যদি ভালোবাসো সঞ্চারিনী পর্ব-০২

0
17

#যদি_ভালোবাসো_সঞ্চারিণী
#পর্ব২
#রাউফুন

ইসহাক যখন নিজের বাড়ি ফিরলো তখন ভোর চারটে। ঘরে গিয়ে দেখলো তার দাদি নামাজ পড়ছে। বৃদ্ধার নামাজ শেষ হওয়ার অপেক্ষা ইসহাক করলো না। ফ্রেশ হয়ে আবার ফিরে এলো। দেখলো টেবিলে খাবার বাড়ছেন বৃদ্ধা। ইসহাক গম্ভীরমুখে টেবিলে বসতে বসতে বললো,“আমি বলছিলাম জাগবা না। তাও জাইগা কি মজা পাও?”

বৃদ্ধা কাঁপা কাঁপা গলায় বললেন,“তুমিও জানো, তুমি বাড়ি বা আইলে আমার অশান্তি লাগে৷ তুমি যে ব্যবসা করো ঐডাই তোমার প্রাণের ঝুকি আছে। ব্যবসাডা ছাড়ন যাই না?”

“ছাইড়া দিসি৷ এহন শান্তি?”

৭০ বছর বয়সী বৃদ্ধার মুখ জ্বলজ্বল করে উঠলো। পুলকিত হয়ে বললেন,“সত্যি? এতোদিন কইলাম ছারলা না, হঠাৎই কি হইলো?”

“ইসহাক রহমান একবার যেইহানে থু থু ছিটায় ওইহানে আর পা মাড়াই না৷ বেইমানী ইসহাকের রক্তে নাই, তাই বেইমানদের জায়গাও তার জীবনে থাকবো না৷”

“এতোদিনে একটা ভালা কাম করছো। ওহন চেষ্টা করো ভালা কিছু করনের।”

“বুড়ি ওহন মাথা না খাইয়া ভাত খাও!”

শান্তি বেগম বসলেন। ভাত বেড়ে নিজের প্লেটে নিলেন। হাত কাঁপে তার। ইসহাক খেয়াল করলো। খিটমিট করে বললো,”শরীরে একরত্তি শক্তি নাই তাইলেও রাত জাগা লাগবো তোমার।”

“আমারে দেইখা তোমার মায়া হইলে ঘরে নতুন সদস্য আনতা। একা একা বেক কাম করি এই বয়সে আইসা। বিয়া কইরা বউ আনবা কবে? আমার শরীরডা এইবারে বিশ্রাম চাইতাছে।”

বিরক্ত হয় ইসহাক। কিন্তু পরক্ষণেই ওর চোখে নূরির চেহেরাটা ভেসে উঠলো। সে না খেয়ে উঠে রুমে এলো। শান্তি বেগম ডাকলেন ভাঙা ভাঙা গলায়।

“বিয়ের কথা কইলেই এমন করো ক্যা? আর কতকাল একলা থাকবা?”

ইসহাক বিয়ে করতে চাইনি আগে কারণ তার অবৈধ ব্যবসা ছিলো। কিন্তু গতকাল রাতে সামান্য কথা কাটাকাটি হওয়ায় সে ঐ ব্যবসা থেকে বের হয়ে এসেছে। কথা কাটাকাটি আগেও হয়েছে বসের সঙ্গে কিন্তু কাল কি হলো যে ব্যবসা থেকে একেবারে বের হয়ে এলো সে? বার বার নূরির কথা মনে হচ্ছিলো। যখন একবার বিয়েটা হয়েই গেছে তখন তা থেকে বের হতে চায় না সে। কিন্তু এত বছর যা হয়নি সেটা কালই কেন হলো? মেয়েটা কি তার জীবনে লাকি চার্ম হয়ে এলো? বয়সের তফাৎ অনেক নূরির সঙ্গে তার। আঠারো উনিশ বছর বয়সী মেয়েটা, আর সে ছত্রিশ বছর বয়সী। অবশ্য তারা তিন বন্ধুই গো ধরে বিয়ে করে নি এতো বছর। তার আর তীর্থর তো গতি হলো এবারে হৃদিকের পালা। ইসহাক হৃদিককে ফোন দিলো। হৃদিক ফোন সময় নিয়ে তুলল। কন্ঠে ঘুম ঘুম ভাব।

“তুই এখনো ঘুমাচ্ছিস?”

“ব্রো, ইট’স ওনলি ফাইভ এ এম রাইট নাও।”

“ওয়্যাক আপ।”

“হোয়াট?”

“আই সেইড ওয়াক আপ, আর তোর হাতে মাত্র দশ মিনিট। এর মধ্যে এসে হাজিরা দিবি!”

“ভাই তুই সময় আমায় এমন প্যারা দিস ক্যান?”

“আমি দ্বিতীয় বার আর বলবো না!”

হৃদিক কাঁদো কাঁদো গলায় বললো,“অভিশাপ দিলাম, জীবনে বউ পাবি না তুই!”

“অভিশাপ টা আগে দিলে কাজে দিতো। এখন আর কাজ হবে না। বিকজ আই অলরেডি হ্যাভ অ্যা ওয়াইফ!”

“হোয়াট! কিভাবে?”

“আস্তে চিল্লাছিস কেন? জায়গা মতো কি কিছু কামড়ে দিয়েছে?”

হৃদিক ভ্যাবাচেকা খেয়ে ফোনের দিকে তাকিয়ে রইলো। ইসহাক ফোন কেটে দিয়ে নূরির আইডি খুঁজতে লাগলো। খোঁজাখুঁজি করে পেলোও।

ভোর বেলা আড়মোড়া ভেঙে বসলো ঝুমুর। তীর্থ পাশ ফিরে শুয়ে বড়সড়ো হা করে ঘুমাচ্ছে। ঝুমুরের মাথায় দুষ্টুমি চাপলো। সে শাড়ির আঁচল কুচি করে ধরে সাবধানে বিছানা থেকে নামলো। লোকটা তখনো মুখ হা করে ঘুমাচ্ছে। তার কাছে এখনো রাতের কিছু চিপস আর চকলেট রয়েছে৷ তীর্থ রুমে আসার আগে সে চিপস খেয়েছে। ক্ষিধে তার সহ্য হয় না। সে একটা চিপসের প্যাকেট খুলে চিপস নিয়ে তীর্থর হা হয়ে থাকা মুখে দিলো। চিপস মুখে যেতেই লোকটা খাওয়া শুরু করে দিলো! একেরপর এক চিপস মুখে দিচ্ছে আর সে সেগুলো খাচ্ছে। আবার ঘুমিয়ে যাচ্ছে। ঘুমিয়ে ঘুমিয়েও কেউ একটা পুরো চিপস সাবার করতে পারে? এটা ঝুমুরের কল্পনাতেও আসেনি। সে এবারে শাড়ী নিয়ে তীর্থর মুখে দিলো৷ ঝুমুরকে অবাক করে দিয়ে তীর্থ শাড়ী চিবাতে শুরু করলো। ঝুমুর শাড়ী টানতে লাগলো। তীর্থর ঘুম হালকা হলো। সে এখনো শাড়ী দাঁতে দিয়ে চেপে ধরে আছে। খিলখিল করে সহসায় ঘর কাঁপিয়ে হেসে উঠলো ঝুমুর ফ্লোরে বসে। তীর্থ ঘুম চোখে অবাক হয়ে যায় ঝুমুরের হাসি দেখে। মেয়েটাকে খুব সুন্দর লাগছিলো। একদম প্রাণবন্ত! মনে হচ্ছিলো শিশিরে ভেজা বকুল ফুল। পরক্ষণেই সে ঘোর থেকে বেরিয়ে আসে। তড়িঘড়ি করে উঠে বসে।

“এটা কি করছিলেন আপনি? আমার মুখে শাড়ি গুজে দিয়ে আমায় দম বন্ধ করে মা’র’তে চাইছিলেন?”

“আয় হায় কি কন এগ্লা? দশটা না পাঁচটা না একটা মাত্র সোয়ামি আমার। তারে নাকি মুখে শাড়ি গুজে দিয়ে মা’রবো? বলি আপনেরে মা’র’তে টা’র’তে হলে এভাবে কেন মা’র’বো? আপনেরে মা’র’লে এতো সুন্দর কালাচাঁদ জামাই কই পামু?”

“আমি চোখে কম দেখতে পারি কিন্তু গাধা না! আমি জানি এভাবেও মা’রা যায়।”

“আপনার তাই মনে হয় সোয়ামি? আমি আপনেরে মা’র’বো?”

“মারতেও পারেন, আপনি যা ডাকাতিনি, সন্দেহ নাই। বলুন আমার মুখে শাড়ি গুজে দিয়েছিলেন কেন?”

“আপনে আমার শাড়ি খাইতেছিলেন? সেইডাও বহুত মজা কইরা।”

“কিহ?”

“হো, হো হাসা কথা কইছি!”

“আজগুবি কথা!”

“এই দেখুন, একটা পুরো চিপসের প্যাকেট সাবার করেছেন ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে!”

“এই সুতাক্রিমি মিথ্যা কথা বইলেন না। মিথ্যা কথা বলা যে আপনার বাতিক তা কি আমি জানি না?”

”ইয়াক, সুতাক্রিমি? আমায় সুতাক্রিমি বললেন? আপনি যে কানা বাবা।”

“মানে?”

“মানে আপনি যে চশমা ছাড়া চোখে দেখেন না জানি না ভেবেছেন?”

“তুমি যে ধড়ফড়ানি জানো?”

“কি ফড়ানি?”

“কাল রাতে ঘড়ঘড় শব্দ করে ঘর কাঁপিয়েছো। সুতাক্রিমি কোথাকার।”

“শোনেন, সুতাক্রিমি বলবেন না, এটা শুনতে খারাপ লাগে। আমাকে সুক্রি বলবেন সংক্ষেপে। আপনি হুমায়ুন আহমেদ স্যারের বই বেশি পড়েন তাই না?”

“’তুমি কিভাবে বুঝলে? আই মীন আপনি বুঝলেন কিভাবে?”

“’হু সুতার সু, আর ক্রিমির ক্রি! সু’ক্রি, এটা হুমায়ুন আহমেদ স্যারের লেখা প্রজেক্ট দারুচিনি দ্বীপ গল্প থেকে নেওয়া। এই যেমন ধরেন, আপনাকে কানাবাবা নাম দিলাম, এটা কিন্তু আমি ওখান থেকেই দিয়েছি। তেমনি আপনিও আমাকে সুতাক্রিমি নামটা দিয়েছেন।”

“ইউ,ইউউউ আর জাষ্ট ইম্পসিবল! আমার সঙ্গে তর্কে আসবেন না একদম না!”

“হায়ে মেরা কানাবাবা জামাই!”

তীর্থ রেগেমেগে ওয়াশরুমে গেলো। ধপাশ করে দরজা লাগিয়ে দিলো সে। তম্বন্ধে তীর্থর ফোন বেজে উঠলো। ঝুমুর কোনো কিছু না ভেবেই কল রিসিভ করলো।

“কি রে কানা বাবা, বাসর রাতে কি কি করলি মাম্মা? বিয়ে থা করে তো সিঙ্গেল নাম ঘুঁচালি এবারে আমাদের জন্যি পাত্রী দেখ, তোর শালিকা টালিকা আছে নাকি? থাকলে আমাদের একটু সুযোগ সুবিধা হতো।”

“ওহে বৎসো, আমি কানি আম্মা বলছি। অপেক্ষা করো বৎসো, কানাবাবা বাথরুমে, এখন সে হা*গু দিতে বসেছে এবং একটু পর পর ফুস-ফুস আওয়াজ ছাড়ছে। আর দুঃখের সহিত জানানো যাচ্ছে যে কানা বাবার কোনো শালিকা নাই। তো আপনার জন্য বালতি বালতি সমবেদনা!”

“কানি আম্মা, ফুস ফুস আওয়াজ, কি সব বলছেন?”

“বৎসো, আমার বর যদি তোমার কানাবাবা হয়, আমি তো কানি আম্মাই হবো তাই না?”

“হ্যাঁ হ্যাঁ তাই তো!”

“আচ্ছা রাখি বৎসো?”

হতভম্ব হয়ে ওপর পাশের ব্যাক্তি ফোন রেখে দিলো।
পরক্ষণেই ব্যাপারটি বুঝতে পেরে সমস্বরে হেসে উঠলো হৃদিক। ইসহাক একটু পর পর তীক্ষ্ণ চোখে তাকাচ্ছে হৃদিকের দিকে। বরাবরই চুপচাপ থাকা ছেলে সে।

তীর্থ ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে দেখলো ঝুমুর পায়ের উপর তুলে পা দিয়ে গোল করে বসে আছে। যোগাসন করছে নাকি? কিন্তু জিহবা কেন বের করে আছে?
তীর্থ ঝুমুরের সামনে তুড়ি বাজিয়ে বললো,

“এই হ্যালো, আপনি এমন জিহবা বের করে আছেন কেন?”

”দেখছেন না, মশার উপদ্রব বেড়েছে, ঘরে টেকা যায় না। আমি ভাবলাম একটা কাজ করা যাক,সারা শরীর যখন খাচ্ছে জিহবাই খেলে কি হবে। জিহবায় খাক রক্ত। আসলে আমার একটা এক্সপেরিমেন্টও হবে।”

“কি রকম?”

“এই যে মশারা জিহবা থেকে র’ক্ত খাই কিনা! আপনি হুমায়ুন আহমেদ এর হিমু সমগ্র থেকে হলুদ হিমু কালো র‍্যাব পড়েছেন? ওখানে হিমু এরকম এক্সপেরিমেন্ট করে। তাই আমি একবার ট্রাই করে দেখলাম৷ এটা কিন্তু সত্যি মশারা জিহবায় কামড় দেই না!”

তীর্থ ভেবেছিলো হুমায়ুন আহমেদ এর ভক্ত সে একায় এতো, কিন্তু এই মেয়ে তো এমন ই ভক্ত, যে মহিলা হিমু চরিত্র হওয়ার চেষ্টা করছে! তীর্থ মাথা থেকে এসব ঝেড়ে ফেলে ধমকের স্বরে বললো,

“আপনি যে আস্তো একটা গর্ধ্বব তা আবারও প্রমাণ হলো। যান ফ্রেশ হয়ে নিচে নামুন। সবাই কি ভাববে? এতো বেলা হলো নতুন বউ এখনো ঘরে বসে আছে!”

ঝুমুর কিছু বললো না৷ সে মুখ গোমড়া করে ওয়াশরুমে গেলো। তীর্থ রুম থেকে প্রস্থান করলো। দাদির একটা কথা মনে পড়তেই যে ঘুরে এলো চট করে। চমকে উঠে তীর্থ। বুকে হাত দিয়ে দেখে বুক ধড়ফড় করছে। ঝুমুর মাথা চুলকে প্রশ্ন করলো,“বাত জ্বর নাকি আসে বিয়ের পরদিন, কই আমার তো জ্বর এলো না। দাদি বলেছে, জ্বর এলেই নাকি বুঝবে কিছু মিছু হইছে। আচ্ছা, বাত জ্বর কখন আসবে?”

ঝুমুরের কথায় তীর্থর মনে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিতে ঝুমুরকে। কিন্তু সে নিতান্তই ভদ্র ছেলে। তবুও দাঁত খিটমিট করে বললো,”বাত জ্বর আসার মতো আমাদের মধ্যে কিছুই হয়নি যে আপনার বাত জ্বর হবে। যান এখান থেকে। আউট!”
ঝুমুর সুরসুরিয়ে চলে গেলো বাথরুমের দিকে। আশ্চর্য, রেগে গেলো কেন?

#চলবে….

এটা কিন্তু চার পাঁচ পর্বের গল্প হবে। অনেক আগের লেখা পরে ছিলো ভাবলাম দিয়ে দিই।