শর্তসাপেক্ষে পর্ব-১০

0
10

#শর্তসাপেক্ষে
পর্ব ১০
Sidratul Muntaz

রোদেলা ফ্যাশন ডিজাইনিং নিয়ে পড়াশুনা করেছে, এখন সে নিজস্ব একটা বুটিক শপ চালায়। বিশাল ফ্যানবেজ সমৃদ্ধ তার অনলাইন পেইজটির নাম- HerCanvas.

রোদেলা খুবই পেশাদার, উদ্যমশীল এবং নেটিজেনদের কাছে বেশ পরিচিত মুখ। সে নিজের সাজ-সজ্জা নিয়ে প্রায়ই ভিডিও বানায়। বড় গলার ব্লাউজ আর পাতলা, ফিনফিনে শাড়ি পরে লাইভে আসে। তার প্রতিটি লাইভ মিলিয়ন মিলিয়ন ভিউজ পায়৷ ছেলেরা হামলে পড়ে তার লাইভ দেখার জন্য। যদিও রোদেলা ছেলেদের জন্য কোনো ভিডিও বানায় না। কিন্তু তবুও তার ছেলে ফ্যান অনেক বেশি। তার আবেদনময়ী রূপ দেখে মাথা ঘুরে যায় যুবকদের।

ঈশান তার এই বিষয়টাই পছন্দ করতো না৷ তার বউ কেন অন্যদের চোখের ক্ষুধা মেটাবে? এসব লাইভ, ভিডিও, ফটোশ্যুট, সবকিছু বিয়ের পরপরই বন্ধ করে দিতে চায় ঈশান। এমনকি বাইরে বের হলেও তার পছন্দমতো পোশাক পরতে হবে। পর পুরুষের সাথে হাসি মুখে কথা পর্যন্ত বলা যাবে না। অবশ্যই হিজাব পরিধান করতে হবে, মুখে কোনো মেকাপ লাগানো যাবে না। যদি রোদেলার একান্তই সাজতে ইচ্ছে হয় তাহলে সে বদ্ধ ঘরে সাজবে। রোদেলা এতো রেস্ট্রিকশন মেনে নিতে পারেনি। ওইভাবে তার জীবনটা একটা কারাবন্দী আসামির মতো হয়ে যাচ্ছিল।

তাদের এসব নিয়ে প্রায় প্রতিদিন ঝগড়া হতো। রোজা একটা অসুস্থ পরিবেশে বেড়ে উঠছিল। যদিও ঈশান মেয়ের সামনে কখনও উচ্চবাচ্য করতো না। তবে ঘরের মধ্যে একটা অশান্তি লেগেই থাকতো।

রোদেলা তার ক্যারিয়ার ছাড়তে পারবে না, আর ঈশানও তার মেল ইগো বিসর্জন দিতে পারবে না। এতোকিছুর পরেও রোদেলা কখনও ঈশানকে ছাড়তে চায়নি। কারণ সে ভালোবেসেছিল খুব নিজের স্বামীকে। তবে ঈশানের জন্য নিজেকে বদলানো রোদেলার পক্ষে সম্ভব ছিল না।

একপর্যায় ঈশান রোদেলার কাছে আসা বন্ধ করে দেয়। একই বাড়িতে তাদের বিছানা আলাদা হয়ে যায়। প্রতিদিন ঈশান তার স্টাডিরুমে গিয়ে থাকতো। রোজা কখনও বাবার সাথে আবার কখনও মায়ের সাথে এসে ঘুমাতো। বেশিরভাগ সময় সে বাবার কাছেই থাকতে চাইতো। অথচ ছোট বাচ্চারা মায়ের পাগল হয়। রোজা ছিল এর বিপরীত। সে তার বাবার পাগল ছিল।

অবশ্য রোদেলাও তো রোজাকে বেশি একটা সময় দিতে পারতো না। সারাক্ষণ নিজের শ্যুট নিয়েই ব্যস্ত থাকতে হতো তাকে। কয়েকটা বিজ্ঞাপনের সাথেও সে কাজ করেছে। অনেক মডেলিংয়ের অফার পেতো, কিন্তু ঈশানের জন্য কিচ্ছু সম্ভব হয়নি।

ঈশান শত ব্যস্ততার মাঝেও মেয়েকে সময় দিতে ভুলতো না। সেজন্যই হয়তো মেয়ের মনে নিজের জন্য জায়গা করে নিতে পেরেছিল। তাদের ডিভোর্সের সময় যখন রোজাকে প্রশ্ন করা হয় সে কার সাথে থাকবে? মেয়েটা তখন সোজা বাবার কাছে গিয়ে বসে থাকে। তখন অবশ্য সে খুব ছোট। তার মতামতকে অতো গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। কিন্তু ঈশান জেদ করে ঠিকই মেয়েকে নিজের কাছে রেখে দিয়েছে।

রোদেলার সাথে ঈশানের সম্পর্কটা একসময় প্রতিবেশির মতো হয়ে যায়। একই বাড়িতে থেকেও কেউ কারো মুখ দেখতো না। তাদের আরও আগেই ডিভোর্স হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে ঈশান নিজেকে আটকায়। একবার ঈশান ব্যবসার কাজে আমেরিকা চলে যায়। তখন রোদেলা বিরাট একটা অপরাধ করে ফেলে। প্রাক্তনের সাথে ঘনিষ্ট সম্পর্কে জড়িয়ে যায়। কি আর করবে? ঈশান তো তার দিকে ফিরেও দেখতো না। নিজের জৈবিক চাহিদা মেটাতে সে এমন নোংরা একটা কাজ করে ফেলে। ভেবেছিল ঈশান কিছু জানবে না।

কিন্তু সে যে রোদেলার পেছনে চব্বিশ ঘণ্টার স্পাই লাগিয়ে রেখেছিল, তার রোদেলা ভাবতেও পারেনি। দেশে ফিরেই ঈশান সবার আগে রোদেলার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে। রোদেলা ভীষণ ক্ষমা চেয়েছিল, অনুরোধ করেছিল তাকে আরেকবার সুযোগ দেওয়ার। এবার সে সবকিছু ছাড়তে রাজি। একদম ঈশানের আদর্শ বউ হবে। যেভাবে ঈশান তাকে চলতে বলবে সেভাবেই চলবে! তবুও যেন ডিভোর্স না দেয়।

কিন্তু ঈশান মানেনি। আফসোস করে বলেছে,” অনেক দেরি হয়ে গেছে রোদেলা। এখন আর কিছু বদলাবে না। আমি আর কখনও তোমাকে আগের জায়গায় বসাতে পারব না। যদি তুমি এই জঘন্য কাজটা না করতে তাহলেও আমি ভেবে দেখতাম। কিন্তু এরপর আর সম্ভব না!”

এটাই ছিল তার শেষ কথা। আর সে সত্যি এটা প্রমাণ করে দেখিয়েছিল। অতীতের কথাগুলো ভাবতে ভাবতে চোখ টলমল হয়ে আসে রোদেলার। হয়তো বিচ্ছেদটা তাদের ভাগ্যেই ছিল। তাই রোদেলাও ওমন ঘৃণ্য অপরাধে জড়িয়ে পড়েছিল। তখন পিশাচ ভ’র করেছিল তার মাথায়! নাহলে কেউ এইভাবে নিজের কপাল পোড়ায়?

অবশ্য এখন রোদেলা যথেষ্ট স্বাধীন, মনমতো সব করতে পারে। যখন যেখানে খুশি যেতে পারে, যা ইচ্ছা পরতে পারে। তাকে বাঁধা দেওয়ার কেউ নেই। স্লিভলেস ব্লাউজ পরে লাইভে এলে কেউ আর চোখ গরম করে তাকায় না। কেউ বলে না বাইরে যাওয়ার আগে মাথা ঢেকে নিতে। রোদেলা এখন মুক্ত স্বাধীন। তবুও কোথায় যেন একটা শূন্যতা টের পায়। ওই শূন্যতা তাকে রাতে শান্তিতে ঘুমাতে দেয় না।

আজকেও রোদেলার একটা লাইভ আছে। দুপুর দুইটার মধ্যে তাকে তৈরী হতে হবে। এমনিতে সে মডেলদের দিয়েই লাইভ করায়। তবে মাঝে মাঝে পাবলিক ডিমান্ডের জন্য তাকেও ক্যামেরার সামনে উপস্থিত হতে হয়। রিং লাইট আর বড় ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে রোদেলা লাইভ করবে একটু পর। সেজন্য প্রস্তুত হয়ে নিচ্ছিল।

এসিস্ট্যান্ট রেহানা এসে বলে,” ম্যাম, আপনার সাথে দেখা করতে একজন এসেছে।”

” কে এসেছে? বলে দাও আমি ব্যস্ত। অপেক্ষা করতে হলে করুক নয়তো চলে যাক।”

রেহানা ক্ষীণ গলায় বলে,” ম্যাম, ঈশান স্যার এসেছে।”

ধ্বক করে উঠে রোদেলার ভেতরটা। চ’মকে তাকায় সে। বিচ্ছেদের এতোগুলো দিন পেরিয়ে গেছে, ঈশান তো কখনও আসেনি। আজ হঠাৎ কি মনে করে?

রেহানা জিজ্ঞেস করে,” অপেক্ষা করতে বলবো?”

” না প্রয়োজন নেই। আমি আসছি, বসতে বলো। আর চা-কফি কিছু দিয়েছো?”

” না ম্যাম।”

” এখনও কেনো দাওনি? দ্রুত দাও। কফিতে একটাই স্যুগার কিউব দিবে। আর ফ্রিজে চকলেট পেস্ট্রি আছে?”

” আছে ম্যাম।”

” সেটাও সার্ভ করো। ঈশান খুব পছন্দ করে। আচ্ছা ও কি একাই এসেছে নাকি রোজাও এসেছে?”

” না ম্যাম, স্যার একাই এসেছেন।”

” ও আচ্ছা, ঠিকাছে তুমি যাও।”

রোদেলার চোখ-মুখ উচ্ছ্বাসে ভেসে যাচ্ছে। রেহানা দরজা ভিড়িয়ে চলে যেতেই লম্বা একটা শ্বাস ছাড়ে সে। আয়নাতে ভালো করে নিজেকে দেখে নেয়। তাকে সুন্দর লাগছে তো?

ঈশান গম্ভীর মুখে বসে আছে লাউঞ্জরুমের সোফায়। চারদিক কি পরিপাটি করে সাজানো। দামী পর্দা, দামী সোফা, সেন্টার টেবিলের উপর সুন্দর একটা বনসাই গাছ। সবজায়গায় শৌখিনতার ছোঁয়া। রোদেলা তো ভালোই আছে তার নিজের জীবন নিয়ে। তাহলে অযথা ঈশানের ব্যক্তিগত জীবনে দখলদারিত্বের চেষ্টা কেনো? কি চায় সে?

একটা মেয়ে এসে চকলেট পেস্ট্রি আর কফি সার্ভ করে। হাসি মুখে বলে,” বসুন স্যার, ম্যাম রেডি হচ্ছেন। এখুনি আসবেন।”

ঈশান রুক্ষ স্বরে বলে,” তোমার ম্যামকে বলো আমার হাতে বেশি সময় নেই। সে যেন তাড়াতাড়ি করে।”

“ওকে স্যার।”

মলিন মুখে এই কথা বলে রেহানা দ্রুত চলে যায়। একটু পরই রোদেলা সিঁড়ি থেকে নামে। ভ’য়াবহ সাজ দিয়েছে সে। মুখে মেকাপের প্রলেপ, চুলগুলো কার্ল করে একপাশে আনা, গায়ে মশারির মতো পাতলা শাড়ি। দেহের সিংহভাগ অংশ দেখাই যাচ্ছে। তার অবস্থা দেখে ঈশান তাচ্ছিল্য হাসে একটু। কি ভেবেছে সে? এভাবে সামনে এলেই ঈশান তাকে দেখে গলে যাবে? আর গলা নরম করে কথা বলবে?

রোদেলা কাছে এসে ঠিক ঈশানের বরাবর সোফায় বসে। আন্তরিক স্বরে বলে,” কি খবর? আজ হঠাৎ আমার কথা মনে হলো? ”

” তোমার কথা মনে হওয়ার জন্য আসিনি। কেন এসেছি সেটা তুমি ভালো করেই জানো।”

” এতো রাগ করে কথা বলছো কেন? তুমি একটুও বদলাওনি। আচ্ছা কিছু নিচ্ছো না কেনো? খাবার পছন্দ হয়নি? তোমার ফেভারিট ডেজার্ট। আমি এখনও মনে রেখেছি।”

” আমি এখানে ডেজার্ট খেতে আসিনি।”

” তাহলে কেনো এসেছো? আমাকে দেখতে?” রোদেলা ইচ্ছে করেই টিপ্পনী কাটে।

ঈশান খটমট করে বলে,” এতো খারাপ রুচিও হয়ে যায়নি যে তোমাকে দেখতে আসবো। আমি এসেছি তোমাকে ওয়ার্ন করতে। আজ-কাল খুব বেশিই নাক গলাচ্ছো না আমার পারসোনাল লাইফ নিয়ে!”

” কাম ডাউন ঈশান। মাথা ঠান্ডা করো। আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না, আরে!”

” ডন্ট ট্রাই টু অ্যাক্ট ইনোসেন্ট। নিজের বিশ্রী নাকটা নিয়ে আমার পারসোনাল লাইফে ইন্টারফেয়ার করা বন্ধ করো। নয়তো এমন অবস্থা করব যে কাউকে মুখ দেখাতে পারবে না।”

রোদেলা হেসে জিজ্ঞেস করে,” দিবার সাথে বুঝি তোমার ঝামেলা হয়েছে?”

” এটাই তো তোমার টার্গেট ছিল। কি ভেবেছো আমি কিছুই বুঝবো না? এম আই ডাম্ব টু ইউ?”

” আমাকে ভুল বুঝো না ঈশান। বিশ্বাস করো, আমি এমন কিছু চাইনি। তুমিই আমাকে আমার মেয়ের থেকে আলাদা করে দিয়েছো। আমি শুধু ওকে দেখতে চেয়েছিলাম। তাছাড়া দিবাই আমাকে তোমার ব্যাপারে প্রশ্ন করেছে৷ আমি শুধু সত্যিটা বলেছি।”

ঈশান হঠাৎ উঠে দাঁড়িয়ে টেবিলে হাত রেখে রোজার দিকে ঝুঁকে বলে,” ফারদার যদি আর কখনও তুমি আমার ওয়াইফ অথবা আমার মেয়ের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করো, আ’ম ওয়ার্নিং ইউ… খুব খারাপ হবে সেটা।”

রোদেলা মুঠো করে ঈশানের টাইটা জড়িয়ে ধরে বলে,” আমি এখনও মিস করি ঈশান। খুব মিস করি তোমাকে। জানো এখন পর্যন্ত কত প্রপোজ্যাল পেয়েছি? আমার পেছনে কত ছেলে পড়ে আছে! কাউকে পাত্তা দেইনি৷ কারণ আমি এখনও তোমাকে ভুলতে পারিনি। অথচ তুমি এতো দ্রুত মুভঅন করে নিলে? কিভাবে পারলে ঈশান?”

ঈশান আলতো করে নিজের টাই থেকে রোদেলার হাতটা সরিয়ে নেয়। তখনও গাঢ় চোখে তাকিয়ে আছে রোদেলা, দৃষ্টিতে তৃষ্ণা। ঈশান বলে,” তুমি মুভঅন করতে পারোনি এটা তোমার প্রবলেম রোদেলা। আমি তো তোমাকে আটকাচ্ছি না। যা খুশি করো। যাকে মন চায় বিয়ে করো। আই ডন্ট কেয়ার। জাস্ট লিভ মি।”

ঈশান উঠে দাঁড়িয়ে কিছুটা বিদ্রুপের স্বরে আবার হলে,” আর বাই দ্যা ওয়ে, তোমার মতো মেয়ের বিয়ের প্রয়োজন কি? বিয়ে ছাড়াই তুমি… ”

“ঈশান প্লিজ…” রোদেলা সশব্দে চেঁচিয়ে ওঠে। ভেতরের ঘর থেকে রেহানা উঁকি দেয়। ঈশান মৃদু হাসে।

রোদেলা মাথায় হাত ঠেকিয়ে কেমন অপ্রকৃতস্থের মতো বলে,” আমার একটা ভুলের জন্য তুমি বার-বার এভাবে আমাকে কথা শোনাতে পারো না।”

” ইট ওয়াজ নট জাস্ট আ মিস্টেক, ইট ওয়াজ আ ক্রাইম। ইউ ডিস্ট্রয়েড এভরিথিং। এখন বোকার মতো আশা নিয়ে বসে থেকো না যে আমি আবার ব্যাক করব। কোনো চান্স নেই। তাছাড়া এখন আমি ম্যারিড।”

রোদেলা আশান্বিত কণ্ঠে বলে,” তুমি বিয়ে করেছো রোজার জন্য। রোজার দেখা-শুনার জন্য কাউকে প্রয়োজন ছিল নয়তো দিবার মতো এতো সাধারণ একটা মেয়েকে কখনোই তুমি বিয়ে করতে না। আর তোমাদের মধ্যে এখনও কোনো সম্পর্ক হয়নি। এর কারণ তুমি এখনও আমাকে মিস করো। তুমি আমাকে ভুলতে পারছো না। এক্সেপ্ট ইট ঈশান।”

ঈশান এমনভাবে হাসে যেন খুব মজার কৌতুক শুনেছে। ভ্রু কুঁচকে বলে,” আমি জাস্ট দিবাকে স্পেস দিচ্ছি। তার মানে এই না যে ওর প্রতি আমার কোনো ফিলিংস নেই। যখন সময় হবে আমি ঠিকই ওর কাছে যাবো। রোজার দেখা-শুনার জন্য আমি একাই যথেষ্ট। সেজন্য দিবাকে প্রয়োজন নেই। আমি বিয়ে করেছি নিজের প্রয়োজনে। কারণ আমার একজন লয়্যাল পার্টনার দরকার ছিল।”

রোদেলা ফোঁড়ন কাটতে বলে,” দিবা বুঝি সেই লয়্যাল পার্টনার? যার বয়ফ্রেন্ডকে তুমি নিজের অফিসে চাকরি দিয়েছো?”

ঈশানের মুখ গম্ভীর হয়ে যায়। রোদেলা চোখের জল মুছে এবার গা জ্বালানো ভঙ্গিতে হাসে, বলে,” দেখো আবার, তোমার লয়্যাল পার্টনারের বয়সটা নিতান্তই কম৷ বুঝ হলে আবার না বয়ফ্রেন্ডের সাথে পালিয়ে যায়।”

” সবাইকে নিজের মতো ভেবো না।”

রোদেলা হাসতে থাকে উচ্চশব্দে। ঈশান খট করে দরজাটা খুলে বের হয়ে যায়। তখনও রোদেলা হাসছিল। ঈশান চলে যাওয়ার পর টেবিল থেকে টিস্যুপেপার নিয়ে চোখের জল মুছে। ঈশানের শেষ কথাগুলো টেপ রেকর্ডের মতো বাজতে থাকে তার মস্তিষ্কে,” আমি জাস্ট দিবাকে স্পেস দিচ্ছি। তার মানে এই না যে ওর প্রতি আমার কোনো ফিলিংস নেই। যখন সময় হবে আমি ঠিকই ওর কাছে যাবো।”

রোদেলার কান ঝাঁ ঝাঁ করে ওঠে। সে কিছুতেই ঈশানকে অন্যকারো সাথে সহ্য করতে পারবে না৷ “দিজ ইজ এবসার্ট!” চিৎকার করে সামনে থাকা কাচের ফ্লাওয়ার বাজটা ছুঁড়ে ফেলে রোদেলা।

ঈশান বাড়ি ফিরে সন্ধ্যায়। আয়েশা দরজা খুলে তাকে দেখে খুব ভ’য় পেয়ে যান। যেন এই মুহূর্তে তার উপস্থিতি একদম আশা করেননি। ঈশান ভ্রু কুঁচকে বলে,” কি হয়েছে তোমার? সামনে থেকে সরো!”

আয়েশা দ্রুত সরে যান। ঈশান ঘরের ভেতর প্রবেশ করতেই শুনতে পায় উঁচু আওয়াজে মিউজিক বাজছে। পা থেমে যায়। পেছনে ঘুরে চোখে প্রশ্ন নিয়ে একবার আয়েশার দিকে তাকায় সে। আয়েশা হাসার চেষ্টা করেন একটু।

ঈশান সোজা হেঁটে মেয়ের ঘরের দিকে যায়। উচ্চশব্দে মিউজিকের আওয়াজ ওখান থেকেই আসছে। দরজা খুলেই সে হতভম্ব। দিবা আর রোজা নাচতে নাচতে বালিশ ছিঁড়ে-ফুড়ে একাকার করে ফেলেছে। চারদিকে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে তুলা। বিছানার অবস্থা শোচনীয়। চাদর গড়িয়ে নিচে পড়ে আছে। সেদিকে তাদের হুশ নেই। কোমরে ওরনা বেঁধে মনের আনন্দে রোজাকে নিয়ে নাচছে দিবা। কতরকম অঙ্গভঙ্গি করছে, যেন দু’জনের বয়স সমান! সাউন্ডবক্সে তখন গান বাজছে,” সুপার গার্ল ফ্রম চায়না।”

ঈশান স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে থেকে দৃশ্যটা অবলোকন করে কয়েক মুহূর্ত। মাথায় হঠাৎ করেই একটা চিন্তা আসে, দিবার বয়স কত? সে কোনোভাবে বাল্যবিবাহ করে ফেলেনি তো? আয়েশা তখন পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন। তার মুখ ভীত। ঈশান এই অবস্থা দেখে কেমন রিয়েক্ট করে সেই নিয়ে তিনি যথোচিত চিন্তিত।

ঈশান একবার আয়েশার দিকে তাকায়। ফুপুর অপ্রস্তুত মুখ দেখে আরও বিরক্ত হয় সে৷ দিবার নজর হঠাৎ দরজার কাছে ঠেকতেই ঈশানকে দাঁড়ানো দেখে বিস্ময়ে এলোমেলো হয়ে ধপাশ করে উল্টে পড়ে সে। রোজা ভ’য়ে মুখে হাত চেপে ধরে। চোখ বড় বড় করে বাবার দিকে তাকায়। দিবাও তখন বোকার মতো চেয়ে আছে ঈশানের দিকে।

না চাইতেও ঈশানের চেহারায় একটা হাসি চলে আসে। তার ওই হাসি দেখে আয়েশা অবাক হোন।

” উনাকে বলবে পাঁচমিনিটে যেন আমার রুমে আসে।” এইটুকু বলে ঈশান চলে যায়।

দিবা ভ’য়ে উঠে দাঁড়িয়ে সাউন্ডবক্স অফ করে। তারপর জিজ্ঞেস করে,” উনি কি বললেন ফুপু? আমাকে বকলেন নাকি?”

আয়েশা তখন মুখ টিপে হেসে বলে,” রুমে যেতে বলেছে।”

দিবার চেহারা ফ্যাকাশে হয়ে যায়। সামনে আরও কি কি হবে ভেবেই গলা শুকিয়ে আসে। মুখে স্বীকার না করলেও তার মন জানে সে ঈশানকে কতটা ভ’য় পায়। মনে মনে আল্লাহর নাম নিয়ে দিবা ঈশানের ঘরে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়।

চলবে