বেরুচ্ছে। ছোঁয়ওনি একটু। তার মানে পুরো রাত না খেয়ে, না ঘুমিয়ে সেভাবেই বসে আছে ইহসান! সৃজা দ্বিধান্বিত ও কিছুটা ক্ষুদ্ধ ভঙ্গিতে ইহসানের সামনে গিয়ে দাঁড়াল। প্রশ্ন করল,

“না খেয়ে, না ঘুমিয়ে সারা রাত জেগে কাটিয়েছ, এসবের মানে কী?”

ইহসান জবাব দিলো না। সৃজা এবার জোরালো কণ্ঠে বলল,

“কী হয়েছে তোমার?”

এবারেও চুপ। সৃজা গলায় আশ্চর্য ভাব ফুটিয়ে বলল,

“কথা বলছ না কেন? জাত চলে যাবে নাকি?”

“বি’ষ এনে দে, খেয়ে মরে যাই।”

চিবিয়ে চিবিয়ে বলল কথাটা ইহসান। সৃজা হতভম্ব হয়ে এবার ওর পাশে বসে পড়ল। কপালে, গালে হাত রেখে চেক করতে করতে বিচলিত ভঙ্গিতে বলল,

“আবার শরীর খারা….”

কথাটুকু সম্পূর্ণ হলো না, আটকে গেল ওখানেই। একজোড়া তৃষিত ঠোঁট আক্রমণ করল ওর ওষ্ঠাধরে। রুক্ষ একটা হাত মুহূর্তেই চলে গেল নির্মেদ কোমড়ে। অন্যহাতটা চেপে ধরল ওকে বুকের সাথে। সৃজা আচমকা আক্রমণের জন্য প্রস্তত ছিল না। সে নড়চড় করতেও যেন ভুলে গেল। আলতো করে টেনে দেওয়া সুতির ওড়নাটা খসে পড়ল মাথা থেকে। চুলগুলো বেরিয়ে এলোমেলো হয়ে এদিকসেদিক ছড়িয়ে পড়ল। সৃজা স্তব্ধ, হতভম্ব, বাকরুদ্ধ! ইহসানের মন-মস্তিষ্ক তখন অন্য জগতে। যে জগতে শুধু অনুভূতিদের রাজত্ব, তাদেরই বিচরণ থাকে সে জগতে। একজোড়া ওষ্ঠাধরের ছোঁয়া তার বক্ষে শীতল অনুভূতি ছড়াচ্ছে, একটা ঊষ্ণ আলিঙ্গন তাকে সারা রাতের ক্ষোভ থেকে মুক্তি দিচ্ছে। ঘনকালো চুল থেকে ভেসে আসা মাদক মাদক
গন্ধটা তাকে পাগলমো করতে উৎসাহিত করছে!

কতক্ষণ কেটে গেল সৃজা জানে না, সে বোধশক্তি ফিরে পেল। কান্নার একটা ভাব ভেতর থেকে ঠেলে বেরিয়ে আসতে চাইল। সে দু’হাতে ধাক্কা দিয়ে সরানোর চেষ্টা করল ইহসানকে। কিন্তু বলিষ্ঠ পুরুষালি শক্তির সাথে পেরে উঠছিল না। চওড়া বুকে আটকে থেকে তার শ্বাস আটকে আসছিল, কিন্তু নিয়ন্ত্রণহীন ইহসান তাকে দম নেবার সুযোগটুকুও দিচ্ছিল না। সৃজা না পেরে খামচে ধরল ইহসানের ঘাড়। কাজ হলো তাতে। ছিঁটকে সরে গেল ইহসান। চোখমুখ কুঁচকে ধমকে উঠল সে,

“শেষ করে দিলো আমার… ”

বলতে বলতে চোখ পড়ল সৃজার দিকে। হাতসহ
সেও থেমে গেল ক্ষোভিত সৃজার পানে তাকিয়ে।
সৃজা কেঁদে ফেলল সে মুহুর্তেই। একটা লোক, যে কি-না তার স্বামী! যাকে প্রচুর বিশ্বাস করে, ভরসা করে, ভয় নিয়ে বিয়ে করেছিল, তার থেকে এতটা নিয়ন্ত্রণহীন আচরণ সে আশা করেনি! ইহসান বিমূঢ় মূর্তির মতো বসে রইল। সান্ত্বনা দেওয়ার সাহস পেল না, অপরাধী তো সে নিজেই। তার অবশ্য অনুশোচনাও হলো না। উল্টো মনে মনে চাইছিল সময়টা আরেকটু থমকে যাক, যাতে এই মুহূর্তের রেশ থেকে যায় অনেকটা সময়! সে আঁড়চোখে সৃজাকে পরখ করতে লাগল। ওর ভেজা ঠোঁট, এলোমেলো চুল, ওড়নাবিহীন বুকের উঠানামা কিছুই তার চোখ এড়ালো না। গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে এলো। ভেতরটা নড়বড়ে হয়ে গেল। গলা নামিয়ে অপরাধী কণ্ঠে কৈফিয়ত দেওয়ার মতো করে বলল,

“আমাকে ইগনোর করলি বলেই রাগ হয়েছিল,
এখনো হচ্ছে, তোকে চোখের সামনে দেখলেই হচ্ছে। মেরে মুখ ভেঙে দিতে ইচ্ছে করছে…খেয়ে ফেলতেও ইচ্ছে করছে…”

সৃজা এমন একটা কথা শুনে হতভম্ব হয়ে গেল। কান দিয়ে ধোঁয়া বেরুনোর উপক্রম হলো ওর। লজ্জায় মিইয়ে গিয়ে শীতল হবার পরিবর্তে কান্নার স্বর
বেরিয়ে এলো,

“তোমার গ’লা চেপে ধরতে ইচ্ছে করছে…”

রাগান্বিত ও ক্ষোভ কথাটা বলে সৃজা ফুঁসতে লাগল। এরপর দু’হাতে মুখ ঢেকে ফুঁপিয়ে উঠতেই ইহসান শুকনো মুখে বলল,

“ধরলে ধর, কিন্তু মাফ চাইব না।”

“ভুল করেছ, কেন মাফ চাইবে না?”

ইহসান গম্ভীর কণ্ঠে জবাব দিলো,

“বউ হোস তুই, এজন্য।”

“তাই বলে ঝাঁপিয়ে পড়বে?”

বিস্মিত, অবাক শোনাল ইহসানের কণ্ঠস্বর,

“ঝাঁপিয়ে পড়লাম কোথায়? আস্তেধীরেই তো, ব্যথা পেয়েছিস বেশি?”

সৃজা ধারালো স্বরে বলল,

“মেয়ে দেখোনি জীবনে?”

“বউ দেখিনি…”

“তাই হুট করে এক্সাইটেড হয়ে পড়বে, ট্রিপিক্যাল পুরুষমানুষের মতো…”

ইহসান রাশভারী স্বরে বলল,

“তেমন হলে প্রথম রাতেই…”

সৃজা কটমট করে চাইতেই ইহসান থেমে গেল। জবাব না দিয়ে গম্ভীর মুখে বসে রইল। তার মাথা ঝিমঝিম করছে, বুকের ভেতর অদৃশ্য ব্যথা। কপাল থেকে চুল সরিয়ে বড় বড় কয়েকটা শ্বাস ফেলল সে৷ ঢোক গিলে বলল,

“এত ছটফট করলি কেন তুই? ভালো লাগেনি? আমার তোকে মারতে ইচ্ছে করছে…”

সৃজা ভস্ম করা দৃষ্টি নিক্ষেপ করে দু’হাতে কান চেপে উঠে চলে গেল সেখান থেকে। হাতমুখ ধুয়ে কান্নার চিহ্ন মুছে নিজেকে সামলে অনেকক্ষণ পর যখন বেরুলো দেখল ইহসান ঠিক একইভাবে বসে আছে। বসে থাকতে ইচ্ছে হলে থাকুক! সৃজা পাত্তা দিলো না ওকে। চুল খোঁপা করে, মাথায় ওড়না টেনে বেরিয়ে এলো ছাদে। সকালের মলিন আকাশ। আকাশে ধোঁয়াটে মেঘকুণ্ডলী। মৃদু বাতাসে মিষ্টি এক গন্ধ! উঠোনের ঘাসে ছোট ছোট সাদা ফুল উঁকি দিচ্ছে,
যত্নহীন পুকুরে কয়েকটা হাঁস ছানা নিয়ে ভেসে বেড়াচ্ছে, বাড়ির পেছনের রেল লাইনে ট্রেন ছুটছে। ছাদ থেকে দৃশ্যগুলো চমৎকার দেখাচ্ছে। কিন্তু সৃজার মন বিষন্ন। গতরাতে ইহসানের ঐ শক্ত আচরণের পর থেকেই। আর সকালের আচরণটা তো অভাবনীয়, অকল্পনীয়! খট করে পেছন থেকে শব্দ হতেই ও ভ্রু কুঁচকে পেছনে ফিরল। দেখল ইহসান দাঁড়িয়ে আছে শাণমুখে। চোখেমুখে তীব্র বিরক্তি আর রাগ। সৃজা ওকে পাত্তা না দিয়ে মুখ ফিরিয়ে পুকুরে ভেসে থাকা হাঁসের ছানাদের খুনসুটি দেখায় মনোযোগ দেওয়ার চেষ্টা করল। তখনি বড় বড় পা ফেলে তীরের
বেগে ছুটে এসে ওকে শূন্যে তুলে নিলো ইহসান…

.

রাত হলে সৃজা-ইহসান একঘরে থাকে, না জানি কী কী হয় ওদের মধ্যে এসব উদ্ভট ও কুরুচিপূর্ণ চিন্তা করেই লিথুর নাওয়াখাওয়া বন্ধ একপ্রকার! আজ সারারাতও ঘুমাতে পারেনি। মূলত, ইহসান যেদিন থেকে সৃজাকে বিয়ে করেছে, সেদিন থেকেই তার শান্তির ঘুম নষ্ট। সে কখনো মানতে পারবে না ইহসান শেখ অন্য কারো! ইহসানের বউ হিসেবে চোখের সামনে সৃজাকে সে কোনো দিনই সহ্য করবে না৷ সৃজার চেহারাটাও সে দেখতে চায় না। ভেতরটা জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দেয়। দু টাকার ফকিন্নির মেয়ে হয়ে কীভাবে ফাঁসিয়েছে ইহসানকে, কী করে ওর থেকে কেড়ে নিয়েছে মনে পড়লেই মাথা নষ্ট হয়ে যায় লিথুর। বেশিদিন এভাবে চলতে থাকলে সে নির্ঘাত কিছু একটা করে বসবে সৃজাকে। শুধু আজিজ শেখ আর ওর বাবা রমিজ আলীর সৃজাকে তাড়ানোর ব্যবস্থা করবে বলে নিশ্চয়তা দিয়েছে বলেই লিথু ধৈর্য ধরে শেখ বাড়িতেই থাকছে আর সহ্য করছে নিজের ভালোবাসার লোকটির বিবাহিত জীবন!

এসব নিয়ে ভাবতে গিয়ে তার চেহারার বেহাল
অবস্থা। চোখের নিচে ডার্ক সার্কেলের কালো দাগ পড়ে চেহারার জৌলুশ কমিয়ে দিয়েছে। ডানগালে, কপালে ব্রণও ফুটেছে। মুখের উজ্জ্বলতা, লাবণ্যতা কমে গেছে। ভালো হবার নামই নেই। এসব সারানোর জন্য সপ্তাহে কয়েকবার পরপরই তাকে পার্লারে যেতে হচ্ছে। ইদানীং চুলের রঙটাও ভালো লাগছে না৷ সেদিন বজ্জাত ইজহানের সামনে পড়লে সে সরাসরি ‘ঘোড়ার লেজ’ বলে কটাক্ষ করেছে সবার সামনে। ইস্মির মতো মহিলা পর্যন্ত মুখ টিপে হেসে ফেলেছে। আর ইহসান ছিলো ভাবলেশহীন, সে কিছুই বলেনি। বিরক্তি ফুটেছিল কপালে। ভাইয়ের কটাক্ষ শুনে অন্তত প্রতিবাদ করা উচিৎ ছিল, যেমনটা করে ইস্মির বেলায়! লিথুর সেদিন বেজায় রাগ হয়েছে। কেঁদেছেও সে ভীষণ। মিতু আর ইমরান ওকে সান্ত্বনা দিয়েছে। আজিজ শেখ ইজহানকে ধমক দিয়েছে। এদেরই শুধু লিথু নিজের দুঃখে পাশে পায়। সে তাই ঠিক করেছে এ সপ্তাহেই চুলের রঙটা পাল্টে পুরো চুল বারগান্ডি করে ফেলবে। তাহলে হয়তো আর কেউ কটাক্ষ করার সুযোগ পাবে না। ইহসানও ওর নতুন লুক দেখে এক-আধবার ফিরে চাইবে। তাতেই চলবে লিথুর। ঐ এক-আধবার তাকানোটাকে সে আস্তেধীরে পার্মানেন্ট করে ফেলবে।

রাতে ঘুম না হওয়ায় মাথা ধরে আছে ওর। ছাদ
থেকে হাওয়া খেয়ে আসলে হয়তো মাথাটা হালকা
হবে তার। এটা ভেবেই চোখেমুখে পানি ছিঁটিয়ে লেগিংস আর শার্টের ওপরে কারুকাজ করা পাতলা চাদর জড়িয়ে ছাদে রওয়ানা হলো সে। যাবার পথে উঁকি দিলো ইহসানের ঘরটাতে। কিন্তু দরজা বন্ধ দেখে মনে মনে ফুঁসল। গালিও দিলো। নিশ্চয় কাল-নাগিনীটা ইহসানের সাথে লেপ্টে শুয়ে আছে! মনের দুঃখ আর গালি চেপে সে চলে এলো ছাদে। সিঁড়িঘরের দরজাটা খোলা দেখে অবাক হলো খানিকটা। এত সকালে কে ছাদে আসবে? হয়তো কাজের বুয়া শেফালি। তাই বেশিকিছু না ভেবে উঠে এলো সে। এরপর দু-পা হেঁটে পূব দিকে চোখ পড়তেই ‘থ’ মেরে গেল লিথু! সৃজাকে পাঁজাকোলে নিয়ে ফেলে দেওয়ার ভয় দেখাচ্ছে ইহসান। ভয় পেয়ে সৃজা আঁৎকে উঠছে আর চোখ বন্ধ
করে চিৎকার করে তাকে নামাতে বলছে। কিন্তু ইহসান
ওর কথা শুনছেই না। দশ গজ দূরে দাঁড়িয়ে থাকা লিথুর মনটা আনন্দে নেচে উঠল। দারুণ উত্তেজিত হয়ে সে
চেঁচিয়ে উঠল,

“ফেলে দাও, ফেলে দাও ওকে ইহসান…”

_________________

চলবে…