পাইথন পর্ব-০৩

0
4

#পাইথন
#3rd_Part

আতিশ এবং ভাসিলা দাঁড়িয়ে আছে একটা সুন্দর বাড়ির সামনে। কাঠের তৈরি ইউরোপ স্টাইলের বাড়ির মতো। হাইওয়ে থেকে অনেক টা দূরে অবস্থিত। বাড়ির সামনে দুইটা ছোট ছোট নিম গাছ লাগানো৷

আতিশ জিজ্ঞেস করলো ” তুমি কি নিশ্চিত ইমাম নাউফি’কে এখানেই পাবো….?

ভাসিলা বললো ” হ্যাঁ ১০০ পার্সেন্টের চেয়ে একটু কম নিশ্চিত তাকে এখানেই পাবো…!

আতিশ বললো ” কতো পার্সেন্ট কম…?

ভাসিলা বললো ” ৯৯ পার্সেন্ট। ১ পার্সেন্ট চান্স আছে তার এখানে থাকার। চলো গিয়ে দেখা যাক…!

দু’জন সামনে এগিয়ে গেলো। ছোট্ট একটা কাঠের সিঁড়ি বেয়ে দরজার কাছে যেতে হবে। ভাসিলা আগে সিঁড়ি বেয়ে উঠে গেলো কিন্তু আতিশ উঠার সময় পা পিছলে দুমম করে পড়ে নাক বোঁচা হয়ে গেলো।

ভাসিলা বিরক্ত হয়ে বললো ” কি একটা আকাইম্মা জামাই দিছে লেখক আমাকে। কোন কিছুতেই ঠিক মতো চড়তে পারে না….!

আতিশ নাক ডলতে ডলতে উঠে বললো ” আরে সিঁড়ির ওপর পিচ্ছিল কিছু রাখা, দেখো……

ভাসিলা খেয়াল করে দেখলো সত্যি সত্যি সিঁড়িতে তেল জাতীয় কিছু ফেলে রাখা হয়েছে এক পাশে। ভাসিলা এবার সাবধান হয়ে চারদিকে চোখ বুলিয়ে বললো ” নিশ্চয়ই এখানে কেউ আছে এবং আমাদের ওপর নজর রাখছে…….

বলতে না বলতেই গাছের একটা শুঁকনো ডাল উড়ে এসে আতিশে’র গায়ে লাগতে নিলে ভাসিলা এক ঝটকায় হাত দিয়ে সেটা রুখে দিলো। আতিশ একটা খুঁটির আড়ালে নিজেকে লুকিয়ে নিয়ে বললো ” এসব কি হচ্ছে….!

ভাসিলা কিছু বলার আগেই বড় একটা পাথর উড়ে আসলো ভাসিলা’র দিকে। কোনমতে সেটা ছিটকে ফেলে দিয়ে বললো ” কে! এসব বন্ধ করে সামনে আসো। আমরা তোমার শত্রু নই….!

তখন-ই একটা বাচ্চার কন্ঠ ভেসে আসলো ” চলে যাও এখান থেকে। এটা পাবলিক প্রোপার্টি না যে, চাইলেই প্রবেশ করতে পারো….!

ভাসিলা কন্ঠের উৎস খুঁজে কাউকেই দেখতে পেলো না। আতিশ চেঁচিয়ে বললো ” আমরা ইমাম নাউফি’র কাছে এসেছি….!

ভাসিলা কানে আঙুল দিয়ে বললো ” সেটা আস্তে বললেই হয়। আমার কান কেন ফাটাচ্ছো….!

তখন-ই ঘরের দরজা খুলে গেলো এবং একটা বাচ্চা মেয়ে বের হয়ে এলো। আতিশ বললো ” ইমাম নাউফি বাচ্চা হয়ে গেলো কিভাবে। তা-ও আবার মেয়ে বাচ্চা…?

বাচ্চা মেয়েটা চোখ রাঙিয়ে বললো ” আমি ইমাম নাউফি না। আমার নাম অলিভা! তোমরা কি চাও নাউফি’র কাছে….!

ভাসিলা একটু অবাক হয়ে বললো ” তুমি ইমাম নাউফি’র কি লাগো…?

অলিভা বললো ” আমি তার গলায় লাগি, বুকে লাগি, মাথায় লাগি। এতো কিছু তো তোমার জেনে লাভ নেই। তুমি কে আর নাউফি’কে কেন খুঁজছো সেটা বলো….!

আতিশ বললো ” সাইজ হিসেবে একটু বেশি-ই ফটর ফটর করছে মেয়েটা….!

অলিভা বললো ” ছোট ছোট জিনিস-ই বড় বড় কাজ করে। সাইজ দেখে ধোঁকা খেয়ো না….!

আতিশ হা করে বললো ” এ তো ফুল থাকতেই পেকে গেছে। ফল হওয়ার সময় পায় নি….. এই মেয়ে! কি যেনো নাম বললে তোমার! হ্যাঁ অলিভা… আমরা কারা সেটা তোমার না জানলেও চলবে। ইমাম নাউফি আমাদেরকে খুব ভালোভাবেই চিনে। সে ঘরে থাকলে তাকে ডেকে দাও। না থাকলে আমরা তার আসার অপেক্ষা করবো। আমাদের জন্য চা নাস্তার ব্যবস্থা করো…..!

অলিভা হাতের ইশারায় একটা ফুলের টব টান দিয়ে এনে আতিশে’র মাথায় ভেঙে দিলো টাস করে। আতিশ আল্লাহ গো বলে চেঁচিয়ে মাথা চেপে ধরে বললো ” ভাসিলা তুমি কিছু বলছো না কেন….!

ভাসিলা একটু রেগে এক টানে অলিভা’কে নিজের কাছে নিয়ে এসে উঁচু করে হাওয়ায় ভাসিয়ে চোখে চোখ রেখে বললো ” এসব বন্ধ করো। না হলে আমি ভুলে যাবো তুমি কোন বাচ্চা….!

বাচ্চা মেয়েটা বললো ” আমিও চাই তুমি ভুলে যাও। দেখি তোমার কত শক্তি…..

এটা বলতেই একটা মোটা কন্ঠে ধমক ” কি হচ্ছে এখানে! অলিভা…..!

দেখা গেলো নাউফি দাঁড়িয়ে আছে একটু দূরেই। হাতে কিছু তাজা সবজি এবং একটা আধমরা খরগোশ। ভাসিলা একটু হেসে বললো ” আপনাকে খুঁজে পাওয়া এতটাও কঠিন ছিলো না প্রফেসর….!

নাউফি অলিভা’র হাতে খরগোশ এবং সবজি গুলো দিয়ে বললো ” রান্না ঘরে নিয়ে যাও এগুলো। আমি আসছি…..

অলিভা সেগুলো হাতে নিয়ে জিজ্ঞেস করলো ” এরা কারা নাউফি! কত্থেকে এসেছে এরা। তুমি কি তাদেরকে চেনো….?

নাউফি বললো ” হ্যাঁ এরা আমার পুরোনো বন্ধু। তুমি যাও……

অলিভা ভাসিলা’র সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় বিড়বিড় করে বললো ” নাউফি এসে তোমাকে আমার হাত থেকে বাঁচিয়ে নিলো। পরেরবার সাবধানে থেকো। প্রতিবার তোমাকে বাঁচানোর জন্য নাউফি আসবে না….!

ভাসিলা ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইলো অলিভা’র চলে যাওয়ার দিকে। আতিশ বললো ” বলছিলাম না ফল হওয়ার সময় পায় নি…..

নাউফি অলিভা’কে ডাক দিয়ে বললো ” খরগোশ শিকার করে এনেছি রান্না করে খাওয়ার জন্য। কাঁচা খাওয়া যাবে না….!

অলিভা বলতে বলতে গেলো ” কেন! তোমার বন্ধুরা কাঁচা মাংস খায় না। না খেলে বলো অভ্যাস করে নিতে। কাঁচা মাংসের স্বাদ-ই অন্যরকম…..!

নাউফি হাতাশার নিঃশ্বাস ফেলে বললো ” এই বাচ্চা আমাকে পা*গল বানিয়ে ছাড়বে…… আসো ভিতরে আসো…..!

এই বলে নাউফি ভাসিলা আর আতিশ’কে নিয়ে ঘরে গেলো। ভাসিলা জিজ্ঞেস করলো ” কে এই বাচ্চা। কোথায় পেয়েছেন এটাকে….?

নাউফি বললো ” পরে কখনও বলা যাবে। এখন বলো তোমরা কেন এখানে এসেছো আর আমাকে খুঁজে পেলেই বা কিভাবে….!

ভাসিলা বললো ” আমাদের পক্ষে এটা সম্ভব ছিলো না। কিন্তু যার পক্ষে সম্ভব ছিলো আমরা আগে তাকে খুঁজে বের করেছি। তারপর তার কাছ থেকে আপনার খোঁজ পেয়েছি….!

নাউফি একটু হেসে বললো ” হাশিয়া আন্টি……

আতিশ বললো ” আচ্ছা স্যার আপনি সবকিছু থেকে দূরে চলে এসেছেন কেন। বুঝলাম আপনি ফাতিহা ম্যাডামকে অনেক ভালোবাসতেন। তার শূন্যতা পূরণ হওয়ার না। তাই বলে আমরা কি আপনার আপনজন না। আমাদের সাথেও তো থেকে যেতে পারতেন….!

নাউফি আতিশে’র কাঁধে হাত রেখে বললো ” শুনো ভাই! জীবনে এমন এক সময় আসে কখনও কখনও, যখন তোমার আশেপাশে অনেক মানুষ থাকা সত্বেও নিজেকে একা মনে হয়। একজন মানুষের অভাব জীবনকে উলটপালট করে দিতে পারে…..!

ভাসিলা বললো ” কিন্তু এখন আপনার সাহায্য লাগবে আমাদের…!

নাউফি বললো ” মাফ করবে! আমি সবকিছু ছেড়ে দিয়েছি। এখন আর ঐ অভিশপ্ত জীবনে ফিরতে চাই না…!

ভাসিলা বললো ” কিন্তু প্রফেসর…..

নাউফি ভাসিলা’কে থামিয়ে বললো ” কোন কিন্তু নেই। আমি এইসব কাজ করতে গিয়ে আমার সবকিছু হারিয়েছি। এখন আমি একা থাকতে চাই। তোমরা এসেছো। খাওয়া দাওয়া করো। আড্ডা দাও। তারপর চলে যাও….!

এই বলে নাউফি চলে যেতে লাগলো। আতিশ পেছন থেকে বললো ” তাহলে ঐ বাচ্চা টা কে? সে তো কোন মানুষ না। আপনি তাকে কেন বশ করে রেখেছেন। যদি সবকিছু ছেড়েই দিয়ে থাকেন….!

নাউফি থেমে গেলো এবং শান্ত গলায় বললো ” সে আমার পাপের প্রায়শ্চিত্ত। ওর-ও আমার মতো এই দুনিয়ায় কেউ নেই….!

ভাসিলা এবার বললো ” জিজা! জিজা মরতে বসেছে…!

নাউফি একটু অবাক হয়ে এগিয়ে এসে বললো ” কি হয়েছে জিজা’র…?

**দৃশ্য পরিবর্তন………

আচ্ছা তাহলে বলতে চাচ্ছো তুমি মা-রা যাও নি। কিন্তু তোমার আত্মা শরীরের সাথে সংযোগ স্থাপন করতে পারছে না….!

হাইকালে’র প্রশ্ন শুনে জিজা বললো ” হ্যাঁ ঠিক তাই। আমার মা বাবা নিশ্চয়ই সবরকম চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে আমাকে খোঁজার। হয়তো খুব তাড়াতাড়ি আমি তাদের সিগনাল পেয়ে যাবো। আমি আত্মা হলেও আমার পূর্ণশক্তি আছে এবং সকল কাজ করতে পারবো যা স্বাভাবিক অবস্থায় করা যায়। কিন্তু এভাবে আমি বেশিদিন জীবিত থাকবো না। আমার শরীরে ফিরে যেতে হবে….!

পাশে থাকা পাইথন বললো ” তাহলে তুই সাকারে কিভাবে এলি। এটা তো পাপিষ্ঠ আত্মাদের জন্য…!

হাইকাল বললো ” কারণ সে পাপ করেছে। প্রতারণা আর ছলচাতুরী করে শতশত গ্রহে কব্জা করেছে। হাজার হাজার প্রাণ নিয়েছে। এমনকি রাণী ফারিশতা’র সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছে….!

পাইথন হতবাক হয়ে বললো ” কি!! এসব আমি কি শুনছি জিজা। তুই এমন কাজ কিভাবে করলি…..?

জিজা বললো ” আরে থাইপন! সরি পাইনথ, আরেহহহ নাইপথ….

পাইথন দাঁত কটমট করে বললো ” পাইথন……

জিজা বললো ” হ্যাঁ পাইথন! আগে হাইকালে’র পুরো কথা শুনে নাও। তারপর রিয়াকশন মারো….!

হাইকাল বললো ” হ্যাঁ জিজা এসব করেছিলো কিন্তু সে নিজে থেকে করে নি। তাকে দিয়ে করানো হয়েছে। সে অন্য কারো বশে ছিলো….!

পাইথন অবাক হয়ে বললো ” কে! কার এতো বড় সাহস হলো জিজা’কে বশ করার….?

হাইকাল বললো ” তোমার কি মনে হয় পাইথন! জিজা’র মস্তিষ্ক নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা কার থাকতে পারে…?

পাইথন জিজা’র দিকে তাকিয়ে বললো ” গারকুন…..?

জিজা মাথা নাড়িয়ে বললো ” হ্যাঁ! আমার জন্মদাতা পিতা আমাকে দিয়ে এসব করিয়েছে। এমন কি আমি আমার মা’য়ের সাথেও যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছিলাম। তালিফ’কে আঘাত করেছিলাম….!

পাইথন রাগে গজগজ করে বললো ” গারকুন! আমি যদি তখন থাকতাম তাহলে…..

হাইকাল বললো ” সে তার কৃতকর্মের সাজা পেয়েছে এবং পেয়ে যাচ্ছে। ভূগর্ভস্থ কারাগারে তার কঠিন শাস্তি হচ্ছে প্রতিনিয়ত….!

জিজা বললো ” বাকি কথা কি পরে বলা যাবে! না মানে আমার অনেক জরুরি ভিত্তিতে বাথরুমে যেতে হবে…!

হাইকাল হাসতে হাসতে একজন সৈনিককে ডাক দিয়ে জিজা’কে বাথরুমে নিয়ে যেতে বললো। সৈনিক জিজা’কে পেছনে আসতে বলে হাঁটা দিলো। জিজা চলে গেলে হাইকাল বললো ” রাতের ভোজনে আজ অনেক মেহমান আসবে। তুমি যাও মহল সাজানোর কাজে হাত লাগাও পাইথন….!

পাইথন বলতে নিলো সিলভিয়া’র কথা কিন্তু থেমে গেলো। তারপর জ্বি আচ্ছা বলে চলে গেলো। হাইকাল চিন্তিত হয়ে মনে মনে বললো ” আজ পর্যন্ত কেউ সাকার রাজ্য থেকে বের হতে পারে নি। এখন যদি জিজা বের হয় তাহলে দেখাদেখি অনেক সৈনিক বের হতে চাইবে। তারা অবাধ্য আচরণ শুরু করবে। সাকার রাজ্যে বিশৃঙ্খলা দেখা দিবে, যা আগে কখনও হয় নি। জিজা’কে কোন ভাবেই বের হতে দেয়া যাবে না। যেভাবেই হোক তাকে সাকার রাজ্যেই রেখে দিবো…….!

**এদিকে সৈনিকের সাথে জিজা হাঁটছে হেলেদুলে। সৈনিক জিজ্ঞেস করলো ” শুনলাম তুমি নাকি ভ্যাম্প…?

জিজা বললো ” এটা তো সবাই শুনেছে। দেখেছে কয়জন ভ্যাম্প কি করতে পারে…!

সৈনিক বললো ” না বাবা না! আমার দেখার সখ নাই। শুনেই গলা শুঁকিয়ে গিয়েছে। কিভাবে তাদেরকে মেরেছো তুমি….!

এর মাঝেই সৈনিককে একজন এসে ডেকে নিয়ে গেলো জরুরি কাজের কথা বলে। জিজা চেঁচিয়ে বললো ” আরে বাথরুম কই। আমি কি এখানেই পারফরম্যান্স দিবো নাকি….!

সৈনিক যেতে যেতে বললো ” সামনে গিয়ে একটা বড় খুঁটি দেখেতে পাবে। সেখান থেকে বামে গেলেই বাথরুম পেয়ে যাবে….!

জিজা হতাশ হয়ে এগিয়ে যেতে যেতে বললো ” পৃথিবী হলে জঙ্গলে গিয়ে বসে পড়তাম। ধূরর কবে যে ফিরে যেতে পারবো….!

বিড়বিড় করতে করতে জিজা খুঁটির কাছে পৌঁছে গেলো কিন্তু ভুলে গেলো সৈনিক ডান দিকের কথা বলছিলো নাকি বাম দিকে। একটু ইতস্তত বোধ করে ডানে চলে গেলো। গিয়ে দেখলো অনেক সুন্দর সুসজ্জিত পাহাড়ি ঝর্ণা। সেখানে বড় বড় পিতলের হাঁড়ি পেতে রাখা হয়েছে। যার ভিতর ঝর্ণার পানি পড়ছে। জিজা খুশি হয়ে বললো ” বাহ্ পিতলের কমোড! আবার পানিও পড়ছে। সাকার রাজ্য যতোটা নোংরা মনে করেছিলাম ততো টা না…..!

**রাতের দৃশ্য……..

সাকার রাজ্যের মহল নান্দনিক ভাবে সাজানো হয়েছে। নানানরকম খাবার পরিবেশন করা হচ্ছে। সৈনিকরা তৃপ্তি নিয়ে আনন্দের সাথে খাচ্ছে সবাই। অন্যান্য রাজ্য থেকে অনেক নামি-দামি মেহমান এসেছে হাইকালে’র আমন্ত্রণে। জিজা আর পাইথন একসাথে বসে আছে খাবার সামনে নিয়ে।

জিজা বললো ” আদার সামনে রাখা আছে। ঝাঁপিয়ে পড়ছো না কেন…?

পাইথন কিছু একটা ভাবছিলো আর হাইকালে’র দিকে আঁড়চোখে তাকাচ্ছিলো বারবার। জিজা’র কথা শুনে পাইথন বললো ” তোর খাওয়া তুই খা। আমার টার দিকে নজর দেস কেন….?

জিজা নিজের প্লেট থেকে একটা খাসির রান উঠিয়ে কামড় দিয়ে বললো ” না আমি ভাবছিলাম ব্লেন্ডার খারাপ। তাই খাচ্ছো না….!

পাইথন বললো ” ব্লেন্ডার খারাপ মানে…?

জিজা বললো ” পেট খারাপ! শুনো না খেতে পারলে হালকা কাশি দিয়ে আমাকে ইশারা করবে। আমি খেয়ে নিবো….!

পাইথন নিজের থালাও জিজা’র দিকে ঠেলে দিয়ে বললো ” নে ঠুস তুই। আমি আছি আরেক পেরেশানিতে। খাবার গলা দিয়ে নামবে না….!

জিজা মুখে এক গাদা খাবার ঠুসে বললো ” গলা দিয়ে না নামলে পেছন দিয়ে ঢুকাও। পেটে যাওয়া দিয়ে কথা। খাবার তো আর বুঝবে না তুমি গলা দিয়ে নামাইছো নাকি পেছন……

পাইথন হাতজোড় করে বললো ” চুপ কর মেরি মা চুপ কর। কথা না বলে তুই মন দিয়ে আদার খা…!

জিজা বললো ” আমি তো ভাই মুখ দিয়েই খাবো। আচ্ছা কি এতো চিন্তা করছো শুনি। তোমার মাঝে কি চলছে এখন….?

পাইথন বললো ” আমি সেই যাদুকরী মহিলার কাছে পৌঁছাতে চাই। হাইকাল নিশ্চয়ই তার জন্য খাবার পাঠাবে কোন সৈনিককে দিয়ে। আমি তার পিছু নিবো…..!

হঠাৎ একজন সৈনিক এসে কাঠের তৈরি পানির গ্লাসে পানি এনে জিজা’কে দিলো। আরেক গ্লাস পাইথন’কে দিলো।
জিজা পানিতে চুমুক দিতেই একটু দূরে দেখলো সেই পাহাড়ি ঝর্ণার পিতলের কমোড থেকে পানি উঠিয়ে উঠিয়ে সবাইকে দেয়া হচ্ছে। জিজা এটা দেখে ফুরুততত করে মুখের পানি দিলো।
পাইথন রাগ করে বললো ” কি করছিস তুই। এভাবে কেউ পানি খায়। আমাকে দেখ কিভাবে পানি খেতে হয়।

এই বলে পাইথন পানির গ্লাসে চুমুক দিলো। জিজা ফিসফিস করে বললো ” ঐ যে পিতলের পাত্র থেকে পানি দিচ্ছে, সকালে আমি ঐটার ভিতর-ই হি*সু করছিলাম কমোড ভেবে……

এটা বলতেই পাইথন-ও ফুরুতততত করে পানি ফেলে দিয়ে কাশতে কাশতে বললো ” সত্যি বলছিস…..

জিজা মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বললো। পাইথন মুখে আঙুল ঢুকিয়ে ওয়াত ওয়াত করে বমি করার চেষ্টা করতে লাগলো। দূর থেকে হাইকাল এটা খেয়াল করে জিজ্ঞেস করলো ” সব ঠিক আছে তো পাইথন….?

পাইথন কিছু না বলে হাতের বুড়ো আঙুল দিয়ে ঠিক আছে সূচক ইশারা করে উঠে চলে যেতে লাগলো। জিজা টান দিয়ে বসিয়ে নিয়ে বললো ” বসো তো! বাচ্চা পোলাপানের হি*সুতে ভিটামিন থাকে। ঐ দেখো এক সৈনিক হাইকালে’র দিকে যাচ্ছে…..!

পাইথন তাকিয়ে দেখলো হাইকাল একজন সৈনিক-এর কানে কি যেনো বলছে। পাইথন জিরাফের মতো গলা লম্বা করে সেটা খেয়াল করছে সাবধানতা অবলম্বন করে।

কিছুক্ষণ পর সেই সৈনিক একটা বড় খাবারের থালা হাতে নিয়ে কোথাও রওয়ানা হলো। পাইথন বললো ” পেয়েছি। নিশ্চিয়ই সে ঐ যাদুকরীর কাছে যাচ্ছে……শোন আমি তার পিছু নিচ্ছি। তুই এদিক টা খেয়াল রাখিস। আর দয়া করে কোন গড়বড় করিস না।

জিজা বললো ” তুমি নিশ্চিন্তে যাও! আর আমার ওপর একটুও ভরসা রাইখো না….!

পাইথন আরো কিছু বলতে চেয়েও চোখ বড় করে আস্তে আস্তে সেখান থেকে বের হয়ে সৈনিকের পিছু নিলো।

জিজা খাবারের থালা দূরে ঠেলে দিয়ে একটা দুষ্ট হাসি দিয়ে বললো ” অনেকক্ষণ যাবৎ একশন হচ্ছে না। কাউকে মারার জন্য হাত চুলকাচ্ছে। যাই একটা আ*কাম করে আসি……

এই বলে সেখান থেকে বেরিয়ে গেলো। হাইকাল তখন মেহমানদের সাথে মোজমাস্তিতে ব্যস্ত।

জিজা বাইরে এসে কিছু সৈনিককে এক জায়গায় দাঁড়িয়ে আড্ডারত অবস্থায় দেখে তাদের দিকে এগিয়ে গিয়ে বললো ” তোমাদেরকে এখানে রাখা হয়েছে কি আড্ডা দেয়ার জন্য….?

সৈনিকরা অবাক হয়ে জিজা’র দিকে তাকিয়ে বললো ” কি বলতে চাও তুমি….?

জিজা বললো ” তোমাদের রাজ্যে একজন যাদুকরী মহিলা আছে। সে কোথায় থাকে সেটা কি তোমরা জানো….?

একজন সৈনিক বললো ” না! আমরা শুধু জানি সে আছে। কিন্তু কোথায় আছে সেটা শুধুমাত্র হাইকাল এবং তার কাছের দু’একজন সৈনিক জানে….!

জিজা বললো ” আজকে আরেকজন জানতে চলেছে। সর্দার তার জন্য খাবার পাঠিয়েছে একজন সৈনিককে দিয়ে। পাইথন তার পিছু নিয়েছে চুপিচুপি। সে জেনে গেলে হাইকাল তোমাদের কি হাল করবে ভাবতে পারছো….!

এটা শুনেই সৈনিকরা তাড়াহুড়ো করে চলে গেলো পাইথন’কে ধরতে। জিজা একটা শয়তানি হাসি দিয়ে বললো ” পাইথন সৈনিকের পেছনে, তোমরা পাইথনে’র পেছনে, আর আমি তোমাদের পেছনে….এখন খেলা জমবে….. Action is begin…….. 💀💀💀

To be continue…………

Written by : #Galib_Abraar

#পাইথন

Galib Abraar – গালিব আবরার