#নীল_বসন্ত
#লেখনীতে_মিথিলা_মিতু
#পর্বসংখ্যা_২৬
রোদেলা নিহাকে পুরো ক্যান্টনমেন্ট ঘুরাতে নিয়ে গিয়েছে।শান্তর ইচ্ছে করলো না পুরো ক্যান্টনমেন্ট ঘুরে দেখতে তাই সে তাহসিনের রুমেই তাহসিনের কাছে বসে আছে।শান্ত ইচ্ছে করেই গেল না।কারণ সে চেষ্টা করছে নিহার থেকে একটু দূরে থাকতে।নিহা পাশে থাকলেই বেহায়ার মতো বারবার নিহার দিকে চোখ যায়।তাই সে আর গেল না।রোদালা আর নিহাই গেল।
শান্ত সোফায় বসে আছে।তাহসিন বিছানায় হেলান দিয়ে বসে আছে।তাহসিন গলা খাকারি দিয়ে বলল,
-“তো শান্ত কি অবস্থা?সামনের দিন নিয়ে কি ভাবলে?মানে নিহার ব্যাপারটা?”
শান্ত থতমত খেয়ে গেল।বলল,
-“না মানে ভাইয়া কিছুই ভাবি নি।যেভাবে চলছে চলতে থাকুক।”
-“এটা কোনো কথা?যদি নিহাকে ভালো লেগে থাকে বলে ফেলো।মনের কথা মনে রেখে লাভ আছে ভাই?পরে দেখবে প্রকাশ করার আগেই অন্য কারো হয়ে গেল তখন কি করবে?”
শান্ত লম্বা একটা শ্বাস ফেলল।অতঃপর মাথা নিচু করে বলল,
-“ভাইয়া নিহা খুবই ভালো একটা মেয়ে।আমি চাইছি না সে আমার জীবনে জড়িয়ে নিজের সুন্দর জীবনটা অসুন্দর করে ফেলুক।ও নিশ্চয়ই ভালো একজন পুরুষকে ডিজার্ভ করে তাই না?”
-“তুমি কি ভালো পুরুষ নও?”
-“না ভাইয়া।আমি ততটাও ভালো পুরুষ নই।আর সবচেয়ে বড় সত্যি হচ্ছে আমি বেকার।ওর ফ্যামিলি নিশ্চয়ই বেকারের হাতে মেয়েকে তুলে দিবে না?”
তাহসিন শান্তর দিকে তাকালো।একটুখানি সময় নিয়ে বলল,
-“ভুল কথা বলেছো শান্ত।তুমি অতীতে ভালো ছিলে না।কিন্তু নিহার সান্নিধ্যে এসে একজন সুপুরুষ হয়ে গিয়েছো।এই সত্যটা তুমি চাইলেও অস্বীকার করতে পারবে না।”
-“ভাইয়া আপনি কি করে জানলেন?”
-“মায়মূনের কাছ থেকে শুনেছি।শুনো শান্ত অতীত সবার ভালো হয় না।অতীতে কি করেছো সেটা দেখার বিষয় না। বরং বর্তমানে কি করছো সেটাই মুখ্য।তুমি তোমার বাজে অতীত কাটিয়ে ভালো একজন মানুষ হওয়ার চেষ্টা করেছো সেটাই অনেক।আর রইল বেকারত্বের কথা।শান্ত তুমি কিন্তু এখনো স্টুডেন্ট।গ্রেজুয়েশন কামপ্লিট করার পর ঠিক একটা না একটা জব পেয়ে যাবে।আর আমি যতটুকু জানি তোমার বাবা নামকরা একজন ব্যবসায়ী।তুমি চাইলেই তোমাদের পারিবারিক ব্যবসায় যোগ দিতে পারো তাই না?”
শান্ত চোখ বড় বড় করে বলল,
-“আপনি জানলেন কি করে?আমি তো আমার ফ্যামিলি সম্পর্কে নিহাকেও বলি নি।”
-“আমি খোঁজ নিয়েছিলাম।যেদিন প্রথম তোমার সাথে অনাকাঙ্ক্ষিত এক ঘটনায় দেখা হলো আই মিন মায়মূনের ব্যাপারটা নিয়ে সেদিনই আমি তোমার সম্পর্কে সকল ইনফরমেশন বের করেছি।কারণ মায়মূনের ব্যাপারে আমি মোটেও হেলা করতে চাই নি।আমি ভেবেছি যদি তুমি ফের মায়মূনকে ডিস্টার্ব করো তোমার ফ্যামিলিকে জানাবো এবং আমি স্টেপ নেবো।কিন্তু তুমি তোমার কথা রেখেছো।”
থেমে,
-“দেখো শান্ত আমার মনে হয় নিহাকে তোমার এক্সসেপ্ট করে নেওয়া উচিত।আমি তোমাকে জোর করছি না।আমার যেটা ভালো মনে হলো সেটাই বললাম।মায়মূনের থেকে যতটুকু জেনেছি নিহা তোমাকে বড্ড ভালোবাসে।আর দেখো সে তোমাকে খুব ভালোবাসে বলেই তোমার অতীত জেনেও সে তোমার কাছ ছাড়ে নি এমনকি সে তোমাকে তোমার ভয়ংকর অতীত থেকে বের করে আনতে সফলও হয়েছে।আর আমার মনে হয় তুমিও হয়তো নিহাকে পছন্দ করো কিন্তু এখনো বুঝে উঠতে পারছো না বা অন্যকিছু সেটা আমার জানা নেই।তবে তোমার যেটা ভালো মনে হয় সেটাই করো।তুমি ভাবো,সময় নাও।তবুও সঠিক সিদ্ধান্তটাই নাও।”
★
নিহা আর শান্ত ক্যান্টনমেন্ট থেকে বিদায় নিল।রোদেলা ওদেরকে সন্ধ্যার নাস্তা না খাইয়ে ছাড়লো না।রোদেলার জোরাজোরিতে ক্যান্টনমেন্ট থেকে ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যা গড়ালো।শান্ত ভেবেছে নিহাকে নিহার বাসায় দিয়ে তারপরই সে নিজের বাসার পথ ধরবে।নিহা তো রিকশাতে উঠে অনেক অনেক গল্প করলো।তার ঠোঁট থেকে হাসি যেন সরছেই না।এই প্রথমবারের মতো ক্যান্টনমেন্ট ঘুরতে পেরে সে তো বড্ড খু্শি।ক্যান্টনমেন্টের কোন পাশে কি আছে না আছে সব গল্পই শান্তকে শুনাতে লাগলো।আর বলতে লাগলো শান্ত না ঘুরে মিস করে ফেলেছে।এইদিকে শান্ত নিহার দিকে তাকিয়ে মনোযোগী শ্রোতার ন্যায় নিরবে নিহার কথাগুলো শুনে যাচ্ছে।দেখলে কিন্তু সেটাই মনে হবে। তবে শান্তর সেদিকে কোনো ধ্যানই নেই।মাথায় ঘুরছে তাহসিনের কথাগুলো।আর চোখে ভাসছে নিহার হাসি।এই দুইয়ের মাঝে শান্ত যেন হাবুডুবু খাচ্ছে।কথা বলতে বলতেই নিহাদের বাসা এসে পড়লো।নিহা রিকশা থেকে নেমে শান্তকে অনেক জোর করলো নিহাদের বাসায় আসার জন্য।বাসার সামনে থেকে শান্তকে নিহা ছাড়বে না।নিহা তো শান্তর বন্ধু তাহলে বন্ধু হিসেবে কি আসতে পারবে না?নিহার জোরাজোরিতে শান্ত বাধ্য হলো নিহার বাসায় যেতে।কলিং বেলের আওয়াজ পড়তেই নিহার ভাবী মারিয়া এসে দরজা খুলে দিল।নিহার পাশে শান্তকে দেখে ভ্রু নাচিয়ে ইশারায় জিজ্ঞেস করলো ছেলেটা কে?ইশারাটা নিহা ঠিকই বুঝতে পারলো।সে লাজুক হেসে বলল,
-“ভাবী ও শান্ত।আমার ফ্রেন্ড।”
শান্ত নামটা শুনতেই মারিয়া বুঝে ফেলল।শান্ত সম্পর্কে মারিয়া সবটাই অবগত আছে।নিহা একদম প্রথম থেকেই তার ভাবীকে জানিয়েছিল।তার ভাবী মারিয়া আর তার এইজ গ্যাপ ওতটাও বেশি না।তাই নিহা ফ্রেন্ডের মতোই তার ভাবীর সাথে সবটা শেয়ার করে।মারিয়াকে দেখে শান্ত ভদ্রতার খাতিরে সালাম দিল।মারিয়া সালামের জবাব নিয়ে বলল,
-“আসুন ভেতরে আসুন।”
নিহা শান্তকে নিয়ে বাসায় এলো।নিহার মা রান্না ঘর থেকে বেরিয়ে আসতে আসতে মারিয়ার উদ্দেশ্যে শুধালেন,
-“বউমা কে এসেছে?নিহা নাকি?”
মারিয়া বলল,
-“হ্যাঁ মা।”
নিহার মা রান্নাঘর থেকে এসে নিহার পাশে শান্তকে দেখে বুঝতে পারলো নিহার কোনো বন্ধু।নিহাই আগ বাড়িয়ে বলল,
-“মা এটা আমার ফ্রেন্ড শান্ত।”
শান্ত সালাম দিলে সালামের জবাব নিয়ে মিষ্টি কন্ঠে শুধালেন,
-“ভালো আছো তো বাবা?”
শান্ত যেন আবেগে আপ্লুত হয়ে গেল।এমন আদুরে করে তার মা ছোট বেলায় তাকে ডাকতো।এরপর আর কেউ এভাবে তার সাথে কথা বলে নি।শান্ত মাথা নেড়ে বলল,
-“জ্বি ভালো।”
-“তো দাঁড়িয়ে কেন?বসো বাবা।”
-“না আন্টি আমি চলে যাবো।”
-“চলে যাবো মানে কি?মাত্রই তো এলে।আমি তোমাকে রাতের খাবার না খাইয়ে ছাড়ছি না।বসো দেখি।”
-“না আন্টি।আমার যেতে হবে।কাজ আছে।”
নিহা বলল,
-“মা ও মিথ্যে বলছে।কোনো কাজই নেই।লজ্জা পাচ্ছে। আহারে লজ্জাবতী ছেলে কিনা।ইশ ভুল বলে ফেললাম। মেয়েদেরকে লজ্জাবতী বলে তাহলে ছেলেদের কি বলে? ভাবী তুমি এটার এন্সার জানো?”
শেষাক্তো কথাটি মারিয়ার উদ্দেশ্যে বলে।মারিয়া ঠোঁট টিপে হেসে ফেলে।অতঃপর মাথা নাড়ায় সে জানে না।এইদিকে শান্ত নিহাকে চোখ রাঙায়।নিহা সেটা পাত্তাও দেয় না।নিহার মা বললেন,
-“বাবা আমি তোমার মায়ের মতো।তাই মায়েদের কথা ফেলতে হয় না।বসো তুমি।”
“মা” শব্দটাতে শান্ত খুবই দুর্বল।ছোট বেলায় মাকে হারিয়ে ফেলেছে কিনা।তাইতো সে নিহার মায়ের আবদার আর ফেলতে পারলো না।নিহার মা ফের রান্না ঘরে গিয়েছেন। উনার পিছু পিছু মারিয়াও গিয়েছে।নিহার বাবা,বড় ভাই দুইজনেই কাজে।বাসায় ফিরতে উনাদের রাত হয়।নিহা শান্তকে বলল,
-“আপনি একটু বসুন।আমি চেঞ্জ করে আসছি।”
শান্ত সোফায় বসলো।নিহা চলে গেল নিজের রুমে চেঞ্জ করে এসে দেখে এইটুকু সময়েই নিহার মা আর ভাবী শান্তর জন্য বিশাল আয়োজন করেছেন।টেবিল ভর্তি খাবার সাজিয়েছেন।পাশে দাঁড়িয়ে নিহার মা শান্তকে খাবারের বাটি এগিয়ে দিচ্ছে।এইদিকে শান্ত বেচারার অবস্থা নাজেহাল। কিছুক্ষণ আগেই রোদেলাদের বাসা থেকে সন্ধ্যার খাবার খেয়ে এসেছে এখন আবার এত খাবার।শান্তর নাকানিচুবানি অবস্থা দেখে নিহার হাসি পাচ্ছে।আহারে বেচারা!সন্ধ্যার খাবার-দাবার শেষে নিহা শান্তকে নিজের রুমে ঘুরিয়ে আনলো।অতঃপর ফের হলরুমে এলো।নিহার ভাবী এলবাম নিয়ে বসেছে।গল্প করতে করতে তিনি শান্তকে এলবামের ছবিগুলো দেখালেন।যেখানে নিহা,নিহার বড় ভাইয়া,বাবা আর মায়ের ছবি।নিহার ছোট বেলার ছবি দেখে শান্ত হাসছে।ছোট বেলায় নিহা বেশ রোগা-সোগা ছিল। আবার এমন কিছু ছবি আছে নিহা ফ্রক পড়া,চুল এলোমেলো এমন সময় উঠানো ছবি।শান্ত সেসব দেখেই নিহাকে রাগাতেও ছাড়লো না।বলল নিহাকে নাকি ওর বাবা-মা কুড়িয়ে পেয়েছে।শান্তর কথা শুনে নিহা মুখ ফোলালো।এইরকম করেই ওদের সন্ধ্যাটা কাটলো।শান্তকে সত্যিই রাতের খাবার খাওয়ানো ছাড়া যেতে দেওয়া হলো না।রাত হতেই নিহার বাবা-ভাই দুইজনেই কাজ শেষে বাসায় ফিরেন।নিহার বড় ভাইও খুবই মিশুকে স্বভাবের।তবে বাবা একটুখানি গম্ভীর।রাতের খাবার খেয়ে অতঃপর শান্ত বিদায় নিল।তবে শান্ত ওদের বাসায় দারুণ সময় কাটালো। এতগুলো বছর পর মায়ের মতো করেই কারো স্নেহ পেয়ে শান্ত খুবই আপ্লুত হয়েছে।
★
তখন রাত।তাহসিন ডিভানে বসে ল্যাপটপে কিছু ফাইল দেখছে।এইদিকে রোদেলা বিছানা ঝাড়তে ঝাড়তে গুনগুন করে গেয়ে উঠলো,
❝সামনে দাঁড়াও একবার দেখি নয়ন ভরিয়া,
ভালোবাসি তবে কেন যাওনা শান্ত করিয়া?
সামনে দাঁড়াও একবার দেখি নয়ন ভরিয়া,
ভালোবাসি তবে কেন যাওনা শান্ত করিয়া?
তোমারে দেখিয়া একবার জল ঢেলে দেই বেদনায়
তোমারে দেখিয়া একবার জল ঢেলে দেই বেদনায়।
তোমারে দেখিবার মনে চায়,দেখা দাও আমায়।
তোমারে দেখিবার মনে চায়,দেখা দাও আমায়।❞
গুনগুন করতে করতেই হঠাৎই রোদেলার চোখ যায় তাহসিনের দিকে।তাহসিন ল্যাপটপ থেকে চোখ সরিয়ে ভ্রু কুচকে রোদেলার দিকে তাকিয়ে আছে।তাহসিনের এহেন চাহনীতে রোদেলা ভড়কে গেল।রোদেলা ভাবলো তাহসিনের কাজের ডিস্টার্ব হয়েছে তাই এভাবে তাকিয়ে আছে। রোদেলা ঢোক গিলে বলল,
-“সরি খেয়াল ছিল না আপনি কাজ করছেন।আর গান গাইবো না।কাজ শেষ করুন আপনি।”
তাহসিনের চাহনী পরিবর্তন হলো না।এখনো একইভাবে তাকিয়ে আছে।রোদেলা ভয় পেয়ে গেল।সে কি কোনো ভুল করেছে?এভাবে কেন তাকিয়ে আছে?রোদেলা শুধালো,
-“কি হয়েছে?আমি কি কোনো ভুল করেছি মাহমুদ সাহেব?”
-“হুম ভুল মানে অনেক বড় ভুল।”
রোদেলা ভয়ার্ত কন্ঠে শুধালো,
-“কি করেছি?”
-“তুমি ভুল সময়ে ভুল গান গাও কেন?আমি তোমার সামনেই বসে আছি।তাও কেন এমন গান গাইছো?আমি তো পায়ের জন্য আর তোমার সামনে দাঁড়াতে পারবো না।”
তাহসিনের কথা শুনে রোদেলা ফিক করে হেসে ফেলল।এই অকারণে তাহসিন এভাবে তাকিয়ে ছিল?রোদেলা ফোদ করে শ্বাস ছেড়ে মাথা দুইদিকে দোলাতে দোলাতে বলল,
-“আপনিও না পারেন বটে।আমি তো আপনার চাহনী দেখে ভেবেছি কাউকে খু*ন করে ফেলেছি বোধহয়।তাই এমন চাহনী নিক্ষেপ করে আছেন।”
তাহসিন ল্যাপটপ অফ করে পাশে রাখতে রাখতে বলল,
-“শুধুমাত্র পায়ে ইনজুরি হওয়াতে বেঁচে গেলে নয়তো আজ আমিও ভালোবেসে তোমাকে ঠিক শান্ত করে দিতাম। আমিও দেখতে চাই মায়মূনের মনে কতটা ভালোবাসা জমেছে যার জন্য এইরকম আফসোস মার্কা গান গাইতে হচ্ছে।”
তাহসিনের কথার মানে বুঝতে পেরে রোদেলা দাঁত খিটে বলে উঠল,
-“অসভ্য লোক একটা।”
-“হ্যাঁ আমি অসভ্য আর আপনি যে এইরকম গানের মাধ্যমে নিজের মনের বেদনাটা বুঝান সেটা কিছু না?”
তাহসিনের কথা শুনে রোদেলা হা করে চেয়ে রইল।সে তো এমনি এই গানটা গাইছিল আর লোকটা কোথা থেকে কোথায় নিয়ে গেল?তাহসিন বলল,
-“হা থেকে চেয়ে না থেকে কাছে এসো তো দেখি।”
-“আপনার কাছে যাবো না আমি।আপনি বদ লোক,অসভ্য লোক।উল্টো পালটা বুঝেন সবসময়।”
-“আচ্ছা তাই নাকি?তো এই বদ,অসভ্য লোকটার বুকে মাথা রাখা ছাড়া ভালো,সভ্য মহিলাটার ঘুম আসবে তো?”
একদম ঠিক জায়গাটাতে সুক্ষ্ম খোঁচাটা দিয়ে ফেলল। রোদেলা এখন ভাবছে কি করবে?তাহসিন বলল,
-“তুমি আসবে?নাকি আমিই উঠে আসবো?”
রোদেলা বলল,
-“আপনি কেন আসবেন?আমিই আসছি।”
তাহসিন বাঁকা হাসলো।বলল,
-“এইতো গুড গার্ল।লাইট অফ করে এসো।”
-“কেন লাইট অফ করবো কেন?আপনি বিছানায় এসে ঘুমোন।তারপর লাইট অফ করবো।”
-“এইজন্য মানুষের ভালো ভাবতে নেই।কারো ভালো ভেবেই কথাটা বললাম।ঠিক আছে কেউ যেহেতু শুনলো না তাহলে আর কি করার?পরে লজ্জা পেলে আমি কিন্তু কিছু জানি না।”
রোদেলা তাহসিনের কাহিনি আঁচ করার চেষ্টা করছে বাট পারছে না।রোদেলা তাহসিনের কথা অনুযায়ী লাইট অফ করে ড্রিম লাইট অন করে দিল।ড্রিম লাইটের আবছা নীলাভ আলোয় তাহসিনের কাছে গেল।তাহসিনের কাছে যেতেই তাহসিন এক ঝটকায় রোদেলাকে ডিভানে ফেলে দিল।দুই হাত দিয়ে রোদেলার দুইপাশ আয়ত্তে নিয়ে ফেলল। যেন রোদেলা উঠতে না পারে। অতঃপর রোদেলার নরম অধর যুগলে নিজের ওষ্ঠজোড়া ডুবিয়ে দিল।গাঢ় চুমু খেয়ে আবছা আলোয় রোদেলার চোখে চোখ রেখে বলল,
-“মায়মূন,আমি তোমাকে অনেক বেশি ভালোবাসি।তোমার সান্নিধ্যে এলেই আমি নিজেকে আর নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারি না।নিজেকে তোমার মাঝে হারিয়ে ফেলি।তখন যেন অবুঝ বালক হয়ে যাই।অসভ্য ঠোঁটকাটা পুরুষের তকমা চরিত্রে লাগাই।যদিও এসব আমার বয়সের সাথে যায় না।তাতে কি?আমি এমনটাই থাকবো।এতে তকমা উঠুক বউয়ের অসভ্য বর।তাতেও আমার কিছু আসবে-যাবে না।আমি তো কারণে-অকারণে,সভ্য-অসভ্য সবভাবেই আমার মায়মূনকে ভালোবেসে যাবো।”
তাহসিনের এসব কান্ডে রোদেলা লজ্জাই পেল বটে।লজ্জায় সে তাহসিনের বাহুতে মুখ লুকালো।লোকটা দিনদিন যে কতখানি অসভ্য পুরুষ হচ্ছে সেটাই সে ভাবছে।
#চলবে
[বি.দ্র:-কার্টেসী ছাড়া কপি করা নিষেধ।]
#নীল_বসন্ত
#লেখনীতে_মিথিলা_মিতু
#পর্বসংখ্যা_২৭
আজ একুশদিন পর তাহসিন ক্যাম্পে ফিরেছে।পায়ের ব্যান্ডেজ খোলা হয়েছে আরও দিন চারেক আগে।হাঁটা চলা শুরু করলেও দৌড়ানো সম্পূর্ণ নিষেধ।গ*ত হওয়া একুশ দিনে তাহসিন রুমে বসেই ল্যাপটপের সাহায্যে নথিপত্র চেক দিয়েছে।অনলাইনমুখী কাজ গুলোই করেছে সে।আগামী পনেরো থেকে বিশ দিন সে অফিশিয়াল কাজগুলোই করতে পারবে।যাকে বলে লো রিস্ক অ্যাসাইনমেন্ট।সম্পূর্ণ রিকভারির পরই ফিজিক্যাল ফিটিন্যাস পরীক্ষা দিয়ে তবেই সে ফিল্ডে নামতে পারবে।
ক্যাম্পে ফিরে প্রথম দিনের ব্রিফিংয়ে বসে সে সামনে রাখা নথিপত্রগুলোই চেক দিচ্ছে।আর কিছু একটা ভেবে যাচ্ছে। তার মনে হলো কর্ণেল ওসমানের সাথে কথা বলা উচিত। তাহসিন ফাইলগুলো রেখে কর্ণেল ওসমানের কেবিনে গেল।
কর্ণেল ওসমানের কাছে যেয়ে শুধালো সেদিনের হা*মলাকারী বাকি চারজনের থেকে কোনো প্রকার ইনফরমেশন কালেক্ট করতে পেরেছে কিনা।কর্ণেল জানালেন ওরা কিছুই জানে না।ওদেরকে টাকার বিনিময়ে হায়ার করা হয়েছে।আর কে বা কারা করেছে সেটাও ওরা জানে না।যে বা যারা হায়ার করেছে তাদের সাথে ফোনেই শুধুমাত্র কথা হয়েছে।তাও একেকসময় একেক ফোন নম্বর দিয়ে।ফোন নম্বরগুলো ভুয়া নামে রেজিস্ট্রেশন করা হয়েছে। তাহসিন সবটা চুপচাপ শুনলো।তার সন্দেহ হচ্ছে তারা রিসেন্ট যে গ্যাংটাকে আটক করেছিল ওরা তাদের দলেরই কেউ।তাদের দল যে বেশ ভারী সেটা সম্পর্কে তাহসিন অবগত।তার সন্দেহটার কথা কর্ণেলকে জানালে কর্ণেলও বললেন তারও একই সন্দেহ হয়।তাহসিন পুরোপুরি সুস্থ হলে ওদের মিশনে নামতে হবে।এদেরকে খুব হালকাভাবে নিলে হবে না।আজ না হয় বড়সড় কোনো ক্ষ*তি করতে পারে নি এরপর যদি বড় কোনো ক্ষ*তি করে ফেলে তখন? সামনের মিশনটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং রিস্কি।তবুও এর শেষ টানতেই হবে।তাহসিন কর্ণেল ওসমানকে জানালো ওই গ্যাং-এর আটক করা সেই দুইজনের সাথে দেখা করতে চায়।কর্ণেল যেন ব্যবস্থা করে দেয়।কর্ণেল জানালেন ব্যবস্থা হয়ে যাবে।কয়টাদিন অপেক্ষা করতে।তাহসিন জরুরি কথা শেষ করে ফের নিজের জায়গায় ফিরে আসে।আর বসে বসে পরিকল্পনা করে কিভাবে কি করা যায়?বিস্তর পরিকল্পনা সাজিয়ে তবেই মাঠে নামতে হবে।পরিকল্পনা ছাড়া মাঠে নামলে বিনা যুদ্ধেই পরাজয় হয়ে ফিরতে হয়।
★
রোদেলার টেস্ট প*রীক্ষা শেষ হয়েছে কিছুদিন পূর্বে।এখন হাতে আছে আর দুইমাস।এরপরই এইচএসসি পরীক্ষা শুরু হবে।রোদেলা খুবই চেষ্টা করছে ব্রাইট একটা রেজাল্টের জন্য।কিন্তু তার শরীর যে সায় দিচ্ছে না।ইদানীং তার শরীর প্রায়ই খারাপ থাকে।খাবারেও তার অনীহা জমেছে।খাবার সামনে দেখলেই তার পেটের ভেতরের নাড়ী-ভুড়ি সব যেন গুলিয়ে উঠে।তবুও তাহসিন জোর করেই তাকে খাবার খাওয়ায়।নয়তো দুর্বল হয়ে পড়বে।রোদেলার প্রেগ্ন্যাসির সময়সীমা চার মাস।
টেস্ট পরীক্ষা শেষ এখন পরীক্ষার পূর্ব প্রস্তুতির জন্য আগামী দুই মাসের কোচিং চলছে।রোদেলা আর নিহা দুইজনেই কোচিং শেষ করে পড়াশোনা নিয়ে আলোচনা করতে করতে মাঠে এলো।নিহা বলল,
-“রোদ আমি একবার শান্তর সাথে দেখা করতে চাই।ওর ক্লাসে গেলেই পেয়ে যাবো।তুমি যাবে আমার সাথে?জাস্ট পাঁচ মিনিটের জন্য যাবো।তাকে এক ঝলক দেখেই চলে আসবো।অনেকদিন হলো তার সাথে ঠিক মতো সাক্ষাৎ হয় না।এইজন্য তাকে দেখার জন্য মনটা আকুপাকু করছে।”
নিহার কথা শুনে রোদেলা হাসলো।বলল,
-“ঠিক আছে চলো।”
নিহা আর রোদেলা শান্তর ভবনের দিকে পা বাড়ালো।সিড়ি পেরিয়ে শান্তর ক্লাসের সামনে আসতেই বিরল এক দৃশ্য দেখে রোদেলা আর নিহা হা করে তাকিয়ে রইল।শান্ত তার ক্লাসের সামনের করিডোরে দাঁড়িয়ে আর তার সামনেই হাটুগেড়ে একটা মেয়ে বসে ফুল হাতে শান্তকে প্রপোজ করছে।পাশেই শান্তর বন্ধুরাও অবাক চোখে সেদিকেই তাকিয়ে আছে।মেয়েটি শান্তর দিকে ফুল বাড়িয়ে দিয়ে বলল,
-“আই লাভ ইয়্যু শান্ত।প্লিজ এক্সসেপ্ট মি।”
শান্তর চোখও ছানা বড়া।নিহা ছাড়া যেখানে কোনো মেয়েই সাহস পায় নি শান্তর কাছ ঘেঁষতে সেখানে এই মেয়ে কোত্থেকে উদয় হলো?শান্ত ভাবলো মেয়েটাকে কয়েকটা কড়া কথা শুনিয়ে দিবে।কিন্তু বিধিবাম, তার আগেই নিহা মেয়েটার দিকে তেড়ে এসে বলল,
-“হ্যেই স্টুপিড।নাম কি তোমার?কোন সাহসে শান্তর দিকে নজর দিয়েছো হু?”
শান্ত নিহাকে দেখে আরেক চোট অবাক হলো।এই ভুল সময়েই নিহার আগমন ঘটতে হলো?আর নিহার যা জেদ না যেন মেয়েটাকে থাপ্পড় দিয়ে ফেলে।ওকে বিশ্বাস নেই।তাই শান্ত নিহার উদ্দেশ্যে বলল,
-“নিহা শান্ত হও।”
নিহা এবার শান্তর দিকে তাকিয়ে কড়া কন্ঠে বলল,
-“আপনি চুপ করুন।খুব আনন্দ হচ্ছে তাই না?মেয়েদের ক্রাশ হয়ে গিয়েছেন।তারা এখন আপনাকে ফুল দিয়েও প্রপোজ করে।খুব গর্বের বিষয় তাই না?কিন্তু আগে কোথায় ছিল এই মেয়েরা?যখন অগোছালো শান্তটা ছিল তখন কোন গর্তে যেয়ে লুকিয়ে ছিল?তখন কেন আপনার কাছও ঘেঁষতো না?কষ্ট করেছি আমি আর ফায়দা লুটবে বাকিরা তা তো হবে না।”
শান্ত কি বলবে খুঁজে পেল না।এইদিকে হঠাৎ নিহার আগমন আর এসব কথাবার্তা সবই যেন মেয়েটার মাথার উপর দিয়ে গেল।মেয়েটা ভ্রু গুটিয়ে নিহার উদ্দেশ্যে বলল,
-“আপনি কে?এভাবে কেন কথা বলছেন ওর সাথে?কি হয় আপনার?”
নিহা চিবিয়ে চিবিয়ে বলল,
-“ইয়্যু নো না হি ইজ মাইন?হি ইজ অনলি মাইন।ওকে?সে অলরেডি বুকড হয়ে গিয়েছে।স্যো তার থেকে দূরে দূরে থাকবে।”
-“উনি কি প্রোডাক্ট নাকি যে বুকড হয়ে যাবে?”
-“হুম তাই।এত কথা বলো কেন?তুমি কলেজের নতুন তাই না?আমি তোমার সিনিয়র।স্যো সম্মান দিয়ে কথা বলবে। আর যাকে প্রপোজ করলে না সে শুধুই আমার।তাই নেক্সট থেকে ওর দিকে নজরও বাড়াতে আসবে না।নয়তো খবর নিয়ে ছাড়বো।যাও ফোটো।”
নিহার কড়া কন্ঠ শুনে মেয়েটা কিছুটা ভয় পেল।সে আসলেই কলেজে নতুন।নিহা তার সিনিয়র।বলা যায় না যদি র্যাগিং করে তখন?তাই মেয়েটা চুপচাপ চলে এলো। মেয়েটি যাওয়ার পর শান্ত নিহার দিকে পানির বোতল বাড়িয়ে দিয়ে বলল,
-“কুল নিহা কুল।নাও পানি খেয়ে গলা ভেজাও।খুব তো ঝগড়া করলে।তোমার এখন পানি প্রয়োজন।”
নিহার রাগে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার জন্য এই কথাটুকুই যথেষ্ট ছিল।নিহা শান্তর দিকে তাকিয়ে বলল,
-“আপনার পানি আপনিই খান।মেয়েটিকে কিছু বললেন না কেন হ্যাঁ?মেয়েদের প্রপোজাল পেতে ভালো লাগে?”
শান্ত বোকা বনে গেল।মুখে অসহায়ত্ব ফুটিয়ে বলল,
-“যাহ বাবা আমি আবার কখন বললাম ভালো লাগে?”
-“তাহলে মেয়েটা যখন প্রপোজ করছিল তখন কিছু বললেন না কেন?”
-“আমাকে কিছু বলার সুযোগ দিয়েছো নাকি?আমি বলার আগেই তো তুমি এসে বাঘিনীর মতো ঝাপিয়ে পড়লে।”
-“কি বললেন আমি বাঘিনীর মতো ঝাপিয়ে পড়েছি?আমি না এলে খুব ভালোভাবে মজা লুটতে পারতেন তাই না?”
থেমে গমগমে স্বরে বলল,
-“শুনুন শান্ত আপনি বলেছিলেন আপনি বন্ধু হিসেবে থাকতে চান তাই আমি আপত্তি করে নি।আপনার শর্ত মেনে নিয়েছি।ভালোবাসা প্রকাশ করতে বারণ করেছেন তাই এখন আর প্রকাশ করি না।প্রকাশ করি না বলে ভালোবাসি না তা কিন্তু মোটেও নয়।আমি আপনাকে ভালোবাসি।ঠিক আগের মতোই।বন্ধুত্বটা নষ্ট হবে বিধায় এখন আর ভালোবাসি বলে মুখে ফেনা তুলি না।তাই বলে আপনি ভাববেন নিহা এখন আর আপনাকে ভালোবাসে না তাই আপনি অন্য কারো প্রপোজাল এক্সসেপ্ট করে নিবেন কিংবা আপনার মন অন্যকাউকে দিতে চাইবেন সেটা কিন্তু হবে না।ভালোবাসলে আপনি আমাকে বাসবেন।আর নয়তো কাউকেই বাসবেন না।বুঝতে পেরেছেন?”
কথাটুকু বলেই নিহা গটগট পায়ে চলে গেল।এইদিকে শান্ত পিছু থেকে ডেকে উঠে,
-“নিহা শুনো।তুমি ভুল বুঝছো আমাকে।”
নিহা কি শুনার পাত্রী?সে তো হেঁটেই যাচ্ছে।নিহার রণচণ্ডী মুখ দেখে রোদেলা তখন আর এগোয় নি।এখন নিহা আসাতে রোদেলা নিহার পিছু পিছু সিড়ি ভেঙে নেমে আসছে।পিছু থেকে ডাকছে,
-“এই নিহা দাঁড়াও।আমি দ্রুত হাঁটতে পারছি না।কষ্ট হচ্ছে।”
রোদেলার কষ্ট হচ্ছে শুনে নিহা দাঁড়ালো।বলল,
-“সাবধানে এসো রোদ।”
রোদেলা নিচে নামলেই নিহা বলল,
-“দেখলে রোদ তুমি দেখলে তো?আমি এতগুলো দিন ধরে তাকে ভালোবেসে এসেছি,তাকে এত বাজে অতীত থেকে বের করে এনেছি,ধৈর্য্য ধরে সবটা সামাল দিয়েছি অথচ এখন কোথাকার কোন মেয়ে এসে প্রেমের প্রস্তাব দিচ্ছে আর সে চুপচাপ দেখে যাচ্ছে।”
রোদেলা হাঁটতে হাঁটতে বলল,
-“নিহা তুমি শান্ত ভাইয়াকে শুধু শুধু ভুল বুঝছো।দেখো ভাইয়া কিছু বলার আগেই আমরা ওখানে যেয়ে উপস্থিত হয়েছি।আর তুমিই তো মেয়েটাকে কড়া কথা বলে দিলে। ভাইয়াকে কি সুযোগ দিয়েছো?”
-“কি করতাম বলো।চোখের সামনে ভালোবাসার মানুষটাকে অন্য মেয়ে প্রেমপ্রস্তাব দিচ্ছে তা কি সহ্য করার মতো? দেখেই তো মাথাটা নগদ গরম হয়ে গেল।”
-“হুম আমি তোমার অবস্থা বুঝতে পারছি।শান্ত ভাইয়া যদি মেয়েটাকে এক্সসেপ্ট করে নিত তবে একটা কথা ছিল। যেহেতু ভাইয়া এক্সসেপ্ট করে নি সেহেতু নিশ্চিন্তে থাকো।”
-“ওই লোকটার কি কোনো ফিলিংস নেই ভাই?শুনেছি ছেলে আর মেয়ে নাকি কখনোই বন্ধু হতে পারে না।তাদের মাঝে প্রেম সংগঠিত কিছু একটা হয়ে যায়।অথচ আমি তো তাকে ভালোবেসেই বন্ধুত্ব করলাম তবে কেন তার মনে আমার নামের ভালোবাসার বীজটা এখনো বুনতে পারছি না?”
-“ধৈর্য্য ধরো নিহা।তোমার ভালোবাসা সত্য হয়ে থাকলে শান্ত ভাই একদিন না একদিন ভালোবেসে ঠিকই তোমাকে তার মাঝে খুঁজে নিবে।”
-“আর কত ধৈর্য্য ধরবো?আর ঠিক কতটা সময় অপেক্ষা করলে সে দিনটি আসবে?”
-“জানা নেই নিহা।তবে সুখ অতি নিকটেই ধরা দিবে মিলিয়ে নিও।”
★
রাতে তাহসিন বেশ ক্লান্তিতে বাসায় ফিরলো।রোদেলা তখন বিছানায় বসে ছিল।তাহসিন ক্লান্তিতে এসেই রোদেলার কোলে মাথা রাখলো।ফ্রেশও হলো না।রোদেলা তাহসিনের চেহারা দেখেই বুঝে ফেলল তাহসিন যে চিন্তিত।রোদেলা তাহসিনের চুলে হাত বুলাতে বুলাতে নরম কন্ঠে শুধালো,
-“কি হয়েছে?কি নিয়ে এত চিন্তিত?”
তাহসিন কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলল,
-“এমনিই তেমন কিছু না।কাজের চাপেই একটু টেনশড হয়ে আছি।”
রোদেলা মাথা নুইয়ে তাহসিনের কপালে ছোট্ট একটা চুমু খেয়ে বলল,
-“এত টেনশন কিসের?টেনশন করলে নিজের শরীরের ক্ষ*তি হয় সেটা জানেন না?”
তাহসিন রোদেলার কোলে মাথা রেখেই চোখ তুলে রোদেলার দিকে তাকালো।ঠোঁট উলটে মাথা নাড়লো। তাহসিনের ঠোঁট উলটানো দেখে রোদেলা ফিক করে হেসে ফেলল।বলল,
-“যে আমাকে সবসময় বলে টেনশন ফ্রি হয়ে থাকতে তার মুখে টেনশনের কথা মানায় না।এত টেনশন কিসের?ঠান্ডা মাথায় বুদ্ধির সাথে লড়ে যাওয়াই তো তাহসিন মাহমুদের কাজ তাই না?”
তাহসিন বলল,
-“আমার ডায়ালগ আমাকেই দেওয়া হচ্ছে হুহ?”
রোদেলা ঠোঁট চেপে হাসলো।তাহসিন কোল থেকে মাথা উঠিয়ে রোদেলা পেটে আলতো করে চুমু খেয়ে বলল,
-“সব ঠিক ঠাক?”
-“হুম।”
-“মেডিসিন নিয়েছিলে?”
-“হ্যাঁ।”
বলা বাহুল্য রোদেলার শরীর দুবর্লের জন্য কিছু মেডিসিন দেওয়া হয়েছিল।তাহসিন রোদেলার পেট জড়িয়ে বলল,
-“আমি খুব এক্সাইটেড।আমার সন্তানের পৃথিবীতে যেদিন আগমন ঘটবে সেদিন হয়তো আমার থেকে বেশি খুশি কেউ হবে না।ট্রাস্ট মি।”
-“আমি জানি।”
তাহসিন রোদেলার পেট জড়িয়েই বলল,
-“তবে আমি জানি না সেদিনটি নিজ চোখে দেখার সৌভাগ্য আমার হবে কিনা।”
রোদেলা তাহসিনের দিকে প্রশ্নাত্মক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে বলল,
-“মানে?”
তাহসিন উঠে বসে রোদেলার হাতে চুমু খেল।অতঃপর বিছানা থেকে নামতে নামতে বলল,
-“কিছু না।ক্ষিধে পেয়েছে খাবার বাড়ো।আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।”
রোদেলা আর না ভেবে চলে গেল।তাহসিন ফোস করে শ্বাস ছেড়ে বলল,
-“সবার ভাগ্যে সবকিছু থাকে না।মানুষ যেটা খুব করে চায় অনেকসময় সেটাই অধরা থেকে যায়।আর যদি ভাগ্যক্রমে তা পেয়ে যায় তবে সেটা ভাগ্যের অনুগ্রহ ছাড়া কিছুই নয়।
আর আমার মতো মানুষদের ঝুঁকিপূর্ণ এই জীবনের প্রতিটি মূহুর্তই কাটে অনিশ্চয়তায়,যখন-তখন বুক পেতে দাঁড়াতে হয় মৃত্যুর মুখোমুখি,সেই জীবনে বেশি কিছু চাওয়ার সাহস থাকে না।এখানে বেশি কিছু চাওয়া মানেই নিজেকে প্রতারিত করার আশঙ্কা।বোঝাতে পারবো না তোমায়,কেমন একটা অদৃশ্য দেয়াল সবসময় ঘিরে রাখে আমায়।”
#চলবে
[বি.দ্র:-কার্টেসী ছাড়া কপি করা নিষেধ।