পাইথন পর্ব-০৫

0
14

#পাইথন
#5th_Part

**তখন সন্ধ্যা পেরিয়ে অন্ধকার নেমে এসেছে চারদিকে। মেঘাচ্ছন্ন আকাশে চাঁদ টাও আজ ঘুমিয়ে পড়েছে সবার আগে। কিছুক্ষণ পর পর বিজলি চমকাচ্ছে দূর আকাশে। গাছের ডালপালা গুলো দক্ষিণে বাঁক নিচ্ছে ঝড়ো বাতাসে।

তার মাঝে ছাঁদের কার্নিশে পা ঝুলিয়ে বসে আছে তালিফ আর জিজা। জিজা আইসক্রিম খাচ্ছে আর তালিফ লোভনীয় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
জিজা বললো ” যদি আমার পেট খারাপ হয় তাহলে তোমার খবর আছে তালিফ…!

তালিফ বললো ” আমার নজরে যদি তোর পেট খারাপ হতো তাহলে তোর বেশি অর্ধেক জীবন কাঁটতো বদনা নিয়ে দৌড়াতে দৌড়াতে….!

জিজা বললো ” ফা*লতু কথা বলবা না। তুমি কিন্তু চাইলেই দুইটা আইসক্রিম আনতে পারতা। টাকা বাঁচানোর জন্য একটা আইসক্রিম এনে এখন আমার টার দিকে নজর দিচ্ছো। লিমিটের একটা কিপ্টামি থাকা দরকার….!

তালিফ বললো ” আমি কিপ্টা না। ইচ্ছে করেই দুইটা আনি নাই। কারণ দুইটা আনলে তুই-ই খাইতি দুইটা। আমারে শেষে ডাণ্ডা ধরিয়ে দিতি। তোরে আমি চামড়ায় চামড়ায় চিনি বজ্জাত….!

জিজা বললো ” সে যাই বলো। তুমি কিন্তু কিপ্টে এটা সবাই জানে। শুনো আমাদের টিচার বলেছে কিপ্টা মানুষ ভালো না। কথায় আছে, পিঁপড়ার ধন কৃপণে খায়…..

তালিফ রাগ কর বললো ” চুপ কর তুই। তোর আইসক্রিম চা-টা শেষ হলে চল ঘরে চল। না হলে তোর মা আমাকে বানাবে এই বৃষ্টিময় আবহাওয়ায় তোকে নিয়ে ছাঁদে বসে থাকার জন্য….!

জিজা ফিক করে হেসে বললো ” তুমি মা’কে এতো ভয় পাও কেন…?

তালিফও মুচকি হেসে বললো ” কারণ আমি তোর মা’কে অনেক ভালোবাসি। ভালোবাসার মানুষকে ভয় পাওয়া উচিত। তাদের রাগ আর অভিমানকে মূল্য দিতে হয়।

জিজা বললো ” মা’কে তুমি কতো টা ভালোবাসো শুনি….?

তালিফ বললো ” দেখ ভালোবাসার ডেফিনেশন অনেক ভাবেই দেয়া যায়। আমার কাছে কারো সাথে সব সময় থাকা টা ভালোবাসা না, বরং কাউকে ছাড়া থাকতে না পারা টাই ভালোবাসা। আমি তোর মা’কে ছাড়া থাকার চিন্তাও করি না কখনও….!

জিজা আইসক্রিমের কাঠি টা নিচে ফেলে বললো ” আমার মা অনেক লাকি তোমাকে পেয়েছে। কিন্তু আমি প্রমাণ চাই। মা’কে ভালোবাসো এর প্রমাণ কি…?

তালিফ চোখ দিয়ে জিজা’র দিকে ইশারা করে বললো ” তুই-ই তো বড় প্রমাণ। আমি তোর মা’কে ভালো না বাসলে তুই আসলি কোথা থেকে….!

জিজা অবাক হয়ে বললো ” ইতা কি কও! ভালোবাসলেই কি বাচ্চা হয় নাকি। আমিও তো তোমাকে অনেক ভালোবাসি। তাহলে আমার বাচ্চা হয় না কেন..?

তালিফ হকচকিয়ে গিয়ে বিড়বিড় করে বললো ” এই বান্দরে কোন কথারে কই নিয়া ঠেকায় আল্লাহ জানে। তার আগেই টপিক চেইঞ্জ করে ফেলি….আচ্ছা শোন। ঘরে চল। দেখি তোর মায়ের রান্না বান্না কদ্দুর হলো….!

জিজা তালিফে’র রানে থাপ্পড় মেরে বললো ” ডোন্ট চেইঞ্জ দ্যা টপিক! আচ্ছা বলো আমি কিভাবে হয়েছি….!

তালিফ ভাবতে ভাবতে বললো ” তুই! তুই হয়েছিস হলো….. হ্যাঁ! আমি আর তোর মা আল্লাহর কাছে দোয়া করছি একটা ফুটফুটে সুন্দর বাবুর জন্য। তারপর আল্লাহ এক ফেরেশতা পাঠিয়ে তোকে দিয়ে গেছে….!

জিজা বললো ” তালিফ! তুমি নিজেকে চালাক ভাবো নাকি আমাকে বোকা ভাবো বলো তো! আরে এটা ২০২৪ সাল। আর তুমি আমাকে শুনাচ্ছো ১৯৯০ সালের বাচ্চাদের কাহিনি……..

পেছন থেকে ফারিশতা হাসতে হাসতে বললো ” তোমার বাবা নিজেকে বেশি চালাক ভাবে বুঝছো…..!

ফারিশতা এসে জিজা’র পাশে বসলো। জিজা বললো ” আচ্ছা মা তুমি বলো আমি কিভাবে হয়েছিলাম…?

তালিফ বললো ” বজ্রপাতের সাথে ওপর থেকে পড়ছোস তুই বান্দর….!

ফারিশতা বললো ” তুমি চুপ থাকো। বাচ্চাকে বলে দিলেই হয়…..শুনো তুমি যেদিন হয়েছিলে সেদিনও ঠিক এমন ঝড় হয়েছিলো। আকাশে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছিলো। তোমাকে একটা ভিশন দেখাই। তাহলেই বুঝতে পারবে……

এই বলে ফারিশতা পানি পান করে মুখ থেকে একটা বাবল ছাড়লো। বাবল টা ধীরে ধীরে অনেক টা বড় হয়ে গেলো এবং তার মাঝে ভেসে উঠলো একটা দৃশ্য ” যেখানে এক নারীমূর্তি প্রসব বেদনায় কাতরাচ্ছে। কয়েকজন দাসী তার খেদমতে নিয়োজিত। এক বৃদ্ধা মহিলা তার সন্তান বের করে আনার চেষ্টা করছে। নারীমূর্তির চিৎকারের সাথে বারবার বাইরে বজ্রপাত হচ্ছে।

হঠাৎ বাচ্চার কান্নার শব্দ ভেসে আসলো। দাইমা ছোট্ট একটা ফুটফুটে বাচ্চাকে হাতের তালু তে নিয়ে হেসে বললো ” রাজকন্যা এসেছে আপনার ঘরে রাণী সাহেবা।

তারপর বাচ্চাটাকে ঐ নারীমূর্তির কোলে দিয়ে দিলো। সে বাচ্চাটাকে বুকে জড়িয়ে নিলো…..

আর তখন বাবল টা টুস করে ফেটে গেলো। ভিশনও বন্ধ হয়ে গেলো। তালিফ অবাক চোখে ফারিশতা’র দিকে তাকিয়ে রইলো। ফারিশতা জিজা’কে বললো ” দেখেছো! ঠিক এভাবেই ছোট বাচ্চা হয়। আর তুমিও এভাবেই হয়েছিলে….!

জিজা বললো ” তাহলে এই ব্যাপার। আর তালিফ এই সহজ বিষয়টাকে কত ঘুরাচ্ছিলো এতক্ষণ যাবৎ। বুদ্দু কাহি কা……

ফারিশতা একটু হেসে বললো ” ঠিক আছে এখন চলো ঘরে চলো। খাবার ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে….

এই বলে ফারিশতা উঠে দাঁড়ালো। জিজা আগে আগে চলে গেলো ঘরে। তালিফ পেছন থেকে ফারিশতা’কে বললো ” দাঁড়াও! তুমি এটা কিসের ভিশন দেখালে জিজা’কে। এটা তো সিলভিয়া ছিলো আর জন্ম নেয়া বাচ্চা টা জিজা নিজেই ছিলো…!

ফারিশতা বললো ” জিজা একদিন না একদিন সত্যের মুখোমুখি হবেই। সেদিন যেনো প্রথম দেখাতেই তার জন্মদাত্রী মা’কে চিনে নিতে পারে। তাই তাকে তার মা’য়ের চেহারা দেখিয়ে দিয়েছি…..!

তালিফ বললো ” তা না হয় বুঝলাম। কিন্তু জিজা যেদিন সত্যি টা জানতে পারবে সেদিন কি আমাদের ভুল বুঝবে..?

ফারিশতা একটু হেসে বললো ” জিজা একদিন সব বুঝবে। হয়তো যতটুকু বুঝবে না ততটুকুই আমরা হবো…….

**দৃশ্য পরিবর্তন……

আমার মা তোমাকে আমার ভিশনে দেখিয়েছিলো। যখন তুমি আমাকে জন্ম দিচ্ছিলে। যদিও এটা তখন আমি জানতাম না। তাহলে তুমি আমার জন্মদাত্রী মা সিলভিয়া…….?

জিজা’র কথা শুনে সিলভিয়া হতভম্ব হয়ে রাগান্বিত কন্ঠে বললো ” কি আবোলতাবোল বকছো তুমি। আমার মেয়ে ছিলো তাইবা। তুমি কে….?

পেছন থেকে পাইথন বললো ” রাক্ষস গারকুনের সাথে অকাম করে এখন ভুলে গেলেন রাণী সাহেবা। জিজা আপনার এবং গারকুনে’র অকামের ফসল….!

সিলভিয়া’র চোখ বড় হয়ে গেলো। কাঁপা কাঁপা ঠোঁটে বলতে লাগলো ” না! এটা হতে পারে না। আমি ভেবেছিলাম ফারিশতা আমার সেই ছোট্ট বাচ্চাকে মেরে ফেলেছে রাজ্য দখল করার পর। এটা হতে পারে না। আমি মানতে পারছি না এটা…….!

হঠাৎ হাইকালে’র কন্ঠে শুনা গেলো ” তুমি মানো আর না মানো। জিজা তোমার-ই মেয়ে সিলভিয়া….!

দেখা গেলো হাইকাল তার বিশাল সেনাবাহিনী নিয়ে সেখানে এসে উপস্থিত হয়েছে। মহলে আসা মেহমানরা মূলত ছিলো ভয়ানক রাক্ষস। হাইকাল পরিকল্পনা করে ভোজনের আয়োজন করে জিজা’কে ফাঁসিয়েছে সাকার রাজ্যে রেখে দেয়ার জন্য।

পাইথন বললো ” হাইকাল! আপনি এই জঞ্জাল নিয়ে এখানে কি করছেন…?

হাইকাল বললো ” আমারও একই প্রশ্ন পাইথন। তুমি এখানে কি করছো আমার যাদুকরীর ঘরের নিকট…..!

জিজা সেদিকে কান না দিয়ে আস্তে আস্তে এগিয়ে গেলো সিলভিয়া’র দিকে। সিলভিয়া’র চোখ পানিতে টলোমলো করছে। হাতে থাকা মাথার খুলি টা পড়ে গেলো নিচে। কাঁপতে কাঁপতে হাঁটু গেড়ে বসে পড়লো সেখানে। হাত বাড়িয়ে জিজা’কে বুকে জড়িয়ে ধরতে চাইলো…… কিন্তু জিজা সিলভিয়া’র কাছে গিয়ে দুমম করে তার মুখে মেরে বসলো।

বিকট শব্দে সিলভিয়া উড়ে গিয়ে তার ঝুপড়ি ঘর ভেঙে আঁচড়ে পড়লো। জিজা’র পুরো শরীর থেকে বিদ্যুৎ-এর ছেঁটা বের হতে লাগলো চিকচিক করে। চোখ গুলো নীলচে আলোর মতো জ্বলছিলো৷ রাগে গজগজ করে জিজা বললো ” এটা ছিলো আমার মা ফারিশতা’র জন্য। তাকে তুমি অনেক কষ্ট দিয়েছো…….

সিলভিয়া কোকরাতে কোকরাতে উঠে কান্না করে দিয়ে বললো ” ফারিশতা তোমার মা না! আমি, আমি তোমার মা, আমি তোমাকে জন্ম দিয়েছি…..!

জিজা এক ঝটকায় গিয়ে সিলভিয়া’কে ধরে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে বললো ” তুমি আমাকে জন্ম দিয়েছো কিন্তু মা হতে পারো নি। আমার মা রাণী ফারিশতা। নিজের ক্ষমতা আর সিংহাসন বাঁচানোর জন্য যাকে তুমি সবরকম কষ্ট দিয়েছো। এমন কি নিজের মেয়ে তাইবা’কে পর্যন্ত সবার কাছ থেকে গোপন রেখে রাণী ফারিশতা’র বন্ধু রূপে গুপ্তচর বানিয়ে রেখেছিলে…..!

সিলভিয়া আবার উঠে কাঁদতে কাঁদতে বললো ” কি বলছো এসব তুমি। আমি তোমার মা এটা জানার পরেও তুমি আমাকে অস্বীকার করছো। ঐ ফারিশতা, ফারিশতা তোমাকে আমার কাছ থেকে আলাদা করেছে। সে তোমার মনে বিষ ঢুকিয়ে দিয়েছে…..!

জিজা আরো রেগে এক লাফে উড়ে গিয়ে সিলভিয়া’র বুকের ওপর পারা দিয়ে ধরলো। সিলভিয়া জমিনে দেবে গেলো হালকা করে। জিজা বললো ” রাণী ফারিশতা’র ব্যাপারে মুখ খোলার সময় সাবধানে মুখ খুলবে। আমি তোমার মেয়ে জানা সত্বেও সে আমাকে নিজের মেয়ের মতো লালনপালন করেছে। কখনও বুঝতে দেয় নি আমি তার জাত শত্রুর মেয়ে। তোমার কাছে ক্ষমতা আর সিংহাসন ছিলো সবকিছু। যদি আমি তোমার কাছে বড় হতাম তাহলে আমার শক্তির অপব্যবহার করে না জানি তুমি আমাকে দিয়ে কতো জঘন্য কাজ করাতে। কিন্তু রাণী ফারিশতা কখনও আমার শক্তির খারাপ ব্যবহার করে নি। সে আমাকে এই শক্তি গোপন রাখতে শিখিয়েছে। আমার মা হওয়ার যোগ্য তুমি না! রাণী ফারিশতা……..!

সিলভিয়া এবার প্রচন্ড রেগে এক ঝটকায় জিজা’কে ছুঁড়ে ফেলে উঠে দাঁড়ালো হাওয়ায় ভেসে। পাইথন এক ছুটে গিয়ে জিজা’কে ধরে ফেললো।

সিলভিয়া কর্কশ গলায় বললো ” সত্যি-ই ফারিশতা তোকে খুব ভালোভাবেই বড় করেছে। আমার মেয়ে একটা ভ্যাম্প হলে আমি তো প্রতিটা শহরে ধ্বংসলীলা চালাতাম তোকে ব্যবহার করে……হাইকাল! জিজা’কে সাকার রাজ্য থেকে বের হতে দেয়া যাবে না। তাকে আমার দরকার। ভেবেছিলাম ইমোশনাল ড্রামা করে তাকে বশ করে নিতে পারবো। কিন্তু না! সে আমার ভাবনার চেয়েও বেশি বুঝদার………….

পাইথন জিজা’র কানে বললো ” ডাইনি তার আসল রূপে ফিরে এসেছে দেখ। আমি তো ভাবছিলাম তুই তার ইমোশনাল ড্রামা দেখে ফিট হয়ে যাবি। আর তার জড়িয়ে ধরে বলবি মেলি মা মিল গায়ি…….!

জিজা বললো ” চুপ করো তুমি! তুমি জানতে এই যাদুকরী মহিলা সিলভিয়া। তাই আমাকে বিভিন্ন বাহানায় এখান থেকে সরিয়ে নিতে চাচ্ছিলে। তোমার সাথে হিসাব তো আমি পরে নিচ্ছি। আগে এই জঞ্জাল দূর করা যাক……!

পাইথন বললো ” তুই আমার হিসেব নিলে পিতার চেয়ে পুত্রের বয়স বেশি হয়ে যাবে। কোনদিনও হিসেব মিলবে না৷ তার চেয়ে ভালো আমরা দু’জন মিলে এদের সূত্র চেপে ধরি চল….!

জিজা বললো ” আচ্ছা তার মানে ঐটাকে সাকার রাজ্যে সূত্র বলে….

তখন-ই হাইকাল উচ্চ স্বরে বললো ” জিজা! পাইথন! আত্মসমর্পণ করো তোমরা। কথা দিলাম আমি তোমাদের পাপ ক্ষমা করে দিবো। জিজা তুমি কোথাও যাবে না। তুমি এখানে তোমার মা’য়ের কাছে থেকে যাবে। আর পাইথন তুমি চাইলে আমি তোমাকে সেনাপতি বানিয়ে দিবো সাকার রাজ্যের…..!

জিজা বললো ” পাইথন ঘুষ খায় না! আর আমি এই ডাইনিকে আমার মা বলে পরিচয় দেবো না৷ তাহলে বাকি থাকলো কি….?

পাইথন জিজা’র সামনে এসে দাঁড়িয়ে বললো ” যুদ্ধ…….

হাইকাল বললো ” আমি জানতাম তোমরা এটাই বেছে নিবে। এই জন্যই অন্যান্য রাজ্য থেকে এই ভয়ানক শক্তিশালী রাক্ষস ভাড়া করে এনেছি। তোমরা দু’জন এতগুলো সৈনিক আর রাক্ষসদের সামনে কতক্ষণ টিকতে পারবে….?

জিজা পাইথনে’র সামনে এসে বললো ” কে বলেছে আমরা সবার সাথে যুদ্ধ করবো। দশজনকে মারবো। একশো জন পালিয়ে যাবে। হাজার জন হাঁটু গেড়ে বসে আত্মসমর্পণ করবে….!

সিলভিয়া অবাক হয়ে বললো ” এ তো আমার চিন্তার চেয়েও বেশি বিপজ্জনক। এই না হলে আমার রক্ত। তোর সাথে লড়ে মজা পাবো আমার ছোট্ট মেয়ে…..

জিজা লড়াইয়ের জন্য তৈরি হয়ে বললো ” তাহলে আসো মজা দেই তোমাকে…… পাইথন! আর ইউ প্রস্তুত….?

পাইথন হাত ঘুরিয়ে ঘাসফড়িং-এর মতো একশন নিয়ে বললো ” অলওয়েস…….

হাইকাল তার সৈনিকদের নির্দেশ দিলো ” শিকল বন্দী করে নিয়ে আসো দু’জনকে আমার কাছে…..!

নির্দেশ পেয়ে সবাই একসাথে ঝাঁপিয়ে পড়লো। হাইকাল আর সিলভিয়া পেছনে দাঁড়িয়ে রইলো।

শুরু হয়ে গেলো সাকার সৈনিকদের সাথে পাইথন আর জিজা’র তুমুল লড়াই। দুইজন দুই দিক থেকে আক্রমণ শুরু করলো। জিজা’র বৈদ্যুতিক ঝটকা যার গায়ে লাগছে সে ছাই হয়ে বাতাসে মিশে যাচ্ছে। পাইথনে’র পূর্ণ শক্তি না থাকলও তার তলোয়ার বাজির কাছে সব সাকার সৈনিক ধরাশায়ী। জিজা আর পাইথন’কে কেউ স্পর্শও করতে পারছে না। তার আগেই হয় ছাই হয়ে বাতাসে মিশে যাচ্ছে, না হয় কয়েক টুকরো হয়ে জমিনে আঁচড়ে পড়ছে…….

এই দৃশ্য দেখে সিলভিয়া একটু ভয় পেয়ে বললো ” রাক্ষসদের পাঠানো উচিত এখন। আপনার সৈনিকরা সব কচুকাঁটা হচ্ছে ওদের কাছে….!

হাইকাল বললো ” খেলতে দাও তাদের। তারা যখন সৈনিকদের সাথে লড়াই করে ক্লান্ত হয়ে যাবে তখন রাক্ষসদের মাঠে নামাবো….

দেখা গেলো শতশত সৈনিকের শরীরের টুকরো টুকরো অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে। অনেকেই সেখান থেকে পালিয়ে গেলো। বাকি যারা ছিলো সবাই হার মেনে নিয়ে হাতিয়ার ফেলে দিয়ে হাঁটু গেঁড়ে বসে পড়লো জিজা’র সামনে।

জিজা প্রচণ্ড ক্লান্ত হয়ে গিয়েছে। পাইথনও জোরে জোরে শ্বাস নিয়ে চিৎকার করে বললো ” আর কেউ আছে…..?

হাইকাল একটু হেসে রাক্ষসদের ইশারা করলো। ভয়ানক রাক্ষসরা এগিয়ে এলো জিজা এবং পাইথনে’র দিকে। জিজা হাঁপাতে হাঁপাতে বললো ” আমি ভালো ফিল করছি না পাইথন। আমার শরীর দরকার। হয়তো আমার আত্মা আর বেশিক্ষণ টিকবো না…..!

পাইথন বললো ” ব্যাস আরেকটু। এই কয়টাকে মেরে সিলভিয়া’র গলায় পারা দিয়ে জেনে নিবো তোর শরীরে ফিরে যাওয়ার উপায়…..!

জিজা কাঁপা কাঁপা পায়ে দাঁড়িয়ে বললো ” ঠিক আছে…..

রাক্ষসরা তাদের পূর্ণশক্তি সহ আক্রমণ করলো পাইথন আর জিজা’র ওপর।
এদিকে সিলভিয়া বললো ” তারা যদি রাক্ষসদেরও পরাজিত করে…?

হাইকাল বললো ” তারা পরাজিত করলেও আমাদের দু’জনের সাথে লড়াই করার শক্তি অবশিষ্ট থাকবে না। দেখো এখন-ই তারা ক্লান্ত। আমরা খুব সহজেই তাদেরকে বন্দী করে নিতে পারবো….!

সিলভিয়া বললো ” বাস্তবে এটাই হয়। রাজা মহারাজারা নিরীহ সৈনিকদের মরার জন্য পাঠায় যুদ্ধে। তারপর যখন বিজয় ঘনিয়ে আসে তখন রাজা যুদ্ধের ময়দানে নেমে পতাকা তুলে বিজয় নিজের নামে করে নেয়। আর চাপা পড়ে যায় হাজারো সাধারণ সৈনিকের প্রাণ…..!

হাইকাল রেগে বললো ” ধর্মের মুখে চোরের বাণী! না চোরের মুখে ধর্মের বাণী। তুমি নিজেই নিজের পাপে ডুবে আছো। আমাকে জ্ঞান দিতে এসো না…..!

এদিকে জিজা আর পাইথন মিলে কয়েকটা রাক্ষস’কে মেরে ফেলে রাখলেও বাকিদের সাথে আর পেরে উঠছে না। জিজা এতটাই ক্লান্ত যে দম টেনে উঠাতে পারছে না। পাইথনও তলোয়ারের ভার নিতে পারছে না।

এক পর্যায়ে রাক্ষসরা জিজা এবং পাইথন’কে শিকলবন্দী করে ফেললো। দু’জনকে হাঁটু গেড়ে বসিয়ে দিয়ে তারা শিকল ধরে রাখলো টান দিয়ে।

হাইকাল আর সিলভিয়া হাসতে হাসতে এগিয়ে আসলো। হাইকাল এসে পাইথনে’র মুখে এক ঘুষি মেরে বললো ” বলেছিলাম আমার সেনাপতি হয়ে যাও। কিন্তু এখন তোমাকে চিরকাল কারাগারে পঁচে মরতে হবে…..!

পাইথন রাগে চেহারা কাঁপিয়ে দাঁত কটমট করে বললো ” আমি পাইথন! আমি পঁচে গেলেও সার হয়ে সেখান থেকে আবার জন্ম নিবো। আর প্রতি জন্মে আমি তোকে শেষ করবো…..!

হাইকাল পাইথন’কে আরেকটা ঘুষি মেরে বললো ” রশি জ্বলে গেছে কিন্তু আগুন এখনো আছে…..!

এদিকে সিলভিয়া জিজা’র কাছে বসে জিজা’র গালে হাত দিয়ে বললো ” ও মেয়ে আমার। কত মসৃন তুমি। এখনো সময় আছে তুমি আমার কাছে থেকে যাওয়ার জন্য মেনে নাও। আমি হাইকাল’কে বুঝিয়ে তোমাকে শাস্তি থেকে রেহাই দিবো। আর তোমার শরীর ছাড়াই তোমার আত্মাকে জীবিত রাখার ব্যবস্থা করে দিবো…..!

জিজা কাঁপতে কাঁপতে সিলভিয়া’র মুখের দিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করে কিছু বললো। সিলভিয়া সেটা বুঝতে না পেরে কান এগিয়ে নিলো জিজা’র মুখের দিকে। জিজা আস্তে আস্তে বললো ” ইউ আর নট মাই মাদার, ইউ আর মাদার ফা**র…………

এই বলে সিলভিয়া’র কানে কামড় বসিয়ে দিলো খপ করে। সিলভিয়া চিৎকার করে কোনরকম নিজেকে ছাড়িয়ে কান চেপে ধরে জিজা’কে কয়েকটা আঘাত করলো।

পাইথন চিৎকার করে বললো ” জিজা’কে করা প্রতিটা আঘাতের হিসেব আমি নিবো তোর কাছ থেকে…..!

সিলভিয়া আরো ক্রোধান্বিত হয়ে একটা অদৃশ্য আগুনের চাবুক হাত থেকে বের করে পাইথন’কে সেটা দিয়ে আঘাত করতে লাগলো। জিজা হিংস্র পশুর মতো গর্জন দিয়ে উঠে বললো ” আমি তোমার কলিজা ছিঁড়ে ফেলবো যদি পাইথন’কে আরেকটা আঘাত করো………

রাক্ষসরা জিজা’র শিকল কোনরকম ধরে রাখলো। হাইকাল সিলভিয়া’কে থামিয়ে বললো ” এটা যথেষ্ট। জিজা’কে তুমি রেখে দাও। তাকে নিজের বশে করে নাও যাদুবিদ্যা প্রয়োগ করে। আর পাইথন’কে কারাগারে নিক্ষেপ করা হবে…….!

এই বলে দু’জনকে দুই দিকে নিয়ে যেতে লাগলো শিকলবন্দী করে। জিজা’কে সিলভিয়া’র তন্ত্র গুহায় এবং পাইথন’কে কারাগারের দিকে……

পাইথন চিৎকার করে বলছে ” জিজা! চিন্তা করিস না। আমি তোকে নিতে আসবো খুব তাড়াতাড়ি। কথা দিলাম…..

জিজা কিছু বলতে যাবে ঠিক তখন-ই………

প্রচন্ড এক আলোর ঝলকানিতে চারদিক জ্বলজ্বল করে উঠলো। বৈদ্যুতিক এক ঝটকার মতো কম্পন সৃষ্টি হয়ে রাক্ষসদের ছিটকে ফেলে দিলো দূরে। জিজা এবং পাইথনও ছিটকে পড়লো। হাইকাল এবং সিলভিয়া থমকে দাঁড়িয়ে গেলো। এদিক ওদিক তাকিয়ে খুঁজতে লাগলো ঐ আলোর উৎস ভীত হয়ে।

হঠাৎ একটা কন্ঠ ভেসে এলো ” এতো তাড়াহুড়ো কেন। মাত্রই তো আসলাম। স্বাগত জানাবে না……?

পাইথন একটা স্বস্তির হাসি দিয়ে বললো ” ইমাম নাউফি……….!

জিজাও সুন্দর করে হেসে বললো ” ভ্যাসলিন আন্টি…..

হাইকাল আর সিলভিয়া পেছনে তাকালো এবং বললো ” আরে এরা কারা………….💀💀💀

To be continue……….

Written by : #Galib_Abraar

#পাইথন

Galib Abraar – গালিব আবরার