#ক্যামেলিয়া
#ফারহানা_চৌধুরী
[পর্ব ২০]
❌কপি করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ❌
সকালে তীব্র হইচইয়ের শব্দে ঘুম ভাঙলো ইনায়ার। তড়িঘড়ি করে উঠে বসলো ও। কি হচ্ছে বুঝতে সময় নিলো অবচেতন মস্তিষ্ক। মিনিট সেকেন্ডের ব্যবধানে বুঝে আসতেই বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো হম্বিতম্বি করে। সারা ঘরো চোখ বুলিয়েও ধ্রুবকে পেলো না। সে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালো। উপর থেকে ঝুঁকে তাকিয়ে দেখলো সকলে বাগানের একজায়গায় জড়ো হয়ে দাঁড়িয়ে। জায়গাটা কি তা বুঝতে সময় লাগলো না তার। ধ্রুবও ওখানে। চোখেমুখে হতভম্ব ভাব স্পষ্ট। একপাশে চুপচাপ দাঁড়িয়ে সে। একপর্যায়ে থেমে হুট করেই নিজের ঘরের বারান্দার দিকে চাইলো। ইনায়াও দাঁড়িয়ে থাকায় চোখে চোখ পড়লো। ধ্রুবের শীতল দৃষ্টিকে উপেক্ষা করলো না সে। কিছুক্ষণ ভাববিহীন চেহারায় তাকিয়ে রইলো সেদিকে। ধীরে ধীরে কিছু একটা মনে আসতেই ইনায়ার কপালে হাত চলে গেলো,
-“শিট! শিট!”
একটা ভুল হয়েছে। চরম ভুল। গতকাল উন্মাদনার বসে ছুড়ি চালিয়েছিলো গ্লাভস ব্যবহার না করেই। সেখানে তার আঙুলের ছাপ পেতে তেমন একটা অসুবিধে হবে না। তার উপর ছুড়ি এনেই ওভাবে রেখেছিলো। কোথাও লুকানোও হয়নি। কতবড় কাঁচা কাজ এগুলো। কি করে করলো সে? ধিক্কার তাকে!
সে দাঁড়ালো না ওখানে। এক দৌড়ে নিচে নামতে লাগলো। প্রায় উল্কার বেগে ছুটে এলো রান্নাঘরে। পাগলের মতো খুঁজতে লাগলো ছুরিটা। কোথায় রেখেছিলো ঠিক মনে পড়লো না। আশেপাশে চেয়ে দেখলো এক কর্ণারে পলিথিনের সাথে পেচিয়ে কিছু রাখা। ইনায়া ত্বরিত তা হাতে নিলো। পলিথিন খুলতেই কাঙ্ক্ষিত জিনিসটার দেখা মিলল। সেটা নিয়েই বেসিনের কাছে গেলো। রক্তের দাগ শুকিয়ে গেছে। উটকো গন্ধে গা গুলিয়ে আসার কথা থাকলেও ইনায়ার বিশেষ কোনো প্রতিক্রিয়া এলো না। ঘষে হলেও ছুরি ধুঁয়ে নিলো। পলিথিনে ভালো করে পেঁচিয়ে পিছু মুড়তেই ধ্রুবকে দেখলো। গম্ভীর মুখের ধ্রুবকে বেচারি এবার কিছুটা হলেও ভড়কালো। যথাসাধ্য নিজেকে শান্ত রাখলো। যদি এমন কোনো অপ্রস্তুতকর প্রতিক্রিয়া সে করে ধরা পড়াটা অস্বাভাবিক কিছু হবে না। আর অবশ্যই অবশ্যই সে চায় না এমন কিছু হোক। তার কর্ম-প্রক্রিয়ার মাঝে ধ্রুব গম্ভীর স্বর ভাসলো কানে,
-“এখানে কি করছো?”
সে কি কিছুই দেখেনি? বোধ হয় না। তাহলে নিশ্চয়ই জিজ্ঞেস করতো না? ইনায়া হাসলো কিছুটা। ওড়নার আড়ালে লুকানো ছুরিটা চেপে রাখলো শক্ত করে,
-“এমনি। ওই সবাই বাগানে কি করছে? বাসায় কেউ নেই কেন?”
-“কোকোকে পাওয়া যাচ্ছিলো না সকাল থেকে। বাইরে ওকে খুঁজতে গিয়েছিলো সবাই।”
-“তাহলে ওখানে দাঁড়িয়ে আছে কেন সবাই?”
ধ্রুব চোখ ছোট ছোট করে চাইলো,
-“কোকোর লাশ পাওয়া গিয়েছে। খন্ড-বিন্ড, প্রচন্ড বাজে ভাবে।”
-“লাশ!”
কৃত্রিম বিস্ময়ে চোখমুখে অবিশ্বাস্য ভঙ্গি ফুটিয়ে জিজ্ঞেস করল ইনায়া। যেন এর থেকে বিস্ময়ের আপাতত তার কাছে কিছুই নেই। সে ওভাবেই চেয়ে বলল,
-“কি করে কি হলো? মানে বিড়ালটা—”
অসম্পূর্ণ বাক্য সম্পূর্ণ করার প্রয়োজন তেমন একটা পড়লো না। ধ্রুব এগিয়ে এলো ক’কদম। তার এগিয়ে আসা কদমে পা মিলিয়ে পিছু সরে গেলো ইনায়া কাউন্টারের সাথে গা ঘেঁষতেই ধ্রুব ঝুঁকে এলো। বলিষ্ঠ দু’হাত রাখলো মেয়েটার দু’বাহু ঘেঁষে, কাউন্টারে। হাতে শিরা-উপসশিরা স্পষ্ট। ইনায়া সেদিক থেকে চোখ সরালো। ধ্রুবর দিকে চাইল। ধ্রুব ইনায়ার পুরো মুখটা পর্যবেক্ষণ করলো। পরপর ছোট ছোট চোখে চেয়ে ফিচেল হেসে বলল,
-“অন্তত আমার সামনে এসব নাটক না করলেও চলবে। নিজেকে কষ্ট দিয়ে ভিন্ন প্রতিক্রিয়া দেখানোর কোনো প্রয়োজন নেই।”
ইনায়া শক্ত মুখে চাইলো,
-“কিসের নাটক?”
-“কোকোকে তুমি মেরেছো?”
-“এমন কেন মনে হলো?”
-“ঘাবড়াচ্ছো?”
-“ঘাবড়ানোর কিছু আছে কি?”
ধ্রুব টিপ্পনী কাটে,
-“নেই না? তাহলে বলো, ছুরি লুকোচ্ছিলে কেন?”
ইনায়া শুষ্ক ঢোক গিললো। কিছু বলার আগে ধ্রুব আবারও জিজ্ঞেস করল,
-“কোকোকে তুমি মেরেছো?”
ইনায়া এবার চোখে চোখ রাখলো,
-“মেরেছি।”
বেশ সহজ ভাষায় সীকারক্তি। ধ্রুব হাসলো,
-“কেন?”
ইনায়ার মুখ কুঁচকে এলো,
-“আপনি ওকে অতো আহ্লাদ কেন করছিলেন? আমার ওকে একটুও পছন্দ হয়নি। এজন্য মেরেছি।”
-“এতো হিংসা, যে কোকোকে মেরে ফেললে?”
-“হিংসা না। আমার ওকে পছন্দ হয়নি স্রেফ। আর আমার অপছন্দের কিছু আমার সামনে থাকুক, আমার স্বামীর কাছে ঘুরুক, সেটা আমার আরো বেশি অপছন্দের।”
ইনায়া ধ্রুবর একহাত সরালো। বাহু বন্ধন ছেদ করলো। হনহনিয়ে উপরে চলে গেলো। ঘরে পা ফেলতেই ধ্রুবও এলো। দরজা আটকে হাত টেনে ধরলো। ইনায়া ফিরে চেয়ে কিছু বলার আগে আশ্চর্যজনক এক কাজ করে বসলো৷ তার হাত টেনে তাকে পাশের স্টাডি টেবিলে বসিয়ে দিলো। পূর্বের ন্যায় আবারও হাত রাখলো মেয়েটার দু’পাশে। বাহুতে আবদ্ধ রেখে ঝুঁকে দাড়ালো তার সামনে। ইনায়া চমকালো। বড়সড় চোখে চাইলো। ব্যাপর বুঝে এলে ধ্রুবকে সরাতে তার হাত ধরতে গেলেই কঠোর নিষেধাজ্ঞা কর্ণধার হলো,
-“ডোন্ট। হোয়াট ইজ দিস বিহেভিয়ার মিসেস আহসান?”
ইনায়ার হাত থামলো। মাথা ফিরিয়ে চাইলো। কিছু ভেবে নিজেও হেলে পড়লো পিছে। তালুতে ঠেস দিয়ে বসে রইল। ভ্রু উঁচিয়ে জিজ্ঞেস করল,
-“আমি যা করেছি সেটা কি ভুল ধ্রুব?”
ধ্রুব হাসে। প্রবল আত্নবিশ্বাসের সহিত বলে,
-“আমার স্ত্রীর করা কোনো কাজ ভুল হতে পারে না। এন্ড আই হার্টফুলি বিলিভ দ্যাট।”
ইনায়া তৃপ্তিদায়ক হাসলো। মাথা দুলিয়ে বলল,
-“গুড! আই লাইক দ্যাট টোন্।”
ধ্রুব কুর্নিশের ভঙ্গি করে বলল,
-“এজ ইউ সে ইউর হাইনেস্।”
ইনায়া খিলখিলিয়ে হেসে উঠলো৷ ধ্রুব এবার কাছে এসে দাঁড়ালো। অধিকার বোধ খাটিয়ে দূরত্ব মেটালো। মেয়েটার কোমড়ে হাত রাখলো৷ কাছে টেনে বলল,
-“বাট ইউ আর বিইং রাফ লেইটলি। দ্যাটস্ নট আ গুড থিং। লেইট মি টিচ ইয়্যু, হাউ টু বি আ গুড গার্ল।
(#চলবে…)