ভুলি কি করে তোকে পর্ব-০৩

0
14

#ভুলি_কি_করে_তোকে

(এ প্রথম লেখা লেখি করছি জানি না কেমন লাগবে ভুলক্রুটি হলে ক্ষমার চোখে দেখবেন)

(কাজিন রিলেটেড + রোমাঞ্চকর+থ্রিলার)

লেখক : #নুরজাহান_আক্তার_স্নিগ্ধা……

📌কপি সম্পুর্ন নিষিদ্ধ

#পর্ব_৩

ক্লাস শেষ করে মিলির আম্মুকে কল দিয়ে বলে দিয়েছে আজ ও ওদের সাথে ই থাকবে মিলির আম্মু ও কিছু বলে নি কারণ নিশিতা পুরো পরিবারকে সে খুব ভালো করে চিনে তাই তার চিন্তার প্রয়োজন নেই মিলি আম্মু ওকে থাকতে বলেছেন এতে নিশিতা ,মিলি ,আরোহী খুশিতে গদগদ করে নিশিতা তার ভাইকে বলতে শুরু করলো_

-ভাইয়া আমাদের আইসক্রিম আর কিটকেট কিনে দেও না

নাদিফ এতে প্রচুর বিরক্ত হল….

-নিশি এখন আর কোথাও যেতে পারবো না আমি আর কিছু কিনে দিতে ও পারবো না।বাসায় চললে চল না হয় রেখে ই চলে যাবো বলে দিলাম

এ কথা শুনে নিশিতা ঠোঁট টা গোল করে একবার চোখে পলক ফেললো-

-ও আচ্ছা কিনে দিবে না তো ঠিক আছে আমি ও বাড়িতে বলে দিব তুমি রাতে ছাদে……

নিশিতা এটুকু বলার পর নাদিফ চিৎকার দিয়ে ওঠলো

– আচ্ছা ঠিক আছে আর কিছু বলতে হবে না তোকে শপে চল যা নেয়ার নে

এ বলে শপ এর দিকে হাটা শুরু করলো। নিশিতা মিলি আর আরোহী দিকে তাকিয়ে বা চোখ টিপ দিয়ে নাদিফ এর সাথে শপে গেল যা যা ইচ্ছে করছে সব নিল গাড়ি দিয়ে বাড়ির সামনে এসে তিনজন নেমে গেল আর নাদিফ গেল গাড়ি পার্কিং করতে ওরা কথা বলতে বলতে আর দুষ্টামি করতে করতে নিশিতা উল্টো হয়ে বাড়িতে গেট দৌড় দিল আর হঠাৎ স্বজোড়ে কিছুর সাথে ধাক্কা খেয়ে পরে যেতো নিলে তক্ষণি কেউ পেছন থেকে পেটে ধরে শূন্যে উঠিয়ে নিল..নিশিতা কি হচ্ছে তা বুঝতে বুঝতে কানে আসলো এ আরোহী কন্ঠ

-মাহদি ভাইয়া (খুশিতে গদগদ করে)

ততক্ষণে মাহদি নিশিতাকে ঠিক করে দাড় করিয়ে দিয়েছে নামটা শুনে নিশিতার যেন নিশ্বাস ভারি হয়ে আসছে।অদ্ভুত এক অনুভুতি কাজ করছে ও মাথা নিচু করে আস্তে আস্তে ঘুরে তাকালো।আরোহী মাহদির সাথে কথা বলছিল নিশিতা ওর দিকে ঘুরতেই মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে ওর দিকে তাকালো।নিশিতা লজ্জা মাখা মুখে আস্তে আস্তে উপরে তাকিয়ে দেখতে পায় মাহদি হাসি দিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে আছে।নিশিতা তাকাতেই ওকে উদ্দেশ্য করে বললো _

-হেই এংরি র্বাড হাও আর ইউ(হাসি মাখা মুখে)ইউ লুক সো প্রিটি বরাবর এর মতো কালো তে তোমাকে একদম অপ্সরা লাগছে…

নিশিতা প্রতি বার এই ফরসা গায়ের রং মুখ ক্লিন সেভ করা উচ্চতায় ৬ ফুট ওপরে মুখে হাসি থাকে সবসময়ই এই লোক প্রেমে পরে যায় একটা মানুষ এতো সুন্দর হয় কিভাবে _

-আমি ভালো আছি মাহদি ভাই আপনি কেমন আছেন (লজ্জা মাখা মুখে হালকা হাসি দিয়ে)

নিশিতার লজ্জা মাখা মুখ দেখে মিলি ঠোঁট টিপে হাসচ্ছে।আমি বলতে বলতে মাহদি মিলির উদ্দেশ্য করে বললো _

-আরে মিলি হোয়াটর্স আপ।তুমি থাকতে তোমার ফ্রেন্ডকে আমাকে সামলাতে হলো।এটাতো মোটেও ঠিক না।

-আরে ভাইয়া আপনি আছেন তাই তো আমার চিন্তা নেই। আপনি যেখানে সেখানে কি আমার চিন্তা করা লাগে নাকি আপনি ওকে সামলে নিবেন তা আমি খুব ভালো জানি..মিলিকে নিশিতা বাড়ির

মিলি বলতে বলতে ই নাদিফ এসে হাজির

-আরে ব্রো কখন আসলে। কতো দিন পর দেখা ভালো আছে তো

-আরে নাদিফ যে এতদিন এর টা জানিনা কিন্তু এখন ফাস্ট ক্লাস একদম তোর কি অবস্থা..
__________

নিশিতারা বের হওয়ার কিছুক্ষণ পরেই শেখ ভিলাতে আগমন হয় ইকবাল শেখদের।তাদের আগমনে বাড়িতে হইহুল্লো শুরু হয়ে যায় কারণ তাদের সাথে আগমন করেছে মাহদি শেখ দীর্ঘ আটমাস পরে এসেছে সে মাহদি শেখ একজন Navy officer সে মূলত navy SWO (Surface warfare officer) এটি একটি বিশেষ বাহিনী যা বেশিরভাগ মিশনের সাথে জড়িত থাকে। আর এতদিন সে তার কাজে ছিল উপরমহল থেকে ৩০দিনের ছুটি পেয়ে বুধবার এসেছে সে এসেই ভাইবোনদের দেখতে আজ চলে এসেছে। শেখ বাড়িতে তার আদরের কমতি নেই আয়শা বেগমের একমাত্র ছেলে বলে কথা। আর মাহদি নিজের ব্যবহারে সবার প্রানপ্রিয় মাহদি তার দায়িত্বের সময় যতটা গম্ভীর বা রূষ্ট হোকনা কেন কিন্তু বাড়ির মানুষের চোখে তার এরূপ কখনো আসেনি সবাই তাকে মিশুক হাসিঠাট্টা স্বভাবে চিনে।মাহদি মামাদের সাথে কুশল বিনিময় করল তারা ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিল। মাহদিকে পেয়ে রাফি জাপটে ধরেছে।আর ইরা খুশিতে গদগদ করতে করতে এটা ওটা জিজ্ঞেস করছে।তারপর ইরফান শেখকে জরিয়ে ধরে কুশল বিনিময় করল রায়হান শেখকে সালাম দিল

-আস্সালামু আলাইকুম বড়োমামা ভালো আছেন

রায়হান শেখ সালামের উত্তর দিলবললো

-আলহামদুলিল্লাহ বাবা তুমি ভালো আছো বলেই ভাতিজাকে জরিয়ে ধরল টুকটাক কথা বলল তারা রাদিফ ,নিধির সাথে দেখাকরে কুশল বিনিময় করল।
_________

কথা বলতে বলতে সবাই ভিতরে গেল ডাইনিং রুমে যেয়ে দেখতে পেল মামনি আর বাবাই (চাচা+ফুফা ওজন্য বাবাই বলে ডাকা) বসে আছে। দেখে নিশিতা আর আরোহী খুশি তে গদগদ করতে করতে তাদের সামনে চলে গেল। তাদের সাথে নিদি আর ইরা বসে ছিল ওদেরকে ওঠিয়ে নিজেরা বসে পরলো দুইজনই মামনি কে পেয়ে জড়িয়ে ধরে বললো _

আরোহী
-মামনি তুমি এতোদিন পরে কেন আসলে। তোমার কি আমাদেরকে মনে পরে না বুঝি(অভিমানী কন্ঠে)

নিশিতা
-সত্যি করে বলো তোমার এখন আর মনে পরে না আমাদেরকে তাই না। তুমি ভুলে গেছো আমাদেরকে?

আয়শা বেগম
-(মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে) আমার তো মেয়ে নেই তোরাই তো আমার মেয়ে তোদের ভুলি কি করে বলতো।তোদেরকে যে বড্ড ভালোবাসিরে মা।

ইকবাল শেখ
-তোমাদের মামনি তো পারলে যখন তখন চলো আসে কিন্তু এখন বয়স বেরেছে তাই পরে না।আমাকে দেখ এখন ও কি handsome and young

মামনি (রেগে গিয়ে)
-কি বললে তুমি আমি বুড়ি হয়ে গেছি তাহলে তুমি কি এখন ও কচি নাকি…

বাবাই
-হ্যা আমি তো কচি ই মাএ এক ছেলের বাবা আমি…

তাদের কথার মধ্যেই নিশিতার চোখ গেল ওর সাথে বসা রাফির দিকে মুখ ফুলিয়ে বসে আছে তা দেখে নিশিতা ভাই এর গালে একটা চুমু দিকে জিজ্ঞেস করল

-কি হয়েছে আমার ভাইটার রাগ করেছে। কেন কেউ কিছু বলেছে? বলো আপ্পিকে..
তার আবার আহ্লাদ বেশি বাড়িতে ছোট বলে বোনের কথায় সেও আহ্লাদে আহ্লাদী হয়ে ততক্ষণে সবার দৃষ্টি ভাইবোনের দিকে। অভিমান নিয়ে বলতে শুরু করল
-মামনি তুমি শুধু আপ্পিদের ভালোবাসো আমাদের কেন ভালোবাসোনা ছেলে বলে।

ছোট ছেলেটা অভিমানী কথা শুনে সবাই হেসে দিল। আয়শা বেগম ওকে কাছে এনে কুলে বসিয়ে আদর করে বললো

-আমি আমার সব ছেলেমেয়েকেই ভালোবাসি

তার কথার মাঝে নিধি টিপ্পনী কেটে বলেন
-তুইতো বড্ড হিংসুটে Mickey Mouse

-হ্যা আপ্পি তাইতো দেখা যাচ্ছে (ইরা)
এভাবেই সবাই হেসে দিয়ে আড্ডা শুরু করে
দিয়েছে…সবার মধ্যে কেউ একজন তৃষ্ণার্ত দুই চোখ মন ভরে তার প্রিয়সী হাসি মাখা মুখখানি দেখছে ঠোটেঁর কোনে হাসি নিয়ে। আর তা চোখে পরে যায় তার সাথের জনের..

রাদিফ(ফিসফিসিয়ে বলে)
-বড্ড ভালোবাসো না ওকে

মাহদি কন্ঠ শান্ত কিন্তু গভীর নিশিতার দিকে তাকিয়ে….
-ওর প্রতি আমার কতটা অনুভুতি কাজ করে তা আমি নিজেও জানি না ওর জন্য আমার ভালোবাসা এক সমুদ্রের ও গভীর এক কথায় ও অদ্ভুত মায়াবী লাগে, যা আমি অন্য কারো মধ্যে দেখি না। ও ভালোলাগার পর আর কাউকে ভালো লাগেনি..

মাহদির কথা শুনে রাদিফ এর ঠোঁট হাসি ফুটে যায়। সে ও তার প্রিয়সীর দিকে একপলক তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে। (মিলি দিকে তাকিয়ে )তার প্রিয়সী তো তাকে দেখলে দূর দূর হয়।সে ও তো তার প্রিয়সীকে ভালোবাসে কবে বুঝবে তার প্রিয়সী তার অনুভুতি কে..
এভাবে অনেক টা সময় কেটে গেল। সন্ধ্যায় নিশিতা কিছু একটা ভেবে। মিলি কে বললো

নিশিতা
-মিলু ওই ছেলে গুলোর ব্যাপার টা ভাইয়াকে জানাবো। চল আমার সাথে ভাইয়ার রুমে।

মিলি কিছু টা চিন্তিতো হয়ে
-ব্যাপার টা যদি আরো বড়ো হয়ে যায়

নিশিতা
-ওরা মোটেও সুবিধার না তাই আমাদের উচিৎ ভাইয়াকে জানিয়ে রাখা। আর আমি আপু সাথে শেয়ার করিছি আপু ও এ কথা বলেছে ভাইয়াদের জানাতে..

এ বলে পা ভারালো নাদিফ এর রুমের উদ্দেশ্যে।নাদিফ এর রুমে এর দরজা সামনে এসে টোকা দিল…
-ভাইয়া তুমি কি রুমে

-হ্যা কিছু বলবি

নাদিফ আওয়াজ শুনে ওরা ভিতর গেল সেখানে রাদিফ আর মাহদি কেও দেখতে পেল..

-কিছু বলবি

-হ্যা ভাইয়া তোমরা ব্যাস্ত না হলে একটু কথা ছিল (চোখ নিচু করে ঠোঁট কামর দিয়ে যত যা ই হোক এ সব ব্যাপার বড় ভাইদের সামনে বলতে তো ভয় লাগেই)

নাদিফ বুঝতে পারে ব্যাপারটা বলতে নিয়ে তার বোন অস্বস্তিবোধ করছে কারণ তার বোন তো এমন না সে নির্দ্বিধায় সব বলে। তাই নাদিফ শান্ত স্বরে বলে….

-কি হয়েছে বল ভাইকে।কোন সমস্যা?

নিশিতা এবার একটু শান্ত হয়ে সব খুলে বলতে লাগলো।সবটা নাদিফ আর মাহদি শান্ত হয়ে শুনলে ও রাদিফ পারে না। সে রাগে রীতিমতো চিৎকার দিয়ে ই বলে
-ওই শুয়োরের বাচ্চা গুলো এতো কিছু করেছে তোমার সাথে খুন করে ফেলবো ওদেরকে বলো নি কেন আমাকে (মিলির দিকে তাকিয়ে)।

মিলি নিচু স্বরে
-আ..মি আমি ভয় পেয়ে গে গেছিলাম তাই কিছু বলতে পারিনি।

-এ জন্য ও দিন আমার সাথে ওকে বাসায় ড্রপ করেছিস তাই না। বুঝলাম ও ভয়ে বলেনি তুই কেন তখন বললি না শুয়োরের বাচ্চাদের ওইখানে কবর দিয়ে আসতাম ((নিশিতার দিকে তাকিয়ে)

-ভাইয়া আমার মনে হয়েছিল তখন বললে পরিস্থিতি বাজে হয়ে যেত তাই( মাথা নিচু করে নিচু স্বরে)

নিশিতা বলতে বলতে রাদিফ দৌড়ে বের হয়ে যায় ওর পিছনে নাদিফ আর মাহদি ও ছুটে চলে যায়। নিশিতা আর মিলির বুঝতে বাকি নেই ছেলে গুলোর আজ খবর আছে ভাইদের রাগ সম্পর্কে জানে ওরা।ওরা ভয়ে দৌড় দিয়ে নিধির রুমে যায় আর ওকে সব বলে।নিধি ওদেরকে শান্ত করে বলে টেনশন নিতে না মাহদি তো আছে ই খারাপ কিছু সে হতে দিবে না।আর না বললে তখন যদি খারাপ কিছু হতো তাই বলে দেওয়া টা ই ঠিক হয়েছে…
রাতে ভাইয়ারা লেট করে এসেছে আর আমাদের ও সাহস হয়ে ওঠে নি কিছু জিজ্ঞেস করার..

চলবে……