#তোর_প্রেমের_পরশে
#পর্ব_২
#লেখনিতে_ছনিয়া_তাবাচ্ছুম_অনি
একসময় তরী ভয়ে জ্ঞান হারিয়ে নিচে লুটিয়ে পরে। হঠাৎ তরী’র জ্ঞান হারাতে দেখে বর্ষা তরীী বলে চেচিয়ে ওঠে। তরী’র তিন বান্ধবী দৌড়ে গিয়ে তরী কে ধরে। সহসা এমন হওয়ায় কাহার আশ্চর্য হয়ে যায়। কাহার দ্রুত পায়ে এগিয়ে এসে তরী কে পাঁজা কোলে তুলে নেয়। তারপর সোজা তরী কে নিয়ে একটা চেয়ারে বসায়। কাহার বর্ষা কে বলে পানি আনতে। স্যারের কথা মতো বর্ষা পানি আনতে যায়। তরী’র তিন বান্ধবী উদ্বিগ্ন হয়ে পরে। বর্ষা পানি আনতে কাহার দ্রুত তরী’র মুখে পানি ছিটিয়ে দেয়।
তরী চোখ পিটপিট করে তাকায়। আশেপাশে ভালো করে তাকিয়ে দেখে তাদের পাশে বেশ ক’জন মানুষ জড়ো হয়ে গেছে। তরী সোজা হয়ে বসে। তরী’র সামনের চেয়ারে পায়ের উপর পা দিয়ে আরাম করে বসে আছে। তরী কাহারের দিকে তাকাতেই ভয়ে শুকনো ঢোক গিলে। তরী মনে কাহারের চৌদ্দ গুষ্টি উদ্ধার করতে ব্যস্ত। তরী’ কে ডেকে ওঠে কাহার। তরী চমকে উঠে বলে,
“- ইয়েস স্যার।
কাহার বাঁকা হাসলো। তারপর বলল,
“- অজ্ঞান হলে কেন?
“- আসলে স্যার।
“- এখনই ক্লাসে যাবে। ফারদার যদি দেখেছি ক্লাস মিস দিয়ে ভন্ডামি করছো তাহলে তোমার খবর আছে। শুধু তুমি না তোমার এই সঙ্গী গুলোও বাদ যাবে না।
বর্ষা বন্যা হিরা তিনজনে ভয়ে তরী’র হাত টেনে ধরে ক্যান্টিন থেকে বেড়িয়ে যায়। তরী যাওয়ার আগে কাহারের দিকে রক্তচক্ষু চোখে তাকিয়ে গেছে। তরী’র চাহুনি দেখে মনে মনে হাসে কাহার। তরী চলে গেলে কাহার ও চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ায়।
★★★
তরী বাসায় ফিরে ড্রয়িংরুমে বসেছে তো বসেইছে উঠার নাম গন্ধ নেয়। তরী’র মা স্বপ্না বেগম অনেক্ক্ষণ ধরে তরী কে বসে কিছু ভাবতে দেখছেন। তরী’র কোনো নড়চড় নেই দেখে এগিয়ে এসে মেয়ের পাশে বসেন। তরী’র ঘা’ড়ে হাত রাখতেই চমকে বলে,
“- কে….?
স্বপ্না বেগম অবাক হয়ে বললেন,
“- আরে আমি তোর মা।
তরী হালকা হেঁসে জবাব দেয়,
“- ওহ মা তুমি।
“- হ্যাঁ। তোর কি হয়েছে মা। ভার্সিটি থেকে আসার পর থেকেই দেখছি তুই এমন আনমনা হয়ে বসে আছিস। কিছু একটা ভাবছিস।
“- তেমন কিছু না মা।
“- দ্যাখ তরী,আমি জানি কিছু একটা হয়েছে। যখনই কিছু হয় তুই তখন থেকে সেটা নিয়ে ভাবতে থাকিস। সেই ছোটো বেলা থেকেই এমন তুই। তাই এখন কোনো রকম মিথ্যা না বলে বল তো কি হয়েছে মা?
“- তোমার থেকে কিছু লুকানো যায় না। তুমি সবসময় বুঝে ফেলো।
“- মায়ে রা সব বোঝে মা। এখন বল কি হয়েছে?
তরী সকালের সব ঘটনা খুলে বলে তার মা। তরী’র মা শুনে হাসতে হাসতে পেট চেপে ধরে। তার মেয়ে টা বড্ড দুষ্টু। তরী করার আগে কিছু ভাবে না। করা শেষ তারপর ই সব ভাবে। তিনি এত বলেন তরী
“ভাবিয়া করিও কাজ, করিয়া ভাবিও না কাজ”। তবুও তরী শোনে না। একই কাজ করেই যায়।
তরী রাতে বান্ধবী দের সাথে ভিডিও কলে কথা বলছে। তরী সবাই কে উদ্দেশ্য করে বলে,
“- এই তোদের একটা কথা বলব কিন্তু বলা হয়নি।
তিনজনে বলে,
“- কি কথা রে তরী?
“- বান্ধবী গণ কাহার স্যার রে ঘোল খাইয়ে দিছি।
“- মানে..?
“- মানে টা সহজ বান্ধবী।
“- তাড়াতাড়ি ক রে ভাই। কাহারের স্যারের মতো মানুষ কে তুই ঘোল খাওয়ালি কি করে ভাই?
তরী শয়তানি হেঁসে বলল,
“- ওই বজ্জাত ইতর স্যার কে আমি ছাড়া পৃথিবীর আর কোনো প্রাণী ঘোল খাওয়াতে পারবে না মেরি জান্সরা। আমি সকালে যে অজ্ঞান হলাম সেটা কি আদোও অজ্ঞান হইলাম।
“- তরী তুই কি জ্ঞান হারাবার ভান করছিলি। মানে সবটা ড্রামা।
“- ইয়েসস। আসলে কাহার স্যার যা শুরু করছিলো। আমি হ্যান্ডেড পার্সেন্ট শিওর ছিলাম। স্যার যে করেই হোক আমার পেট থেকে কথা বের করবেই। সেজন্য ই তো আমি জ্ঞান হারাবার নাটক করছিলাম। তা না হলে কি যে হতো ভাবতেই আমার হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছে বইন। শোন কথাটা যেন কেউ না জানে।
“- কোন কথাটা বনু। যা কেউ জানবে না। কথাটা বলতে বলতে রুমে প্রবেশ করে তরী’র ভাই তিহান। বড়ো ভাই কে দেখে তরী কল কেটে বোকা বোকা হেঁসে বলে,
“- তেমন কিছু না ভাইয়া। আসলে ফ্রেন্ড রা মিলে একটা প্ল্যান করছিলাম তাই আর কি।
“- ওহ আচ্ছা। আমি আবার ভাবলাম কি না কি কান্ড করেছিস তাই আবার লুকানোর জন্য বলছিস।
“- তুমি তো ঠিকই ধরেছো ভাইয়া৷ তরী বিড়বিড় করে বলে। সিফাত বুঝতে না পারায় জিজ্ঞেস করে,
“- কিছু বললি।
“- না ভাইয়া কিছু বলিনি।
“- আম্মু’র কাছ থেকে শুনলাম কারে নাকি আজ বাঁশ দিয়েছিস।
“- যাহ্! আম্মু বলে দিলো? কামডা করল কি?
“- বলেছে তাতে প্রবলেম কোথায়?
“- আম্মু যদি আব্বু কে বলে দেয় তখন কি হবে ভাইয়া? আব্বু আমাকে আস্ত রাখবে নানে ভাইয়া।
“- রিল্যাক্স বনু। আমি আম্মু কে বলে আসছি আব্বু কে যেন না বলে।
“- থ্যাঙ্কিউ ভাইয়া বলে জড়িয়ে ধরে তিহান কে। তিহান সযত্নে বোন কে আগলে নেয়। তার বোনটা যে বড্ড আদুরে।
দুই ভাই বোন আরো কিছুক্ষণ আড্ডা দেয়। তারপর খাবার খাওয়ার জন্য নিচে নামে।
——–
তৌফিক তালুকদার কিছুক্ষণ আগে বাসায় এসেছেন। ড্রয়িংরুমে বসে সহধর্মিণীর সাথে গল্প করছেন। তরী আর তিহান বাবার সামনে সোফায় বসে। তৌফিক তালুকদার মেয়ে কে ডেকে কাছে বসান। তরী গিয়ে বাবার পাশে বসে। তৌফিক তালুকদার তরী’র মাথায় হাত বুলিয়ে বলেন,
“- তরী মা ভার্সিটি কেমন লাগছে? নতুন নতুন সবকিছু চিনতে জানতে একটু অসুবিধা হবে পরে সব ঠিক হয়ে যাবে।
“- জ্বি আব্বু, সবকিছু ঠিক ঠাকই আছে তবে একটা স্যার আছে। যে স্যার টা খুব খারাপ। শুধু আমার পিছনে লাগে।
“- কি বলিস মা। স্যারের নাম কি? আর তোকে কি বলেছে?
তরী জিভে কামড় বসিয়ে দেয়। সে বাবার সামনে ভুল কথা বলে ফেলেছে। এখন কি করবে? তরী বুদ্ধি খাটিয়ে বলল,
“- আসলে তেমন কিছু না আব্বু। তুমি বলো নতুন নতুন একটু আধটু পড়া না পাড়লে কি হয় বলো? মাঝে মাঝে ক্লাসে একটু কথা বললেই দাঁড় করিয়ে রাখে।
তিহান কথার মাঝে বা হাত ঠেলে বলে,
“- যে এই কাজ টা করে সে বেশ করেছে। ভার্সিটি তে যাশ পড়াশোনা করতে বাধড়াবি না বনু।
তরী গাল ফুলিয়ে বলল,
“- ভাইয়া তুমিও দেখি স্যারের মতো কথা করছো?
তৌফিক তালুকদার বললেন,
“- বাদ দাও। তরী মা মন দিয়ে পড়াশোনা করবে। স্বপ্না তুমি খাবার দাও।
★★★
বিলাসবহুল এক বাড়িতে দাঁড়িয়ে আছে এক যুবক। পড়নে কালো টাউজার আর কালো টিশার্ট। চোখ দুটো ওই দুর আকাশের দিকে নিক্ষেপ করা। মাঝে মাঝে রাস্তা দিয়ে চলাচল করা গাড়ি গুলো দেখছে। এক হাতে ফোন আরেক হাত টাউজারের পকেটে। কানে ব্লুটুথ। ফোনে কারোর সাথে কথা বলছে। কথা বলছে আর হাসছে। হ্যাঁ লোকটা কাহার বিন চৌধুরী। বাবা মা’র একমাত্র সন্তান। কাহারের আর কোনো ভাই বা বোন নেই।
কাহার ফোন রেখে বেলকনির গ্রিল ধরে আকাশের দিকে তাকায়। আকাশ টা আজ বেশ খোলাসা। পরিষ্কার আকাশে তারা গুলো চকচক করছে। হাজার তারা’র ভিড়ে একটা চাঁদ। ঠান্ডা পরিবেশ। বিকালে বৃষ্টি হওয়ার পর থেকে ঠান্ডা বাতাস হচ্ছে। গরমের ভাব কিছুটা কেটে গেছে। কাহার আকাশের দিকে তাকিয়ে আনমনে বলল,
“আমি যখন তাকাই ওই দূর নীলিমার পানে,
তখনই হারিয়ে যাই তোমার কল্পনাতিতে।”
চলবে~