পথে হলো দেখা পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব

0
2

#পথে_হলো_দেখা (শেষ)
#নুসরাত_জাহান_মিষ্টি

মামা, মামীর ভয়ে সবসময় ঘুমড়ে থাকা আদুরী সেদিন চেষ্টা করেও পারেনি তার বিয়ে আটকাতে। বিয়ে শেষ হওয়া অব্দি তার মামী তাকে ভীষন ভয় দেখিয়ে রেখেছিলো। বিয়ে শেষ হতে আদুরী একদম ভেঙে পড়লো। সে কিছুতেই এই বিয়ে মেনে নিতে পারছিলো না। কিছুতেই না। নিজের থেকে এত বড় একজন মানুষকে স্বামী হিসাবে মেনে নেওয়ার মতো মানসিক অবস্থা আদুরীর ছিলো না। তাই তো সে নিজেকে শেষ করে দেওয়ার কথা ভাবে। কিন্তু পারে না। ঠিক সেই মূহুর্তে তার হৃদয়ে মুক্ত পাখির মতো বাঁচার বড় সাধ জাগে। এত বছরের জীবনে নিজের ভয়কে জয় করে সে যা পারেনি তাই করার সিদ্ধান্ত নেয়। বাড়ি থেকে পালানোর সিদ্ধান্ত নেয়। অতঃপর সে পালায়। গন্তব্যহীন পথ পাড়ি দিতে বের হয় আদুরী। সেই পথে দেখা মেলে টগর এবং জামালের। ছোট এ জীবনে আদুরীর সবচেয়ে সুখের এবং শান্তির মূহুর্তগুলো তাদের সাথে কাটায় আদুরী। যেখানে টগর হয়ে উঠেছিলো আদুরীর আত্মার আত্মীয়, জামাল একজন ভাইয়ের মতো। আর এই ট্রাক, সে তো আদুরীর বাড়ি। এসব ভাবতে ভাবতে আদুরী ‘না’ বলে চিৎকার দিয়ে উঠে। সে চিৎকার দিয়ে বলে,“আমি যাবো না। ও পুলিশ আমাকে বাঁচান। আমি যাবো না। আমি এই বিয়ে নিজের ইচ্ছায় করিনি। আমি এই লোকটার সাথে যাবো না।”
কথাগুলো বলে আদুরী বাহাদুরের হাত ছাড়াতে নেয় কিন্তু পারে না। বাহাদুর রাগান্বিত হয়ে অন্য হাত দিয়ে একটি থাপ্পড় বসিয়ে দেয়। অতঃপর কর্কশ কন্ঠে বলে,“আমার মান ডুবাইয়া শান্তি হয় নাই। রাস্তার লোক হাসাইতে নিচ্ছিস?”
আদুরী যেতে চায় না। সে আহাজারি করে। সে অসহয় চোখে টগরের দিকে তাকায়। আদুরীর নিষ্পাপ, কান্নাভেজা চোখ দু’টো টগরের সাথে থাকতে চাচ্ছে। এসব বুঝতে পেরে টগর পা বাড়াতে নিলে জামাল তার হাত শক্ত করে ধরে। টগর তার দিকে তাকালে জামাল চোখের ইশারায় না বলে। ইতিমধ্যে জামালের সাথে ওসির কথা হয়েছে। বাহাদুর মোল্লা জামাল এবং টগরের বিরুদ্ধে অপহরণ মামলা দিতে বলেছে। ওসি সাহেব তা দিবে না। যেহেতু জামালদের কোন দোষ নেই। কিন্তু কোনভাবে যদি তারা এসব ঝামেলায় নিজেদের জড়িয়ে রাখে তাহলে হয়তো ওসির কিছু করা থাকবে না। এক কথায় ঠান্ডা মাথায় ওসি জামালকে বুঝিয়েছে, এখানে আদুরীকে মুক্ত করার উপায় নেই। তাই মানবিকতা দেখিয়ে তারা যাতে কোনকিছু না করে। ওসি সাহেব যে বাহাদুর মোল্লার হয়ে কাজ করছে বা করবে সেটা বেশ ভালোভাবে বুঝে গিয়েছে জামাল।

আদুরী টগরের দিকে তাকিয়ে হাউমাউ করে কান্না করে দেয়। অন্যদিকে টগর তার কান্না অনেক কষ্ট করে আটকে রেখেছে। প্রকৃতির বোধহয় তার কষ্ট সহ্য হলো না। তাই তো আকাশে মেঘের গর্জন শুরু হলো। মূহুর্তের মধ্যে বৃষ্টি শুরু হলো। পুলিশরা সবাই তাদের ছাতা মেলে ধরে। অন্যদিকে আদুরীকে বাহাদুর গাড়িতে তোলার জন্য টানাটানি করছে। আদুরী যেতে চায়। সে মাটিতে বসে পড়ে।

বৃষ্টি তখন জোরে নেমেছে। আকাশ যেন ধুয়ে দিচ্ছে সমস্ত রঙ, সমস্ত আবেগ। কাদামাটির গন্ধে ভিজে আছে বাতাস, চারপাশে এক অদ্ভুত নিস্তব্ধতা। যেখানে কেবল জল পড়ার শব্দ আর এক নারীর বোবা কান্না।
আদুরী রাস্তার ধারে বসে। তার চুল ভিজে লেপ্টে গেছে গালে, চোখের জল আর বৃষ্টির ফোঁটা একসাথে গড়িয়ে পড়ছে। লাল শাড়ির আঁচল কাদায় মাখা, পায়ের গোঁড়ালির ওপর দিয়ে জল বয়ে যাচ্ছে, কিন্তু সে নড়ছে না। পুরো শরীর জুড়ে একধরনের ক্লান্তি, যেন জীবনের সমস্ত শক্তি সে ফেলে রেখেছে ওই ভেজা রাস্তায়।
বাহাদুর সামনে দাঁড়িয়ে। তার চোখে কোনও কোমলতা নেই, ঠোঁট আঁটসাঁট, কপাল ভাঁজপড়া। সঙ্গে এসেছে আরও দুজন লোক, চুপচাপ কিন্তু প্রস্তুত। হঠাৎই বাহাদুর এগিয়ে আসে, জোরে টেনে তোলে আদুরীর বাহু ধরে। আদুরী প্রথমে ছটফট করে, শরীরটা বাঁকিয়ে নেয় কিন্তু পরক্ষণেই হার মানে। আর কোনও চেষ্টা নেই তার ভেতরে। লোক দুজন মিলে তাকে ধরে, যেন একটা জিনিসপত্র তুলে নিচ্ছে গাড়িতে।
টেনে হিঁচড়ে আদুরীকে গাড়ির পেছনের সিটে গুঁজে ফেলা হয়। দরজা বন্ধ হয় ধুপ করে। সব যেন একটা দৃশ্যপট বদলের মতো দ্রুত ঘটে যায়।
একটু দূরে দাঁড়িয়ে টগর। মাথা নিচু, চোখে কিছু একটা জমে উঠেছে অভিযোগ, অসহায়তা, না হয়তো শুধুই প্রেম। গাড়ির জানালার কাচে একটা মুহূর্তের জন্য দেখা যায় আদুরীর মুখ ভেজা, ক্লান্ত, নিঃসাড়। তারপর সেটাও মিলিয়ে যায়।
গাড়ি চলতে শুরু করে। কাদামাটির ছিটা উড়ে এসে টগরের পায়ে পড়ে, কিন্তু সে নড়ে না। সেই জায়গাতেই দাঁড়িয়ে থাকে, বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে, চোখের কোণ গোপনে মুছে নিতে নিতে।
চারপাশে শুধু একটাই শব্দ, বৃষ্টির।
আর তার ভিতরে ডুবে থাকা এক নিঃশব্দ হাহাকার। দেখতে দেখতে আদুরীকে তুলে নেওয়া গাড়িটা চোখের আড়াল হয়ে যায়। জামাল টগরের হাত ধরে টেনে ট্রাকের কাছে নেয়। টগর কোন বাক্য ব্যয় না করে ট্রাকে উঠে বসে। অনেকে হয়তো ভাবছে, এখানে অন্যকিছু হতে পারতো। কিন্তু সেটা যে সম্ভব নয়। এটা জীবন সিনেমা নয়। বাস্তবতায় দাঁড়িয়ে এখানে টগরের আদুরীকে জোর করে ধরে রাখার ক্ষমতা যে ছিলো না। এটা টগরের অধিকারের বাহিরে। আদুরী নিজে টগরের থেকে এই অধিকার কেড়ে নিয়েছে। যদি সেদিন আদুরী জীবনের এই মুক্ত পাখির মতো বাঁচার স্বপ্নটা, পালিয়ে আসার সাহসটা বিয়ের আগে নিজের মধ্যে সঞ্চয় করতে পারতো। তাহলে হয়তো আজ গল্পটা ভিন্নরকম হতো।
____
বাহাদুর আদুরীকে বাড়িতে টেনে হিচড়ে নিয়ে এসে একটি ঘরে ধাক্কা মেরে ফেলে দেয়। অতঃপর কষিয়ে গালে দুটো থাপ্পড় বসিয়ে দিয়ে বলে,“আমার মান ডুবাইয়া দুইটা পোলার লগে রাত কাটাইয়া আসলি। তোর এত সাহস। বাহাদুর মোল্লার মান, সম্মান লইয়া খেলা করোস। তোর ব্যবস্থা নিতাছি। দাঁড়া তুই। আগে তোরে হুজুর দিয়ে নাওন দেওয়াবো। তোরে শুদ্ধ করবো। তোর অঙ্গে যে পাপ লাইগা আছে সেইটা ধুইবো তারপর তোরে মজা বুঝাবো।”
এটা বলে বাহাদুর মোল্লা বাহির থেকে ঘরের দরজা বন্ধ করে চলে যায়। বাহিরে কেউ একজন হয়তো বললো,“মেয়েটা ভেজা শাড়ীতে আছে তাকে অন্তত কাপড়টা বদলাতে দেন।”
এই কথা শুনে বাহাদুর মোল্লা রাগান্বিত হয়ে দুটো গালি দেয়। তারপর আদুরীর মা বাবা তুলে কথা বলে বুঝায়, আদুরীর জন্য তার অনেক টাকা খরচ হয়েছে। অনেক দাম দিতে হয়েছে। আর সে ছিলো তো দুইজন পুরুষের সঙ্গে। যেহেতু সেভাবে সে রাত কাটাতে পেরেছে তখন এখন ভেজা শাড়ীতেও থাকতে পারবে। আদুরীর মোটেও কষ্ট হবে না। আর একটু শরীর খারাপ করলে তেমন কিছুই হয় না। এটা বলে বাহাদুর তার লোক পাঠিয়ে দেয় হুজুর ডেকে নিয়ে আসার জন্য।

ঘরের ভেতর নীরব এক দহন। আদুরীর গায়ে লাল ভেজা শাড়ি, যেন বৃষ্টিতে নয়, রক্তে ভিজে গেছে। ভেজা আঁচল বুকে আটকে আছে, আর চোখ দুটি টলমল করে নোনা জলে নয়, এক অদৃশ্য জ্বালায়। বুকে জমে থাকা কষ্ট আজ যেন ফেটে বেরোতে চায়, কিন্তু কেউ শোনে না, কেউ দেখে না। চারপাশে শুধু নিস্তব্ধতা। আদুরী চোখে ভাসছে টগরের সঙ্গে কাটানো সুন্দর মূহুর্তগুলো। তার জীবন এমন কেন? আদুরী! শুধু নামেই আদর। কিন্তু বাস্তবে তার জন্য শুধু অনাদারই রয়েছে। নিষ্ঠুর এই দুনিয়ার নিষ্ঠুরতায় বন্দি হয়ে গিয়েছে আদুরী জীবন। নিষ্ঠুর এই দুনিয়া তার সব নিষ্ঠুরতা বোধহয় আদুরীর জন্যই জমা রেখেছিলো। তাই তো সুখের দেখা পেয়েও পেলো না আদুরী। তার ছোট একটি ভুলে। আদুরী বুঝে গেছে, নিষ্ঠুর এই দুনিয়ায় আদুরীর মতো মানুষের ভাগ্যে সুখ আসে ক্ষণিকের জন্য। ভুল সে তো তার। সেদিন বিয়ের আগে যদি পালিয়ে যেতো তাহলে আজ সুখটা তার জন্য চিরস্থায়ী হতে পারতো না। সেদিন জামাল বিয়ের কথা তোলার সঙ্গে বিয়েতে মত দিতে পারতো। কিন্তু তা হলো না। হবে কিভাবে? সুখ যে দূরদেশের পাখি তাকে ছোঁয়ার সাধ্য যে আদুরীর নেই। তাই ক্ষণিকের এই সুখের স্মৃতি নিয়েই আদুরীকে বাঁচতে হবে নরকময় এক জীবন। কিন্তু না। আদুরী চায় না এমন জীবন। মুক্ত বাতাসের ছোঁয়া পাওয়া আদুরীর যে এখন বন্দি জীবন ভালো লাগছে না। এখন যে সে এই জীবনে আর মানিয়ে নিতে পারবে না। একদমই পারবে না। তাই তো আদুরী জীবনের এক কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়ে উঠে দাঁড়ায়। ধীরে ধীরে উঠে পড়ে বিছানার উপর। গায়ের ভেজা লাল শাড়ীটা খুলে পাখার সঙ্গে বাধে। অতঃপর নিষ্ঠুর এই পৃথিবীকে বলে,“সুখ এবং তার ছোঁয়া যদি না পেতাম তবে এই জীবন মেনে নিতে পারতাম পৃথিবী। সেদিন সাহস দেখিয়ে মুক্ত আকাশে উড়ে বেড়ানোর ইচ্ছে নিয়ে বের হয়ে যাওয়া ভুল ছিলো আমার। বলা যায় ভুল সময়ে আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। কিন্তু…”
একটু থেমে আদুরী মুচকি হাসি দেয়। কান্নারত মুখে হাসি এক অদ্ভুত রকমের মায়ার জন্ম দেয় আদুরীর শ্যামবর্ণের মুখশ্রীতে। সে মুচকি হাসি দিয়ে বলে,“না। ভুল সময় নয়। যদি আমি ঐ সিদ্ধান্ত সঠিক সময় নিতাম। তাহলে কী ঐ ট্রাক আর ট্রাকের সঙ্গে জুড়ে থাকা মানুষটির দেখা পেতাম? পেতাম না। গতিহীন ছুটে চলা ট্রাক তো আমার জন্য নিজের গতি বদলাতো না। বদলাতো বুঝি? তার, শুধুমাত্র তার জন্য এবং তার সাথে কাটানোর সময়ের জন্য আমি আমার ঐ সিদ্ধান্তটাকে সঠিক সময়ে নিয়েছি বলে মেনে নিলাম পৃথিবী।
জানি না আমার না থাকা তাকে পোড়াবে কি-না। তবে আমাকে পোড়াচ্ছে। গভীরভাবে পোড়াচ্ছে। হয়তো তার জন্য আমি পথে দেখা এক ভুল হয়ে থাকবো। কিন্তু সে আমার জন্য পথে দেখা এক পরশ পাথর হয়ে থাকবে। তার হয়তো জানা হবে না, তার জন্য শুধুমাত্র তার জন্য কেউ দুঃখকে আর মেনে নিতে পারছে না। তার দেওয়া সুখানুভূতির স্পর্শ এতই গভীর যে সেখানে দুঃখের বাস আর সম্ভব নয়। তাই এই আদুরীর অনাদারময় জীবনের অল্প একটু পাওয়া সুখটাকে নিয়েই পৃথিবীকে বিদায় জানাচ্ছে আদুরী।”
আদুরী এই কথা বলে ধীরে ধীরে শাড়ীর অন্য মাথায় গলায় পেঁচাতে শুরু করে। তার চোখে জীবন নিয়ে এক আকাশ সমান অভিযোগের অশ্রু থাকলেও মুখে রয়েছে মিষ্টি এক হাসি। এই হাসি টগরের ভালোবাসার জন্য ফুটে উঠেছে। সেই ভালোবাসার স্মৃতিটুকুতে দুঃখের গভীর ক্ষত বসার আগেই সে পৃথিবীকে বিদায় জানাচ্ছে। সেই খুশিতে আদুরী হাসছে। হয়তো তার এই সিদ্ধান্ত ভুল। কিন্তু জীবনের এই পর্যায়ে এসে আদুরীর কাছে এটাই সঠিক সিদ্ধান্ত। তার জীবনের সবই তো ভুল। তার বাবা, মা তাকে ভুলের মধ্যেই জন্ম দিয়েছে। নয়তো তার জন্য হলেও তো তারা একসাথে থাকতে পারতো। তারা একসাথে থেকে তার জীবনটাকে ভুলে নয় ফুলে বদলে দিতো। কিন্তু তা তো হয়নি। তাই ভুলময় আদুরীর জীবন আদুরী এক ভুল দিয়েই শেষ করছে। তার পক্ষে বাহাদুরকে মেনে নিয়ে তার সঙ্গে সেই সম্পর্কে জড়ানো সম্ভব নয় যেটা মনের নয় হবে শরীরের। এমন সম্পর্কে তার পক্ষে থাকা সম্ভব নয়।
অন্যদিকে, দুরন্ত গতিতে ছুটে চলা এক ট্রাক।
জামাল স্টিয়ারিং চেপে ধরে আছে শক্ত হাতে, পাশে বসা টগর নিস্তব্ধ, নিঃশব্দ, যেন একটা জীবন্ত মূর্তি। চোখ দুটো সামনে স্থির, অথচ সে কিছুই দেখছে না, দেখছে না রাস্তা, বাতাস, আলো, শুধু এক অদৃশ্য ছায়ার দিকে তাকিয়ে আছে সে। জামাল বারবার তার দিকে তাকায়, নিঃশ্বাস নেয় থেমে থেমে। কোথাও গিয়ে জামালের মনে অপরাধবোধ কাজ করছে। তার মনে হচ্ছে টগরের এই পরিস্থিতির জন্য সে দ্বায়ী। সে যদি তাদের দুজনকে একসাথে এতটা সময় কাটাতে না দিতো তাহলে বোধহয় এমন দিন আসতো না। অথবা জোর গলায় আদুরীকে ট্রাক থেকে নামিয়ে দিতো। জামালের এখন রাগ হচ্ছে নিজের এবং আদুরীর উপর। আদুরী কেন মিথ্যা বলেছে? কেন? তখনই টগর বলে উঠে,“ওর উপর রাগ করো না ভাই। ও এক নিষ্পাপ ফুল। যে সুস্থভাবে বাঁচতে চেয়েছিলো। কিন্তু নিষ্ঠুর এই পৃথিবী তার নিয়তিতে ভালো কিছু লেখেনি।”
এই কথা বলতে না বলতে টগরের চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে নিচে পড়ে। জামাল টগরের চোখের দিকে এক পলক তাকিয়ে মুখ ঘুরিয়ে নেয়। তার পক্ষে আর টগরের দিকে তাকানো সম্ভব নয়। আর টগর সে চোখ বন্ধ করে নেয়। তার কানে বাজছে আদুরীর বলা সেই কথাটি,“পরজন্মেও স্বামী, স্ত্রী একসঙ্গে থাকে?”
সেই সময়ে এই কথাটির ভাবার্থ টগর বুঝতে পারেনি। তবে এখন উপলব্ধি করছে। গভীরভাবে উপলব্ধি করছে। আদুরীর অবুঝ মন তাকে নিয়ে কোন এক জন্ম কাটানোর বাসনা নিয়ে এই প্রশ্নটি করেছে। এটা বুঝতে পেরে টগর ভেতর থেকে শেষ হয়ে যায়। কেউ একজন তার ভাঙা হৃদয় নিয়ে বলেছিলো,“ভেবেছিলাম পরপারে তোমাকে পাব। কিন্তু পরে জানতে পারলাম পরকালে স্ত্রী তার স্বামীর সঙ্গে থাকে। তোমাকে পেতে পরকালেও আমি ব্যর্থ।”
আদুরীর প্রশ্ন, টগরের এই মূহুর্তে মানসিক অবস্থা সব মিলিয়ে এই কথাটি তাদের সঙ্গে গভীরভাবে যায়।
___
পরিশেষে, আদুরী ঝুলছে পাখার সঙ্গে। লাল ভেজা শাড়ীর আঁচল গলায় প্যাঁচানো, চুলগুলো ছড়িয়ে পড়েছে ঘাড়জুড়ে। চোখ দুটো আধখোলা, তবু কোন দৃষ্টি নেই। রয়েছে শুধু নিস্তব্ধতা। অন্যদিকে ট্রাক তার গন্তব্যে চলছে, টগর চোখ মধ্যে করে পাথরের মতো বসে আছে। তার চোখের কোণা বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে৷ পুরুষ মানুষের নাকি কান্না করতে নেই। এটা জেনেও টগর কান্না করছে। তার ক্ষণিকের পথে দেখা হওয়া এক শ্যামবতীর জন্য।

(সমাপ্ত)
(ভুলক্রটি ক্ষমা করবেন।)