#হামিংবার্ড
#পর্ব_২১
#তাসমিয়া_তাসনিন_প্রিয়া
ঝিরিঝিরি বৃষ্টি হচ্ছিল এতক্ষণ । সকালটা আজ শুরু হয়েছিল বৃষ্টি দিয়ে। রাস্তায় জমে থাকা জল, ফুটপাথ দিয়ে ছোট ছোট ছাপ রেখে চলে যাচ্ছিল। শহরের কোলাহল তখনও পুরোপুরি শুরু হয়নি, কিন্তু বাতাসে মিষ্টি আর্দ্রতা মেশানো ছিল। বৃষ্টির ছোট ফোঁটাগুলি শহরের রাস্তায় অদ্ভুত স্নিগ্ধতা তৈরি করেছিল । কিছুক্ষণের মধ্যেই সেই বৃষ্টি কমে গিয়ে রোদের দেখা মিলেছে। মিষ্টি রোদ ছুঁয়ে যাচ্ছে গোটা শহরটাকে।
ঘুমঘুম চোখে আশেপাশে তাকাচ্ছে অরা৷ কীসের আওয়াজে ঘুম ঘুমের বারোটা বেজে গেলো সেটাই বুঝতে চেষ্টা করছে সে। আরিশ এখনো জানালার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। কপালে কুঁচকে তাকিয়ে আছে জানালার পর্দার দিকে। অরা ধীরে ধীরে শোয়া থেকে উঠে বসল। আরিশ এখনও খেয়াল করেনি অরাকে, তবে অরা আরিশের মনোভাব বোঝার চেষ্টায় আছে। লোকটা সকাল সকাল ওখানে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে কেন? তারমধ্য ঘরটাও কেমন অন্ধকার লাগছে! জানালাগুলো বন্ধ কেন ভাবতে ভাবতে বিছানা ছাড়ল অরা।
” গুড মর্নিং, হামিংবার্ড। ”
মুচকি হেসে বলল আরিশ। অরা খোলা চুলগুলো হাতের সাহায্যে খোঁপা করতে করতে সামনে এগোচ্ছে। পরনে তার সাদা রঙের কামিজ, সাথে মাল্টিকালারের প্লাজু।
” গুড মর্নিং। এখানে এভাবে দাঁড়িয়ে আছেন কেনো? আর জানালাগুলোই বা বন্ধ কেনো? ”
আরিশ অরার দিকে তাকিয়ে রইলো কয়েক সেকেন্ড। অরার কথা বলা, চুল খোঁপা করার মুহুর্ত সবকিছু কেমন স্লো মোশনে দেখছে সে৷ মনে হচ্ছে অরা অনন্তকাল ধরে কথা বলতে থাকুক, আর আরিশ ভালো শ্রোতার মতো সবকিছু মনোযোগ দিয়ে শুনুক শুধু। আরিশের নজর গেলো এবার অরার, কপালে লেপ্টে থাকা চুলগুলোর দিকে। ছোটো ছোটো চুলগুলো কত সুন্দর লাগছে! অরার ঠোঁটের ওপরে যে একটা তিলও আছে সেটা তো আরিশ খেয়ালই করেনি এতদিন। আজ সবকিছু এতো গভীর মনোযোগ দিয়ে কেনো দেখছে সে? আরিশের গলা শুকিয়ে আসছে। মনে হচ্ছে অরাকে আজই প্রথম দেখছে সে।
” আরিশ? শুনছেন? ”
” ইয়েস, লিটল বার্ড। অবশ্যই শুনছি৷ কেনো শুনবো না বলো? তোমার হাসবেন্ড তো কানে কম শোনে না। ”
কিছুটা এলোমেলোভাবে কথা বলছে আরিশ। অরা তাতেই বেশ অবাক হচ্ছে। ভদ্রলোকের সাথে দেখা হওয়ার পর থেকে কখনো এমন হাবভাব করতে দেখেনি সে।
” তাহলে উত্তর দিন। ”
আরিশ অরাকে চমকানোর সুযোগটুকু না দিয়ে বুকে জড়িয়ে নিলো। অরা কিছু বলতে পারল না। আরিশের হৃৎস্পন্দন শুনছে সে। ঢিপঢিপ! ঢিপঢিপ!
” আমি জানালা বন্ধ করেছি। আজকে থেকে প্রতিদিন সকালে আমিই তোমাকে প্রথম স্পর্শ করবো, রোদ মামা না। ”
অরা যে কী বলবে সেটাই খুঁজে পাচ্ছে না। একটা মানুষ এতটা হিংসুটে হয় কীভাবে! ভদ্রলোক নিশ্চিত, বেস্ট হিংসুটে এওয়ার্ড পাওয়ার যোগ্য পাত্র।
” কী হলো? চুপ করে আছ কেন?”
আরিশের প্রশ্নে হকচকিয়ে গেল অরা। কে জানে চুপ করে থাকার জন্য, না আবার রেগে যায় আরিশ!
” এমনি, এমনি চুপ করে আছি। ফ্রেশ হয়ে আসি? ”
” ওকে। বাট…..”
” কী?”
অরা কাঁপা কাঁপা গলায় শুধালো। আরিশের ঠোঁটের কোণে হাসির রেখা আরেকটু প্রসস্থ হলো। অরার কোমল শরীরটা আরিশের বলিষ্ঠ দেহের মাঝখানে একরত্তি মনে হচ্ছে ওর। সেই শরীরটা কেমন কাঁপছে, অস্থিরতায় ছটফটিয়ে যাচ্ছে প্রতি সেকেন্ড। আরিশ অরার থুতনিতে হাত রেখে তার মুখটা উপরে তুলে বলল,
” গিভ মি আ কিস, হামিংবার্ড। ”
অরা কী বলবে বুঝতে পারছে না। এখনও পর্যন্ত আরিশের প্রতি তার তেমন কোনো অনুভূতি সৃষ্টি হয়নি যাতে নিজের ইচ্ছেতে এমন আবদার পূরণ করতে পারে। কিন্তু আরিশ যদি রেগে যায়? অরা ঘনঘন পলক ফেলে থেমে থেমে বলে,
” আই… নীড টাইম। ”
” কতদিন? ”
” জানি না। ”
” আমার ধৈর্য কম, পাখি। ”
” তাহলে…..”
আরিশ মুচকি হাসল। অরার কথা শেষ হওয়ার আগেই ঠোঁটে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিলো। মৃদু কাঁপল অরার শরীর। তারপর ছেড়ে দিলো তাকে। তবে আরিশ অরাকে ছাড়ার আগে কপালে আরো একবার চুম্বন এঁকে দিতে ভুলল না। অরা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে, ওয়াশরুমের দিকে অগ্রসর হলো। বিয়ের পর আজকের মতো শান্তিময় সকাল তার জীবনে আর আসেনি। যদি আজীবন মানুষটা এমন থাকত! দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল অরা।
[ ফলো মাই পেইজ Stories of Tasmia Tasnin Priya ]
” এই যে, তামান্না ভাটিয়া! এদিকেও কিছু ফলমূল দাও। ”
তালহার কথায় ভেংচি কেটে ফলের ঝুড়ি এগিয়ে দিলো তামান্না।
” আমি ভাটা, ডাটা না ভাইয়া। আমি শুধু তামান্না। ”
তালহাও ভেংচি কাটল এবার। ওদের দুষ্টমি দেখে অরার বেশ ভালোই লাগছে। খান বাড়ির ডাইনিং রুমে সকালের নাস্তা করছে সবাই। তালহা আজ আরিশের সাথে অফিসে যাবে। পরনে তার হালকা নীল শার্ট, সাদা প্যান্ট, আর চুলে ন্যাচারাল স্টাইল। তালহার অফিসে যাওয়া নিয়ে তাসলিমা খাতুন বেজায় খুশি। সাবিহার অবশ্য মন ভালো না। কোথায় ভেবেছিল অরাকে মারধর করবে, আরিশের সাথে বড়সড় একটা ঝামেলা হবে। কিন্তু তা হলো কোথায়? উল্টো আজকে দুজনকে বেশ খুশি খুশিই লাগছে। আর সেটাই সহ্য হচ্ছে না সাবিহার। এতটুকু একটা মেয়ে, পড়ালেখা, রূপ সবদিক থেকে সাবিহার চেয়ে কম তার। তবুও সে আরিশকে এভাবে নিজের দখলে রাখছে বিষয়টা সাবিহার কাছে ভীষণ অপমানজনক।
” তালহা তো তোর ভাই, ওকে সবকিছু শিখিয়ে নিস আরিশ। ”
খেতে খেতে বললেন তাসলিমা। আরিশ পকেট থেকে ফোন বের করে, বসা থেকে উঠে দাঁড়াল।পরনে তার কালো ফুলস্লিভ শার্ট আর স্লিমফিট ব্ল্যাক ট্রাউজার। হাতে কালো ঘড়ি, আর হালকা জেল দেওয়া চুলে গম্ভীর লুক। তার চিরচেনা কালো রঙ যেন তাকে আরো রহস্যময় আর দুর্দান্ত আকর্ষণীয় করে তুলেছে। আরিশ বলল,
” শেখার ইচ্ছে থাকলে আস্তে আস্তে সবকিছু শিখে ফেলবে। ”
আরিশের কথায় চুপসে গেলেন তাসলিমা। একটুও রসকষ নেই তার কথায়। তালহা মুচকি হেসে বলে,
” তোমার কী মনে হয় মা? ভাইয়া থাকতে আমার কেনো অসুবিধা হবে ? আমার ভাই হলো বেস্ট। ”
আরিশও মুচকি হেসে অরার দিকে দৃষ্টিপাত করলো। চুপচাপ মাথা নিচু করে খাচ্ছে অরা। ভাবছে একবার বাবার বাড়ি যাবে। কিন্তু সেটা আরিশকে কীভাবে, কখন বলবে সেটা বুঝতে পারছে না। আরিশ যতই ভালো আচরণ করুক, অরা এতদিনের আচরণগুলো ভুলতে পারেনি, পারবেও না। এরমধ্যে আরিশের একটা জরুরি কল এলো।
” তালহা চল, আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে। ”
” হ্যাঁ, হ্যাঁ। চলো ভাইয়া। ”
কল রিসিভ করে কথা বলতে বলতে অরাকে ইশারায় টাটা বলে বাসা থেকে বেরিয়ে গেলো আরিশ, সাথে তালহাও।
মকবুল খুন হওয়ার সপ্তাহখানেক কেটে গেছে। প্রশাসন এখনও খুনিকে খুঁজে বের করতে পারেনি। খুনি যে যথেষ্ট বুদ্ধিমান সেটা তার খুনের ধরণেই বোঝা যায়। প্রশাসন নড়েচড়ে বসেছে। তদন্ত চলছে, তবুও কোনো ক্লু, কোনো প্রত্যক্ষদর্শী নেই। কেবল শহরের দুই জায়গায় দু’টো পারফেক্ট খুন! পুলিশের মতে এটা কোনো স্বাভাবিক খুন নয়, সিরিয়াল কিলিং – এর কেস।
সময়টা দুপুরবেলা। খান ইন্ডাস্ট্রির বিশাল ভবনের নিচতলার রিসেপশনে হঠাৎ করে টহল পুলিশ ঢুকেছে। কয়েক মিনিটের মধ্যে পুরো অফিসে গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়েছে,
“পুলিশ এসেছে আরিশ স্যারকে ধরার জন্য!”
রুমে তখন মিটিং চলছিল। তেজরিন খান আরিশ , কোম্পানির ডিরেক্টর, পুলিশ আসার খবর শুনে বসা থেকে উঠে দাঁড়ালেন মিটিং মাঝপথে রেখেই। মুখে কোনও এক্সপ্রেশন নেই, কিন্তু চোখে চাপা রাগ। তিনি জানতেন না এই অভিযানটা আজকেই হবে। তবে হবেই এটা নিশ্চিত ছিল। পুলিশের বিষয়টা জানতে পেরেই কেবিন থেকে সোজা করিডোরের দিকে অগ্রসর হলো আরিশ। কথা বলে মিটিয়ে ফেলতে হবে বিষয়টা। কিছুতেই কোম্পানির সম্মানে প্রভাব পড়তে দেওয়া যাবে না।
অফিসের করিডোর জুড়ে থমথমে পরিবেশ করছে ।
আকাশের বাবা জনাব তৌসিফ শাহরিয়ার দাঁড়িয়ে আছেন , চোখমুখ আরিশের প্রতি দারুণ ক্ষোভ প্রকাশ পাচ্ছে। পাবার কথাই। একমাত্র ছেলের এমন অবস্থা করেছে যে, তার প্রতি রাগ-ক্ষোভ থাকবে এটাই স্বাভাবিক।
সিনিয়র পুলিশ অফিসার বিলাল আহমেদ সামনে এসে বললেন,
“তেজরিন খান, আমরা এসেছি আপনাকে, অ্যাটেম্পট টু মার্ডার অভিযোগে গ্রেফতার করতে। আপনার সহযোগিত কামনা করছি।”
সরাসরি এমন কথায় অফিসের বাকি কর্মকর্তারা আঁতকে উঠলেন। তাদের স্যার কাউকে খুন করতে চেয়েছিলেন? অবশ্য তাদের স্যারের যা রাগ তাতে কাউকে খুন করা কোনো বিষয় না।
” দেখুন অফিসার, আমি আকাশকে খুন করার জন্য গুলি করিনি। মারার ইচ্ছে থাকলে তো বাড়িতে গিয়ে গুলি করতাম না। আকাশ আমার স্ত্রী’কে তার বাসায় নিয়ে গিয়েছিল, তা-ও আমার অজান্তে। আমার মাথা গরম হয়ে গিয়েছিল, নিজেকে সামলাতে পারিনি বলেই এমন অঘটন ঘটে গিয়েছে। তাকে মারার কোনো মোটিভ ছিলো না আমার। নিতান্তই এক্সিডেন্ট! ”
” মিস্টার আরিশ, পুলিশ এসব কথায় কাউকে ছাড়ে না৷”
আরিশ মুচকি হাসল। এরমধ্যেই আরিশের পারসোনাল এডভোকেট সঞ্জয় চক্রবর্তী এলেন সেখানে। সঞ্জয় চক্রবর্তী – ছত্রিশ বছরের মাঝারি গড়নের এক ফিট অ্যাডভোকেট। উজ্জ্বল শ্যামলা গায়ের রং, পাতলা রিমলেস চশমা, আর ঠান্ডা অথচ দৃঢ় চোখ। পরনে গাঢ় নীল ব্লেজার, ধূসর শার্ট, কালো স্ল্যাকস ও চকচকে ব্রাউন অক্সফোর্ড জুতো। চুলে হালকা পাক, ভদ্রভাবে আঁচড়ানো। সেদিন ওই ঘটনার পরেই আরিশ সঞ্জয় চক্রবর্তীর সাথে কথা বলে রেখেছিল। উনি সবকিছু আগে থেকে গুছিয়ে রেখেছিলেন। তাই পুলিশ আসার খবর শুনতেই আরিশ এডভোকেট সঞ্জয় চক্রবর্তীকে কল করে জানিয়ে দিয়েছিলেন।
সঞ্জয় চক্রবর্তী চশমার ফ্রেমটা একটু ঠেলে নাকের ওপরে সেট করলেন। তার মুখে এক ধরনের আত্মবিশ্বাস দেখা যাচ্ছে। কারণ এমন পরিস্থিতিও তার কাছে প্রতিদিনের চা-সন্ধ্যার মতো সোজা। এরকম হাজারো কেস সামলানোই উনার পেশা।
“অফিসার বিলাল, আপনি বলছেন অ্যাটেম্পট টু মার্ডার। গুলিতে আকাশ আহত হয়েছেন,এটা সত্যি। কিন্তু এটাও সত্যি, ঘটনাটি পরিকল্পিত ছিল না। এটা ছিল হঠাৎ রাগের মাথায় ঘটে যাওয়া এক অনিচ্ছাকৃত ঘটনা।”
তিনি হাত বাড়িয়ে আকাশের মেডিকেল রিপোর্ট দিলেন, যেখানে উল্লেখ ছিল-
“The bullet wound is non-fatal, superficial and caused by a glancing shot. No bone or major artery was damaged.”
“একটা ‘অ্যাটেম্পট টু মার্ডার’-এর জন্য যে প্রমাণ দরকার- যেমন হত্যার উদ্দেশ্যে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা, প্রাণনাশের স্পষ্ট চেষ্টা সেগুলোর কিছুই নেই।”
অফিসার বিলাল চোখ সরু করলেন,
“তবুও এটা তো গুলি চালানোর ঘটনা।”
সঞ্জয় এবার মৃদু হেসে বললেন,
“ঠিক। এবং গুলি চালানো অবশ্যই অপরাধ। কিন্তু সেটা হয়তো ‘রেকলেস কন্ডাক্ট উইথ আ ডেডলি উইপন’ বা ‘গ্রেভ হার্ম’-এর আওতায় পড়ে, যা জামিনযোগ্য।”
“তাছাড়া..”
তিনি নিচু গলায় বললেন,
“আকাশ তার জবানবন্দিতে উল্লেখ করেছে, আরিশ তার স্ত্রীকে নিজের অনুমতি ছাড়া বাসায় নিয়ে যাওয়ায় উত্তেজিত হয়ে পড়ে। এটা ব্যক্তিগত পারিবারিক সংঘাতের ফল। এবং আমরা এর শান্তিপূর্ণ নিষ্পত্তির জন্য প্রস্তুত। ”
এতক্ষণ চুপ থাকা বিলাল এবার দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন,
“এই মুহূর্তে আপনাকে গ্রেফতার করছি না। তবে তদন্ত চলবে, এবং আপনাদের পূর্ণ সহযোগিতা কাম্য। মি. খান, আপনি যদি আবার কোনো অবিবেচনাপ্রসূত কাজ করেন, তখন আইনের আশ্রয় নেব বলে রাখছি।”
” অবশ্যই। তবে জনাব তৌসিফ, আম সরি। আমার গুলি করা উচিত হয়নি। এটা অন্যায় হয়েছে। সম্ভব হলে আমাকে ক্ষমা করবেন। আমি আকাশকে দেখতে যাবো অবশ্যই। ”
জনাব তৌসিফ চোখ সরিয়ে নিলেন আরিশের দিক থেকে। তার অভিব্যক্তি জটিল- রাগ, কষ্ট, ক্ষোভ। কোনো কথার জবাব না দিয়েই হনহনিয়ে বেরিয়ে গেলেন তিনি। উনার পেছন পেছন প্রশাসনের লোকজনও চলে গিয়েছেন।
আরিশ ম্লান মুখে সঞ্জয়ের দিকে তাকাল, তারপর নিচু গলায় বলল,
“ধন্যবাদ, সঞ্জয় দা।”
সঞ্জয় বললেন,
“এখন নিজের রাগকে ঠিক মতো নিয়ন্ত্রণ করো আরিশ। আইন সবসময় সত্যের পক্ষে থাকে, কিন্তু মানুষের ভেতরের অন্ধকারের পক্ষে নয়। তোমার এই রাগ একদিন কাল হয়ে দাঁড়াবে। এমনিতেই আজকের ঘটনার জন্য অফিসের বদনাম হবে। ”
আরিশ মাথা নিচু করল, নিজের রাগকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। কিন্তু আরিশের জন্য এটাই সবচেয়ে কঠিন কাজ। সঞ্জয়ের সাথে আরিশের সম্পর্ক বেশ ভালো। খান ইন্ডাস্ট্রির যাবতীয় আইনী বিষয়গুলো উনিই দেখেন।
চলবে,
#হামিংবার্ড
#পর্ব_২২
#তাসমিয়া_তাসনিন_প্রিয়া
” ভাইয়া এরপর থেকে মাথাটা একটু ঠান্ডা রেখো, প্লিজ!”
আরিশের পেছনে এসে দাঁড়াল তালহা। আজকের ঘটনায় আরিশকে যেন নতুন করে চিনতে পেরেছে সে।
” হুম। চল, মিটিং শেষ করতে হবে। ”
” হ্যাঁ চলো।”
আরিশের সাথে মিটিং রুমের দিকে অগ্রসর হলো তালহা।
দুপুরের রোদ যেন মাথার উপর জ্বলন্ত আগুন হয়ে নেমে এসেছে। গ্রীষ্মের এই অসহ্য তাপে ধরণী কূল হাঁসফাঁস করছে। বাতাস নেই বললেই চলে, চারপাশের গাছের পাতাগুলোও নিথর। পাখিরা যেন গা ঢাকা দিয়েছে, তাদের কিচিরমিচির শব্দও আজ অনুপস্থিত। রাস্তায় চলাফেরা করছে খুব কম মানুষ, যারাও বেরিয়েছে, তাদের চোখেমুখে ক্লান্তি আর বিরক্তির ছাপ স্পষ্ট। তাপমাত্রার এই নির্মম দাপটে শুধু মানুষ নয়, পশুপাখি আর গাছপালাও নুইয়ে পড়েছে। মাটি শুকিয়ে ফেটে গেছে অনেক জায়গায়, বাতাসে যেন ধুলোর সাথে ঝুলে আছে এক ধরনের অস্বস্তি। এমন দিনে সকলে চাতক পাখির মতো তাকিয়ে আছে আকাশের দিকে।হয়তো এক পশলা বৃষ্টি নামবে, আর প্রাণ ফিরে পাবে এই জ্বালাময় পরিবেশ।
অরা আজ প্রথমবারের মতো রান্নাঘরে। তার মেনুতে রয়েছে ভাত, গরুর মাংসের ঝোল আর চিংড়ি মাছ ভাজা। গরুর মাংসটা আরিশের সবচেয়ে প্রিয়, আর তাই অরা ঠিক করেছিল, আজ সে আরিশের পছন্দের খাবাররান্না করবে ।
” ভাবি! আপনার রান্না শেষ হয়েছে?”
” হ্যাঁ, এইতো। আমার রান্না শেষ। ”
” তাহলে আপনি গিয়ে গোসল সেরে আসুন। আমি ততক্ষণ আছি এখানে। ”
তামান্নার কথায় মুচকি হাসল অরা। দুজনের মধ্যে বেশ ভাব জমেছে আজকাল।
” বরের মন পাওয়ার জন্য রান্নাবান্না চলছে নাকি?”
আচমকা সাবিহার এমন কথায় হকচকিয়ে গেল অরা। তামান্না সাবিহাকে দেখেই চোখমুখ কুঁচকে ফেলেছে। এই মেয়েটাকে একদম সহ্য হয় না তার।
” আমার বর, আমার ঘর৷ মন পাওয়া না পাওয়ার কী হয়েছে? আর উনার মন তো আমার কাছেই আছে। রান্না করতে ইচ্ছে হলো, করলাম। এতটুকুই ননদী। ”
অরার কথায় চমকাল সাবিহা। এই মেয়েকে দেখে যতটা ভোলা ভালা মনে হয় আসলে সে ততটা ভোলা ভালা নয়। ইচ্ছে করেই আরিশের সামনে নরম হয়ে থাকে। সবকিছুই নাটক! মনে মনে এসব ভেবেই নিজেকে সামলে নিলো সাবিহা।
” কথা তো ভালোই বলতে পারো। আরিশের সামনে গেলে তো বোবা হয়ে যাও। ”
অরা মুচকি হেসে বলল,
” এটা বোবা হওয়া নয়, ননদী। স্বামীকে সম্মান করা। ”
তামান্না ঠোঁট কামড়ে মুচকি মুচকি হাসছে। অরা বরাবরই চঞ্চল একটা মেয়ে, কথা বলতে পছন্দ করে, আবার প্রচন্ড ভীতুও বলাও চলে। এখনও আছে। তবে বিয়ের পর থেকে একটু একটু করে বদলে গেছে সে। ভয়টা যেমন বৃদ্ধি পেয়েছিল, চঞ্চলতাও কমে গিয়েছিল। কিন্তু আরিশের আচরণে ধীরে ধীরে দেয়ালে পিঠ ঠেকে যায় তার৷ ভয় পেতে, পেতে একটা সময় ভয় কাটিয়ে ওঠে। আরিশের করা অন্যায় আচরণের প্রতিবাদ করে। অরা ঠিক যেন পানির মতো। যখন যে পাত্রে রাখা হয় সেই পাত্রের আকার ধারণ করে।
” বাহ! দেখা যাক, কতদিন থাকে এতো সম্মান। আর তোমার স্বামীর মন তোমার ওপর না-কি অন্য কোথায় সেটাও খুব তাড়াতাড়ি বুঝতে পারবে। ”
” মানে?”
” মানে….. চোখকান খোলা রেখেো। বুঝতে পারবে। ”
[ আমার পেইজ- https://www.facebook.com/share/1Ae3Z4vbnY/ ]
সাবিহা এটুকু বলে ঠোঁটের কোণে প্রসস্থ হাসির রেখা বজায় রেখে রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে গেলো। অরা সাবিহার কথায় বিশ্বাস না করলেও মনটা কেমন খচখচ করতে লাগলো। সত্যি কি আরিশের মন অন্য কোথাও? বিয়ের পরও কি সত্যি অন্য কেউ রয়ে গেছে তার জীবনে?
সন্ধ্যা নেমেছে। আকাশের রঙ গাঢ় হতে হতে এখন হালকা বেগুনি-মেরুন ছায়ায় ঢাকা। পশ্চিম দিগন্তে সূর্যটা ডুবে গেছে, শুধু কিছু লালচে আভা রয়ে গেছে আকাশের কিনারে। বাতাসে হালকা ঠাণ্ডা, পাখিরা ফিরে যাচ্ছে নিজ নিজ ঠিকানায়। চারপাশে যেন এক শান্ত, ধীর রাত্রির পূর্বাভাস।
” মা আগামীকাল আপুর সাথে দেখা করতে যাই একটু?”
রোকসানা মল্লিক চা তৈরি করছেন। গরম পানিতে সদ্যই চাপাতি ছাড়লেন। চায়ের ধোঁয়া ধীরে ধীরে উঠছে, ছড়িয়ে পড়ছে এক ঘর মৃদু সুগন্ধ।
বিকেল থেকে নয়না মায়ের পিছুপিছু ঘুরছে। তার অনুরোধ, বোনের সঙ্গে দেখা করতে যেতে দিতে হবে। চোখেমুখে ব্যাকুলতা, গলায় মৃদু অনুনয়। এই সময়েই সোলাইমান মল্লিক বাসায় ফিরলেন। অফিসের ক্লান্তি তার চোখেমুখে স্পষ্ট। কিছু না বলেই সোজা চলে গেলেন ফ্রেশ হতে।
” কালকে না, নয়না। পরে একদিন যাস। ”
” কালকে নয় কেনো?”
” কাল শুক্রবার, আরিশ বাসায় থাকবে। ”
” তো?”
রোকসানা মল্লিক মেয়ের মুখের দিকে তাকালেন। নয়না যথেষ্ট শক্ত মনের মেয়ে বলেই এত অল্প সময়ে নিজেকে সামলে নিতে পেরেছে। কিন্তু বাসা থেকে বের হলে, যদি এলাকার লোকজন উল্টাপাল্টা কিছু বলে দেয়? তখন নয়নার মন ভেঙে যাবে। এইজন্যই বাসা থেকে বেরোতে দিতে চাননা তিনি।
” তুই তো জানিসই, আরিশ একটু বেশি রাগী। যদি তোর সাথে রাগারাগি করে, তখন?”
নয়না লম্বা নিঃশ্বাস ফেলে বলে,
” মা! তুমিও না কীসব বলো! ভাইয়াকে নিয়ে আগে আমারও সমস্যা ছিলো। কিন্তু এখন নেই। উনি বাইরে থেকে যেমনই হোননা কেনো, ভেতরে একজন ভালো মনের মানুষ। তাছাড়া আমি প্রথম যেদিন ওই বাড়িতে গিয়েছিলাম, তখনও ভাইয়া খারাপ আচরণ করেননি। ”
দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন নয়নার মা। আরিশ কেমন সেটা তিনি ভালো করেই জানেন। কিন্তু সমস্যা যে অন্য জায়গায়, সেটা নয়নাকে কীভাবে বোঝাবেন তিনি?
” মা-মেয়ের মধ্যে কী নিয়ে কথা হচ্ছে, শুনি?”
বসার ঘরে সোফায় এসে বসলেন সোলাইমান মল্লিক। মাত্র ফ্রেশ হয়ে এসেছেন। বাবার কণ্ঠস্বর শুনে রান্নাঘর থেকে বসার ঘরের দিকে অগ্রসর হলো নয়না। রোকসানা মল্লিকও চা নিয়ে সেদিকেই এগোচ্ছেন।
” দেখো না, বাবা– মা কিছুতেই আপুর বাসায় যেতে দিচ্ছে না আমাকে৷ কতদিন হলো বাসা থেকে বের হইনি! স্কুলে না হয় আর কিছুদিন পরে গেলাম, কিন্তু আপুর সাথে দেখা তো করতে পারি?”
রোকসানা মল্লিক স্বামীর হাতে চায়ের কাপ তুলে দিলেন৷ চায়ের কাপে ধীরস্থিরভাবে চুমুক দিয়ে বললেন সোলাইমান,
” অবশ্যই পারিস। রোকসানা নয়নাকে কেনো মানা করছ?”
একটু চুপ করে রইলেন নয়নার মা। স্ত্রী’র মনোভাব বেশ ভালো করেই বুঝতে পারছেন সোলাইমান।
” এমনি। ”
” থাক মানা করার দরকার নেই। অরার সাথে দেখা করে এলে নয়নারও মন ভালো লাগবে। ”
” তাহলে আমি যাচ্ছি, বাবা?”
” হ্যাঁ যাস। ”
নয়না খুশিতে বাবার গলা জড়িয়ে ধরল। মায়ের দিকে তাকিয়ে বলল,
” এজন্যই তোমার থেকে বাবাকে বেশি ভালোবাসি, হুহ্। ”
সোলাইমান মল্লিক মুচকি হাসলেন। সাথে রোকসানাও। নয়না খুশি খুশি মনে নিজের ঘরের দিকে গেলো। রোকসানা সোলাইমানের মুখোমুখি বসলেন।
” রোকসানা এভাবে ভয় পেলে তো চলবে না৷ কতদিন ঘরে থাকবে নয়না? এক সময়, না একসময় বাইরের পৃথিবীতে পা রাখতেই হবে। তাই ও যখন চাইছে তখন ওকে যেতে দাও। আমাদের নয়না যথেষ্ট শক্ত মনের মেয়ে, সবকিছু সামলে নিতে পারবে। ”
দীর্ঘশ্বাস ফেললেন রোকসানা। মাথা নেড়ে স্বামীর কথায় স্বায় দিলেন কেবল….
খান বাড়ির ডাইনিং রুমে সবাই রাতের খাবার খেতে ব্যস্ত। কেবল আরিশ এখনো বাসায় ফেরেনি। তালহা সেই আটটার দিকেই বাসায় ফিরেছে। অরা আজকে প্রথম আরিশের জন্য অপেক্ষা করছে কিন্তু আরিশের তো আসার নামগন্ধ নেই! অরা বারবার বারবার দেয়ালঘড়ির দিকে তাকাচ্ছে। রাত দশটা ছুঁইছুঁই এখন৷
” ভাবি মা, কী দেখছ এত? ভাইয়ার কিছু কাজ আছে, কাল ছুটির দিন তো। সেজন্য সবকিছু শেষ করে আসার কথা। এখুনি এসে পড়বে, তুমি টেনশন করো না৷ ”
অরার হাবভাব দেখে তালহা সবকিছুই বুঝতে পারছিল। সেজন্য আরিশের দেরিতে আসার কারণ সম্পর্কে অবহিত করল তাকে৷
” আচ্ছা ভাইয়া।”
তাসলিমা খাতুন খাবার খেতে খেতে তামান্নার দিকে দৃষ্টিপাত করলেন। ইদানীং তালহার সাথে বড্ড ভাব জমেছে মেয়েটার। যা তাসলিমার মোটেও ভালো লাগছে না৷ রাস্তার মেয়ে, না জানি আবার তালহাকে বশ করে ফেলে! মনে মনে এইসব ভাবতে ভাবতে খাবার খাচ্ছেন তিনি।
অরার অপেক্ষা ফুরল রাত এগারোটার দিকে। আরিশ বাড়িতে ফিরেছে একটু আগে, তবে খেয়েদেয়ে এসেছে। অরা বিছানায় চুপ করে বসে আছে। যখনই চায় সবকিছু ভুলে গিয়ে মনটা শক্ত করে আরিশকে আপন করে নিবে তখনই আরিশের থেকে কোনো না কোনো বাঁধা পায় সে৷ যেমন নয়নার ঘটনাটির পরে অরা ভেবেছিল, আরিশের সাথে সব ঠিক করে নিবে। কিন্তু আরিশের ব্যবহার তাকে বাড়ি থেকে পালিয়ে যেতে বাধ্য করলো। দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলল অরা।
ওয়াশরুমের ধোঁয়ায় ঢাকা দরজা খুলতেই বেরিয়ে এলো ফর্সা, চকচকে ত্বকের এক সুগঠিত দেহ। ছোট করে কাটা ভেজা চুলগুলো কপাল বেয়ে কিছুটা এলোমেলো হয়ে পড়েছে, যেন স্বভাবজাত এক উদাসিন সৌন্দর্য। সাদা তোয়ালেতে কোমরজুড়ে জড়ানো মাত্র, বুক থেকে পেট পর্যন্ত জল বেয়ে পড়ছে অবিরত, প্রতিটি ফোঁটা যেন গলে যাচ্ছে অরার দৃষ্টিতে। শুকনো ঢোক গিলল সে। আরিশের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো।
অরা যেন থমকে গেল। এক হাতে চুল মুছছিল আরিশ, অন্য হাতে তোয়ালেটা সামলে হাঁটছে ধীরভঙ্গিতে। তার প্রতিটি পা যেন অরার বুকে দোলা দিচ্ছে। কিশোরী থেকে যুবতী হওয়ার সন্ধিক্ষণে আছে মেয়েটির বয়স। তাই এমন সুদর্শন পুরুষ দেখে স্বাভাবিকভাবেই বিমোহিত হয়ে গেছে অরা। ফের গলায় একটা শুকনো ঢোক গিলে নিল সে—চোখ ফেরাতে চাইল, পারল না। আরিশের রাগ, পাগলামি বাদে ভাবতে গেলে একদম পারফেক্ট একটা মানুষ সে। যাকে বলে প্রতিটা মেয়ের স্বপ্নের পুরুষ।
” হেই হামিংবার্ড! কী ভাবছ এত? ”
” কিছু না। ”
আরিশ মুচকি হেসে অরার দিকে এগিয়ে এল। অরা বড়ো বড়ো চোখে তাকিয়ে রইল, নিঃশব্দে, নিথর। হঠাৎই কোনো পূর্বসতর্কতা ছাড়াই আরিশ তাকে তুলে নিলো কোলে, ঠিক সেই চিরচেনা ভঙ্গিতে নয়।
অরার দুই হাত জড়িয়ে রইল আরিশের গলায়, আর দুই পা ছড়ানো অবস্থায় সে বসে আছে আরিশের কোমরের দু’পাশে। শক্ত করে আঁকড়ে আছে আরিশের পিঠ, যেন একটু নাড়লেও পড়ে যাবে। সদ্য গোসল করা শরীর থেকে ভেসে আসছে সাবানের হালকা, স্বচ্ছ সুগন্ধি। যা অরার বুকের ভেতরটা কাঁপিয়ে দিচ্ছে।
আরিশের ঠান্ডা, ভেজা ত্বকের সংস্পর্শে অরা যেন অদ্ভুত এক অনুভূতিতে আটকে গিয়েছে। শরীর শীতল, কিন্তু উপস্থিতি যেন জ্বালিয়ে দিচ্ছে অন্তর।
” কেউ কিছু বলেছে? ”
” উঁহু। ”
” তাহলে?”
” আপনি বাইরে খেয়ে এলেন কেনো? আমি আপনার জন্য রান্না করেছিলাম, আর অপেক্ষাও করছিলাম। ”
আরিশের অবাক লাগলো অরার কথাগুলো। সবকিছু কেমন অবিশ্বাস্য! কেউ তার জন্য রান্না করেছে? অপেক্ষা করেছে? আরিশ কেমন এলোমেলো হয়ে গেলো। অরাকে বিছানায় বসিয়ে, নিজেও মুখোমুখি বসলো। অরার হাত দুটো নিজের হাতের মধ্যে রাখল।
” সত্যি? ”
” হুম। ”
” আমার জন্য অপেক্ষা কেন করছিলে, হামিংবার্ড?”
” মা’কে দেখেছি বাবার জন্য এভাবেই অপেক্ষা করে থাকেন, সেজন্য। ”
খালার সম্পর্কে এমন কথা শুনে একটু হলেও মন পরিবর্তন হলো আরিশের। মুচকি হেসে বলল,
” তুমি খাবার খেয়েছ?”
” হ্যাঁ, খেয়ে নিয়েছি। আমার খিদে পেয়েছিল খুব। ”
অরার সহজসরল স্বীকারোক্তি। আরিশ অরার গাল টেনে দিলো। হকচকিয়ে গেলো অরা।
” ভালো করেছ। ”
চলবে,