নীল বসন্ত পর্ব-১৬+১৭

0
44
নীলবসন্ত

#নীল_বসন্ত
#লেখনীতে_মিথিলা_মিতু
#পর্বসংখ্যা_১৬
কে*টে গেল চারদিন।নিহা আর শান্তর দেখা পেল না।নিহা মন খারাপ করে ক্লাসে বসে ছিল।রোদেলা বলল,
-“এভাবে মন খারাপ করো না নিহা।দেখতে ভালো লাগছে না।তোমাকে এতটা শান্ত,নির্জীব ভালো লাগে না।চঞ্চল নিহাকেই আবার দেখতে চাই।”

নিহা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলল,
-“কি করবো বলো?শান্ত ভাইকে না দেখা অব্দি যে আমার শান্তি লাগবে না।আচ্ছা,রোদ শান্ত ভাই কেন কলেজে আসেন না?উনি ঠিক আছেন তো?উনার হাতের ক্ষ*তটা ঠিক হয়েছে তো?”

রোদেলা ফোস করে শ্বাস ছাড়লো।নিহাকে না দেখলে হয়তো বুঝতোই না একটা মেয়েও একতরফা ভালোবেসে মরিয়া হতে পারে।রোদেলা বলল,
-“সামনে আমাদের হাফ ইয়ারলি এক্সাম।এসব মাথা থেকে ঝেড়ে এক্সামের প্রিপারেশন নাও নিহা।আস্তে আস্তে সব ঠিক হয়ে যাবে।নিজের ভালো থাকার দায়িত্ব কারো উপরে দিয়ে দিও না।নয়তো তার উপরেই তোমার ভালো থাকা ডিফেন্ড করবে।এতে তোমার জীবনটা দুর্বিষহ হয়ে যাবে। প্লিজ নিহা আমার কথা শুনো।”

নিহা বুঝার ভঙ্গিতে মাথা নাড়লো।ক্লাসে টিচার এলেন।ক্লাস নিলেন ক্লাস শেষে চলে গেলেন।রোদেলাদের আর সপ্তাহ বাদেই হাফ ইয়ারলি এক্সাম।রোদেলা আপাতত পড়াশোনা নিয়ে প্রাণপণে ছুটছে।এক্সামে ভালো রেজাল্ট না করলে তাহসিনের সামনে মুখ দেখাবে কি করে?যে করেই হোক তার এক্সামে ভালো রেজাল্ট করতেই হবে।

এখন রাত।রোদেলা পড়ছে।ইদানীং তাহসিন ফেরার আগ পর্যন্ত সে পড়ার টেবিলে থাকে।তাহসিন প্রায়ই এসে দেখে রোদেলা পড়ছে।আজও তার ব্যতিক্রম হলো না।তাহসিন বাসায় ফিরে দেখলো রোদেলা পড়ার টেবিলে।তাহসিন হেসে বলল,
-“গুড গার্ল দেখি পড়াশোনা করছে?”

রোদেলা মাথা দুলিয়ে বলল,
-“গুড গার্লের তো আর ক’টা দিন বাদেই এক্সাম তাই এখনো পড়ার টেবিলে।”

তাহসিন বলল,
-“তাহলে তো গুড গার্লের ভালো রেজাল্ট কেউই ঠেকাতে পারবে না।”

রোদেলা একটু ভাব নিয়ে বলল,
-“হুম অবশ্যই।”

তাহসিন হেসে ফেলল।সে ফ্রেশ হতে গেল।এইদিকে রোদেলা পড়া শেষ করে খাবার টেবিলে বেড়ে তাহসিনকে ডাকলো।তাহসিন এলে দুইজন একসাথে খেয়ে তারপর ঘুমাতে গেল।

রোদেলা তখন তাহসিনের বুকে মাথা রেখে সারাদিনের গল্প করতে লাগলো।এমনকি নিহার কথাও বলতে বাদ রাখলো না।চঞ্চল মেয়েটা কেমন নির্জীব হয়ে গেছে সেটাই জানালো।তাহসিন বলল,
-“শান্তকে তোমরা আশেপাশেও দেখো না?”

-“না।নিহা তো অনেক খুঁজেছে।কিন্তু পায় নি।সে নাকি অনেকদিন ধরেই কলেজে আসে না।এইজন্যই তো নিহা অনেক চিন্তায় আছে।”

-“অনেকদিন কোথায়?মাত্র তো চারদিন।”

-“এই চারদিনই যে নিহার কাছে অনেকদিন।কি করবে বলুন?ওর ধারণা ও শান্তকে ভালোবেসে ফেলেছে।”

-“কি বলো?এভাবে এক দেখায় ভালোবাসা হয় নাকি?বড় জোর ভালো লাগা হয়।ভালোবাসা তো ধীরে ধীরে জন্মায়।”

-“কি জানি বুঝতে পারছি না।”

-“হুম।যাক দেখো আরও ক’টা দিন।শান্তর সাথে ঠিক দেখা হবে তোমার বান্ধুবীর।”

-“হুম।”

-“ওইদিনের পর থেকে তো শান্ত তোমাকে আর ডিস্টার্ব করে না তাই না?”

-“না।সেদিনের পর থেকে তো আর দেখাই হয় না।এরপর এই চারদিন আগে দেখা হলো।বলেছিলাম না ওই ছেলেগুলোকে মেরেছিল?এরপর থেকে তো আর দেখা হয় না।”

-“হুম।যাক খুশি হলাম।আমি তো ভেবেছি ছেলেটা হয়তো তোমার পিছু ছাড়বে না।আমারই মেইবি কোনো স্টেপ নিতে হবে।”

-“ছেলেটার সাহস থাকলে তো কিছু করবে।আপনার ভয়েই তো যত পারে দূরে থাকে।সেদিন যে ভয়টাই না দেখিয়েছেন। কথার মাঝে যে ঠান্ডা হুমকিটাই না দিয়েছেন।এরপর কারো সাহস হবে নাকি মেজরের অর্ধাঙ্গিনীর দিকে নজর দেওয়ার হুহ?”

তাহসিন সশব্দে হেসে ফেলল।

আজ রোদেলার প্রথম পরীক্ষা।সকাল ভোর থেকেই সে পড়ার টেবিলে।আজ তার ইংরেজি পরীক্ষা।খুবই টেনশনে আছে সে।পড়াশোনার চাপে সে নাওয়া-খাওয়া সব ভুলে বসেছে।তাহসিন রেডি হয়ে নাস্তার টেবিলে এসে রোদেলাকে ডাকলে রোদেলা জানায় পরে খাবে।তাহসিন খাবার হাতে রুমে চলে আসে।এরপর রোদেলার মুখের সামনে খাবার তুলে দিতে দিতে বলে,
-“এতটা টেনশন করছো কেন?তোমার প্রিপারেশন খুব ভালো।এতটা টেনশনের কিছু নেই।টেনশন করলে যা পড়েছো সবই ভুলে যাবো।”

রোদেলা খাবার মুখে নিয়ে চিবুতে চিবুতে বলল,
-“কি করবো বলুন?আমার যে বড্ড টেনশন হচ্ছে।আমার সবসময়ই এক্সামের সময় এতটা টেনশন হয়।”

-“টেনশনের কিছু নেই।তোমার এক্সাম খুবই ভালো হবে। কথাটা মিলিয়ে নিও।”

তাহসিন নিজ হাতে রোদেলাকে খাইয়ে দিল।সাথে নিজেও খেল।যাওয়ার পূর্বে রোদেলার কপালে চুমু দিয়ে বলল,
-“টেনশন করো না মায়মূন।ভালো করে ঠান্ডা মাথা এক্সাম দিও।আর সাবধানে যেও।ঠিক আছে?”

-“আচ্ছা।”

রোদেলা শুধু শুধু এতটা টেনশন করেছে।এক্সাম কোশ্চেন হাতে পেয়ে সে তো পুরোই খুশি।সব তার কমন পড়েছে। ঠান্ডা মাথায় লিখতে থাকলো।তার তো এক্সাম খুবই ভালো হয়েছে।নিহার এক্সামও খুব ভালো হয়েছে।এই কয়টাদিনে নিহা ফের আগের মতোই হয়ে গিয়েছে।শান্ত নামের মানুষটাকে ভুলে গিয়েছে।তবে মাঝে মাঝে মনের ধারে একটু আধটু শান্ত নামের ছেলেটার মুখ ভেসে উঠে।সে ফের ভুলে যাওয়ার চেষ্টা করে।সে ভেবেই নিয়েছে শান্ত তার ভালোলাগা ছিল।তাইতো ভুলে থাকতে পারছে।নিহা এসব নিয়ে এখন আর ভাবে না।আর না শান্তর খোঁজ করে।এক্সাম শেষে দুই বান্ধুবী ঝালমুড়ি খেতে খেতে এক্সামের আলোচনা করতে থাকে।এরপর দুইজন দুই রিকশায় উঠে নিজেদের বাসায় রওনা হয়।

গ*ত হলো অনেকগুলো দিন।রোদেলার এক্সামের আজ শেষ দিন।এক্সাম শেষে রোদেলা নিহা একসাথে হলো। কারণ তারা দুইজন দুই রুমে পড়েছে।এক্সাম কোশ্চেন নিয়ে আলোচনা করতে করতে মাঠ পেরুচ্ছিল।হঠাৎ-ই নিহা গেইট দিয়ে শান্তকে ঢুকতে দেখলো।নিহা রোদেলার হাত চেপে ধরতেই রোদেলা কথা বন্ধ করে নিহার দিকে তাকালো।এরপর নিহার দৃষ্টি লক্ষ্য করে সামনে তাকালো আর দেখতে পেল শান্তকে।রোদেলা নিহাকে কিছু বলার সুযোগ অব্দি পেল না।নিহা তার আগেই ছুটে গেল শান্তর কাছে।নিহা শান্তর সামনে যেয়ে বলল,
-“শান্ত ভাই।”

শান্ত বন্ধুদের সাথে কথা বলতে বলতেই গেইট পেরিয়ে ঢুকছিল।নিহার কথা শুনে দাঁড়িয়ে গেল।নিহার দিকে তাকালে নিহা ব্যতিব্যস্ত হয়ে বলল,
-“কোথায় ছিলেন এতদিন?জানেন কতটা খুঁজেছি আপনাকে?”

শান্ত ভ্রু উচিয়ে বলল,
-“কেন খুঁজেছো?কোনো প্রয়োজন?”

নিহা থতমত খেয়ে গেল।এখন সে কি বলবে?আমতা আমতা করে বলল,
-“না মানে ওই ওই হ্যাঁ।আপনার হাতের অবস্থা জানতেই খুঁজেছিলাম।আপনার হাত ঠিক হয়েছে তো?ডক্টরের কাছে গিয়েছিলেন?”

শান্ত হাত নিহার সামনে তুলে ধরে বলল,
-“আমার হাত একদম ঠিক আছে।ক্ষ*ত শুকিয়ে গিয়েছে।”

নিহা শান্তর হাতের দিকে তাকালো।আসলেই শুকিয়ে গিয়েছে।নিহা মনে মনে বলল,
-“আপনার ক্ষ*ত শুকিয়েছে।অথচ আমার?আমার মনের ক্ষ*তটা কি আপনি দেখেছেন?এখনো তাজা হয়ে আছে।”

কিন্তু মুখে বলল,
-“যাক ভালো।তো এতদিন আসেন নি কেন?”

-“শহরের বাহিরে ছিলাম।খালার বাসায় বেড়াতে গিয়েছিলাম।”

নিহা ফিক করে হেসে ফেলল।শান্ত ভ্রু কুচকে বলল,
-“এখানে হাসার কি হলো?”

নিহা হাসি চেপে বলল,
-“না মানে বড় মানুষরাও যে বেড়াতে যায় জানা ছিল না? আমি তো জানতাম ছোটরাই বেড়াতে যায়।”

-“এসব আজব কথা কে বলেছে?বড়রা বেড়াতে যায় না তো কি করে?”

-“বড়রা তো প্রেম নিয়ে ব্যস্ত থাকে।প্রেমিকরা তাদের প্রেমিকাদের নিয়ে ঘুরতে যায়।তাদের সময় দেয়। রাগ, অভিমান ভাঙাতেই ব্যস্ত থাকে।”

শান্ত কিছু বলতে যাবে।এমন সময় রোদেলা উপস্থিত হলো। রোদেলাকে দেখে শান্ত সালাম দিল।জিজ্ঞেস করলো,
-“ভালো আছেন ভাবী?”

-“জ্বি ভালো।”

রোদেলা নিহার উদ্দেশ্যে বলল,
-“নিহা দেরি হয়ে যাচ্ছে।চলো।”

নিহা মাথা নেড়ে বলল,
-“হ্যাঁ চলো।”

শান্তর দিকে তাকিয়ে বলল,
-“আসি শান্ত ভাই।আর হ্যাঁ এরপর থেকে কিন্তু আপনি রোজ কলেজে আসবেন।মোটেও বেড়াতে যাবেন না। বেড়াতে যায় ছোটরা।মনে থাকবে তো?আসি শান্ত ভাই।”

নিহা আর রোদেলা চলে এলো।আর শান্ত নিহার যাওয়ার পথে হা করে তাকিয়ে রইল।শান্তর বন্ধুরা বলল,
-“কি রে বন্ধু ব্যাপার তো ভালো ঠেকছে না।মেয়েটা নির্ঘাত তোকে পছন্দ করে।”

শান্ত বলল,
-“আরে যা তেমন কিছুই না।”

-“আরে কেমন অধিকার খাটিয়ে গেল দেখলি না?তুই মিলিয়ে নিস দুইদিন পরে দেখবি প্রেমপত্র নিয়ে হাজির।”

এটা বলে ওরা হু হা করে হেসে ফেলল।শান্ত বলল,
-“এসব জাস্ট আবগের বশে এমন করেছে।আবেগ কেটে গেলে দেখবি আর ধারে কাছেও ঘেঁষবে না।আমার মতো ছেলেদেরকে কেউ ভালো বাসতে পারেই না।”

শান্তর এক বন্ধু বলল,
-“তোর মতো বখে যাওয়া ছেলেদেরকেই কোনো এক মেয়ে ভালোবেসে সঠিক পথে নিয়ে আসে।”

শান্ত হা হা করে হেসে বলল,
-“এটাও কি সম্ভব?আমি শান্তকে কিনা কোনো মেয়ে এসে সঠিক পথ দেখাবে?কি হাস্যকর কথা বলিস রে তোরা।”

-“হুহ হাস্যকর কথা না কি সেটা সময় হলেই বুঝবি।আর এখন তো এমন-ই বলবি।যখন ওই মেয়ের প্রেমে পড়ে আশিকি হবি তখনই এই বন্ধুদের কথা মিলাবি।হুহ।”

শান্ত বলল,
-“হয়েছে দেখা যাবে।এবার চল।”

শান্ত তার বন্ধুদেরকে নিয়ে ক্লাসে গেল।যেতে যেতে ভাবলো আসলেই কি তাই হবে?শান্ত কি এমন জীবন থেকে কখনো ফিরে আসবে?তাও কিনা কারো প্রেমে পড়ে।এটা কি আসলেই সম্ভব?আর এই মেয়েটাই কি পারবে শান্তকে এমন জীবন থেকে ফিরিয়ে এনে সুস্থ জীবন দান করতে?শান্তর মতো ছেলেদেরকে তো কোনো মেয়েরা ভালোবাসে না। ভালোবাসতে পারে না।ওদের মতো ছেলেদেরকে তো মেয়েরা ঘৃণাই করতে জানে।তাহলে এই মেয়েটা জেনশুনে কেন শান্তর লাইফে নিজেকে জড়াতে চাইছে?সত্যিই কি মেয়েটা তাকে ভালোবাসে নাকি মেয়েটা আবেগের বশেই এমন করছে?কিছুই বুঝতে পারছে না।দেখা যাক সময় কি বলে?সময়ই পথ দেখিয়ে দিবে।এসব নিয়ে অযথা ভেবে আর কাজ নেই হাহ।

#চলবে
[বি.দ্র:-কার্টেসী ছাড়া কপি করা নিষেধ।]

#নীল_বসন্ত
#লেখনীতে_মিথিলা_মিতু
#পর্বসংখ্যা_১৭
হাফ ইয়ারলি এক্সামের পর রোদেলার কলেজ এক সপ্তাহের জন্য বন্ধ দিয়েছে।তাহসিনের ছুটি না থাকায় সে রোদেলাকে নিয়ে বাড়িতে ফিরতে পারলো না।এইদিকে রোদেলার একা একা থাকতে মোটেও ভালো লাগছে না। তাই সে তার শাশুড়ী মাকে ফোন করলো।তখন রাত আটটার মতো বাজে।নাজমা বেগম চুলায় ভাত বসিয়েছেন। কাজের মেয়েটা এসে ভারী সব কাজ করে দিয়ে যায়। তরকারি,মাছ,মাংস কাটা হতে সবই করে দিয়ে যায়।রান্নাটা শুধু নাজমা বেগম করেন।কারণ তাজউদ্দিন সাহেব স্ত্রীর হাতের রান্না ছাড়া খেতে পারেন না।তো নাজমা বেগম তখন রাতের জন্য ভাত বসিয়েছিলেন।এমন সময় ফোনের আওয়াজ পেয়ে রুমে ছুটে যান।তাজউদ্দিন সাহেব বসার ঘরে বসে তখন টেলিভিশনে সংবাদ দেখছিলেন আর চা খাচ্ছিলেন।নাজমা বেগম ফোন রিসিভ করতেই রোদেলা সালাম দিল।নাজমা বেগম সালামের জবাব নিয়ে শুধালেন,

-“কেমন আছিস রে মা?”

-“ভালো আছি।তোমরা কেমন আছো?”

-“আলহামদুলিল্লাহ।আমরাও ভালো আছি।কি করিস?”

-“বই পড়ছিলাম।তোমরা কি করছো?”

-“আমি এইতো ভাত রান্না করছিলাম।আর তোর বাবা বসার ঘরে টিভি দেখছে।তো মা তোর পরীক্ষা কেমন হলো?”

-“আলহামদুলিল্লাহ খুব ভালো হয়েছে।মা শুনো না।”

-“হুম মা বল।”

-“কলেজ থেকে এক সপ্তাহের ছুটি পেয়েছি।একা একা ভালো লাগছে না।”

-“তাহলে এক কাজ কর চলে আয়।তাহসিনকে বল তোকে নিয়ে আসতে।আর সে ছুটি না পেলে তোর বাবা যেয়ে তোকে নিয়ে আসবে।”

-“না মা।শুনো না।তোমরা এখানে চলে আসো।আমি তোমাদের খুব মিস করছি।তোমার ছেলে তো ছুটি পায় না তাই বের হওয়াও হয় না।তোমরা এলে আমি,বাবা আর তুমি মিলে ঘুরতে যাবো।প্লিজ মা না করো না।প্লিজ প্লিজ প্লিজ।”

নাজমা বেগম বউয়ের কান্ড দেখে হাসলেন।বললেন,
-“পাগলী একটা।তোর বাবা ছুটি পায় নাকি দেখি।তোর বাবাকে বলে দেখ।”

-“বাবা কোথায়?বাবাকে দাও তো দেখি।”

-“আচ্ছা দিচ্ছি।”

নাজমা বেগম তাজউদ্দিন সাহেবকে নিয়ে ফোনটা দিলেন। রোদেলা সালাম দিতেই তাজউদ্দিন সাহেব শুধালেন,
-“কেমন আছিস মা?”

-“ভালো আছি বাবা।তুমি কেমন আছো?তোমার শরীরটা ভালো তো?”

-“হ্যাঁ।আমি একদম ফাইন আছি।”

রোদেলা আহ্লাদ করে ডেকে উঠল,
-“ও বাবা শুনো না।”

-“হুম মা বোল।”

-“বাবা তুমি মাকে নিয়ে এখানে চলে এসো।আমরা ঘুরতে যাবো।অনেক মজা হবে।আমার এখানে একা একা অনেক মন খারাপ লাগছে।এক সপ্তাহ ছুটি পেয়েছি।এই সময়টা এই চার দেয়ালের মাঝে কাটবে।প্লিজ বাবা অন্তত এক সপ্তাহের জন্য আসো।প্লিজ প্লিজ প্লিজ।”

-“আসলে তুই খুশি হবি?”

-“হ্যাঁ বাবা।খুব খুব খুউউব খুশি হবো।”

তাজউদ্দিন সাহেব হা হা করে হাসলেন।তারপর বললেন,
-“আমার মেয়েটা এভাবে আবদার করছে না রেখে পারি? নিশ্চয়ই আসবো মা।আগামীকালই তোর শাশুড়ী আর আমি আসছি।”

রোদেলা খুব খুশি হলো।বলল,
-“থ্যাংক ইয়্যু বাবা থ্যাংক ইয়্যু।তোমাকে আর মাকে অনেকগুলো ভালোবাসা।কালকেই তাহলে দেখা হচ্ছে?”

-“ইন শা আল্লাহ।”

রোদেলা খুশি মনে ফোন রাখলো।কতগুলা মাস পরে তার শ্বশুড়-শাশুড়ির সাথে দেখা হচ্ছে।সে তো খুবই খুশি।সে তাহসিন ফেরার অপেক্ষা করতে থাকলো।তাহসিন ফিরলে তাহসিনকে তো জানাতে হবে মা-বাবা আসছেন।তাহসিন নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে।

তাহসিন বাসায় ফিরতেই রোদেলা তাহসিনকে জানালে তাহসিন সত্যিই দারুণ খুশি হলো।এইরকম অসাধ্য কাজটা রোদেলা কিভাবে করে ফেললো সেটাই সে ভাবছে।তাহসিন ওদের বিয়ের আগেও কতবার যে তার মা-বাবাকে বলেছিল এখানে আসার জন্য কিন্তু উনারা আসেনই না।অবশেষে রোদেলা কিভাবে যে রাজি করিয়ে ফেলল?তাহসিন খুবই খুশি হলো।অনেকদিন পর তার মা-বাবার সাথে দেখা হতে চলেছে।

রাত তখন একটা বেজে দুই মিনিট।নিহার চোখে ঘুম নেই। তার কেন জানি খুব ইচ্ছে করছে শান্তর কন্ঠ শুনতে।কন্ঠ শুনার উপায়টাও তার হাতে আছে।এইতো আজ সকালেই বাসায় ফিরে তার পুরনো বন্ধুদের মাধ্যমে শান্তর ফোন নাম্বার আর ফেসবুক একাউন্ট যোগাড় করেছে।কিন্তু সাহসের অভাবে ফোন দিতে পারছে না।সকাল থেকেই অনেকক্ষণ ধরে চেষ্টা চালাচ্ছে ফোন দিতে।কিন্তু সাহসে কুলাচ্ছে না। এবার আর পারছে না।মনে সাহস আনলো। বকা খেলে খাবে তবুও কল করেই ছাড়বে।শান্তর ফোন নাম্বারটা সে স্যেইভ করেছে “অশান্ত মন” দিয়ে।ফোন করে রিং বাজার আওয়াজের সাথে সাথে নিহার বুক যেন ধুকপুক করে উঠছে।রিং-এর শব্দের সাথে তার বুক দ্রিম দ্রিম করছে।রিং বাজতে বাজতেই কেটে গেল কেউ রিসিভ করলো না। দ্বিতীয়বার দিল তাও কেউ রিসিভ করলো না।সাহস জুগিয়ে তৃতীয়বারের মতো ফোন দিলে রিসিভ করার আওয়াজ পেল।ওপাশ থেকে শান্ত ঘুমুঘুমু কন্ঠে “হ্যালো” বলল। এইপাশ থেকে নিহা চুপ করে রইল।পুরুষের ঘুমন্ত কন্ঠ যে এতটা সুন্দর তা নিহার জানা ছিল না।আচ্ছা শান্তর ঘুম ভাঙানোর অপরাধে শান্ত এখন তাকে কি করবে?তার নামে মামলা ঠুকবে?নাকি ঢিশুম ঢিশুম করে মারতে চাইবে? কথাটা ভেবে নিহা নিজ মনেই হেসে ফেলল।ওইদিকে শান্ত “কে, কে” বলেই যাচ্ছে।নিহার হুস নেই।নিহার হুস ফিরলো খট করে কল কে*টে দেওয়ার শব্দে।নিহা পুনরায় কল দিলে শান্ত রিসিভ করে অশ্রাব্য একটা গালি দিয়ে উঠে।নিহা চোখ খিচে ফেলল।বলল,
-“অসভ্য লোক কোথাকার।”

মেয়েলী কন্ঠ শুনে শান্ত বলল,
-“আমি অসভ্য লোক হলে আপনি কি?আপনি তো অসভ্য মহিলা।রাত-বিরেতে পর-পুরুষকে ফোন করতে লজ্জা লাগে না?ফোন করে আবার চোরের মতো চুপ করে থাকে অসভ্য মহিলা একটা।”

-“এই এই কে মহিলা হ্যাঁ?আমি মোটেও মহিলা নই শান্ত ভাই।”

শান্তর এবার হুস এলো।এভাবে শান্ত ভাই বলে তো শুধুমাত্র একজনই ডাকে তাকে।কন্ঠটাও পরিচিত ঠেকছে।শান্ত শুধালো,
-“কে আপনি?”

-“আমাকে না চিনেই এভাবে অশ্রাব্য ভাষায় বকা দিলেন?”

শান্ত বলল,
-“এত রাতে ফোন করে ঘুম ভাঙালে বকা দেব না তো কি করবো?গাল টেনে এনে চুমু খাবো?”

নিহা আস্তে করে বলল,
-“হুম তা-ই খান।বকার থেকে চুমু ঢেরগুন ভালো।”

-“এই কি বললে?”

-“না কিছু না।”

-“ফটাফট পরিচয় দাও।”

-“আমি নিহা।”

-“কোন নিহা?”
শান্ত আসলে নিহার নামই জানতো না।তাই চিনতেও পারলো না।নিহা বলল,
-“আরে ওই যে আপনার হাত থেতলে গিয়েছিল আর হাতে রুমাল বেঁধে দিয়েছিলাম।তারপর আজ সকালেও তো ওই যে কলেজের গেইটের কাছে যে দেখা হলো।আমি সেই মেয়েটিই।”

-“ও হ্যাঁ চিনতে পেরেছি।তো এত রাতে আমাকে ফোন কেন দিয়েছো?আর আমার ফোন নাম্বারই বা কি করে পেলে?”

-“শান্ত ভাই খোঁজার মতো খোঁজলে আলাদিনের চেরাগটাও হাতে পাওয়া যায়।সেখানে তো আপনার ফোন নাম্বার কিছুই না।পেয়েছি কোনোভাবে।”

-“এই মেয়ে এত প্যাচাল না পেরে ফটাফট বলো এত রাতে ফোন দিয়েছো কেন?”

নিহা উত্তর খুঁজে পেল না।কি বলবে সে এখন?হঠাৎ মাথায় এলো।আর বলে দিল,
-“আমার রুমালটার জন্য।”

-“কিহ?”

-“হ্যাঁ শান্ত ভাই।আমার রুমালটা আপনি দিয়ে দিবেন।ওইটা আমার অনেক শখের রুমাল।যেটা আপনাকে দিয়েছি।”

-“শখের হলে দিলে কেন?”

-“কারণ দেওয়ার মতো আর কিছু ছিল না তাই।”

-“শান্তর কাছে যে জিনিস একবার আসে সেটা আর ফেরত যায় না।অতএব,রুমালটাও তুমি আর ফেরত পাবে না।”

-“তাহলে এক কাজ করেন আমার মনটাও নিয়ে যান।আমি আমার মন ফেরত চাইবো না।”

-“কি বললে?”

-“বলছি আমার রুমালটা চাই।”

-“বললাম তো রুমালটা ফেরত দেওয়া যাবে না।”

-“কেন?”

-“কারণ সেটা আমার কাছে নেই।ফেলে দিয়েছি।”

-“কিহ?আমার এত সুন্দর রুমালটা আপনি ফেলে দিতে পারলেন?কত সুন্দর করে কোনায় আমার নামটা লেখা ছিল।আহারে আমার রুমালটা।”

নিহা মেকী কাঁদতে লাগলো।শান্ত বলল,
-“ফ্যাঁচফ্যাঁচ করো না তো।সুন্দর রুমাল আর সুন্দর ছিল না।আমার হাতের রক্ত শুকিয়ে বাজে অবস্থা হয়ে গিয়েছিল।”

-“তাই বলে আমি ফেলে দিবেন?”

-“তো কি করতাম?যত্ন করে বুক পকেটে রেখে দিতাম?”

-“হুম তা-ই দিতেন।নিষ্ঠুর মানব কোথাকার।”

শান্ত ফোস করে শ্বাস ছাড়লো।তারপর বলল,
-“আমি এমনই।ফোন রাখো।অনেক রাত হয়েছে ঘুমোতে হবে।”

-“ঘুমোবো না আমি।”

-“তোমাকে ঘুমোতে বলল কে?আমি তো আমার কথা বললাম।”

নিহা মনে মনে বকতে লাগলো।শান্ত বলল,
-“ফোনটা রেখেই না হয় বকো।ঘুম পাচ্ছে।রাখছি।”

নিহা বোকা হয়ে গেল।সে মনে মনে বকেছে।শান্ত শুনলো কিভাবে?নিহা বলল,
-“শুনুন।”

-“হুম বলো।”

-“আপনাকে আজকে সকালে ফেসবুকে ফ্রেন্ড রিকুয়েষ্ট পাঠিয়েছি।এক্সসেপ্ট করে নিন।”

-“না নিলে কি হবে?”

-“এভাবেই রাত-বিরেতে ফোন করে আপনাকে জ্বালাবো।”

-“আমাকে ভয় লাগে না?”

-“আপনি কি হিংস্র পশু?আপনাকে ভয় পেতে যাবো কেন?”

-“মনে করো আমি তা-ই।”

-“আপনি যদি হিংস্র পশু হয়ে থাকেন তবে আপনিও জেনে রাখেন শান্ত ভাই।হিংস্র পশুকে কি করে পোষ মানাতে হয় সেটা নিহার জানা আছে।বুঝলেন?ফটাফট রিকুয়েষ্টটা এক্সসেপ্ট করে নিন।নইলে কিন্তু..”

-“তোমার সাথে আজাইরা প্যাচাল পাড়ার সময় নেই আমার।”
কথাটা বলেই শান্ত ফোন রেখে দিল।নিহা হা করে চেয়ে রইল।এভাবে মুখের উপর কেউ ফোন রাখে?নিহা চিবিয়ে চিবিয়ে বলল,

-“শান্তর বাচ্চা একবার শুধু আমার প্রেমে পড়।তারপর এই নিহা গু*ল্লি মে*রে তোর সব এটেটিউট ছুটিয়ে দিবে হুহ।”

#চলবে
[বি.দ্র:-কার্টেসী ছাড়া কপি করা নিষেধ।]