শর্তসাপেক্ষে পর্ব-০৮

0
1

#শর্তসাপেক্ষে
পর্ব ৮
Sidratul Muntaz

তীক্ষ্ণ রোদের মধ্যে দাঁড়িয়ে হাসফাঁস করছে হোসেন। ম্যাডাম কখন ভার্সিটি থেকে বের হবে তা সে জানে না। তবে স্যার বলেছেন যতক্ষণ সময়ই লাগুক সে যেন অপেক্ষা করে। এই দম ফাটানো গরমে অপেক্ষা ব্যাপারটা খুবই কষ্টসাধ্য। মনে হচ্ছে তার প্রাণটা ঠোঁটের আগায় এসে ঠেকেছে। গাড়ির ভেতর বসে যে একটু এসির বাতাস খাবে সেই উপায়ও নেই৷ আশেপাশে নজর রাখতে হচ্ছে। দিবা ভার্সিটি থেকে বের হয়ে কি করে,কার সাথে কথা বলে, তার আশেপাশে কারা থাকে, সব পাই টু পাই স্যারকে জানাতে হবে।

হোসেন শার্টের বোতাম খুলে গায়ে একটু হাওয়া লাগানোর চেষ্টা করে, তখনি দূরে নেভি ব্লু শার্ট গায়ে রাফিনকে দেখে তার চোখ দু’টো ইয়া বড় হয়ে যায়। এই লোক এখানে কেন? মহা মুশকিল ব্যাপার তো!

সাবধানে গিয়ে রাফিনের পাশে দাঁড়ায় সে। গলা খাঁকারি দিয়ে বলে,” কি ব্যাপার রাফিন সাহেব? অফিস টাইমে এখানে কি করছেন?”

হঠাৎ হোসেনকে দেখে একটু হকচকিয়ে যায় রাফিন। ইতস্তত করে বলে,”আমি একটা জরুরী কাজে এসেছি হোসেন ভাই। অফিসে বলেই এসেছি।”

” ও আচ্ছা। তা কি বলে এসেছেন?”

” বলেছি একটা জরুরী কাজ আছে, একঘণ্টার জন্য লীভ লাগবে।”

হোসেন বিজ্ঞের মতো মাথা নাড়ে। কিন্তু ভেতরে ভেতরে সে খুব দুশ্চিন্তায় পড়ে গেছে৷ রাফিন জিজ্ঞেস করে,” তা আপনি কি করছেন হোসেন ভাই? এইখানে আপনার কাজটা কি?”

” ওই আর কি… আমারও একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজ আছে।”

রাফিন আর কিছু বলে না। এদিকে হোসেন দুশ্চিন্তায় পড়ে যায় কারণ রাফিনের সামনে সে দিবাকে গাড়িতে তুলতে পারবে না৷ তাহলে রাফিন জেনে যাবে দিবা তার ম্যাডাম! ঈশান স্যার সেটা নিষেধ করেছেন। একটু পর হোসেন আরও একদফা চমকায় যখন পাশের গাড়ি থেকে রোদেলাকে নামতে দেখে। গায়ে পাকিস্তানি সাদাবাহার সালোয়ার- কামিজ। চোখে রোদচশমা।

হোসেন ভয়ে তটস্থ হয়ে যায়। বিপদের উপর মহাবিপদ! সে একটু নিরিবিলিতে এসে ব্যস্ত হাতে ঈশানকে ফোন লাগায়।

” হ্যালো স্যার।”

” হুম হোসেন, বলো। তোমার ম্যাডামকে ভার্সিটি থেকে পিক করেছো?”

” এখনও না স্যার। সেটা করতে গিয়েই তো ঝামেলায় পড়ে গেছি। একদিকে রোদেলা ম্যাডাম অন্যদিকে রাফিন সাহেব।”

” মানে? ওরা ওখানে কি করছে?”

” জানি না স্যার। এখন আমি কি করব?”

” তুমি দিবার সামনে যাবে না। রাফিন নিশ্চয়ই ওর সাথে দেখা করতে এসেছে। তুমি একটা কাজ করো, গোপনে ওদের উপর নজর রাখো। আর রোদেলা কেন এসেছে? সেটাও খোঁজ নিয়ে আমাকে জানাও। আর সাবধান, দিবা যাতে কিছু বুঝতে না পারে।”

” ওকে স্যার।”

________
” আপনি হঠাৎ আমার সাথে কেনো দেখা করতে চাইছেন?” স্পষ্ট কণ্ঠে প্রশ্ন করে দিবা।

রোদেলা বলে,” কেনো দেখা করতে চাই সেটা দেখা হলেই না হয় বলবো। আপনি কি আসবেন?”

দিবা বুঝতে পারে না কি করবে। নিজের বর্তমান স্বামীর প্রাক্তন স্ত্রীর সাথে দেখা করার ব্যাপারটা খুব অদ্ভুত লাগে তার কাছে। তাছাড়া ঈশান সাহেব জানলে কি হবে? রোদেলা আবার জিজ্ঞেস করে,” দিবা আপনি কি আসবেন?”

” ঠিকাছে আপনি পেছনের গেইটে চলে আসুন। আমিও ওখানেই আসছি।”

” ওকে, থ্যাঙ্কিউ সো মাচ।” রোদেলা এমনভাবে বলে যেন দিবার উত্তরে সে ভীষণ আনন্দিত।

দিবা পেছনের গেইটে এসে দাঁড়ায়। কিছুক্ষণ পরেই এশ রঙের গাড়ির ভেতর থেকে ভীষণ সুন্দর দেখতে একটা মেয়ে হাত বের করে, মাথায় সানগ্লাস, কানে সুন্দর দুল ঝুলছে, ঠোঁটে গাঢ় লিপস্টিক। এমন গরমেও বুঝি কেউ এতো সাজগোজ করে?

দিবা কাছে যেতেই তাকে গাড়িতে উঠতে ইশারা করে রোদেলা। হালকা দ্বিধায় পড়ে যায় দিবা। সাত-পাঁচ ভেবে সে গাড়িতে উঠেই বসে। আসলে সে নিজের কৌতুহল দমাতে পারছে না। রোদেলা তাকে কি এমন বলবে? শোনার জন্য কেমন উৎকণ্ঠা লাগছে।

রোদেলা ড্রাইভ শুরু করে। আঁড়চোখে দিবাকে পরখ করতে থাকে। দিবা তাকাতেই মুচকি হেসে জিজ্ঞেস করে,” কি নিয়ে পড়ছো তুমি? তুমি করে বললাম দেখে মাইন্ড কোর না। বয়সে তুমি আমার অনেক ছোট হবে।”

” সমস্যা নেই। তুমি করে বলতে পারেন। আমি কেমিস্ট্রি ফার্স্ট ইয়ার।”

রোদেলা চোখ বড় করে অনেকটা অবাক হয়ে বলে,” নিতান্তই বাচ্চা মেয়ে তুমি! আর দেখতেও তো খুব সুন্দর!”

দিবা হেসে বলে,” আপনিও খুব সুন্দরী! ”

রোদেলা হেসে ফেলে। তারপর কৌতুহল নিয়ে জিজ্ঞেস করে,” ঈশানের মতো মানুষকে কেনো বিয়ে করলে?”

” আপনি নিশ্চয়ই এই প্রশ্ন করার জন্য আমাকে ডাকেননি।”

” না তা ডাকিনি৷ তোমার কাছে আমার ছোট্ট একটা রিকয়েস্ট আছে। আশা করি তুমি রিকয়েস্টটা রাখবে।”

” আগে শুনি কি রিকয়েস্ট? তারপর বুঝবো রাখতে পারব কি পারব না।”

” তুমি তো জানোই, ঈশান রোজাকে আমার সাথে কখনোই কথা বলতে দেয় না। সে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে আমার থেকে আমার মেয়েটাকে দূরে সরানোর৷ তোমাকেও নিশ্চয়ই বলেছে রোজা যেন আমাকে ভুলে যায় সেই ব্যবস্থা করতে, তাই না?”

“মিথ্যা বলবো না। আসলেই বলেছে।”

নিজের ধারণা সত্য প্রমাণিত হওয়ায় রোদেলা যেন খুব আঘাত পায়। তার চোখে-মুখে একটা বিষাদের গাঢ় ছায়া নেমে আসে। পরমুহূর্তেই ছায়াটা মুছে নিয়ে বলে,” যাইহোক, আমি জানতাম ও এটাই করবে। ভীষণ জেদ ওর। শুধুমাত্র ওর অতিমাত্রায় জেদের কারণেই আমাদের ডিভোর্সটা হয়েছে। কিন্তু রোজা তো খুব ছোট। ওর পক্ষে কি সম্ভব মা ছাড়া থাকা? আর আমিও আমার মেয়েকে ছাড়া থাকতে পারছি না। এসব এখন ঈশানকে কে বোঝাবে বলো? ও পাষাণ হৃদয়ের মানুষ। জীবনেও বুঝবে না আমার কষ্ট। ”

কথাগুলো বলতে বলতে রোদেলার চোখ ভিজে ওঠে। সামনের টিস্যুবক্স থেকে টিস্যু নিয়ে চোখ মোছে৷ তারপর কণ্ঠ নরম করে বলে,” দিবা, আমি রোজার সাথে শুধু একবার দেখা করতে চাই। দুইবছর হয়ে গেছে আমি না আমার মেয়েটাকে স্পর্শ করি না, কোলে নেই না, আদর করি না, তুমিও তো একটা মেয়ে, আমার দুঃখটা একবার বোঝার চেষ্টা করো বোন! আমি কথা দিচ্ছি, ঈশান কিচ্ছু জানবে না। আর তোমার কোনো সমস্যাও হবে না। শুধু আমার এই রিকয়েস্টটা রাখো। বিনিময়ে তুমি যা চাও আমি তোমাকে তাই দিবো।”

কথা শেষ করে রোদেলা খুব উদগ্রীব হয়ে তাকিয়ে থাকে। দিবা কিছু বলে না। সে ভাবছে, রোদেলা কত মায়াবী একটা মেয়ে! ঈশান সাহেব কি করে পারল এমন বউকে ডিভোর্স দিতে? তার খুব জানতে ইচ্ছে করছে তাদের বিচ্ছেদের কারণ। কিন্তু সেটা অনধিকার চর্চা হয়ে যাবে ভেবে সে আর জিজ্ঞেস করে না। তবে রোদেলাকে সে পুরোপুরি কথা দিতে পারে না। শুধু বলে,

” দেখুন আপু, ঈশান সাহেব রোজার ব্যাপারে খুবই স্ট্রিক্ট। উনার চোখ ফাঁকি দিয়ে রোজাকে আপনার কাছে নিয়ে আসা আমার পক্ষে সহজ হবে না৷ তবে আপনি যেহেতু এইভাবে রিকয়েস্ট করছেন, আমি ঈশান সাহেবকে বলে একটা ব্যবস্থা করব।”

রোদেলা সঙ্গে সঙ্গে বাঁধ সাধে,” না, তুমি একদম ঈশানকে কিছু জানাবে না৷ তাহলে ও আরও রুড হয়ে যাবে। এমনিতেও ও কোনো বিষয়ে একবার নিষেধ করলে ওকে রাজি করানোর সাধ্য কারো নেই। তুমি তো পারবেই না। ”

” আপনি কিভাবে বুঝলেন যে আমি পারবো না?” দিবার কণ্ঠ খানিকটা তীক্ষ্ণ হয়ে আসে।

রোজা সহাস্যে বলে,” বিয়ের দু’দিন হয়ে গেছে এখনও ওকে ঈশান সাহেব বলে সম্বোধন করছো। তোমাদের মধ্যে যে কোনো অন্তরঙ্গতা গড়ে ওঠেনি সেটা আমি বুঝতে পেরেছি। আসলে ঈশান বিয়েটা করেছে শুধু রোজার জন্য। এছাড়া ওর তোমার প্রতি কোনো আকর্ষণ নেই। কারণ ও এখনও আমাকে ভুলতে পারেনি।”

” যদি ভুলতেই না পারে তাহলে ডিভোর্স দিল কেন?” দিবা কাট কাট প্রশ্ন করে।

রোদেলা বলে,” বললাম তো ওর জেদ। জেদের বশে ও জীবনে অনেক ভুল করেছে। এটাও ওর একটা ভুল ছিল।”

দিবা জানে না কেন, অকারণেই তার মনটা বিষণ্ণ হয়ে যায়। রোদেলাকে এই মুহূর্তে তার একদমই সহ্য হচ্ছে না। সে ‘আসি’ বলে গাড়ির দরজা খুলতে উদ্যত হয়। রোদেলা জিজ্ঞেস করে,” আসি মানে? তুমি তো বললেই না কি করবে।”

” আচ্ছা আপনি আমার ফোন নাম্বার কোথায় পেলেন? আর আমার ভার্সিটি চিনলেন কিভাবে?”

” যোগাড় করেছি। তোমার ব্যাপারে অনেক কিছুই আমি জানি। এই যেমন, তোমার বয়ফ্রেন্ড এখন ঈশানের অফিসে চাকরি করে!”

দিবা হতভম্ব হয়ে যায়। রোদেলা হাসি মুখে বলে,” তুমি বসো দিবা। আমি তোমাকে বাড়ি পৌঁছে দিচ্ছি। এর মধ্যে তুমি ভাবো যে কি করবে। আর আমাকে সিদ্ধান্ত জানাও।”

রাফিন অনেকক্ষণ ধরে অপেক্ষা করেছে। কিন্তু দিবা বের হয়নি। সে যে আজ ইউনিভার্সিটি এসেছে এই বিষয়ে রাফিন নিশ্চিত। দিবার ঘনিষ্ট বান্ধবী রেখাকে সে ফোন করেই এসেছে। কিছুক্ষণ পর রেখারা বের হতেই রাফিন তেড়ে যায় সেদিকে।

” দিবা কোথায়? তোমাদের সাথে আসেনি?”

রেখা ভেবেছিল মুখ ঢেকে লুকিয়ে চলে যাবে৷ কিন্তু রাফিন তাকে ঠিক দেখে ফেলেছে। আসলে দিবা যে রাফিনের সাথে দেখা করতে চাইবে না এটা বুঝতে পারেনি সে। এখন মনে হচ্ছে রাফিনকে দিবার ভার্সিটি আসার খবরটা দিয়ে ভুলই করে ফেলেছে সে!

মণি বলে,” দিবা আমাদের সাথে আসেনি। ও পেছনের গেইট দিয়ে বের হয়ে গেছে।”

” পেছনের গেইট দিয়ে কেনো?”

শাম্মি পরিষ্কার গলায় বলে,” কারণ দিবা আপনার সাথে দেখা করতে চায় না! রাফিন ভাই, মেয়েটার মাত্র বিয়ে হয়েছে। ওর মানসিক অবস্থাটা একটু বোঝার চেষ্টা করেন। আপনি এই মুহূর্তে ওকে বিরক্ত করবেন না প্লিজ। ওকে কিছুদিন টাইম দিন।”

রেখা আর মণিও শাম্মির কথায় সম্মতি জানিয়ে মাথা নাড়ে। রেখা বলে,” আসলেই, মেয়েটাকে একটু স্বাভাবিক হওয়ার সুযোগ দেওয়া উচিৎ। ”

রাফিন তার মেজাজ ধরে রাখতে পারে না। আক্রোশে গজগজ করে বলে,” ওকে কে বিয়ে করতে বলেছিল এতো দ্রুত? ওর কি বিয়ের বয়স পেরিয়ে যাচ্ছিল? বুড়ি হয়ে গেছিল ও? আমার জন্য কি আর দুইটা দিন অপেক্ষা করা যেতো না? জানো কত ভালো চাকরি হয়েছে আমার। ওকে রাজরানী করে রাখতাম!”

রাফিনের কণ্ঠ থেকে ঝরে পড়ে তীব্র বেদনাময় আক্ষেপ। মণিরা হতাশ দৃষ্টিতে চেয়ে থাকে চুপচাপ৷ কি আর বলবে ওরা? রাফিন হঠাৎ ক্ষেপে উঠে আবার বলে,” ওর এই অতি পাকনামির জন্য ও নিজের জীবনটা তো শেষ করেছেই সাথে আমার জীবনটাও ধ্বংস করে দিয়েছে। ওকে সামনে পেলে ঠাস ঠাস করে দু’টো চ’ড় না মারা অবধি আমার শান্তি লাগবে না!”

শেষ বাক্যটা সে এতো জোরে বলে যে আশপাশ থেকে মানুষ জন ঘুরে তাকায়। রেখা খুব ইতস্ততবোধ করছে। মণি ফিসফিস করে বলে,” ভাইরে, বেচারার মেজাজ তো সেই রকম গরম। দিবা ভালোই করেছে দেখা না করে। নয়তো আজ গেইটের সামনেই বিরাট একটা সিন ক্রিয়েট হয়ে যেতো।”

শাম্মি বলে,” হুম, সে কি আর বলতে!”

রাফিন ওদের কানাঘুঁষা শুনতে পায় না। চড়া গলায় বলে,” যেদিন ও আবার আসবে তুমি অবশ্যই আমাকে ইনফর্ম করবে রেখা। ওর সাথে আমার অনেক বোঝাপড়া আছে। এই প্রতারণার জবাব ওকে দিতে হবে।”

মণি আর শাম্মি একবার চোখ বড় করে রেখার দিকে তাকায়। চোরাদৃষ্টিতে রেখা নিজের হাত দিয়ে মুখ ঢেকে নেয়। শিট, তার নামটা এভাবে রাফিন বলে দিল সবার সামনে! এখন বন্ধুদের কাছে সে ভিলেন না হয়ে যায়। অথচ সে তো দিবার ভালোই চেয়েছিল। এমন ভুল বুঝাবুঝির চেয়ে সামনা-সামনি বসে সব ঠিক করে নেওয়াই ভালো।

রাফিন একটু পর গলার স্বর কিছুটা নরম করে বলে,” বাই দ্যা ওয়ে, দিবার হাজব্যান্ড কি করে? তোমাদের সাথে আলাপ হয়েছে? অনেক বড়-সড় বিজনেসম্যান নিশ্চয়ই। অনেক পয়সাওয়ালা তাই না? এজন্যই তো বিয়ে দিয়েছে ওর ভাই আর বোন। ওরা যেই লোভী মানুষ! ”

শাম্মি শান্ত গলায় বলে,” ওর হাজব্যান্ডের সাথে আমাদের দেখা হয়নি ভাইয়া। আসলে বিয়েটা তো খুব সাদামাটাভাবে হয়েছিল, কিন্তু রিসিপিশনে…”

মণি হাত চেপে ধরতেই শাম্মি থেমে যায়। রাফিন থমথমে মুখে বলে,” আমাকে এমন অথৈ সাগরে ফেলে ও সুখের সংসার করবে? এটা আমি হতে দিবো না৷ ওকে এর পরিণাম ভুগতে হবে। কথাটা পারলে জানিয়ে দিও ওকে।”

রাফিন তার রাগ মিটিয়ে চলে যায়। মণি, রেখা, শাম্মি কিছুক্ষণ একে-অপরের সাথে চোখাচোখি করে। তারপর তিনজনই একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে।

দিবা বাড়ি ফিরে দেখে ঘরদোরের অবস্থা নাজেহাল। রোজার খেলনা ঘর, বার্বী ডল, রঙিন-রঙিন বল, আরও অজস্র জিনিসপাতি মেঝেতে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। ভেতরের ঘর থেকে আয়েশার গলা শোনা যাচ্ছে,” একটু শান্ত হও মা। দিবা আন্টি আসবে, এক্ষুণি আসবে। তুমি চুপ করে বসো।”

রোজা মনে হয় শান্ত হচ্ছে না৷ তৃষার গলাও শোনা যাচ্ছে। ঈশান বলেছিল মেয়েটা মাঝে মাঝে রেগে গিয়ে খুব উগ্র আচরণ করে। তখন তাকে সামলানো মুশকিল৷ এতো মিষ্টি দেখতে একটা পুতুলের মতো মেয়ের এমন আচরণ বিস্ময়ের ব্যাপার। দিবা খুব ক্লান্তিবোধ করছিল। রোদেলার বেহুদা কথাগুলো শুনে মেজাজটা আগে থেকেই বিগড়ে আছে। আগে ঠান্ডা শাওয়ার নিয়ে একটু শান্ত হতে হবে৷ তারপর সে রোজার কাছে যাবে।

দিবা ফ্রেশ হওয়ার জন্য ওয়াশরুমে ঢোকার আগেই তার ফোন বেজে ওঠে। আরেকটা অচেনা নাম্বার। এটাও কি রোদেলার? ফোনটা রিসিভ করতেই ওই পাশ থেকে ঈশানের কণ্ঠ শোনা যায়,” মিস দিবা, কোথায় আপনি?”

” এইতো, মাত্র বাসায় ফিরেছি।”

” কিভাবে ফিরলেন? আমাকে ফোন করলেন না কেন? গাড়ি পাঠিয়ে দিতাম।”

” সমস্যা নেই৷ আমি আমার বন্ধুদের সাথে চলে এসেছি।”

ঈশানের মাথা গরম হয়ে যায়। দিবা মুখের উপর কেমন মিথ্যা কথা বলে দিল। রোদেলার বিষয়টা সম্পূর্ণ গোপন করে গেছে সে। কি আশ্চর্য! তার কি রোদেলার সাথে গোপনে কোনো বোঝাপড়া হয়েছে? নাকি প্রথম দেখাতেই তারা বিনোদিনী আর আশালতার মতো সই পাতিয়ে ফেলেছে? মেয়ে মানুষের মাথা ভরা গোবর। দিবার জায়গায় যদি ঈশান হতো, আর দিবার প্রাক্তন প্রেমিক তাকে দেখা করার জন্য ডাকতো তাহলে নির্ঘাত তাদের মধ্যে একটা র’ক্তারক্তি কান্ড ঘটে যেতো।

ওই পাশ থেকে দিবা ‘হ্যালো হ্যালো’ করতে থাকে। কিন্তু ঈশান খট করে লাইন কেটে দেয়। দিবা বুঝতে পারে না ব্যাপারটা। ভ্রু কুঁচকে ফোনের স্ক্রিনে চেয়ে থাকে কিছুক্ষণ। লাইনটা কি এমনি কেটে গেল নাকি ঈশান কেটে দিয়েছে? আবার ফোন করে জিজ্ঞেস করবে নাকি সে? দরকার নেই বাবা! যেই ভাব এই লোকের! দিবা মোবাইল রাখার আগে ঈশানের নাম্বারটা ‘ডোনাল্ড ট্রাম্প’ লিখে সেভ করে নেয়।

চলবে