শর্তসাপেক্ষে পর্ব-০৩

0
1

#শর্তসাপেক্ষে
পর্ব ৩
Sidratul Muntaz

আজ সন্ধ্যায় দিবার গায়ে হলুদ। তবু সে ইউনিভার্সিটি এসেছে। ঘনিষ্ট বন্ধুদের তার বিয়ের খবরটা জানাবে৷ এতোদিন কাউকে কিছু জানায়নি কারণ বিষয়টা নিয়ে সে নিজেই দোলাচলে ছিল। তবে এখন সে নিশ্চিত, তার বিয়েটা ঈশান সাহেবের সাথেই হবে! এতোকিছুর পরেও লোকটা কিভাবে বিয়েতে মত দিয়েছেন সেই নিয়ে দিবা নিজেই কিছুটা বিস্মিত। অন্যকেউ হলে নিশ্চিত বিয়ে ভেঙে দিতো। আর দিবাও মনে মনে সেটাই চাইছিল।

দিবার ইউনিভার্সিটিতে আসার আরেকটা কারণও আছে৷ রাফিনের সাথে সাক্ষাৎ! তাকে চাকরির বিষয়টা জানাতে হবে। কিন্তু দিবা তাকে নিজের বিয়ের ব্যাপারে কিছু বলবে না।

” তুই আসলেই ওইরকম একটা লোককে বিয়ে করবি দিবা? আর ইউ সিরিয়াস?” মনি নাক সিটকে বলে।

দিবা মৃদু হেসে উত্তর দেয়,” কেন? লোকটার মধ্যে খারাপ কি আছে?”

” খারাপ কি আছে সেটা তো বলতে পারছি না। তবে এই লোক তোর যোগ্য নয়।” শাম্মী বলে স্পষ্ট স্বরে।

” কেন? যোগ্য না কেনো?”

” তুই মাত্র উনিশ বছরের একটা অবিবাহিত সুন্দরী রমনী। আর এই বেটার বয়স কত হবে? কম হলেও ত্রিশ! আবার একটা মেয়েও আছে৷ তোদের কি কোনোভাবে যায়?”

দিবা মৃদু হেসে বলে,” উনার বয়স ত্রিশ না, বত্রিশ।”

রেখা চোখ বড় করে বলে,” সিরিয়াস? দেখে অবশ্য কমবয়সীই লাগে। হি ইজ চার্মিং৷ বাট তবুও তোর সাথে যায় না। কারণ সে অলরেডি ডিভোর্সী। তুই আরও বেটার ডিজার্ভ করিস।”

দিবা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে। মনি তার কাঁধে হাত রেখে জিজ্ঞেস করে,” তুই আবার রাফিনের উপর রাগ করে এমন ভ’য়ানক সিদ্ধান্ত নিচ্ছিস না তো?”

” নাহ, ওর উপর আমার কোনো রাগ নেই। আমি যে সিদ্ধান্ত নিয়েছি সেটা একদম ভেবে-চিন্তেই নিয়েছি। তোরা বিয়েতে আসবি নাকি সেটা বল। না এলেও সমস্যা নেই। তোদের জন্য নিশ্চয়ই আমার বিয়ে আটকে থাকবে না।”

রেখা বলে,” আমরা তো আসবো। কিন্তু তোকে পরামর্শ দিচ্ছি আরেকটু ভেবে দেখার। যেই লোক আগের সংসার টিকিয়ে রাখতে পারেনি, সে আর যাইহোক ফ্যামিলি ম্যান হতে পারে না। আমার তো বেটার চরিত্র নিয়েই সন্দেহ হচ্ছে ”

শাম্মী সমর্থন করে বলে,” একদম ঠিক বলেছিস। প্রথমত সুদর্শন তার উপর বিরাট পয়সাওয়ালা… এদের চরিত্র তো জীবনেও ভালো হয় না। বেটা কনফার্মড ডাউন মার্কেট।”

দিবা হাসে। বান্ধবীরা একই সাথে তার হবু স্বামীর প্রশংসা করছে আবার বদনামও করছে। সে অবশ্য কারো কথা পাত্তা দেয় না। নিজের সিদ্ধান্তে সে অনড়। কপালে যা আছে হবে, সে এখন আর কোনোকিছু নিয়েই মাথা ঘামায় না।

ক্লাস শেষে দিবা একটা রিকশা নিয়ে চলে যায় মিরপুর দশের সেই ঘুপচি গলিতে। যেখানে বেশ পুরনো ধাচের একটা ভবনের দুইতলায় রাফিনদের ভাড়া বাসাটা। সেখানে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকে দিবা। রাফিন কি এখন বাসায় থাকবে? হয়তো টিউশনে গেছে৷ দিবা ফোন করলেই সাথে সাথে ছুটে আসবে সে। কিন্তু তাদের বাড়ির ভেতরে ঢুকতে পারবে না দিবা। রাফিনের পরিবারের কেউই দিবাকে পছন্দ করে না।

মা-বাবাহীন এতিম মেয়ে দিবা। বোনের সংসারে বোঝার মতো থাকে৷ তার মতো পরগাছা ধরণের মেয়েকে নাকি বাড়ির বউ করা যায় না। এমনটাই তো বলেছিলেন রাফিনের মা। দিবা অবশ্য সেসব কথা শুনেও মনে কষ্ট পায়নি। মন-প্রাণ উজাড় করে রাফিনকে সে ভালোবেসেছে৷ তার জন্য দুনিয়ার সব কষ্ট সহ্য করতেও প্রস্তুত৷ কিন্তু যখন রাফিন নিজেই বলল দিবা তার ব্যর্থ জীবনের বোঝা! তখন আর সহ্য করতে পারল না সে।

বেশ কিছুক্ষণ ওখানে দাঁড়িয়ে দিবা ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। রাফিনের সাথে দেখা করতে আর মন চাইছে না। থাকুক সে নিজের মতো। দিবাও থাকবে নিজের মতো, নিজের জীবন নিয়ে ব্যস্ত। তাদের দু’জনের পথ এখন আলাদা।

হাঁটতে হাঁটতে গত কয়েক বছরের স্মৃতিগুলো দিবার মাথায় বিচরণ করে। কত-শত পাগলামি করেছিল তারা একসময়৷ পালিয়ে বিয়ে করার কথাও ভেবেছিল। দুইবার বাসায় না জানিয়ে রাফিনের সাথে রাঙামাটি আর কক্সবাজার ঘুরতেও চলে গিয়েছিল। সবই এখন স্মৃতি।

রাফিন ঘুরে-বেড়াতে ভীষণ পছন্দ করে৷ কখনও জীবন নিয়ে একটু সিরিয়াস হয়নি ছেলেটা। দিবাও তার পাগলামিতে সাপোর্ট দিয়ে গেছে। ভেবেছিল একদিন রাফিন বুঝবে৷ কিন্তু সেই সময় আর আসেনি। ধূসর স্মৃতিগুলো ভাবতে ভাবতে অচিরেই দিবার চোখ ভিজে আসে। রাস্তার কোণে বসে সে ওরনায় নিজের চোখ মুছে। আশেপাশের মানুষ-জন অবাক হয়ে তাকে দেখে।

রাতে দারোয়ানের কাছ থেকে আয়েশা জানতে পেরেছেন দিবার আসার খবর৷ রোজাকে নিয়ে স্কুল থেকে ফিরেই ঈশানের রুমে ঢুকে জিজ্ঞেস করেন,” শুনলাম কালরাতে দিবা এসেছিল?”

ঈশান আয়নায় তাকিয়ে টাই বাঁধতে বাঁধতে নিরেট স্বরে বলে,” হুম, এসেছিল।”

” আমাকে বলিসনি কেন?”

” তখন বললে তোমার সাথে একটা ঝগড়া বাঁধিয়ে বসতাম হয়তো। সেজন্য বলিনি। কিন্তু আপাতত আমার মেজাজ ঠান্ডা আছে। ঝগড়া হবে না।”

” মানে? কি বলতে চাইছিস পরিষ্কার করে বল।”

ঈশান টেবিলে ঝুঁকে ব্যস্ত ভঙ্গিতে ল্যাপটপে কিছু একটা করতে করতে বলে,” তুমি বলেছিলে মেয়েটার সম্পর্কে খোঁজ নিয়েছো। তোমার ভাষায় সে পুরোদস্তুর ভদ্র মেয়ে। অথচ তার একটা বয়ফ্রেন্ড আছে। আমার কাছে বয়ফ্রেন্ডের জন্য চাকরি পর্যন্ত চাইল।”

আয়েশা গালে হাত দিয়ে বলেন,” সাংঘাতিক নির্লজ্জ মেয়ে তো! তুই আমাকে আগে বলবি না? আরে অফিসে ওইদিন দেখে তো ভালোই লেগেছিল মেয়েটাকে। কি সুন্দর পাঁচমিনিটে রোজার সাথে বন্ধুত্ব করে নিল৷ তার কান্না থামিয়ে দিল। ওসব দেখে তুইও তো মেয়েটাকে পছন করেছিলি।”

” হ্যাঁ পছন্দ করেছিলাম। কিন্তু সেজন্য তো তোমাকে একেবারে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যেতে বলিনি।” ঈশান দাঁত কিড়মিড়িয়ে বলে।

আয়েশা ভাইপোর মেজাজ দেখে ঘাবড়ে যান। মলিন মুখে বলেন,” ভেবেছিলাম মেয়েটা দেখতে সুন্দর, পরিবারও ভালো আর তুহিনকেও তুই খুব পছন্দ করিস৷ তার শালি তো ভালোই হবে… এসব ভেবেই প্রস্তাব দিয়েছিলাম। তবে এখন থাক,এই জায়গায় বিয়ে করার কোনো দরকার নেই৷ আমি আজকেই ফোন করে নিষেধ করে দিবো। ওরা তো মনে হয় হলুদের আয়োজনও করে ফেলেছে। কি ঝামেলার ব্যাপার!”

ঈশান শান্ত স্বরে বলে,” তুমি কিচ্ছু করবে না ফুপু। নিষেধ করার প্রশ্নই আসে না৷ আমি এখানেই বিয়ে করব, এই মেয়েকেই করব।”

আয়েশা বিষম খান ভাইপোর জবাব শুনে। তাক লেগে বলেন,” পাগল হয়েছিস তুই? এমন একটা চরিত্রহীন মেয়েকে বিয়ে করে আবার পস্তাতে চাস?”

” রোজা ওকে খুব পছন্দ করেছে। আপাতত আমার কাছে এটাই ম্যাটার করে।”

” দেখিস আবার। পরে আফসোস যেন না হয়।”

ঈশান হেসে বলে,”একই ভুল কেউ বার-বার করে না ফুপু।”

দিবা-ঈশানের বিয়েটা হচ্ছে অত্যন্ত ঘরোয়া আয়োজনে৷ রেবা এই নিয়ে দিবার সাথে কিছুক্ষণ গজগজ করে,” ওই বেটার না হয় দ্বিতীয় বিয়ে। সেজন্য তার শখ-আহ্লাদ কম, বুঝলাম। কিন্তু তোর বিয়েটা তো প্রথম! তবুও কেন এতো সাদামাটা আয়োজন হবে? তুই এটলিস্ট পার্লারে গিয়ে সাজগোজ কর!”

দিবা কিছু বলে না। অল্প আয়োজনের বিয়ে নিয়ে সে খুশি। বিয়ের খবর যত কম মানুষ জানবে ততই ভালো। আর তার সাজতেও ইচ্ছে করছে না। শ্বশুরবাড়ি থেকে পাঠানো দামী শাড়ি আর গয়না পরে মুখে কোনো প্রসাধন ছাড়াই দিবা পুতুলের মতো বসে থাকে।

বরযাত্রী বলতে আসে শুধু ঈশান, তার অফিসের কিছু কর্মচারী, আয়েশা সিদ্দীকা আর রোজা। খুব শান্ত পরিবেশে তাদের বিয়েটা হয়ে যায়। ফটোশ্যুটের সময় রোজা ভীষণ কান্নাকাটি করছিল। দিবা কোলে নিতেই চুপ হয়ে যায়। রেবা একফাঁকে এসে দিবার কানে কানে বলে,” বাহ, ভালোই তো। বিয়ের দিন বাচ্চা কোলে নিয়ে বসে থাকার সৌভাগ্য কয়জনের হয়?”

দিবা বিরক্ত গলায় বলে,” উফ আপা, তুমি চুপ করো না।”

” কেন চুপ করবো? বিয়ের সাথে সাথেই রেডিমেট বাচ্চা পেয়ে গেলি। কয়জন পায় এমন বাচ্চা-জামাই একসাথে?”

দিবা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে। আপাকে থামানো সম্ভব না। তবে সে ঈশানকে কথা দিয়েছে রোজাকে নিজের সন্তানের মতো ভালোবাসবে। হ্যাঁ, দিবা সেটাই করবে। কখনোই যাতে রোজা বুঝতে না পারে যে দিবা তার সৎমা!

বিয়ে বাড়ি। অথচ তেমন কোনো হৈচৈ নেই। সবটাই কেমন মরা-মরা। নাকি শুধু দিবার কাছেই এমন লাগছে? তার কি মনখারাপ? যদি সত্যি মনখারাপ হয় তাহলে কার জন্য মনখারাপ? রাফিনের জন্য? কিন্তু রাফিনকে তো দিবা স্বেচ্ছায় ছেড়েছে। এখন থেকে রাফিন ভালো থাকবে৷ তার দুঃখের জীবনের অবসান ঘটবে। এটা কি দিবার জন্য সুখের সংবাদ নয়?

দিবাকে যে ঘরে এনে রাখা হয় সেই ঘরে কোনো আয়োজন নেই। বাসর কি এই ঘরেই হবে? তাহলে ফুল নেই কেন? পর মুহূর্তেই দিবার মনে হয়, তার বিয়েটা অন্য স্বাভাবিক বিয়ের মতো নয়। এটা নিছক একটি চুক্তিনামা। ঈশান কথা দিয়েছে, সে রাফিনের ক্যারিয়ার গুছিয়ে দিবে। বিনিময়ে দিবা রোজার জীবনে মায়ের অভাব পূরণ করবে। এর থেকে বেশি কিছু আশা করাই বোকামি।

সাজানো-গোছানো নরম বিছানায় দিবা চুপচাপ বসে থাকে। কিছুক্ষণ পর ভেতরে ঢুকে ঈশান। তার গায়ে একটা সাধারণ সাদা রঙের পাঞ্জাবি৷ এটা পরেই বিয়ে করতে এসেছিল। দিবার উপস্থিতিকে সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করে ঈশান নীরবে পাঞ্জাবী বদলে গায়ে টি-শার্ট জড়িয়ে নেয়। এসির পাওয়ার কমিয়ে সোফায় আরাম করে বসে।

দিবা এতোক্ষণ ঈশানকেই দেখছিল। যেই মুহূর্তে ঈশান তার দিকে চোখ তুলে তাকায়, ঠিক তখনি সে নজর ঘুরিয়ে নেয়। অস্বস্তি মাখা চোখে এদিক-ওদিক দেখতে থাকে।

ঈশান বলে,” কোনো প্রশ্ন আছে?”

দিবা ভ্রু কুঁচকে বলে,” কিসের প্রশ্ন?”

” আমাকে নিয়ে কোনো প্রশ্ন থাকলে করতে পারেন।”

দিবা কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলে,” বাসর রাতে কেউ প্রশ্ন করে না৷ এটা তো পাত্র-পাত্রী দেখা করার সময়ের নিয়ম। একে-অপরকে জানার জন্য প্রশ্ন করা হয়। আপনার সম্পর্কে আমি সব আগেই জেনে নিয়েছি। তাই আপাতত আমার কোনো প্রশ্ন নেই। তবে আপনার কিছু জিজ্ঞাসা থাকলে বলতে পারেন।”

ঈশান সোজা হয়ে বসতে বসতে বলে,” কেন আপনাকে বিয়ে করলাম সেই বিষয়ে জিজ্ঞেস করলেন না? এই প্রশ্ন তো শুরু থেকেই আপনার মাথায় ঘুর্পাক খাচ্ছে।”

দিবা এবার ছোট্ট নিঃশ্বাস ছেড়ে শুধায়,” বলুন তবে। কেন বিয়ে করলেন আমার মতো অভাগীকে?”

ঈশান নরম গদিতে পিঠ ঠেকিয়ে বসে। কুশনটা একহাতে জড়িয়ে নিয়ে সহজ ভঙ্গিতে বলে,” সময় হলে নিশ্চয়ই জানবেন। আপাতত আপনার গুরুদায়িত্ব রোজা। ওর ব্যাপারে খুব সেন্সিটিভ আমি। আমার মেয়েকে সামলানোর অ্যাবিলিটি আপনার কতটুকু আছে আমি জানি না। তবে আজকে আপনি রোজার সাথেই থাকবেন। ওকে ভালো রাখার চেষ্টা করবেন। এক সপ্তাহ এভাবেই চলবে। আপনার প্রথম কাজ হলো রোজার মন থেকে ওর মায়ের স্মৃতি সম্পূর্ণ মুছে ফেলা।”

দিবা হেসে ফেলে বলে,” আপনার কি আমাকে স্মৃতি মুছে দেওয়ার মেডিসিন মনে হয়?”

” চেষ্টা করলে সবই সম্ভব। আপনি চেষ্টা করুন।”

দিবা উঠতে উঠতে বলে,” আমি তাহলে রোজার ঘরে যাচ্ছি।”

” চেঞ্জ করে তারপর যান। আপনাকে এমন ভারী সাজ-গোজে দেখলে আমার মেয়ে ইজি ফীল নাও করতে পারে। ও একটু ইন্ট্রোভার্ট ধরণের।”

” ঠিকাছে, যাচ্ছি আমি।”

লাগেজ থেকে নিজের জামা-কাপড় বের করে বদলে নেয় দিবা। তার মনে অনেক ধরণের চিন্তা আসছে। লোকটা তাকে বুঝি এইজন্যই বিয়ে করেছে? নিজের প্রয়োজনে যখন ইচ্ছা ব্যবহার করতে পারবে বলে! আর দিবাও তো কিছু বলতে পারবে না৷ কারণ শর্ত দিয়ে বিয়ের সম্পর্কটা সে নিজেই চুক্তিনামায় বদলে নিয়েছিল।

রোজার ঘরে আয়েশাও ছিলেন। হয়তো দিবার জন্যই অপেক্ষা করছিলেন৷ তাকে দেখে কোমল গলায় বললেন,” তোমার ক্ষিদে পেয়েছে মা?”

দিবা মিষ্টি হেসে বলে,” না আন্টি।”

” আন্টি কেন? আমাকে ফুফু ডাকবে। আমি হলাম তোমার ফুফু শাশুড়ী।”

” ঠিকাছে, ফুফু।”

” আজ রাতে আমি তোমাদের সাথেই এই ঘরে থাকবো। তোমার কোনো অসুবিধা নেই তো?”

দিবার মনে অনেক প্রশ্ন এলেও সে জিজ্ঞেস করে না৷ মাথা নেড়ে বোঝায়, অসুবিধা নেই। আয়েশা নিজে থেকেই অনেক কথা বলতে চান।

” শোনো দিবা, জানি তুমি এই মুহূর্তে অনেক কিছু চিন্তা করছো। রোদেলার সাথে ঈশানের সম্পর্কের ব্যাপারে আমি তোমাকে কিছু বলতে চাই। ভেবো না এখনও ঈশানের রোদেলার প্রতি দূর্বলতা আছে। যদি তেমন হতো তাহলে তো আর তোমাকে বিয়ে করতো না। আসলে রোদেলা ক্ষ’মার অ’যোগ্য একটা অপ*রাধ করেছিল। সেই ঘটনাই আজ তোমাকে বলবো।”

দিবা নরম সুরে বলে,” যদি কিছু মনে না করেন তাহলে কি এই বিষয়ে আমরা অন্য কোনোদিন কথা বলতে পারি? আমার খুব ক্লান্ত লাগছে।

আয়েশা মৃদু হেসে বলেন,” ঠিকাছে। তুমি তাহলে রোজাকে নিয়ে শুয়ে পড়ো। আমি একটু আসছি।”

এই কথা বলেই আয়েশা বের হয়ে যান। হয়তো ঈশানের ঘরে যাচ্ছেন। দিবা রোজার দিকে ফিরে চমৎকার করে হাসে। তার মাথায় বুলিয়ে বলে,” মা, তুমি কেমন আছো? আমার কথা মনে আছে তোমার?”

রোজা মিষ্টি হেসে মাথা নাড়ে। দিবা বলে,” তুমি ঘুমানোর সময় গল্প শুনতে পছন্দ করো নাকি গান?”

রোজা ফোনের দিকে ইশারা করে। দিবা হেসে বলে,” ফোনে গান শুনতে চাও?”

দুই পাশে মাথা নাড়ে রোজা। তারপর ফোনটা কানে নিয়ে দেখায়, ইশারায় কিছু বোঝায়। দিবা ছলছল চোখে তাকিয়ে থাকে। মেয়েটা মায়ের সাথে কথা বলতে চাইছে! অথচ ঈশানের প্রধান শর্ত হলো রোজার মন থেকে তার মায়ের স্মৃতি ভুলিয়ে দিতে হবে। দিবা কিছু না বলে রোজাকে শক্ত করে বুকে জড়িয়ে ধরে।

চলবে