সংসার নাকি সম্মান পর্ব-১০

0
28

#সংসার_নাকি_সম্মান
#পর্ব_১০
#অনন্যা_অসমি

দু’দিন পরেই বাড়ি ফিরে এলো আনন্দি এবং উজান। ফেরার সময় যদিও আনন্দির মন খারাপ ছিল কিন্তু পুরো রাস্তা উজান তাকে এটা ওটা বলে মন ভালো করার চেষ্টা করে গিয়েছে। তার আবোলতাবোল মজার কথায় আনন্দিরও মন খানিকটা ভালো হয়ে গিয়েছে। কিন্তু এবাড়ি ফিরতেই যে এরকম বিব্রতকর পরিস্থিতির সম্মুখীন হবে আনন্দি অনুমানও করতে পারেনি।

উদয় এবং আনন্দি প্রায় সমবয়সী। দরজা খুলতেই ওপারে উদয়কে দেখে অপ্রস্তত হয়ে পড়ল মেয়েটা। উদয়ের গায়ে টি-শার্ট, পড়নের প্যান্টটা হাঁটুর অনেক উপরে। যতই স্বামীর ছোট ভাই হোক, দু’জনে এখনো সম্পূর্ণ অপরিচিত, বয়সেও তার সমান। ইতিউতি করতে করতে একটু পিছিয়ে উজানকে আগে ভেতরে ঢোকার ইঙ্গিত দিল সে।

” আনন্দি তুমি ভেতরে যাও, বাকি ব্যাগগুলো আমি নিয়ে আসছি।”

এগিয়ে গেল সে, যেতে যেতে কানে এলো উজান কিছু একটা বলছে৷ তবে সেই কথা তার শোনা হলো না।

” কেমন আছিস?”

” ভালোই ছিলাম।” আড়মোড়া হয়ে সোফায় বসল সে৷

” তুই নাকি ঘুমে ছিলি তাই যাওয়ার আগে তোর সাথে দেখা করতে পারিনি।”

” তোর আর সময় কোথায়। বাদ দে, আমার জন্য আগেই সময় ছিল না। এখন সময় থাকবে সে তো বিলাসিতা।”

দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল উজান।

” উদয় তুই এখন আর ছোট নেই। সেইসাথে তোর একটাও মাথায় রাখতে হবে এ বাড়িতে এখন আমরা ছাড়াও অন্য একজনও আছে এবং সে এখন মেয়ে। যার সাথে তোর সেভাবে ঘনিষ্ট সম্পর্কও তৈরি হয়নি। বড় ভাই হিসেবে তোকে একটা উপদেশ দিচ্ছি। যেহেতু তোর বৌদি বাড়িতে আছে তার সামনে একটু ঠিকঠাকভাবে পোশাক পড়িস, সংযত ভাষা ব্যবহার করবি আশা করি।”

উদয় ভাইয়ের কথায় বিপরীতে কিছু বলল না। চুপচাপ রুমে ঢুকে দরজা বনের করে দিল।
.
.

খাবার টেবিলে আনন্দি লক্ষ্য করল উদয়ের পোশাকে পরিবর্তন এসেছে। মনে মনে স্বস্তি পেল যেন। ফেরার পর থেকেই মনে মনে একটু অস্তিত্ব অনুভব হচ্ছিল। বুঝল উজানই হয়ত কিছু বলেছে। তবে আনন্দি আগ বাড়িয়ে কিছু জানতে চাইল না।

কয়েক লোকমা ভাত মুখে নিয়েছে আনন্দি। তখনই উদয় বলে উঠল,

” মা বাড়িতে মশলা শেষ হয়ে গিয়েছিল নাকি? শেষ হলে বলতেই পারতে অন্তত মশলা বিহীন এই তরকারি খেতে হতো না।”

” কি হয়েছে উদয়? কি কম লাগছে তোমার?”

” মাছে না আছে লবণ, না আছে মরিচ। মাছের ভেতরে কোন মশলার স্বাদ নেই। মাছ নাকি অন্য কিছু কোন স্বাদই বোঝার উপায় নেই।”

” কোথায় উদয়? ভালোই তো হয়েছে।”

” থাক দাভাই। তুই কিছু বলিস না, তোর উওর আমার জানা আছে।”

এতোসময় চুপ করে ছিল আনন্দি। নীরবে লবণ আর কয়েকটা কাঁচা লঙ্কা উদয়ের দিকে এগিয়ে দিল সে। তারপর মুখে হাসি রেখেই বলল,

” তা ভাই তুমি বুঝি অনেক সিরিয়াল দেখো?”

তার এধরণের প্রশ্নে তিনজনেরই কপালে ভাঁজ পড়ল।

” এই মেয়ে কিসব বলছ তুমি? এখানে সিরিয়াল টানছ কেন?”

” না ভাই যেভাবে সিরিয়ালের ননদের মতোন কথা বলছে মনে হলো সে ননদের ভূমিকা পালন করছে। আপনি তো অনেক ধরণের সিরিয়ালই দেখেন। তাই মনে হলো আরকি ভাইও হয়ত দেখে। তার হয়ত দেবরের চরিত্র থেকে ননদের চরিত্রটাই বেশী পছন্দের। আমার তো ননদের নেই সে কারণেই ভাই’ই দেবরের চরিত্র ছেড়ে ননদের চরিত্রে ভূমিকা করছে। কি ভাই, ঠিক বলেছি?”

তার কথা শুনে উজান মিটিমিটি হাসতে লাগল। শর্মিলা দেবী কটমট করে তাকালেন৷ আর উদয়… সে তো যেন রাগে ফুঁসছে কিন্তু তা প্রকাশ করতে পারছে না। আনন্দির মুখে হাসি থাকলেও মনে তার হতাশা। ভেবেছিল তার সংসার হয়ত অন্যদের চেয়ে ভিন্ন হবে। পুরোপুরি স্বপ্নের সংসার সাজাতে না পারলেও অন্তত সুখের আনাগোনা থাকতে, পরিবারের সকলের ভালোবাসা, যত্ন থাকবে। কিন্তু সবই যেন স্বপ্ন। সংসারের প্রতি পদে পদে যেন সে হতাশ হচ্ছে। সেই হতাশার মধ্যে যেন সে সুখ খোঁজার চেষ্টা করছে প্রতিনিয়ত। আর সম্মান! সেই বস্তুর নাগাল পেতেই প্রতি মূহুর্তে নিজের সর্বোচ্চটা দিচ্ছে সে। আবারো গোপনে হতাশা মিশ্রিত দীর্ঘশ্বাস ত্যাগ করল। এটার নামই হয়ত সংসার। তার মতোই হয়ত অগণিত নারী সম্মানের সহিত সংসার করার জন্য অদৃশ্য যুদ্ধ করে যাচ্ছে। যাতে কেউ হচ্ছে জয়ী আর কেউ আড়ালেই নিজের সত্তাকে হারিয়ে ফেলছে কিংবা নিজেকেই।

খাবার পর্ব শেষে রান্নাঘরে সব গোছগাছ করে এসে দেখল ডাইনিং এ সকলে বসে আছে। উজানের পাশে দাঁড়াল আনন্দি।

” তোমাদের বিয়ে তো হলো অনেকদিন। কিন্তু তোমার কাজের জন্য কোথাও যাওয়া হয়নি। তোমার মামা ফোন করেছিলেন আজ। ওরা সবাই পরশু তোমাদের দিদার বাড়ি যাবে। যেহেতু বিয়ের পর আর কারো সাথে দেখা হয়নি তাই আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি পরশু আমরা সবাই ও বাড়ি যাবো। কি বউমা, তোমার আবার কোন আপত্তি নেই তো।”

” না মা আমার কোন সমস্যা নেই।”

” কি হলো উজান কিছু বলছ না কেন? এবার কাজের বাহানা দিয়ে কোন লাভ নেই। এবার যাওয়া ক্যান্সেল হবে না। তুমি না গেলে আমি এ দু’জনকে নিয়ে চলে যাবো।” বেশ গম্ভীর কন্ঠে বললেন তিনি৷

” না মা আমার কোন সমস্যা নেই। আমরা সবাই যাব মামাবাড়ি। কিন্তু….. ”

” আবার কিন্তু কিসের?”

উজান আমতাআমতা করে বলল, ” বাবা……?”

হঠাৎ কি হলো আনন্দি বুঝল না। শর্মিলা দেবী যেন রেগে গেলে। উঠে দাঁড়ালেন তিনি, রাগী রাগী কন্ঠে আদেশ দিলেন,

” সবাই ঘুমাতে যাও৷ কালকের মধ্যেই ব্যাগপত্র গুছিয়ে ফেলবে।”

মায়ের কথার পরিবর্তে দুই ভাইয়ের কেউ কিছু বলল না। তবে আনন্দির মনে প্রশ্ন জাগল।

” আসলেই তো। বিয়ের পর সকল অনুষ্ঠান শেষে দুই কি তিন দিন বাবা বাড়িতে ছিলেন। এরপর এতোদিন হয়ে গেল এখনো বাড়ি ফিরলেন না কেন তিনি? আর মায়ের আচরণই বা কেন হঠাৎ পরিবর্তন হয়ে গেল?” মনে প্রশ্ন জাগলেও তাে উওর দেওয়ার মতোন কেউ ছিল না।
.
.

যথাসময়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিল চারজন। আনন্দি মনে মনে বিষয় খুশী। কাকে কি বলবে, প্রথম দেখায় কিভাবে আলাপ শুরু করবে সব যেন মনে মনে ঠিক করে নিচ্ছে যে। উজান থেকে বাড়ির মানুষগুলো সম্পর্কে টুকটাক জেনে ছিল সে। ছোটদের জন্য কিছু উপহার নিতেও ভুল না। কিন্তু আবারো তার ধারণার বাইরে নতুন পরিস্থিতির সম্মুখীন হলো সে। তাদের চারজন ব্যতিত অপ্রত্যাশিত নতুন এক অতিথিও যুক্ত হলো তাদের সাথে। সেই অপ্রত্যাশিত ব্যক্তি আর কেউ নয়…..

“সুনয়না!”

চলবে……

( রি-চেক করা হয়নি, বানান ভুল থাকতে পারে। দুঃখিত)