#ক্যামেলিয়া
#ফারহানা_চৌধুরী
[পর্ব ৬]
❌কপি করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ❌
ধ্রুব রাতের খাবার শেষ করে সবে ঘরে এসে বসেছে। তখন তার সেলফ্ফোন বেজে উঠলো। সে বিরক্ত ভঙ্গিতে পকেট থেকে ফোন বের করলো। স্ক্রিনে তাকিয়ে কলার আইডি দেখে সব বিরক্তি যেন কর্পূরের ন্যায় উড়ে গেলো। ঠোঁটে এক চিলতে হাসি এসে হানা দিলো। ঝটপট হাতে ফোন রিসিভ করে কানে ঠেকালো। লম্বা করে সালাম দিলো। ওপাশ থেকে ইনায়া তা শুনে তপ্ত শ্বাস ফেললো। সালামের জবাব দিয়ে বলল—“আপনি শুধরালেন না আর!”
ধ্রুব হাসলো। পরপর অবাক হওয়ার ভান করে বলল—“আমি কি করলাম ইনায়া?”
ইনায়া ঠোঁট টেনে হাসলো—“কিছু করেন নি।”
“তবে এমন অপবাদ লাগানোর মানে কি সোনা?”
ইনায়া বিরক্ত হলো। শাসিয়ে বলল—“আমাকে একদম এসব উল্টো-পাল্টা নামে ডাকবেন না।”
ধ্রুব মিছে অভিমানী গলায় বলল—“তুমি এমন কেন?”
ইনায়া ভ্রু কুঁচকে ফেললো—“কেমন?”
“কেমন যেনো, কাটখোট্টা টাইপ।”
“আমি এমনই। কেন, বিয়ের আগে জানতেন না আমি কেমন?”
ধ্রুব হাসলো। মজার ছলে বলল—“জানতাম। তখন তো ভালোই লেগেছিলো।”
ইনায়া রেগে গেলো। খেঁকিয়ে উঠলো—“তো, এখন কি লাগছে? আপনারা না ছেলেরাই ভালো না। দু’দিন যেতেই বউকে ভালো লাগে না আর, না!”
ধ্রুব স্ব শব্দে হেসে উঠলো। মেয়েটার রাগে মজা পেলেও তাকে আর রাগাতে চাইলো না। এমনিতেই ফোন করে না, কথা বলে না। পরে দেখা যাবে একদমই কথা বার্তা বন্ধ সব। তখন সে কি করবে? সব ভেবেই চুপ থাকলো। তাপর হালকা গলায় জিজ্ঞেস করল—“ফোন করলে কেন?”
“করা যাবে না বুঝি?”
“তা যাবে। তবে, এত রাতে একজন বিবাহিত পুরুষকে ফোন করে কথা বলছো। লজ্জা করলো না?”
ইনায়ার ভড়কানোর কথা থাকলেও সে ভড়কালো না। বরং পাল্টা হেসে বলল—“বিবাহিত পুরুষটারই বা কি লজ্জা! একটা মেয়ে ফোন করলো, আর সেও ফোনে খেঁজুরে আলাপ জুঁড়ে দিয়েছে। বিবাহিত হয়ে এমন করতে আপনার লজ্জা করলো না?”
ধ্রুব হাসলো। মেয়েটার কথায় এতো ঝাঁঝ! সে বলল—“আচ্ছা, বলো কেন ফোন দিলে?”
ইনায়া এবার মূখ্য কথায় এলো। বলল—“কালকে আমার বাসায় আসবেন।”
ধ্রুব চমকে ওঠার মতোন করে বলল—“ছিঃ! ইনায়া, ছিঃ! সেম অন ইয়্যু!”
ইনায়া থতমত খেলো—“আমি কি করলাম? কি ছিঃ?”
“তুমি আমাকে তোমার ফাঁকা বাসায় ডাকছো? একটা ছেলেকে এমন বলতে তোমার লজ্জা করলো না?”
ইনায়া রাগে কটমট করে বলল—“আমি কখন বললাম বাসা ফাঁকা?”
ধ্রুব বোকা-সোকা হাসলো—“ওহ! বলোনি? আমি ভুল শুনেছি বোধহয়। যাই হোক, কি বলছিলে যেন?”
ইনায়া চেঁতে গিয়ে বলল—“ছাতার মাথা বলছিলাম। শুনতে হবে না!”
ধ্রুব হাসি চেপে বলল—“আচ্ছা, রাগ করো না। ঠিক আছে, কাল আসব। কিন্তু কেন ডেকেছো, সেটাও তো জানা দরকার, তাই না?”
“বাবা দাওয়াত দিয়েছে। কালকে আব্বু-আম্মুর অ্যানিভার্সারি তাই।”
এমন নয় ব্যাপারটা ধ্রুব জানতো না। রহমান সাহেব বেশ আগেই তাকে বলে রেখেছিলেন। দাওয়াতও দিয়েছিলেন তার মা-বাবা সহ তাকে সুমিতা আর রহমান আগেই। তবুও এখন ইনায়া বলাতে সে না জানারই ভং ধরলো—”তাই! অবশ্যই আসবো, কখন?”
“সন্ধ্যার আগে আগে চলে আসবেন। আর আঙ্কেল আন্টিকেও আনবেন সাথে।”
ধ্রুব চটজলদি মাথা দোলালো—“আচ্ছা। আচ্ছা!”
ইনায়া এবার বিদায় নিতে চাইলো। তাই বলল—“রাখছি এখন, হ্যাঁ?”
বলে কল কাঁটতে নিলো। তখনই শুনলো ধ্রুবর ব্যগ্র ডাক—“ইনায়া?”
ইনায়া শুনে আবারো ফোন কানে ঠেকালো। জবাব দিয়ে বলল—“বলুন?”
ধ্রুব কথা খুঁজে পেলো না। কি বলবে বুঝতে না পেরে হতাশ শ্বাস ছাড়লো। বলল—“কিছু না।”
ইনায়া মাথা দোলালো। অধীর হাতে ফোন কেটে দিলো। মোবাইল পাশে ফেলে রেখে জোরে শ্বাস টানলো। এই ছেলের সাথে কথা বলাই বিপদ। ঠাস ঠাস কিসব কথা যে বলে দেয়! লজ্জায় কান কাটা যাবে তার, যদি এগুলো কেউ শোনে। নাহ্! এই ছেলের থেকে সে দশ হাত দূরে থাকবে। নাহলে কখন কিসব বলে তার ঠিক নেই। মুখের তো লাগাম নেই। অসভ্য লোক একটা!
_____
“গত ক্লাসের নোটগুলো দিস তো।”
নূহা তাকালো বাদলের দিকে। ছেলেটা বইয়ে মুখ গুঁজেই তাকে বলেছে। নূহা আশেপাশে তাকালো। তারা এখন ক্যান্টিনে। লোকজন কি সুন্দর আড্ডা দিচ্ছে। অথচ এই ছেলেকে দেখো, এখানে এসেও বইয়ে মুখ গুঁজে রেখেছে। যেন মুখ তুললেই কেউ কষে চড় বসাবে। নূহার এতো রাগ হলো! মন চাইলো পাশে থাকা গ্লাস দিয়ে বাদলের মাথা ফাঁটিয়ে দিতে। বিধিবাম! সে পারবে না এই কাজ করতে। এতে যেন রাগ তড়তড়িয়ে আরো বাড়লো। নূহা তেতে গিয়ে বলল—“পারবো না, আমি।”
বাদলের ভ্রু গুটিয়ে এলো। বই থেকে মুখ তুলে তাকালো নূহার দিকে। চেয়ারে হেলান দিয়ে তার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল—“কি হয়েছে রে তোর? এমন ক্ষেপে আছিস কেন সকাল থেকে?”
নূহা এমন প্রশ্নে আরো রেগে গেলো। ক্ষ্যাপাটে গলায় বলল—“তো কি করবো? তোকে মাথায় তুলে নাঁচবো?”
বাদল এবার বলল—“আমাকে মাথায় তোলার মতোন শক্তি তোর গায়ে নেই। পারবিও না। সেখানে নাচা তো আরো দূরের কথা।”
নূহার রাগ যেন আকাশ ছুঁলো। হতবুদ্ধি হয়ে তাকালো বাদলের দিকে। তারপর রাগে গজগজ করতে করতে কাঁধের ব্যাগ নিয়ে উঠে চলে গেলো সেখান থেকে। বাদল বোকা বনে গেলো। ফ্যাল ফ্যাল করে নাহার যাওয়া দেখলো। মেয়েটা এতো রেগে আছে কেন? সে করেছে কি? ভুল কিছু তো বলে নি। নাহার মতোন অতটুকু একটা মেয়ে জীবনেও তার মতোন মানুষকে তুলতে পারবে? এ আদৌ সম্ভব?
______
“তা ছোট আপু, বলো প্রেম কেমন চলছে?”
বলেই বিছানায় ধপ করে শুয়ে পড়লো ইশমাম। ইনায়া ফোনে কিছু কাজ করছিলো। ভাইয়ের কথা ভ্রু কুঁচকে সরু চোখে তাকালো তার দিকে। অবুঝ গলায় জিজ্ঞেস করল—“কার প্রেম?”
“কার আবার? তোমার।”
“আমি আবার কবে প্রেম করলাম?”
ইশমাম অবাক হলো। বিস্ময় নিয়ে উঠে বসলো—“তুমি প্রেম করছো না?”
ইনায়া দুদিকে মাথা নাড়ালো—“না।”
ইশমাম বলল—“সে কি! ধ্রুব ভাইয়া এখনো তোমাকে প্রপোজ করে নি?”
ইনায়া মুখ কুঁচকে তাকিয়ে বলল—“কিহ!”
“ওমন করে তাকাচ্ছো কেন?”
“তোর বয়স কত? বড়ো বোনকে এসব কথা বলিস, লজ্জা করে না?”
ইশনাম দুপাশে মাথা নাড়ালো। হেসে হেসে বলল—“নাহ্! করে না।”
ইনায়া ঘরের খোলা দরজার দিকে আঙুল তাক করে ইশমামকে বলল—“রুম থেকে বের হ।”
ইশমাম এবার মুখ কালো করে তাকালো—“এমন করো কেন?”
“যাবি তুই!”
ধমক শুনে ইশমামের মন ক্ষুন্ন হলো। শুকনো মুখে বের হয়ে গেলো ঘর থেকে। ইনায়া রেগে ফোঁস করে শ্বাস ফেললো। এসব ছোট খাটো পুঁচকেরাও এখন কিসব কথা বলে! বড় বোনকে জিজ্ঞেস করছে তার প্রেম নিয়ে। তাও মানা যায়। তবে, ধ্রুবকে টানার মানে কি? সবাই কেমন হয়ে যাচ্ছে দিনকে দিন। কেমন যেন অসহ্যকর!
#চলবে….