তোর প্রেমের পরশে পর্ব-০৩ এবং শেষ পর্ব

0
2

#তোর_প্রেমের_পরশে
#পর্ব_৩/শেষ
#লেখনিতে_ছনিয়া_তাবাচ্ছুম_অনি

পাত্র পক্ষের সামনে বসে কাঁদছে তরী। কেঁদে কেঁদে চোখ মুখ ফুলিয়ে ফেলেছে। নিজের ভুলের মাশুল দিতে হচ্ছে আজ। তরী’র পাশে বসে তাকে সান্ত্বনা দিচ্ছে তিহান। তরী দের সামনে বসে আছে সেদিনের সেই বয়স্ক ব্যক্তি। তার পাশে বসে আছে তার স্ত্রী ও ছেলে কাহার বিন চৌধুরী। হ্যাঁ সেদিনের ওই লোকটা ছিল কাহারের বাবা। সেদিন তিনি ভার্সিটিতে এসেছিলেন একটা কাজে তারপর তিনি খোঁজ নিয়ে দেখেন তরী ই সেই মেয়ে । যাকে তিনি খুব ভালো করে ই চিনেন।

কাহার গম্ভীর মুখে বসে আছে। তরী’র অহেতুক কান্না য় বিরক্ত হয়ে গেছে। বড়োদের সামনে কিছু বলতেও পারছে না। কাহারের মা সখিনা বেগম তরী’র কাছে এসে বসেন। তিনি তরী’র হাত ধরে বললেন,

“- তরী মা তুমি কাঁদছো কেন? কাঁদে না মা। তুমি মনে করবা আমি তোমার আরেকটা মা। আমাদের বাড়ি টা কে নিজের বাড়ি মনে করবা। তরী মা মেয়ে দের জীবনই এমন। বাবার বাড়ি ছেড়ে স্বামীর বাড়ি যেতেই হয় মা।

তরী ফুপিয়ে বলল,

“- আমি এসবের জন্য কাঁদছি না আন্টি।

তরী’র কথা’য় কাহারের ভ্রু কুঁচকে আসে। কাহারের মা সখিনা বেগম অবাক হয়ে বললেন,

“- কিসের জন্য কাঁদছো তুমি?

“- আপনার ছেলে ভালো না আন্টি। খুব পঁচা! শুধু আমার পিছনে লাগে। কারণে অকারণে সমসময় আমার পিছনে লাগে। উনার জন্য আমি কোথাও গিয়ে শান্তি পায় না। সবসময় শুধু ভয় দেয়। অমক করব তমক করব।

তরী’র কথা’য় তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকায় কাহার। কাহারের তাকানো দেখে সখিনা বেগম ইশারায় শান্ত হতে বলেন। কাহারা কিছু টা শান্ত হয়। তিহান উচ্চস্বরে হেঁসে ওঠে। ভাগ্যিস এখানে তিহান আর কাহারের বাবা নেই। তিহানের হাসি দেখে রাগী চোখে তাকায় কাহার। তিহান চুপ করার বদলে আরও বেশি হাসে। ভাইয়ের হাসি দেখে তরী বলল,

“- ভাইয়া তুমি হাসছো? কোথায় লোকটা কে আচ্ছা করে ধোলায় দিবে তা না হাসছো?

কাহার আর চুপ থাকতে পারল না। সোফা হতে দাঁড়িয়ে বলল,

“- তিহান তোর বোন কে চুপ করতে বল নইলে কিন্তু?

তরী আশ্চর্য হয়ে বলল,

“- আপনি আমার বাড়িতে দাঁড়িয়ে আমার ভাইয়ার সাথে তুই তুকারি করছেন? আপনার সাহস তো কম না।

কাহার বাঁকা হেসে বলে,

“- আমার সাহসের কি দেখেছো তুমি?

তরী দাড়িয়ে যায়। দাঁতে দাঁত চেপে বলল,

“- আপনাকে তো আমি….

কাহার ভ্রু নাচিয়ে বলল

“- কি করবে?

তরী সোজা কাহারের কাছে এসে কাহারের শার্টের কলার ধরে বলল,

“- শেষ করে দেব। আপনি কি ভেবেছেন আপনাকে আমি ভয় পাই? মোটেও না। আমি তরী তালুকদার। তরী তালুকদার নেহাৎ ভালো মেয়ে এজন্য কাউকে কিছু বলে না কিন্তু যখন দেখে বেলাইন তখন কিন্তু থেমে থাকে না।

স্বপ্না বেগম সখিনা বেগম তিহান তিনজনই অবাক। তরী এসব কি করছে? তবে সখিনা বেগম আয়েশ করে সোফায় বসেন। তার খুব ভালোয় লাগছে। তাকে বসতে দেখে স্বপ্না বেগম ও তার পাশে বসে জিজ্ঞেস করেন,

“- আপা আপনি কিছু না বলে বসলেন কেন? তরী এবার বেশি বেশি করছে। ওকে থামান আপনি।

তিনি মুচকি হেঁসে বললেন,

“- আপা আপনিও আমার সাথে বসুন। শুধু দেখেন এরা দু’জন কি করে।

“- এসব আপনি কি বলছেন?

“- সামনে দেখেন।

স্বপ্না বেগম সামনে তাকিয়ে হা হয়ে যান। কারণ তরী আর কাহার তুমুল ঝগড়া শুরু করছে। তিহান থামানোর চেষ্টা করে ও পারছে না। শেষ মেষ সোফায় গিয়ে বসে। তিহান দুষ্টুমি করে ফোনে ভিডিও অন করে।

কাহার এক হাত দিয়ে দুহাত ধরে আরেক হাত দিয়ে তরী’র মুখ চেপে ধরে বলে,

“- যা যা বলবে দ্রুত বলো? পাঁচ মিনিট সময় দিচ্ছি। তরী উহু উহু করছে হাত সরানোর জন্য।

মিনিট পাঁচেক পর কাহার তরী’র মুখ আর হাত ছেড়ে দিয়ে সোফায় বসে। কাহার কে আসতে দেখে তিহান ফোন লুকায় ফেলে। তরী রক্ত চক্ষু চোখে কাহারের দিকে তাকিয়ে আছে। তারপর দাত খিটমিট করে বলে,

“- আপনাকে বিয়ে করব না মানে করব না। এবার আমি রুমে যাচ্ছি দেখি কে আমাকে বের করে আনতে পারে। বলে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে থাকে। সত্যি সত্যি তরী কে চলে যেতে দেখে কাহার দৌড়ে তরী’র কাছে গিয়ে হাত টেনে ধরে। হাতে টান পড়তে পিছনে ফিরে কাহার কে দেখে রেগে যায়। কাহার বাকা হেসে বলে,

“- কোথায় যাচ্ছো প্রিয়তমা!?

তরী সুরু চোখে কাহারের দিকে তাকায়। তরী আশেপাশে তাকিয়ে দেখে তারা এখন দোতালায় আছে। নিচে থেকে কাউকে দেখা যাচ্ছে না। তরী ভয় ভয় চোখে কাহারের দিকে তাকিয়ে বলল,

“- আমার হাত ছেড়ে দিন। আমার ভাল্লাগছে না। আমি রুমে যাবো।

“- আমাকেও নিয়ে চলো।

তরী করুন কন্ঠে বলল,

“- দেখুন স্যার,, এসব নাটক ভালো লাগছে না আর। কি জন্য এত ড্রামা করছেন? আপনাকে আমার সহ্য হয় না, ভালো লাগে না। আপনার বাপে আমাকে বিয়ে করতে বলল আর আপনি রাজি হয়ে গেলেন? আপনি তো আমাকে সহ্য করতে পারেন না? তাহলে কেন আমাকে বিয়ে করতে চাইছেন স্যার?

কাহার তরী’র চোখের দিকে গভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,

“- ভালোবাসি তাই!

তরী চমকে চমকে উঠল। কাহার আবার বলল,

“- তোমাকে ভালোবাসি! খুব খুব ভালোবাসি! তাই জন্য ই তো তোমাকে বিয়ে করতে চাইছি।

তরী কাঁপা কাঁপা গলায় বলল,

“- আপনার মাথা ঠিক আছে স্যার? কিছু মিছু খেয়ে আসছেন নাকি? উল্টাপাল্টা কথা বলছেন কেন?

কাহার হাসল। আচমকা তরী কে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে। তরী ভয়ে চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে নেয়। কাহার অপলক তরী’র দিকে তাকিয়ে আছে। তরী চোখ মেলে তাকায়। কাহার কে তাকিয়ে থাকতে দেখে বলল,

“- স্যার আপনি আমায় স্পর্শ করেছেন কোন? এটা কিন্তু খুব অন্যায়।

কাহার আবার হাসল। কাহারের হাসি দেখে বলল,

“- আপনি হাসছেন কেন? হাসার মতো কিছু বলিনি তো?

কাহার তবুও হাসছে। তরী আবার বলে,

“- আপনি দুরে দাঁড়ান স্যার। একজন অচেনা অপরিচিত পুরুষ একটা মেয়ে কে স্পর্শ করতে পারে না। আপনি আমাকে ছাড়েন।

“- স্পর্শ করেছি তাতে কি হয়েছে?

তরী আশ্চর্য হয়ে বলল,

“- আপনি আমাকে অবৈধ ভাবে স্পর্শ করেছেন? তারপর ও বলছেন স্পর্শ করেছি তাতে কি?

“- শোনো মেয়ে আমি তোমাকে হালাল ভাবে স্পর্শ করেছি।

তরী অবাক হয় কাহারের কথায়। তরী’র মুখে অবাকের ছাপ দেখে হাসে কাহার। তারপর আচমকা তরী কে জড়িয়ে ধরে কানের কাছে মুখ নিয়ে বলল,

“- তুমি আমার বিয়ে করা বউ। আর নিজের বউকে স্পর্শ করা হালাল, হারাম নয়। বুঝছো বউ পাখি! নিজেকে অনেক দিন কন্ট্রোল করে রাখছি। সেই ছোটো বেলা থেকে তোমাকে ভালোবাসি!
❝তোর প্রেমের পরশে❞
নিজেকে দেওয়না লাগত। সেই ছোটো বেলায় তুই যখন তোর ওই ছোটো ছোটো হাত দিয়ে আমাকে স্পর্শ করতি না তখন নিজেকে অনেক কষ্টে ঠিক রাখতাম। তুই যখন আদর করতি তখন চোখ বন্ধ করে অনুভব করতাম। তোর হয়তো কিছু মনে নেই কিন্তু আমার সব মনে আছে তরু।

তরী কাহার কে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয়। তরী’র চোখে মুখে হাজার টা প্রশ্ন। কাহার তরী’র দিকে তাকিয়ে আছে। তরী বলল,

“- আপনি এসব কি বলছেন? আর তরু বলে ডাকছেন কেন?

“- তুই আমার তরু পাখি।

“- আপনি যে এত গুলো কথা বললেন তার প্রমাণ কি? আপনার কাছে কোনো প্রমাণ আছে?

“- কাহার যা বলছে সব সত্যি কথা বলছে তরী মা। কথার শব্দ পেয়ে তরী পিছনে ফিরে নিজের বাবা কে দেখে। বাবার মুখে সব সত্যি বলতে শুনে আঁতকে ওঠে তরী। দৌড়ে গিয়ে বাবা কে জড়িয়ে ধরে কেঁদে কেঁদে বলে,

“- আব্বু উনি এসব কি বলছে? আমি নাকি উনার বউ? ও আব্বু তুমি বলো না সব মিথ্যা।

তৌফিক তালুকদার নিশ্চুপ! তরী হাজার টা প্রশ্ন করে। অবশেষে তিনি তরীর মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,

“- কাহার যা বলছে সব সত্যি তরী মা। তোদের ছোটো বেলায় বিয়ে হয়েছিল। তুই যখন ক্লাস ফোরে আর কাহার ক্লাস এইটে তখন তোদের বিয়ে হয়। কাহার যখন একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী তখন ওরা ঢাকায় চলে আসে। তারপর থেকে ওরা ঢাকাতেই থাকে। মাঝে মাঝে ওরা গ্রামে আসত কিন্তু তুই তখন বাসায় থাকতি না। আর থাকলেও কাহার তোর সামনে আসতো না। আমিই নিষেধ করেছিলাম। আমার কথা মতো ও সব করেছে। তারপর অনেক গুলা বছর চলে যায়। আমিও ব্যবসায়িক কাজের জন্য ঢাকা শিফট করি। কাহার তোর জন্য এক মাসের জন্য ভার্সিটিতে জয়েন করেছে। তরী অবিশ্বাস্য কানে সবটা শোনে।

★★

কয়েকদিন পর। এই কয়েক দিনে কাহার তরী কে একটু একটু করে মনে করিয়েছে। তরী’র কিছু কিছু কথা মনে পরেছে। তাকে একজন স্পেশাল কেউ তরুপাখি বলে ডাকতো। তরী’র মাঝে মাঝে মনে হতো তাকে কেউ এই নামে ডাকে। কাহারের কথায় মনে করতে পারে। তরী কাহার কে মেনে নিয়েছে।
কিছুদিন পর খুব ধুমধাম করে দু’জনের চারহাত এক করে দেবে। কাহার আর তরী পিচ ঢালা রাস্তা দিয়ে হাটছে। হাটতে হাঁটতে দাড়িয়ে যায় কাহার। তরীও থেমে যায়। কাহার তরী’র চোখের দিকে তাকিয়ে বুকে হাত দিয়ে বলল,

❝ বুকের একপাশে তুমি আর অন্য পাশে তোমার দেওয়া ভালোবাসা! ❞

~সমাপ্ত ~