নীল বসন্ত পর্ব- ২৮+২৯+৩০

0
24
নীলবসন্ত

#নীল_বসন্ত
#লেখনীতে_মিথিলা_মিতু
#পর্বসংখ্যা_২৮
বেশ অনেকদিন পরের কথা।তাহসিন আর তার টিম নিয়ে প্রস্তুতি নিচ্ছে পরবর্তী মিশনের জন্য।প্রায়ই টিম নিয়ে পরিকল্পনা সাজায় কিভাবে কি করা যায়?ওর চাকরিজীবনে এই প্রথম কোনো মিশনে সে এতটা সর্তকতার সাথে প্ল্যান সাজাচ্ছে।খুবই খাটছে।এইতো গতকাল তাহসিন আটক করা সেই গ্যাং-এর দুইজনের সাথে সাক্ষাৎ করে।অনেক কষ্টের পর তাদের থেকে গুরুত্বপূর্ণ কিছু ইনফরমেশন পায়। সেই ইনফরমেশন ধরেই তারা প্ল্যান সাজাচ্ছে।ব্যাক আপ প্ল্যানও রাখছে।সবটা খুব দক্ষতার সাথে সামাল দিয়ে যাচ্ছে।তাহসিন বাসায় ফিরলো রাত বারোটার পর।এসে দেখলো রোদেলা শুয়ে শুয়ে পড়ছে।কাল বাদে পরশু থেকেই রোদেলার এইচএসসি এক্সাম শুরু হবে।তাই এখনো সে পড়ার টেবিলে আছে।সে এবার বেশ নার্ভাস হয়ে আছে। যদিও প্রতি পরীক্ষার আগেই সে বেশ নার্ভাস ফিল করে। কিন্তু এবারের কাহিনি তো ভিন্ন।সে তো একা নয়।তার সাথে আর একটা প্রাণ বেড়ে উঠছে।যার দরুণ সে বেশ অনেকক্ষণ পড়তে পারে না।না বসে থাকতে পারে।অসুস্থতা যেন তার সঙ্গী হয়ে গিয়েছে।এর উপর উঁচু পেট নিয়ে হাঁটাচলা করতেও বেশ কষ্ট হয়।তবুও দিনশেষে যখন ভাবে তার এতটা কষ্টের বিনিময়ে একটা জীবন্ত প্রাণ সে উপহার পাবে।তাদের ভালোবাসার চিহ্ন হয়ে সে আসবে।তাকে মা বলে ডাকবে।এটা ভাবলেই সব কষ্ট নিমিষেই ভ্যানিশ হয়ে যায়।আর মানসিক শান্তি দেওয়ার জন্য তো তাহসিন আছেই।

তাহসিন এসেই রোদেলার পড়াশোনার খোঁজ নিল আগে। কি পড়ছে না পড়ছে সবটার খোঁজই নিল।এরপর সে ফ্রেশ হতে গেল।তাহসিন ফ্রেশ হয়ে এলেই রোদেলা বইপত্র গুছিয়ে রেখে বলল,

-“খাবার বাড়বো?”

তাহসিন রোদেলার দিকে তাকিয়ে বলল,
-“তুমি খেয়েছো?”

রোদেলা দুইদিকে মাথা নাড়লো।মানে সে খায় নি।তাহসিন মেকী ধমক দিয়ে বলল,
-“তোমাকে না বলেছি আমার ফিরতে লেইট হলে খেয়ে নিবে।এই অবস্থায় এতটা সময় না খেয়ে অপেক্ষা করাটা কি ঠিক হচ্ছে?”

রোদেলা ঠোঁট উলটে বলল,
-“কি করবো বলুন?রাতের বেলা আপনাকে ছাড়া একা একা খাবার খেতে ভালো লাগে না।”

-“সমস্যা কি আমি এলে আবার খাবে।”

রোদেলা ফোস করে শ্বাস ছেড়ে বলল,
-“কেন মিছে চিন্তা করছেন?আমি কি এতক্ষণ ধরে না খেয়ে আছি নাকি?আমি কিছুক্ষণ আগেই ফল কে*টে খেয়েছি। জানেন মাহমুদ সাহেব আজ না আমি খিচুড়ি আর সর্ষে ইলিশ রান্না করেছি।খাবেন চলুন।খেয়ে বলুন কেমন হয়েছে?”

তাহসিনের ভ্রু গুটিয়ে এলো।কোমড়ে হাত গুজে বলল,
-“এ্যাই তোমার না দুইদিন বাদে এক্সাম?এখন এসব রান্নাবান্না করার সময় হুহ?”

-“আরে আমি পড়েছি তো।আর খিচুড়ি চুলায় বসিয়ে দিয়ে এসে পড়েছি।চলুন না মাহমুদ সাহেব।”

রোদেলা বাচ্চাদের মতো করে বলে উঠলো।তাহসিন মৃদু হেসে বলল,
-“তুমি যাও।আমি আসছি।”

-“ঠিক আছে।আমি খাবার বাড়ছি।জলদি আসুন।”

রোদেলা যেতেই তাহসিন মোবাইলে একটা মেইল এসেছে কিনা সেটা চেক করতেই মোবাইল হাতে নিল।মোবাইল হাতে নিতেই কর্ণেল ওসমানের কল এলো।উনার সাথে কথা বলে জানতে পারলো জেলের মধ্যেই সেই টে*রোরিস্ট দুইজন মা*রা গিয়েছে।কিভাবে মা*রা গেল সেটা এখনো বলা যাচ্ছে না।তবে সেটা নিয়ে তদন্ত চলবে।কথাটা শুনেই তাহসিনের মাথায় রা*গ চেপে গেল।এটা কি করে সম্ভব? দুইজন একই সাথে মা*রা গেল?দুইজনের থেকে আরও কিছু ইনফরমেশন কালেক্ট করা প্রয়োজন ছিল।তাহসিনের মাথা ঘুরপাক খাচ্ছে।পুরো কেইসটাই যেন উলটে গেল।কি লাভ হলো এতদিনের পরিকল্পনা সাজিয়ে?তাহসিন মাথা চেপে ডিভানে বসে পড়লো।রাগে তার সব কিছু ধ্বংস করে দিতে ইচ্ছে হচ্ছে।কে*ইসটা যেন থেকে থেকেই জটিল হচ্ছে।

তাহসিন নিজের রাগ কিভাবে সামলাবে বুঝে উঠতে পারছে না।এমন সময়ই রোদেলা রুমে এলো।এসে তাহসিনের সামনে এসে বলল,

-“সেই কখন থেকে ডাকছি শুনছেন না?খাবার বেড়েছি আসুন।”

তাহসিন উত্তর করলো না।যেভাবে বসে ছিল সেভাবেই বসে আছে।রোদেলা বলল,
-“এ্যাই কি হয়েছে আপনার?খাবার বেড়েছি তো।আসুন।”

তাহসিন আর রাগ কন্ট্রোল করতে পারলো না।ধমকে বলে উঠলো,
-“খাবো না আমি।একদম ডিস্টার্ব করবে না।”

তাহসিনের ধমকে রোদেলা কেঁপে উঠলো।তাহসিন হনহন করে রুম থেকে বেরিয়ে গেল।তাহসিন পাশের রুমে গিয়ে সশব্দে দরজাটা আটকে ফেললো।সে শব্দে রোদেলার পুরো কায়া যেন কেঁপে উঠলো।এতটা রাগ কি তাহসিন কখনোই দেখিয়েছে?কি হলো হঠাৎ?সবই তো ঠিক ছিল।তাহলে? রোদেলা ডিভানে চুপচাপ বসে রইল।সে বুঝতে পারছে তাহসিনের কিছু একটা হয়েছে।কিন্তু কি হয়েছে সেটাই বুঝতে পারছে না।রোদেলা গঠিত কিছু হয় নি সেটা সে শিওর।তবে সমস্যাটা কোথায় হলো?

রোদেলা ডিভানে বসে হাটুতে থুতনি ঠেকিয়ে চুপচাপ জানালার বাহিরে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে।চোখ ফুড়ে নিঃশব্দে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে।তার ছোট বেলা থেকেই অভ্যাস কেউ তাকে ধমক দিলেই তার কান্না এসে পড়ে।প্রায় অনেকটা সময় এভাবেই কে*টে গেল।রোদেলা এবার ডিভান ছেড়ে উঠলো।চোখের পানি মুছে পাশের রুমের দিকে পা বাড়ালো।এখনো পাশের রুমে দরজা ভেতর থেকে লক করা।রোদেলা বাহির থেকে নরম কন্ঠে তাহসিনকে বার কয়েক ডাকলো।কয়েকবার ডাকার পর দরজা খোলার খট করে আওয়াজ হলো।রোদেলা ভেতরে পা রাখতে যাবে এমন সময়ই তাহসিন ভেতর থেকেই রোদেলাকে ঝাপটে জড়িয়ে ধরলো।তাহসিনের বুকে ঠাঁই পেয়ে রোদেলা শান্তিময় শ্বাস টানলো।তাহসিন রোদেলা কপালে গালে পাগলের মতো চুমু খেতে খেতে বলল,

-“মায়মূন সরি।আই এম এক্সট্রিমলি সরি।মাথাটা গরম ছিল বিধায় এমন বিহেভিয়ার করে ফেলেছি।প্লিজ আমাকে মাফ করে দিও।”

রোদেলা বলল,
-“সরি বলতে হবে না।আমি বুঝতে পেরেছি আপনার মাথা গরম হয়ে গিয়েছিল।কিন্তু কেন সেটাই বুঝতে পারছি না।”

-“মায়মূন সব এলোমেলো লাগছে।সব কেমন ঘোল পাকিয়ে যাচ্ছে।”

তাহসিন রোদেলাকে জানালো তার চিন্তিত হবার কারণটা। রোদেলা তাহসিনকে বলল,
-“চিন্তা করিয়েন না।আল্লাহ ঠিক একটা পথ বের করে দিবেন।আল্লাহ ভরসা।অনেক রাগ করেছেন এবার খাবেন চলুন।”

-“খেতে ইচ্ছে করছে না।জোর করো না প্লিজ।”

-“আমার কিন্তু বড্ড ক্ষিধে পেয়েছে।আর আপনি ভালো করেই জানেন আপনি না খেলে আমিও খাবো না।এখন আপনি কি চান আমি না খেয়ে থাকি?”

তাহসিন চুপ করে রইল।রোদেলা তাহসিনের হাত ধরে টেনে এনে টেবিলে বসালো।এরপর খাবার বেড়ে তাহসিনের মুখের সামনে তুলে ধরলো।তাহসিন রোদেলার মুখোপানে তাকিয়ে চুপচাপ খাবারটা মুখে পুরে নিল।মেয়েটা কেমন সাংসারিক হয়ে উঠেছে সেটাই তাহসিন দেখছে।আগে তো একটুখানি উচ্চস্বরে কথা বললেই অভিমানে মুখ ফোলাতো। অথচ আজ তাহসিন কতটাই না উঁচু কন্ঠে ধমক দিয়েছে রাগ দেখিয়েছে অথচ মেয়েটা বিন্দুমাত্র অভিমান দেখায় নি তার সাথে।তাহসিন এখন অনুশোচনায় তড়পাচ্ছে।খুব বেশি কি প্রয়োজন ছিল রোদেলাকে ওইভাবে বলার?

রোদেলা হাতে লেবু পাতা নিয়ে বসলো।সাথে নিল আচার। কারণ মাছের গন্ধ পেলেই সে বমি করে সব ভাসাবে।তাই এই পন্থা অবলম্বন করলো।যাতে মাছের গন্ধ নাকে যেতেই লেবুপাতা নাকের কাছে ঘষবে তাহলে আর বমি হবে না। এই ট্রিকসটা তার শাশুড়ী মা তাকে শিখিয়ে দিয়েছে।আর এই আচারগুলোও তার শাশুড়ী মা-ই পাঠিয়েছেন।যেন রোদেলার টকজাতীয় কিছু খেতে ইচ্ছে হলে আচার খেতে পারে।আবার ভাত দিয়ে খাওয়ার আচারও পাঠিয়েছেন।যেন রোদেলা দু মুঠো ভাত গিলতে পারে।খাওয়া-দাওয়া শেষ করে ওরা ঘুমাতে গেল।আজ আর তাহসিন রোদেলাকে বুকে টেনে নিল না।উলটো রোদেলাই তাহসিনকে বুকে জড়িয়ে নিল।তাহসিনের চুলে হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো। তাহসিন চোখ বন্ধ করে রাখলেও তার মাথায় অন্য ভাবনা ঘুরছে।কিভাবে এই মিশনে সাকসেসফুল হওয়া যায়?কি ভাবে প্ল্যান মাফিক এগোনো যায়?এর আগে তো জানা প্রয়োজন কি করে ওই দুইজন মা*রা গেল?

মাঝের একটা দিন যেন দ্রুতই কেটে গেল।রোদেলার পরীক্ষার প্রথম দিন।তাহসিনই রোদেলাকে তার পরীক্ষা কেন্দ্রে নিয়ে গেল।রোদেলাকে সাহস দিয়ে গেল।তাজউদ্দিন মাহমুদ আর নাজমা বেগম এসেছেন আজ সকালেই। মেয়েটার পরীক্ষা এর উপরে এই অবস্থা সব ভেবেই উনারা চলে এসেছেন।যদিও রোদেলার প্রেগ্ন্যাসির একদম প্রথম দিকে এসে দুইদিন থেকে গিয়েছিলেন।তবে এবার এসেছেন অনেকদিনের জন্য।যাওয়ার সময় রোদেলাকে নিয়েই ফিরবেন।রোদেলার পরীক্ষা শেষ হলেই ভেবেছেন রোদেলাকে সাথে নিয়ে ফিরবেন।উনার কাছে রেখেই সেবা-যত্ন করবেন।প্রথম দিনের পরীক্ষা বিধায় তাহসিনই পরীক্ষা কেন্দ্রে নিয়ে গিয়েছে।অন্যদিকে নিহাকে নিয়ে এসেছিল নিহার বাবা।নিহাও খুবই নার্ভাস।রোদেলা আর নিহা দুইজন দুইরুমে পড়েছিল।পরীক্ষা শেষেই রোদেলা হল থেকে বেরিয়ে এসে গাছের ছায়ায় রাখা বেঞ্চিতে বসলো। তার খুবই ক্লান্ত লাগছে।কিছু মিনিটের মাথায় নিহাও সেখানে উপস্থিত হয়।নিহা এসে রোদেলার পাশে বসে বলল,

-“এক্সাম কেমন হয়েছে রোদ?”

-“আলহামদুলিল্লাহ ভালো।তোমার কেমন হয়েছে?সবকিছুর এন্সার দিতে পেরেছো?”

-“হ্যাঁ দিয়েছি।প্রশ্নটা কিন্তু মোটামুটি হার্ড হয়েছে তাই না?”

-“হ্যাঁ।আর জানো প্রথম দিকে ভালো করে লিখলেও শেষ সময়টাতে এসে শরীর এতো খারাপ লাগছিল।পরে তাড়াতাড়ি লিখে বের হলাম।এখানে এসে বসাতে এখন একটু শান্তি লাগছে।”

নিহা আর রোদেলা কিছুক্ষণ গল্প করলো।দুইজন প্রশ্ন নিয়ে ডিসকাসড করলো।এরপর গেইট পেরিয়ে বের হতেই শান্তর দেখা মিলল।নিহা তো শান্তকে দেখেই রোদেলার হাত চেপে বলল,

-“রোদ আমার চোখ যেন বিশ্বাস হচ্ছে না।আসলেই সামনে সে দাঁড়িয়ে?”

-“হ্যাঁ সত্যিই শান্ত ভাই এসেছেন।”

নিহা এগিয়ে গেল।শান্ত বলল,
-“এক্সাম কেমন হয়েছে?”

-“ভালো হয়েছে।”

শান্ত রোদেলাকে সালাম দিয়ে কুশলাদি বিনিময় করলো। রোদেলা আশেপাশে তাকাতে তার শ্বশুড় মশাইয়ের দেখা মিলল।রোদেলা বুঝতে পারলো তার শ্বশুড় মশাই তাকে নিতে এসেছে।রোদেলাকে দেখে তাজউদ্দিন সাহেব এগিয়ে এলেন।রোদেলা শান্ত আর নিহাকে উনার সাথে পরিচয় করিয়ে দিল।রোদেলা তার শ্বশুড়ের সাথে চলে এলো। অন্যদিকে নিহা আর শান্তও গল্প করতে করতে বাসার পথ ধরলো।

#চলবে

#নীল_বসন্ত
#লেখনীতে_মিথিলা_মিতু
#পর্বসংখ্যা_২৯
দেখতে দেখতে রোদেলার পরীক্ষা প্রায় শেষ হয়ে এলো। এইদিকে তাহসিনেরও মিশনে যাওয়ার সময় ঘনিয়ে এলো। রোদেলার পরীক্ষা বাকি আছে আর একটা।তাহসিন মিশনে যাওয়ার সম্পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়ে ফেলেছে।আগামীকাল ভোরেই সে এবং তার টিম রওনা হবে।ওই দুইজন টেরোরিস্ট স্ট্রোক করে মা*রা গিয়েছে,রিপোর্টে সেটাই বেরিয়েছে।তবুও তাহসিনের খচখচানিটা যাচ্ছে না।একই দিনে একই সময়ে কি করে দু দুটো মানুষ স্ট্রোক করে মা*রা যেতে পারে?এটা কি সম্ভব?তাহসিনের মাথায় বিষয়টা ঘুরপাক খাচ্ছে।তবুও সামনে মিশনে যেতে হবে বিধায় বিষয়টা নিয়ে বেশি ঘাটলো না।সে কর্ণেলের কেবিনে গেল।কর্ণেলের সাথে কিছু জরুরি কথা বলে অতঃপর বলল,

-“স্যার একটা কথা ছিল।”

-“হুম মেজর বলুন।”

-“স্যার আপনার কি মনে হয় ওই দুইজন স্ট্রো*ক করে মা*রা গিয়েছে?”

-“রিপোর্ট তো তা-ই বের হলো।”

-“স্যার আমাদেরকে যা দেখানো হয় আমরা তা-ই দেখি।যার দরুণ সত্যটা চাপা পড়ে যায়।”

কর্ণেলের ভ্রু গুটিয়ে এলো।বলল,
-“মানে?”

তাহসিন দীর্ঘ একটা শ্বাস ছেড়ে বলল,

-“একবার ভাবুন তো স্যার, ওই গ্যাং-এর দুই সদস্যকে আমরা আটক করেছি কতগুলো দিন হয়ে গিয়েছিল অথচ তাদের থেকে কোনো ইনফরমেশনই কালেক্ট করা সম্ভব হয় নি।যেই না তাদের থেকে কিছু ইনফরমেশন কালেক্ট করলাম তারপরেই ওদের মৃ*ত্যু হলো।তাও কিনা দুইজন একই সময়ে স্ট্রোক করে মা*রা গেল।এটা কি কাকতালীয় মনে হচ্ছে না?”

থেমে,
-“আচ্ছা যদি ধরি তাদেরকে বিষ জাতীয় কিছু একটা খাইয়ে মা*রা হয়েছে তবে সেটা কে করতে পারে?বাহিরে থেকে কেউ জেলে এসে তো আর এই কাজ করতে পারবে না তাই না?যতো কারসাজি জেলের ভেতরেই ঘটছে।কেউ কিছু তো একটা করছে।আমাদের অজান্তে কিছু তো একটা হচ্ছেই।আমাদের চোখে ধুলো দিয়ে আমাদের অগোচরেই কিছু একটা ঘটে যাচ্ছে যেটা আমরা টেরই পাচ্ছি না?”

একটু থেমে সতর্কতার সাথে বলল,
-“আমার কেন জানি মনে হচ্ছে আমাদের দলের কেউ আমাদের অগোচরে বিরোধিতা করছে।হতে পারে আমাদের অজান্তে গোপনে অপচক্রকে সাহায্য করছে কিংবা কোনো গোপন খবর আদান-প্রদান করছে।স্যার আমার অনুরোধ আপনি পুরো বিষয়টা একটু খুটিয়ে দেখবেন।”

কর্ণেল ওসমান কিছুক্ষণ ভাবলেন।তাহসিনের কথাগুলো ফেলে দেওয়ার মতো না।কর্ণেল ওসমান বললেন,

-“আপনি একজন বিচক্ষণ মেজর।আপনি যেহেতু কথাগুলো বলেছেন সেহেতু ভেবেই বলেছেন।আমি আপনাকে আশ্বাস দিচ্ছি ব্যাপারটা আমি দেখবো।আপনারা মিশন থেকে ফিরে আসুন তারপর ব্যাপারটা নিয়ে ভাবছি। আপনাদের যাত্রা শুভ হোক।জয়ী হয়ে ফিরুন।”

রোদেলা পড়াশোনা শেষ করে পাশের রুমে তার শ্বশুড়-শাশুড়ির সাথে গল্পে মজেছে।গল্পের মূল বিষয়ই হচ্ছে তাহসিনের ছোট বেলা।ছোট থেকেই তাহসিন ছিল শান্ত, স্বল্পভাষী।কথাবার্তা কম বলতো,দুষ্টামিও কম করতো।তবে কম দুষ্টামি করতো ঠিকই কিন্তু যেসব দুষ্টামি করতো সবাইকে নাচিয়ে ছাড়তো।তেমনই একটা ঘটনা নাজমা বেগম রোদেলাকে বলছেন,

-“জানিস ছোট বেলায় সে একবার কি কান্ড ঘটিয়েছিল?”

রোদেলা আগ্রহ প্রকাশ করে বলল,
-“কি করেছিল মা?”

নাজমা বেগম বলতে লাগলেন,
-“তাহসিন তখন বেশ ছোট।কতই বা বয়স হবে?ওইতো চার বছরের একটু বেশি বোধহয়।তো তখন সন্ধ্যা বেলা।সে চিপস খাবার বায়না ধরেছিল।তো ঘরে দেখি চিপস ছিল না এক প্যাকেট মটর ভাজা ছিল।তাকে সেটা খেতে দিয়ে আমি গেলাম রান্নাঘরে ভাত বসাতে।দেখে গেলাম সে চুপচাপ খাচ্ছে।ওমা কিছুক্ষণের মাঝেই আমাকে ডাকছে।আমি যেয়ে জিজ্ঞেস করলাম

“কি হয়েছে আব্বু?ডাকছো কেন?”

তাহসিন তার নাক দেখিয়ে দিয়ে বলল,
-“মা নাকে।”

আমি বললাম,
-“কি হয়েছে নাকে?”

সে আদো আদো কন্ঠে বলল,
-“মুটুর।মুটুর।”

আমার সন্দেহ জাগলো।তার নাক উঁচু করে দেখলাম কিছু দেখা যাচ্ছে না।তাও সন্দেহ বশে ফোনের আলো জ্বালিয়ে নাকের কাছে ধরতেই দেখি একটা মটরশুঁটি নাকের ভেতরে দেখা যাচ্ছে।তাও এতটাই ভেতরে ঢুকিয়েছে যে মটরশুঁটির একটু কোণা দেখা যাচ্ছে।বললাম জোরে শ্বাস ছাড়তে।সে কি বুঝলো কিজানি আমার কথা মতো চুপচাপ তা-ই করলো।কিন্তু কোনো লাভই হলো না।যেহেতু নাক জিনিস এইজন্য রিস্ক নিতে চাইনি নি।তোর শ্বশুড় মশাইকে কল দিয়ে সবটা জানালাম।তিনি বললেন আসছেন আমি যেন তাহসিনকে নিয়ে বের হই।তাড়াতাড়ি করে তাহসিনকে নিয়ে বের হলাম।তোর শ্বশুড়মশাই সহ ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেলাম।ডাক্তারের কাছে নিতে নিতে ও মটরশুঁটিটা নাকের পুরো ভেতরে নিয়ে গিয়েছে যা এখন দেখাই যাচ্ছে না।পরে ডাক্তার বললেন চেষ্টা করে দেখতে পারেন যদি সম্পূর্ণ রিস্কটা আমরা নেই।বল ওই সময়ে কেমন লাগে?আমি তো কান্না করে দিয়েছি।তোর শ্বশুড় মশাই ডাক্তারকে আশ্বাস দিয়ে বললেন যেন চেষ্টা করে।ডাক্তার আন্দাজের বশেই উনাদের লম্বা চিকন একটা যন্ত্র নাম মনে হয় টিলিস ফোরসেপ।সেটা দিয়ে টান দিতেই বেরিয়ে আসে।ভাগ্যিস র*ক্তপাত হয় নি।ডাক্তার মটরশুঁটিটা হাতে নিয়ে দেখলো আস্ত মটরশুঁটি ঢুকায় নি।আধ ভাঙা মটরশুঁটি নাকে ঢুকিয়েছে যার জন্যই এতটা কষ্ট হয়েছে।তাহলে ভাব একবার ও কিরকম হয়রানি করতো?একদম শান্ত হয়ে থাকতো।কিন্তু ওই যে হুটহাট দুষ্টামি করতো না সেগুলোতেই আমাদেরকে নাকানিচুবানি খাওয়ানোর জন্য যথেষ্ট ছিল। দেখতে দেখতে ছেলেটাও বড় হয়ে গেল।এখন সে ছেলেই দুইদিনপর আবার বাবা হবে।”

রোদেলা তাহসিনের এই কাহিনি শুনে হাসবে না কাঁদবে বুঝে উঠতে পারলো না।এই লোকটা এমন ভয়ংকর কাহিনি ঘটাতো?গল্পে গল্পে সময়টা কেটে গেল।তাহসিন বাসায় ফিরলে সকলে একসাথে খাবার টেবিলে বসলো।রোদেলা খাবার খেতে খেতে মিটিমিটি হাসছে।যেটা তাহসিনের নজরে পড়লো।তাহসিন ভ্রু উঁচিয়ে বলল,

-“কি হয়েছে এভাবে হাসছো কেন?আমাকেও বলো।আমিও একটু হাসি।”

রোদেলা ফিক করে হেসে ফেলল।বলল,
-“আপনি ছোট বেলায় কি ভয়ংকর কান্ড ঘটাতেন। আপনাকে দেখে কেউ বুঝবেই না এমন ভয়ংকর কান্ড আপনার দ্বারা ঘটতো।”

-“মানে?আমি আবার কি করলাম?”

তাজউদ্দিন সাহেব হেসে বললেন,
-“আজ বউমাকে তোর ছোট বেলার প্রতিটি ঘটনা শুনিয়েছি।”

-“ও তাহলে এই কথা?আমাকে নিয়ে এখন হাসছো তো? ওয়েট আমিও শুধু তোমার ছোট বেলার কাহিনি জানি তারপর দেখো আমিও হাসবো।”

রোদেলা চুপসে গেল।কারণ সেও ছোট বেলায় যেসব কাহিনি ঘটিয়েছে।রোদেলার চুপসে যাওয়া মুখটা তাহসিন খেয়াল করে বলল,
-“কি এখন কেন মুখ এমন হয়ে গেল?”

রোদেলা বলল,
-“না।তবে আপনি চাইলে আমি নিজেই বলতে পারি।আমি কি আপনার মতো যে ছোট বেলায় করা দুষ্টামি গুলো লুকিয়ে যাবো?”

-“ও তাই নাকি বলো তো শুনি?”

রোদেলা নাজমা বেগমের দিকে তাকিয়ে বলল,
-“জানো তো মা একবার আমি মায়ের সাথে কি করেছি?”

-“কি করেছিস?”

-“তখন ক্লাস ওয়ানে পড়তাম বোধহয়।তো স্কুল থেকে ছুটি হলে আব্বু এগিয়ে দিতেন।তো প্রতিদিন কিছু না কিছু কিনেই দিতেন।মানে চিপস,চকলেট এসব।তো একদিন আমাকে দোকানে নিলে আমি বললাম চকলেট কিনে দিতে।আমি দেখিয়েও দিলাম।তখন এক রকমের ললিপট টাইপের লাল রঙা চকলেট ছিল।যেটা খেলে জিহ্বাসহ ঠোঁটও লাল হয়ে যেত।মনে হতো যেন পান খেয়েছি।তো আব্বুও বাসার একদম কাছ অব্দি এগিয়ে দিয়ে তিনি ফের নিজের কাজে যেতেন আর আমি বাসায় এসে পড়তাম। বাসায় আসার পর আমার ঠোঁট লাল দেখে মা জিজ্ঞেস করলেন ঠোঁট এভাবে লাল হয়েছে কেন?আমি তখন জিহ্বাও দেখিয়ে দিয়ে বললাম “পান খেয়েছি মা।” এই বয়সে পান খেয়েছি শুনে মা গেলেন চটে।জিজ্ঞেস করলো কে কিনে দিয়েছে?আমি বলছি যে,আব্বু কিনে দিয়েছে।মা তো সেই লেভেলের ক্ষে*পে গিয়েছেন।এই বয়সে পান খাওয়া মোটেও ঠিক না।আর মায়ের তো পান খাওয়া পছন্দই না।মা আমাকে মাইর দেওয়ার জন্য হাতে শলার ঝাড়ু নিলে আমি ভয় পেয়ে গিয়ে বললাম, “মা, মা বিশ্বাস করো এটা চকলেট।পান খাই নাই।আব্বু কিনে দিয়েছে।” মা বিশ্বাস করতেই চায় না।যা-ই বিশ্বাস করালাম।ও মা তখন দেখি মিথ্যা বলার জন্য মাইর দেওয়া ধরেছে।পরে কানে ধরেছি আর কখনো মিথ্যে বলবো না।”

তাহসিন হেসে বলল,
-“ঠিকই আছে।মিথ্যে বলার শাস্তি।ওয়ানে পড়ো।কতটুকুই না বয়স ছিল?এই বয়সেই এতটা বুদ্ধিখাটিয়ে মিথ্যে বলেছো হুহ?”

রোদেলা মিটিমিটি হাসলো।বলল,
-“আমি কি আপনার মতো শান্ত শিষ্ট লেজ বিশিষ্ট ছিলাম নাকি?”

-“এ্যাইই কি বললে তুমি?”

-“যা শুনেছেন তাই বলেছি।”

ওদের এই খুনশুটিময় ঝগড়া দেখে নাজমা বেগম আর তাজউদ্দিন সাহেব হাসলন।গল্পগুজব করতে করতেই খাওয়া-দাওয়া শেষ করলেন।আজ আর খাওয়া-দাওয়া শেষ করে আড্ডা দেওয়া হলো না।যেহেতু তাহসিন আগামীকাল ভোরেই রওনা হবে।

তখন রাত প্রায় বারোটা।রোদেলা একপাশ হয়ে তাহসিনের বুকে মাথা রেখে শুয়ে আছে।তাহসিন রোদেলার চুলে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।দুইজনেই কেমন চুপচাপ রয়েছে।প্রায় অনেকটা সময় পর তাহসিন রোদেলাকে বলল,

-“মায়মূন।”

-“হুহ।”

-“যেকোনো পরিস্থিতিতে নিজেকে শক্ত রাখবে।কখনো ভেঙে পড়বে না।জীবন একটা যুদ্ধক্ষেত্র সেটা মাথায় রাখবে।জীবনে বাঁচতে হলে সুখ,দুঃখকে সঙ্গী করেই বাঁচতে হয়।”

-“হঠাৎ এসব কেন বলছেন?”

-“এমনি।বলতে ইচ্ছে হলো তাই।জানো তো মায়মূন,কারো জন্য কারো জীবন থেমে থাকে না।আমার অনুপস্থিতিতে নিজেকে স্টং রাখবে।মনে রাখবে আমি সবসময় তোমার পাশে আছি।সেটা দৃশ্যমান কিংবা অদৃশ্যমান যেটাই হোক।”

রোদেলা উঠে বসলো।কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলল,
-“আপনি আজ হঠাৎ এসব কথা কেন বলছেন?আমি আপনাকে ছাড়া পুরোই নিঃসঙ্গ।সেটা মাথায় রাখবেন। আপনি পাশে থাকলে আমি কঠিন থেকে কঠিনতম পরিস্থিতিও সামাল দিতে পারবো।কিন্তু আপনাকে ছাড়া হালকা একটা ঝড়ও আমাকে নাড়িয়ে দিবে।এক মূহুর্তও আমি টিকে থাকতে পারবো না।”

-“ওই যে বললাম না মানুষের জীবন একটা যুদ্ধক্ষেত্র?এই জীবনের প্রতিটি ধাপে যুদ্ধ করেই বেঁচে থাকতে হয়।দুঃখকে বরণ করেই এগিয়ে যেতে হয়।আর তুমি একজন মেজরের ওয়াইফ।তোমার তো নিজেকে সবসময় স্টং রাখতে হবে। তোমার মনে রাখতে হবে যেকোনো সময় অনাকাঙ্ক্ষিত খবর তোমার দোরঘরে এসে পৌঁছাবে।আর সেটাকে বরণ করে তোমাকে সামনে এগিয়ে যেতে হবে।”

তাহসিনের কথার ভাবধারা বুঝতে পেরে রোদেলা উঠে বসে অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে নিল।তার চোখের কোণ বেয়ে অশ্রু পড়ছে।সে তাহসিনের ব্যাপারে এসব মানতে নারাজ।কেন এসব বলছে?তাহসিন কি জানে না তাহসিনকে ছাড়া সে একজন অন্ধমানুষের মতোই?তাহসিন কি বুঝতে পারছে না এসব শুনলে রোদেলার দমবন্ধকর কষ্ট হয়?এসব শুনলে বুকের বা পাশটা চিনচিন করে ব্যাথা করে উঠে?তাও কেন এসব বলে?

তাহসিন উঠে বসলো।রোদেলাকে নিজের দিকে ঘুরালো। রোদেলার চোখে অশ্রু চিকচিক করছে।তাহসিন তা মুছে দিয়ে বলল,
-“কেন এমনটা করছো?বাস্তবতা কেন মানতে চাও না?”

রোদেলা ডুকরে কেঁদে উঠে বলল,
-“আপনি কেন এসব কথা বলেন?আপনি জানেন না আপনাকে ছাড়া আমি অচল?শুধুই কি আমি?মা,বাবা, আমরা সবাই।কি করে আমরা আপনি বিহীন বেঁচে থাকার কথা ভাববো?”

-“কান্না করো না প্লিজ।আমি জাস্ট বুঝেয়েছি আমি যদি নাও থাকি তোমরা যেন সকল পরিস্থিতির সাথে নিজেদের মানিয়ে নাও।”

-“আমি তো সেটাই বলছি।কেন আপনি এসব বলবেন? আপনি থাকবেন না মানে কি?আপনাকে থাকতে হবে।বেঁচে থাকতে হবে।আমাদের জন্য থাকতে হবে।আপনি আমাকে কথা দিয়েছেন সবসময় আমার সাথে থাকবেন।আপনি কথা খেলাপ করতে পারেন না মাহমুদ সাহেব।”

কান্না করতে করতে রোদেলা হেচকি উঠিয়ে ফেলেছে। তাহসিন রোদেলাকে শান্ত করতে বলল,
-“এই যে আছি তো আমি।প্লিজ কান্না অফ করো।”

-“আপনি কেন এসব বললেন?বলুন না কেন এমনটা বলেছেন?আমার সাথে কি শেয়ার করা যাবে না?”

তাহসিন কিছুক্ষণ চুপ থাকলো।অতঃপর বলল,
-“আমার সেনা জীবনে এই প্রথম কোনো মিশনে যাওয়ার আগে আমার কিছুটা ভয় হচ্ছে।বারবার মনে হচ্ছে এই বুঝি আমি তোমাদের থেকে অনেক দূরে চলে যাবো।এই মিশনের প্ল্যান সাজাতে যেয়েও কত কিছুর সম্মুখীন হতে হলো।কত বার যে নতুন প্ল্যান সাজাতে হলো।সব মিলিয়ে কেমন যেন ভয় হচ্ছে এই মিশনে জয়ী হয়ে ফিরতে পারবো তো?”

রোদেলা চুপ করে তাহসিনের বুকে মাথা দিয়ে রাখলো। আস্তে করে বলল,
-“আপনি ফিরবেন।জয়ী হয়ে ফিরবেন।”

-“তা-ই যেন হয়।”

রোদেলা মাথা তুলে তাহসিনের দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলল,
-“কথা দিন আমাকে, আপনি আমার কাছে ফিরে আসবেন।”

-“এসব কি বাচ্চামো করছো?এসব ব্যাপারে কথা দেওয়া যায়?আমি কি ভবিষ্যতবানী জানি?”

-“আমি কিচ্ছু জানি না।আপনি আমাকে কথা দেবেন ব্যাস। কথা দিন।প্লিজ কথা দিন আপনি ফিরে আসবেন।”

তাহসিন ফোস করে শ্বাস ছাড়লো।রোদেলার বাড়িয়ে দেওয়া হাতের তালুর উপর নিজের হাতখানা রেখে বলল,
-“কথা দিলাম মায়মূন।আমি ফিরবো।তোমার কাছেই ফিরবো।আর তোমার পাশে সবসময় থাকবো।ইনশা আল্লাহ।”

সারাটি রাত রোদেলা তাহসিনের বুকের মাঝে পড়ে রইল। না তার চোখে ঘুম ধরা দিয়েছে আর না তাহসিনের।দুইজন সারাটিরাত নির্ঘুমা কাটিয়ে দিল।ফজরের আজান দিতেই দুইজন বিছানা ছেড়ে উঠলো।ওযু করে দুইজন নামাজ পড়ে নিল।এরপর তাহসিন রেডি হতে লাগলো।রেডি হয়ে বের হওয়ার সময় রোদেলাকে জড়িয়ে ধরে বলল,

-“ফিরতে দুইদিন লেইট হবে।সাবধানে থাকবে।আর এক্সাম ভালো করে দিবে।”

রোদেলা কান্না করে দিল।তাহসিন বলল,
-“বের হওয়ার সময় কান্না করো না প্লিজ।”

রোদেলা কান্নাভেজা গলায় বলল,
-“আপনি কিন্তু কথা দিয়েছেন আপনি ফিরে আসবেন।আমি কিন্তু আপনার অপেক্ষায় থাকবো।”

তাহসিন বুঝার ভঙ্গিতে মাথা নাড়লো।রোদেলাকে ছেড়ে কপালে সশব্দে চুমু খেল।বলল,
-“বড্ড ভালোবাসি মায়মূন।সাবধানে থেকো কলিজা।”

-“আপনিও সাবধানে থাকবেন এবং সাবধানে ফিরবেন।”

-“আচ্ছা।”

তাহসিন রোদেলাকে ছেড়ে রুম থেকে বের হতে যাবে রোদেলা পিছু থেকে বলে উঠল,
-“আপনার মায়মূন আপনাকে নিজের জীবনের চেয়েও বেশি ভালোবাসে মাহমুদ সাহেব।তার জন্য হলেও আপনি তার কাছে ফিরে আসবেন।”

তাহসিন পিছু ফিরে মলিন হাসলো।বলল,
-“হুম।এগিয়ে দিতে আসবে না?এসো।”

রোদেলা রুম ছেড়ে বেরিয়ে এলো।তাহসিন তার বাবা-মাকে সালাম করে বলল,
-“দোয়া করো।”

নাজমা বেগম ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল,
-“ফি আমানিল্লাহ।”

তাজউদ্দিন সাহেব বললেন,
-“জয়ী হয়ে ফিরো।”

তাহসিন বলল,
-“ইনশা আল্লাহ।মা,বাবা তোমরা নিজেদের খেয়াল রেখো। আর মায়মূনকেও একটু দেখে রেখো।”

তাজউদ্দিন সাহেব বললেন,
-“চিন্তা করো না আমরা আছি তো।”

নাজমা বেগম বললেন,
-“তুইও সাবধানে থাকিস বাবা।”

সবার থেকে বলে তাহসিন বেরিয়ে গেল।আর রোদেলা দরজা ধরে অসহায় চোখে তাকিয়ে রইল।তাহসিন কিছুটা সামনে এগিয়ে পিছনে ফিরলে দেখতে পেল রোদেলা কেমন করে তার যাওয়ার পানে তাকিয়ে আছে।চোখ পানিতে টলমল করছে।তাহসিন মলিন হেসে চলে গেল।তার চোখের কোন ঘেঁষেও এক ফোটা পানি গড়িয়ে পড়লো।তাহসিন শার্টে চোখ মুছলো।সে তো কাজের তাগিদেই যাচ্ছে।নইলে রোদেলার এই অবস্থায় সে রোদেলার থেকে দূরে যায় নাকি?রোদেলার সময় প্রায় ঘনিয়ে এসেছে।তাহসিন পারলে রোদেলাকে এক মুহূর্তও কাছ ছাড়া করতো না।কিন্তু নিজের প্রিয় মানুষ,পরিবার থেকেও আগে তার দেশ।দেশের কাছে সবই ফিকে।তার প্রধান দায়িত্ব দেশকে রক্ষা করা।আর সে দায়িত্ব পালনেই আজ তার নিজের জীবন বাজি রেখেও ছুটতে হচ্ছে।পরিবার,প্রিয় মানুষ সবকিছুর মায়া ত্যাগ করেই তার এগিয়ে যেতে হচ্ছে।এক বুক সাহস নিয়েই মৃ*ত্যুর মুখোমুখি দাঁড়াতে হচ্ছে।যদি ভাগ্য থাকে তবে জয়ী হয়ে ফিরে আসবে নয়তো মৃ*ত্যুকে বরণ করে নিতে হবে। এটাই তো সেনাজীবন।যারা কিনা নিজেদের জীবন বাজি রেখে দেশের জন্য,দেশের মানুষের জন্য শ্রম দিয়ে যাচ্ছে। এমন বীরদের আত্মত্যাগের জন্যই তো দেশের মানুষ নিশ্চিন্তমনে বাঁচতে পারছে।

#চলবে

#নীল_বসন্ত
#লেখনীতে_মিথিলা_মিতু
#পর্বসংখ্যা_৩০
ভোর পাঁচটা বেজে দশ মিনিট।চট্রগ্রাম সেনানিবাস তখন ঘুম ভাঙা শহরের মতো নিস্তব্ধ।হেড লাইটের আলোয় দুটো সেনা কনভয় ট্রাক দাঁড়িয়ে,ইঞ্জিন চালু।পাহাড়ি অভিযানে বের হওয়ার প্রস্তুতি তখন চূড়ান্ত।সেনা সদস্যদের চোখে স্পষ্ট একরাশ টেনশন আর দায়িত্ববোধের রেখা।তাহসিন একবার রুট ম্যাপ দেখে নিল।পাশে দাঁড়িয়ে থাকা লেফটেন্যান্ট কবিরকে জিজ্ঞেস করলো,

-“মেজর রাশেদ আসতে এত লেইট কেন করছে?এখন রওনা না হলে লেইট হয়ে যাবে।”

তখনই কবির বলে উঠে,
-“স্যার ওই তো রাশেদ স্যার আসছেন।”

তাহসিন সামনে তাকালে দেখতে পেল মেজর রাশেদ এসেছেন।মেজর রাশেদ এসেই তাড়া দেন,
-“সবাই রেডি তো?”

মেজর রাশেদ তাহসিনের থেকে বয়সে বড়।তাহসিন তাই উনাকে “স্যার” বলেই সম্বোধন করে।তাহসিন বলল,
-“ইয়েস স্যার।”

-“তাহলে রওনা হওয়া যাক।”

তাহসিন মাথা নাড়লো।এক গাড়িতে মোট ছয়জন উঠলো। তাহসিনের সাথে কবিরসহ আরও চারজন উঠলো।আর অপর গাড়িতে মেজর রাশেদের সাথে পাঁচজন উঠলো। ওদের মোট বারো জনের টিম নিয়ে রওনা হলো বাঘাইছড়ির উদ্দেশ্যে।গাড়ি স্টার্ট নিল।ইঞ্জিনের গর্জনে ভেসে গেলে ক্যান্টনমেন্টের নিস্তব্ধতা।

পাহাড়ি রুট।আঁকাবাঁকা সড়ক।ঝাপসা কুয়াশা গায়ে মেখে একটার পর একটা বাঁক পেরিয়ে ছুটে চলেছে সেনাবাহিনীর দুইটি কনভয় ট্রাক।পাথুরে রাস্তা আর গভীর জঙ্গলের মাঝে কেবল গর্জন তুলে কনভয় ট্রাক দুটি এগিয়ে চলেছে।প্রায় দশ ঘন্টার দীর্ঘ যাত্রা শেষে গাড়ি দুটি পৌঁছায় বাঘাইছড়িতে।তখন দুপুর তিনটার মতো বাজছে।তাহসিন এবং তার টিম বাঘাইছড়ির সীমান্ত ঘেঁষা এক গোপন সামরিক ক্যাম্পে আশ্র‍য় নেয়।এখানেই তাদের অভিযান পূর্ব রাত্রি কাটবে।এখান থেকেই আগামীকাল ভোরে চূড়ান্ত অভিযানে নামবে।রিপোর্ট অনুযায়ী, আগামীকাল ভোরে অ*স্ত্র পাচারকারী গ্যাংটি মিয়ানমার সীমান্ত ব্যবহার করে অবৈধ অ*স্ত্র দেশে ঢুকাবে।গভীর রাতে,সেই গ্যাংয়ের অবস্থান নিশ্চিত করে তাহসিন এবং তার টিম ঘেরাও করবে পুরো এলাকা।এটাই তাদের পরিকল্পনা।এবার শুধু পরিকল্পনা সফল হওয়ারই পালা।


রাত তখন বারোটা বেজে ছয় মিনিট।নিহা পড়া শেষ করে সবেই টেবিল ছেড়ে উঠেছে।আগামীকাল লাস্ট এক্সাম।সে তো খুব খুশি।পড়া শেষ করে খাওয়া-দাওয়া করে ভাবলো শান্তকে একটুখানি ডিস্টার্ব করা যাক।পরীক্ষার উছিলায় অনেকদিন হয়েছে রাত-বিরেতে শান্তকে ফোন দিয়ে জ্বালায় নি।আগামীকাল যেহেতু এক্সাম আছে তাই বেশিক্ষণ আর কথা বলবে না।পাঁচ মিনিটের মতো বলেই ফোন রেখে দিবে। নিহার নতুন একটা সিম আছে।যেটা এখনো ইউজ করা হয় নি।তাই শান্ত এই ফোন নম্বর জানেও না।নিহা সেই নতুন সিম ফোনে কানেক্ট করে শান্তকে ফোন দিল।শান্ত ফোন ধরতেই কন্ঠ একটুখানি চেঞ্জ করে বলল,
-“হ্যালো সুইটহার্ট।কেমন আছো?”
শান্ত কিছুটা ভড়কে গেল।একেতে তো মেয়ে কন্ঠ এর উপর কিসব নামে সম্বোধন করছে।শান্ত বলল,
-“সরি।মেইবি রং নাম্বারে ফোন করেছেন।”
-“নো বেইবি।আমি তোমাকেই ফোন করেছি।আমাকে চিনতে পারছো না তুমি?”
শান্ত বিরবিরিয়ে বলল,
-“এটা আবার কোন ক্ষেতের মূলা?”
ওপাশ থেকে নিহা ঠোঁট চেপে হাসলো।বলল,
-“ছিহ বেইবি, আমি মূলা হতে যাবো কেন?আমি তো তোমার জান পাখি।”
শান্ত এবার বুঝে ফেলল এটা যে নিহা।তাই শান্তও মজা লুটতে থাকলো।নিহাকে বুঝতেও দিল না সে যে নিহার কারসাজি ধরে ফেলেছে।শান্ত ভুলে যাওয়ার ভান করে বলল,
-“ও হ্যাঁ তাই তো।সরি বেইব।ভুলে গিয়েছিলাম।”
নিহার ভ্রু কুচকে এলো।ওপাশ থেকে শান্তর কন্ঠ শুনা গেল। শান্ত বলছে,
-“এতো দেরি করে ফোন দিলে কেন জান্স?জানো আমি তোমার জন্য কতটা অপেক্ষা করেছি?”
নিহা থতমত খেয়ে বলল,
-“মানে?”
-“মানে আবার কি?তুমি না বললে তুমি আমার জান?তো জানের জন্য অপেক্ষা করবো না তো কার জন্য অপেক্ষা করবো বলো?”
নিহা এবার ক্ষে*পে গেল।বলল,
-“এ্যাই অশান্তর বাচ্চা শান্ত।কি বললেন আপনি?আমি নিহা?ছিহ ছিহ আপনার ক্যারেক্টর এত খারাপ হয়ে গিয়েছে?শেষে কিনা চেনা নেই জানা নেই অজানা একটা মেয়েকে জান,বেইব ইত্যাদি বলা শুরু করে দিয়েছেন?”
শান্ত ক্রুর হাসলো।বলল,
-“কি ভেবেছো তুমি একাই চালাক?আমাকে বোকা বানাতে এসে নিজেই বোকাবনে গেলে।”
থেমে,
-“ফোন নম্বর এটা কার?”
নিহা চুপসানো মুখ নিয়ে বলল,
-“আমার।”
-“ও।তোমার না আগামীকাল এক্সাম আছে?তাহলে কোন আক্কেলে এত রাতে ফোন করে ফাজলামো করতে এসেছো নিহা?”
-“পাঁচ মিনিটের জন্যই ফোন দিয়েছিলাম।ভেবেছি পাঁচ মিনিট কথা বলে ঘুমিয়ে যাবো।”
শান্ত ফোনের সময় দেখে নিয়ে বলল,
-“পাঁচ মিনিট ওভার।এবার ফোন রেখে ঘুমাও।”
-“কিন্তু।”
-“কোনো কিন্তু নয়।যদি এখন ফোন না রাখো তবে আমি রাখবো আর তোমাকে সব জায়গা থেকে ব্লক মারবো।শুধু তাই নয়।দেখা হলে কথাও বলবো না।”
-“আরে আরে।আজব।খালি ব্ল্যাকমেইল করবে।রাখছি তো। বায়।”
-“গুড গার্ল।”
নিহা ফোন রেখে দিল।ওপাশ থেকে শান্ত বিরবির করে বলল,
-“পাজি একটা।শিরায় শিরায় শুধু দুষ্টুমি বুদ্ধি হাহ।”

এক্সাম শেষ হওয়ার ঠিক পাঁচ মিনিট পূর্বে রোদেলার কেমন যেন অস্বস্থি লাগছিল বিধায় খাতা জমা দিয়ে বেরিয়ে আসে।বাইরে আসতেই যেন আরও খারাপ লাগা শুরু হয়। তার পেট কেমন যেন চিনচিন করে ব্যাথা করে উঠে।এই ব্যাথা ক্রমশ যেন বেড়ে যায়।সামনে আগানোর মতো এক ফোটা শক্তিও যেন পায় না।সে পেটে হাত দিয়ে ভবনের ফ্লোরেই বসে পড়ে।হলের বয়ঃজ্যোষ্ঠ শিক্ষিকা সকলের খাতা জমা নিয়ে বেরিয়ে আসতেই ওর এই অবস্থা দেখে দ্রুত এগিয়ে আসেন।রোদেলার এই অবস্থা দেখে তিনি বুঝতে পারেন রোদেলার লেবার পেইন উঠেছে।ভাগ্য ভালো নিহাও এক্সাম শেষে বের হতেই রোদেলাকে এমন অবস্থায় দেখে দৌড়ে আসে।ম্যাম নিহাকে বলে, তাড়াতাড়ি যেন ওর বাসার লোককে খবর দেয়।এখনই হসপিটালে নিতে হবে। নিহা দৌড়ে বাহিরে আসে।জানে বাহিরে রোদেলার শ্বশুড়কে পাবে।এইদিকে রোদেলা পেটে হাত দিয়ে আর না পেরে চিৎকার দিয়ে উঠেছে।ম্যাম রোদেলার মাথা কোলে রেখে রোদেলার হাত-পা ঘষে দিচ্ছেন যাতে রোদেলা একটুখানি বেটার ফিল করে।নিহা বাহিরে আসতেই দেখলো রোদেলার শ্বশুড়-শাশুড়ি দুইজনেই বাহিরে অপেক্ষা করছেন।নিহা দ্রুত যেয়ে উনাদেরকে জানালে উনারা ভেতরে ঢুকে আসেন। যেহেতু পরীক্ষার টাইম শেষ তাই ভেতরে আসতে কোনো সমস্যা হয় নি।অন্যদিকে আজকে নিহার লাস্ট এক্সাম ছিল বিধায় শান্তও এসেছিল।নিহা শান্তকেও নিয়ে আসে।কারণ রোদেলাকে ধরে আগে গাড়িতে উঠাতে হবে।শান্ত কলেজে ঢুকতে ঢুকতে গাড়ি খবর দিল আগে।গাড়ি কিছুক্ষণের মধ্যেই এসে পড়ে।এইদিকে ধরাধরি করে রোদেলাকে গাড়িতে উঠানো হয়। রোদেলার পাশে বসে নাজমা বেগম সমানে দোয়া পড়ে যাচ্ছেন।রোদেলাকে সাহস দিয়ে যাচ্ছেন।রোদেলার এমন করুণ অবস্থা দেখে নিহার কান্না এসে পড়লো।মা হওয়া আসলেই বড় কঠিন।প্রসব যন্ত্রণা যে কতটা ভয়ানক সেটা একমাত্র একজন মা-ই উপলব্ধি করতে পারবেন।

সকলে মিলে রোদেলাকে হসপিটালে নিয়ে এসেছেন। অন্যদিকে তাহসিনও মিশনে আছে যার দরূণ তাহসিনকে এই খবর জানাতে পারছে না।তবে এই সময়ে একটা মেয়ের তার স্বামীকে খুবই প্রয়োজন।স্বামীর দেওয়া একটুখানি সাহস,একটুখানি ভরসাও কতটা সাহস যোগায় সেটা তো একজন গর্ভবতী মা-ই ভালো বলতে পারবেন।

প্রায় কয়েক ঘন্টা পর OT থেকে ডক্টর বেরিয়ে আসেন। ডক্টরের হাতে সাদা তোয়ালে মোড়ানো একটি জীবন্ত প্রাণ। ডক্টরকে দেখে তাজউদ্দিন মাহমুদ,নাজমা বেগম,শান্ত,নিহা সকলেই এগিয়ে যায়।তাহসিনের সন্তানকে প্রথমে তাজউদ্দিন মাহমুদ কোলে নেন।কোলে নিয়ে তিনি অপলক তাকিয়ে থাকেন।তার সেই পুরোনো দিনের কথা মনে পড়ে যায়।যেদিন কিনা এই ফুটফুটে শিশুটার বাবার আগমন ঘটেছিল।এভাবেই ডাক্তার এসে উনার কোলে দিয়ে বলেছিলেন, “আপনার ছেলে সন্তান হয়েছে।” এই যে আজও যেমন বললেন,
-“অভিনন্দন।আপনাদের নাতি হয়েছে।”
তাজউদ্দিন মাহমুদ তাহসিনের পুত্রকে কোলে নিয়ে আজান দিলেন।অতঃপর তাজউদ্দিন মাহমুদের কোল থেকে নাজমা বেগম নিলেন।এরপর একে একে শান্ত,নিহা দুইজনেই তাহসিনের ছেলেকে কোলে নিল।নাজমা বেগম ডাক্তারকে রোদেলার কথা জিজ্ঞেস করলে ডাক্তার জানায় রোদেলা সুস্থ আছে।তবে অচেতন হয়ে আছে।কিছুক্ষণের মাঝেই জ্ঞান ফিরে আসবে।আর তখন কেবিনেও শিফট করা হবে। রোদেলা সুস্থ আছে শুনে উনি চিন্তামুক্ত হলেন।

তাহসিন ভোর থেকেই তার মিশন শুরু করে।গভীর রাতেই এলাকা পুরোটা ঘেরাও করে ফেলে।গু*লি ছোড়াছুড়ির এক পর্যায়ে তাহসিন এবং তার পুরো টিম গ্যাংটাকে আটক করতে সফল হয়।ওদের টিমের সকলের মুখে জয়ের হাসি দেখা যায়।অতঃপর দুপুর তিনটায় ওদের নিয়ে রওনা হয় ক্যান্টনমেন্টের উদ্দেশ্যে।গ্যাংটার সদস্য হচ্ছে ছয় জন।এই ছয়জনকে আটক করে কনভয় ট্রাকে তোলা হয়।তাদের সাথে মেজর রাশেদসহ আরও চার সেনা সদস্য একই কনভয়ে উঠে।আর অন্য কনভয়ে উঠে তাহসিনসহ বাকি ছয় সেনা সদস্য। প্রথমে মেজর রাশেদের গাড়িটি স্টার্ট দেওয়া হয়।আর সে গাড়ির পিছনেই তাহসিনদের গাড়ি চলতে থাকে।

সবাই যখন নতুন সদস্যকে নিয়ে ব্যস্ত তখন নাজমা বেগম তাহসিনকে ফোন দিতে ব্যস্ত।কারণ এই খুশির খবরটা তো ছেলেকে জানাতে হবে তাই না?বার দুয়েক ফোন দেওয়ার পর তাহসিন ফোন রিসিভ করলো।ফোন রিসিভ করলেও নেটওয়ার্ক জনিত সমস্যা থাকায় কথা বুঝা গেল না।নাজমা বেগম ফের ফোন দিল।এবার কথা কিছুটা বুঝা যাচ্ছে। ওপাশ থেকে তাহসিন শুধালো,
-“হ্যাঁ মা বলো।এখানে নেটওয়ার্কে অনেক সমস্যা।”
-“বাবা শুনতে পারছিস আমার কথা?”
-“হ্যাঁ এখন শুনতে পারছি।বলো তুমি।”
নাজমা বেগম খুশির ঝংকার তুলে বললেন,
-“তোর ছেলে হয়েছে।আমরা হাসপাতালে আছি।তোর সন্তান আর বউমা দুইজনে সুস্থ আছে।”
-“আলহামদুলিল্লাহ।মা আমি পথে আছি।ফিরছি আমি।”
-“সাবধানে আয় বাবা।তোর ছেলে তোর অপেক্ষায় আছে।”
ওপাশ থেকে তাহসিন কি বলল তা আর শুনা গেল না।তবে বিকট একটা আওয়াজ শুনা গেল।কিন্তু কিসের সেটা বুঝা গেল না।বিকট আওয়াজের চোটে নাজমা বেগম ফোনের এপাশ থেকেই কেঁপে উঠলেন।তিনি বললেন,
-“কি হয়েছে বাবা?”
কল কাটার আওয়াজ শুনা গেল।তিনি ফের কল দিলেন কিন্তু এবার আর ফোন যাচ্ছে না।ওপাশ থেকে পরিচিত মহিলা কন্ঠ ভেসে উঠছে,
-“এই মূহুর্তে আপনার কাঙ্খিত নম্বরে সংযোগ প্রদান করা সম্ভব হচ্ছে না।দয়া করে আবার চেষ্টা করুন।”
নাজমা বেগম আরও দুইবার চেষ্টা করলেন কিন্তু একই কথা ভেসে উঠলো।নাজমা বেগমের চিন্তিত আনন তাজউদ্দিন সাহেব লক্ষ করে এগিয়ে এলেন।শুধালেন,
-“কি হয়েছে?”
-“তাহসিনের সাথে কথা বলছিলাম।হঠাৎ কিসের যেন আওয়াজ হলো।এরপর ওর ফোন বন্ধ।”
-“হয়তো নেটওয়ার্কে সমস্যা।চিন্তা করো না।”
-“তবুও মনটা কেমন খচখচ করছে।”
-“তুমি শুধু শুধুই টেনশন করছো নাজমা।আল্লাহ ভরসা।”
-“আল্লাহ আমার ছেলেটাকে সহি সালামতে ঘরে ফিরাক।”
নাজমা বেগম মনে মনে ছেলের জন্য দোয়া করতে থাকলেন।যতই হোক মায়ের মন তো।ছেলের জন্য কারণে-অকারণে চিন্তা হবে এটাই স্বাভাবিক।

#চলবে