#তোর_প্রেমের_পরশে
#পর্ব_১
#লেখনিতে_ছনিয়া_তাবাচ্ছুম_অনি
“শশুর আব্বা আমি আপনার ছেলে কে ভালোবাসি। আপনার ছেলে কে আমার সাথে বিয়ে দেবেন শশুর আব্বা ? অনেক সুখে রাখবো।আপনি কি রাজি আছেন শশুর আব্বা?”
সুমিষ্ট সুরেলা কণ্ঠ স্বরে আক’স্মি’ক এমন একটা কথা শুনে চমকে ওঠেন পঞ্চাশ ঊর্ধ্ব এক ব্যক্তি। তার সামনে হাসি মুখে দাঁড়িয়ে আছে এক অষ্টাদশী রমনী। টানা টানা চোখ, চোখের মণি নীলচে, চিকন ফর্সা , হাসলে টোল পড়ে গা’লে। হাস্যজ্বল মুখে দাঁড়িয়ে আছে দেখতে অপরুপ সুন্দর লাগছে। তিনি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করেন,
“- কে মা তুমি? আমাকে চিনো? আমার ছেলে আছে তুমি কেমনে জানলে?
লোকটার কথা’য় তরী’র হাসি মুখ টা চুপসে গেলো। লোকটা তরী’র চুপসে যাওয়া মুখ দেখে বলল,
“- কি হলো মা? কিছু বলছো না যে? তুমি আমাকে চিনো?
তরী বোকা বোকা হেঁসে বলল,
“- আপনাকে আমি চিনি না,জানি না। শুধু জানি আমি আপনার ছেলেকে ভালোবাসি। আপনি আমার শশুর আব্বা। আপনার ছেলে কে আমি বিয়ে করব? তার সাথে সুখে সংসার করব? বলেই দৌড় লাগায় তরী। তরী প্রাণ পণে দৌড়ে পালালো লোকটার সামনে থেকে। লোকটা অবাক হয়ে তরী নামের মেয়েটার দিকে তাকিয়ে আছে। লোকটা অটোমেটিক হেঁসে ওঠে। তিনি বুঝতে পারেন মেয়েটা দুষ্টুমি করে তাকে এত গুলো কথা বলেছে। কিন্তু যাই বলুক না কেন? মেয়েটা কে তার খুব ভালো লেগেছে। কিন্তু মেয়ে টা কে? আর কেনই বা এতগুলো কথা তাকে বলে গেলো? কি তার উদ্দেশ্য?
★★★
তরী ক্যান্টিনে এসে হাঁপাচ্ছে। তরী’র তিন বান্ধবী তরী কে পানি’র গ্লাস এগিয়ে দেয়। তরী এক নিঃশ্বাসে পানির গ্লাস শেষ করে ফেলে। তরী একটা চেয়ার টেনে ধপাস করে বসে পরে। তরী’র বান্ধবী বন্যা বর্ষা হিরা। তিনজনে তরী’র অবস্থা দেখে হাসছে। তরী রাগি দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,
“- খবরদার তোরা হাসবি না। তোদের জন্য আমার আজ এই অবস্থা।
তরী’র কথা’য় হাসি থামিয়ে দেয় তিনজনে। কিন্তু মুখ চেপে ধরে হাসছে। মুখ চেপে হাসতে দেখে তরীর মেজাজ খারাপ হয়ে যায়। চেয়ার থেকে উঠে তিনজনের পিঠে ধরাম ধরাম করে কিল মেরে দেয়। আকস্মিক তরী’র মাইরে হা হয়ে যায়। বর্ষা লাফ দিয়ে চেয়ার থেকে উঠে দুরে গিয়ে দাঁড়ায়। পিঠ ডলতে ডলতে বলল,
“- শা*লী কামডা করলি কি? এমনে কেউ মারে ভাই? কি ব্যথা টাই না লাগল।
তরী দাঁত কেলিয়ে বলল,
“- হাসার সময় মনে ছিল না। তোদের জন্য আমার মানসম্মান ইজ্জত সব গেলো। ওই আঙ্কেল টা কি ভাবল? আমি বোধহয় সত্যি সত্যি তার ছেলে রে ভালোবাসি।৷ আরে আমি শিওর জানি ও না তার ছেলে আছে কি না? সত্যি যদি ছেলে থেকে থাকে তাহলে তার অবস্থা টা কি হবে ভাবতে পারছিস?
বন্যা তরী’র মাথায় গাট্টি দিয়ে বলে,
“- আপনারে ডেয়ার নিতে বলছিল কে ম্যাডাম? আমরা আপনারা কইলাম ম্যাডাম আপনি ডেয়ার নিন। ডেয়ার না নিলে ছাড়ুম না।
“- দ্যাখ ভাসানচর মেজাজ খারাপ করিস না। আমি ডেয়ার নিলাম বলে কি তোরা এই কামডা করবি? অন্য কিছু ও তো দিতে পারতি। ( বন্যা কে ভালোবেসে ভাসানচর নামে ডাকে তরী)
হিরা বলল,
“- আমরা ডেয়ার দিলাম আর তুই সেটাই মেনে নিলি ক্যান। আমাদের বলতে পারতি না। দোস্ত প্লিজ এমন ডেয়ার দিস না ভালো কিছু দে। আমাদের দয়ার শরীর আমরা তোকে অন্য ডেয়ার দিতাম। আর বাই দ্য হয়ে ওই আঙ্কেল টা কি তোকে কিছু বলছে?
তরী মুখ কালো করে বলে,
“- না। কিছু বলেনি কিন্তু আমাকে কি ভাবলো বল? নিশ্চয় খারাপ মেয়ে ভাবছে। আর এই কথা যদি আমার বাপ জানতে পারে তাইলে আমি শ্যাষ বান্ধপী। আমার আর রক্ষে নেই। কেউ বাচাতে পারবে না। আমার বাপে কইবে,
“- তরী আমি তোমাকে এসব করতে ভার্সিটিতে পাঠিয়েছি? তুমি তৌফিক তালুকদারের মেয়ে। তোমার থেকে এটা আশা করিনি। তুমি আমার একমাত্র মেয়ে। আমার সব আশা ভরসা সব শেষ করে দিলে। তোমাকে এর শাস্তি পেতে হবে। তোমার আর পড়াশোনা করতে হবে না। তার থেকে ভালো তোমাকে ভালো ছেলে দেখে বিয়ে দিয়ে দেই।
তরী কথা গুলো বলতে বলতে কেঁদে দেয়। সহসা তরী’র কান্নায় ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায়। তিনজনে একে অপরের মুখের দিকে করুন চোখে তাকায়। তরী চেয়ারে বসে পাগলে প্রলাপ বকে,
“- আমি বিয়ে করতে চাই না আব্বু। আমি তোমার লক্ষী মেয়ে হয়ে থাকবো। তুমি যা বলবে আমি তাই শুনবো। তবুও ও বিয়ে দিও না।
ক্যান্টিনে কয়েকজন মানুষ আছে। সবাই প্রায় ক্লাসে চলে গেছে। যারা আছে তারা তরী’র দিকে বাঁকা চোখে তাকাচ্ছে। তরী’র তিন বান্ধবী মহা বিপদে পরে গেছে। তরী’র এই পাগলে প্রলাপ শুনে তিনজনের বেহুশ হবার পালা কিন্তু তা আর হইলো না। তার আগের একটা গম্ভীর কণ্ঠস্বর পেয়ে আঁতকে ওঠে। তরী’র সে দিকে হুশ নেয়। বাকী তিনজনে ভয়ে একে অপরের হাত ধরে আছে। ক্যান্টিনে ঢুকতে ঢুকতে গম্ভীর কণ্ঠে বলল,
“- এখানে কি সার্কাস হচ্ছে নাকি অন্য কিছু ? ক্লাস ফাকি দিয়ে এখানে বসে ন্যাকা কান্না করছো কেন? এটা কি কান্নার জায়গা। বিয়ে করবে না বাসায় বলে দিলেই তো হয় আমার বয়ফ্রেন্ড আছে । এখানে ড্রামা করার কোনো মানে হয় না।
হঠাৎ পুরুষালি কন্ঠস্বর পেয়ে ভয়ে চমকে ওঠে তরী। ভয়ার্ত চেহারায় পিছনে ফিরে তাকায়। পিছনের মানুষ টাকে দেখো তরী ভয়ে ছিটকে গিয়ে বর্ষার পিছনে দাঁড়ায়। এই একটা পুরুষ যাকে দুচোখে সহ্য হয় না তরী’র। প্রিন্সিপালের মুখে শুনেছে ইনি নাকি এক মাসের জন্য তাদের ক্লাস নিবে। কিন্তু যেদিন থেকে এসেছে সেদিন থেকে তরী’র লাইফ টা হেল করে দিচ্ছে। কারণে অকারণে সমসময় ওকে প্রবলেমে পড়তে হচ্ছে।
তরী কে ভয়ে বর্ষার পিছনে লুকাতে দেখে বলল,
“- এই মেয়ে সামনে আসো। লুকাচ্ছো কেন?
তরী তবুও সামনে আসে না। তরী জানে সে সামনে আসলে তাকে আরো কটু কথা শুনাবে। তরী’র সামনে যিনি দাঁড়িয়ে আছেন। তিনি হলেন,কাহার বিন চৌধুরী। তাদের ভার্সিটিতে একমাসের জন্য এসেছে। দেখতে যেমন হ্যান্ডস্যাম তেমনি রাগি। সবসময় ত্যাড়া কথা বলে। মুখে কোনো সময়ই ভালো কথা আসে না। তরী’র মনে হয় এই লোক টাকে জন্মের সময় মুখে মধুর বদলে করলার জুস দেওয়া হয়েছিল। না হলে একটা মানুষ কেমনে পারে এত তিতা কথা কইতে। তিন দিন হলো এসেছে এর মধ্যে এমন কিছু করেন নাই যার জন্য তরী কে বিপদে পড়তে হয় নাই।। তরী’র ভাবনার মাঝে কাহার বিন চৌধুরী’র ধমকে কেঁপে ওঠে।
“- হেই ইউ, কথা কানে যায় না সামনে আসো বলছি। আর যদি না আসো তাহলে এখনই তোমার গার্ডিয়ান কে কল করব?
তরী চোখ বড়বড় করে কাহারের দিকে তাকায়। লোকটা তাকে ব্ল্যাকমেইল করছে। তরী ভয়ে ভয়ে কাহারের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। তরী মাথা নিচু করে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে৷ কাহার একবার তরী’কে পর্যন্তবেক্ষণ করে বাঁকা হেসে বলে,
“- একটু আগে কাঁদছিলে কেন? ছ্যাকা ঠ্যাকা খাইছো নাকি বাসা থেকে জোর করে বিয়ে দিয়ে দিচ্ছে? কোনটা?
কাহার স্যারের কথায় বিস্ময়ে তরী’র মুখ টা হা হয়ে যায়। সাথে উপস্থিত বর্ষা বন্যা হিরা’র ও। কিন্তু ভয়ে কিছু বলতে পারছে না। তরী’র খুব রাগ হলো? কাহার স্যার তাকে কেন পারসোনাল প্রশ্ন করবে। তরী’র গাল দুটো রাগে লাল হয়ে যায়। নিজের রাগ কন্ট্রোল করার জন্য নিজের জামা নিজে খামচে ধরেছে। তরী কে চুপ থাকতে দেখে কাহার আবার সেম প্রশ্ন করে। তরী এবার ভয় কে জয় করে বলে ফেলে,
“- আপনি কি আমার স্যার? যদি স্যার হয়ে থাকেন তাহলে ছাত্রীর কাছে এটা ক্যামনে জিজ্ঞেস করতে পারেন? আপনার কোনো রাইট নেই আমার ব্যক্তিগত জীবনে নাক গলানোর। আপনাকে এই প্রশ্নের উত্তর দিতে আমি বাধ্য নই। আপনি স্যার হিসেবে যদি বলতেন আমি কাদছিলাম কেন? তাহলে আমি অবশ্যই আপনাকে তার উত্তর দিতাম। একদমে কথা গুলো বলে নিশ্বাস নেয় তরী।
কিন্তু তরী কথা গুলো বলার ওর বুঝতে পেরেছে সে কত বড় ভুল করেছে। যে ভুলের মাশুল তাকে একটু একটু করে দিতে হবে। তরী ভয়ে কাহার স্যারের দিকে তাকাতে পারছে না। কাহার তার দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। তরী ভয়ে শুকনো ঢোক গিলে। একসময় তরী ভয়ে জ্ঞান হারিয়ে নিচে লুটিয়ে পরে। হঠাৎ তরী’র জ্ঞান হারাতে দেখে বর্ষা তরীী বলে চেচিয়ে ওঠে।
চলবে ~