হামিংবার্ড পর্ব-৫৪+৫৫+৫৬

0
31

#হামিংবার্ড
#পর্ব_৫৪
#তাসমিয়া_তাসনিন_প্রিয়া

অরার মাথার ওপরে তার হাতদুটো দেয়ালের সাথে চেপে ধরে দাঁড়িয়ে আছে আরিশ। ভদ্রলোক মারাত্মক রেগে আছে। চোখমুখ ভীষণ ভয়ংকর দেখাচ্ছে। অরা ঠিক বুঝতে পারছে না কীভাবে আরিশকে শান্ত করবে। হঠাৎ করেই মনের ভেতর একটা ভাবনা এলো তার। পুরুষ মানুষ তার শখের নারীর সংস্পর্শে গেলে আগ্নেয়গিরির মতো উত্তপ্ত মেজাজে থাকলেও শান্ত দীঘির জলের মতো হয়ে যায়। অরা ধীরে ধীরে আরিশের কপালে কপাল ঠেকাল। ফিসফিস করে বলল,

“ শান্ত হও, আরিশ৷ শান্ত হও রাগী ভূত। রাস্তায় চলাচল করতে গেলে লোকজন দেখবেই! এটাই স্বাভাবিক। “

অরার মুখে তুমি সম্বোধন শুনে মেজাজ বদলে গেলো আরিশের। প্রিয়তম স্ত্রী’র এমন মোহনীয় আচরণে একেবারে শান্ত হয়ে গেলো সে।

“ তুমি আমাকে ‘তুমি ‘ বলে সম্বোধন করলে?”

“ হ্যাঁ, করলাম। সমস্যা আছে? “

আরিশ অরার হাতদুটো ছেড়ে দিলো। মুখোমুখি, একজন আরেকজনের দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো।

“ হ্যাঁ, অনেক সমস্যা হচ্ছে পাখি৷ তোমার এতো ভালোবাসায় আমি যেন সুখে মরে যাচ্ছি। কী করবো বুঝতে পারছি না। আমি যদি নাচতে শুরু করি তুমি কি হাসবে?”

বাচ্চাদের মতো মুখ করে বলল আরিশ। অরা আরিশের ঠোঁটে আঙুল চেপে ধরে বলল,

“ সুখে বেঁচে থাকুন, মরার কথা বলবেন না। “

আরিশ আঁড়চোখে নিজের ঠোঁটের দিকে, অরার আঙুলের দিকে তাকিয়ে আছে। বিষয়টা বুঝতে পেরে ঝটপট আঙুল সরিয়ে ফেলল অরা। আরিশ তার কোমরে হাত রেখে নিজের বুকের সাথে চেপে ধরে নিচু স্বরে বলে,

“ বলবো না। একটা কথা বলো….”

“ হু…?”

“ তোমার কি কখনো নিজে থেকে আমাকে পেতে ইচ্ছে করে না? “

অরা লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেলল। ঘর কাঁপিয়ে হাসতে লাগলো আরিশ। অরা একটু দূরে সরে ওয়ারড্রব থেকে থ্রি-পিস বের করতে করতে বলল,

“ আপনার নাকের ডগায় যতদিন রাগ বসে থাকবে ততদিন এই প্রশ্নের উত্তর পাবেন না।”

আরিশ নিজের নাকের দিকে চোখ টেরা করে তাকাল। আবছা আবছা কেবল নিজের নাকটা ছাড়া আরকিছুই দেখতে পেলো না। কয়েক পা এগিয়ে গিয়ে অরার ঘাড়ে থুতনি রাখল সে।

“ কই, আমার নাকের ডগায় তো কিচ্ছু নেই! “

“ খবরদার! ভ্যাম্পায়ারের উত্তরসূরী হওয়ার মতোন আচরণ করবেন না। “

থতমত খেয়ে থুতনি সরিয়ে ফেলল আরিশ। অরার কথার আগামাথা কিছুই সে বুঝতে পারেনি।

“ কী বললে এগুলো! “

“ ভ্যাম্পায়ারের নাম শোনেননি? “

“ হ্যাঁ, মুভিতে দেখেছিলাম একবার। তো? তার সাথে আমার….. “

“ তাহলে নিশ্চয়ই মুভিতে এটাও দেখেছেন বদের হাড্ডিগুলো সুযোগ পেলেই মেয়েদের কামড় বসিয়ে দেয়। “

ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটল আরিশের। এবার সবকিছু ক্লিয়ার। অরার ঘাড়ের ওপর থেকে চুলগুলো সরিয়ে, একপাশে রাখল আরিশ। তারপর মৃদু করে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিলো সেখানে। অরা চোখ বন্ধ করে ফেলল আবেশে। কিন্তু বেশিক্ষণ সেই আবেশ স্থায়ী হলোনা। তীব্র যন্ত্রণা অনুভব হতে লাগলো।

“ যখন তুমি আমাকে ভ্যাম্পায়ারের উত্তরসূরী বললে, তখন যোগ্য উত্তরসূরী হওয়ার চেষ্টা করবো আমি। “

অরা আরিশকে মৃদু ধাক্কা দিয়ে দূরে সরিয়ে ফেলল। আজকে সত্যি অনেক ব্যথা পেয়েছে সে।

“ আপনি একটা…. ধুর ভাল্লাগে না। “

অরা দ্রুত পা চালিয়ে জামাকাপড় বদলে নেওয়ার জন্য ওয়াশরুমের দিকে চলে গেলো। আরিশ মিটিমিটি হেসে যাচ্ছে কেবল। বলতে গেলে সেভাবে অরাকে কখনো রাগ করতে দেখেনি । আজকে তাই অরাকে রাগানোর সুযোগটা হাতছাড়া করলো না আরিশ।

গত দু’দিন ধরে খান বাড়িতে শুধু বিয়ের কেনাকাটাই চলছে। চারদিকে ব্যস্ততা, হাসি-আনন্দে মুখর পরিবেশ। তাসলিমা খাতুনের সঙ্গে কথা হয়েছে সাবিহার – আগামী সপ্তাহেই দেশে ফিরবে সে। আর ঠিক তাতেই চূড়ান্ত হয়েছে তামান্না আর তালহার বিয়ের দিনক্ষণ।

সবাই উৎসবে মেতে উঠলেও নয়নার মনটা যেন কোথায় হারিয়ে থাকে। চারপাশের রঙিন আলো, সেজেগুজে ঘোরাঘুরি, খুশির হইচই – সবই ঠিকঠাক, তবুও তার ভেতরে যেন একটা অদৃশ্য শূন্যতা বসে আছে। কেউ টের পায় না, কিন্তু নয়নার দৃষ্টিতে মাঝে মাঝেই এক রকমের বিষণ্ণতা ভেসে ওঠে।

ব্যাগপত্র গোছগাছ শেষে বিছানায় সোজা হয়ে শুয়েছে সাবিহা। মনটা আজ দারুণ ফুরফুরে লাগছে তার। কতগুলো মাস পর সবার সাথে দেখা হবে! ঠোঁটের কোণে হাসির রেখা সাবিহার৷ হঠাৎ মেহরাবের কথা মনে পড়লো। ভদ্রলোক নিশ্চয়ই তার দেশে ফেরার খবর শুনে আনন্দিত হবে – এসব ভাবতে ভাবতে ফোন হাতে নিয়ে মেহরাবের নম্বরে কল করলো সাবিহা। পরপর দুটো রিং হতেই কল রিসিভ হলো। একনজরে সময় দেখে নিলো সাবিহা। বাংলাদেশে এখন গভীর রাত। নিশ্চত মেহরাবের ঘুম ভাঙিয়ে দিয়েছে ভেবে কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে গেলো সাবিহা।

“ হু, বলো। “

মেহরাবের এমন কথায় ঠিক কী বলবে বুঝতে পারছে না সাবিহা। কিয়ৎক্ষণ চুপচাপ রইলো সে, তারপর গলা খাঁকারি দিয়ে বলল,

“ আসলে আমি খেয়াল করিনি…. এখন অনেক রাত… মানে বাংলাদেশে এতো রাত হয়েছে খেয়াল করিনি । “

“ খেয়াল করলে কী আমাকে কল করতে না, সুন্দরী? সো ব্যাড!”

মেহরাব ঘুমের ঘোরে-ই ফোনে কথা বলছে। সেজন্য কথাগুলো কেমন জড়িয়ে যাবার পাশাপাশি অদ্ভুত লাগছে সাবিহার। সচারাচর মেহরাব এমন গলায় কথা বলে না।

“ আপনার ঘুম কাটেনি। এখন রাখছি, পরে কথা হবে। আমি আগামীকাল সকালে ফ্লাইটে ওঠাার প্রস্তুতি নিচ্ছি। দোয়া করবেন। “

“ দোয়া! তুমহারে লিয়ে অল টাইম দোয়া…….. মানে দোয়া করি সাবিহা….”

মে হরাব ভুলভাল বকছে শুনে খিলখিল করে হাসতে লাগলো সাবিহা।

“ ওকে। বায়।”

“ হুহ হু।”

কল কেটে নিজে থেকেই হাসতে লাগলো সাবিহা। কতদিন পর এমন প্রাণখোলা হাসি এলো জীবনে! বাড়ি থেকে দূরে সরে সাবিহা একটা বিষয় বুঝতে পেরেছে, ভালোবাসা মানুষ কাছে থাকুক কিংবা দূরে তারা সব সময় আমাদের হৃদয়ে থাকে। এই যে এতদূর এসে থাকছে সাবিহা তবুও তো মা, ভাইকে প্রতি সেকেন্ড মিস করে যাচ্ছে সে।

অরার আর ভার্সিটি যাওয়া হচ্ছে না। আরিশ কিছুতেই অরাকে চোখের আড়াল করতে পারবে না। সেজন্য অনলাইনে ক্লাসসহ, বাড়িতে বসে পড়াশোনা করতে যা যা দরকার তাই করতে রাজি আছে আরিশ। এতো ঝামেলা পুহিয়ে পড়ার থেকে ঘরসংসার সামলানোই ভালো বলে ভাবছে অরা। কিন্তু আরিশ বরাবরই খামখেয়ালি, জেদি প্রকৃতির মানুষ। তাই তার ইচ্ছেতে বাড়ি থেকেই পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছে অরা।

“ তোমার কি মনে আছে, ভাইজান কী বলেছিলেন? “

বিছানা গোছানো শেষে স্বামীর সামনে মুখোমুখি বসলেন রোকসানা মল্লিক। সোলাইমান ফোনের স্ক্রিনে তাকিয়ে আছেন।

“ হ্যাঁ, গো। সব মনে আছে। কিন্তু ও বাড়িতে তালহার বিয়ে লাগলো বলে, তারমধ্য তো অরা বাড়ি থেকে থেকে হতে পারবে না। দেখি ভাইজান ঠিক কবে বিয়ের তারিখ ঠিক করেন। “

“ ঠিক আছে। আমি এমনি মনে করিয়ে দিলাম। অনেক রাত হয়ে গেছে, ঘুমাও। “

“ হু…..”

গ্রীষ্মের তাপদাহ শেষে যখন বর্ষা আসে, প্রকৃতির মধ্যে একধরনের প্রশান্তি নেমে আসে। । ঝিরঝির বৃষ্টি পড়ে ছাদের ওপর, জানালার কাঁচে, মাটির গায়ে- সবখানে। গাছপালার ধুলো ধুয়ে গিয়ে তারা হয়ে ওঠে টাটকা সবুজ। পথঘাটে জমে ওঠে কাদামাটি, কোথাও বা ছোট ছোট জলাধার।

রাস্তায় হেঁটে যাওয়ার সময় চটাস চটাস শব্দ তুলে ভিজে পড়ে থাকা পাতাগুলোর ওপর দিয়ে হেঁটে যায় পথচারীরা। গন্ধে ভরে ওঠে চারপাশ,ভিজে মাটির গন্ধ, যেন হৃদয়ের গভীরে গেঁথে বসে।

সন্ধ্যার পর বাতাসটা আরও শীতল হয়ে আসে, বৃষ্টির ফোঁটা ছুঁয়ে দেয় জানালার পাশে বসে থাকা কোনো ভাবুক মনকে।

জানালার পাশে দাঁড়িয়ে আছে অরা। বাইরে টিপটিপ বৃষ্টি হচ্ছে। রাত কম হয়নি, দশটা ছুঁইছুঁই । তবে আজকে আরিশের অফিসে গুরুত্বপূর্ণ কিছু কাজ আছে। সেজন্যই দেরি হচ্ছে ফিরতে। আজকে হুট করে অরার শরীরটা কেমন খারাপ লাগছে। আরিশকে জানালে অতিরিক্ত চিন্তা করবে ভেবে কিছু বলেনি। দু’দিন পর তামান্নার সাথে তালহার বিয়ে। কতো কাজকর্ম! নিজের হাতে সব কাজ না করলেও বাড়ির বউ হিসেবে কিছু দায়িত্ব তো থাকেই! তপ্ত নিঃশ্বাস ছাড়ল অরা। ধীরপায়ে এগিয়ে গিয়ে বিছানায় বসলো।

“ ভাবি? আসবো?”

আকস্মিক তামান্নার গলার স্বরে চমকে উঠলো অরা। তবে পরক্ষণেই নিজেকে স্বাভাবিক করে নিয়ে প্রত্যুত্তরে বলল সে,

“ হ্যাঁ এসো, আপু। “

তামান্না ধীরপায়ে রুমে ঢুকে দাঁড়াল। অরা ইশারায় বসতে বললো।

“ আপনার কি শরীর খারাপ ভাবি? আজকে কেমন দূর্বল লাগছিল আপানাকে। মনে হয় রক্তশূন্যতা বৃদ্ধি পাচ্ছে আপনার। “

অরা এক গভীর দীর্ঘশ্বাস ফেলল। ক্লাস টেন থেকেই এই সমস্যা—অ্যানেমিয়া! খাওয়াদাওয়ার প্রতি কখনোই আগ্রহ ছিল না তার। মায়ের বকুনি খেয়ে জোর করে খেতে হতো। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সেই বকুনিও কমেছে, আর অরার খাওয়ার অভ্যাসও রয়ে গেছে আগের মতোই অবহেলায় গড়া।

“ হয়তো। তুমি কিছু বলবে? না-কি এমনি এসেছ?”

তামান্না মুচকি হাসে। বলে,

“ ভাবি আমি চাই আমার বিয়েতে আপনি আমাকে বউ সাজিয়ে দিবেন – আপনার কোনো আপত্তি নেই তো?”

অরা হেসে বলল,

“ কীসের আপত্তি! অবশ্যই সাজিয়ে দেবো। তবে আমি সাজগোজের বিষয় খুব পটু নই। “

“ আপনি যেভাবে পারেন তাতেই চলবে, ভাবি। “

“ বেশ,দেবো। “

“ ঠিক আছে, ভাবি। আমি এখন আসছি। ভাইয়া ফিরলে খাবার গরম করে দেবো। “

“ দরকার নেই, আমি করে নেবো সব। তুমি যাও।”

“ আচ্ছা। “

তামান্না হাসি হাসি মুখে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো। অরা বিছানায় শরীর এলিয়ে দিয়ে, চোখ বন্ধ করে ফেলল। ভীষণ দূর্বল লাগছে তার।

চলবে,

#হামিংবার্ড
#পর্ব_৫৫
#তাসমিয়া_তাসনিন_প্রিয়া

আরিশের জন্য অপেক্ষা করতে করতে ক্লান্ত শরীরে ঘুমিয়ে গিয়েছিল অরা। আরিশ বাসায় ফিরে মেয়েটাকে আর ডাকাডাকি না করেই ফ্রেশ হতে গেছে। অরা কখনো এরকম ঘুমিয়ে যায় না। তাই ব্যাপারটা অস্বাভাবিক লেগেছে আরিশের। ওয়াশরুম থেকে কেবল একটা তোয়ালে পরে বের হ’য়েছে সে। অরা গুটিশুটি হয়ে শুয়ে, ঘুমিয়ে আছে। ধীরপায়ে এগিয়ে গিয়ে তার পাশে বসলো আরিশ। মুখের ওপর পড়ে থাকা এলোমেলো চুলগুলো সরিয়ে দিলো। মেয়েটাকে জোর করে কীভাবে তার জীবনে আনলো সেসব ভাবনা মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। যতই হোক, লম্বা একটা বয়সের পার্থক্য। দুজনের মন-মানসিকতার পার্থক্য আছে। সবকিছুই বিপরীত। তবুও অরা সব মানিয়ে আছে। দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল আরিশ। মাঝে মধ্যে নিজের ওপর রাগ হয়। নিজের অসুস্থতার জন্য অরার সাথে হয়তো বেশিই অন্যায় করে ফেলেছে সে।

“ আপনি কখন এলেন?”

আচমকা অরার কণ্ঠস্বর শুনে নড়েচড়ে উঠল আরিশ। ভাবনায় মশগুল হয়ে ছিলো সে। অরা বড়ো বড়ো চোখ করে তার উন্মুক্ত শরীরের দিকে তাকিয়ে আছে। প্রসস্থ বুকে পানির ফোঁটাগুলো দেখে অরার যেন গলা শুকিয়ে আসছে আজ। নিজের অজান্তেই আরিশের বুকে হাত রাখলো সে। আরিশের শরীরে কম্পন অনুভূত হলো। অবাক দৃষ্টিতে অরার দিকে দৃষ্টিপাত করতেই হাত সরিয়ে ফেলল সে।

“ না মানে…. আসলে… পানি ছিলো তো তাই আরকি!”

আমতা আমতা করে বললো অরা। আরিশ অরাকে ধরে বসিয়ে ফেলল। ঠোঁটের কোণে তার দুষ্ট হাসির ঝিলিক। এক ঝটকায় অরাকে কোলে নিয়ে ড্রেসিং টেবিলের ওপর বসাল।

“ আরে এখানে তো জিনিসপত্র রাখা আছে! বসানোর আর জায়গা পেলেন না!”

“ থাকুক। অযুহাত না দিয়ে সরাসরি বললেই পারো, আমার প্রতি আকর্ষিত হচ্ছিলে তুমি। “

“ কই? কখ..ন? মো..টেও না…”

আরিশ অরার থুতনি চেপে ধরে, কোমরে কঠিনভাবে স্পর্শ করে বলল,

“ মিথ্যা বলবে না। আই হেইট লাইস, হামিংবার্ড।”

অরা লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেলল। আরিশের চোখমুখ বদলাচ্ছে। বহুদিন পর নিজের ভেতর নিয়ন্ত্রণহীন এক আরিশকে অনুভব করছে সে।

“ চেঞ্জ করে নিন। “

“ পরে করবো। “

“ কিন্তু…. “

অরা কথা শেষ করতে পারে না। আরিশের আগ্রাসী চুম্বনে বেসামাল হয়ে ওঠে সে। একদিকে যন্ত্রণা অন্য দিকে ভালোবাসার সুখ– দুই অনুভব করতে থাকে অরা। আরিশ যখন তাকে মুক্ত করে তখন ঠোঁট থেকে শুরু করে গলা, ঘাড়ে মৃদু জ্বলুনি টের পায় অরা।

“ ডিনার শেষ করে, তোমাকে খাবো। “

অরা আয়নায় নিজের দিকে তাকাল। গলায় নজর পড়তেই লজ্জায় ওড়না দিয়ে তা ঢেকে ফেলল।

“ আপনি আর বদলালেন না। “

“ আমি বদলালে তোমার ভালো লাগবে? “

“ নাহ। আপনি যেমন আছেন তাতেই সুখ, তাতেই আমার অসুখ। আমি এই সুখ অসুখ নিয়েই ভালো আছি। “

আরিশ পোশাক পরে নিলো এরমধ্যে।

“ তা ঠিক আছে। তোমার শরীর খারাপ বললে না কেন? আগামীকাল ডাক্তার আসবে বাসায়। যা যা সমস্যা সবকিছু বলবে উনাকে। “

“ তেমন কিছু হয়নি তো। এমনি ক্লান্ত লাগছিল। শরীরে ব্যথা….”

“ যাইহোক ডাক্তার বুঝবে। তবে হ্যাঁ মহিলা ডাক্তার আসবে। তাই কোনো সংকোচ করবে না। “

“ আচ্ছা। “

আরিশ আরকিছু না বলে অরাকে কোলে তুলে নিয়ে ঘর থেকে বেরুলো। অরা আরিশের হাবভাব বুঝতে পারছে না। কোলে করে কোথায় যাচ্ছে সে?”

“ এভাবে কোথায় যাচ্ছি? “

“ ডাইনিং রুমে। “

“ কী!”

“ জি। “

“ না মানে কেউ দেখে ফেলবে! লজ্জা…… “

“ অসুস্থ বউকে হাঁটতে দেওয়া যাবে না। লাজলজ্জা আপাতত একপাশে রাখো। তাছাড়া কোলেই নিয়েছি, অন্যকিছু করছি না। চুপচাপ চলো, খাবার খেয়ে নিবে। “

অরা আর কথা বাড়ালো না। কারণ আরিশ বরাবরই জেদি, একরোখা মানুষ। যা বলে তাই করে। কিছু বলেও ফেরানো যাবে না তাকে।

বৃষ্টিস্নাত সকাল। আড়মোড়া ভেঙে শোয়া থেকে উঠে বসলো মেহরাব। হাই তুলতে তুলতে ফোন হাতে নিয়ে, ঘাটাঘাটি করে দেখলো – গতকাল রাতে সাবিহা কল করেছিল। চমকাল মেহরাব। কল দিলো কখন? আর রিসিভও তো হয়েছে! তারমানে সে ঘুমের ঘোরেই সাবিহার সাথে কথা বলেছে কলে। কিন্তু কী বলেছে সেসব তো মনে নেই! তড়িঘড়ি করে সাবিহার নম্বরে কল দিলো সে। কিন্তু কল ঢুকলো না। নম্বর বন্ধ বলছে। চিন্তায় পড় গেলো মেহরাব। হয়তো ঘুমের ঘোরে এমনকিছু বলে ফেলেছে যার জন্য মেয়েটা রাগ করেছে। এমনিতেই সাবিহার রাগ বেশি। দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল মেহরাব। কী করবে এখন তাই ভাবতে লাগলো।

রোদের তাপে ঝলসে উঠেছে শহর। পিচঢালা রাস্তায় সূর্যের আলো ফুটেছে আগুনের রেখার মতো। হালকা ধুলোর আস্তরণে ধূসর ছোপ ছোপ ছায়া। গাড়ির হর্ণ আর মানুষের হাঁটার তাড়া মিলে দুপুরটা যেন হাঁফানো শহরের একটা ক্লান্ত শ্বাস।

দু’দিন হলো খান বাড়িতে আছে নয়না। বোনের সাথে ভালোই সময় কাটছে তার। সকালবেলা তামান্নার সাথে টুকটাক জিনিসপত্র কিনতে বাইরে গিয়েছিল নয়না। তখনই অরার জন্য একটা ব্রেসলেট কিনে এনেছে সে৷ ছোটো থেকে অরা সব সময় নিজের পছন্দের জিনিসটা নয়নাকে দিয়ে দিতো। আসলে অরার প্রিয় জিনিসপত্রের দিকেই নয়নার নজর থাকতো। তাই বোনের কথা ভেবে সব সময় নিজের জিনিসপত্র দিয়ে দিতো সে।

“ কী রে? ভাত খাবি কখন? বেলা তো কম হলোনা। না খেয়ে থাকলে চলবে?”

ড্রইং রুমে বসে আছে নয়না। হাতে ব্রেসলেটটা। বোনের কথাই ভাবছিল সে। বাইরে থেকে খেয়ে এসেছে বলে দুপুরের খাওয়াদাওয়া করেনি এখনও।

“ পেট ভরে আছে, আপু। পরে খাবো। তুমি এদিকে এসো। “

অরাকে পাশে বসাল নয়না। বোনের দিকে তাকিয়ে আছে সে।

“ বল, কী হয়েছে? কেউ কিছু বলেছে তোকে? “

“ আরে না। এ বাড়ির সবাই খুব ভালো। তোমার জন্য একটা জিনিস কিনে এনেছি, দেখো তো। পছন্দ হয়েছ?”

অরার হাতে ব্রেসলেট পরিয়ে দিয়ে জিজ্ঞেস করলো নয়না। ছোটো বোনের থেকে ব্রেসলেট পেয়ে খুব খুশি হলো অরা। আনন্দে জড়িয়ে ধরে বলল সে,

“ খুব পছন্দ হয়েছে, সোনা। আমার বোনটা বড়ো হয়ে গেছে। “

“ এহহ… আমি বড়ো হইনি। আমি ছোটই থাকতে চাই আপু। ঠিক এভাবে, তোমার আদেরর ছোটো বোন হয়ে। “

হেসে বলল অরা,

“ পাগলি একটা। সকালে তালহা গিয়ে দিয়ে আসবে তোকে। বিয়ে তো তিনদিন পর। পরশু আবার গিয়ে নিয়ে আসবে, কী বলিস?”

“ হ্যাঁ সেটাই ভালো হবে। জামাকাপড়ও গোছানো বাকি৷ বিয়েতে কী কী পরবো, সেসব। “

“ বিয়েতে কী পরবি সেসব তোকে ভাবতে হবে না। তোর ভাইয়া বলেছে সব কিনে দেবে। “

নয়নার ভীষণ আনন্দ হচ্ছে। আরিশ যে এভাবে তাদের পরিবারকে আপন করে নিবে সেটা কখনোই ভাবেনি সে।

“ ওকে, আপু। তুমি খেয়েছো দুপুরে? “

“ হ্যাঁ। ডাক্তার আসবে এখন। আরিশ কল দিয়ে বলল। “

“ কী হয়েছে তোমার? “

আতংকিত হয়ে জিজ্ঞেস করলো নয়না। অরা তাকে স্বান্তনা দিয়ে বলে,

“ তেমন কিছু না। মনে হয় শরীর দূর্বল। কেমন অশান্তি লাগছে আজকাল। জ্বরও আসে মাঝে মধ্যে। “

“ তাহলে ভালোই হবে, ডাক্তার এলে কী হয়েছে জানা যাবে। “

অরা বসা থেকে উঠে অন্যদিকে এগোতে এগোতে বলে,

“ হ্যাঁ, আমি ঘরে গেলাম। “

“ আচ্ছা, আপু। যাও। ডাক্তার এলে,আমি তোমার ঘরে নিয়ে যাবো। “

“ ঠিক আছে। “

ডাক্তারের অপেক্ষায় নয়না বসে রইলো, ড্রইং রুমে।

আকাশি ব্লাইন্ড ফাঁক করে রোদ এসে পড়েছে রুমের মেঝেতে। চারপাশ জুড়ে শীতল, ঘন নীরবতা। কেবিনে বসে আছে তেজরিন খান আরিশ। চোখে গাঢ় একাগ্রতা, ঠোঁটের কোণে চাপা এক দৃঢ়তা।

কালো শার্টের ওপর ধূসর ওয়েস্টকোট, গলায় সিল্কের টাই—পরিপাটি, অথচ অনায়াস স্টাইল। হাতে এক কাপ কালো কফি, যেটা ঠান্ডা হয়ে গেছে কখন, হয়তো খেয়ালই নেই। সামনে টেবিলে ছড়িয়ে থাকা কিছু কনফিডেনশিয়াল ফাইল। একের পর এক সাইন করছে সে, মাঝে মাঝে চোখ তুলে তাকাচ্ছে ওয়াল জুড়ে লাগানো বিশাল স্ক্রিনে, যেখানে রিয়েলটাইম রিপোর্ট ভেসে উঠছে।

রুমের একপাশে দাঁড়িয়ে সেক্রেটারি ফাইজা বলল,
“সার, আগামীকাল ইনভেস্টর মিটিং…”

আরিশ চোখ না তুলে উত্তর দিল,
“স্লাইড রিভিউ করেছি আমি। বাকি অংশ কাল দেখবো।”

ফাইজা মুহূর্তখানেক থমকে থাকল, তারপর সামান্য মাথা নেড়ে বলল,

“জ্বি, ঠিক আছে সার।”

আরিশ তখনো চোখ সরায়নি স্ক্রিন থেকে। কনফিডেনশিয়াল রিপোর্টে ভেসে উঠছে প্রতিটি শেয়ারের আপডেট, ইনফ্রা প্রজেক্টের টাইমলাইন, এবং লেনদেনের হিসাব। ভ্রু কুঁচকে গেলো এক জায়গায়, যেন কিছু একটা তার পরিকল্পনার বাইরে যাচ্ছে।

চোখ নামিয়ে কলমটা আবার তুলে নিলো সে।

টেবিলের ডান পাশে রাখা ইন্টারকমের বোতাম টিপে বলল,

“তালহাকে বলুন, আমার কেবিনে আসতে।”

ফাইজা ইতস্তত করে জিজ্ঞেস করল,

“স্যার, উনি তো এখন ক্লায়েন্ট মিটিংয়ে…”

“তবে যখনই ফ্রি হবে, সরাসরি এখানে আসতে বলবেন ।”

তার স্বর শান্ত, কিন্তু গভীর।

রুম জুড়ে আবারও নেমে এলো সেই নিঃশব্দ, শীতল ভার। আরিশ তার আঙুলে ঘুরাতে লাগল সোনালি রিংটা। ঠিক তখনই, ফোনটা ভাইব্রেট করতে শুরু করল।

স্ক্রিনে ভেসে উঠল এক নাম— হামিংবার্ড কলিং…

ঠোঁটের কোণে এক চিলতে হাসি ফুটে উঠলো। পরক্ষণেই আরিশ খান থমকে গেলো। সচারাচর অফিসে থাকাকালীন অরা কল করে না। ডাক্তার হয়তো এমনকিছু বলেছে যার জন্য অরা আরিশকে কল করতে বাধ্য হয়েছে।

“ ফাইজা আপনি এখন যেতে পারেন। “

“ জি,স্যার। “

নিশ্বব্দে কেবিন থেকে বেরিয়ে গেলো ফাইজা। আরিশ দ্রুত কল রিসিভ করলো।

আরিশ কল রিসিভ করতেই ঠুকরে কেঁদে উঠল অরা। তার এমন আচরণে আরিশের যেন প্রাণপাখি বের হয়ে যাওয়ার উপক্রম হলো।

“ পাখি? কী হয়েছে তোমার? এভাবে কাঁদছ কেন? ডাক্তার কী বলেছে?”

“ আমার ভয় লাগছে… “

“ এমন করে না, জান। শান্ত হও। আমি এখুনি আসছি। তুমি শুধু বলো, তোমার কী হয়েছে? “

“ আমার না-কি ডেঙ্গু জ্বর হয়েছে। ডাক্তার পুরোপুরি শিওর না। কিছু টেস্ট করাতে হবে বললেন। আমি সিরিঞ্জ ভয় পাই…. আমার…. “

আরিশ ইতিমধ্যে অফিস থেকে বেরিয়ে গেছে। তাকে এভাবে পাগলের মতো ছুটে বেরোতে দেখে সবাই কাজকর্ম রেখে নিজেদের মধ্যে কথা বলতে শুরু করেছে।

“ আমি বাসায় আসতেছি। তুমি চুপচাপ শুয়ে থাকো। ডাক্তারের সাথে আমি কথা বলে নিচ্ছি। “

“ আচ্ছা। “

কল কেটে দিয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়ল অরা। ডাক্তার শেলিনা আক্তার অরার সামনে বসে আছেন। বুঝতেই পারছেন, স্বামীর খুব আদরের বউ। নয়তো এতটুকুতে কেউ এমন করে? যদিও অনেক মেয়েরাই ইনজেকশন ভয় পায়৷

“ মিসেস খান, আমি তাহলে এখন আসছি। আপনার হাসবেন্ড সম্ভবত পরে কথা বলে নিবেন আমার সাথে। “

অরা নড়েচড়ে উঠল। চোখমুখ মুছে বলল,

“ হ্যাঁ উনি কথা বলবেন, বললেন। পথে আছে উনি, কিছুক্ষণের মধ্যেই বাসায় পৌছেঁ যাবেন। “

“ তাহলে একটু অপেক্ষা করি। উনার সাথে কথা বলে যাবো। আগামীকালই টেস্টগুলো করতে হবে। মনে হচ্ছে, দীর্ঘদিন ধরেই ডেঙ্গুতে ভুগছেন। দ্রুত চিকিৎসা নিতে হবে। “

অরা চুপ করে রইলো। স্যালাইন, ইনজেকশনে খুব ভয় তার। শেষমেশ সে-সবই জুটবে তার কপালে। এটা ভাবতেই মনটা খারাপ লাগছে তার। সামনে বাড়িতে বিয়ে। এখন যদি সে অসুস্থ হয়ে পড়ে থাকে তাহলে কী চলে?

“ মিসেস খান একটা কথা বলবো?”

“ হুম… বলুন। “

“ আপনি খুব ভাগ্যবতী। আপনার স্বামী আপানাকে হয়তো মাথায় তুলে রাখে। “

“ মাথায় তুলে রাখে না, কোলে তুলে রাখে সারাক্ষণ। তার রাগ, শয়তানি সম্পর্কে তো জানেন না, তাই এমন বললেন। “

মনে মনে কথাগুলো আওড়াল অরা৷ তবে মুখে কিছু বলতে পারলোনা। কেবল মুচকি হাসল।

চলবে,

#হামিংবার্ড
#পর্ব_৫৬
#তাসমিয়া_তাসনিন_প্রিয়া

(পর্বটি রোমান্টিক।)
রাস্তায় তেমন একটা জ্যাম না থকায় ঘন্টাখানেকের মধ্যে বাসায় এসে পৌঁছল আরিশ। অরা তখনও নিজের রুমে, ডাক্তার শেলিনার সাথে কথা বলছিল। হন্তদন্ত হয়ে বেডরুমে প্রবেশ করতেই বউকে বিছানায় শুয়ে থাকতে দেখে ভদ্রলোক যেন আরও ব্যতিব্যস্ত হয়ে উঠলো।

“ তুমি ঠিক আছো?”

অরার পাশে বসে জিজ্ঞেস করলো আরিশ। শেলিনা আক্তার একটু নড়েচড়ে বসলেন।

“ জি, ঠিক আছি। আপনি শান্ত হয়ে বসুন। “

“ মিসেস শেলিনা, কী হয়েছে অরার? ডেঙ্গু জ্বর? “

“ সন্দেহ করছি, তেমন কিছুই হয়েছে। বাকিটা টেস্ট করানোর পর বলতে পারবো। আপনি আগামীকাল উনাকে নিয়ে হসপিটালে আসুন একবার। তারপর শিওর হয়ে বলতে পারবো। ৷ “

আরিশ ধীরে ধীরে অরার কপালে হাত রাখে। তারপর গলায় স্পর্শ করে দেখে, জ্বরটা নেমেছে কি না বোঝার চেষ্টা। একটু দম নিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দেয় সে। আঙ্গুলের স্পর্শে মমতা আর অস্থিরতা মিলেমিশে যায়। তার চোখে উদ্বেগ।

বিছানার পাশে বসা ডাক্তার শেলিনা আক্তার চুপচাপ সবকিছু দেখছিলেন। চোখে তার একরাশ প্রশান্তি, ঠোঁটে অল্প একটুকরো মুচকি হাসি। রোগী নয়, যেন দুই ভালোবাসার মানুষকেই একসাথে পর্যবেক্ষণ করছিলেন তিনি।

“ঠিক আছে। আমরা আগামীকাল হসপিটালে যাবো। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। জলিল, মানে আমার ড্রাইভার আপনাকে পৌঁছে দিয়ে আসবে।”

শেলিনা একবার অরার দিকে তাকালেন, তারপর মৃদু হেসে আরিশের দিকে ফিরে বললেন,

“আপনাকেও ধন্যবাদ। আসছি।”

“ওকে।”

সংক্ষেপে বলল আরিশ। তার মন পড়ে আছে অরার জ্বরভেজা মুখে।

ধীর পায়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন ডাক্তার শেলিনা আক্তার।

_________

আরিশ অরাকে নিঃশব্দে কোলে তুলে নেয়। মাথায় আলতো করে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে নরম কণ্ঠে জিজ্ঞেস করে,

“কান্না করেছিলে কেন, পাখি?”

অরা নিচু গলায় বলল,

“আমার ভয় লাগছিল…”

আরিশ হালকা হেসে গাল ছুঁয়ে বলে,

“তোমাকে ভীতু জানতাম, তবে এতটা ভীতু সেটা তো কল্পনাও করিনি।”

চোখ বড় করে তাকায় অরা। একটু গলা খাঁকারি দিয়ে সোজা হয়ে বলে,

“আমি মোটেও ভীতু নই, মি. খান!”

আরিশ ভ্রু উঁচিয়ে তাকায়, ঠোঁটে চাপা হাসি। ইশারায় মাথা কাত করে কৌতুকের সুরে বলে,

“মি. খান! ওয়াও… বেশ শ্রুতিমধুর লাগলো শুনতে।”

অরা মুখ ফিরিয়ে ফেলে একপাশে। হঠাৎ যেন মনে পড়ে যায় নিজের অসুস্থতা। ফিসফিসিয়ে জিজ্ঞেস করে,

“বাড়ির মধ্যে তো মশা নেই, তবুও ডেঙ্গু কীভাবে হলো?”

আরিশ গম্ভীর গলায় বলল,

“এটা তো আমি জানি না। তবে আজ থেকে বাড়িতে একটা মাছিও ঢুকতে পারবে না। কালই কড়া ঔষধ আনাচ্ছি। সব জায়গায় স্প্রে করাবো।”

অরা গভীর নিঃশ্বাস ফেলে চুপ করে থাকে। চোখের কোণে জমে থাকা ক্লান্তি আর মনখারাপ যেন সব কিছু ঢেকে দেয়। যা হওয়ার ছিল, হয়ে গেছে। এখন কড়া ঔষধে আর কীই-বা হবে?

ভালো লাগে না কিছুই…

“ঠিক আছে। আপনি অফিস থেকে এত তাড়াতাড়ি ফিরলেন কেন?”

অরা চোখ কুঁচকে জিজ্ঞেস করে।

আরিশ একদম গম্ভীর মুখ করে বলে,

“যেভাবে ফোন করে ভয় পাওয়ার কথা বললে, আমার তো প্রাণটাই বেরিয়ে যাচ্ছিল। অফিস, কাজ– এসবের থেকে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ তুমি, হামিংবার্ড।”

অরার ঠোঁটের কোণে হালকা হাসি ফুটে ওঠে। সে বরকে জড়িয়ে ধরে বলে,

“আপনি আমাকে এত ভালোবাসেন!”

“তুমি বাসো না?”

আরিশ চোখে চোখ রাখে। অরা লাজুকভাবে মাথা নিচু করে। কিছু বলতে যাবে, তার আগেই আরিশ হুট করে গালে ছোট্ট একটা কামড় বসায়।

অরা চমকে উঠে বলে,

“এটা কী হলো!”

“উত্তর দিতে দেরি করার শাস্তি।”

ভীষণ গম্ভীর ভঙ্গিতে বলল আরিশ।

“আপনি আর ভালো হবেন না।”

অরা বিরক্ত ভঙ্গিতে চোখ ঘুরিয়ে বলল।

“আমি ভালো হতেও চাই না। ভালোবাসি– এখনই বলো।”

আরিশ নরম গলায় আদেশ দেয়।

“আই লাভ ইউ, রাগী ভূত।”

অরা হাসতে হাসতে বলে।

আরিশ ঠোঁটের কোণে শয়তানি হাসি ফুটিয়ে ওকে কোলে তুলে নেয়।

অরা আঁতকে উঠে জিজ্ঞেস করে,

“আবার কী হলো?”

“তেমন কিছু না। আমি ফ্রেশ হবো, তুমি পাশে চেয়ারে বসে থাকবে, শুধু আমায় দেখতে দেখতে।”

আরিশ বেশ আত্মবিশ্বাসী ভঙ্গিতে বলে।

“কী!”

অরা চোখ কপালে তোলে।

“কেন, থাকবে না?”

আরিশ ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করে।

“আমার শীত লাগছে। ওয়াশরুমে ঠান্ডা পানি… ভালো লাগছে না। প্লিজ, এখানে বিছানাতেই বসে থাকতে দিন?”

অরা মায়াভরা গলায় অনুনয় করে। আরিশ ওর মুখের দিকে তাকিয়ে একটু নরম হয়ে যায়। সত্যিই তো, মেয়েটার শরীর খারাপ।

“ঠিক আছে। আগে সুস্থ হও, তারপর একদিন হবে।”

“কী হবে?”

অরার কণ্ঠে সন্দেহ।

“নাথিং। বসো। ফ্রেশ হয়ে আসছি।”

আরিশ বলে ওয়াশরুমের দিকে পা বাড়ায়।

“আচ্ছা।”

অরা বিছানায় হেলান দিয়ে বসে পড়ে।

ওর চোখে এখন একরাশ শান্তি। মনে মনে ভাবে— এই ভদ্রলোকের সবকিছুই অতিরিক্ত! কিন্তু তবুও… মানুষটা বড্ড বেশি আপন।

________

গাড়িতে উঠে বসে স্বামীর নম্বরে কল দিলেন শেলিনা। সামনে বসে চুপচাপ গাড়ি চালাচ্ছে জলিল।

“হ্যালো শোয়াইব! আমার না, একদম ভালো লাগছে না।”

কণ্ঠে একটা চাপা অভিমানের ছায়া।

আসলে ইচ্ছা করেই এমন বলেছিলেন তিনি। অপর পাশ থেকে কী উত্তর এলো, তা স্পষ্ট শোনা গেল না। তবে শেলিনার চোখের ভঙ্গিমা বদলে গেল। পর মুহূর্তেই ঠাস করে কল কেটে দিলেন তিনি। ভেতরে ভেতরে রাগে ফুঁসছিলেন। মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললেন– আজ বাড়ি গিয়ে মহা ঝামেলা বাধাবেন। ছাড়বেন না শোয়াইবকে!

মনে মনে তুলনা চলে এলো– খান সাহেব কী পরিমাণ পাগল তাঁর স্ত্রীর জন্য! কী দরদ, কী যত্ন! অথচ শোয়াইব? যার সঙ্গে প্রেম করে বিয়ে হয়েছিল, সেই মানুষটাও আজ আর ভালোবাসার ছায়া ফেলে না তাঁর উপর।

শোয়াইব তো কখনো শেলিনার জন্য আরিশের মতো তো দূরের কথা, তার এক-চুল পরিমাণ কেয়ারও করেনি। আর আরিশ? অপছন্দের বিয়ে করেও বউয়ের পেছনে এতটা পাগল!

শেলিনার বুকের ভেতরটা কেমন করে ওঠে। চোখের পাতা ভার হয়ে আসে, কিন্তু কাঁদেন না। শুধু ঘনঘন নিঃশ্বাস ফেলেন। নিজেকে সংবরণ করতে চান। পৃথিবীর সব অভিমান, সব দুঃখ যেন একা তিনিই বয়ে বেড়াচ্ছেন।

__________

অরার শরীর খারাপের খবর শুনে তামান্নার মন একেবারে ভেঙে গেছে। বিয়ের মতো আনন্দের সময়ে যদি ভাবি অসুস্থ থাকেন, তাহলে তো কিছুই ঠিকভাবে উপভোগ করা যাবে না।

আনমনে ছাদে দাঁড়িয়ে ছিল তামান্না। চাঁদের আলোয় চারদিক নিঃশব্দ, সাদা এক নিস্তব্ধতা যেন চারপাশে ছড়িয়ে আছে।

“এই তামু!”

তামান্না চমকে তাকায়। পাশে এসে দাঁড়িয়েছে তালহা।

“হুম…”

ওর কণ্ঠে অন্যমনস্কতা।

তালহা ওর পাশেই দাঁড়িয়ে কাঁধে হাত রাখে, তারপর নিজের দিকে একটু ঘুরিয়ে নেয় তামান্নাকে।

“এত মন খারাপ করে আছো কেন?”

“ভাবির শরীর খারাপ। আর জানো, আমার মনটা কেমন কু’ডাকছে।”

তালহা স্নেহভরে বলে,

“কিছু হবে না। ভাবি ঠিক হয়ে যাবে। তুমি একটু বেশি টেনশন করছো।”

তামান্না দীর্ঘশ্বাস ফেলে। তালহা সে সুযোগে ওকে আলতো করে বুকে জড়িয়ে নেয়। আচমকা তালহার এমন স্পর্শে কিছুটা বিস্মিত হয়ে ওঠে তামান্না। ছেলেটা যে দিন দিন কতটা দুষ্টু হয়ে যাচ্ছে! লাজে মাথা নিচু করে রইল সে।

“ এয়ারপোর্টে গেলেন, না? আপা একাই আসবেন? “

“তামান্না প্রশ্ন করল, গলা ভিজে কিছুটা।

“সাবিহা নিজেই মানা করেছে যেতে। বলল, গাড়ি পাঠালেই চলে আসবে। জলিল গেছে। এতক্ষণে হয়তো বাসার কাছাকাছি পৌঁছেও গেছে।”

“তাহলে তো ভালোই।”

“হুম… তামু, শোনো…”

“জি বলুন।”

“উম্মাহ…”

তালহা মুখ দিয়ে শব্দটুকু করে। চুমু দেয়নি, কেবল শব্দ করেছে।

তামান্না লজ্জায় সরে দাঁড়ায়। ভুরু কুঁচকে বলে,

“এসব কী?”

তালহা খিলখিলিয়ে হেসে উঠে বলে,

“ মনের চুমু বড়ো, চুমু৷ টাচ তো করিনি– মুখেই একটু শব্দ করলাম। এই আরকি! “

তামান্না এবার আর নিজেকে ধরে রাখতে পারল না। ফিক করে হেসে ওঠে। তারপর না কিছু বলেই ছাদ থেকে একা একা নেমে যেতে থাকে।

আর তালহা? দাঁড়িয়ে আছে চুপচাপ। তামান্না ভাটিয়া বড্ড লাজুক। তাকে ঠিক কবে, কীভাবে নিজের করে পাবে—এই চিন্তাতেই ডুবে গেলো ছেলেটা।

__________

রাত দশটার দিকে খান বাড়িতে এসে পৌঁছল সাবিহা। এতগুলো মাস পর একমাত্র মেয়েকে কাছে পেয়ে তাসলিমা খাতুনের খুশি আর কে দেখে! তালহাও বোনের আসাতে অনেক খুশি হয়েছে। বিয়েতে এবার পুরো আনন্দ করতে পারবে সে। সাবিহার আগমনে আরিশের অবশ্য কোনো নড়নচড়ন নেই। সাবিহার যাওয়া-আসায় তার কিছু যায় আসে না। পুরনো সবকিছু ভুলে অরা সাবিহার সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করে নেওয়ার চেষ্টা করছে। সাবিহাও অরাকে নিজের ভাবি হিসেবে মেনে নিয়েছে।

_________

দিন আসে দিন যায়। বয়ে চলে সময়। অরাকে নিয়ে বেশ হন্তদন্ত হয়ে হাসপাতালে ছুটে গিয়েছিল আরিশ। ডাক্তারের প্রাথমিক পরীক্ষা ও রক্ত পরীক্ষার রিপোর্ট দেখে তারা শিওর হোন, অরা ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত।

তবে ভয়ের কিছু নেই– এখনো প্রাথমিক অবস্থায় ধরা পড়েছে। ডাক্তার শেলিনা আক্তার পর্যাপ্ত বিশ্রাম, তরলজাত খাবার আর নিয়মিত পর্যবেক্ষণের পরামর্শ দিয়েছেন। ভালোভাবে যত্ন নিলে অরা দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।

ডাক্তার শেলিনা বললেন,

“মি. খান, টেনশন করবেন না। আশা করি নিয়মমাফিক ওষুধ নিলে অরা শিগগিরই সুস্থ হয়ে যাবে।”

ডাক্তারের কেবিনে বসে আছে অরা আর আরিশ। অরার মুখ চুপচাপ, চোখে ক্লান্তির ছাপ। রক্তপরীক্ষার সময় সে ভীষণ ভয় পিয়েছিল।

“ওকে, মিসেস শেলিনা। আসছি।”

শেলিনা কিছু বলতে চাইলেও চুপ রইলেন। পরে অরার সাথে ফোনে কথা বলে নিবেন, এমনটা ভাবলেন।

অরাকে নিয়ে ডাক্তারের কেবিন থেকে বেরিয়ে এলো আরিশ। কেবিনের বাইরে আসতেই হুট করেই অরাকে কোলে তুলে নিলো। অরা একটু চমকলো।

“ কী করছেন এসব! আরে এটা বাড়ি নয়, হসপিটাল! “

“তাতে কী? তুমি দুর্বল, হেঁটে গেলে কষ্ট হবে।”

অরা জানে, এই ভদ্রলোককে বারণ করা যায় না। তাই চুপ করে থাকল। হাসপাতালের লোকজন আরিশের এই আচরণ দেখে হাসতে লাগলো, আর আরিশ তাতে পাত্তা দিলো না।

গাড়িতে বসিয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল সে।

“এতো কেয়ার করেন অথচ নিজের হাতেই মাঝে মধ্যে আঘাতও করেন। অদ্ভুত মানুষ!”

আরিশ ড্রাইভিং সিটে বসে অরার হাত পেছনে চেপে ধরে বললো,

“তোমাকে সুখ দিলেও দেবো, কষ্ট দিলেও আমিই দেবো, হামিংবার্ড। অন্য কাউকে তোমার কাছে আসতে দেব না।”

“হুম… ঠিক বলো। চলুন, বাড়িতে সবাই অপেক্ষা করছে।”

আরিশ ধীরে ধীরে অরার হাত ছেড়ে দিলো এবং শান্ত কণ্ঠে বললো,

“বিয়েতে বেশি হইচই করবে না। ডাক্তার বলেছে বিশ্রাম নিতে।”

“হুম, আমি জানি।”

গাড়ি এগিয়ে চলল, আর অরা আরিশের কথা চলতে থাকল।

সকালটা আজ হালকা মেঘলা। সূর্যের কিরণ ধীরে ধীরে আকাশ ছুঁয়ে উঠছে। পাখির কূজন ভোরের নীরবতায় মধুর সুর তোলা শুরু করেছে। বাতাসে লেগে আছে সুগন্ধি ফুলের মিষ্টি গন্ধ। শহরজুড়ে ধীরে ধীরে মানুষের কর্মব্যস্ততা শুরু হয়েছে।

“ এই যে, সুন্দরী! তোমার ফোন বন্ধ ছিলো কেন? গতকাল রাতে ঘুমের ঘোরে কী বলেছি, নিজেও জানি না। “

কল রিসিভ হতেই একনাগাড়ে কথা বলে একটু দম নিলো মেহরাব। সাবিহা ডাইনিং রুমে বসে আছে। সকালের নাস্তা করছে সবাই।

“ আমি আপনার সাথে একটু পরে কথা বলছি। “

“ পরে? পরে কেন? শোনো সাবিহা, আমি যদি কিছু ভুলভাল বকে থাকি তারজন্য সরি। “

সাবিহা সবার দিকে দেখে নিলো একবার। মৃদু হেসে বলল,

“ আপনি কোথায়? “

“ বাসায়। “

“ ওকে। “

সাবিহা এতটুকু বলেই কল কেটে দিলো। মুখের ওপর কল কাটাতে মন খারাপ হয়ে গেছে মেহরাবের। কী করবে বুঝতে পারছে না। হঠাৎ ফোনের নোটিফিকেশনের শব্দে চমকে উঠল সে। সাবিহা টেক্সট করেছে – একটা কফিশপের ঠিকানা।

“ কার সাথে কথা হচ্ছিল, তোর?”

ভাইয়ের প্রশ্নে কিছুটা বিব্রত হলো সাবিহা। আরিশ খাওয়া শেষ করে অরার খাওয়ার দিকে নজরদারি করতে ব্যস্ত। তালহা সতর্ক দৃষ্টিতে বোনের দিকে তাকিয়ে আছে।

“ মেহরাবের সাথে, আরিশ ভাইয়ার বন্ধু। “

ভ্রু উঁচিয়ে শুধালো তালহা,

“ উনার সাথে তোর কীসের কথা?”

“ এমনি মাঝে মধ্যে কথা হয়। বিশেষ কিছু না। “

“ ওহ। “

তাসলিমা খাতুন বললেন,

“ কথা বলে সময় নষ্ট না করে, তাড়াতাড়ি খাওয়াদাওয়া শেষ কর তালহা। বিয়ের মাত্র দু’টো দিন বাকি। তোরা এতসব কেনাকাটা করবি কখন?”

মাঝখানে আরিশ বলে,

“ চাচি আপনি এতো চিন্তা করবেন না। সময়মতো সবকিছু হয়ে যাবে। “

স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেন তাসলিমা। আরিশ যখন বলেছে, তখন সত্যি চিন্তার কিছু নেই।

খাওয়া শেষে অরা সোজা নিজের রুমে চলে গেলো। আরিশ সাতদিন অফিস বন্ধ করে দিয়েছে। বিকেলে সবাই শপিং করতে যাবে, আপাতত কোথাও যাবার কোনো পরিকল্পনা নেই।

“আচ্ছা পাখি, তুমি কি আমার ওপর বিরক্ত হও?”

হঠাৎ এমন প্রশ্ন শুনে অরা একটু অবাক হয়ে বলল,
“আপনার মাথায় এমন প্রশ্ন কোথা থেকে এলো?”

“কী জানি! হঠাৎ মনে হলো।”

“আপনার মনের ভুল ওগুলো।”

“হয়তো।”

আরিশ কথা বলতে বলতে অরাকে বিছানায় ধাক্কা দিয়ে শুইয়ে দিলো। অরা আরিশের দিকে তাকিয়ে রইলো কেবল। কী করবে সে? দিনদুপুরে এসব!

“দরজা খোলা আছে।”
“থাকুক।”

আরিশের চোখ-মুখে ছিল এক অদ্ভুত নেশা, যা অরার মনে জটিল অনুভূতি তৈরি করল। সে বুঝতে পারছিলো না কী করবে—এত কাছে আসা তার ভালো লাগছে না। ‘যদি কেউ চলে আসে?’ চিন্তাটা লাজলজ্জার সাথে মিশে অরাকে আরও অস্থির করে তুললো।

“আরিশ! প্লিজ…”

কিন্তু কথা শেষ করার আগেই আরিশ তার ঠোঁট নিজের দখলে নিয়ে নিলো। বিছানার সাথে দু হাত চেপে ধরে অরার সামান্য নড়াচড়া পর্যন্ত ঠেকিয়ে দিলো সে। অরা কিছু বলতে চাইলেও শব্দ যেন আটকে গেলো গলায়। আরিশ যেন তার সমস্ত শক্তি এক জায়গায় ছড়িয়ে দিলো। ধীরে ধীরে তার স্পর্শ কমিয়ে হাত ছেড়ে দিলো। অরার শরীর নেতিয়ে পড়লো।

আর এবার আরিশ অরার দুই হাত মাথার ওপরে তুলে ধরে বলল,
“আমি বাড়িতে থাকতে কেউ রুমে আসবে না, ডার্লিং। অহেতুক মুড নষ্ট করছো।”

“দিনদুপুরেও আপনার মুড আসে?”

“মুড আসার জন্য দিন-রাত, সকাল-সন্ধ্যা, কিংবা মধ্যরাতের কোনো সীমা নেই।”

কথা শেষ করে আবারও অরাকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে উঠলো আরিশ। তার স্পর্শে অরার ঠোঁট, গাল, গলা থেকে ঘাড় পর্যন্ত যেন মুচড়ে যেতে লাগলো। ভদ্রলোকের সবকিছু ঠিক আছে, শুধু কাছে আসার সেই অতিরিক্ত ধরণটা ব্যতীত।

চলবে….